নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অ্যাকশনধর্মী সিনেমা দেখতে যারা পছন্দ করেন, তাদের কাছে সাধারণত মার্শাল আর্ট অর্থাৎ কুংফু-কারাতে সিনেমার আবেদন সবসময়ই অন্যরকম। কেননা, অধিকাংশ সময় অস্ত্র ছাড়া হাত-পায়ের সাহায্যে কিংবা মাঝে মাঝে অস্ত্র নিয়ে অনেকটা শৈল্পিক কায়দায় ফাইটিং দৃশ্যগুলো দর্শকদের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতির সঞ্চার করে।
জ্যাকি চ্যান, ব্রুস লী, জেট লী, টনি জা, ডনি ইয়েনসহ আরো অনেক অভিনেতার এরকম ফাইটিং দৃশ্যগুলো দর্শকের নজর কাড়ে অতি সহজে। তবে অধিকাংশ মানুষই মনে করে যে, মার্শাল আর্ট মানে হলো চীনের কুংফু-কারাতে। কিন্তু মার্শাল আর্ট কেবল চীনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। চীন ছাড়াও পৃথিবীর আরো অনেক জায়গায় মার্শাল আর্টের আরো অনেক শাখা প্রশাখা আছে। অর্থাৎ মার্শাল আর্ট বস্তুতপক্ষে একটি বৃহৎ ধারণা। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ আত্মরক্ষার তাগিদে মার্শাল আর্টের অনুশীলন করে আসছে।
মার্শাল আর্ট কী?
প্রথমে জানা যাক মার্শাল আর্ট বলতে কি বোঝায়। মার্শাল আর্ট শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘Art of Martial’ অর্থাৎ ‘যুদ্ধের শিল্প’। মার্শাল আর্ট বলতে আসলে বোঝায় যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি ও কলাকৌশল। এই পদ্ধতি কখনো কখনো সংহিতাবদ্ধ অর্থাৎ কিছু সূত্রবদ্ধ অথবা কখনো কখনো সূত্রবদ্ধ নয় অর্থাৎ বিক্ষিপ্ত। প্রকৃতপক্ষে এসব বিভিন্ন ধরনের মার্শাল আর্টের উদ্দেশ্য হচ্ছে শারীরিকভাবে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করা এবং যেকোনো ধরনের ভয়ভীতির প্রতি রুখে দাঁড়ানো। আবার কিছু কিছু মার্শাল আর্ট আধ্যাত্মিক সাধনা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে যোগবদ্ধ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বৌদ্ধধর্ম, দাওবাদ কিংবা শিন্টো।
যদিও অন্যান্য ধর্মের বিশ্বাস কেবল মার্শাল আর্টের সাথে যুক্ত না। কিন্তু প্রাচীনকাল থেকেই যুদ্ধবিগ্রহ মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। প্রতিপক্ষ বা কোনো হুমকির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য মার্শাল আর্টের ব্যবহার হয়েছে সবসময়ই। মূলত মার্শাল আর্ট শব্দগুচ্ছের উৎপত্তি হয়েছে রোমানদের যুদ্ধের দেবতা মার্সের নামানুসারে।
মার্শাল আর্টের উৎপত্তি
মার্শাল আর্টের সাথে পূর্ব এশীয় সংস্কৃতির অনেক সংযোগ পাওয়া গেলেও, এটি যে কেবল এশীয়দের মৌলিক সম্পদ এমনটা নয়। কারণ আগেই বলা হয়েছে যে, পৃথিবীর আরো নানা অঞ্চলে আরো নানা প্রকার মার্শাল আর্টের জন্ম হয়েছে। যেমন- ইউরোপে বর্তমান সময়ের অনেক আগেই যুদ্ধ করার জন্য একধরনের মার্শাল আর্টের প্রচলন ছিলো, যার পরিচিতি ছিলো প্রাচীন ইউরোপীয় মার্শাল আর্ট নামে। পঞ্চদশ শতকে ইউরোপীয়রাই ‘মার্শাল আর্ট’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে। আবার স্যাভাট নামক একপ্রকার ফরাসি মার্শাল আর্ট ছিলো যা ছিলো মূলত লাথি মারার বিভিন্ন কৌশল। এই মার্শাল আর্টের সৃষ্টি হয়েছিলো নাবিক এবং স্ট্রিট ফাইটারদের হাত ধরে (অথবা পা ধরে!)। সহজাত আমেরিকানদের মধ্যেও খালি হাতে মারামারি করার পদ্ধতি ছিলো যার মধ্যে রেসলিং অন্যতম। হাওয়াইদের মধ্যেও কিছু কিছু প্রতিরক্ষার পদ্ধতি ছিলো। কাপুরা নামক একধরনের আক্রমণাত্মক মার্শাল আর্টের সূচনা হয়েছিলো ব্রাজিলে। এই মার্শাল আর্টের সূচনা করেছিলো ব্রাজিলের আফ্রিকান দাসেরা।
