নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবিন.হুড

রবিন.হুড › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানফাত শিফিরের স্ট্যাট্যাস সমগ্র - ৫ম পর্ব

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:২৩

সদ্যপ্রয়াত জার্মান ঔপন্যাসিক গুন্টার গ্রাসের অমর সৃষ্টি" দ্যা টিন ড্রাম"এর ছোট্ট চরিত্রটি সমাজের অসঙ্গতি দেখে দেখে মনোবৈকাল্যের শিকার হয়ে এমন এক বিভীষিকায় রূপান্তরিত হয়েছিল যে তার বিকট চিৎকারে মাটি বিদীর্ণ হত।আমাদের শিক্ষা,সমাজ ও রাষ্ট্রাচারের বর্তমান অসঙ্গতির চালচিত্র দেখে গ্রাসকে বড় প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে।এ যেন রবীন্দ্রনাথের অচলায়তনের বাংলাদেশ।মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ, মনুষ্যত্বের এই অন্তহীন প্রতিকারহীন পরাভবকে চরম বলিয়া বিশ্বাস না করে কবিগুরুর ভাষায় বলতে হয়,

" ওরে অবুঝ ওরে আমার কাঁচা,
আধমরাদের ঘাঁ দিয়ে তুই আমারে বাঁচা।"

মুক্তিযুদ্ধ দেখার সৌভাগ্য হয়নি, কিন্তু মনিরূজ্জামান স্যারের,
" কবিতায় আর কি লিখব যখন বুকের রক্তে লিখেছি
একটি নাম বাংলাদেশ।
গানে আর ভিন্ন কি সুরের ব্যাঞ্জণা যখন হানাদারবদ সংগীতে,
স্বদেশের তরুন হাতে অবিরাম বেজেছে মর্টার,মেশিনগান আর গ্রেনেড।"
পড়ি তখন নিজের গাঁয়ে চিমটি কেটে জানতে ইচ্ছে করে এই কি সেই উদ্দাম তারুন্যের বার্ধক্যপীড়িত উত্তরসূরী! মস্তিষ্ক বিকৃতি,জঙ্গীবাদ আর ইয়াবা নেশায় বুঁদ হয়ে যারা ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে?????? এ যেন ভিসুভিয়াসের অগ্নুৎপাতে ক্ষয়িষ্ণু কোন দিশেহারা পঙ্গপালের অনিশ্চিত গন্তব্যে ছুটে চলার ব্যর্থ প্রয়াস।হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার ঘুম কি ভাঙ্গবে?????

এ যেন জীবনানন্দের বেলা,অবেলা,কালবেলার সর্পিল পথে হেঁটে চলা হন্তারকের বাংলাদেশ।অভিনব নারকীয় কায়দায় শিশু হত্যায় ডুকরে কাঁদে প্রিয় পতাকা,স্বাধীনতা কিংবা সার্বভৌমত্ব। এ সকল বর্বরোচিত হত্যার তীব্র ঘৃণা প্রকাশ ভাষা দিয়ে নয় বরং প্রতিহিংসা দিয়ে করা উচিত।আর দায়িত্বশীলদের নির্বিকার নিস্তব্দতায় সাধারন জনগনের কাছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেন কবি গুরুর ভাষায়, " দিবস ও রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি।" এর মত অবস্থা।সুবিচারের আশায় রইলাম।

নিদারুন সামাজিক ব্যাধির এক নিষ্ঠুর বহিঃপ্রকাশ শিশু হত্যা।দু' মুঠো খাবারের জন্য শৈশবহীন শিশুরা যখন ভারী কাজে নিজেকে সঁপে দেয় তখন তাদের উপর মানুষরূপী হায়েনাদের পাশবিক নির্যাতন শুরু হয়।অরক্ষিত ম্যানহোল,ড্রেন কিংবা স্যুয়ারেজ লাইনতো আছেই। এ যেন খোলস পরা সমাজের জল্লাদীয় মুখোশ।শিশুর প্রতি আচরণই নাকি একটি সমাজের উন্নয়ের মানদন্ড।শেষ বিচারের দিন আমাকে আপনাকে নয় পুরো সমাজকেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।প্রস্তুত আছেন তো???????

