নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবিন.হুড

রবিন.হুড › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলু বিষয়ক তথ্য জানুন । ভাইবেন না আবার যে আপনাদের আলু দিচ্ছি ( তেল মারছি)।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:২৩

আলু বহুল প্রচলিত উদ্ভিজ্জ্জ খাদ্য। এটি কন্দজাতীয় (tuber) এক প্রকারের সবজি, যা মাটির নিচে জন্মে। এর আদি উৎস ভারত, এশিয়া মহাদেশ, সেখান থেকে ১৬শ শতকে এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। উচ্চ পুষ্টিমান এবং সহজে ফলানো ও সংরক্ষণ করা যায় বলে এটি বিশ্বের সর্বাপেক্ষা প্রচলিত সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম খাদ্যশস্য, এর আগে রয়েছে যথাক্রমে ভুট্টা, গম এবং চাল।
পৃথিবীর খাদ্য হিসেবে সর্বপ্রথম আলুর নির্দশন ভারতের বাংলায় দেখা যায়। পালযুগের কবি সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিতে বারাহী কন্দের উল্লেখ আছে। এই বারাহী কন্দ হল উচ্চমানের আলু, রতিকান্ত্র ত্রিপাঠী জানাচ্ছেন “প্রাচীন বাংলার শিলা ও তাম্রলিপিতে সমাজ ও সংস্কৃতি” বইটিতে।
আলু একটি সুষম ও পুষ্টিকর খাবার। আলু’র বৈজ্ঞানিক নাম Solanum tuberosum (সোলানাম টিউবারোসাম)। এতে একদিকে যেমনি ভাতের মতো শর্করা আছে তেমনি সবজির মতো ফাইবার বা তন্তু, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও উদ্ভিজ্জ্জ প্রোটিন আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম আলুতে শর্করা আছে ১৯ গ্রাম, খাবার আঁশ ২.২ গ্রাম, উদ্ভিদ প্রোটিন ২ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৫২ গ্রাম যার মধ্যে পটাশিয়াম লবণই ০.৪২ গ্রাম, এবং ভিটামিন ০.০২ গ্রাম। অপরদিকে ১০০ গ্রাম চালে ৮০ গ্রাম শর্করা, খাবার আঁশ ১.৩ গ্রাম, উদ্ভিজ্জ্জ প্রোটিন ৭.১৩ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.২৮ গ্রাম এবং ভিটামিন আছে মাত্র ০.০০২ গ্রাম। তাই আলুর মধ্যে ভাতের তুলনায় শর্করা কম থাকলেও অন্যান্য উপাদান বেশি আছে। প্রয়োজনীয় খাদ্যপ্রাণ বেশি থাকায় এটি একটি সুষম খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

জাতসমূহ : বিশ্বে কয়েকশত জাতের আলু চাষ হয়। এগুলির পার্থক্য বাহ্যিকরূপ, কন্দের গঠন, আকার ও বর্ণ, পরিপক্কতার সময়, রান্না ও বাজারজাতকরণ গুণাবলী, ফলন এবং রোগ ও পোকা-মাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতায়। একটি এলাকার জন্য উপযোগী একটি জাত অন্য এলাকায় উপযোগী নাও হতে পারে। বাংলাদেশে চাষকৃত আলুর জাতসমূহকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়, স্থানীয় ও উচ্চফলনশীল (উফশী)। কথিত স্থানীয় জাতসমূহ প্রকৃতপক্ষে পুরোপুরি স্থানীয় নয়। দূর অতীতে সেগুলি উপমহাদেশের এ অংশে নিয়ে আসা হয় এবং জাত উন্নয়ন প্রচেষ্টার অনুপস্থিতিতে ধীরে ধীরে অবক্ষয়প্রাপ্তির ফলে নিম্নফলনশীল হয়ে পড়ে। নিম্নফলনশীল হওয়া সত্ত্বেও কিছু স্থানীয় জাত ভিন্ন স্বাদের জন্য এখনও চাষ করা হয়।

