নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইমাম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি: জাতির শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিস, ফকীহ এবং আল্লাহওয়ালা

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৯



প্রাককথন

ইমাম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি। সাহাবীদের সংস্পর্শ ধন্য। প্রখ্যাত তাবেয়ী। জগতের আলেমকুল শিরোমনি। 'খইরুল কুরূন' তথা, উত্তম জামানাগুলোর শ্রেষ্ঠতম ফকীহ, উম্মতের ইলমি জগতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র, সিপাহসালার। এ উম্মতের আধ্যাত্ম পথের অপ্রতিদ্বন্ধী রাহবার। সত্যপন্থী মুসলিম জাতির মাথার তাজ তিনি। জগত শ্রেষ্ঠ মহান এ মনীষীকে কতটুকু জানি আমরা? এ যুগের পথচ্যুত এক শ্রেনির মানুষ তাঁকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে উল্লাসে মেতে ওঠেন। তাঁর নামে অযাচিত অপবাদে আনন্দ খোঁজেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার আজীমুশ্বান দরবারে তাদের জন্য নিরন্তর হেদায়েতের দুআ।

আলোচ্য নিবন্ধে ইমামে আজমকে নিয়ে সামান্য আলোকপাতের প্রচেষ্টা।

বয়স ও বংশ পরিচয়

তার পূর্ণ নাম হল- আবু হানীফা আন নু’মান ইবনি সাবিত যাওতী। প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী তিনি ৮০ হিজরীতে কূফা শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫০ হিজরীতে বাগদাদ শহরে ইনতিকাল করেন।

শিক্ষা- দীক্ষা

প্রথমত- তিনি ‘কূফা’ শহরেই ‘ইলমে ক্বালাম’ শিক্ষা করেন। অতঃপর কূফার শীর্ষস্থানীয় ফিকাহ শাস্ত্রবিদ হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিকট জ্ঞান আহরণ করতে থাকেন। অতঃপর ১২০ হিজরীতে স্বীয় উ¯তাদ হযরত হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর স্থলাভিষিক্ত হন এবং কুফার ‘মাদ্রাসাতুর রায়’ এর কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন। সেই সাথে ‘ইরাক’ এর অনন্য ইমাম বলে বিবেচিত হন এবং অসাধারণ খ্যাতি লাভ করেন এবং ‘বসরাহ’, ‘মক্কা’, ‘মাদীনা’ ও ‘বাগদাদ’ এর তদানীন্তন সকল প্রসিদ্ধ ও শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কিরামের সাথে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন এবং একে অপর থেকে উপকৃত হতে থাকেন। এভাবেই ক্রমশ তার সুখ্যাতি বৃদ্ধি পেতে থাকে।

মাসআলা ইস্তিখরাজে ইমাম সাহেবের তীক্ষ্ণতা

ইমাম আজম রহমাতুল্লাহি আলাইহি যেমন তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী ও ধী- শক্তিসম্পন্ন ছিলেন তেমনি ছিলেন গভীর জ্ঞানের অধিকারী। এখানে তাঁর কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করছি, যেগুলো থেকে তাঁর জ্ঞান-গরিমা কিছুটা হলেও অনুমান করা যাবে:

তোমরা ফকীহরা হলে ডাক্তারতুল্য, আর আমরা হলাম ঔষধের দোকানদার

‘একদিন ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি কিরাত ও হাদীস বর্ননায় প্রসিদ্ধ তাবিই হযরত আমাশ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিকট উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় কোন একটি মাসআলা সম্পর্কে ইমাম সাহেবের মতামত জিজ্ঞেস করা হল। জবাবে তিনি তার মতাতমত জানালেন। হযরত আমাশ রহমাতুল্লাহি আলাইহি জিজ্ঞেস করলেন- এ দলীল তুমি কোথায় পেয়েছ? জবাবে ইমাম সাহেব বললেন যে আপনিই তো আমাদেরকে হাদীস শুনিয়েছেন, আবু সালেহ ও আবু হুরইরাহ সূত্রে আর ওয়ায়েল ও আব্দুল্লাহ ইবনি মাসঊদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর সূত্রে, আবী ইয়াস ও আবী মাসঊদ আল আনসারীর সূত্রে যে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

من دلّ على خير كان له مثل اجر عمله .