যদিও এসব মার্শাল আর্টের মৌলিকত্ব আছে, তবুও এরা একে অপরের থেকে অনেকটাই আলাদা। সাধারণ যে বৈশিষ্ট্য সবগুলো পদ্ধতির মধ্যে আছে সেটি হচ্ছে, এরা সকলেই প্রতিরক্ষা ও আক্রমণের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি এবং এদের কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন আছে।
মার্শাল আর্টের সঠিক উৎপত্তিস্থল কোথায় এ নিয়ে মতবিরোধ আছে। তবে মার্শাল আর্টের কথা শুনলেই সকলে এশিয়াকে নির্দিষ্ট করতে চায়। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৬০০ অব্দের দিকে ভারত এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের শুরু হয়। ভারতীয় ইতিহাসবিদেরা মনে করেন যে, এই সময়েই ভারত থেকে মার্শাল আর্ট সংস্কৃতি চীনে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে চীনের ইতিহাসবিদেরা বলেন ঠিক এর উল্টো কথা। আমরা ধরে নিতে পারি, উভয় দেশের নিজস্ব মার্শাল আর্টের মধ্যে মিশ্রণ ঘটেছিলো ভালোভাবেই।
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায়, বোধিধর্মা (ডরুমা নামেও তিনি পরিচিত) নামক একজন ভারতীয় সন্ন্যাসী বাস করতেন খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫০ অব্দে। বিশ্বাস করা হয়ে থাকে, তিনি জেন বৌদ্ধধর্মের আধ্যাত্মিক দর্শনের ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি এই দর্শনের মাধ্যমে চীনের শাওলিন মন্দিরের অস্ত্রবিহীন অর্থাৎ খালি হাতে যুদ্ধ করার পদ্ধতিকে প্রভাবিত করেন। মতান্তরে, তিনিই শাওলিন মার্শাল আর্টের প্রবর্তন করেন। কিন্তু এই আর্টের উদ্দেশ্য কেবল একে অপরের সাথে যুদ্ধ করাই ছিলো না, বরং ছিলো নিজের সাথেও যুদ্ধ করা, নিজের সংযমকে সুদৃঢ় করা, নিয়মানুবর্তিতার অনুশীলন করা, নম্রতার শিক্ষা গ্রহণ করা এবং শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করা।
এশিয়ার এই মার্শাল আর্টের চর্চা ছিলো মূলত গুরু-শিষ্য পরম্পরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। গুরুদের সাধারণত চীনা বা মান্দারিন ভাষায় ‘শিফু’ (Sifu), জাপানি ভাষায় ‘সেনসি’ (Sensei) এবং কোরিয়ান ভাষায় ‘সা বুম নিম’ (Sa Bum Nim) বলা হতো।
প্রাচীন মার্শাল আর্টসমূহ
প্রাচীনকালে মার্শাল আর্টের বিস্তৃতি মোটামুটি সারা পৃথিবীতে হলেও বিশেষ করে এশিয়া অঞ্চলের দিকে এর বিস্তৃতি এবং ব্যবহার বেশি দেখা যায়। এরকম কিছু প্রাচীনতম মার্শাল আর্ট সম্বন্ধে জানা যাক।
রেসলিং বা গ্রেপলিংঃ
মার্শাল আর্টের প্রকৃত সংজ্ঞা নিয়ে যাচাই করলে দেখা যায় যে রেসলিং বা গ্রেপলিংহচ্ছে সম্ভবত সবথেকে প্রাচীন মার্শাল আর্ট। ধারণা করা হয়, এই ধরনের মার্শাল আর্টের উৎপত্তি খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দের দিকে, কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে সেই সময়টা খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দের আরো আগে। এর উৎপত্তিস্থলের সঠিক ধারণা না পাওয়া গেলেও মনে করা হয়, এর জন্ম প্রাচীন মিশরে। যদিও প্রাচীন মিশরের অনেক আগের মূর্তিসমূহে দেখা যায় দুজন ব্যক্তির মধ্যে রেসলিং বা গ্রেপলিং কৌশলে যুদ্ধের দৃশ্য।
প্রাচীন বিভিন্ন সংস্কৃতির ইতিহাসে বিভিন্ন ধরনের রেসলিং-এর বর্ণনা দেয়া আছে। কাজেই এর শিকড় খুঁজে পাওয়াটা বাস্তবিকই খুব কঠিন। গ্রিসে রেসলিং একটি জনপ্রিয় মার্শাল আর্ট যা গ্রিসের ঐতিহ্য অলিম্পিকের একটি ইভেন্টও ছিলো। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের দিকে প্যাপিরাসে লেখা একটি গ্রিক পান্ডুলিপি থেকে রেসলিংয়ের নিয়মকানুন সম্বন্ধে জানা যায়। এই পান্ডুলিপিই রেসলিংকে প্রাচীনতম মার্শাল আর্ট হিসেবে সবার সামনে পরিচিত করায়।
বক্সিংঃ