দেশের বিভিন্ন অংশে স্থানীয় আলুর প্রায় ২৭টি জাত আবাদ করা হয়। এগুলির পরিচিত স্থানীয় নাম রয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০০৪-০৫ সালে প্রায় ১,৮৩,৪৪৬ একর জমিতে স্থানীয় জাতসমূহ চাষ করে ৫,৯৯,৫১৮ মে টন আলু উৎপাদন করা হয়। পরিচিত স্থানীয় জাতসমূহ হচ্ছে (ক) শীলবিলাতী- প্রধানত রংপুরে চাষ করা হয়। কন্দ আয়তাকার, লালচে। প্রতি কন্দের ওজন প্রায় ৩০ গ্রাম। (খ) লালশীল- প্রধানত বগুড়ায় চাষ করা হয়, কন্দ গোলাকৃতির, লালচে, প্রত্যেকটির ওজন হয় প্রায় ৫৫ গ্রাম। এ জাতটি লালমাদ্যা বা বোগরাই নামেও পরিচিত। (গ) লালপাকরী- দিনাজপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়, কন্দ লালচে, গোলাকার, প্রত্যেকটির ওজন হয় প্রায় ৩০ গ্রাম। (ঘ) দোহাজারী- প্রধানত চট্টগ্রাম এলাকায় চাষ করা হয়, গোলাকার ও ফ্যাকাসে, প্রত্যেকটির ওজন প্রায় ২৫ গ্রাম। অন্যান্য দেশি জাতগুলির মধ্যে ঝাউবিলাতী ও সূর্যমুখী উল্লেখযোগ্য।

গত কয়েক দশকে কয়েক ডজন উচ্চফলনশীল আলুর জাত বাংলাদেশে আনা হয় এবং সাধারণ চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করার পূর্বে স্থানীয় পরিবেশে পরীক্ষামূলকভাবে যাচাই করা হয়। অতঃপর বেশকটি জাত চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। জাতগুলির ফলনশীলতার সুষ্ঠু মূল্যায়ন এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে বর্তমানে প্রায় ৩৬টি উফশী জাত চাষাবাদের জন্য দেশে অবমুক্ত করা হয়েছে। অবশ্য, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (BADC) কৃষকদের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রতি বছর প্রায় ২০০ মে টন আলুবীজ আমদানি করে। উফশী জাতের বীজআলু উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে একটি খামার প্রতিষ্ঠা করেছে। উচ্চফলনশীল জনপ্রিয় জাতসমূহের মধ্যে নিচের জাতগুলি উল্লেখযোগ্য (ক) কার্ডিনাল- আয়তাকার, লালচে কন্দ, অগভীর চোখ, চামড়া মসৃণ। জাতটি হল্যান্ড থেকে আনা হয়েছে। ফলনক্ষমতা হেক্টর প্রতি ২০-৩০ মে টন। (খ) ডায়ামেন্ট- হল্যান্ডের অন্য একটি জাত, ডিম্বাকার থেকে আয়তাকার, ফ্যাকাসে হলুদ কন্দ, চামড়া মৃসণ ও চোখ অগভীর। এটি মোটামুটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন। হেক্টর প্রতি ফলন ২৫-৩০ মে টন। (গ) কুফরী সিন্দুরী- কন্দ লালচে, গোলাকার, চোখ গভীর, চামড়া খসখসে। ভারত থেকে জাতটি আনা হয়; রোগবালাইয়ের প্রতি তুলনামূলকভাবে কম সংবেদনশীল। তবে বর্তমানে জাতটির আবাদ কমে গেছে। উল্লেখযোগ্য অন্যান্য উন্নত জাতসমূহের মধ্যে আছে প্যাট্রোনিস, মুলটা, হীরা, মরিন, ওরিগো, আইলসা, গ্রানুলা, ফেলসিনা, রাজা, ডুরা, এস্টারিক্স প্রভৃতি।

