নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনতরী চলমান – বয়ে যাওয়া সময়ের তালে তালে ,অনন্তের পথে ধীরে ধীরে যাচ্ছে তাহা গন্তব্যে চলে ।আপন আপন জীবন নিয়ে ব্যস্ত মানুষ পুরু জীবন ভরি ,মানবতার মৃত্যু হচ্ছে আজ মানুষের ব্যস্ততার চাপে পড়ি !সৃষ্টির সেরা মানবজাতির নহে নহে ইহা ধর্ম ,মানুষতো এসেছে

মাইজদী কোট

মাইজদী কোট › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাচীন মিশরীয় সাধারণ মানুষও মৃত্যু এবং পারলৌকিক সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পরে দেবতাতে রূপান্তরিত হতেন। প্রথম পর্ব -১

০১ লা মে, ২০১৮ রাত ৮:৫৮



প্রাচীন মিশরীয় দেবতা বলতে বোঝানো হয় সেই সমস্ত দেবতা এবং দেবীদের, যাদের প্রাচীন মিশরে পূজা করা হত, এবং যাদের উদ্দেশ্যে ফারাও সম্রাটগণ মন্দির নির্মাণ করতেন।


প্রাচীন মিশরীয়রা মূলতঃপ্রাকৃতিক শক্তির উপাসক ছিলেন; তাই দেবতাদের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য নিবেদন এবং অন্যান্য বিচিত্র কিছু ব্রত পালন-ই ছিল প্রাচীন মিশরীয় ধর্মের মূল কথা। আনুমানিক ৩১০০ খৃষ্ট-পূর্ব তে, মিশর প্রতিষ্ঠার পরে, সমস্ত ব্রত পালনের নিয়মাবলী এবং নৈবেদ্য অর্পণের ক্ষমতা মিশরের উচ্চ ও নিম্ন ভূমির শাসক এবং দেবতাদের প্রতিনিধি ফারাও-দের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হত। যদিও প্রতিটি মন্দিরেই একজন করে প্রধান পুরোহিত এবং একাধিক সহ-পুরোহিত থাকতেন এই সমস্ত নিয়মাবলী পালন করে দেবতাদের তুষ্ট করার জন্যে।

বিভিন্ন যুগে, যেসব দেবতারা সবচেয়ে সম্মানীত দেবতা হিসেবে গণ্য হয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সূর্যদেবতাগণ, সূর্য ও বাতাসের দেবতা রহস্যময় আমন, এবং যাদুর দেবী আইসিস। যদিও মিশরীয়রা মূলত একাধিক দেবতাদের উপাসনা করতেন,কিন্তু খ্রিষ্টপূর্ব ১৪ শতাব্দীতে ফারাও সম্রাট আতেন এর রাজত্বকালে, মিশরীয়রা একেশ্বরবাদী হয়ে ওঠেন রাজধর্ম অনুযায়ী।



প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতেন ভালো-মন্দ সমস্ত কিছুর মধ্যেই ঈশ্বরের অবস্থান রয়েছে, যেমন ঝড়, বৃষ্টি, নীল নদের বন্যা সমস্ত কিছুই দেবতাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। ফারাও এবং অন্যান্য রাজবংশীয় লোকজন ছাড়াও সাধারণ মানুষ জীবনের যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় তারা দেবতাদের দ্বারস্থ হতেন। এজন্য বিভিন্ন মন্দিরে পূজা, প্রার্থনা এবং অর্ঘ্য নিবেদন করতেন দেবতাদের উদ্দেশ্যে। ফারাওরাও শিকার-যাত্রা, যুদ্ধযাত্রা, ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেবতাদের আশীর্বাদ লাভ করার জন্যে, মন্দিরে যেতেন, এমনকি কয়েকদিন অপেক্ষাও করতেন মন্দিরে অবস্থান করে দেবতাদের নির্দেশ পাওয়ার জন্যে। মিশরীয় জনজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ দেবতাদের সাথে এইভাবে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে।