‘যে ব্যক্তি কোন নেক কাজে অন্যকে পথ দেখাবে (উদ্বুদ্ধ করবে) সে ব্যক্তি উক্ত নেক কাজটি করার সমতুল্য সাওয়াবের অধিকারী হবে’।
আপনি আরো বর্ননা করেছেন আবী সালেহ ও আবী হুরইরা সূত্রে যে- একবার জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি আমার ঘরে নামায আদায় করছিলাম এমন সময় কোন এক ব্যক্তি আমার ঘরে প্রবেশ করে, ফলে আমার অন্তরে ‘উযব’ (আতুষ্টি) সৃষ্টি হয়। রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-

لك اجران اخر السّرو اخر العلانية .

‘তুমি দু’টি সাওয়াব পাবে, অপ্রকাশ্যে আমাল করার এবং প্রকাশ্যে আমাল করার’।

এভাবে ইমাম সাহেব তারই বর্ননাকৃত আরও চারটি হাদীস শুনালেন। ইমাম আমাশ বললেন- যথেষ্ট হয়েছে, আর শুনাতে হবে না। আমি তোমাকে একশত দিনে যা শুনিয়েছি তুমি এক ঘন্টায় তা শুনিয়ে দিলে। আমার ধারনাও ছিল না যে তুমি এ হাদীসগুলোর উপর আমাল করে থাক। সত্যিই তোমরা ফকীহরা হলে ডাক্তারতুল্য, আর আমরা হলাম ঔষধের দোকানদার। আর তুমি তো উভয় দিকই হাসীল করেছ (الجواهر المضية, খ- ২, পৃ- ৪৮৪)।

ইমাম আওযায়ী বললেন, আমি আল্লাহ পাক এর দরবারে ইসতিগফার করছি, কেননা আমি প্রকাশ্য ভুলের মধ্যে ছিলাম

‘ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনি মুবারক রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- একদিন আমি সিরিয়াতে হযরত আওযায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহির নিকট এলাম। তিনি আমাকে ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন যে- কুফা শহরে যে একজন বিদআতীর আবির্ভাব ঘটেছে, কে সে? আমি (তখনকার মত কোন জবাব না দিয়ে) ঘরে ফিরে এসে ইমাম সাহেবের কিতাবগুলো ঘেটে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা বের করলাম এবং তিন দিন পর কিতাবটি হাতে নিয়ে তার নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন এটা কী কিতাব? আমি কিতাবটি তার হাতে দিলাম। তিনি কিতাবটি হাতে নিতেই এমন একটি মাসআলার প্রতি তার দৃষ্টি পড়ল যাতে আমি قال انّعمان শব্দটি চিহ্নিত করে রেখেছিলাম। দাঁড়িয়ে থেকেই তিনি আযানের পর থেকে নামাযের ইক্বমাত পর্যন্ত কিতাবটির সিংহভাগ পড়ে ফেললেন। অতঃপর কিতাবটি বন্ধ করে তিনি নামায পড়ালেন। সেই মাসজিদের তিনিই ছিলেন ইমাম এবং মুআজ্জিন। নামাযের পর আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন ‘নু’মান ইবনি সাবিত’ লোকটি কে? আমি বললাম, তিনি একজন শাইখ। ইরাকে তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি বললেন- এ লোকটি শীর্ষস্থানীয় শাইখ। তার নিকট গিয়ে আরও অধিক পরিমাণ জ্ঞান আহরণ কর। আমি বললাম ইনিই তো সেই ব্যক্তি যার নিকট যেতে আপনি বারণ করেছিলেন’ (তারীখে বাগদাদ, খ- ১৩, পৃ- ৩৩৮)।

‘অতঃপর যখন মক্কা শরীফে ইমাম আবু হানীফা’র সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটে তখন তিনি ইমাম সাহেবের সাথে সেসব মাসআলার ব্যাপারে আলোচনা করলেন। ইবনুল মুবারক তার কাছ থেকে যতটুকু লিখেছিলেন তিনি তার চেয়ে আরও বিশদ ব্যাখ্যা দিলেন। সেই মাজলিশ থেকে ফিরে ইমাম আওযায়ী, ইবনুল মুবারককে বললেন লোকটির অসাধারণ ইলম এবং জ্ঞানের গভীরতা দেখে আমার ইর্ষা হচ্ছে। আর আমি আল্লাহ পাক এর দরবারে ইসতিগফার করছি। কেননা আমি প্রকাশ্য ভুলের মধ্যে ছিলাম। তুমি তার সান্নিধ্য গ্রহণ কর। তার সম্পর্কে ইতপূর্বে যে মন্তব্য আমার কাছে পোৗছেছিল তিনি তার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ (আওযাযুল মাসালিক, খ- ১, পৃ- ৮৮- ৮৯)’।

