নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষানবিশকাল চলছে......

আফরোজ ন্যান্সি

ঈশ্বরী

আফরোজ ন্যান্সি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের খুঁটিনাটিঃ ১ (মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়)

০১ লা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৩১

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষটা গিয়েছিলো খুব একঘেয়ে। এর মধ্যে সবথেকে বেশী প্যারাদায়ক ছিলো সিলেবাসটা। একটা কোর্স ছিলো বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস। সাহিত্যের ইতিহাস পড়তে পড়তে মনে এমন এক নেতিবাচক ধারনার জন্ম নিলো যে সাহিত্যকে আসলে দূর থেকে যতটা মজাদার মনে হয় এর ভেতরটা ততটাই তিক্ততায় ভরা। এই ধারনা বুকে পুষেই পুরো দুটো সেমিষ্টার চলে গেলো। এর মধ্যে সাহিত্যের ইতিহাস এর পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যের অনন্য দিগ্বপাল রবী- বঙ্কিমবাবুদের পড়ছি আর চোখের জল নাকের জল এক করে পালাবার পথ খুঁজছি।

সাহিত্যপাঠ জীবনের এই ক্রান্তিকাল থেকে আমাকে যিনি উদ্ধার করলেন তিনি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফোর্থ সেমিষ্টারে মানিকবাবুর সাথে আমার প্রথম পরিচয়। এর আগে তার পদ্মা নদীর মাঝি পড়েছি কিন্তু তখন সাহিত্য রস বোঝার বয়স ছিলোনা। নিতান্ত পরীক্ষা পাসের উদ্দেশ্যে কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর আর কোটেশান মুখস্ত করা অবধি আমার সীমা। সাহিত্যের সাথে দেশ কাল সময় পরিবেশের প্রাসঙ্গিকতা বোঝার সময় কিংবা ইচ্ছা কোনোটিরই তখন পর্যন্ত কোনো অস্তিত্ব ছিলোনা। এবার কিন্তু মানিকবাবু আমার চোখে ধরা দিলেন একটু অন্যরকম ভাবে। ততদিনে রবীন্দ্র বঙ্কিম আমার গায়ে জ্বর এনে দেওয়ার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এমন মুহূর্তে মানিকবাবুর সরল সাবলীল লেখার ভঙ্গীটা আমায় কিছুটা স্বস্তির সন্ধান এনে দিলো। এই স্বস্তি মনে নিয়েই মানিককে পড়া শুরু করলাম। শুরুটা হলো প্রাগৌতিহাসিক দিয়ে। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম কোনো উচ্চবিত্ত শিক্ষিত শ্রেনীর কেউ নয় বরং তার লেখায় নায়ক নায়িকা হয়েছেন সমাজের একেবারে প্রান্তিক শ্রেনীর লোকেরা । প্রাগৌতিহাসিক এ ভিখু এক সাবেক ডাকাত সর্দার যিনি সম্প্রতি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে শারিরীক ভাবে অক্ষম হয়ে যাবার দরুন ভিক্ষাবৃত্তিতে যোগ দিয়েছেন। এই ভিখু প্রেমে পরছেন আরেকজন নারী ভিক্ষুক পাচীর , যিনি পায়ে এক দগদগে ঘা থাকার কারনে অন্য পাঁচজনের চাইতে তুলনামূলক বেশী ভিক্ষা পেয়ে থাকেন। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম প্রেম এখানে মোটেই মানসিক কোনো ব্যাপার নয়, এই প্রেম নিতান্তই শারিরীক প্রেম। যেখানে ভালবাসা হলো ভরন পোষনের নিশ্চয়তা এবং অনেকাংশে যৌনতা। তাই ভিখু যখন পাচীকে প্রেম নিবেদন করে এবং তার এই পায়ের ঘা চিকিৎসা করে ভাল হবে কিনা জানতে চায় পাচী তখন নির্দ্বিধায় জানিয়ে দেয় এই ঘা সে ভালো করতে চায়না । আজ বাদে কাল ভিখু তাকে ছেড়ে চলে গেলে এই ঘা ই তার সম্বল । পাচীর নির্লিপ্ত উক্তি, "ঘা মুই তখন পামু কোয়ানে" ।

এই মানিক তার "পুতুল নাচের ইতিকথা"য় একেবারে সাবলীলভাবে জানান দেন প্রেম হলো শরীর নির্ভর । নায়িকা কুসুম তাই খুব স্বাভাবিকভাবে বলে যায় "আপনার কথা মনে হলে আমার শরীর ক্যামন করে ছোটোবাবু" ।
সম্ভবত মানিকই বাংলা সাহিত্যে প্রথম ভালবাসার মৃত্যুর কথা লেখার সাহস করেন । ফ্রয়েডীয় ভাবধারায় বিশ্বাসী মানিকের কাছে প্রেম শ্বাশত কোনো ব্যাপার নয় বরং নিতান্তই নশ্বর এই প্রেম । সময়ের সাথে সাথে মোহভঙ্গ হবার গল্প তিনি লেখেন, বছরের পর বছর ভালবাসা অবহেলিত হতে হতে একসময় সেই ভালবাসা ফুরিয়ে যায় এমন সত্যিকথাগুলো তার লেখায় উঠে আসে একেবারে নির্মোহভাবে।

কঠিন সত্যকে এভাবে স্বীকার করে নেওয়ার তার এই প্রয়াস আমাকে মুগ্ধ করে । আমি সাহিত্যপাঠকে ভালবাসতে শুরু করি। সত্যকে ভালবাসতে শুরু করি । মিথ্যের আবরণ তুলে নিজেকে পরিপাটি দেখানোর চাইতে কঠিন সত্যের কদর্য রূপের আড়ালে যে সৌন্দর্য থাকে সেটিকে ভালবেসে ফেলি। লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে টিএসসির দিকে যেতে যেতে রাস্তায় নোংরা চুল, ছেড়া জামা, খালি পা, ফুলের ঝুড়ি হাতে মেয়েটিকে আমার ওই টকটকে তাজা লাল গোলাপগুলোর চাইতে অনেকগুন বেশী সুন্দর বলে মনে হয়।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:০৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: সুন্দর ।

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:২৩

আফরোজ ন্যান্সি বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:১৩

আনু মোল্লাহ বলেছেন: মানিক বাবু আমারও প্রিয় লেখক।

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৩৩

আফরোজ ন্যান্সি বলেছেন: উনি আসলেই প্রশংসার যোগ্য

৩| ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:২৪

জে আর সিকদার বলেছেন: শেষ লেখাটুকু অসাধারন !

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৩৩

আফরোজ ন্যান্সি বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.