প্রথমেই যে আলুর নাম মনে পড়ছে তা হলো আমাদের সাধারণ আলু (গোল আলু)।
বাংলায় এর নাম- আলু
ইংরেজীতে বলে – Potato
বৈজ্ঞানিক নামঃ Solanum tuberosum
প্রি-কলম্বিয়ান সময়ে আমেরিকার আদি অধিবাসীদের মধ্যে এর চাষাবাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের জন্য এটি ছিল প্রধান খাদ্য। এর ইতিহাস জানা কঠিন। স্পেনীয় অনুসন্ধানকারীরা ষোল শতকে পেরু থেকে এটি নিয়ে আসে স্পেনে যেখান থেকে তা উত্তর ও পূর্বে সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকরা সম্ভবত ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে এটিকে উত্তর আমেরিকায় নিয়ে আসে; এভাবে টমেটোর মতো এটি পশ্চিম গোলার্ধে একটি পুনঃউদ্ভাবিত খাদ্যফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। একটি প্রধান ফসল হিসেবে আলু প্রথম গৃহীত হয় ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে। আয়ারল্যান্ডে আঠারো শতকে এটি প্রধান খাদ্যফসলে পরিণত হয় এবং এ কারণে মিষ্টি আলু থেকে পৃথক করার জন্য এটিকে সচরাচর আইরিশ আলু বলা হতো। ইতিহাসের ঘটনা প্রবাহে বিশ শতকেও আলু গুরুত্বপূর্ণ ছিল ইউরোপে বিশেষ করে জার্মানিতে যেখানে এটি দুটি বিশ্বযুদ্ধের সময় দেশটিকে সচল রেখেছিল। উচ্চ শ্বেতসারবিশিষ্ট আলু আজ পশ্চিমাদের একটি প্রধান খাদ্য, একইসঙ্গে স্টার্চ, ময়দা, এলকোহল, ডেক্সট্রিন ও গোখাদ্যের (প্রধানত ইউরোপে) একটি উৎস। এটি সবচেয়ে ভাল জন্মে ঠান্ডা ও আর্দ্র জলবায়ুতে; যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ করে মেইন ও আইডাহোতে (Maine and Idaho)। ইউরোপের সর্বাধিক আলু উৎপাদনকারী দেশগুলি হচ্ছে জার্মানি, রাশিয়া, হল্যান্ড ও পোল্যান্ড।

ভারতীয় উপমহাদেশে কখন আলু চাষ শুরু হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা যায় না। ধারণা করা হয় যে, সতেরো শতকের গোড়ার দিকে পর্তুগিজ নাবিকরা ভারতে প্রথম আলু নিয়ে আসে। ১৮৪৭ সালে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত The Gardening Monthly ম্যাগাজিনের একটি সংখ্যায় ভারতে আলু চাষ সম্পর্কে প্রথম রেকর্ড দেখা যায়। প্রথমদিকে আলুর চাষ হতো কলকাতার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে, সেখান থেকে আলু চাষের প্রবর্তন হয় চেরাপুঞ্জিতে। ওয়ারেন হেস্টিংস গভর্নর থাকাকালীন সময়ে (১৭৭২-১৭৮৫), তাঁর উদ্যোগে আলুর চাষ বোম্বেসহ অনেক প্রদেশে বিস্তার লাভ করে। আলু একটি তৃণজাতীয়, বর্ষজীবী ফসল; সাধারণত দু থেকে তিনটি চোখবিশিষ্ট কন্দের রোপণ খন্ড দ্বারা বংশবিস্তার করা হয়। বীজ থেকে একই জাতের হুবহু বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ পাওয়া যায় না। কান্ড সোজা বা ভূশায়ী, লিকলিকে, কাক্ষিক-শাখাযুক্ত বা শাখাবিহীন। জাতের ওপর নির্ভর করে কান্ড গোলাকার বা কৌণিক, লোমযুক্ত বা মৃসণ, সবুজ বা ঈষৎ রক্তবর্ণযুক্ত।