অনেকে বক্সিং এবং রেসলিংয়ের মধ্যে গুলিয়ে ফেলেন, যদিও এরা একই জিনিস নয়। রেসলিংয়ের মতো বক্সিংকে প্রাচীনতম মার্শাল আর্ট হিসেবে ধারণা করা হয়। যদিও এর উৎপত্তির স্থান ও কাল সম্পর্কে সঠিক কোনো সূত্র পাওয়া যায় না, তথাপি ধারণা করা হয় যে, এর জন্ম হয়েছিলো খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের দিকে প্রাচীন সুমেরিয়ান সভ্যতার মানুষের হাত ধরে। প্রাচীন সুমেরিয়া বর্তমান সময়ের ইরাকের দক্ষিণাঞ্চল। সুমেরিয়ান সভ্যতা ছিলো প্রথমদিকের প্রাচীন মানব সভ্যতাসমূহের মধ্যে একটি। যদিও অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতার সংস্কৃতিতেও বক্সিংয়ের ধারণা পাওয়া যায়।
বক্সিংকে খ্রিষ্টপূর্ব ৬৮৮ অব্দের দিকে গ্রিসের অলিম্পিকে যুক্ত করা হয়। প্রাচীনকালে যেমন এটি জনপ্রিয় ছিলো, আধুনিক সময়েও এর জনপ্রিয়তা অনেক। একে বলা চলে একধরনের সফল মিশ্র মার্শাল আর্ট।
মল্লযুদ্ধঃ
মল্লযুদ্ধকেও একপ্রকার রেসলিং বলা চলে। তবে এর জন্ম এশিয়াতে; বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়াতে। এই অঞ্চলের মধ্যে পড়ে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা এবং নেপাল। ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের দিকে মল্লযুদ্ধের জন্ম। লোককাহিনী অনুসারে জানা যায়, এক কিংবদন্তী মলয় যোদ্ধা মল্লযুদ্ধের অনুশীলন করতেন। মল্লযুদ্ধের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতকে ভারতবর্ষের প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতে।
মল্লযুদ্ধকে আবার চারটি ভাগে ভাগ করা হয়, যার প্রতিটি বিভাগকে হিন্দুধর্মীয় বীরদের নামানুসারে নামকরণ করা হয়। এর মধ্যে আছে হনুমানতি, যেখানে কারিগরি শ্রেষ্ঠত্বের দিকে মনোযোগ দেয়া হয়; জাম্বুবানতি, যেখানে প্রতিযোগীকে শক্তির সাহায্যে আঁকড়ে ধরে রেখে হার মানতে বাধ্য করা হয়; জরাসন্ধি, যেখানে হাত-পা ও শরীরের জোড়া অংশগুলো ভেঙে ফেলার দিকনিদর্শন দেয়, এবং সর্বশেষ ভীমসেনি, যেখানে মোচড় দিয়ে প্রতিযোগীকে কাবু করতে শিক্ষা দেয়। যদিও ষোড়শ শতকের দিকে মল্লযুদ্ধের জনপ্রিয়তা লীন হতে থাকে। এখনো দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অঞ্চলে এর অনুশীলন হয়ে থাকে।
সুয়াই জাওঃ
সুয়াই জাও-কে ইংরেজীতে চীনা রেসলিংও বলা হয়ে থাকে। ধারণা করা হয়, এটি চীনের প্রাচীনতম মার্শাল আর্ট। এর প্রথম ব্যবহার রেকর্ড করা হয় খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ২৬৯৭ অব্দের দিকে, যখন কিংবদন্তী ইয়েলো এম্পেরর তার প্রতিপক্ষ শি ইউয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। তখন একে বলা হতো ‘জাও তাই'।জাও তাই ছিলো মূলত একধরনের পদ্ধতিগত যুদ্ধকৌশল, যা জাও লি নামেও পরিচিত ছিলো। ঝু সাম্রাজ্যের সময়ে সৈনিকদের মধ্যে এ ধরনের মার্শাল আর্টের অনুশীলন করা হতো। এটি কিন সাম্রাজ্যের সময়ে একটি জনপ্রিয় খেলাও ছিলো। জানা যায়, এই জাও যোদ্ধাদের মধ্যে সর্বোত্তম যোদ্ধাদের বাছাই করে সম্রাটের দেহরক্ষী করা হতো। আধুনিক সময়েও চীনের পুলিশ এবং মিলিটারি বাহিনীকে এই জাও নামক মার্শাল আর্টের অনুশীলন করানো হয়।
প্যানক্রেশনঃ
প্যানক্রেশন মূলত একধরনের মিশ্র মার্শাল আর্ট, যেখানে রেসলিংয়ের সাথে বক্সিংয়ের মিশ্রণ ছিলো, সাথে আরো ছিলো কিকিং। ধারণা করা হয়, এটির উৎপত্তি গ্রিসে খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ২০০০ অব্দের দিকে। গ্রিক পুরাণ অনুসারে, হেরাক্লিস (বা হারকিউলিস) প্যানক্রেশন মার্শাল আর্টের ব্যবহার করেছিলো নিমিয়ান সিংহের সাথে যুদ্ধ করার সময়। থিসিয়াসও এই মার্শাল আর্ট ব্যবহার করেছিলো মাইনটরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময়ে। এছাড়াও খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দের আগে স্পারটান হোপলাইটগণ (ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পদাতিক সৈনিক) এবং অ্যালেকজান্ডার দ্য গ্রেটের ম্যাসিডোনিয়ান ফ্ল্যাংস সেনারা এই ধরনের মার্শাল আর্ট যুদ্ধে ব্যবহার করতো।
