নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানত যদি হাসন রাজা বাঁচব কতদিন..

Miles to go before I sleep.....

নরাধম

"Recite! in the name of thy Lord; Who created Created man out of a clot of congealed blood Recite! and thy Lord is Most Bountiful, He Who taught (the use of) the Pen Taught man that which he knew not"

নরাধম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিকেটির আয় বৈষম্যতার সমাধান এবং যাকাতের বিধি।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:০৩

সারাবিশ্ব আয়ের বৈষম্যতা নিয়ে মাতাল, অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলনের মূল বক্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ঠ্রের ১ শতাংশ লোকের কাছে ৯৯ শতাংশ সম্পদের পাহাড় জমে আছে। সারাবিশ্বেই এই প্যাটার্ন ধরা পড়ছে। মূলধারার অর্থনীতি শাস্ত্র মূলত পুঁজিবাদি অর্থনীতিকে সেরা অর্থনৈতিক পদ্ধতি ধরে নিয়ে গবেষণা করে, সেখানে আয়ের বৈষম্যতা নিয়ে পড়ানো হয়না বা গবেষণাও তেমন নাই। ফ্রান্সের অর্থনীতিবিদ পিকেটির বই "ক্যাপিটেল ইন দ্যা টুয়েনটি ফার্স্ট সেন্ঞুরী" দেখিয়েছে পূঁজিবাদ থাকলেই কিছু লোকের হাতে সম্পদের পাহাড় জমবে। সেটা আরেকটু গভীরে ব্যাখ্যা করা দরকার। তবে আমি লেখার কলেবর না বাড়ানোর জন্য মোটামোটি খুব সহজ ব্যাখ্যা দিব, আমি যেই কথাটা বলতে চাচ্ছি শেষে গিয়ে সেটা বুঝানোর জন্য যতটুকু ব্যাখ্যা দরকার ঠিক ততটুকুই ব্যাখ্যা দিব।

অর্থনীতিতে মূলত উৎপাদনের দুইটা মূল উপাদান (ফ্যাক্টরস অফ প্রডাকশান) আছে, ক্যাপিটেল এবং লেবার তথা সম্পদ আর শ্রম। এই দুইটা মিলে অর্থনীতিতে উৎপাদন (বৃদ্ধি) হয়, দেশজ মোট উৎপাদনকে জিডিপি (গ্রস ডমেস্টিক প্রডাক্ট) হিসেবে প্রকাশ করা হয়। দেশের মোট উৎপাদন আবার দেশের মানুষের মোট আয়ের সমান হবে (ভারসাম্য বাজেট ধরে নিলে)। ফ্যাক্টর অফ প্রডাকশান যেহেতু ক্যাপিট্যাল আর লেবার, মোট আয়ও এই দুই ফ্যাক্টরে বিভাজিত হবে। যারা মূলধন/সম্পদ বিনিয়োগ করেছে তারা তাদের সম্পদ বিনিয়োগের মাধ্যমে রিটার্ন পাবে আর যারা লেবার/শ্রম দিচ্ছে তারা সেটার জন্য বেতন/আয় পাবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে, তাহলে কারা দীর্ঘসময়ে দেশের সম্পদ-সমষ্টির মালিকানা ভোগ করবে বা দেশকেই নিয়ন্ত্রণ করবে? এখানে পিকেটির খুব সাধারণ কিন্তু চমৎকার একটা ইনসাইট সম্পদ/আয় বৈষম্যতা নিয়ে ভাবতে সাহায্য করবে। সম্পদ আর শ্রম দুটাই অর্থনীতির গড় বৃদ্ধিতে অবদান রাখে, তার মানে অর্থনীতির গড় বৃদ্ধি সম্পদ আর শ্রমের কাছে বিভাজিত/বন্টিত হবে। সম্পদ যদি অর্থনীতির গড় বৃদ্ধি থেকে বেশি হারে বাড়ে তাহলে সম্পদের মালিকেরা শ্রমের মালিকদের থেকে অনেক বেশি পাচ্ছে রিটার্ন, আর বেতন বৃদ্ধি যদি অর্থনীতির গড় বৃদ্ধি থেকে বেশি হারে হয় তাহলে শ্রমিকরা সম্পদের মালিকেরা কাছ থেকে বেশি রিটার্ন পাচ্ছে। (খেয়াল করবেন অর্থনীতির গড় বৃদ্ধি সম্পদ আর শ্রমের রিটার্নের ওয়েটেড এভারেজ।)