ফল গোলাকার, বাদামি-সবুজ বা রক্তবর্ণ, কিডনি আকৃতির বীজসহ সাধারণত ১২ থেকে ১৮ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট। জাত, মাটি, আবহাওয়া ও তাপমাত্রা এবং আলোক দিবসের ওপর ভিত্তি করে কন্দের আকার, আকৃতি ও বর্ণে প্রচুর পার্থক্য হয়। জনপ্রিয় জাতসমূহের কন্দ সাধারণত গোলাকার, ডিম্বাকার বা উপবৃত্তাকার (oblong) হয়ে থাকে। পুষ্টিগতভাবে কন্দ শ্বেতসার বা স্টার্চসমৃদ্ধ এবং প্রোটিন, ভিটামিন ‘সি’ ও ‘বি’, পটাশিয়াম, ফসফরাস ও আয়রণের একটি উত্তম উৎস। অধিকাংশ খনিজ ও আমিষ চামড়ার নিচে একটি পাতলা স্তরে ঘণীভূত হয় এবং চামড়া নিজেই খাদ্য অাঁশের উৎস।

অন্যান্য যে সকল আলু বাংলায় পাওয়া যায় তা নিম্নে দেওয়া হলো

জাম আলু
ময়মনসিংহ এলাকায় জাম আলু পাওয়া যায়। জামের মতো সাইজ ও লালচে রং হওয়ার কারনে এই আলুকে জাম আলু বলে।