কালারিপায়াত্তুঃ
যদিও অন্যান্য প্রাচীন মার্শাল আর্টের মতো কালারিপায়াত্তু অতটা প্রাচীন নয়, তবুও একে প্রাচীন মার্শাল আর্ট শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর ইতিহাস পাওয়া যায় ভারতীয় বৈদিক যুগের প্রায় ৩০০০ বছর পূর্বে। বেদ ছিলো ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন গ্রন্থ, যেটি ছিলো নানারকম জ্ঞানের এক বিশাল আধার।
কিংবদন্তী অনুসারে জানা যায়, কালারিপায়াত্তু সৃষ্টি করেছিলেন পরশুরাম। পরশুরাম ছিলেন হিন্দুধর্মের ঈশ্বর বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার। পরশুরাম পৃথিবী থেকে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের হেতু ২১ বার যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং অত্যাচারী ক্ষত্রিয় রাজাদের নিধন করেন। মহাভারতের কাহিনী থেকে জানা যায়, তিনি পরবর্তীতে একজন অস্ত্রগুরু হয়েছিলেন। অনেকে মনে করেন, শাওলিন কুংফু কালারিপায়াত্তুর দ্বারা প্রভাবিত। কারণ বোধিধর্মা, যিনি একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং কালারিপায়াত্তু শিক্ষক, শাওলিন কুংফুর শিক্ষক হিসেবেও পরিচিত।
তাইকিয়নঃ
ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টপূর্ব ৫০ অব্দের দিকে তাইকিয়ন (Taekkyon) নামক মার্শাল আর্টের উৎপত্তি এবং এর উৎপত্তিস্থল কোরিয়া। প্রাচীন মার্শাল আর্টের মধ্যে এটিও গণ্য হয়। প্রাচীন এই মার্শাল আর্টের ধারণা পাওয়া যায় গগুরিও (Goguryeo) সাম্রাজ্যের রাজা মুওংচং (Muyongchong) এবং সামসিলচং (Samsilchong) এর সমাধিতে অঙ্কিত চিত্রকর্ম থেকে। আরো ধারণা পাওয়া যায়, গগুরিও সাম্রাজ্যের সময়ে সৈনিকদের মধ্যে এই ধরনের মার্শাল আর্টের প্রচলন ছিলো। পঞ্চদশ শতকের দিকে এই মার্শাল আর্ট খুব পরিচিত লাভ করে এবং সেটি সাম্রাজ্যের মধ্যে একপ্রকার খেলা এবং আনন্দ-বিনোদনের উৎসেও পরিণত হয়।ত্রয়োদশ শতকের শেষদিকে এসে মার্শাল আর্ট হিসেবে তাইকিয়ন অতটা সক্রিয়ভাবে আর অনুশীলন করা হতো না। তাইকিয়ন সংরক্ষণ করেছিলেন সং ডুক-কি (Song Duk-ki) নামক একজন ব্যক্তি, যিনি পরবর্তীতে আধুনিক কোরীয়ানদের মধ্যে একে আবার পরিচিত করান। ১৯৮০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তাইকিয়ন মার্শাল আর্ট হিসেবে আবার বিখ্যাত হয়ে ওঠে। বর্তমানে কোরিয়ায় এর অনুশীলন করা হয় এখনো।
প্রাচীন মানুষের প্রতিপক্ষকে আক্রমণ এবং আত্মরক্ষায়র নিমিত্তে সৃষ্টি হয়েছিলো মার্শাল আর্টের। পরিবর্তনের ধারায় মার্শাল আর্ট এখন কেবল মানুষের আত্মরক্ষার ভিত্তিই নয়, সেটি হয়েছিলো আধ্যাত্মিক চেতনারও অংশ, হয়েছে বিনোদনের মাধ্যম।
মার্শাল আর্টের শুরুটা প্রথমত আত্মরক্ষার প্রয়োজনে হলেও সেটি আস্তে আস্তে ধর্মীয় চেতনা এবং বিনোদনের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে যুগের পর যুগ ধরে। কিছু মার্শাল আর্ট হারিয়ে গিয়েছে, আবার কিছু টিকে আছে। কিছু মার্শাল আর্ট হয়েছে কোনো জাতির স্বাধীনতার অন্যতম পন্থা।
তবে বর্তমানের মার্শাল আর্ট বলতে মূলত মিশ্র মার্শাল আর্টকেই বোঝানো হয়। মিশ্র মার্শাল আর্ট হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার মৌলিক মার্শাল আর্টের সমন্বয়। যে মাস্টার কারাতে-তে অভিজ্ঞ তিনি রেসলিংয়ে অভিজ্ঞ না-ও হতে পারেন। এখন তাকে যদি রেসলিংয়ে অভিজ্ঞ কোনো মাস্টারের সাথে দ্বন্দ্ব করতে হয় তাহলে সেটা অসম হয়ে যাবে। এর থেকেই মূলত মিশ্র মার্শাল আর্টের সৃষ্টি। এতে করে কোনো একধরনের মার্শাল আর্টের দুর্বল দিকে বিশেষ নজর দিয়ে শক্তিশালী করা যায়।
