নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালোবাসি আমার দেশকে..আমার ভাষাকে

নাজমুল_হাসান_সোহাগ

আমি রুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারি(১০'সিরিজ) ডিপার্টমেণ্টে পড়ালেখা করছি। সুযোগ পেলেই লেখালেখিতে বসে যাই। আমার লেখালেখির সব থেকে পছন্দের বিষয় হল ছোটগল্প ।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালো লাগে। আরও ভালো লাগে নতুন বন্ধু তৈরি করতে।

নাজমুল_হাসান_সোহাগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছুক্ষণ (অনুগল্প)

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০৩



সুন্দরবন মেইল। সকাল সাতটায় ছাড়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ট্রেনের কোন খোঁজই নেই। সেই কখন থেকে প্ল্যাটফর্মে পায়চারি করছি। একা এতটা পথ পাড়ি দিবো ভাবতেই মনে হচ্ছে রুমে ফিরে যাই। তারপর আবার ট্রেন লেট। সময়টাকে কীভাবে কাটানো যায় তার উপায় খুঁজছি।



একটা বাঁশির সুর কানে আসতেই খুঁজতে বের হলাম সেই সুরের উৎস। লোকজন জটলা পাকিয়ে আছে বাঁশির সুর শুনতে। আমিও অন্যদের মতই জটলা পাকানোর উপাদান হলাম। মোহিত হয়ে পরলাম সেই সুরে। যে ছেলেটি বাঁশি বাজাচ্ছে তার বয়স বেশি হবে না। চৌদ্দ কি পনের। পরনে ছেঁড়া লুঙ্গি আর স্যাণ্ড্রো গেঞ্জি। দেখে বোঝার উপায় নেই যে এই ছোট্ট ছেলেটি এত ভালো বাঁশি বাজায়। নেহাত পেটের দ্বায় ছাড়া এত ভালো বাজানোর কথা না। ট্রেন চলে এসেছে। বাঁশি বাজানো ছেলেটাকে যতটুকু পারলাম সাহায্য করে ফিরে যাচ্ছি ট্রেনের দিকে। হুট করে একটা ধাক্কা এসে লাগলো আমার গায়ে। আমার হাত থেকে পত্রিকাটা ছিটকে পড়ে গেল প্লাটফর্মের উপর। আমি অবশ্য টলতে গিয়েও নিজেকে কোন রকম সামলে নিলাম। যার কারণে এই ধাক্কা সেই মেয়েটিকে উঠতে সাহায্য করতে চেষ্টা করলাম। ওঠার আগেই দুঃখিত বলে মন খারাপ করে বসে আছে। আমি বোঝাতে চেষ্টা করলাম। বললাম,আপনি তো আর ইচ্ছা করে আমাকে ধাক্কা দেননি তাই না। তাহলে মন খারাপ করার কি আছে। এখন আপনি আমার সামনে বসে আছেন আর আমি যদি আপনাকে উঠতে সাহায্য না করতে পারি তাহলে তো অনেক বড় একটা অন্যায় হয়ে যাবে আপনার প্রতি।’ আমি হাত বারিয়ে দিয়ে বললাম, এবার ঝটপট উঠে পড়ুন। এখন আমার ট্রেন আছে। দেরি হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি এবার লাফ দিয়ে উঠে পড়লো। উঠেই তার পড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করলো। আমি ইট’স ওকে বলে রওয়ানা হলাম ট্রেনের দিকে।



ট্রেন ছাড়বে কিছুক্ষনের মধ্যে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি বাঁশি বাজানো সেই ছোট ছেলেটার দিকে। তার আশেপাশে কোন শ্রোতা নেই। আপাতত তার বাঁশি বাজানো শেষ। ট্রেন আরেকটু লেট হলে হয়তো কয়েকটা টাকা বেশি আয় করতে পারতো।