শাখআলু
ইংরেজীতে বলে – Yam bean
বৈজ্ঞানিক নাম – Pachyrrhizus tuberosa

শাখ আলু (শাখালু, শাখা আলু, শাক আলু, শাকালু) এক প্রকার মূল জাতীয় সবজি। শাখ আলু গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Pachyrhizus tuberosus, যা ‘Fabaceae’ পরিবারভুক্ত। ইংরেজিতে একে Goitenyo, Goiteño, nupe, jacatupe বা Amazonian yam bean বলা হয়। এই গণভুক্ত (Pachyrhizus) ৫ বা ৬টি প্রজাতি রয়েছে যার মধ্যে শাখ আলু প্রজাতিটি (Pachyrhizus tuberosus) বাংলাদেশে প্রচলিত। এটি চিরহরিৎ লতা জাতীয় লিগিউম উদ্ভিদ যা ৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর মূলের খোসা সাদাটে বাদামি, ভেতরটা সাদা, শালগমাকৃতির। একটি গাছে ২ বা ততোধিক আলু হয়। প্রতিটি আলু ১৫-২৫ সেমি লম্বা হয়। এই মূল বা আলু অত্যন্ত রসালো, কচকচে এবং মিষ্টি। খোসা ছাড়িয়ে এটি কাচা খাওয়া হয়। এর খোসা ছাড়ানো খুবই সহজ। এটি রান্না করেও খাওয়া যায়। শাখ আলুতে প্রচুর স্টার্চ ও আমিষ (৯%) থাকে। এই গাছে যে শিম হয় তা ৩২% আমিষ সমৃদ্ধ। শিমও খাওয়া যায়। এর পাতায় ২০-২৪% আমিষ থাকে এবং এই পাতা খাওয়া যায়।
এর আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা হলেও এটি পৃথীবির বহু স্থানে জন্মায়। সাগর সমতল থেকে ৫০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত এটি জন্মাতে সক্ষম। বালুময় সাগর তীর বা নদীর তীরে এটি ভাল জন্মে। এর ফুল সাদা এবং উভয়লিঙ্গিক। পোকা-মাকড়ের মাধ্যমে এর পরাগায়ণ ঘটে। এটি মাটিতে নাইট্রোজেন সংবন্ধন ঘটায়। একটু স্যাঁতসেতে বেলে এবং বেলে-দোআঁশ মাটি এর জন্য উপযুক্ত। এটি ছায়া এবং তুষার সহ্য করতে পারেনা। একটু উঁচু বেড তৈরি করে এর চাষ করা উচিত। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অঞ্চলে এটির চাষ করা হয়।
মিষ্টি আলু
ইংরেজীতে বলে – Sweet potato
বৈজ্ঞানিক নাম – Ipomoea batatas
গোল আলুর সকল স্বাস্থ্য উপকারিতাই মিষ্টি আলুতে রয়েছে এবং এছাড়াও মিষ্টি আলু আরো কিছু উপকার করে। লস অ্যাঞ্জেলেস ও সান ফ্রান্সিসকোর স্পোর্টস ডায়েটিশিয়ান ইয়াসি আনসারি বলেন, ‘সাধারণত আপনার খাদ্য তালিকায় যত বেশি রঙিন ফল ও শাকসবজি যোগ করা যায় তত ভালো।’
পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এই মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং উপকারী তন্তু। সুস্থ থাকতে, ক্যান্সার মোকাবেলায়, বহুমূত্র রোগ প্রতিরোধে এবং নিয়ন্ত্রণে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মূত্রথলির নানা জটিলতা রোধে এক প্রাকৃতিক ওষুধ এই মিষ্টি আলু। শুধু তা-ই নয়, হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে, ত্বক সুন্দর রাখতে, এমনকি চোখ ভালো রাখতেও এটি কাজ করে। এতো উপকারী খাদ্যটিকে অনেকেই হেলাফেলা করে থাকলেও সব জানার পর অন্তত এর কদর বাড়বে।
মেটে আলু
ইংরেজীতে বলে -White yam
বৈজ্ঞানিক নাম- Dioscorea alata
গাছ আলু (মেটে আলু, পেস্তা আলু, চুপরি আলু, মাচা আলু, গজ আলু, মোম আলু, মাইট্টা আলু, মাছ আলু, প্যাচড়া আলু বা প্যাচরা আলু) গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Dioscorea alata যা ‘Dioscoreaceae’ পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। ইংরেজিতে একে purple yam, greater yam, Guyana arrowroot, ten-months yam, water yam, white yam, winged yam, অথবা শুধুই yam বলা হয়। এর আদিনিবাস এশিয়ার ক্রান্তীয় অঞ্চল। এই আলুর গাছ এক মৌসুম ফলন দিয়ে মরে যায়; পরের বছর মূল থেকে নতুন করে চারা গজায়। এর কাণ্ডের গায়ে ছোট ছোট কালচে বেগুনী রঙের আলু হয় এবং মাটির নিচে বড় আকারের বাদামী রঙের আলু হয়। নিচের আলু প্রতি বছর একটু একটু করে বড় হয় এবং দীর্ঘকাল ধরে বড় হতে পারে। উপরের আলু প্রতি বছর প্রচুর পরিমানে জন্মে। উভয় আলু থেকেই বংশ বিস্তার ঘটে। উভয় আলুই খাওয়ার যোগ্য। এটি রান্না করে খাওয়া হয়। গাছ আলুর জন্য বিশেষ কোনো যত্নের প্রয়োজন হয়না; সামান্য মাটি ও বেড়ে ওঠার আশ্রয় পেলেই এটি বেড়ে ওঠে।