পৃথিবীতে বর্তমানে বিভিন্ন প্রকার মার্শাল আর্টের অস্তিত্ব থাকলেও এদেরকে কয়েকটি নির্দিষ্ট ভাগে ভাগ করা যায়।
মার্শাল আর্টের প্রকারভেদঃ
সাধারণত সারাবিশ্বে মার্শাল আর্টের বিভিন্ন প্রকার কলাকৌশল থাকলেও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এদেরকে কয়েকটি বিভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, অস্ত্রসহ (Armed) অথবা অস্ত্রবিহীন (Unarmed), স্ট্যান্ড-আপ স্টাইল বা গ্রাউন্ড ফাইটিং স্টাইল ইত্যাদি। তবে সাধারণ হিসেবে ছয়টি ভাগে এদের ভাগ করা হয়ে থাকে। যেগুলো হলো-
১) স্ট্রাইকিং স্টাইল বা স্ট্যান্ড-আপ স্টাইল যেমন, বক্সিং, কারাতে, ক্রাভ মাগা, কুংফু, কিক-বক্সিং, তাইকুন্ডু ইত্যাদি।
২) গ্রেপ্লিং স্টাইল বা গ্রাউন্ড ফাইটিং স্টাইল যেমন, ব্রাজিলীয় জুজুৎসু, রাশিয়ান সাম্বো, শুটফাইটিং, রেসলিং ইত্যাদি।
৩) থ্রোয়িং স্টাইল বা টেক-ডাউন স্টাইল যেমন, আইকিডো, জুডো, হাপকিডো, শুয়াই জাও ইত্যাদি।
৪) ওয়েপন বেসড স্টাইল যার মধ্যে আছে গতানুগতিক অস্ত্রভিত্তিক (ফেন্সিং, গাটকা, কালি, কেন্ডো সিলামবাম ইত্যাদি) এবং আধুনিক অস্ত্রভিত্তিক (এসক্রিমা, জুগো ডু পাউ, জুকেন্ডো ইত্যাদি)
৫) লো ইম্প্যাক্ট অথবা মেডিয়েটিভ স্টাইল যেমন, বাগুয়াজাং, তাই চাই, চাই গং ইত্যাদি।
৬) মিক্সড মার্শাল আর্টস যেমন, পেনকেক সিলাত (ইন্দোনেশিয়ান মার্শাল আর্ট)
বিবর্তন এবং আধুনিক মার্শাল আর্টঃ
মার্শাল আর্টকে স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দুই ভাগেই ভাগ করা হয়; অস্ত্রসহ এবং অস্ত্রবিহীন। অস্ত্রসহ মার্শাল আর্টের মধ্যে আছে আর্চারি (Archery অর্থাৎ, তীর-ধনুক), তলোয়ার পরিচালনা কিংবা বর্শা নিক্ষেপ। আবার অস্ত্রবিহীন যেসব মার্শাল আর্ট প্রচলিত ছিলো, ধারণা করা হয় সেসব চীনে জন্ম নেয়। এসব অস্ত্রহীন মার্শাল আর্টের উদ্দেশ্য হচ্ছে শুধুমাত্র হাত-পায়ের সাহায্যে যুদ্ধ করার কৌশল। জাপানে সাধারণত মিলিটারিদের মধ্যে মার্শাল আর্টের প্রচলন ছিলো। তবে সাধারণ মানুষজনও মার্শাল আর্টের প্রতি অনুরক্ত ছিলো।
জাপানের বহুল প্রচলিত মার্শাল আর্ট পরিচিত ছিলো নিনজুৎসু নামে। নিনজা (Ninja) বলতে আমরা যাদের বুঝি মূলত এরা এই নিনজুৎসু টাইপের মার্শাল আর্ট অনুশীলন করে। তবে নিনজাদের অনেকে আততায়ীও মনে করেন। যদিও নিনজুৎসু অনুশীলন করতো প্রাদেশিক জাপানের মিলিটারি গুপ্তচরেরা। এই মার্শাল আর্টের মধ্যে শেখানো হতো গুপ্তবেশ ধারণ করা, পালিয়ে আসার বিভিন্ন পদ্ধতি ইত্যাদি। এমনকি এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলো ভূগোল, ঔষধি এবং বিস্ফোরক সমূহের জ্ঞান।প্রায় ঊনবিংশ শতকের দিকে পূর্ব এশিয়ার মার্শাল আর্টের প্রতি পশ্চিমাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। যদিও তখন চীনের মার্শাল আর্ট বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে। কিন্তু চীন প্রথমদিকে মার্শাল আর্টের সংস্কৃতিকে তাদের দেশের বাইরে বের হতে দেয়নি। তবে পরবর্তীতে যখন পশ্চিমাদের সাথে পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়তে থাকে, তখন চীন মার্শাল আর্টকে আর গুপ্ত রাখতে পারেনি। অপরদিকে পশ্চিমারাও মার্শাল আর্টের গুরুত্ব অনুভব করেছিলো খুব ভালোভাবেই। সেইসময়ে হাতেগোনা কিছু পশ্চিমা মার্শাল আর্টের অনুশীলন করতো। তবে স্রেফ একপ্রকার ব্যায়াম বা দক্ষতা হিসেবে।