প্রাচীন মিশরীয় ঐতিহ্যের মাঝে যে সমস্ত সত্ত্বাকে ঈশ্বর হিসাবে গণ্য করা হতো, তাদের সংখ্যা গণনা করা সত্যই কঠিন । বিভিন্ন মিশরীয় প্রাচীন গ্রন্থ এবং পুরাণে এমন অনেক দেবদেবীর নাম পাওয়া যায়, যাঁদের ভূমিকা, প্রকৃতি এমনকি পৌত্তলিক রূপও অজানা এবং অস্পষ্ট এবং এমন অনেক দেবতাদের এমন পরোক্ষ উল্লেখ পাওয়া যায়, যাঁদের নামও সঠিকভাবে পাওয়া যায় না । মিশরতত্ত্ববিদ জেমস পি অ্যালেন অনুমান করেন যে মিশরীয় গ্রন্থে প্রায় ১৪০০ টিরও বেশি দেবতাদের উল্লেখ করা হয়েছে যদিও তার সহকর্মী ক্রিশ্চিয়ান লেইৎস বলেছেন যে "হাজার হাজার" দেবতা রয়েছে মিশরীয় পুরাণ এবং প্রাচীন গ্রন্থাবলী তে । মিশরীয় ভাষায় দেবতাদের নামে 'nṯr' (দেব) এবং দেবীদের নামে 'nṯrt' (দেবী) যোগ করা হয় নামকরণের সাধারণ পরিভাষা অনুযায়ী। পণ্ডিতরা এই শব্দগুলির বৈয়াকরণিক ব্যবচ্ছেদ দ্বারা দেবতাদের মূল প্রকৃতি উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কোন প্রস্তাবিত ব্যাখ্যাই সর্বজনগ্রাহ্য না হওয়াতে এই পরিভাষাগুলির মৌলিক উতপত্তি এখনো অজানা।

যে সমস্ত হায়ারোগ্লাইফস চিত্রলিপি এবং নির্ণায়ক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে এই পরিভাষা গুলি লিপিবদ্ধ করার জন্যে, তাদের বৈশিষ্ট্য থেকে বোঝা যায় যে মিশরীয়গণ দেবতাদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে চেষ্টা করেছেন । এই চিহ্নগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি খুঁটি থেকে উড়ন্ত পতাকা। অনুরূপ চিহ্ন বিশিষ্ট বস্তু প্রাচীন মিশরীয় ইতিহাস জুড়ে সমস্ত মন্দির প্রবেশদ্বার এ স্থাপন করা হত ভিতরে দেবতার উপস্থিতির প্রতিনিধিত্ব স্বরূপ। অন্যান্য অনুরূপ হায়ারোগ্লিফগুলির মধ্যে রয়েছে একটি বাজ, কিছু মৌলিক প্রথম দেবতাদের স্মরণিকা স্বরূপ, যাদেরকে বাজপাখি হিসাবে চিত্রিত করা হত এবং একজন উপবিষ্ট দেবতা বা দেবী ।


দেবীদের অনেক সময় ডিমের হায়ারোগ্লিফ দ্বারা সংজ্ঞায়িত, লিপিবদ্ধ করা হত যা আসলে সৃষ্টি এবং জন্মের প্রতীক অথবা কেউটে সাপের প্রতীক দিয়ে বোঝানো হত । প্রাচীন মিশরীয় বিশ্বাস অনুযায়ী মৃতদেরকে 'nṯr' বলা হতো কারণ তারা দেবতাদের মত গণ্য হত যদিও এই শব্দটি খুব কমই মিশরের কম সংখ্যক অতিপ্রাকৃত প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হত, যা আধুনিক পণ্ডিতরা প্রায়ই "দৈত্য" (অসুর) বলে গণ্য করেন । মিশরের ধর্মীয় চিত্রশিল্পে স্থান, বস্তু এমনকি কোন ধারণাকেও মানুষের আকারে গড়ে তোলা হত। দেবতা এবং অন্যান্য মানুষের মধ্যে এই সূক্ষ্ম পার্থক্য বোঝানোর জন্য, পণ্ডিতরা "দেবতা" র বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রস্তাব করেছেন ।

একটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞাহল জ্যান অ্যাস্ম্যান (Jan Assmann) দ্বারা প্রস্তাবিত; তিনি বলেছেন যে একটি দেবতার একটি নির্দিষ্ট পূজাপদ্ধতি (cult) থাকবে, তিনি মহাবিশ্বের কোন না কোন দিকের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবেন এবং পুরাণ বা অন্য কোন প্রাচীন গ্রন্থে তাঁর উল্লেখ থাকবে । দিমিত্রি মিক্স(Dimitri Meeks) দ্বারা প্রস্তাবিত একটি ভিন্ন সংজ্ঞা অনুসারে, 'ntr' যে কোনও কারোর জন্য প্রযোজ্য হতে পারে, যদি তাঁকে কেন্দ্র করে কোন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়ে থাকে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, রাজ্যাভিষেক এর পরে রাজারাও দেবতা তে পরিণত হতেন। এমনকি সাধারণ মানুষও মৃত্যু এবং পারলৌকিক সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পরে দেবতাতে রূপান্তরিত হতেন।

প্রধান দেবতা সমূহ



আপেপ


আপেপ (উচ্চারণান্তরে অ্যাপেপ, অথবা প্রাচীন গ্রিক অণুযায়ী আপোফিস) হলেন প্রাচীন মিশরীয় ধর্মের এক শয়তান দেবতা। এঁর প্রতীক হল সাপ এবং ড্রাগণ। ইনি অন্ধকার ও বিশৃঙ্খলার ব্যক্তিরূপ, আর সেই সূত্রে মাআতের (শৃঙ্খলা/সত্য) বিরোধী। এঁর অস্তিত্ব অষ্টম রাজবংশের শাসনকাল থেকে মান্যতা পেয়েছিল। মিশর বিশেষজ্ঞরা এঁর নামের উচ্চারণ পুনরুদ্ধার করেছেন প্রাপ্ত হায়ারোগ্লিফিক লিপি এবং বর্তমান কপটিক উচ্চারণ থেকে।
ছিলেন মিশরের সৌর দেবতা, আলোর আহ্বায়ক এবং সেই সূত্রে মাআতের সমর্থক। আপেপকে রা-এর প্রধান বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে দেখা হত; ফলে তাঁকে রা-এর শত্রু আখ্যা দেওয়া হয়। এছাড়া "বিশৃঙ্খলার অধিপতি"-ও তাঁর আরও একটি নাম।
সমস্ত রকম অশুভের ব্যক্তিরূপ আপেপ একটি দৈত্যাকার সর্প হিসেবে কল্পিত হতেন। পরবর্তীকালে ক্রমশ তাঁর ড্রাগণ মূর্তিটি বেশি মান্যতা পেতে থাকে এবং নীল নদের সাপ ও শয়তান গিরগিটি প্রভৃতি নামগুলোর জন্ম হয়। কোনো কোনো বিবরণ অণুযায়ী তাঁর দৈর্ঘ্য ১৬ গজ এবং তাঁর মাথা কঠিন চকমকি পাথরে তৈরি। নাকাদায় প্রাপ্ত আনুমানিক ৪০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে নির্মিত একটা পাত্রের কানায় একটা ছবি আঁকা আছে। ছবিতে দেখা যায় মরুভূমি ও জলের পলায়মান অন্য কিছু প্রাণীর সাথে এক সাপ, যে সম্ভবত একজন দেবতার বিরোধিতা করছে। এই দেবতা, খুব সম্ভবত একজন সৌর দেবতা, নিজে অদৃশ্য অবস্থায় একটা বিরাট নৌকার উপর থেকে প্রাণীগুলোকে শিকার করছেন।


