নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তথ্যের মৌমাছি, জ্ঞানের ভিক্ষুক, প্রজ্ঞার সাধক।
ছবি: নেট
একজন মুসলিম কাঁকড়া খেতে পারবে কি?
বাইঅ্যাস ও অন্ধবিশ্বাসকে একটু নিয়ন্ত্রণ করে পুরো কলামটি পড়ুন।
কাঁকড়া হালাল কি হারাম অথবা মাখরু এ বিষয়ে আমাদের দেশের মানুষের ভেতর এক দারুণ ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত। অধিকাংশ মানুষই কাঁকড়া খাওয়া মাখরু হিসাবে জানে, অনেকে আবার বলে থাকে এটা বিধর্মীরা খায় এটাতো খাওয়াই মহাপাপ, হারাম!
আমি নিজেই শিশু বয়স হতে গোটা দশেক ইমাম এবং মৌলবীদের ফতোয়া দিতে শুনেছি কাঁকড়া বিধর্মীদের খাবার, খাওয়া হারাম। কেউ কেউ আবার নিজের অন্ধবিশ্বাস, ঘৃণাকে একটু দাবিয়ে রেখে বলেছেন কাঁকড়া মাখরু।
এ বিষয়ে কোরআন, হাদিসের আলোকে আলোচনা করতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে, হালাল কি, হারাম কি এবং মাখরু কি।
হালাল শব্দটি আরবি, এবং সরাসরি কোরআন থেকে আগত, যার শাব্দিক অর্থ হলো অনুমোদনযোগ্য বা অনুমোদিত। কোরআন ইসলামি শরিয়া আইন, হাদিসে যে সমস্ত বিষয় একজন মুসলিমের জন্য বৈধ করা করা হয়েছে সেটাই হালাল।
কোরআন, শরিয়া আইন, হাদিসে যে সমস্ত বিষয় একজন মুসলিমের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেটাই হারাম। হারামও একটি আরবি শব্দ যেটা সরাসরি কোরআন থেকে এসেছে।
‘মাকরুহ’ শব্দটি ‘মাহবুব’-এর বিপরীত। মাহবুব মানে প্রিয়, মাকরুহ মানে অপ্রিয়।
শরিয়তের পরিভাষায় ‘মাকরুহ’ দুই প্রকার। ১- মাকরুহ-তাহরীমি, ২-মাকরুহ-তানযীহি।
মাকরুহ-তাহরীমি, এটি হারামের কাছাকাছি। এজন্য পরিভাষায় মাকরুহ তাহরীমি বলা হয়, যা ত্যাগ করার জন্য শরিয়ত শক্তভাবে বলেছে তবে সেটা অবশ্যই ধারণানির্ভর দলিল প্রমাণিত; তথা অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত নয়। এটি সাধারণত ওয়াজিবের বিপরীতে ব্যবহার হয়। সুতরাং এ ধরনের মাকরুহ ত্যাগ না করলে গুনাহ আছে।
পক্ষান্তরে মাকরুহ-তানযীহি এটি হালাল বা জায়েযের কাছাকাছি। এজন্য পরিভাষায় মাকরুহ-তানযীহি বলা হয়, যা ছেড়ে দেওয়ার জন্য শরিয়ত বলেছে। তবে শক্তভাবে বলে নি বিধায় ছেড়ে দিলে সাওয়াব আছে তবে করলে গুনাহ নেই। এটি সাধারণত সুন্নত কিংবা মুস্তাহাবের বিপরীতে ব্যবহার হয়।
যেহেতু কাঁকড়া তথা খাদ্য নিয়ে কথা হচ্ছে সেহেতু আগে আমরা জানবো কোরআনে সরাসরি কি কি খাদ্য হারাম বলা হয়েছে।
