নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানত যদি হাসন রাজা বাঁচব কতদিন..

Miles to go before I sleep.....

নরাধম

"Recite! in the name of thy Lord; Who created Created man out of a clot of congealed blood Recite! and thy Lord is Most Bountiful, He Who taught (the use of) the Pen Taught man that which he knew not"

নরাধম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আয়েশা (রাঃ)-র বিবাহকালীন বয়সের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:২২

আয়েশা (রাঃ)-র বিবাহকালীন বয়স ইন্টারনেটে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে সমালোচনা করা, গালিগালাজ করা এবং তাঁকে যৌনবিকৃতিসম্পন্ন মানুষ সেটা প্রমাণ করার জন্য প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। এটা নিয়ে ইসলামি মনোভাবাপন্ন লোকজন নানারকম জবাব দেয় এবং অনেক জবাবই বেশ যুক্তিযংগত। কিন্তু তবুও শিক্ষিত মুসলমানরা আয়েশা (রাঃ)-এর বয়স নিয়ে কিছুটা হলেও হীণমন্যতাই ভুগেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। একদিকে তাঁরা ইসলামকে ভালবাসেন, মুহাম্মদ (সাঃ)-কে ভালবাসেন, অন্যদিকে মুহাম্মদ (সাঃ) একজন কম বয়সী মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন সেটা মানতে তাঁদের কষ্ট হয়। (এখানে একটা তথ্য উল্লেখ করা দরকার যে মুহাম্মদ (সাঃ) মুসলমানদের অলমোস্ট সব বিষয়ে অনুসরনীয় হলেও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা না। যেমন রাসুল (সাঃ)-এর বিয়ের সংখ্যা এবং বিয়ে সংক্রান্ত কিছু অন্যান্য বিষয়াদির ক্ষেত্রে মুসলমানদের জন্য তাঁকে অনুসরন করার বিধান নেই, তাই মুসলমানদেরকে নয় বছরের মেয়েকে বিয়েও দিতে হবেনা এবং করতেও হবে না।)

এটাচড ছবিটা ভালমতে লক্ষ্য করুন।
ছবিটি দেখে কি মনে হয়? ছবির পুরুষ এবং মেয়ের মধ্যে সম্পর্ক কি? আমি আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছি, সে বলেছে ছবির মেয়েটা পুরুষটার কন্যা হয় সম্পর্কে। তাকে দোষ দেওয়া যায় না, আমরা বর্তমান সমাজের মান ধরে বিচার করলে সেটাই মনে হবে। আদতে ছবির পুরুষটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মেয়েটা তাঁর স্ত্রী মৃণালিনী দেবী। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দুজনকে বেমানান মনে হচ্ছে, মেয়েটাকে নিতান্তই শিশুর মত মনে হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ বিয়ে করেন ১১-১২ বছরের একটা মেয়েকে, সেটা তখন অস্বাভাবিক মনে হয়নি। বিয়ের ২ বছর পর রবীন্দ্রনাথের প্রথম সন্তান হয়। তেমনি ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ তার মেয়ে রেনুকা দেবীকে বিয়ে দেন মাত্র সাড়ে দশ বছর বয়সে (তাও রেনুকা তার বরকে কোনদিনই দেখেননি, কোন পরিচয়ই ছিলনা বিয়ের পূর্বে)।

এ ঘটনা দুটো মাত্র এক-দেড়শ বছর আগের বাংলার সবচেয়ে শিক্ষিত, সংস্কৃতিবান, আধুনিক পরিবারের বাংলা সাহিত্যের বরপুরুষ ইংরেজি-শিক্ষিত এবং বিলেত-ফেরত রবীন্দ্রনাথের। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথের পরিবার ছিল একেশ্বরবাদি ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী। এই ধর্মের লোকজন সমাজের সবচেয়ে শিক্ষিত এবং আধুনিক ছিলেন, নারী শিক্ষাকে তারা গুরুত্ব দিতেন। এত কিছুর পরও রবীন্দ্রনাথ বিয়ে করেছিলেন ১১-১২ বছরের একটা বালিকা, নিজের মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন সাড়ে দশ বছর বয়সে। রবীন্দ্রনাথ বালিকা বিবাহ করে সমাজের কোন বিরোধিতার মুখোমুখি হননি, তাঁকে কেউ কোন অপবাদ দেয়নি কম বয়সি মেয়ে বিয়ে করাতে। তার মানে মাত্র এক থেকে দেড়শ বছর আগের বাংলার সবচেয়ে শিক্ষিত, আলোকিত এবং সংস্কৃতিবান সমাজে ১০-১১ বছরের মেয়ে বিয়ে করা ছিল নিতান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প "হৈমন্তী"-র হৈমন্তীর ১৭ বছর বয়সে বিবাহ হওয়াতে আইবুড়ো অপবাদ পেয়েছিল, শ্বাশুড়ি ১১ বছর বয়স বলার জন্য হৈমন্তীকে অনুরোধ করেছিল। এমনকি শ্বাশুড়ির কাছে ১১ বছরও বাড়ন্ত ছিল, যদিও হৈমন্তির স্বামী সে সময়ের বিএ পাশ শিক্ষিত ছিল।