এছাড়াও আপেপ নামটির প্রচলন হওয়ার আগে থেকেই অন্যান্য নামে সূর্যের দেবতার শত্রু হিসেবে সাপের প্রতীকের ব্যবহার চালু ছিল (পিরামিড লিপি ও কফিন লিপিসমূহে)। নামটির বুৎপত্তি খোঁজার চেষ্টা হয়েছে কিছু কিছু প্রাচীন পশ্চিম সেমিটিক ভাষায়, যেখানে কাছাঁকাছি উচ্চারণের মূল শব্দ রয়েছে যা দিয়ে 'পিছলে যাওয়া' বা 'সাপের মত এঁকেবেঁকে চলা' বোঝায়। আপেপের নামের সম্পূর্ণ আলাদা একটা বুৎপত্তিগত ব্যাখ্যা পরবর্তীকালে চালু হয়; যাকে মুখ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। রোমানরা আপেপের নামের এই অণুবাদটিকে ব্যবহার করত। আপোফিসকে এক মাইলেরও বেশি লম্বা সোনালি সাপ বলে এই সময় কল্পনা করা হত। বিশালদেহী আপেপ প্রতিদিন সূর্যকে গিলে খাওয়ার চেষ্টা করতেন


সেত ক্রমশ আপেপের সমস্ত বৈশিষ্ট্য অধিকার করেন এবং নৈরাজ্যের দেবতার পদও আপেপের থেকে তাঁর দিকে সরে আসতে থাকে। অবশেষে তাঁর ও আপেপের সত্তা মিশরীয় জনমানসে একাকার হয়ে যায়
নতুন রাজ্যের সময় আপেপ এবং রা-এর যুদ্ধের গল্পগুলো তৈরি হয়। যেহেতু সবাই দেখতে পায় যে প্রতিদিন কোনো বিরাট সাপ সূর্যকে আক্রমণ করতে আসে না, তাই গল্পকারেরা প্রচার করেন যে আপেপের বাস দিগণ্তরেখার নীচে। এর ফলে তাঁকে পাতালের বাসিন্দা হিসেবে তুলে ধরারও সুবিধে হয়। কোনো গল্পে আপেপকে দূর পশ্চিমে অবস্থিত বাখু পাহাড়ে সূর্যাস্তের জন্য ওঁৎ পেতে বসে থাকতে দেখা যায়,আবার কোনো গল্পে তিনি পূর্ব দিগণ্তের ঠিক নীচে, রাত্রির দশম অঞ্চলে অপেক্ষা করেন। আপেপের সম্ভাব্য অবস্থানের বিশালতার জন্য তাঁকে বিশ্ব বেষ্টক বলা হয়। তাঁর গর্জনে সমগ্র পাতাল নাকি কেঁপে উঠত। পুরাণে বলা হয় আপেপ প্রকৃতপক্ষে পাতালে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন, কারণ তিনিই ছিলেন রা-এর আগে প্রধান দেবতা যাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে রা-এর উত্থান হয়। এছাড়া তাঁর দোষ্কৃতির জন্য তাঁকে বন্দী করা হয়েছিল এমন কথাও বলা হয়

রা এবং তাঁর সহচরেরা পাতালের নদী বেয়ে ভ্রমণে বেরোলে আপেপ তাঁর দৃষ্টির দ্বারা তাঁদেরকে সম্মোহিত করে নৌকাসুদ্ধ নিজের কুণ্ডলীতে চূর্ণ করে গিলে খাওয়ার চেষ্টা করতেন। কখনও কখনও সেক এবং মোত নামের দুই দানব তাঁকে এ'কাজে সাহায্য করত। রা কে সাহায্যের জন্যও একাধিক দেবতা থাকতেন, যাঁদের মধ্যে প্রধান ছিলেন সেত, যিনি নৌকার হাল ধরে থাকতেন।