ইমাম আওযায়ী নিশ্চুপ হয়ে গেলেন

‘ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও তার শাগরিদদেরকে যারা পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় হাফিজে হাদীস ফাযল ইবনি মূসা আস সিনানীকে জিজ্ঞাসা করা হল- 'ইমাম আবু হানীফা সম্পর্কে যারা অপবাদ গেয়ে বেড়ায় তাদের সম্পর্কে আপনার কী ধারণা?'

তিনি বললেন- 'আসল ব্যাপার হল ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদের সামনে এমন তত্ত্ব ও তথ্য পেশ করেছেন যার সবটা তারা বুঝতে সক্ষম হয়নি। আর তিনি তাদের জন্য কিছুই অবশিষ্ট রাখেননি। ফলে তারা ইমাম সাহেবের সাথে হিংসা আরম্ভ করেছেন’।

‘একদিন ‘দারুল হানাতীন’ এ ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম আওযায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা একত্রিত হয়ে ইলমী আলোচনা করছিলেন। ইমাম আওযায়ী জিজ্ঞসা করলেন- আপনারা রুকুর সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় হাত উঠান না কেন? ইমাম সাহেব বললেন- 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন প্রমান পাওয়া যায়নি বলে।'

ইমাম আওযায়ী বললেন- 'কেন, আমাদেরকে ইমাম যুহরী, সালীম থেকে হাদীস শুনিয়েছেন, তিনি তার পিতা থেকে বর্ননা করেছেন যে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায আরম্ভ করতে, রুকুতে যেতে, রুকু থেকে উঠতে হাত উঠাতেন।'

ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন- 'আমাকে হাম্মাদ ইব্রহীম থেকে, তিনি আলকামা ও আসওয়াদ থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনি মাসঊদ থেকে বর্ননা করেছেন, 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু নামায আরম্ভ করার সময় ব্যতীত আর কোনো সময় হাত উঠাতেন না।'

ইমাম আওযায়ী বললেন- 'আমি তোমাকে যুহরী, সালীম ও ইবনি উমার (রদ্বি.) এর বরাতে হাদীস শুনাচ্ছি আর তুমি শুনাচ্ছ হাম্মাদ আর ইব্রহীম থেকে।'

জবাবে ইমাম আবু হানীফা বললেন- 'আমার বর্নিত হাদীসের সনদে হাম্মাদ তোমার সনদের যুহরীর তুলনায় অধিক ফকীহ ছিলেন আর ইবনি উমার যদিও সাহাবী কিন্তু আলকামা তার চেয়ে কম জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন না। আর আসওয়াদের অনেক ফাযীলাত রয়েছে।'

অতঃপর ইমাম আওযায়ী নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। প্রসঙ্গত: একথা স্মরন রাখা প্রয়োজন যে, ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি হাদীস গ্রহণের ক্ষেত্রে বর্ননাকারীর ফকীহ হওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। এর যুক্তিগ্রাহ্য কারনও ছিল।

হাদীস শাস্ত্রে ইমাম আবু হানীফার অসাধারণ ব্যুৎপত্তি

ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফিকহ শাস্ত্রে এবং মাসআলা ইস্তিমবাতের ক্ষেত্রে অকল্পনীয় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। অনুরূপ হাদীস শাস্ত্রেও তিনি ছিলেন অনন্য শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। যেমন একটু পূর্বেই আমরা ইমাম আমাশের মন্তব্য শুনে এলাম যে- ‘তুমি উভয় দিকই হাসীল করেছ’।