মেয়েদের বিয়ের বয়স মধ্য-বিংশ শতকের পূর্ব পর্যন্ত ৫/৬ থেকে ১০/১১ এরকমই ছিল (ব্যতিক্রম অবশ্যই ছিল, আমি গড়ে যা ঘটত সেটাই বলছি); ছোটকালে শুনেছি আমার দাদীর বিয়ে হয়েছিল মাত্র সাত বছর বয়সে। সে সময়ে যে মেয়ের যত ছোট বয়সে বিয়ে হত, সে সেটা নিয়ে গর্ব করত, কেননা আগে বিয়ে হওয়া মানে সুন্দরি হওয়ার প্রমাণ। কিছু ব্যতিক্রম ব্যাতিরেকে সারা বিশ্বেই মোটামোটি মেয়েদের বিয়ে হত পিরিয়ড হওয়ার পরপরই, অনেকের তারও আগে হয়ে যেত। পিরিয়ড হওয়ার আগে বিয়ে হয়ে গেলে স্বামী সহবাসের জন্য নতুন বালিকা-স্ত্রী পিরিয়ড হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করত। রবীন্দ্রনাথ ১৯০১ সালে রেনুকাকে সাড়ে দশ বছর বয়সে বিয়ে দিলেও, ১৮৮৭ সালে, মানে রেনুকার বিয়ের অন্তত এক যুগেরও বেশি আগে থেকেও মেয়েদের বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার মানে এই দাড়াই যে রেনুকাকে যখন সাড়ে দশ বছর বয়সে বিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন রবীন্দ্রনাথ সেটাকে বাল্য বিবাহ হিসেবে দেখেননি, বরং হয়ত সেসময় সমাজে প্রচলিত ৩-৫ বছরের মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রথাকে তিনি বাল্যবিবাহ মনে করেছেন।

বিয়ে এবং বিয়ের বয়স দুটাই আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রপন্ঞ। সমাজ তার প্রয়োজনের নিমিত্তে নিয়ন্ত্রন করেছে বিয়ের আওতা এবং বিয়ের বয়স। জ্ঞান-ভিত্তিক আধুনিক সমাজ বিকশিত হওয়ার পুর্বে, প্রাক-আধুনিক যুগে সমাজব্যবস্থা ভেবেছে তার সুস্থ, কর্মক্ষম মানুষ দরকার, তা নাহলে সমাজ টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। বিয়ের মাধ্যমে দীর্ঘকালীন কমিটমেন্টের বদৌলতে একটা পারিবারিক আবহ সৃষ্টি করলে শিশুর প্রয়োজনীয় যত্ন নেওয়া এবং শিশুকে সমাজের প্রয়োজনে বড় করা সহজ হয়ে ধরা দিয়েছে যুগে যুগে মানবসমাজের কাছে। পারিবারিক দৃষ্টিভংগী থেকে যে পরিবারের যত বেশি কর্মক্ষম সন্তান থাকত, বিশেষ করে পুরুষ সন্তান, সে পরিবার তত বেশি প্রভাবশালী ছিল। তাই সন্তান জন্মদানের সম্ভাব্যতা, সন্তান লালন-পালন করে বড় করার যোগ্যতা, এবং বেশিদিন ধরে সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা এইসব ছিল পাত্রী আনার ক্ষেত্রে পুরুষদের এবং পাত্রের পারিবারের মূল চাহিদা। সামাজিক দৃষ্টিভংগী থেকে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠান/প্রথাকে জারি রাখার জন্য মোটামোটি সব সমাজেই মানুষ কতজন বিয়ে করতে পারবে এবং স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের নিয়ন্ত্রণ আর ভারসাম্য কেমন হবে সেটা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এসব নিয়মকানুন আর্থ-সামাজিক প্রয়োজনবোধে ভিন্ন ভিন্ন হওয়াতে বিয়ের ছোটখাট ডিটেইলসও ভিন্ন হয়েছে, তবে মূল প্রতিষ্ঠানিক স্পিরিট হাজার হাজার বছর ধরে অপরিবর্তত থেকেছে। একই সমাজের বিয়ের নিয়ন্ত্রণের দিকও সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়েছে আর্থ-সামাজিক কারনে। যেমন কোন সমাজে যদি যুদ্ধবিগ্রহের কারনে পুরুষের সংখ্যা অনেক কমে যায়, সামাজিক শৃংখলা টিকিয়ে রাখার জন্য এবং পরবর্তীতে কর্মক্ষম জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য পুরুষদেরকে বেশি স্ত্রী নিতে উৎসাহিত করা হয়েছে কোন সমাজে, আবার একই সমাজে যখন স্বাভাবিক অবস্থা চলেছে এবং পুরুষ-মহিলার সংখ্যার ভারসাম্য বজায় থেকেছে তখন পুরুষদেরকে কম বিবাহ করার জন্য উৎসাহ দিয়েছে। এরকমও হয়েছে কোন সমাজে সুস্থ-কর্মক্ষম জনশক্তি তৈরীর জন্য যেসব পুরুষ শারিরীক দিক দিয়ে শক্তিশালী এবং তার সন্তানও শক্তিশালী/কর্মক্ষম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তখন এরকম পুরুষকে অনেক বেশি বিয়ে করার জন্য সমাজ উৎসাহিত করেছে, বিপরীতে ক্ষীনকায়/দূর্বল পুরুষদেরকে বিয়ে না করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। কোন জনগোষ্ঠীকে যখন অন্য কোন জনগোষ্ঠী যুদ্ধে পরাস্ত করেছে, তখন পরাজিত জনগোষ্টীর নারীরা স্বেচ্ছায় বিজয়ী সৈন্যদের সাথে সংগম করতে আগ্রহী হয়েছে যাতে নিজেদের বীরপুরুষ সন্তান প্রসব হয়, এ ধরণের ঘটনারও ইতিহাসে অনেক প্রমাণ আছে।