নির্দিষ্ট কিছু প্রাকৃতিক ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বলা হত এই লড়াইয়ে আপেপ কখনও কখনও জিতে যান। এর ফলে জগৎের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি ও ভূমিকম্প হয়। এমনকি এ-ও বলা হত যে আপেপ রা-কে পুরোপুরি গিলে ফেললেই সূর্যগ্রহণ হয়। কিন্তু রা-এর সহচরেরা খুব তাড়াতাড়ি আপেপের দেহ ছিন্ন করে দেন বলে গ্রহণ অল্প সময়ের মধ্যেই কেটে যায়। যদিও আপেপ নিহত হলেও প্রতি রাত্রে আবার ফিরে আসার ক্ষমতা রাখেন, কারণ পাতাল তথা মৃত্যুলোকেই তাঁর বাস।

অবশ্য অন্য কিছু পুরাণ অণুযায়ী রা-এর কন্যা, বিড়ালের আকৃতিবিশিষ্ট দেবী বাস্তেত তাঁর সর্বদ্রষ্টা চোখ দিয়ে আপেপকে খুঁজে বার করে এক রাত্রে তাঁকে বধ করেন।
রা-এর উপাসনা করা হত, আর আপেপের বিরুদ্ধে উপাসনা করা হত। প্রতি রাত্রে রা-এর জয় মন্দিরে মন্দিরে রা-এর পুরোহিত ও উপাসকদের চেষ্টাতেই সম্পন্ন হচ্ছে বলে মনে করা হত। প্রাচীন মিশরীয়রা আপেপকে প্রতিহত করার জন্য এবং আকাশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে রা-এর যাত্রায় সাহায্য করার জন্য অনেক প্রথা ও কুসংস্কার পালন করত।
বিশৃঙ্খলার অবসান নামক একটি বার্ষিক উৎসবে পুরোহিতরা আপেপের একটি কুশপুতুল বানিয়ে পোড়াতেন। ধারণা করা হত যে এর মাধ্যমে মিশরের সমস্ত পাপ ভস্মীভূত হল এবং এক বছরের জন্য আপেপের প্রভাব ঠেকিয়ে রাখা গেল। আধুনিক ভারতের দশেরা উৎসবের সাথে এই কার্যক্রমের কিছু মিল পাওয়া যায়।
আপেপের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মিশরীয় পুরোহিতদের সুসংবদ্ধ একটা নির্দেশিকা পর্যন্ত ছিল। এর নাম আপেপকে পরাজিত করার বই বা (গ্রিকে) আপোফিসের বই। এর আলাদা আলাদা অধ্যায়ে ক্রমান্বয়ে আপেপের অঙ্গ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে নষ্ট করে ফেলার কথা আছে। এর একটা উদ্ধৃতি:
• আপেপের গায়ে থুতু দাও
• বাঁ পায়ে ওকে লাথি মারো
• বর্শা দিয়ে খোঁচাও ওকে
• আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে মারো
• ছুরি দিয়ে কুচিয়ে ওকে
• আগুন জ্বেলে পুড়িয়ে মারো



রা-এর বিজয়ের কাহিনী ছাড়াও এই নির্দেশিকায় মোমের পুতুল সাপ, সাপের ছোট ছোট ছবি ইত্যাদি তৈরি করে সেগুলোয় থুতু দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া আছে; এই কাজ করার সময় আপেপের মৃত্যু নিশ্চিত করতে মন্ত্র পড়তে হত। আপেপের যে কোনো অণুকৃতি মূল দেবতার শক্তিবৃদ্ধি করতে পারে আশঙ্কা করে সমস্ত অণুকৃতির সাথে অন্য কোনো দেবদেবীর অণুকৃতি রাখা হত; যাতে ঐ দ্বিতীয় দেবতা আপেপকে দমিয়ে রাখতে পারেন।