এডওয়ার্ড উইলিয়াম বারটন রাইট নামক রেলওয়ের একজন ইঞ্জিনিয়ার জাপানে থাকাকালীন সময়ে জুজুৎসু শেখেন। ধারণা করা হয় যে, তিনিই প্রথম ইউরোপীয় দেশসমূহে এই জুজুৎসু মার্শাল আর্টকে নিয়ে আসেন। তিনি নতুন একপ্রকার মার্শাল আর্টের প্রচলন করেন যার নাম দেন ব্রিটিৎসু। এটি ছিলো জুজুৎসু, জুডো, বক্সিং, স্যাভাট এবং স্টিক ফাইটিং স্টাইলের সমন্বয়। এর ফলে পশ্চিমা দেশগুলোর মিলিটারিরা মার্শাল আর্টের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তারা চীন, জাপান এবং কোরিয়াতে গিয়ে মার্শাল আর্ট শিখতে শুরু করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে উইলিয়াম ফেয়ারবার্নকে নিয়োগ করা হয় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডিয়ান কমান্ডো এবং রেঞ্জার ফোর্সকে জুজুৎসু শেখানোর জন্য। উইলিয়াম ফেয়ারবার্ন ছিলেন সাংহাই পুলিশের একজন অফিসার এবং এশিয়ান ফাইটিং স্টাইলের একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি।
এভাবে আস্তে আস্তে মার্শাল আর্ট ছড়িয়ে পড়ে পড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এবং অন্যান্য দেশের মার্শাল আর্টের সাথে মিশে গিয়ে নতুন ধরনের মার্শাল আর্টের জন্ম দিতে থাকে। যেমন জাপানের তে-ইন-ওকিনাওয়া, জুজুৎসু এবং কেনজুৎসু কিংবা কোরিয়ার তাইকিয়ন বা সুবাক অন্যান্য মার্শাল আর্টের সাথে মিশে সৃষ্টি হয় কারাতে, আইকিডো বা তাইকুন্ডুর মতো আধুনিক এবং জনপ্রিয় মার্শাল আর্টের।
১৯৭০ এবং ১৯৮০ সালের দিকে মার্শাল আর্টের প্রতি মিডিয়াও অনেক আকৃষ্ট হয়। এর ফলে মার্শাল আর্টের জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পায়। মার্শাল আর্টের এই জনপ্রিয়তার জন্য এশিয়ান এবং হলিউডের মার্শাল আর্ট সিনেমাগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী এবং ব্রুস লি, জ্যাকি চ্যান, কিংবা জেট লির মতো মার্শাল আর্ট অভিনেতারাও ধন্যবাদ পাওয়ার দাবীদার। ১৯৬৪ সালে জুডো এবং ২০০০ সালে তাইকুন্ডু অলিম্পিকের ইভেন্ট হিসেবে যুক্ত হয়। একবিংশ শতকের শুরুর দিকে মিশ্র মার্শাল আর্ট পরিচিত লাভ করতে শুরু করে। মিশ্র মার্শাল আর্ট মানে নানাপ্রকার মার্শাল আর্টের মিশ্রণ।বর্তমান সময়ে অস্ত্রসহ মার্শাল আর্টের বিভিন্ন জাতক, যেমন- কেন্ডো অথবা কিডো (আর্চারি) জনপ্রিয় খেলা হিসেবে অনুশীলন করা হয়। আবার অস্ত্রবিহীন মার্শাল আর্ট যেমন জুডো, সুমো, কারাতে কিংবা তাইকুন্ডুর বিভিন্ন জাতক যেমন- আইকিডো, হাপকিডো অথবা কুংফু মূলত আত্মরক্ষার জন্য অনুশীলন করা হয়। তাই চাই নামক চীনের একটি সহজ মার্শাল আর্ট মূলত অনুশীলন করা হয় একধরনের শারীরিক কসরত হিসেবে। যদিও অনেকে একে প্রকৃত মার্শাল আর্ট হিসেবে মানতে চান না।
ইতিহাসের কয়েকজন বিখ্যাত মার্শাল আর্টিস্ট
মাশাহিকো কিমুরাঃ
কিমুরা (Masahiko Kumura) ছিলেন একজন বিস্ময়কর মার্শাল আর্টিস্ট। মাত্র ছয় বছরের অনুশীলনকে মুলধন করে কিমুরা ১৫ বছর বয়সে ইয়োনড্যান বা চতুর্থ ড্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৩৫ সালে আটজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে কিমুরা হয়ে উঠেছিলেন সর্বকনিষ্ঠ ফিফথ ডিগ্রী ব্লাকবেল্টধারী। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি সমগ্র জাপানের মুক্ত ভর (Open weight) জুডো বিজয়ী খেতাব লাভ করেন। এই খেতাব তিনি পরবর্তী ১৩ বছর বহন করেছিলেন।
১৮৫১ সালে তিনি ব্লাজিলে একটি জুজুৎসু ম্যাচে হেলিও গ্রেসিয়ে কে পরাজিত করেন। তিনি এমন একটি কৌশলের প্রদর্শন করেন, যেটির কারণে তার প্রতিপক্ষের হাত ভেঙে যায়। তিনি প্রতিপক্ষের আক্রমণের এই যে পাল্টা কৌশল দেখিয়েছিলেন, সেটি পরবর্তীতে তার নামানুসারে ‘কিমুরা’ কৌশল নামে পরিচিত হয়।
ইপ ম্যানঃ
