নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তথ্যের মৌমাছি, জ্ঞানের ভিক্ষুক, প্রজ্ঞার সাধক।
ছবি: নেট
শৈশবে ঠিক ক'জনার মুখ থেকে এই কথাটা শুনেছি সেটা স্মরণে আসছে না। তবে সেটা এক এর অধিক। শিশু, কিশোর, এমনকি বয়োবৃদ্ধদের মুখেও শুনেছি। এই কথার কারণ পরিষ্কার ছিল শৈশবেই বুঝে গিয়েছিলাম। লাল পিঁপড়ে কামড় দেয়, কামড় দিলে জ্বলা করে চুলকায়। অন্যদিকে কালো পিঁপড়ে কামড় দেয় না, বেচারাগুলো অত বিষাক্ত নয়। তখন যা বুঝেছিলাম তা হলো হিন্দুরা খারাপ, কাছে গেলে কামড় দিতে পারে। মুসলিমরা ভালো অবলা, কাছে গেলেও কামড় দেয় না।
এরপর অনেক বছর কেটে গেছে এই কথা মাথায় আসেনি। সম্ভবত গত বছর "চিত্রা নদীর পাড়ে" চলচ্চিত্রটি দেখছিলাম। চলচিত্রের শেষ এর দিকে মিনতি তাদের বাড়ির ছাদে শুকাতে দেয়া কাপড় তুলছিল, এমন সময় তার ছোট বেলার এক বান্ধবী আসে। তাদের মধ্যে কথোপকথন চলতে থাকে, এক পর্যায় মিনতির সেই ছোটবেলার বান্ধবী ইতস্তত করতে করতে বলে,
“শুনলে হাসবি নাতো?"
মিনতি মাথা নেড়ে বলে না।
তখন তাঁর সে বান্ধবী বলে,
“আমরা মনে করতাম কালো পিঁপড়ে গুলো ভালো, ওগুলো কামড়ায় না তাই মুসলমান। আর লাল পিঁপড়ে গুলো হিন্দু, ওগুলো কামড়ায়তো। আমরা কী ছেলেমানুষ ছিলামরে!”
উত্তরে মিনতি বলে,
“হয়ত এখনও আছি।”
প্রচণ্ড কান্না আসছিল তখন আমার, কেঁদেছিও নীরবে। স্রষ্টার সৃষ্টির লীলা কি বিচিত্র! ওরাও ছোটবেলায় একই কথাটি শুনেছে, বলেছে, হাসাহাসি করেছে!
চলচ্চিত্র নির্মাতা তারই লেখা গল্পে নির্মাণ করেছেন এই চলচ্চিত্র, ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত। বাংলা চলচিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা একটি চলচ্চিত্র। নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল এর প্রায় সবকোটি চলচ্চিত্র আমি দেখেছি, গুণী নির্মাতা। তার কাজে কি একটা জাদু আছে, চলচ্চিত্র দেখার সময় বার বার মনে হয় আর কত সময় আছে? শেষ কেন হয়ে যাচ্ছে! মন খারাপ হয়।
তারপর থেকেই প্রায় লাল পিঁপড়ে আর কালো পিঁপড়ের কথা মাথায় ঘুরপাক খেত। কীভাবে আসলো এটা? কার আবেগ ঘৃণার জন্ম? কিন্তু বাচ্চারা একথা শিখলো কীভাবে?
খুবই বিরক্তি আর হতাশায় ভুগছিলাম, ফুল যদি কুড়ি থেকেই বুকে বিষ নিয়ে থাকে তবে তাঁর ফলও হবে বিষাক্ত!