আনমনা হয়ে কি যেন ভাবছিলাম। মুখোমুখি সিটে একজনকে আবিস্কার করলাম। প্লাটফর্মের সেই মেয়েটি। চোখে চোখ পড়তেই মুচকি হেসে জানতে চাইলো, আপনার সিট এইটা??? আমি বললাম হুম। অন্যের সিটে বসলে তো কিছুক্ষণ পর টিটি এসে আমাকে ঘাড় ধরে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিবে। মেয়েটি এবার না হেসে পারলো না। হাসলে সুন্দর দেখায় মেয়েটিকে। আর বিশেষ কিছু খুঁজে পাচ্ছি না মেয়েটির মধ্যে। অন্য আঁট-দশটা মেয়ের মতই সাধারণ একটি মেয়ে। কবি-সাহিত্যিকরা হলে হয়তো ঠিকই কোন উপমা দিয়ে কিছু না কিছু বলতেন।



আমি অনেক্ষন ঝিম মেরে বসে আছি। কিছু ভালো লাগছিল না। মেয়েটা জানতে চাইলো,কোথায় থাকি। পড়ালেখা করি জেনে খুশিই হল। নিজের পরিচয় দিয়ে,গল্প শুরু করলো। প্রথম প্রথম একটু খারাপই লাগছিলো কিন্তু একসময় আমি হা হয়ে তার গল্প শুনতে লাগলাম। তার নিজের গল্প,বান্ধবীদের গল্প,বাবা-মামা,ভাই-বোনের গল্প। অনেক মজার মজার স্মৃতি গল্প আকারে শুনাতে লাগলো। অনেক গুছিয়ে কথা বলে মেয়েটি। আমার নিজের গল্প বলতে ভালো লাগছিলো না তাই উল্টো অনেক প্রশ্ন করলাম যাতে আমাকে গল্প না করতে হয়।



এক বন্ধু ফোন দেয়ায় তার সাথে আলাপনে ব্যস্ত হয়ে পরলাম। সামনে বসা মেয়েটি আমার কাছ থেকে পত্রিকাটা নিয়ে,পড়তে শুরু করলো। বিনোদন পেজটা খুলে কোন এক নায়িকার ইন্টারভ্যু পড়ছে। আমি বন্ধুর সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছি। ঐপাশ থেকে সে কোন মতেই ফোন রাখতে রাজি নয়। আমি নাকি তার সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারবো। গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝামেলা লেগেই থাকে তার। অনেক বুঝিয়ে-সুজিয়ে ফোন রাখলাম এক সময়। ট্রেন ততক্ষণে কোন এক ষ্টেশনে। সামনে বসা মেয়েটি আমাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে চাইতেছিল। শেষমেষ,কিছু না বলে ব্যাগ-পত্র নিয়ে নামতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। যাওয়ার আগে শুভ বিদায় জানিয়ে গেল। আমি বললাম,ভালো থাকবেন।



নিজের উপর রাগ হচ্ছিলো। ইস মেয়েটা মনে হয় রাগই করেছে। এতক্ষন কেউ ফোনে কথা বলে!! নামটাও জানা হল না আর যাওয়ার আগ দিয়ে তেমন কিছু বলতেও পারলাম না। ট্রেনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটি আমার দিকে একবার তাকিয়ে উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করলো। আমি সামনে রাখা পত্রিকাটা খুলে বিনোদনের পাতাতে গেলাম। আজ বিশাল এক সেলিব্রিটির সাক্ষাৎকার ছাপিয়েছে। পেজটার এক কোণায় কলমের কালিতে একটা মোবাইল নম্বর লেখা। কিছুক্ষণ আগেই লেখা। কালিটা তখনো শুকোয়নি।



-সমাপ্ত-

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০৫

Palol বলেছেন: মন্দ নয়, ভালই তো, গল্পটাতে টেনে নেয়ার শক্তি আছে।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:১৭

নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: ধন্যবাদ। অনেকদিন পর লিখতে চেষ্টা করলাম :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.