![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিরুপমা,তোমার রুপ আর তোমার কথা.... দুটোই এখন রুপকথা....
কোলবালিশ
লেখকঃনিলয় আহসান নিশো(বৃষ্টিহীন বর্ষাকাল)
.
.
টাই টা একটু বেধে দিবা?
নিলয় নিরুপমাকে বলছে।
সম্পর্কে স্বামী -স্ত্রী হলেও এদের মধ্যে এমন কিছুই হয়নি যাতে এদের কে স্বামী - স্ত্রী বলা যায়।
.
.
২ মাস আগের কথা,
নিলয় একটা প্রাইভেট কোম্পানি তে জব করে।
মা-বাবা কেউ নেই।আপন বলতে শুধু এক মামা ছাড়া আর কেউ নেই। খুবই সহজ সরল শান্ত ও ভদ্র ছেলে নিলয়। তো নিলয় এর মামা একদিন তাকে তার মামার বাড়িতে ডেকে নিয়ে বলল যে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে এবং তার মামার শেষ ইচ্ছা নিলয় যেন বিয়ে তে রাজি হয়।
.
.
মামীর ভাইয়ের মেয়ে নিরুপমা। নিরুপমার সাথেই তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। এবং বিয়েতে নিরুপমা ও রাজি ছিল। তাই বিয়ে টা খুব তারাতারি হয়ে গেল।
.
.
বাসর ঘরে গেল নিলয়।
খাট এর উপর বসতেই নিরুপমা বলল আপনাকে আমার কিছু কথা বলার আছে।আমি মেঘ নামের একটা ছেলে কে ভালবাসি। আমার মেঘ এর কাছে আমি তার পরী।আমি মেঘের পরী।মেঘ এখন বেকার কিন্তু কিছুদিন এর মধ্যে একটা জব পাবে এবং তখন সে আমাকে বিয়ে করবে। সে ৩ মাস সময় চেয়েছিল আমার কাছ থেকে কিন্তু আমি আব্বু এর হার্ট এর কথা ভেবে আপনাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। কিন্ত আমি ওকেই ভালবাসি এবং ও জব পেলে আমি ওর কাছে চলে যাব। তাই আমি আপনাকে কিছুই দিতে পারব না। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। বলেই নিলয় কে চাদর & বালিশ হাতে দিয়ে সোফায় ঘুমাতে বলে।
.
.
তারপর থেকে এভাবেই চলছে নিলয় ও নিরুপমা এর জীবন। কয়েকদিন মামার বাসায় থাকার পর নিলয় নিরুপমাকে সাথে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে।
.
.
দিনের সব কাজ সেরে রাতে নিলয় ঘুমাতে গিয়ে দেখে যে বিছানায় ২টা বড় বড় কোলবালিশ। নিলয় সবকিছু বুঝতে পেরে ঘুমাতে যায়। নিলয় এর নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস আছে। নিলয় সকাল বেলা উঠেই নাস্তা রেডি করে নিরুপমাকে ডাকত।নাস্তা খেতে। নিলয় সব কিছু নিজে করলেও চা দিতে নিরুপমাকে বলত।নিরুপমা চা বাড়িয়ে দিলে নিলয় বলতোএকটু চুমুক দিয়ে দেখতো কেমন হয়েছে? নিরুপমা অনিচ্ছা সত্বেও চা এ চুমুক দিত। তখন নিলয় সেই চা টুকু পান করে।তারপর হল এই টাই বাধা, প্রতিদিন নিলয় নিরুপমা কে বলবে টাই টা বেধে দিতে যাতে করে সে খুব কাছে থেকে নিরুপমাকে একটু দেখতে পায়। নিরুপমা অনিচ্ছা করেও প্রতিদিন টাই বেধে দেয় এবং নিলয় তখন অফিস চলে যায়।
.
.
মেঘ জব পেয়েছে।
নিরুপমা মেঘকে ফোন দিয়ে জানতে পারল।তখন নিরুপমা মেঘ কে বলল যে সে কবে নিরুপমাকে তার কাছে নিয়ে যেতে চায়।তারা কবে বিয়ে করবে? কিন্তু মেঘ বলল যে তার পক্ষে নিরুপমাকে বিয়ে করা অসম্ভব। কিন্তু নিরুপমা যদি চায় তাহলে মাঝে মাঝে মেঘ এর ফ্লাট এ গিয়ে মেঘের সাথে রাত কাটিয়ে আসতে পারে।
.
.