এসব ভাবতে ভাবতে আজ সকালে আবার চলচ্চিত্রটি দেখলাম। হঠাৎ মনে আসলো ছোট বেলার আরেকটি ঘটনা। একবার ঈদ এর সালামী জমিয়ে আমি একটি একুয়ারিয়াম কিনি যেটায় হরেক রকম রঙিন মাছ ছিল, ওদের দেখতে আমার ভালো লাগত। অনেক সময় ঘণ্টা পারকরে ওদের দেখতাম। আমার একুয়ারিয়ামে একটি ছোট কচ্ছপও ছিল, ওর সাঁতারকাটা দেখতে খুবই মজার ছিল, ছোট বেলায় আমিও পুকুরে ওর মতো করে সাঁতারকাটার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওর মতো হত না।
ছোটবেলায় আমাকে একজন মসজিদের ইমাম আরবি শিক্ষা দিতেন। আমি যে ঘরে আরবি শিক্ষা নিতাম ওই ঘরেই ছিল একারিয়ামটা । হুজুর সেটা দেখেছিলেন, এটাও দেখে ছিলেন যে ওই কাঁচের বক্সের ভেতর একটা কচ্ছপ আছে। বিশেষ করে আমি ওটাকেই বেশি খেয়াল করে দেখি।
একদিন আমার সেই আরবি শিক্ষক আমাকে বলল শোন তোমাকে একটা কথা বলব কাউকে বলবে নাতো? আমি বললাম না হুজুর বলেন!
তিনি বললেন, “ তোমার ওই কচ্ছপটাকে গলায় সুঁই ঢুকিয়ে দিবে। তাহলে আস্তে করে মোরে যাবে, কেউ কিছু টের পাবে না।
আমি বললাম, কেন হুজুর ওকে গলায় সুঁই ঢুকায় মারব কেন!
হুজুর বললেন, হিন্দুরা কচ্ছপ খায়, এগুলো বাসাবাড়িতে পালা ঠিক না, গুণহা হবে।
আমি উত্তরে আর কিছু বলিনি। এর পর থেকে বার বার কচ্ছপটাকে দেখতাম ও ঠিক আছে কিনা।
এরপর বড় হয়ে আরও একটি কথা অনেক শুনেছি কট্টর মূর্খ মুসলমানদের মুখে যেটাও আমার মনে বেশ দাগ কেটেছে।
“মালাওন কা বাচ্চা কাভি নাহি আচ্ছা, যোভি কাহেতাহে আচ্ছা ও ভি সালা শুয়ার কা বাচ্চা।”
যখনই শুনতাম মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়তাম! ভাবতাম সমাজটা এমন কেন? মানুষে মানুষে এত ঘৃণা কেন? ধর্মের কিছু না জেনে না বুঝে এত বাড়াবাড়ি কেন?যেখানে মানুষের নাম শুনলে ধর্ম বিচার হয়ে যায়, সেখানে মানুষের মনুষ্যত্ব কীভাবে বিচার হবে?
আবেগ আর বিশ্বাস থেকেই ঘৃণার সৃষ্টি, আর ঘৃণার থেকে যত ধ্বংস।
২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:১৪
মিথমেকার বলেছেন: দারুণ বলেছেন, সবার জীবন সহজ ও সুন্দর হোক।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
৩| ১৬ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
পৃথিবীতে সকল অশান্তির মূলে এনজাইম এর মত কাজ করে ধর্ম।
১৬ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৩০
মিথমেকার বলেছেন: ধর্ম মানুষের জীবন সুশৃঙ্খল করে একই সাথে বিশ্বাসের জন্ম দেয়, ওই বিশ্বাস থেকেই হয় অন্ধবিশ্বাস। পরিশেষে অন্ধবিশ্বাস থেকে মানুষ শিখে নেয় ঘৃণা।
এখানে ধর্ম থেকে মানুষের দোষ বেশি; কারণ ধর্ম একটি দর্শন মাত্র অন্যদিকে মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী তাঁর নিজের চিন্তার ক্ষমতা আছে, বিশ্লেষণের ক্ষমতা আছে তা সত্ত্বেও সে চিন্তা, বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় না। সে তার অন্ধবিশ্বাসে ভর করে চলে। চলে জীবন্ত মৃত্যুর দিকে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৪৭
মিরোরডডল বলেছেন:
কুসংস্কার, ক্রোধ, বিদ্বেষ, ঘৃণা, হিংসা এগুলোই জীবনের অশান্তির মূল কারণ।
এসব থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে জীবন সত্যিই খুব সুন্দর, সহজ সরল আনন্দময়।