প্রাক-আধুনিক সমাজে সন্তান জন্মদান এবং লালন-পালনই যেহেতু সমাজের দৃষ্টিতে মেয়েদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ ছিল, এবং মানুষের আয়ু যেহেতু কম ছিল (গড়ে ত্রিশ বছরের বেশি বাঁচার আশা করাটাও অনেক সময় অকল্পনীয় ছিল), তাই মেয়েদেরকে যত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া যায় ততই সেটাকে সমাজ মঙ্গলজনক মনে করেছে, এতে করে বেশিদিন সন্তান জন্ম দেওয়ার সক্ষমতা থাকবে বলে সমাজ ধারনা করত। মেয়েদের আসল আশ্রয়স্থল স্বামীর ঘর এই ধারণা সমাজের প্রয়োজনের নিমিত্তেই সেসময় বৈধতা লাভ করেছিল, তাই মেয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সেখানে অভ্যস্ত হওয়া এবং পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়াটা মেয়ের মা-বাবার কাছে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল তেমনি শ্বশুরবাড়ির সবার কাছেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এজন্য অনেক সময় মেয়ের পিরিয়ড হওয়ার পূর্বেই, এমনকি ৪/৫ বছর বয়সেও মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত, যাতে মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সেটাকে নিজের আবাসস্থল হিসেবে গড়ে নিয়ে যেতে পারে, নতুন পরিবেশে অভ্যস্ত হতে পারে এবং পিরিয়ড হওয়ার পরপরই সন্তানধারণের জন্য মানসিক এবং শারিরীক প্রস্তুত থাকে। রবীন্দ্রনাথ যখন তার মেয়ে রেনুকাকে এত অল্প বয়সে বিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন তিনি তাঁর স্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেন যে মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিলে সে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে সে বাড়ির রীতিনীতিতে অভ্যস্ত হতে পারবে, সে বাড়িকে তার নিজের বাড়ি মনে করে সেখানে তার একটা অবস্থান গড়ে উঠবে, সে বাড়ির লোকজনও তার সাথে কম বয়স থেকেই অভ্যস্ত হয়ে উঠবে, তাই যত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া যায় ততই ভাল। উল্লেখ্য গ্রাম এলাকায় এখনো যারা খুব অল্প মেয়ে বয়সে বিয়ে দিতে চান, তাদের যুক্তিও এটাই। যদি মেয়েকে লেখাপড়া করার সামর্থ্য বা ইচ্ছে না থাকে, তাহলে সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থার বিচারে এ অবস্থানকে অযৌক্তিক বলার উপায় নেই। (এখানে উল্লেখ্য যে মুহাম্মদ (সাঃ) যখন আয়েশা (রাঃ)-কে বিয়ে করেন, আয়েশা (রাঃ)-র পিতামাতাই আয়েশা (রাঃ)-কে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বাড়িতে দিয়ে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন, আরো উল্লেখ্য যে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে বিয়ের আগে আয়েশা (রাঃ)-র অন্য একজনের সাথে বাগদান হয়েছিল, সে লোক নিজেই বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছিল, এর পরে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে বিয়ে হয়। তার মানে সে সমাজে আয়েশা (রাঃ)-র যে বয়স ছিল সে বয়সে বিয়ে হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল এবং কাফিররা মুহাম্মদ (সাঃ)-কে নিয়ে নিয়মিত কূৎসা রটনা করলেও আয়েশা (রাঃ)-এর বয়স নিয়ে কোন কূৎসা রটনা করেনি।) মেয়েদের বিয়ের এবং বিয়ের বয়সের এই দর্শণ সমাজের এবং পরিবারের নিজের অর্থনৈতিক/ডেমগ্রাফিক প্রয়োজনের নিমিত্তে নির্ধারণ হত। আগেই বলেছি বেশিদিন ধরে সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়া বলবত রাখার নিমিত্তে প্রাক-আধুনিক সমাজে বাল্যবিবাহ স্বাভাবিক ছিল, এই কথাটা মাথায় রাখতে হবে। যত বেশি কর্মক্ষম সন্তান কোন পরিবারে, সে পরিবার তত প্রভাবশালী, এই অর্থনৈতিক-সামাজিক প্রয়োজনের জন্যই বাল্যবিবাহ সে সময়ের সমাজে "অপটিমাল" ছিল।

কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে, বিশেষ করে পশ্চিমা প্রভাবিত দেশ/সমাজসমূহে বাল্যবিবাহকে খারাপ মনে করা হয় কেন? উপরের আলোচনাতেই এর উত্তর নিহিত আছে। মূলত দু-তিনটা পারস্পরিক সামন্জস্যপূর্ণ কারনে বিংশ শতকের শুরুর দিক থেকে ইউরোপে এবং মধ্য-শতক থেকে সারাবিশ্বেই বাল্যবিবাহকে খারাপ চোখে দেখা হয়। এখানেও সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রয়োজনই শেষ কথা। প্রথম কারন হচ্ছে চিকিৎসাবিজ্ঞানে উন্নতি। বিংশ শতকের শুরু থেকেই চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি হওয়াতে মানুষের গড় প্রত্যাশিত আয়ু (এভারেজ লাইফ এক্সপেকটান্সি) হুট করে এবং ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। শিশুর নানা রকম টীকা আবিষ্কারের ফলেও প্রত্যাশিত আয়ু বেড়ে যায়। এতে করে ব্যাপকভাবে জনসংখ্যার বিস্ফোরন ঘটতে থাকে। আগে যেখানে সমাজের কাছে জনসংখ্যা কম হওয়াটা সমস্যা হিসেবে ধরা দিয়েছিল, এখন জনসংখ্যার আধিক্যই (এবং সে অনুপাতে সম্পদের অপ্রতুলতা) বরং সমস্যা/বোঝা হিসেবে ধরা দিল। তাই সমাজ বেশি সন্তান জন্মদানকে নিরুৎসাহিত করল। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজের গোড়াপত্তন হওয়া শুরু করলে জনসংখ্যার সংখ্যাধিক্যের চেয়ে জনসংখ্যার জ্ঞানভিত্তিক কর্মদক্ষতাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল। তবে ইউরোপে এসবের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে কারনে বাল্যবিবাহ কমে আসল তার কারন হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে বিশাল সংখ্যক কর্মক্ষম পুরুষ জনসংখ্যার হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে মৃত্যু ঘটল। অথচ ইতিমধ্যেই ব্যাপকহারে কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থা থেকে ইউরোপ শিল্পভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় স্থানান্তরিত হল। এতসব শিল্পকারখানা টিকে থাকার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যথেষ্ট পরিমান কর্মক্ষম পুরুষের সংখ্যা ছিল না। ইউরোপ এ কঠিন অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলার জন্য একদিকে প্রাক্তন ওপনিবেশ থেকে ইমিগ্রেশান উৎসাহিত করল, অন্যদিক নারীদেরকে অন্তপুর থেকে কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য প্রনোদনা দিল। নারীরা হঠাৎ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পেল এবং স্বাভাবিকভাবে বিয়ের মাধ্যমে নিজের অর্থনৈতিক দায় কোন পুরুষের উপর চাপিয়ে দেওয়ার হার অনেক কমে গেল। এ সব কারনে বাল্যবিবাহ ব্যাপকভাবে কমে গেল। এরপরে তো আছে সেকেন্ড ওয়েভ অফ ফেমিনিজম, যা বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানকে ইউরোপে পশ্চাদপদ হিসেবে গন্য করা শুরু করল। তার মানে একদিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি, অন্যদিক জ্ঞানভিত্তিক সমাজের গোড়াপত্তন এবং সর্বশেষ এবং সবচেেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে কর্মক্ষম পুরুষের ব্যাপক অভাবের কারন মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ হেতু বাল্যবিবাহের প্রয়োজন সমাজের কাছে ফিকে হয়ে আসল।

প্রাক-আধুনিক যুগে বাল্যবিবাহের প্রয়োজন সমাজের ছিল, তাই সমাজের জন্য অপটিমাল ছিল বাল্যবিবাহকে উৎসাহিত করা, আধুনিক সমাজে আর্থ-সামাজিক কারনে বাল্যবিবাহের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে, তাই সমাজে বাল্যবিবাহকে এখন খারাপ চোখে দেখা হচ্ছে। বিয়ে এবং বিয়ের বয়সের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বুঝার জন্য আমি দুইটা হাইপথেটিকাল উদাহরন দিয়ে আমার লেখা শেষ করব।

১. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপে কর্মক্ষম পুরুষের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে, কিন্তু হাইপথেটিকালি ধরেন সেখানে শি্ল্প কারখানা ছিল না যাতে মেয়েরা বাইরে কাজ করতে পারে। সে অবস্থায় সমাজের জন্য অপটিমাল কি হত? সমাজ তখন হয়ত দুটা কাজ করত, একটা হচ্ছে উপার্জনক্ষম পুরুষদেরকে বহুবিবাহের জন্য উৎসাহিত করত, যাতে সারপ্লাস নারীদের থাকাখাওয়ার কোন ব্যবস্থা হয়। নতুবা পতিতাবৃত্তির প্রতি সামাজিক নেগেটিভ দৃষ্টিভংগী কমে যেত এবং অনেক নারীই পতিতাবৃত্তিতে কর্মরত হত অথবা একই সংগে দুটা ফোর্সই কাজ করত। সামাজিক প্রয়োজনেই তখন বহুবিবাহ সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পেত।