"না উড়ে না পোড়ে বোধ,
মহাকাল নেবে ধ্বংসের শোধ।"
কৃষক,শ্রমিক,মজুরের বাংলাদেশ, জ্ঞানী,গুণী,মহাজনের বাংলাদেশ, সবুজ শ্যামলিমার বাংলাদেশ, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়া বাংলাদেশে যতই রাবন, অসুর,কিংবা মীরজাফরদের অশুভ প্রেতাত্মা ভর করুক না কেন এদেশের মানুষের ইষ্পাত কঠিন ঐক্যেই রচিত হবে বাংলাদেশের বাংলাদেশ।শামসুর রহমানের ভাষায়,
" বহুদিন থেকে আমাদের পৃথিবীতে শান্তি অনুপস্থিত,
সময়ের বিমর্ষ কিনারে এসে,তবু
নতুন দিনের আশা রাখি,
সে আশা চিরন্জীব হয়ে রয়
নবজাত সূর্যের ললাটে।।।

মানিক বন্দোপাধ্যায় "দিবারাত্রির কাব্য" উপন্যাস ও "প্রাগৈতিহাসিক" ছোট গল্পে নীচু শ্রেণীর মানুষের যে চিত্রায়ন করেছেন তাতে তুমি, আমি ও পূর্নিমার চাঁদের মত রোমান্টিকতা নেই, আছে ক্ষুধার রাজ্যে মানুষের বেঁচে থাকার নিরন্তর সংগ্রাৃমের কথা।এই দুঃস্থ কিন্তু অকুতোভয় মানুষের হাতিয়ারের গর্জনেই যে স্বাধীনতা পেয়েছি তাদের কথা ইতিহাসের চোরাবালিতে বিস্মৃত।এ যেন উচ্চবিত্ত ভুঁইফোর শ্রেণীর বাংলাদেশ।একটি খেতাব তো দূরে থাক সীমাহীন নিগ্রহের মধ্যে বেঁচে থাকা এসব মানুষের উপার্জিত করের টাকায় চলে রাষ্ট্রীয় বিলাসিতা।লুই, জার কিংবা অটোমানদের প্রেতাত্মারা যেন যুগে যুগে আরও হূস্টপুষ্ট হচ্ছে।রুশো,ভলতেয়ার,নিটশে ও ফ্রয়েডীয় ভাবধারা বিলুপ্তপ্রায় যেখানে কবি গুরুর ভাষায়,
" আমিতো দেখেছি প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে
বিচারের বাণী নীরবে- নিভৃতে কাঁদে"।

নোবেল বিজয়ী উরুগুইয়ান লেখক এদোয়ার্দু গালিয়ানো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, " আমরা এমন এক পৃথিবীর বাসিন্দা যেখানে প্রতি মিনিটে ২০ জন শিশু ক্ষুধার জ্বালায় মারা যায়,সেখানে প্রতি মিনিটে সামরিক ব্যয় ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার।" সামরিক ব্যায় যেখানে মানবিক ব্যায়কে অতিক্রম করে সেখানে পৃথিবী দানবিক হবেই।বড় অসময়ে জন্মেছিলেন ক্ষণজন্মা ফরাসি দার্শনিক বোদলেয়ার তার একটি উক্তি," আমি স্বর্গের পথে যেতে যেতে নরকের দরজায় উপনীত হয়েছি"।তেমনিভাবে আমরাও কি নিরাপদ সামরিক পৃথিবী নিশ্চিত করতে গিয়ে সর্বোচ্চ অনিরাপত্তায় চলে যাইনি? অনেকগুলো হিটলার, মুসোলিনি, বুশ ও ব্লেয়ারের চেয়ে একজন লালনের আবির্ভাব আজ বড় প্রয়োজন।