সূরা বাকারার আয়াত ১৭৩ এ বলা হয়েছে; "তিনি(আল্লাহ) তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যতীত অপর করো নামে উৎসর্গ করা হয়।"
সূরা আল আন-আম আয়াত ১১৮ এ বলা হয়েছে; "অতঃপর যে জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়, তা থেকে ভক্ষণ কর যদি তোমরা তাঁর বিধান সমূহে বিশ্বাসী হও।"
সূরা আল- মায়েদাহ আয়াত ৯৬ এ বলা হয়েছে; "তোমাদের জন্য সমুদ্রে শিকার এবং সমুদ্রের খাদ্য হালাল করা হয়েছে তোমাদের উপকারার্থে এবং তোমাদের এহরামকারীদের জন্যে হারাম করা হয়েছে স্থল শিকার যতক্ষণ এহরাম অবস্থায় থাক। আল্লাকে ভয় কর, যার কাছে তোমরা একত্রিত হবে।"
অতএব এটা পরিষ্কার যে কোরআনের কোন আয়াতে নির্দিষ্টভাবে কাঁকড়াকে হারাম বলা হয়নি।
শাফী, মালিকি, হানবালী মাযহাবে বলা হয়েছে শেল-ফিস(শক্ত আবরণ যুক্ত প্রাণী) হালাল।
যে সমস্ত প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ সে সমস্ত প্রাণী খাওয়াও নিষিদ্ধ। ইবনমাজাহ; আল জামী।
সহি-সিত্তা সহ অনুমোদিত কোন হাদিস গ্রন্থে নির্দিষ্টভাবে কাঁকড়া বা শক্ত আবরণের প্রাণী খাওয়া হারাম বলা হয়নি।
এবার কাঁকড়া কেন মাখরু নয় সেটা পরিষ্কার হবে, পাঠক আগেই জেনেছেন যে,
মাখরু-তাহরিমী কে বলা হয়েছে ধারণা নির্ভর যেটার কোন অকাট্য প্রমাণ বা দলিল নেই। অন্যদিকে মাখরু-তানযিহি হল হালাল বা জায়েজ এর কাছাকাছি।
আধুনিক জীববিজ্ঞানের তথ্য অনুযায়ী, কাঁকড়া প্রায় ২০ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীতে জীবন শুরু করে। কাঁকড়া বৈজ্ঞানিক নাম (Brachyura), এটা এ্যনিমিলিয়া জগতের আরথোপডা পর্বের প্রাণী। কাঁকড়ার এপর্যন্ত প্রায় ৬,৭৯৩ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে যার ভেতর প্রায় ৪০০০ হাজারের বেশি প্রজাতির কাঁকড়া সমুদ্রের। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ব্রিটানিকার তথ্য মতে কাঁকড়া জাতীয় প্রাণীর জীবন সূত্রপাত হয় সমুদ্রে, পরবর্তীতে পৃথিবীর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে কাঁকড়া কিছু প্রজাতি নদীর মাধ্যমে মিঠা পানির জগতে প্রবেশ করে এবং এবং নিজেদেরকে মিঠা পানি সহিষ্ণু করে তোলে, এবং কালের পরিক্রমায় মানুষ, প্রকৃতি ও অন্যান্য জীবের মধ্যে কাঁকড়া হৃদ, পুকুর, নদী এবং অন্যসব জলাধারে জীবনধারণ শুরু করে।
এখন মহা বিতর্কিত বিষয় কাঁকড়া হালাল কিনা?