২. গত অর্ধশতকে বস্তুবাদি সমাজব্যবস্থা এবং ব্যাপক শিল্পায়নের ফলে পরিবেশের ব্যাপক বিপর্যয় শুরু হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ প্রাণী প্রজাতি ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং-য়ের জন্য মানবজাতির অস্তিত্বই হুমকির মুখে। হাইপথেটিকালি ধরেন আজ থেকে ৫০ বা ১০০ বছর পর বিশ্বের বড় অংশই পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছে এবং শিল্পায়নের জন্যই যেহেতু গ্লোবাল ওয়ার্মিং হয়েছে তাই তখন মানুষের কাছে শিল্পায়নের আবেদন ফুরাবে, মানুষ আবার প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিব্যবস্থায় ফেরত যাবে। সে সমাজে আবার কর্মক্ষম জনসংখ্যার সংখ্যাধিক্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ধরা দিবে, আর্থ-সামাজিক কারনে বাল্যবিবাহের আবেদন তখন বাড়বে এবং তখনকার মানুষ খুবই আশ্চর্য্য হয়ে ভাববে কেন বিংশ শতকে মেয়েরা এত দেরীতে বিয়ে করত। তাদের কাছে সেটা তখন খুবই অনৈতিক এবং পশ্চাদপদ মনে হবে।

এখানে আর্থ-সামাজিক কারনের মাধ্যমে যে বিয়ে এবং বিয়ের বয়সের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে সেটা মোটাদাগে সত্যি, তবে মানবসমাজ খুবই জটিল এবং আর্থ-সামজিক কারন প্রধান হলেও সময় এবং সমাজের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে অন্যান্য কারনও বিয়ে এবং বিয়ের বয়সের ভ্যারিয়েশানের জন্য দায়ী থাকতে পারে। কিন্তু আর্থ-সামাজিক প্রয়োজনের তাগিদ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারন সে ব্যাপারে সন্দেহ নাই।

এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি এখন রবীন্দ্রনাথের ১১ বছরের মেয়েকে বিয়ে করা বা সাড়ে ১০ বছরের দেয়ার উদাহরনে ফিরে যান, এখন কি সেটা খুব অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে? রবীন্দ্রনাথ আধুনিক শিক্ষিত, ই্উরোপীয় ধ্যান-ধারণার প্রতি পরিচিত এবং অনুরক্ত ছিলেন, এবং এ ঘটনা মাত্র ১০০-১৫০ বছর আগে বাংলার সবচেয়ে আধুনিক পরিবারের ঘটনা। সে আলোকে এখন আপনি এর ১৩০০ বছর আগে আরবের মরুভূমির সমাজব্যবস্থায় রাসুল (সাঃ)-এর আয়েশা (রাঃ)-র সাথে বিয়েকে বিবেচনা করুন, কি খুবই অস্বাভাবিক মনে মনে হচ্ছে? রাসুল (সাঃ)-এর সময়ের সমাজের আরেকটা উদাহরন দিই। সেসময় বাপ এবং ছেলে একইদিনে বিয়ে করা খুবই কমন ছিল। ইন ফ্যাক্ট রাসুল (সাঃ)-র বাবা আব্দুল্লাহ যেদিন বিয়ে করেন, একইদিন একই আসরে রাসুল (সাঃ)-এর দাদা আব্দুল মুত্তালিবও বিয়ে করেন বলে ঘটনা বর্ণিত আছে এবং আব্দুল মুত্তালিবের বয়স তখন সত্তরের কাছাকাছি ছিল আর তার নব বালিকাবধুর বয়স আব্দুলার নব বালিকাবধুর বয়সের সমান বা কম ছিল। সে সমাজে এটা কোন অস্বাভাবিক ছিল না।

বিয়ে নিয়ে আরো একটা চমকপ্রদ উদাহরন দিয়েই শেষ করছি। ভারতের কর্ণাটক এবং তার পাশের অনেক রাজ্যে হাজার বছর ধরে হিন্দুদের মাঝে মামা তার আপন ভাগ্নিকে (আপন মায়ের পেটের বড় বোনের মেয়েকে) বিয়ে করার রেওয়াজ প্রচলিত ছিল, এখনো সমসয়ে অসময়ে এরকম বিয়ের কথা শুনা যায়। আপনার কাছে এটা ডিসগাস্টিং মনে হচ্ছে না? কিন্তু এ বিয়ের পেছনেও বেশ জোরালো সামাজিক কারন আছে; কারনটা কি বলতে পারবেন?

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:২৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: জ্ঞানগর্ভ আলাচনা। বিচিত্র জগৎ।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫

নরাধম বলেছেন: জাজাকাল্লাহ।

২| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৮:০৮

যুক্তি না নিলে যুক্তি দাও বলেছেন: কারণটা কি???

২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৪৬

নরাধম বলেছেন: দেখি কেউ বলতে পারে কিনা!

৩| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:১৮

ক্স বলেছেন: আয়েশা (রা) কে বিয়ে করার সময় রাসূল (সঃ) এর বয়েস ছিল পয়তাল্লিশ বছর। মৃণালিনীকে বিয়ের সময় রবীন্দ্রনাথের বয়েস কত ছিল? এটা অপ্রাসঙ্গিক। যেটা প্রাসঙ্গিক সেটা হল তখনকার যুগে বিয়ের ক্ষেত্রে বয়েস কোন ব্যাপারই ছিলনা। রাসূলের পালিত পুত্র জায়েদ বিন হারিসা (রা) বিয়ে করেছিলের তার চেয়ে ২৫ বছরের বড় একজন নারীকে, যিনি বয়েসে রাসূল (সঃ) এর ছয় বছরের বড় ছিলেন। বিয়ে তখন সামাজিক মর্যাদার ব্যাপার ছিল। খাদিজা (রা) কে বিয়ে করার মাধ্যমে রাসূল (সঃ) এর সামাজিক মর্যাদা অনেক বেড়ে গিয়েছিল।