পিকেটি হিসেব করে দেখিয়ে দিয়েছেন সারাবিশ্বেই, বিশেষ করে পূঁজিবাদি অর্থনীতি সমূহে, সম্পদের (ক্যাপিটাল) রিটার্ন অর্থনীতির গড় বৃদ্ধি থেকে অনেক বেশি। বা বিপরীতে বলা যায় উৎপাদন উদ্বৃত্তির সবটাই সম্পদের মালিকদের কাছে যাচ্ছে, শ্রমিকদের কাছে কিছুই যাচ্ছেনা। উল্লেখ্য এটা নতুন কোন ইনসাইট না, যারা বামপন্থা নিয়ে পড়েছেন বা মার্ক্স-এঙ্গেল এবং তাদের অনুসরনকারীর চিন্তা পড়েছেন তারা এসব বিষয় জানেন।

তার মানে সম্পদের বা পূঁজির মালিকদের হাতে সম্পদ জমা হতেই থাকবে এবং একসময় দেশের সম্পদ সব জমা হবে দেশের কিছু মানুষের কাছে, অন্যরা মানবেতর জীবনযাপন করবে। এটা হচ্ছে যদি কোন ট্যাক্সেশান না হয়। মানে সরকার যদি কোন ট্যাক্স না কাটে, তবুও পূঁজিবাদি অর্থনীতিতে সব সম্পদের পাহাড় জমা হবে কিয়দংশ ধনী মানুষের কাছে। যখন তাদের কাছে এই সম্পদ জমা হবে, তখন তারা দে্শের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে, বিচার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করবে, দেশের মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে, বিনোদন নিয়ন্ত্রণ করবে, আর্মী তাদের হয়ে যুদ্ধ করবে, পুলিশ তাদের সব কাজ করবে। মূলত রাষ্ঠ্র তখন নিপীড়ক রাষ্ঠ্রে পরিণত হবে, সে তার নিজের জনগোষ্ঠীর বিশাল এক সংখ্যা যারা মানবেতর জীবন যাপন করছে তাদেরই বিরুদ্ধে অত্যাচার আর নিপীড়ণ চালাবে। সারা বিশ্বেই এখন এটাই হচ্ছে, নিপীড়ক রাষ্ঠ্র আর পূঁজিবাদ একই কয়েনের দু'পিঠ।

এখন ট্যাক্সের কথায় আসি। এই সম্পদ/আয়ের বৈষম্য আরো বাড়বে যদি আপনি ইনকামের উপর ট্যাক্স আরোপ করেন। মানে আয়কর আরোপ করলে আপনি শ্রমকে আরো বেশি অত্যাচার করছেন, কেননা শ্রমিকরা ইতিমধ্যেই রিটার্ণ কম পাচ্ছে সম্পদের মালিকদের তুলনায়। পূঁজিবাদী অর্থনীতিতে সম্পদের উপর ট্যাক্স আরোপ করা হয়না, বরং আরোপ করা হয় শ্রমের উপর। যেমন ধরেন ২০১২ সালের যুক্তরাষ্ঠ্রের নির্বাচনে মিট রমনি আর ব্যারাক ওবামা প্রতিদ্বন্দিতা করেছিল। রমনি বিশাল ধনী লোক, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের মালিক, বিলিয় বিলিয়ন ডলার তার আয়। সে ট্যাক্স দিত মাত্র ১২% অথচ এমেরিকার সাধারণ মধ্যবিত্ত জনগন ট্যাক্স দেয় প্রায় ৩০-৩৫%! রমনির আয় ছিল সম্পদ থেকে, শ্রম থেকে না, সেজন্য তার কম ট্যাক্স। আগেই বলেছি পূঁজিবাদি অর্থনীতিতে ট্যাক্স না থাকলেও সম্পদের পাহাড় জমবে কিয়দংশ ধনীদের কাছে, এখন আপনি যদি শ্রমিকদের আয়ের উপর আরো ট্যাক্স বসান তাহলে বুঝতেই পারছেন সেটা অবস্থাকে আরো নাজুক করবে, বৈষম্য বাড়তেই থাকবে।