বস্তুত কোন ব্যক্তি কুরআন ও হাদীসের গভীর জ্ঞান অর্জন করা ব্যতীত ফিকাহ’র ইমাম হতে পারে না। কেননা ফিকাহ শাস্ত্র কুরআন- হাদীস থেকেই উৎসারিত এই দুই বিষয়েরই মূলনীতি। সুতরাং ইমাম আবু হানীফার মত ফিকাহ শাস্ত্রে অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী সর্বজন স্বীকৃত ব্যক্তির সম্পর্কে এ কথা ধারনা করা সঙ্গত নয় যে- তিনি হাদীস শাস্ত্রে দূর্বল ছিলেন। বরং অসংখ্য প্রমান রয়েছে যে তিনি হাদীস শাস্ত্রেও অতুলনীয় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি চার হাজার শাইখ থেকে হাদীস সংগ্রহ করেছেন বলে বিভিন্ন লেখক অভিমত পেশ করেছেন (আস সুন্নাহ, পৃ- ৪১৩, উকূদুল জামান, পৃ- ৬৩, খইরতুল হিসান, পৃ- ২৩।

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনি ইউসূফ আস সালেহী ‘উকূদুল জামান গ্রন্থে দীর্ঘ ২৪ পৃষ্ঠায় ইমাম সাহেবের মাশায়েখদের একটা ফিরিস্তি পেশ করেছেন, উকূদুল জামান, পৃ- ৬৩- ৮৭)।

ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন-

‘হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু হানীফার চেয়ে অধিক জ্ঞানী আমার দৃষ্টিতে পড়েনি। সহীহ হাদীস সম্পর্কে তিনি আমার চেয়ে অধিক দুরদর্শী ছিলেন’।

ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি আরও বলেন-

‘ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি যখন দৃঢ়তার সাথে কোন মন্তব্য পেশ করতেন তখন তার এ মন্তব্যের সপক্ষে হাদীস বা আসার সংগ্রহ করার জন্য কুফা শহরের সকল মাশায়েখদের কাছে যেতাম, অনেক সময় এর সপক্ষে দু’ তিনটি হাদীস পেয়ে যেতাম। অতঃপর সেগুলো ইমাম সাহেবের কাছে পেশ করলে তিনি এর মধ্যে অনেকগুলো সম্পর্কে এ- ও বলতেন যে এই হাদীসটি সহীহ নয় অথবা অপরিচিত (সূত্রে বর্নিত)। আমি তাকে বলতাম তবে এ সম্পর্কে আপনার কী জানা রয়েছে, অথচ এ হাদীসটি তো আপনার বক্তব্যের অনুকূল। জবাবে তিনি বলতেন- আমি কুফাবাসীদের ইলম সম্পর্কে ভালভাবেই জানি’।

এ ঘটনা থেকে অনুমান করা যায় যে ইমাম সাহেব হাদীস শাস্ত্রে কী পরিমাণ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। ইমাম আবু ইউসুফ সারা শহর ঘুরে যা সংগ্রহ করতেন তার চেয়ে বেশি তার কাছে আগে থেকেই রয়েছে।

ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি কুফা শহরের উলামাদের সংগৃহীত সকল ইলম সংগ্রহ করেছিলেন। যেমন- ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহির জনৈক উস্তাদ ইয়াহইয়া ইবনি আদাম তার সহীহ গ্রন্থে বলেন-

‘ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজ শহরের সকল হাদীস সংগ্রহ করেছেন এবং তার মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শেষ জীবনের হাদীসগুলোর প্রতি তার লক্ষ্য ছিল (অর্থাৎ বিভিন্নমুখী হাদীসগুলোর মধ্যে সর্বশেষ হাদীস কোনটি ছিল)। যার দ্বারা অন্যান্যগুলো রহিত সাব্যস্ত করা সহজ হয়।

বিখ্যাত ফিকাহ শাস্ত্রবিদ এবং আবীদ হাসান ইবনি সালিহ বলেন-

‘ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি হাদীসের নাসিখ- মানসূখ নির্নয়ের ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন। কাজেই তিসি কোন হাদীসের উপর তখনই আমাল করতেন যখন সে হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সেই সাথে সাহাবায়ে কিরাম থেকেও প্রমানিত হত (কেননা পূর্বেই বলে এসেছি যে সাহাবাদের আমাল দ্বারাই প্রমানিত হয় যে হুযুরের সর্বশেষ আমাল কোনটি ছিল এবং কোনটি মানসূখ হয়ে গিয়েছে)। আর তিনি কুফাবাসী (উলামায়ে কিরামের) হাদীস ও ফিকাহ সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন। তার নিজ শহরের (উলামাদের) আমাল কঠোরভাবে অনুসরন করতেন’। ইবনি সালিহ আরও বলেন-