পাতালে থাকেন বলে আপেপকে ক্ষেত্রবিশেষে আত্মা-ভক্ষক হিসেবেও কল্পনা করা হত। ফলে মৃতদেরকেও আপেপের হাত থেকে বাঁচাতে মন্ত্র পড়ে কবরস্থ করা হত। বুক অফ দ্য ডেড খুব কম অংশেই রা-এর হাতে আপেপের স্পষ্ট পরাজয়ের কথা উল্লেখ করেছে। কেবল 'বিডি মন্ত্রসমূহের' সপ্তম ও ত্রিংশতিতম মন্ত্রদু'টি এই পরিস্থিতির বর্ণনা দেয়

আমুন -সৃষ্টির দেবতা, থিবসের মন্দিরের প্রধান উপাস্য, নতুন রাজত্বের প্রধান দেবতা


একজন প্রাচীন মিশরীয় দেবতা। প্রথমে বায়ু দেবতা হিসেবে উপাসিত হলেও পরে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আমুনের উপাসনা শুরু হয়। মিশরীয় দেবতাদের মধ্যে ওসিরিস এবং আমুন-রা এর সম্পর্কেই সবচেয়ে বিস্তৃত লিখিত বিবরণী পাওয়া যায়।

আমুন স্বয়ম্ভূ, অর্থাৎ তিনি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন ওসরেত এবং পরবর্তীকালে আমুনেত এবং মুত-এর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। চন্দ্র দেবতা খোংশুর বাবা আমুন এবং মা মুত।


আনুবিস -মৃতের জগতের অধিকর্তা


আনুবিস হল মিশরের এক দেবতার গ্রিসিয় নাম.যার মাথা শিয়ালের এবং দেহ মানুষের। প্রাচীন মিশরীয় বর্ণনা অণুযায়ী তিনি মৃতের জগৎের অধিকর্তা দেবতা। প্রাচীন মিশরীয় ভাষাতে, আনুবিস ইনপু (অন্যান্য বানান আনুপু, ইএনপও ইত্যাদি) হিসেবে পরিচিত।

আনুবিস ছিলেন দেবতা নেপথিস ও সেত এর পুত্র। সদ্যমৃত ব্যক্তিকে মর্ত্যলোক থেকে মৃতদের দেশ পাতালপুরীতে নিয়ে যাওয়ার পথে নিরাপত্তা দিতেন আনুবিস। মৃত ব্যক্তি আকাশের তারায় পরিণত হতে পারবেন কি না, তা বিচারের ভারও ছিল আনুবিসের ওপরে। আনুবিসের হাতে পালকযুক্ত দণ্ড থাকত যা দিয়ে মৃতের বিচার হত। যদি হৃদয়ের ওজন পালকের ওজনের চেয়ে কম হত তবে মৃত ওরিসিসে প্রবেশের অণুমতি পেত। আর ওজন বেশি হলে তার আত্মা ধ্বংস করে ফেলা হত।

আতেন -আখেন-আতনের রাজত্বকালের প্রধান দেবতা; আতেনীয় ধর্মবিশ্বাসের উপাস্য



আইসিস অথবা আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্যভাবে আসেট


আইসিস অথবা আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্যভাবে আসেট হল প্রাচীন মিশরীয় ধর্মবিশ্বাসে মাতৃত্ব, যাদু এবং ঊর্বরতার দেবী। মূলত মিশরীয় ধর্মবিশ্বাসের দেবী হলেও, আইসিসের উপাসনা প্রাচীন মিশরের বাইরে গ্রিক-রোমান বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছিল। আদর্শ মা, স্ত্রী, প্রকৃতি ও যাদুর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আইসিসের উপাসনা করা হত। দাস, কারীগর, পাপী তাপী জন থেকে শুরু করে ধনবান, অভিজাত, শাসনকর্তা, কুমারী নারী - সবার প্রার্থনাই আইসিস শুনতেন।

