নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সহজ সরল সোজা সাদা ভাষায় জীবনের কথা লিখতে পছন্দ করি। কাদা মাটিতে বেড়ে ওঠা একজন নিতান্তই সাধারন মানুষ। মনের কথাগুলি বরাবরই মুখে এসে বের হতে চায় না, কলমে আসতে চায়।

বিজু চৌধুরী

আমি পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার।

বিজু চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্ষুদ্র প্রেমের ছোট্ট গল্প

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৯

একটি সত্য ঘটনার ছায়া অবলবনে
১॥
থানা শহর। তখন সিনেমা হলের সাথে, সবে ভিসিআরে হিন্দি সিনেমা দেখা যোগ হয়েছে বিনোদনের খাতায়। তাই বাচ্চারাও প্রেম জিনিসটির নাম শুনেছে, বুঝতে না শিখলেও। ক্লাস থ্রিতে পড়া রাসেলকে একই পাড়ার ক্লাস ওয়ানে পড়া মেয়ে মিতা একদিন বলে -
- রাসেল ভাই, প্রেম প্রেম খেলবেন?
- খেলা যায়। কিন্তু নিয়মটা কি?
- নিয়ম আর কি? আপনি আমাকে ভালবাসেন, আমি আপনাকে ভালবাসব। আমরা দুইজন প্রতিদিন কথা বলব।
- আচ্ছা ঠিক আছে। তবে, ফুটবল খেলার সময় ডাকবি না কিন্তু।
- ঠিক আছে, ডাকব না। কিন্তু প্রেম করলে তুই বলা যায় না, তুমি বলতে হয়।
- কেন?
- জানি না। এটিই নিয়ম।
এরপরে দুজন কথা বলে প্রতিদিন। বয়সের কারণে এটিকেই সবাই স্বাভাবিক মনে করে। রাসেল বলে, সে ফুটবলে একটি গোল দিয়েছে গতকাল। আরেকটি গোল দিতে পারত, কিন্তু জহির তাকে ল্যাং মেরেছে। মিতা তার পুতুলের গল্প বলে। ক্লাসে তার এক বান্ধবীর খুব অহংকার। জহিরের মতই দুষ্টু।

২॥
এভাবেই চলতে থাকে। একদিন রাসেলের মন খারাপ। কারণ, খেলার ফুটবলটা ফেটে গেছে। দুই টাকা চাঁদা দিতে হবে। আগের মাসেই বাবা টাকা দিয়েছেন, তাই এবার আর দিবেন না। মিতা দুই টাকা দিয়ে দেয়। মিতাকে তার নানু, দিদা, খালা, ফুফিরা বেড়াতে এসে যাবার সময় যে টাকা দিয়ে যেত, সেটি সে জমাত। রাসেলও টাকা পেত। কিন্তু সে টাকা পাওয়ার পরে, একদিনও থাকত না।
এভাবেই মাস তিনেক চলার পরে, রাসেল এই প্রেমের মজা হারিয়ে ফেলল। তাই প্রতিদিন থেকে প্রথমদিকে দুই একদিন অন্তর অন্তর ও তারপরে যখন সপ্তাহান্তে দেখাটা ঠেকল, তখন মিতা একদিন রাসেলকে বলল -
- কেন আগের মত প্রতিদিন আস না?
- ধুর, এই প্রেম প্রেম খেলায় মজা নাই। ভাল লাগে না। প্রতিদিন একই গল্প। টিভিতে কি দেখলা? আজকে কি দিয়ে খাইলা? ক্লাসে কি হইল? এরচেয়ে আমার ফুটবল খেলাই ভাল।
- তার মানে কি তুমি প্রেম করবা না?
- না, করব না।
- ভালভাবে চিন্তা করে কালকে বলবা।
- আচ্ছা।

৩॥
রাসেল পরের দিন খুবই তাড়াহুড়োর মধ্যে মিতার সাথে দেখা করে বলল -
- না, আমি প্রেম করব না।
এই বলে রাসেল চলে যেতে ঊদ্যত হলে, মিতা জিজ্ঞেস করল -
- কোথায় যাও এত তাড়াহুড়ো করে?
- ফুটবল খেলতে যাই।
মিতা একটি কাগজ রাসেলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল -
- এখানে তারিখ লেখা আছে। তুমি আমার কাছে মোট ১২ টাকা নিয়েছ। ফেরত দিতে হবে।
- আমি টাকা পাব কোথায়?
- তা তো আমি জানি না। প্রেম না করলে টাকা ফেরত দিতে হবে।
- ঠিক আছে ফেরত দিব। এক টাকা, দুই টাকা করে দিব তো, একটু সময় লাগবে।
- সমস্যা নাই। যতদিন পুরো টাকা শোধ হবে না, ততদিন প্রেম করতে হবে। প্রতিদিন দেখা করতে হবে।
রাসেল রাজী হল। তিনদিন পরেই রাসেল দুই টাকা পেল চাচার কাছে। সে মিতাকে আজ দুই টাকা দিয়ে দিবে। বাকী থাকবে দশ টাকা।
দুপুরে স্কুলে বন্ধু মামুন রাসেলকে বলল -
- রাসেল, মনে আছে তোর? আজকে কিন্তু এক টাকা দিতে হবে টেনিস বল কিনতে। সাত চারা খেলি না অনেকদিন।
স্কুল থেকে ফেরার পথে পাড়ার মোড়ে ঝাল চানাচুরের ভ্যান গাড়ী দেখে রাসেলের জিহবায় জল চলে অসে। আট আনার চানাচুর কিনে খেয়ে রাসেল যখন ঝালে কাতর, ঠিক তখনই দেখে মন্টু আইসক্রিম। রাসেল ভাবে, আটআনা দিয়ে কি হবে? টাকা পেলে পরের বার মিতাকে দিবে। আট আনার একটি মালাইকারী আইসক্রিম হাতে রাসেল বাসার দিকে হাঁটতে থাকে।