সিনেমার কল্যাণে ইপ ম্যান (Yip Man) নামের সাথে আমরা মোটামুটি সবাই পরিচিত। অনেকে আবার ইপ ম্যান চরিত্রে অভিনয় করা ডনি ইয়েনকেই সত্যিকার ইপ ম্যান মনে করে বসেন। মূলত ইপ ম্যান ছিলেন একজন উচ্চ পর্যায়ের ঊইং চুন (Wing chun) এবং ঊশু (Wushu) নামক চায়নিজ মার্শাল আর্টের মাস্টার। পরবর্তীতে তার ছাত্রেরা চীনের বিভিন্ন প্রান্তে মার্শাল আর্টকে সমৃদ্ধ করেন। ব্রুস লী এবং উইলিয়াম চেং ছিলেন এদের মধ্যে অন্যতম যারা মার্শাল আর্টের সমূহ উন্নতি করেন। তার কিংবদন্তী নিয়েই তৈরী হয়েছে ‘ইপ ম্যান’ সিনেমা সমূহ।
চাক নরিসঃ
চাক নরিস (Chuck Norris) মূলত ট্যাং সু ডু (Tang soo do) নামক মার্শাল আর্টের উপর প্রশিক্ষণ নেন এবং ব্লাকবেল্ট লাভ করেন। এছাড়াও তিনি তাইকুন্ডু, ব্রাজিলিয়ান জুজুৎসু এবং জুডোর উপর ব্ল্যাকবেল্ট লাভ করেন। তিনি নিজেও নতুন একধরনের মার্শাল আর্টের সূচনা করেন যার নাম তিনি দেন চুন কুক ডু (Chun kuk do)। মাঝারি ওজনের (Medium weight) কারাতে-তে তিনি ছিলেন প্রফেসনাল চ্যাম্পিয়ন। প্রায় ৩০টির মতো টুর্নামেন্ট তিনি জিতেছেন। এছাড়া তিনি অভিনয়ও করেছেন বেশ কিছু সিনেমায়। বিশেষ করে ব্রুস লী-র বিপরীতে মার্শাল আর্ট দৃশ্যে।
জিগোরো কানোঃ
কানো (Jigoro Kano) ছিলেন একজন জুজুৎসু অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি জুজুৎসু থেকে জুডো নামক মার্শাল আর্টের সৃষ্টি করেন। তার কোদোকান জুডো স্টাইল এখনও বেশ প্রসিদ্ধ। তিনি জাপানের স্কুলগুলোতে জটিল কলাকৌশলে ভরা মার্শাল আর্ট-কে সরিয়ে জুডোকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
গিচিন ফুনাকোশিঃ
গিচিন ফুনাকোশি (Gichin Funakoshi) ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি কারাতে-তে সর্বোচ্চ উপাধি ‘পঞ্চম ড্যান’ লাভ করেন। কোনো মানুষের জীবদ্দশায় এর বেশি উপাধি লাভ করা সম্ভব না। তিনি নিজস্ব একপ্রকার মার্শাল আর্টের প্রতিষ্ঠা করেন যেটি শটোকান (Shotokan) নামে পরিচিত। শটোকান বর্তমানে সর্বাধিক প্রচলিত কারাতে কৌশল। ফুনাকোশির লেখা "The Twenty Guiding Principles of Karate" কারাতের উপর লেখা তার কারাতে দর্শন। এই ২০টি সূত্রই শটোকান কারাতের মূলভিত্তি।
হেলিও গ্রেসিয়েঃ
হেলিও গ্রেসিয়ে (Helio Gracie) ছিলেন ব্রাজিলিয়ান জুজুৎসুর জনক। তিনি যুবা বয়সে তার অন্যান্য ভাইদের থেকে ছিলেন বেশ দুর্বল। অন্ততপক্ষে কারাতে, জুডো বা তাইকুন্ডু শেখার পক্ষে দুর্বল তো ছিলেন। তাই তিনি নিজেই এসব মার্শাল আর্টকে নিজের মতো করে পরিবর্তিত করে নেন, যেন খুব সবল না হলেও সেই মার্শাল আর্ট অনুশীলন করা যায়। এই পরিবর্তনের ফলাফলই ব্রাজিলিয়ান জুজুৎসু। জীবদ্দশায় তিনি এই মার্শাল আর্টের সাহায্যে বেশ কিছু টুর্নামেন্ট জেতেন। পরবর্তীতে তার ছেলে রয়েস গ্রেসিয়ে এই মার্শাল আর্টের মাধ্যমে আরো উন্নতি করেন।
রয়েস গ্রেসিয়েঃ
রয়েস গ্রেসিয়ে (Royce Gracie) ছিলেন হেলিও গ্রেসিয়ের ছেলে। তিনি তার বাবার সৃষ্টি করা জুজুৎসুর মাধ্যমে পর পর তিনটি ‘আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশীপ’ (UFC) টুর্নামেন্ট জেতেন। সেই সময়ে কোন মার্শাল আর্ট শ্রেষ্ঠ, সেটি নিয়ে বেশ তর্ক-বিতর্ক ছিলো। কারাতে, কুংফু, তাইকুন্ডু এবং বক্সিং-কে সেই সময়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হতো। কিন্তু রয়েস গ্রেসিয়ে তিনটি ইউএফসি জিতে এই শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা পাল্টে দেন। এভাবে তিনি মিশ্র মার্শাল আর্টকে সবার সাথে পরিচিত করিয়ে দেন। বর্তমানে মিশ্র মার্শাল আর্টই সর্বাধিক প্রচলিত মার্শাল আর্ট।
ব্রুস লীঃ