‘ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজেই বলতেন- 'কুরআনের মধ্যে কিছু বিষয় রয়েছে যা নাসিখ (অন্য বিষয়কে রহিতকারী), আর কিছু বিষয় রয়েছে মানসূখ। অনুরূপ হাদীসের মধ্যে কিছু নাসিখ ও কিছু মানসূখ রয়েছে।'

আর ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার শহরে যেসব হাদীস পৌঁছেছে তার মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তিরোধানের সময়কার সর্বশেষ আমাল কী ছিল সেসব তার মুখস্থ ছিল।

মোটকথা ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি কুফা শহরের উলামাদের হাসিলকৃত সকল ইলম সংগ্রহ করেছিলেন। এখানেই তিনি ক্ষন্ত হননি বরং তিনি কুফা শহর থেকে সফর করে দীর্ঘ ছয়টি বছর মক্কা- মাদীনা অবস্থান করে সেখানকার সকল শাইখদের নিকট থেকে ইলম হাসিল করেন। আর মক্কা- মাদীনা যেহেতু স্থানীয়, বহিরাগত সকল উলামা, মাশায়েখ, মুহাদ্দিস ও ফকীহদের কেন্দ্রস্থল ছিল, কাজেই এক কথায় বলা চলে যে- মক্কা- মাদীনা ছিল ইলমের মারকায। আর তার মত অসাধারণ ধী- শক্তি সম্পন্ন, কর্মঠ ও মুজতাহিদ ইমামের জন্য দীর্ঘ ছয় বছর যাবত মক্কা- মাদীনার ইলম হাসিল করা নিংসন্দেহে সাধারণ ব্যাপার নয়।

এছাড়া তিনি ৫৫ বার পবিত্র হাজ্জব্রত পালন করেছেন বলে প্রমান পাওয়া যায় (উকূদুল জামান, পৃ- ২২০)। প্রত্যেক সফরেই তিনি মক্কা- মাদীনার স্থানীয় ও বহিরাগত উলামা, মাশায়েখ ও মুহাদ্দিসিনের সাথে সাক্ষাৎ করতেন।

আল্লামা আলী আল কারী, মুহাম্মাদ ইবনি সামায়াহ’র বরাত দিয়ে বলেছেন-

‘আবু হানীফা (রহ.) তার রচিত গ্রন্থগুলোতে সত্তর হাজারের উর্দ্ধে হাদীস বর্ননা করেছেন। আরالاثار গ্রন্থটি চল্লিাশ হাজার হাদীস থেকে বাছাই করে লিখেছেন’ (আল জাওয়াহিরুল মযিয়াহ, খ- ২, পৃ- ৪৭৩)।

ইয়াহইয়া ইবনি নাসর বলেন- ‘একদিন আমি ইমাম আবু হানীফার ঘরে প্রবেশ করি যা কিতাবে ভরপুর ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এগুলো কী? তিনি বললেন- এগুলো সব হাদীসের কিতাব, এর মধ্যে সামান্য কিছুই আমি বর্ননা করেছি যেগুলো ফলপ্রদ’ (আস সুন্নাহ, পৃ- ৪১৩, উকূদু জাওয়াহিরিল মুনীফাহ, ১, ৩১)।

ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর যদিও অন্যান্য মুহাদ্দীসদের মত হাদীস শিক্ষা দেয়ার জন্য কোন মাজলীস ছিল না এবং হাদীস শাস্ত্রে কোন কিতাব সংকলণ করেননি, যেমন ইমাম মালিক (রহ.) করেছেন (মুআত্তা মালিক)। কিন্তু তার শাগরিদগণ তার বর্নিত হাদীসগুলো সংগ্রহ করে বিভিন্ন কিতাব ও মুসনাদ সংকলন করেছেন যার সংখ্যা দশের উর্দ্ধে।

তার মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ গ্রন্থগুলো হল- ইমাম আবু ইউসুফ রচিত ‘কিতাবুল আসার’, ইমাম মুহাম্মাদ রচিত ‘কিতাবুল আসার আল মারফুআহ’ ও ‘আল আসারুল মারফুআহ ওয়াল মাওকুফাহ’, মুসনাদুল হাসান ইবনি যিয়াদ আল লু- লুঈ, মুসনাদে হাম্মাদ ইবনি আবু হানীফা ইত্যাদি।