৪॥
মিতা আজ রাসেলের কাছে ১২ টাকা ফেরত চেয়েছে। রাসেল অপারগ, তাই মাথাটা নিচু করে আছে। মিতা বুঝে গেছে, রাসেল এই টাকা ফেরত দিতে পারবে না। তাই, এটি রাসেলকে কাবু করার অস্ত্র হিসেবে খুবই কার্যকরী। মিতা সবসময় এই অস্ত্র ব্যবহার করে না। মাঝে মাঝে করে প্রয়োজনে, আর মাঝে মাঝে রাসেলের অপারগতা দেখতে। আজ রাসেল দোষ করেছে। মিতা তাকে বড়ই আনতে বলেছে, রাসেল আনেনি। মিতা ১২ টাকা ফেরত চেয়ে রাসেলের দিকে তাকিয়ে আছে। রাসেলের মাথা নিচু। মাথাটা নিচে রেখেই বলে -
- ভুল হয়ে গেছে, আমি এখনই নিয়ে আসছি।
- যাও মাফ করে দিলাম। আজকে আনতে হবে না। কালকে নিয়ে আসবে তাড়াতাড়ি। তা না হলে, কালকে তোমাকে ১২ টাকা দিতেই হবে।
- আমি কালকে কোনভাবেই ভুলব না।
- মনে থাকে যেন।
- মিতা, তুমি এত ভাল কেন?
এই বলে রাসেল মিতার হাতটি ধরতে গেলে, মিতা হাত সরিয়ে নেয়।
রাসেল ও মিতার প্রথম সন্তান ১০ বছরের মেয়ে বৈশাখী ঘরে ঢুকেছে। তাদের ৭ বছর বয়সী ছেলের নাম শ্রাবণ। এই এক মেয়ে এক ছেলে দুজনের। বৈশাখী বলে -
- মা, আমি ভাইয়াকে সাথে নিয়ে একটু ছাদে ঘুরতে যেতে পারি?
- পার।
- থ্যাংক ইউ মা। বাবা, তুমি মাকে নিয়ে ছাদে চলে আসো।
- ঠিক আছে মা, তোমরা যাও, আমরা আসছি।
বৈশাখী শ্রাবণ চলে যাবার পরে মিতা বলে -
- দেখ মেয়ে বড় হয়েছে, এখন এভাবে হুটহাট করে হাত ধরবে না।
- কি বল? বৈশাখী এত ছোট মেয়ে। দশ বছর মাত্র বয়স।
- যুগ এগিয়েছে। ২৫ বছর আগে তুমি ৭ আর আমি ৫ বছর বয়সে যদি প্রেম করতে পারি, তাহলে বৈশাখী ছোট হয় কি করে?
- তাই তো? তুমি অবশ্য বেশী বুঝতে। যাই হোক, ছেলে মেয়েরা তো ছাদে। এবার হাতটা ধরলে নিশ্চয়ই সমস্যা নেই।
- ১২ টাকা ফেরত চাইব কিন্তু।
এই বলে মিতা হাসতে থাকে। রাসেল এক পলকে তাকিয়ে মিতার হাসি দেখতেই থাকে। স্বর্গীয় হাসি। মিতা হাসতে হাসতেই রাসেলের চোখে চোখ পড়া মাত্রই চুপ হয়ে যায়। এতদিন পরেও, দুজন দুজনকে মুগ্ধ নয়নে দেখতে থাকে।

৫॥
রাসেল মিতাকে ১২ টাকা দিতে পারেনি কখনই। ১২ দিগুনে ২৪ টাকা নয়, ২৪ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি গাড়ী মিতার জন্মদিনে গিফট করেছে। মিতা বিশ্বাস করতে পারছে না, রাসেল সত্য সত্যই তাকে গাড়ীটি গিফট করেছে। মিতা চোখের জল আড়াল করে বলে -
- তোমাকে ১২ টাকা নিয়ে এত খোঁটা দেই, তুমি কিছু মনে কর না তো?
- মনে করি অবশ্যই। মনে করি, সেটিই আমার সৌভাগ্য।
- ১২ টাকা দিলেই তো পার।
- মরে গেলেও না।
- কেন?
- তুমি ছোটবেলায় বলেছিলে না? এটি দিতেই হবে। তার মানে এটি তোমার দাবী। আমি এই ঋন শোধ না করেই মরে যেতে চাই।
- তওবা, তওবা। এসব কথা বলছ কেন?
- যাতে পরকালে এই ঋনের কারণেই তোমার সাথে আমার অন্তত একবার হলেও দেখা হয়।
রাসেলের বুকে মাথা রেখে মিতা কাঁদতে থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখের কান্না এটি। মিতা না দেখেও বুঝতে পারে, রাসেলের চোখে জল।
" পৃথিবীর বড় সব কিছুরই সৃষ্টি, অতি ক্ষুদ্র কিছু থেকে"।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫১