মেটে আলু বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ কন্দাল ফসল। আফ্রিকার কোনো কোনো দেশে মেটে আলু প্রধান খাদ্য। এটি ওল, গোল আলু এসব সবজির মতোই ভর্তা, মাছ ও মাংসের সাথে রান্না করে খাওয়া যায়। আমাদের দেশে মেটে আলু মাইট্যা আলু, মাটি আলু, মাটির তলের আলু, চুপড়ি আলু, খামালু ইত্যাদি নামেও পরিচিত। মেটে আলু ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের খুবই ভালো উৎস। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম রয়েছে।
পেস্তা আলু
বৈজ্ঞানিক নাম – Dioscorea bulbifera
গাছ আলু মেটে আলুর মতই আলুর গাছ এক মৌসুম ফলন দিয়ে মরে যায়; পরের বছর মূল থেকে নতুন করে চারা গজায়। এর কাণ্ডের গায়ে ছোট ছোট কালচে বেগুনী রঙের আলু হয় এবং মাটির নিচে বড় আকারের বাদামী রঙের আলু হয়। নিচের আলু প্রতি বছর একটু একটু করে বড় হয় এবং দীর্ঘকাল ধরে বড় হতে পারে। উপরের আলু প্রতি বছর প্রচুর পরিমানে জন্মে। উভয় আলু থেকেই বংশ বিস্তার ঘটে। উভয় আলুই খাওয়ার যোগ্য। এটি রান্না করে খাওয়া হয়। গাছ আলুর জন্য বিশেষ কোনো যত্নের প্রয়োজন হয়না; সামান্য মাটি ও বেড়ে ওঠার আশ্রয় পেলেই এটি বেড়ে ওঠে।
পেস্তা আলু দক্ষিণ কুমিল্লায় মোম আলু নামে পরিচিত। সম্প্রতি এ আলু চাষ কুমিল্লার গ্রামাঞ্চলে জনপ্রিয় হচ্ছে। কুমিল্লার প্রায় মাঠে-ঘাটে ও বাড়ির লতায় শোভা পাচ্ছে অনাদর ও অবহেলার মধ্যেও বেড়ে ওঠা এই মোম আলুর। যা পেস্তা আলু নামে সমধিক পরিচিত।
এটার বাংলা নাম – শিমুল আলু
ইংরেজীতে বলে – Cassava
বৈজ্ঞানিক নাম – Manihot esculenta
শিমুল আলু /কাসাভা (/kəˈsɑːvə/; বৈজ্ঞানিক নামঃ Manihot esculenta), ব্রাজিলীয় এ্যারারুট, মানিয়ক, ও ট্যাপিওকা, হচ্ছে গাছের শিকড়জাত একধরনের আলু, জন্মে মাটির নিচে। শিমুল আলু নামেও পরিচিত। এটি (spurge) পরিবারের অরণ্যময় গুল্ম, যা দক্ষিণ আমেরিকার গুল্ম, ব্যাপকভাবে ক্রান্তীয় এবং প্রায় ক্রান্তীয় অঞ্চলে বার্ষিক ফসল হিসাবে চাষ করা হয় তার ভোজ্য অনমনীয় স্ফীতকন্দ মূলের জন্য, এবং শর্করার একটি প্রধান উৎস।
আফ্রিকা মহাদেশের বেশির ভাগ মানুষ কাসাভা খেয়ে জীবন ধারণ করে। তবে বাংলাদেশে এখনো এটি নিতান্তই অপরিচিত। গুল্মজাতীয় এ উদ্ভিদটি বাংলাদেশে চাষ না হলেও পাহাড়ে-জঙ্গলে দীর্ঘদিন থেকে এ গাছ জন্মায়। স্থানীয়ভাবে কাসাভার ব্যবহার আছে অনেক আগে থেকেই। গ্রামের মানুষ কাসাভার কন্দকে ‘শিমুল আলু’ বলে। গাছটির পাতা অনেকটা শিমুল গাছের মতো দেখতে বলেই হয়তো এরকম নামকরণ।
কাসাভা চাল ও ভুট্টার পর ক্রান্তীয় অঞ্চলে, খাদ্য শর্করার তৃতীয় বৃহত্তম উৎস। কাসাভা, উন্নয়নশীল বিশ্বের একটি প্রধান খাদ্য, যা পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের মৌলিক খাদ্য। এটা সবচেয়ে খরা সহনশীল ফসল, যা প্রান্তিক মাটিতে জন্মাতে সক্ষম। নাইজেরিয়া বিশ্বে কাসাভার বৃহত্তম উৎপাদনকারী এবং থাইল্যান্ড শুষ্ক কাসাভা বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ।
কাসাভার আটা দিয়ে রুটি ছাড়াও পাঁপর, চিপস, নুডলস, ক্র্যাকার্স, বিস্কুট, কেক, পাউরুটি ইত্যাদি তৈরি করা যায়। কাসাভা আলু যেমন সিদ্ধ করে খাওয়া যায়, তেমনই তরকারি করে মাছ-মাংসের সঙ্গে খাওয়া যায়।
কাসাভা থেকে কেবল খাবারই তৈরি হয় না। এ থেকে তৈরি স্টার্চ ব্যবহৃত হয় শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে। কাসাভা স্টার্চ বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করা স্টার্চের যথার্থ বিকল্প। কাসাভা স্টার্চ টেক্সটাইল, ওষুধ ও রসায়ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সিমেন্টের গুণগত মানোন্নয়ন, কাগজ, আঠা, প্রসাধন, রাবার ও সাবান শিল্পে ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে স্টার্চ, মল্টোজ, লিকুইড, গ্লুকোজসহ অন্যান্য রূপান্তরিত চিনি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।