নিরুপমা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।
নিলয় তার উপর সম্পুর্ন অধিকার থাকতেও কখনো এমনকিছুই বলে নি।নিরুপমা মাঝে মাঝে রাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখত যে নিলয় তাকে অপলক দৃ্ষ্টিতে দেখছে, নিরুপমা ও ঘুম এর ভান করে থাকতো। নিলয় কখনই নিরুপমাকে স্পর্শও করে নি।
কিন্তু আজ????
.
.
নিরুপমা সেদিন এর পর থেকে বদলে যেতে লাগলো,
প্রতিদিন আর চা এ চুমুক দিতে বলতে হয় না। নিরুপমা নিজেই অর্ধেক কাপ চা খেয়ে বাকিটা নিলয় কে দিত এবং নিলয় এর অবশিষ্ট টুকু ও খেয়ে নিত। টাই টা এখন নিজেই বেধে দেয়।নিলয় এসব দেখে কিছুটা অবাক হচ্ছে।এদিকে ৩মাস সময় ও শেষ হয়ে যাচ্ছে।
.
.
আজ অফিস থেকে বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে না নিলয় এর। কারন হয়তো বাসায় গিয়ে দেখবে নিরুপমা নেই, চলে গেছে তার ভালবাসার মানুষের কাছে।কিন্তু নিলয় যে তাকে ভালবেসে ফেলেছে, তাকে আপন ভাবতে শুরু করেছে।তাকে ছাড়া যে আর নিলয় এর চলবে না।অনেক রাত করে বাড়িতে ফিরে দেখলো যে নিরুপমা তার জন্য রান্না করে খাবার নিয়ে টেবিলে বসে আছে।নিলয় আসতেই হাত থেকে ল্যাপটপ টা নিয়ে নিলয় কে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলল।
.
.
নিলয় কিছুটা অবাক হয়ে খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে গেল। ঘুমাতে যাবে কিন্তু বিছানায় কোলবালিশ ২টার ১টা ও নেই।নিরুপমা বাথরুম এ ফ্রেশ হচ্ছিল তাই নিলয় খুজতে লাগলো, নিরুপমা ফিরে এসে বলল ""কি করছো"'?? নিলয় বলল কোলবালিশ গুলো খুজে পাচ্ছি না।নিরুপমা বলল ""তুমি"" শুয়ে পড় আমি পরে খুজে রেখে দিব। নিলয় শুয়ে পড়ল একপাশে।
.
.
কিছুক্ষন পর নিলয় এর তাকে কেউ জড়িয়ে ধরছে এমন অনুভুতি হল।নিলয় ভাবল নিরুপমা হয়তো ঘুমের ঘোরে কোলবালিশ মনে করে নিলয় কে জরিয়ে ধরেছে।নিলয় নিরুপমার হাত ছাড়িয়ে দিয়ে উঠতে লাগলো কোলবালিশ খোজার জন্য কিন্তু নিরুপমা তাকে ঊঠতে দিচ্ছে না।
বলল কোথায় যাচ্ছ?
নিলয় বলল কোলবালিশ খুজতে
:লাগবে না কোলবালিশ
:কেন?
:এবার নিরুপমা নিলয় কে ভালভাবে জরিয়ে ধরে বলল আজ থেকে তুমিই আমার কোলবালিশ আর আমিই হলাম তোমার কোলবালিশ। তোমার আর আমার মাঝে আলাদা কোন কোলবালিশ লাগবে না।
.
.
আর মাঝ রাতে চাঁদের আলোতে আমাকে চুরি করেও দেখতে হবে না তোমার। আজ থেকে আমার যা কিছু আছে সব কিছুই তোমাকে দিলাম, সব কিছুই এখন তোমার। শুধু চাদনি রাতে আমাকে কোলে নিয়ে আদর করে আমার সাথে বসে চাদ দেখতে হবে তোমার।
.
.
প্রতিদিন ১টা করে গোলাপ এনে দিতে হবে আমাকে।প্রতিদিন একটা করে বেলী ফুলের মালা এনে আমার খোঁপায় পরিয়ে দিতে হবে। বলেই নিলয় এর বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ফেলে। নিলয় তখন নিরুপমার মুখ টা তুলে কপালে ভালবাসার প্রথম পরশ একে দেয়। তারপর আস্তে আস্তে নিরুপমার ওই ঠোট দুটো তে আদর দিতে থাকে।
.
.
নিরুপমা ও আদর দিতে থাকলো নিলয় কে। তারপর শুরু হল তাদের নতুন পথচলা।।। চিরসুখের এই পথ যেন তাদের কখনই না থামে।।।।।
©somewhere in net ltd.