আয়েশা (রা) এত অল্প বয়েসে রাসুলের (সঃ) সংসারে যাওয়ায় উম্মতে মুসলিমার বিরাট লাভ হয়েছে। এই বিদুষী নারী পরবর্তীতে সাহাবাদের শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। যেসব দ্বীনি সমস্যা নিয়ে সাহাবাগণ রাসূল (সঃ) এর দ্বারস্থ হতেন, আয়েশা (রা) সেদিক থেকে রাসূলের (সঃ) শুন্যস্থান অনেকাংশে পূরণ করে দিয়েছিলেন।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:০৬

নরাধম বলেছেন: ধন্যবাদ। তবে আপনার মন্তব্যে মনে হয় বেশ কটা ভুল তথ্য আছে।

৪| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: ভাই কিছু মনে করবেন না। আপনার পোষ্ট টি সুন্দর কিন্তু আপনি অযথা টেনে লম্বা করেছেন।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:৩২

নরাধম বলেছেন: কিছু মনে করিনি, আপনি যৌক্তিক সমালোচনা করেছেন। আমি কিছুটা পরিবর্তন করে কলেবর ছোট করেছি। পরামর্শের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৫| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:০৭

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: যার কুৎসারটনাকারী তারা সব সময় কুৎসারটনা করবেই। এটা তাদের স্বভাবজাত দোষ!

২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:১৫

নরাধম বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

৬| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:৩৩

আসিক ইসলাম বলেছেন: ভালোলাগা রইলো,অনেক অজানাকে জানতে পারলাম।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:০৬

নরাধম বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:৪১

এ আর ১৫ বলেছেন: ইসলামে বাল্য-বিবাহ ??
মূল ইংরেজী হাসান মাহমুদ, বঙ্গানুবাদ - এস আমিন

দেশে বাল্যবিবাহের দড়ি-টানাটানি চলছে তো চলছেই। একদিকে এর বিরুদ্ধে মানবাধিকার-কর্মীদের আন্দোলন, আইন ও তার প্রয়োগ, অন্যদিকে এর পক্ষে কিছু আলেমদের অবস্থান। তাঁদের প্রধান যুক্তি সহি বুখারীর হাদিস, নবীজি(স) আয়েশা(র)-কে বিয়ে করেছিলেন ৬ বছর বয়সে, নিজের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন ৯ বছর বয়সে- বুখারী ৭ম খণ্ড-৬৪, ৫ম খণ্ড-২৩৪, ২৩৬। এর ভিত্তিতে ইসলাম-বিরোধী অনেকেই আবার নবীজি(স)কে শিশু- ধর্ষক বলে।এই "ছয় বছর-নয় বছর" দলিলের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দলিলগুলো দেখা দরকার যাতে জাতি সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বলা দরকার, আয়েশা (র)-এর জন্মসাল নিয়ে বিতর্ক থাকার ফলে বিয়ে সহ বিয়ে সহ বাকি সবকিছুর সময়/সাল প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে।(বদর যুদ্ধ হয়েছিল ৬২৪ সালে)।

1. “শিশু¬ ধর্ষক” মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি (সাধারণত: পুরুষ) কম বয়সের বালিকাদের সাথে সংসর্গ করতে সর্বক্ষণ ব্যাকুল হয়ে থাকে। সমাজে ওটা চিরকালই ছিল, আছে এবং থাকবে।কিন্তু নবীজীর জীবন খুঁটিয়ে দেখলে আমরা সংযমের চিত্রই পাই। পঁচিশ বছরের দুরন্ত যৌবনে তাঁর প্রথম বিয়েই ছিল ৪০ বছরের বিধবা বিবি খাদিজার সাথে। মনে রাখতে হবে মানুষের ইতিহাসে সমাজ, পরিবার, অর্থনীতি, রাজনীতি, যুদ্ধনীতি এমনকি প্রতিটি মানুষের মনোজগতের ওপর এমন সার্বিক ও সর্বগ্রাসী রাজত্ব আর কেউই করেনি। যাঁর অনুসারীরা তাঁর জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন ও নিয়েছেন, যাঁর জন্য সর্বক্ষণ নিজেদের "পিতামাতা উৎসর্গ" বলতেন, তিনি চাইলে অবশ্যই অনায়াসে শত শত নয় বরং হাজার হাজার বালিকা-সংসর্গ করতে পারতেন। অথচ তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র আয়েশা (র) ছিলেন কুমারী, বাকিরা বিধবা বা তালাক-প্রাপ্তা, কেউ কেউ আবার তেমন সুন্দরীও ছিলেন না। কাজেই “শিশু¬ ধর্ষক” তত্বটা তাঁর বেলায় একেবারেই খাটেনা।

2. বয়স ১৪ থাকার জন্য ইবনে ওমরকে রাসুল (স) ওহুদ যুদ্ধে যোগ দিতে দেননি কিন্তু খন্দক যুদ্ধে যোগ দিতে দিয়েছিলেন কারণ তখন তাঁর বয়স ১৫। সহি বুখারী ও মুসলিমে আমরা দেখি বিবি আয়েশা (রাঃ) বদর যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। সে হিসেবে ৬২৪ সালে তাঁর বয়স কমপক্ষে ১৫ বছর হবার কথা।