সমাজে আরো একপ্রকার আলু আছে…, সেটা হলো আলু মারা…

“সমাজে আলু (তেল/পাম) মারা লোকের অভাব নাই, কে কাকে কতটুকু পাম মেরে নিজের অবস্হা পাকা পোক্ত করবে তা নিয়ে ব্যস্ত।আমিও অবাক হই যাকে আলু মারে অর্থাৎ তোষামদ করে সেও খুব খুশি এ ব্যাপারটা নিয়ে।অথচ এই সমস্ত গাধা টাইপের মানুষ গুলোর কারনেই একটা দেশ, একটা সমাজ, একটা সম্প্রদায়, একটা প্রতিষ্ঠান ধ্বংশের পথে।”
আলু নিয়ে কম রঙ্গ হয়নি এই বঙ্গে। এখনও যে হচ্ছে না তা নয়। হচ্ছে এবং আগের চেয়ে বেশিই হচ্ছে। তবে আলু এখন শুধু আর রঙ্গ নয় এটি আমাদের দেহ ও সমাজের একটি অঙ্গ। সময়টাই এখন আলুর। চারদিকে শুধু আলু, আলু আর আলু। আমরা সবাই এখন একেকটি আলুর বিশাল বিশাল আধার। আর কিছু নয়, সর্বোৎকৃষ্ট জায়গায় কিভাবে এ আলুর সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায় তা জানার জন্যই আমরা সবাই এখন হন্যে হয়ে ছুটছি। আলু মারতে মারতে একেকজনের গায়ের চামড়া তুলে ফেললেও আমরা ক্ষান্ত হইনা। উদ্দেশ্য হাসিল না হওয়া পর্যন্ত খুঁজতে থাকি আর কাকে আলু মারা যায়।
কান পাতলেই আমরা এখন দুই শব্দের একটা বাক্যই শুধু শুনি। আলু মার, আলু মারো এবং আলু মারুন। বাবা সন্তানকে বলে আলু মার, মা সন্তানকে বলে আলু মার, বন্ধু বন্ধুকে বলে আলু মার, আত্মীয় আত্মীয়কে বলে আলু মার, শিক্ষক ছাত্রকে বলে আলু মার, প্রেমিক প্রেমিকাকে বলে আলু মারো, প্রেমিকা প্রেমিককে বলে আলু মারো, স্ত্রী স্বামীকে বলে আলু মারো, স্বামী স্ত্রীকে বলে আলু মারো, প্রতিবেশী প্রতিবেশীকে বলে আলু মারুন, সহকর্মী সহকর্মীকে বলে আলু মারুন। আরেকটু এগোলে এর পাশে আরও দু’টি শব্দ শুনি, আলু মারুন জীবন গড়ুন। আরও শুনি, আলুই শক্তি আলুই মুক্তি। আলুই এখন সত্য, আলুই এখন ধর্ম। আমরা সবাই এই আলুর বশ্যতা স্বীকার করেছি। ব্রিটিশরাজকে আলু মারতে শিখে আমরা এ আলুবিদ্যাটি আমাদের রক্তে, মাংসে, অস্থি, মজ্জাতে মিশিয়ে ফেলেছি। আমাদের মনোজগতে এখন শুধু আলু। আলু ছাড়া আমরা ভাবতে পারিনা, কথা বলতে পারিনা, চলতে পারিনা, অর্জণ করতে পারিনা, কিছু পারিনা, কিচ্ছু পারিনা।
আলুর এ যুগে আলু ছাড়া প্রেম হয়না, প্রেম টিকিয়ে রাখা যায় না, চুমো খাওয়া যায় না, বাসা ভাড়া পাওয়া যায় না, চাকরি হয়না, হলেও টিকিয়ে রাখা যায় না, ট্রেণের টিকিট পাওয়া যায় না, ডাকপিয়ন টাকা দেয়না, মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি হওয়া যায় না। আলু এমনই এক যাদুকরী টোটকা যে এর মাধ্যমে সব হয়। এই আলু মারা মানে আলু ঝড়ে ঝড়ে পড়া হাসিযুক্ত পা চাটা।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের শিক্ষকরা আমাদের প্রতিনিয়ত এই আলু মারাই শেখাচ্ছেন। নিয়োগ থেকে শুরু করে পদোন্নতির জন্য, ভিসি-প্রোভিসি হওয়ার জন্য গন্ডমূর্খ এমপি-মন্ত্রীদের পা চাটার মাধ্যমে আলু মারতেও তারা দ্বিধা করেন না। আমরা দেখছি এবং শিখছি। এসব মহান (?) এ আলুবিদ্যা যে যত বেশি আয়ত্ব করতে পারি জীবনে সে ততটাই উন্নতি করি। আমরা বিশ্বাস করতে শিখি আলুহীন বিদ্যা ফুঁটো পয়সার মতোই অচল।
আমাদের বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, অস্তিত্ব, সমাজ, সংসার, আকাশ, বাতাস, চাঁদ, জোৎস্না, সূর্য এখন আলু নির্ভর হয়ে পড়েছে। অন্যকে কিভাবে আলু মারা যায় তার কায়দা কানুন জানতেই আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। নিজের জ্ঞান-বুদ্ধিকে শাণিত করতে নিজেকে আলু মারার কথা আমরা চিন্তাও করিনা।
পৃথিবীতে কারো মন জয় করার জন্য আলু (তেল/পাম) মারার ভূমিকা অনস্বীকার্য…!