এর বিপরীতে সমাধান কি? যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করেন তাদের সমাধান হচ্ছে রাষ্ঠ্রই কেন্দ্রীয়ভাবে উৎপাদনের উপাদানসমূহ নিয়ন্ত্রণ করবে, তাতে কেউ আলাদাভাবে সম্পদ আর শ্রমের মালিক হবেনা, সবাই সম্পদ আর শ্রমের মালিক হবে। তাতে বৈষম্য থাকবেনা। কিন্তু ইতিহাস বলে সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহ চরম অসফল হয়েছে এবং আগে-পরে নিপীড়ক রাষ্ঠ্রে পরিণত হয়েছে। স্বৈরতন্ত্রের দিকেই ধাবিত হয়েছে সব সমাজতান্ত্রিক রাষ্ঠ্র, মূলত গুটিকয়েক মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সারা দেশের সব মানুষের কি করা উচিৎ সেটা নিয়ে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কিছুটা আয় বৈষম্য না থাকলে আর জনগনকে সম্পদের মালিক হতে না দিলে জনগন কাজ করতে উৎসাহ পাবেনা, এটা জাস্ট স্বাভাবিক। জনগন কাজে উৎসাহ না পেলে বা যারা কঠোর পরিশ্রম করে তাদেরকে যারা অলস তাদের সমান করে দিলে অর্থনীতি খারাপ হতে বাধ্য। তাই সমাজতন্ত্র সমাধান না কোন।

মূলত আয়/সম্পদ বৈষম্য থাকতে হবে, সেটা না থাকলে মানুষ কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তবে সে বৈষম্য অতিরিক্ত হতে দেওয়া যাবেনা। আরো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সম্পদের মালিকদের কাছে এতবেশি পরিমান সম্পদ পুন্জিভূত হতে দেওয়া যাবেনা যাতে তারা রাষ্ঠ্রের সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে, রাষ্ঠ্র থেকেও তারা বেশি শক্তিশালী হয়ে যায় আর রাষ্ঠ্র শুধু তাদের স্বার্থই দেখে এবং নিপীড়ক রাষ্ঠ্রে পরিণত হয়।

থমাস পিকেটির সমাধান হচ্ছে শ্রমের উপর কর না বসিয়ে সম্পদের উপর কর বসানো। আগেই বলেছি কর আরোপ না করলে যেহেতু সম্পদের রিটার্ণ শ্রমের রিটার্নের চেয়ে বেশি তাই
সমস্ত সম্পদ আস্তে আস্তে গুটিকয়েক মানুষের হাতে চলে যাবে। শ্রমের উপর যদি কর বসান তাহলে সে প্রক্রিয়া আরো ত্বরান্বিত হবে। বিপরীতে শ্রমের উপর কর না বসিয়ে সম্পদের উপর বসালে তাহলে শ্রমিকরা কর থেকে মওকুফ পেলে সেই উদ্ধৃত্ত বিনিয়োগ করতে পারবে, নিজেরাও কিছুটা সম্পদশালী হবে। আবার সম্পদের উপর কর বসানোতে যারা বেশি সম্পদের মালিক তাদের রিটার্নও কমবে, সম্পদের মালিকদের হাতে সব ক্ষমতা পুণ্জিভূত হবে না। তাই আয়কর আরোপ না করে সম্পদ কর আরোপ করাই সমাধান। সারাবিশ্বের পুঁজিবাদের জয়জয়কারে যে সম্পদ/আয়ের যে বৈষম্য তৈরী হয়েছে সেটা কমানোর জন্য তাই সম্পদ করই আমাদের গ্রহণ করতে হবে। থমাস পিকেটি এই কথাই বলেছেন। পিকেটির বই সারাবিশ্বে আলোড়ন তুলেছে। ইউরোপ-আমেরিকায় পিকেটির বইকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে, মানুষ কিছু সম্পদশালীর কাছে সব সম্পদ পুণ্জিভূত হওয়াতে ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে। পিকেটি এর একটা ঈপ্সিত সমাধান দিয়েছেন।