নির্লিপ্ত, প্রতিহিংসাপরায়ণ ও নির্মূলের রাজনীতিতে অনাগত প্রজন্মের যে মনোবিকার ঘটছে তা থেকে কেউ যদি রবি ঠাকুরের "বৌ ঠাকুরানীর হাট" উপন্যাসের আদলে বলে উঠে, " বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছিলাম বলেই সুখী হইতে পারি নাই,এদেশে সকলেই বিএনপি- আ লীগ হয়ে জন্মায় কেউ মানুষ হয়ে জন্মায় না"।এদেশে এখনও এই দু' দলে অনেক সৎ ও ন্যায়পরায়ন মানুষ আছে যাদের অব্যাহত অক্লান্ত প্রচেষ্টা সকল বিভেদ দূর করতে পারে।আসুন বাংলাদেশ বিনির্মানে ঐক্যবদ্ধ হই।

নোবেলজয়ী পর্তুগীজ লেখক হোসে সারামাগোর বিখ্যাত "অন্ধত্ব" উপন্যাসের মতই কি আমরা জাতি হিসেবে অন্ধত্ব বরণ করছি.....মানবাত্মা যখন দুরাত্মায় পরিণত হয় তখন হেনরিক ইবসেনের " গুরু নির্মাতা" রাও ধ্বংসলীলায় মেতে উঠে।জাতির ভাগ্য গার্সিয়া মার্কেজের," সময় যেন একই বৃত্তের আবর্তে ঘুরছে"। বিবাদ মেটাতে একজন ড্যারেন কালিলানের মত রেফারির আবির্ভাব বড্ড প্রয়োজন।

প্রযুক্তি ও পুঁজির বগ্লাহীন ঘোড়ায় সাওয়ার হয়ে আমরা সামাজিক ন্যায়বিচার,সাম্য ও মানবিক মর্যাদাবোধ হারিয়ে খাদের কিনারায়।গ্রামে গ্রামে, পাড়ায় পাড়ায়, গোত্রে গোত্রে, মানুষে মানুষে যে সংঘাত, যে বিভাজন,যে অনাস্থা,যে বিভীষিকা তা থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন সামাজিক মূল্যবোধ।"সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।" এই মধ্যযুগীয় মন্ত্র আজ বড় প্রয়োজন।

বিশটি বছর পর যদি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কোন একজন দিকপাল তার রাজনৈতিক ভাষণে বলেন,"বাংলার ইতিহাস ২১আগষ্টের গ্রেনেড হামলার ইতিহাস, বাংলার ইতিহাস চাপাতির কোপে অসহায় পুরোহিত হত্যার ইতিহাস বাংলার ইতিহাস শীতলক্ষায় ভেসে আসা সাতটি লাশের ইতিহাস, বাংলার ইতিহাস হলি আর্টিজানে আসা বন্ধুপ্রতীম বিদেশী নাগরিকদের নির্মম হত্যার ইতিহাস, বাংলার ইতিহাস ব্যাংকিং সেক্টরে সাগর চুরির ইতিহাস, বাংলার ইতিহাস পুলিশ কর্তৃক "কথিত বন্দুকযুদ্ধে"(টিভি চ্যানেলের নিউজ) মানুষ হত্যার ইতিহাস,,,,,,"তখন মুনকার নকীরের কাছে কি জবাব দেবেন বর্তমান ভারসাম্যহীন বিকলাঙ্গ নেতৃত্ব।

ভাগাড়ের উচ্ছিষ্ট হয়ে জন্মালেও ভাল হত! কুকুর বেড়ালের খাবারের ব্যবস্থা হত! এ কেমন মানব জনম চাপাতির কোপে জীবন শেষ!!!!টার্গেট কিলিং অপরাধের নতুন মাত্রা??? টকশোজীবি,রাজনীতিজীবীদের গা গরমের টনিক।মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয় নতুন লাশ, সংখ্যা বাড়ে, সংখ্যার মধ্যে যে প্রাণ আছেে আমরা বেমালুম ভুলে গেছি।নৈশব্দের শকুন কবে ছিঁড়ে খুবলে খাবে ঘুনে ধরা এ মানব সভ্যতাকে!!!!!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.