নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সহজ সরল সোজা সাদা ভাষায় জীবনের কথা লিখতে পছন্দ করি। কাদা মাটিতে বেড়ে ওঠা একজন নিতান্তই সাধারন মানুষ। মনের কথাগুলি বরাবরই মুখে এসে বের হতে চায় না, কলমে আসতে চায়।

বিজু চৌধুরী

আমি পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার।

বিজু চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট্ট পৃথিবী

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩১

ছেলেটি বিয়ের পরে প্রথম মেয়ের বাসায় আসে। এখনও সংসার শুরু হয়নি। বিয়ের দুই সপ্তাহ হল মাত্র। দুই দিনের ছুটি যেন দুই মিনিটেই শেষ হয়ে যায়। প্রচন্ড কষ্ট মনে নিয়ে বিদায়বেলা দুজনেই মুখে হাসি ধরে রাখে। মেয়েটি ছেলেটিকে বোকার মত বলে -
- ডানে সামনে গেলেই মোড়ে রিক্সা পাবে। সোজা রাস্তায় বাস স্ট্যান্ড। হুড তুলে দিও।
- আচ্ছা।
- দাড়াও, নতুন শহর। কোথায় ভয় পেয়ে ভুল করে ফেলবে। তোমাকে মোড় পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।
এই বলেই মেয়েটি ছেলেটির সাথে হাঁটতে শুরু করে। মেয়েটির খেয়াল নেই যে, সে খালি পায়ে হাঁটছে।
রাস্তার মোড়ে রিক্সা নিতে গিয়ে ছেলেটি দেখে, মেয়েটির মুখ ভয়ে সাদা হয়ে গেছে। বুঝতে পেরে ছেলেটি বলে -
- তোমাকে রিক্সায় নামিয়ে দিয়ে যাই?
- তারচেয়ে হেঁটেই চল।
মেয়েটিকে আবার বাসায় রেখে হাঁটতে হাঁটতে ছেলেটি মোড়ে চলে যায় রিক্সা নিতে।
ছেলেটির চলে যাওয়া মেয়েটি দেখতে দেখতে একসময় ঝাপসা দেখতে শুরু করে। আজ মাত্র চারদিন হল, ছেলেটির সাথে তার দেখা হবার পরে একসাথে থাকা। কোন আসমান থেকে এত ভালবাসা নিয়ে এলো ছেলেটি? মেয়েটি রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবে -
- ও কি বাস স্ট্যান্ডে যেতে পেরেছে ঠিকমত? বাস কি ছেড়েছে? ওর সিটের পাশের জানালাটার কাঁচ আবার ভাঙ্গা নেই তো? একবার ঢাকা যেতে তো আমার পাশের জানালার কাঁচটা ভাঙ্গা ছিল। আহারে, ছেলেটাকে ফ্রিজের এক বোতল পানি দিব ভেবেছিলাম, ভুলেই গিয়েছি।
এই সামান্য সাধারন কথাগুলি ভেবে মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভিজিয়ে ফেলে। তার কান্না আরও বেড়ে যায়, যখন ভাবে -
- ওকে যে বলা হল না, রাস্তা ঘাটে অপরিচিত কেউ কিছু দিলে যেন না খায়। মোবাইলটি হাতে নিয়ে কল দেয়। রিং হচ্ছে। ধরছে না কেন? বুক ধরফর করে ওঠে। রিংয়ের শব্দ ধীরে ধীরে বাড়ছে কেন? ফোনটা ধরছে না কেন? মাগো! হটাৎই শোনে তার দরজার বাইরে মোবাইল বাজছে। জীবনে না দৌড়ানো মেয়েটি পাকা এ্যাথলেটদেরও হার মানিয়ে দেবার মত এক লাফে বিছানা থেকে নেমে এক মুহুর্তেই দরজা খুলে দেখে ছেলেটি দাড়িয়ে। ছেলেটি বলে -
- বাস ছেড়ে দিয়েছে, লেট হওয়াতে ধরতে পারিনি।
- কালকে অফিস যেতে না পারলে সমস্যা হবে না? প্রাইভেট চাকরি! তারমধ্যে বেশীদিন তো হয়নি।
- একটু সমস্যা হতেও পারে। কালকে বসকে ফোন করে বুঝিয়ে বলব।
- আহা! আমার জন্যই তোমার দেরীটা হল। এই বলে মেয়েটির এতটাই মন খারাপ হয় যে, মেয়েটি কাঁদতে শুরু করে। ছেলেটি বলে -
- কেঁদে কি হবে? যা হবার তা তো হয়েই গেছে।
দুজন মানুষ, ভারাক্রান্ত মনে ঘরে প্রবেশ করে। ছেলেটি মন খারাপ করেই ফ্রেশ হতে যায়। মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতেই উনুনে পানি চড়ায়। মানুষটির যে কি একটা বাজে অভ্যাস? শোবার আগে চা খাবে।

দুজন ব্যাথিত মনের মানুষের মনেই আজ ভর করেছে পৃথিবীর স্বর্গীয় সব সুখ, সব আনন্দ। যে আনন্দে পৃথিবী ঘুরে, যে আনন্দে দিন রাত্রি হয়। এইসব ছোট্ট ও খুবই সাধারন ঘটনা গুলি আমাদের সবার জীবনেই ঘটে।
- "এই ছোট্ট ঘটনাগুলির জন্যই মানুষ পৃথিবীতে বাঁচতে চায়। বিশ্বাস না করলেও, পূনর্জন্ম কামনা করে।"

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৭

তাজবীর আহােমদ খান বলেছেন: প্রকাশ ভংগীটা অসম্ভব ভালো লাগলো

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:২৪

বিজু চৌধুরী বলেছেন: অনেক ভাল অনুপ্রেরনা। আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.