সুবীর কান্তি গোপ বলেছেন: আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষা পরিচিত। বিশ্বের প্রতিটি দেশের সাথে যোগাযোগ রাখতে হলে সবাইকে ইংরেজি ভাষা আয়ত্ব করতে হবে। ইংরেজি ভাষা শিখা সবারই উচিত। তাই ইংরেজি ভাষা শিখতে হলে নিচের লিংকে ক্লিক করুন:
https://learnenglish1976.blogspot.com/

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:৫৫

বিজু চৌধুরী বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। কিছু মনে করবেন না - আপনি কি এই কমেন্টটি এই লেখায় নাকি আমার আরেকটি লেখা ছিল - আমরি বাংলা ভাষা শিরোনাম, সেটিতে করতে চেয়েছিলেন? আবারো ধন্যবাদ।
লিংকটির জন্য আবারো ধন্যবাদ

২| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২৩

হাবিব বলেছেন: গল্প টা পড়ে ভাল লাগলো। কিন্তু নিজে ভালবেসে সুখি হতে পারলাম না।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২৯

বিজু চৌধুরী বলেছেন: ভাল লাগল জেনে খুশী হলাম। সুখ বিষয়টি আপেক্ষিক। সম্পূর্ণভাবে নিজের কাছে, শুধু সুতোটির বাঁধন থাকলেই হয়।

৩| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩১

মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা বলেছেন: ভালো লাগলো।

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৪৬

বিজু চৌধুরী বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

৪| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:১৯

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
পরিচিত প্রেমের গল্পের ভিন্নরূপে প্রকাশ। বেশ! খারাপ লাগলো না। নতুনত্ব ছিল।

তবে, আপনার লেখা অনেকটাই অগোছালো। মাঝখানে ২৫ বছর কেঁটে গেছে - এটা আলাদা ভাবে বলা দরকার ছিল।

- আমি কালকে কোনভাবেই ভুলব না।
- মনে থাকে যেন।
- মিতা, তুমি এত ভাল কেন?
এই বলে রাসেল মিতার হাতটি ধরতে গেলে, মিতা হাত সরিয়ে নেয়।
রাসেল ও মিতার প্রথম সন্তান ১০ বছরের মেয়ে বৈশাখী ঘরে ঢুকেছে। তাদের ৭ বছর বয়সী ছেলের নাম শ্রাবণ। এই এক মেয়ে এক ছেলে দুজনের। বৈশাখী বলে -
- মা, আমি ভাইয়াকে সাথে নিয়ে একটু ছাদে ঘুরতে যেতে পারি?
- পার।
- থ্যাংক ইউ মা। বাবা, তুমি মাকে নিয়ে ছাদে চলে আসো।
- ঠিক আছে মা, তোমরা যাও, আমরা আসছি।
বৈশাখী শ্রাবণ চলে যাবার পরে মিতা বলে -
- দেখ মেয়ে বড় হয়েছে, এখন এভাবে হুটহাট করে হাত ধরবে না।
- কি বল? বৈশাখী এত ছোট মেয়ে। দশ বছর মাত্র বয়স।
- যুগ এগিয়েছে। ২৫ বছর আগে তুমি ৭ আর আমি ৫ বছর বয়সে যদি প্রেম করতে পারি, তাহলে বৈশাখী ছোট হয় কি করে?


এই জায়গাটা ছিল লেখার মূল অংশ। এখানে আরো যত্ন নিয়ে লেখা দরকার ছিল।

যাই হোক, আশা করবো সমস্যা গুলো দূর করে আরো ভালভাবে লিখবেন। যেহেতু থিংকিং ভাল আপনার লেখায় - তাই আশা থাকবে ভিন্ন ধারার কিছু লেখা দেখার।

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৪৮

বিজু চৌধুরী বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার পরামর্শটি মাথায় থাকবে, যা হয়তো ভবিষ্যতে সাহায্য করবে। আবারও ধন্যবাদ।

৫| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৬:৫৭

নাদিম মাহমুদ শান্ত বলেছেন: আমি নতুন। তাই সাহায্য দরকার । কিভাবে প্রথম পেইজএ লেখা দিতে পারব ?

০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:২০

বিজু চৌধুরী বলেছেন: আপনি ব্লগে কয়েকদিন লিখলে মডারেটররা আপনাকে পর্যবেক্ষনের পরে প্রথম পাতায় লেখা প্রকাশ করবে। আপনি জিজ্ঞাসা সেকশনে বিশদ দেখতে পারবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.