নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবিন.হুড

রবিন.হুড › বিস্তারিত পোস্টঃ

“সরল বিশ্বাসে বেহেস্ত হাসিল”

২২ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:৩৬

খলিফা হারুন অর রশিদ এর শাসনামলে আলী হোসেন নামে একজন দানবীর ব্যক্তি ছিলেন। মানুষকে খাওয়ানই ছিল তাঁর অভ্যাস ও আনন্দ। মেহেমান্দারী করাকে ই তিনি নিজের কাজ মনে করতেন। বাগদাদের অনেক লোকই
আলী হোসেনের মেহেমান্দারীতে অংশ নিয়েছিল। এভাবে মানুষকে খাওয়াতে খাওয়াতে তিনি নিজের সকল সম্পদ একসময় শেষ করে ফেলেন কিন্তু তাঁর মেহেমান্দারী বন্ধ হয়নি। তিনি ঋণ করে মেহেমান্দারী চালিয়ে যান। ফলে
তিনি ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তিনি ঋণ খেলাপী বনে যান, ফলে আলী হোসেনের বিরুদ্ধে বিচারের দিনক্ষণ ধার্য্য করা হয়। বিচারে আলী হোসেনের জেল হতে পারে এমন কথা রটে যায়।
তৎকালে বাগদাদে বহলুল দরবেশ নামে একজন ব্যক্তি ছিলেন যিনি বহলুল পাগল নামেই সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। খলিফার রাজদরবারেও তাঁর বেশ আনাগোনা ছিল। বহলুল পাগল একদা দানবীর আলী হোসেনের মেহেমান্দারীতে অংশ নিয়ে তাঁর বাড়িতে একবেলা খাবার গ্রহণ করেছিলেন। বিচারে দানবীর আলী হোসেনের জেল হবে এ সংবাদ শুনে বহলুল পাগল আর স্থির থাকতে পারলেন না। যেভাবেই হোক আলী হোসেনকে ঋণ মুক্ত করতে হবে। তিনি তৎক্ষনাৎ একটি পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেন। যেহেতু খলিফার দরবারে তাঁর বেশ কদর আছে তাই খলিফার নিকট হতেই আলী হোসেনের ঋণের সমপরিমাণ একলক্ষ টাকা আদায় করতে পারবেন। সে বিশ্বাস নিয়েই বহলুল পাগল রাজপ্রাসাদে ছুটে যান। সে মুহূর্তে খলিফা হারুন অর রশিদ ও তাঁর স্ত্রী জোবায়দা বেগম অশ্বপৃষ্ঠে শোয়ার হয়ে বৈকালিন ভ্রমণে বের হচ্ছিলেন। রাজপথের দু’ধারে খোজা প্রহরীরা প্রহরা দিচ্ছিল। সামনের অশ্বপৃষ্ঠে খলিফা নিজে পশ্চাতে তাঁর স্ত্রী জোবায়দা অশ্বপৃষ্ঠে সোয়ার হয়ে ধীর গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলছেন। তখন দ্রুত গতিতে বহলুল পাগল একটি আঁকাবাঁকা মলিন কাগজ খলিফার সামনে তুলে ধরে বলতে থাকেন খলিফা বেহেস্ত কিনবে? বেহেস্ত কিনবে? এতে খলিফা একটু বিরক্তবোধ করলেন এবং তিরস্কারের স্বরে বললেন, বহলুল পাগল এটা রাজপথ এটা তোমার পাগলামীর জায়গা নয়। তুমি এখান থেকে চলে যাও। প্রহরী খোজা মশরুর বহলুল পাগলকে সেখান থেকে সরিয়ে দিলে তিনি আশাহত হলেন না। তিনি তৎক্ষনাৎ একই কায়দায় একই ভঙ্গীতে একটু পিছনে যেয়ে রাণীর সামনে কাগজটি তুলে ধরে বলতে থাকেন হে রাণীমা জোবায়দা বেহেস্ত কিনবে? বেহেস্ত কিনবে? রাণী তাঁর বেহেস্তের মূল্য কত জানতে চাইলে উত্তরে বহলুল পাগল একলক্ষ টাকা দাবী করেন। তৎক্ষনাৎ রাণী তাঁর গলায় পড়ে থাকা লক্ষ টাকা মূল্যের কন্ঠহারটি খুলে বহলুল পাগলের হাতে দিয়ে তার বিনিময়ে সে আঁকাবাঁকা মলিন কাগজটি লুফে নেন। বহলুল পাগল লক্ষ টাকা মূল্যের কন্ঠহারটির বিনিময়ে দানবীর আলী হোসেনকে তাঁর ঋণের দায় থেকে মুক্ত করেন।