ব্রুস লী (Bruce Lee) বেশি পরিচিত মূলত তার অভিনয় পেশার জন্য। কিন্তু তার অভিনয়ের মাধ্যমেই তিনি মার্শাল আর্টকে নিয়ে গিয়েছেন অন্য উচ্চতায়। ইউএফসির সভাপতি ডানা হোয়াইটের ভাষ্যমতে ব্রুস লী-ই মিশ্র মার্শাল আর্টের জনক। অনেক উচ্চ পর্যায়ের মার্শাল আর্টিস্ট এবং অভিনেতা লী-কে তাদের অনুপ্রেরণা বলে উল্লেখ করেন। লী ছিলেন মূলত একজন ঊইং চুন মার্শাল আর্টে অভিজ্ঞ ব্যক্তি। একইসাথে তিনি জুডো, জুজুৎসু, বক্সিং এবং ফিলিপিনো মার্শাল আর্টেও দক্ষ ছিলেন। তাকে বলা হয় সর্বকালের সর্বাধিক প্রভাবশালী মার্শাল আর্টিস্ট।
এভাবে বিভিন্ন মার্শাল আর্ট পথিকৃৎদের চেষ্টায় এবং অনুশীলনের মাধ্যমে মিশ্র মার্শাল আর্টের সৃষ্টি হয়েছে। মৌলিক মার্শাল আর্টের থেকে সরে এসে মিশ্র এসব মার্শাল আর্ট এখন জনপ্রিয় হচ্ছে সবার মধ্যে।
সূত্রঃ রোয়ার মিডিয়া
https://roar.media/bangla/main/history/history-of-martial-art-2-evolution-to-modern-martial-art
২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:৫১
অনল চৌধুরী বলেছেন: যদিও অন্যান্য প্রাচীন মার্শাল আর্টের মতো কালারিপায়াত্তু অতটা প্রাচীন নয়[/sb কেবলেছে?
একে সব মার্শাল আর্টের জননী বলা হয়।এমনিক চীনারাও তাদের শাওলিন মন্দিরের প্রতিষ্ঠিতা হিসেবে এখনো তার নাম সোটা স্বীকার ও স্মরণ করে।Shaolin Kung Fu
৩| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:০৫
অনল চৌধুরী বলেছেন: ব্লগে প্রথমবারের মতো এই বিষয় নিয়ে লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমি এ বিষয়ে প্রামাণ্যচিত্র বানালেও কখনো কিছু লিখিনি।
আমি নিজে গত ৩১ বছর ধরে আত্মরক্ষা কৌশল চর্চা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের সাথে জড়িত। ১৯৮৯ সালে ১৪ বছর বয়স থেকে থেকে বর্মী কারাতে শেখা শুরু করেছিলাম এবং ব্ল্যাকবেল্ট পর্যন্ত পাঠ্যক্রম শেষ করেছি। এরপর ২০০০ সালে কয়েকমাস জাপানী সিকো রিউ কারাতে শিখেছি, কিন্ত এটা ভালো লাগেনি।
২০০২ এ সোতোকান পদ্ধতি শিখতে ভর্তি হয়ে ১২ বছর পর ব্ল্যাকবেল্ট পেয়েছি।
অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো এটা নিয়েও গবেষণা করছি এবং একটা নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছি, যেমন করেছিলেন অনেকের মতো আমারও প্রথম শিক্ষক ব্রুস লী। সেটাই শেখাচ্ছি।
তবে আপনার লেখায় অনেক তথ্যগত ভুল আছে। কারাতে তে শুধূ ৫ম না, ১০ম ড্যান পর্যন্ত দেয়া হয়।
১৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৩০
রবিন.হুড বলেছেন: ধন্যবাদ লেখাটা পড়ে মতামত দেওয়ার জন্য। আসলে আমি মার্শল আর্ট বিষয়ে মেন কিছু জানি না তবে জানার আগ্রহ আছে। আপনি যদি পেনকেক সিলাত সম্পর্কে কিছু জানেন অনুগ্রহ করে শেয়ার করবেন। কিছুদিন যাবৎ বাংলাদেশে পেনকেক সিলাত এর চর্চা হচ্ছে এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে একটা ফেডারেশন করার চেষ্টা চলছে।
৪| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৫১
অনল চৌধুরী বলেছেন: না জানলেও এ বিষয়ে যা লিখেছেন, ২/১ টা ভুল ছাড়া যা সেটা অনেক তথ্যহুল।
চলচ্চিত্রের কারণে তাইকোয়ান্দা এবং মুই থাই পরিচিত হলেও সিলাতের নাম প্রথম শুনেছি এবং এটা দেখেছি মাত্র ৪ বছর আগে ইউটিউবে।
chintya candranaya নামে একটা মেয়ে এ বিষয়ে খুব দক্ষ এবং নিয়মিত ভিডিও দেন।Lady of Fury Silat Fighting Scene
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:৪৪
অনল চৌধুরী বলেছেন: চীন-হংকং এর চলচ্চিত্র সারা পৃথিবীতে পরিচিতি পেয়েছে শুধূ কুংফুভিত্তিক ছবির কারণে।
ব্রুস লি প্রথম ইংরেজী সহ সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় কংফু শব্দটা প্রচলন করেন।