সূরা আল-মায়েদাহ এর আয়াত ৯৬ এ পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে তোমাদের জন্য সমুদ্রে শিকার এবং সমুদ্রের খাদ্য হালাল করা হয়েছে। যেহেতু কাঁকড়া সমুদ্রে প্রাণ যাত্রা শুরু করা প্রাণী সেহেতু কাঁকড়া হালাল, এবং সমুদ্রের বাইরের কাকড়াও হালাল, যেহেতু পুকুর, নদী-নালা, খাল-বিলের কাঁকড়া কালের পরিক্রমায় মিঠা পানিতে বাস শুরু করেছে।
মূলত আমাদের দেশের মানুষের এই হারাম ও মাখরুর ভ্রান্ত ধারণার পেছনে ইসলামের কোন সংযোগ নেই। রয়েছে কিছু মূর্খ অর্ধশিক্ষিত, কোরআন হাদিস সুন্নাহ সম্পর্কে বিশ্লেষণী ধারণাহীন, বাইঅ্যাসড , ইসলামের শত্রু কিছু মৌলভির অন্য ধর্মাবলম্বী ওপর ঘৃণার কারণে এরা এই ভ্রান্ত ধারণা সাধারণ মানুষের মনে ঢুকিয়েছেন। এরা কখনই একজন মানুষ হিসাবে আর একজন মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়নি, শিখিয়েছে ঘৃণা করতে, প্রতি মুহূর্তে ইসলামকে অপব্যাখ্যা করে নিজেদের উদ্দেশ্য হসিল করার জন্য এরা কাজ করছে।
এই মূর্খ মৌলবিদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর এতটাই ঘৃণা যে তারা নিজের মনমত হাদিস বানিয়ে জনসাধারণের কাছে বুঝিয়েছে যে কাঁকড়া মাখরু। যেই মাখরুর পেছনে নেই কোন বৈধ প্রমাণ নেই কোন বৈধ দলিল। সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই তাদের মনগড়া।
কারোর যদি কাঁকড়া খেতে ভক্তি না হয় তবে সে কোথা আলাদা, পৃথিবীতে বেশ অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ রয়েছে যারা প্রতিদিনই কাঁকড়া খায়। ইন্টারনেট একটু রিসার্চ করলে অসংখ্য আর্টিকেল ও ভিডিও পাওয়া যাবে যেটায় কাঁকড়াকে "পারমিসিবল" বা হালাল বলা হয়েছে। একই সাথে কিছু তথ্য পাওয়া যায়, যেখানে কোনো হাদিস কোরআন এর আয়াত ছাড়াই ধারণা নির্ভর ভাবে মাখরু বলা হয়েছে।
আমি অনেককেই বলতে শুনেছি যে, কাঁকড়ার নখ আছে তাই এটা মাখরু! ব্যাপারটা কতটা হাস্যকর; কারণ যারা এই ধরনের কোথা বলে তারাই আবার চিংড়িকে হালাল বলে। তখন তারা নিজ হতে চিংড়ির নখ কাটে। আবার কেউ কেউ বলে কাঁকড়া আক্রমণ করে, শিকার করে তাই এটা মাখরু! তখন তাদের মনেই থাকেনা চিংড়িরও দুটো চিমটা আছে যা দিয়ে ওরা শিকার ও আত্মরক্ষা করে, আক্রমণও করে।
কাঁকড়া খাওয়া না খাওয়া একদম ব্যক্তিগত ব্যাপার, ব্যক্তিগত বাচবিচার থাকতেই পরে। কিন্তু বিধর্মীরা খায় তাই এটা খাওয়া মাখরু আরও নানান মনগড়া হদিস ও ফতোয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা ঠিক নয়।
এই ইন্টারনেট এর যুগে কোরআন, হাদিস, বা অন্য যেকোনো তথ্য খুব সহজেই পাওয়া যায়। কোন মৌলবী বা পণ্ডিত এর কাছে ধর্ম জ্ঞান সিন্দুকে আর তালা বদ্ধ অবস্থায় নেই। নিজে অনুসন্ধান করুণ নিজে বিশ্লেষণ করুন।
সূরা বাকারার ১৮৫ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে; "আল্লাহ তোমাদের জন্য দ্বীন সহজ করতে চান, তিনি তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না।"
তথ্য সূত্র: আল কোরআন, হাদিস, বেশকিছু ওয়েব আর্টিকেল এবং ইউটিউব ভিডিও।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:০৮
মিথমেকার বলেছেন: প্রয়োজন বা অপ্রয়োজন কোনটাই ধ্রুব নয়।