এদিকে খলিফা হারুন অর রশিদ ও তাঁর স্ত্রী জোবায়দা বেগম বৈকালিন ভ্রমণ শেষে রাজপ্রাসাদে ফিরেন। রাজপ্রাসাদে ফিরে একসময় দু’জনের আলাপচারিতায় খলিফা হারুন অর রশিদ তাঁর স্ত্রী জোবায়দাকে ভৎসনা করে বললেন জোবায়দা তুমি বহলুল পাগলের পাগলামীর ফাঁদে পড়ে লক্ষটাকার কন্ঠহার একটি মলিন কাগজের বিনিময়ে দিয়ে দিলে? এটা তোমার বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়। উত্তরে রাণী বললেন আমি কাগজ ক্রয় করিনি, আমি বেহেস্ত ক্রয় করেছি। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে নৈশভোজ সেরে তারা উভয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। স্বপ্নে খলিফা হারুন অর রশিদ দেখেন তাঁর স্ত্রী জোবায়দা বেহেস্তের ভিতরে খোশ মেজাজে আনন্দের সহিত পায়চারী করছেন। সে মুহূর্তে খলিফা হারুন অর রশিদ দৌড়ে তাঁর স্ত্রী জোবায়দার কাছে বেহেস্তের ভিতরে যেতে চাইলেন। কিন্তু কর্তব্যরত প্রহরীরা তার পথ রোধ করে তাকে আটকিয়ে দিলো। খলিফা হারুন অর রশিদ প্রহরীদেরকে বললেন তিনি তাঁর স্ত্রী জোবায়দার কাছে যেতে চান। উত্তরে প্রহরীরা বলল বেহেস্তের ভিতরে জোবায়দা ছাড়া অন্য কারো প্রবেশের অনুমতি নেই এমনকি খলিফা হারুন অর রশিদ হলেও না, কারন ঐ বেহেস্ত একমাত্র রাণী জোবায়দার ক্রয় করা ব্যক্তিগত বেহেস্ত। তাই সেখানে অন্যের প্রবেশ নিষেধ। এই স্বপ্ন দেখার পর খলিফা হারুন অর রশিদ এর ঘুম ভেঙ্গে যায়। বিছানায় তিনি হাঁ-হুতাশের সাথে এপাশ ওপাশ করতে থাকেন। প্রত্যূষে তিনি প্রাত প্রার্থনা শেষে তাঁর পারিসদবর্গকে ডেকে পাঠান এবং বহলুল পাগলকে স্ব-সম্মানে তাঁর দরবারে হাজির করতে নির্দেশ দেন। নির্দেশানুযায়ী বহলুল পাগলকে খলিফার দরবারে হাজির করা হয়। খলিফা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বহলুল পাগলের
কাছ থেকে উপযুক্ত মূল্য প্রদানের বিনিময়ে বেহেস্ত ক্রয়ের আর্জি বা ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। বহলুল পাগল উত্তরে খলিফা হারুন অর রশিদকে জানান তার নিকট একটি বেহেস্তই ছিল যা রাণী জোবায়দা কিনে নিয়েছেন। বিক্রি করার মত তাঁর কাছে আর কোন বেহেস্ত নেই। খলিফা হারুন অর রশিদ বহলুল পাগলের কাছে জানতে চান কিভাবে বা কোন পদ্ধতিতে তিনি বেহেস্ত পেতে পারেন অথবা কেমন করে বেহেস্ত পাওয়া যায়। উত্তরে বহলুল পাগল খলিফা হারুন অর রশিদকে বললেন একমাত্র সরল বিশ্বাসেই বেহেস্ত পাওয়া যায়।
সূত্রঃ সংগৃহীত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.