অনুরূপ আল ওয়াহাবী, আল হারেসী আল বুখারী, ইবনুল মুযাফফার, মুহাম্মাদ ইবনি জাফর আল আদল, আবু নাঈম আল ইস্পাহানী, কাযী আবু বাকর মুহাম্মাদ ইবনি আব্দুল বাকী আল আনসারী, ইবনি আবীল আউআম আস সাদী ও ইবনি খসরু আল বালাখী- ও ইমাম সাহেবের হাদীস সংগ্রহে বিভিন্ন মুসনাদ রচনা করেছেন।

অতঃপর প্রধান বিচারপতি আবুল মুআইয়্যেদ মুহাম্মাদ ইবনি মাহমূদ আল খাওয়ারিযিমী (মৃত্যু- ৬৬৫ হিজরী) উপরোক্ত মুসনাদগুলোর অধিকাংশকে একত্রিত করে জামীউল মাসনীদ নামে ফিকাহশাস্ত্রের অধ্যায়ের ধারাবাহিকতায় مع حذف معاد و علم تكرار الاسناد, মহা ‘মুসনাদ গ্রন্থ’ রচনা করেছেন। তার ভুমিকাতে তিনি বলেন-

‘আমি সিরিয়ার অনেকের মুখেই শুনেছি যারা ইমাম আবু হানীফার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা মুসনাদে শাফিই, মুআত্তা মালিক এর সাথে তুলনা করে ইমাম আবু হানীফা সম্পর্কে মšতব্য করে বলে তিনি হাদীস সম্পর্কে সল্প জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন এবং তাদের ধারনা যে ইমাম আবু হানীফা কোন মুসনাদ নেই এবং তিনি সামান্য কিছু ছাড়া হাদীস রিওয়ায়েত করেননি। কাজেই আমি দ্বীনের মর্যাদাবোধের লক্ষে ১৫ টি মুসনাদকে একত্রিত করার প্রয়াস পেলাম যা ইমাম আবু হানীফার নিকট হতে হাদীস শাস্ত্রের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কিরাম সংকলন করেছেন’। তার এ কিতাবটি আটশত পৃষ্ঠায় মুদ্রীত হয়েছে।

এছাড়াও অসংখ্য প্রমান ও ঘটনা রয়েছে যা ইমাম সাহেবের অসাধারণ জ্ঞানের এবং হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রে তদানিšতন অনন্য মর্যাদার সাক্ষ্য বহন করে। ইমাম সাহেবের জীবনী লেখা যেহেতু আমার উদ্দেশ্য নয় বরং দৃষ্টšতস্বরূপ কয়েকটি ঘটনা লিখলাম। তার সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে আগ্রহী হলে মাওলানা জাফর আহমাদ উসমানী থানভী (রহ.) রচিত ‘ইনযাউল ওয়াতান আনিল ওয়াদাই বি ইমামিয যামান’, আল্লামা সালিহী আল শাফিই (রহ.) রচিত ‘উকূদুল যামান’, আল মুওয়াফফিক আল মাক্কী রচিত ‘মানাকিবু আবী হানীফাহ’, মুহাম্মাদ যাহিদ আল কাউসারী রচিত ‘নাইবুল খতীব’, আলী আল কারী রচিত মানাকিবুল ইমাম আবু হানীফাহ দেখা যেতে পারে। বাংলা ভাষায়ও তার জীবনী সম্পর্কে বিভিন্ন বই রয়েছে।

ইমাম আবু হানীফা ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ হাফেজে হাদীস

একজন মুজতাহিদ ফকীহর জন্য অপরিহার্য হলো ন্যূনপক্ষে বিধিবিধান সংক্রান্ত হাদীস ও সুন্নাহর হাফেজ হওয়া। অন্যথায় তিনি সঠিক ফতোয়াও দিতে পারবেন না। সঠিক মাসাইল কুরআন-সুন্নাহ থেকে বের করতেও পারবেন না। ইমাম আবু হানীফাকে মুসলিম উম্মাহর শীর্ষ ব্যক্তিবর্গ সবচেয়ে বড় ফকীহ আখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি অন্তত বিধানসম্বলিত সুন্নাহর হাফেজ ছিলেন। এ কারণেই হাফেজে হাদীসগণের জীবনীমূলক গ্রন্থগুলোতে ইমাম আবু হানীফার জীবনীও উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন হাফেজ যাহাবী তার তাযকিরাতুল হুফফাজ গ্রন্থে (১/১৬৮), হাফেজ ইবনে আব্দুল হাদী তার আল মুখতাসার ফী তাবাকাতি উলামাইল হাদীস গ্রন্থে (২/৯৭),