২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:২১
সোনাগাজী বলেছেন:
বেকুবীটাই ধ্রুব।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:৪২
মিথমেকার বলেছেন: বেকুবী যদি ধ্রুব হতো; তাহলে জগতের হাসি-কান্নার, সৃষ্টি-ধ্বংসের, ঘৃণা-ভালোবাসার, অহংকার-উদারতার সকল হিসাব মিথ্যা হয়ে যেত। তখন মৃত্যু হত আপেক্ষিক বিষয়।
৩| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮
শার্দূল ২২ বলেছেন: একটা কাকড়ার জন্য এত সময় নষ্ট করলে আপনি বাকি খাবার কখন খাবেন ভাইজান? এত জটিল করেন কেন সব বিষয় আপনারা। বেশি পড়া লেখা করলে এই সমস্যা দুই লাইন বেশি বুঝে মানুষ, এই জন্য কম পড়বেন কম জানবেন, আর দুইহাত ভরে খেতে থাকবেন, আল্লাহ আখেরাতে প্রশ্ন করলে বলবেন এত খাবার দিসো, খাইতে খাইতে জীবন শেষ পড়বো কখন আর জানবো কখন কোনটা হালাল কোনটা হারাম।
শুনেন কোরাণে যেসব খাবার হারামা করেছে সেগুলো ছাড়া আর সব হালাল, পরের আয়াতে আবার বলেছে অপারগতায় আমি ক্ষমাশীল তার মানে বিপদে পড়লে খাবার না পেলে সেগুলো হালাল।সাপ কুকুর বিড়াল সিংহ বাঘ সব হালাল।এখন কথা হলো ঘরের কাছে নিরীহ প্রানি হাস মুরগি গরু ছাগল থাকতে জীবনের রিস্ক নিয়ে আপনি বিষধর সাপ ধরে খেতে যাবেন কেন ? আগে এই সব নিরীহ প্রানী খেয়ে শেষ করেন তারপর বাকিদের ধরবেন । যেই বাঘ মানুষ খেয়ে ফেলে তাকে ধরে খাওয়া এত সহজ না। আর ধরতে পারলে যান খান , নিষেধ করেছে কে ? এসব জানতে ঘরে হাদিস ফোতোয়ার লাইব্রেরী দেয়ার কি আছে? জীবন বাঁচাতে জীবনের রিস্ক নেয়া কি ঠিক হবে? কুকুরের মধ্যে জালাতংক রোগ সহ আরো নানা ব্যকটেরিয়া জন্মায় সেটা খাওয়াও রিস্ক।
তারপর বাকি থাকলো ভক্তি বা রুচি, আপনার রুচিতে না গেলে আপনি হাসঁ না খান, অনেকেই ছাগলের মাংস খায়না, আমিও খাইনা, আমার ভক্তি আসেনা। যেমন আরবে একটা প্রাণী আছে গুই সাপের মত দেখতে,নাম সান্ডা, একটু ছোট আকারে। আরবরা খায় এখনো ,সেক্সুয়াল পাওয়ার নাকি বাড়ে, ওদের আবার সেক্স বেশি লাগে কারণ বউ থাকে বেশ কয়েকটা। না খেয়ে কি বউএর মার খাবে নাকি। তো একদিন এক সাহাবা নবিজী কে দাওয়াত করে ঐ সান্ডার মাংস খেতে দিলো। নবিজী বললো - আমি বলছিনা এটা হারাম কিন্তু আমার রুচিতে যায়না বলে আমি খাইনা, তোমরা খাও। নবিজী পেয়াজ খেতেননা। তাই বলে পেয়াজ তো হারামনা।
সুতরাং আল্লাহর নিষেধ করা লিষ্ট ছাড়া দুনিয়ার সব হালাল। এটা নিয়ে ঘাম ঝাড়ানোর কিছু নেই।
শুভ কামনা
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:২৪
মিথমেকার বলেছেন: ভাই আপনার মন্তব্যটি একাধিকবার পড়েছি।
ওই লেখার পেছনে জটিলতা তৈরির কোনো উদেশ্য আমার ছিলো না, আমি চেষ্টা করেছি মানুষের অন্ধবিশ্বাস বা অনেক পুরাতন বিশ্বাসটা কে পরনির্ভর না হতে দিতে। বিবেক ও মস্ত্রিষ্কে প্রশ্নের সৃষ্টি করতে, কারণ হয়ত বিশ্বাস থেকেই ঘৃণা বিষ এর সৃষ্টি।
হালাল বা হারাম এর বিষয়ে বলব, তিনি যদি সত্যই ক্ষমশীল হয়ে থাকেন তাহলে খাবার মতো বিষয়ে তার ক্ষমা প্রদর্শনের সম্ভাবনা রয়েছে। গুসা করার কারণ নেই।
পৃথিবীর কোনো প্রাণীই ক্ষুধার কষ্ঠ না পাক।
শুভকামনা।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:৩৭
সোনাগাজী বলেছেন:
অপ্রয়োজনীয় বিষয়।