তবে সম্পদের উপর বেশি কর আরোপ করলে একটা সমস্যা আছে, সেটা হল তখন সম্পদশালীরা বিনিয়োগ করবেনা, আর বিনিয়োগ না করলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবেনা, তাতে শ্রমিকরাও বিপদে পড়বে। তাই খুবই ব্যালান্স করে সম্পদ কর বসাতে হবে, যাতে সেটা অতিরিক্ত হয়ে না যায় যেটা আবার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে বাঁধাগ্রস্থ করবে।

ইসলাম ১৪০০ বছর আগে এর সমাধান দিয়ে গেছে। সেটা হচ্ছে যাকাত, যেটা আদতে সম্পদ কর বৈ কিছুই নয়। সারা দুনিয়ার সব অর্থনীতিবিদ আর চিন্তাবিদরা মিলে একটা সমাধান বের করেছে যেটা মরুভূমির এক নিরক্ষর লোক যিনি অর্থনীতির "অ"-ও পড়েননি তিনি ১৪০০ বছর আগে দিয়ে গিয়েছেন। যাকাত মাত্র সম্পদের ২.৫%, তাই সেটা অতিরিক্তও না যে সম্পদশালীরা বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে। আবার যাকাত যেহেতু ধর্মীয় দায়িত্ব (ফরজ), তাই মানুষকে ধর্মীয় মনোভাবাপন্ন করতে পারলে যাকাত আদায়ের খরচও অনেক কমে যাবে, পুরা পদ্ধতি হবে অনেক এফিসিয়েন্ট। যাকাতের উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজ থেকে দারিদ্র‌্য কমানো এবং খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজ বা হারুনর রশিদের সময় জাকাত নেওয়ার মত সমাজে একটা লোকও ছিলনা। কেননা এর আগে এফিসিয়েন্ট যাকাত সিস্টেমের মাধ্যমে কয়েক দশকেই দারিদ্র‌্য শূণ্যের কোঠায় চলে এসেছিল।

ভবিষ্যতে মানব সমাজের ইসলামের কাছে ফিরে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। আপনি ইসলামকে যতই গালি দেন, মানব সমাজের সব সমস্যার সমাধানের জন্য ইসলামেই ফিরে যেতে হবে। আপনি ইসলাম থেকেই ধারণা নিবেন, তবে হয়ত সেটার ভিন্ন নাম দিবেন, যাকাত নাম না দিয়ে সম্পদ-কর নাম দিবেন, ওমার (রাঃ)-র রাষ্ঠ্রধারণাকে কল্যাণরাষ্ঠ্র নামে ডাকবেন, কিন্তু ইসলামই মানব সমাজের একমাত্র সমাধান।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


হযরত ইব্রাহিমের সন্তানের বিসর্জন নিয়ে লিখেন; যা জানেন, যা দেখেছেন, সেগুলো নিয়ে লিখলে পাঠক পাবেন।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:১২

নরাধম বলেছেন: এটা বুঝি খুব কঠিন বিষয় হয়ে গেছে আপনার জন্য?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.