হাফেজ ইবনে নাসেরুদ্দীন আত তিবয়ান গ্রন্থে (দ্র. আব্দুর রশীদ নুমানী, মাকানাতুল ইমাম আবী হানীফা ফিল হাদীস, পৃ. ৬০), ইমাম ও মুহাদ্দিস ইবনুল মিবরাদ হাম্বলী তার তাবাকাতুল হুফফাজ গ্রন্থে (দ্র. প্রাগুক্ত, পৃ. ৬১)

হাফেজ জালালুদ্দীন সুয়ূতী তার তাবাকাতুল হুফফাজ গ্রন্থে (পৃ. ৮০) ও আল্লামা বাদাখশী তার তারাজিমুল হুফফাজ গ্রন্থে। (দ্র. মাকানাতুল ইমাম আবী হানীফা ফিল হাদীস,পৃ. ৬২, ৬৩)

উল্লেখ্য, এসব গ্রন্থকারের কেউই হানাফী ছিলেন না। তাই এমন সন্দেহেরও কোন অবকাশ নেই যে, ভক্তির আতিশয্যে তাঁরা এমনটি করেছেন।

ইমাম আবু হানীফা ছিলেন অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ও মেধার অধিকারী। হাফেজ যাহাবী তার আল ইবার গ্রন্থে লিখেছেন, وكان من أذكياء بني آدم তিনি ছিলেন আদমসন্তানের মধ্যে বড় বড় মেধাবীদের একজন। (১/১১২)

এমন তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী মানুষ সম্পর্কে যখন হাফেজ যাহাবী বলেন, طلب الحديث وأكثر منه في سنة ماءة وبعدها একশ হিজরী ও তার পরবর্তী সময়ে তিনি হাদীস শিক্ষা করেছেন এবং অনেক হাদীস শিক্ষা করেছেন। (সিয়ার, ৬/৩৯৬) তখন তিনি কী পরিমাণ হাদীস আয়ত্ব করেছেন, তা সহজেই অনুমেয়। যাহাবী আরো লিখেছেন, وعني بطلب الآثار وارتحل في ذلك তিনি হাদীস শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন এবং এজন্য বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। (সিয়ার, ৬/৩৯২)

ইমাম আবু হানীফার সহপাঠী ছিলেন মিসআর ইবনে কিদাম। তিনি এত বড় হাদীসবিদ ছিলেন যে, শো’বা ও সুফিয়ানের মতো হাদীস সম্রাটের মধ্যে হাদীস বিষয়ে কোন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে দুজনই বলতেন, اذهبا بنا إلى الميزان مسعر আমাদেরকে (হাদীসের) মানদ- মিসআরের নিকট নিয়ে চল। (হাফেজ আবু মুহাম্মাদ রামাহুরমুযী, আল মুহাদ্দিসুল ফাসিল, পৃ. ১৩৯)

এই মিসআরই ইমাম আবু হানীফা সম্পর্কে বলেছেন,

طلبت مع أبي حنيفة الحديث فغَلَبَنا وأخذنا في الزهد فبرع علينا وطلبنا معه الفقه فجاء منه ما ترون

আবু হানীফার সঙ্গে হাদীস শিক্ষা করলাম, সে আমাদের উপর অগ্রণী হয়ে গেল। যুহদ ও দুনিয়াবিমুখতায় লাগলাম, সে আমাদের ছাড়িয়ে গেল। তার সঙ্গে ফেকাহ শিক্ষা করলাম, এতে তোমরা তো দেখতেই পাচ্ছ সে কেমন বুৎপত্তি অর্জন করেছে। (যাহাবী, মানাকিবু আবী হানীফা, পৃ. ৪৩)

এমনিভাবে ওয়াকী সম্পর্কে ইয়াহয়া ইবনে মাঈন বলেছেন,

وكان قد سمع من أبي حنيفة حديثا كثيرا

তিনি আবু হানীফা থেকে প্রচুর হাদীস শুনেছেন। (ইবনে আব্দুল বার, জামিউ বায়ানিল ইলম, ২/১০৮২)