3. কিছু সুত্রে আয়েশা (রাঃ)-এর জন্ম ৬১৩ সালে পাওয়া যায় কিন্তু ইবনে হিশাম/ইসহাক এর বিখ্যাত সিরাত কেতাব বলছে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন ৬১০ সালে। ধর্মান্তরিত হবার জন্য ভালোমন্দ বোঝার কিছুটা ক্ষমতা থাকবে বলেই আশা করা যায়। ৬১০ সালে যদি তাঁর বয়স তিন বছরও (খুব সম্ভব তার চাইতে বেশি) হয়ে থাকে তবে ৬২২ সালে তিনি ছিলেন অন্তত পনের বছরের।

4. অতীতে অনেক দেশে এবং অনেক সম্প্রদায়ের লোকেদের মধ্যে (এমনকি বর্তমানেও কিছু কিছু অনুন্নত এলাকায়), সময় এবং বয়স মনে রাখার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রথা চালু ছিল না। তখন তারা কোনো বিশেষ ঘটনার সাহায্যে, যেমন যুদ্ধ, খরা, অথবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বয়স অথবা সময় মনে রাখত। এমনকি ইতিহাসের পাতায় সভ্যতার শীর্ষে যে রোমান জাতি, তাদের মাঝেও এই প্রথা চালু ছিল। নবী(সাঃ)-এর জন্মের বছরে আবরাহা তার হাতির বহর নিয়ে মক্কা আক্রমন করে। তাই সেই বছরকে বোঝাতে মক্কার লোকেরা "হস্তীর বৎসর” উল্লেখ করত। এই প্রথা স্মৃতির ওপরে নির্ভরশীল, তাই বয়সের এবং সময়ের হিসেবে অনিচ্ছাকৃত ভুল ইতিহাসে ধরা পড়ে।

5. ১৪০০ বছর আগে নয় বছরের বালিকার বিয়ে স্বাভাবিকই ধরা হত। বাইবেলেও এর ইঙ্গিত আমরা পাই। ইসলামের শত্রুপক্ষের লোকেরা রাসুল (সাঃ)এর অনেক সমালোচনা করেছে কিনতু এ বিষয়ে কখনো কোনো কটু মন্তব্য অথবা আলোচনা করেনি। তখনকার সামাজিক ব্যবস্থা, জীবন যাপন প্রণালী, প্রাকৃতিক অবস্থা এবং রূঢ় আবহাওয়া এর কারণ হতে পারে।

6. ৬১৫ সালে হজরত আবু বকর (রাঃ) মুত'আম এর পুত্রের সাথে আয়েশার (রাঃ) বিবাহের চিন্তা করেছিলেন। মুত'আম তার পুত্রের এই বিবাহে রাজি হয়নি কারণ তখন হজরত আবু বকর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তখন অবশ্যই বিবি আয়েশার (রাঃ) দুই এর বেশি ছিল । সেই হিসেবে ৬২২ সালে তাঁর বয়স অবশ্যই নয়ের অধিক ছিল।

7. হজরত আবু বকর (রাঃ) এর চারজন সন্তানেরই জন্ম হয়েছিল আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগে, যখন ইসলাম প্রচার শুরু হয়নি। এই যুগের পরিসমাপ্তি হয় ৬১০ সালে। সেই সূত্রে, ৬২২ সিইতে বিবি আয়েশার (রাঃ) বয়স ন্যুনতম বারো বৎসর ছিল।

8. বিবি ফাতেমা (রাঃ) বিবি আয়েশার (রাঃ) পাঁচ বছরের বড় ছিলেন। মুহাম্মদ (সাঃ) এর বয়স যখন পয়ত্রিশ বৎসর তখন ফাতেমা (রাঃ) এর জন্ম হয়। সেই হিসেব অনুযায়ী বিবি আয়েশা (রাঃ) রাসুলাল্লার (সাঃ) চাইতে চল্লিশ বছরের ছোট ছিলেন অর্থাৎ বিয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল বারো।

9. বিবি আয়েশার বড় বোন, বিবি আসমা ছিলেন তাঁর চেয়ে দশ বছরের বড়। যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মদিনায় হিজরতের তিহাত্তরতম বছরে বিবি আসমার মৃত্যু হয় আনুমানিক একশ’ বছর বয়সে। খুব সম্ভবত, হিজরতের বছর বিবি আসমার বয়স ছিল ছাব্বিশ/সাতাশ এবং বিবি আয়েশার (রাঃ) ষোলো-সতের। ইবনে সা'দ এর তাবাকাত এবং আনসাব আল-আশরাফে কিছু কিছু বর্ণনায় আমরা পাই, হিজরতের দুই থেকে তিন বছর পরে বিবি আয়েশার (রাঃ) সাথে রাহুলুল্লাহ (সাঃ) এর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। সুতরাং সেই হিসেবে বিবাহ কালে তাঁর বয়স ছিল আঠার-উনিশ বছর।

10. বিখ্যাত ইমাম ড: সাব্বির আলী, ইমাম শেখ ইমরান হোসেন, শেখ ইয়াসির আল হাবিব সহ অজস্র ইসলামী বিশেষজ্ঞ এটা বলেন, অনেক সূত্র পাবে এখানে:- https://www.google.ca/…

11. পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়াতে নারীরদের ১৯ বছরের আগে বিয়ে বেআইনী - ভিডিও - ড: জাকির নায়েক। মুসলিম প্রধান দেশ মরক্কো আলজিরিয়া তো আছেই, ওখানকার মাওলানারা নিশ্চয় কোরান হাদিস কম জানেন না ! তাঁরা তো বাল্য বিবাহ বাতিল করেছেন!
12. দলিল আরো অনেক আছে, কখনো পরস্পর বিরোধী, তাই তা থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। তবে এবারে কোরান। সুরা নিসা আয়াত ৬:-“এতীমদের প্রতি বিশেষ নজর রাখবে যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে। যদি তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ আঁচ করতে পার, তবে তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পন করতে পার”।

কি মনে হয়?

"যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে......তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ আঁচ করতে পার" - এর অর্থ বিয়ের বয়স তখনি হবে যখন তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ হবে। কথাটা নাবালিকাদের ক্ষেত্রে খাটে? না, খাটে না। বাল্য-বিবাহ ওখানেই সুস্পষ্ট ভাষায় নাকচ করেছে কোরান !!

এবারে বাস্তবতা। যাঁরা বাল্যবিবাহ সমর্থন করেন, তাঁরা কি ওই কচি মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়েছেন একবার? বিশ-পঁচিশ বছরের তরুণের দেহে দুর্দান্ত প্রচণ্ড যৌবন খেলা করে, আর ওদিকে ওই বাচ্চা মেয়েটার না শরীর তৈরী, না মন। সেখানে প্রতিদিন ওই বাচ্চাটাকে কি দোজখের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তার শরীরের ওপর কি মর্মান্তিক অত্যাচার হয় তা কি বাল্যবিবাহ সমর্থনকারীরা ভেবেছেন একবারও? ইসলাম-পালনের, নবীজীকে "অনুসরণ" করার উদগ্র বাসনা এভাবেই জীবন ধ্বংস করে, ইসলামের বদনাম হয়। এর ওপরে আছে ওই কচি শরীরে সময়ের আগেই মাতৃত্বের চাপ।

আরো বলতে হবে?
**************************
Sheikh Imran Hosein
https://www.youtube.com/watch?v=Mw05XUx0CrM

মওলানা মুহম্মদ আলী'র বিস্তারিত গবেষণা-
http://www.muslim.org/islam/aisha-age.htm#_ftn3

৮| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:০৮

এ আর ১৫ বলেছেন: হাসান মাহমুদের কথা শুনলে তো আপনার চামড়া জ্বলে । তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন বিবাহের সময় বিবি আয়েশা (রা: ) বয়স ১২ উপরে ছিল , এই বিষয়ে আরো অনেকের পোষ্ঠিং আছে , দেখতে চান ???

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:০৫

নরাধম বলেছেন: ফতেছাগলের অনেক আগেই আরো অনেক মেধাবী লোক এ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেসব আমার পড়া আছে, ফতেছাগল ইন্টারনেট থেকে কপি মেরেছে আর কি।

তবে এদের যুক্তিও ফেলনা না, যদিও হাদিসে যেহেতু স্পষ্ট আয়েশা (রাঃ)-র বয়স উল্লেখ আছে এবং মহানবী (সাঃ)-র সময়ে বা এমনকি বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের সময়েও ৯ বছরের মেয়েকে বিয়ে দেওয়া কমন ছিল, তাই এসব যুক্তিতে যাওয়ার প্রয়োজন দেখছিনা।

৯| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৫

আলোর পথে বিডি বলেছেন: ভাল লিখেছেন । তথ্য সমৃদ্ধ লিখা ।

জাজাক আল্লাহ খাইরান ।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:১৮

নরাধম বলেছেন: জাজাক আল্লাহ।

১০| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:২১

এ আর ১৫ বলেছেন: : ফতেছাগলের অনেক আগেই আরো অনেক মেধাবী লোক এ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেসব আমার পড়া আছে, ফতেছাগল ইন্টারনেট থেকে কপি মেরেছে আর কি।


আপনার বুঝি পড়া আছে ??? আপনি জানতেন যে বিবি আয়েশা (রা: ) বয়স বিবাহের সময়ে ১২ উপরে ছিল কিন্তু আপনার লিখে দেখে বুঝা গেছে আপনি বিশ্বাষ করেছেন বিবি আয়েশা (রা: ) বিবাহের সময়ে তার বয়স ছিল ৬ । আপনি জেনে শুনে এই কর্মটা করলেন কেন ? বরং আপনি রবীন্দ্রণাথকে না বৎসনা করবেন কেন তিনি ৯ বৎসর বয়সের মেয়েকে বিবাহ করেছিল তার পরে বলতেন আমাদের নবী (সা: ) ১২ কি ১৪ বৎসর বয়সি বিবি আয়েশা (রা: ) বিবাহ করেছিলেন , ৬ বৎসর বয়সি বিবি আয়েশা ( রা: ) কে নহে ।
আপনার লিখাই তো প্রমাণ করে আপনি মেধাবী লোকদের আলোচনার বিষয়টা জানতেন না ।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২৯

নরাধম বলেছেন: ওদের যুক্তিগুলো খুব দূর্বল, সেসব যুক্তির চেয়ে বুখারিতে সরাসরি বর্ণিত আয়েশা (রাঃ)-এর বয়স অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য।
https://www.youtube.com/watch?v=WsYk-tRp9jk

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.