লিখিত ভাবে আইসিসের উপাসনার উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ এর অল্প কিছু কাল পরেই, পঞ্চম রাজবংশের সময়ে। শুরুর দিকে, মিশরীয় পুরাণ অনুসারে আইসিস হলেন নুট ও গেবের প্রথমা কন্যা, হোরাসের মা। কালের প্রবাহে হাথরের কিছু বৈশিষ্ট্যও আইসিসের মধ্যে আসতে দেখা যায়। পরের দিকে দেখা যায়, আইসিসের একজন ভাইও রয়েছেন, ওসাইরিস, যিনি পরে তাঁর স্বামী হন এবং তারা জন্ম দেন তাদের সন্তান হোরাস কে। ওসাইরিসের পূনর্জাগরণের ঘটনায় আইসিসের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। অপর এক দেবতা, সেতের এর হাতে ওসাইরিসের মৃত্যু হয়। আইসিস নিজের যাদু ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সেই মৃতদেহের সমস্ত বিচ্ছিন্ন অংশ গুলো জড়ো করেন এবং তাতে প্রাণ সঞ্চালণ করেন।[২] পরবর্তীতে পুরাণের এই ঘটনা মিশরীয়দের ধর্মবিশ্বাসের উপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে।

আইসিসের অন্যান্য পরিচয়ের মধ্যে রয়েছে সারল্যের দেবী, মৃতদের রক্ষাকারিনী, শিশুদের দেবী যার থেকে সবকিছুর শুরু হয়, রুটি, পানীয় এবং সবুজ ক্ষেতের দেবী। পরের দিকে মিশরীয় পুরাণে এই বিশ্বাস দেখা যায় যে, স্বামী ওসাইরিসকে হারানোর শোকে ক্রন্দরতা আইসিসের অশ্রূ থেকেই নীল নদ প্লাবিত হয়। প্রতি বছর ওসাইরিসের মৃত্যু এবং পুনর্জাগরণকে বিভিন্ন রকম আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা হত। মিশর ছাড়িয়ে আইসিসের উপাসনা ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রিক-রোমান বিশ্বেও। খ্রিস্টিয় মতবাদের প্রচার শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আইসিসের উপাসনা চালু ছিল সে সব অঞ্চলে।


"আইসিস" শব্দটি এই দেবীর নামের গ্রিক সংস্করণের ইংরেজি করা প্রতিরূপ। গ্রিক নামটাও আবার প্রকৃত মিশরীয় নামের বানানের শেষে গ্রিক ভাষার ব্যাকরণের প্রয়োজন মত "-s" যোগ করে পাওয়া গেছে।
মিশ্রীয় নামটা লেখা হয় ỉs.t অথবা ȝs.t হিসেবে, অর্থ হল "সিংহাসনাধিষ্ঠিতা (তিনি)"। প্রকৃরত মিশরীয় ভাষায় উচ্চারণটা অজানা কারণ চিত্রলিপিতে স্বরবর্ণ নেই। সাম্প্রতীক সমীক্ষায় বর্তমান কালের অন্যান্য ভাষা বিশেষ করে গ্রিক এবং কপটিকের উপর ভিত্তি করে অনুমান করা হয় যে উচ্চারণটা হবে Usat টেমপ্লেট:IPA-sem ।
ওসাইরিসের নামটাও—Usir "Osiris" (ws-ỉr) শুরু হয় সিংহাসন চিত্রাক্ষর দিয়ে ʔ। কপটিক ভাষায় নামটা টিকে ছিল Ēse অথবা Ēsi হিসেবে, এবং যৌগিক নাম যেমন "Har-si-Ese" এর মধ্যে, যার অর্থ হয় "আইসিস পুত্র হোরাস"।
[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/NOASAL/NOASAL-1525191720-1c1d3f0_xlarge.jpg
প্রথম পর্ব এপর্যন্ত পরবর্তি পর্বে আবার ........

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.