[মোরাল অব দ্য স্টোরি : আলু দেয়া কমান, নিজে সুস্থ থাকুন, অপরকে সুস্থ রাখুন]


সূত্রঃ https://emani85.wordpress.com/


মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৫৩

অপু তানভীর বলেছেন: আলুই জীবন :D

২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:১৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: অপু ভাই, সারা দুনিয়াতে আলুই একমাত্র জিনিষ (বস্তু) , যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবজায়গায়-সবদেশে মানানসই । যার কোন কঠিন মান-সম্মান, সে সব জায়গায় সব পরিবেশে মানিয়ে যায় অবলীলায়।

আলু মিয়া না থাকলে আমাদের দুনিয়ায় নানা খতরনাক বিষয় তৈরী হত এবং অনেক কিছুর আকাল পরে যেত এই মাকাল ;) ফলদের জয়-জয়কারে।

আর , তাই বলা যায় - দেন, যাকে যত খুশী আলু শুধু খালুকে ছাড়া।

জয়তু আলু।

৩| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫৭

রবিন.হুড বলেছেন: বেশি করে আলু খান
ভাতের উপর চাপ কমান
আলু খান আলু দেন
আলুর দোষ না করেন।

৪| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২৫

শায়মা বলেছেন: আজ আমাদের ক্লাসে ভার্চুয়াল পিকনিক।
এই পিকনিকের উদ্দেশ্য হলো পি লেটার দিয়ে কিছু ওয়ার্ডস সেখানো।

সেখানে থাকবে পটেটো পপকর্ণ পিজ্জা যার যেমন খুশি পি ওয়ার্ডস খানা পিনা।

আমি নিয়েছি ম্যাশড পটাটো আর পটাটো চিপস। :)

আলু এবং আলু ...... :) :) :)

৫| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২১

রবিন.হুড বলেছেন: আলু কে ছোট করে দেখার কিছু নাই। ১৪০ কেজি ওজনের মেটে আলুর সন্ধান পাওয়া গেছে। তাছাড়া আলু এমন সবজি যা সকল তরকারীতে ব্যবহার করা যায়। তাইতো সকলের সাথে মিলেমিশে চলার কারনে অনেককে আলুর সাথে তুলনা করা হয়।আলুর তরকরী খুবই সুস্বাধু ও পুষ্টি সমৃদ্ধ। আলু ভর্তা এমন একটা খাদ্য আইটেম যা ধনী-গরীব ছোট্ট বড় সবাই পছন্দ করেন। আবার ধনীর দুলালীরা আলু না খেলেও পটেটো খায় যেমন পটেটো ক্রাকার্স, পটেটো চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, মাসালা পটেটো। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সাবেক রাষ্ট্রপতি “আলুর দোষ” খ্যাত একটা বিশেষ গুণ অর্জন করেছিলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.