ইবনে আব্দুল বার আল ইনতিকা গ্রন্থে লিখেছেন,

وروى حماد بن زيد عن أبي حنيفة أحاديث كثيرة

আবু হানীফা থেকে হাম্মাদ ইবনে যায়দ বিপুল সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেছেন। (পৃ. ২০১)

যাহাবী বলেছেন,

روى عنه من المحدثين والفقهاء عدة لا يحصون

তাঁর থেকে অসংখ্য মুহাদ্দিস ও ফকীহ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (মানাকিব, পৃ. ২০)

হাফেজ শামসুদ্দীন মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ আস সালেহী বলেছেন,

إن الإمام أبا حنيفة من كبار حفاظ الحديث ولولا كثرة اعتنائه بالحديث ما تهيأ له استنباط مسائل الفقه فإنه أول من استنبطه من الأدلة

ইমাম আবু হানীফা একজন শীর্ষ হাফেযে হাদীস। তিনি যদি অধিক হারে হাদীস অর্জন না করতেন, তবে তাঁর পক্ষে ফিকহের মাসাইল আবিস্কার করা সম্ভব হতো না। কুরআন-সুন্নাহ থেকে তিনিই তো প্রথম (মাসাইল) আবিস্কার করেছেন। (উকুদুল জুমান, পৃ. ৩১৯)

মুহাদ্দিস ইসমাঈল আজলূনী লিখেছেন,

فهو رضي الله عنه حافظ حجة فقيه لم يكثر في الرواية لما شدد في شروط الرواية والتحمل وشروط القبول

তিনি ছিলেন হাফেজে হাদীস, প্রামাণ্য ব্যক্তিত্ব ও ফকীহ। তবে হাদীস অর্জন ও বর্ণনার শর্তাবলি ও হাদীস গ্রহণের শর্তাবলির ক্ষেত্রে তিনি কড়াকড়ি করেছেন। ফলে তিনি অধিক হারে হাদীস বর্ণনা করেন নি। (ইকদুল জাওহারিছ ছামীন, পৃ. ৬)

কাজীর পদ প্রত্যাখান ও মৃত্যু

৭৬৩ আব্বাসীয় বংশের আল-মনসুর আবু হানিফাকে রাজ্যের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দেন কিন্তু স্বাধীনভাবে থাকার জন্য তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। তার পরীবর্তে তার ছাত্র আবু ইউসুফকে প্রধান বিচারপতির দ্বায়িত দেওয়া হয়। প্রস্তাব প্রত্যাখানের ব্যাপারে আবু ইউসুফ আল মনসুরকে ব্যাখা দেন তিনি নিজেকে এই পদের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না। আল-মনসুরের এই পদ প্রস্তাব দেওয়ার পেছেনে তার নিজস্ব কারণ ছিল, আবু হানিফা প্রস্তাব প্রত্যাখান করার পর মনসুর তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করেন। এই অভিযোগের ব্যাখ্যায় আবু হানিফা বলেন, “আমি যদি মিথ্যাবাদী হই তাহলে প্রস্তাব প্রত্যাখান করার ব্যাপারে আমার মতামত সঠিক, কারণ কিভাবে আপনি প্রধান বিচারপতির পদে একজন মিথ্যাবাদিকে বসাবেন।” এই ব্যাখার উত্তরে আল-মনসুর আবু হানিফাকে গ্রেফতার করেন ও তাকে নির্যাতন করে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। এমনকি বিচারকরা সিদ্ধান্ত নিতেন কে তার সাথে দেখা করতে পারবে।


মৃত্যু

৭৬৭ সালে আবু হানিফা কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার নয়। কেউ কেউ বলেন আবু হানিফা আল মনসুরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের চেষ্ঠা করেন এ জন্য তাকে জেলখানর ভেতর মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।[৮] এটা বলা হয়ে থাকে যে, আবু হানিফার জানাযায় অনেক লোক সমাগম হয়েছিল। ইতিহাসবিদ খাতিবের পক্ষে বলা হয় তার জন্য লোকজন মৃত্যুর ২০ দিন পর্যন্ত প্রার্থনা করেছিল। পরবর্তীতে, অনেক বছর পর বাগদাদের পাশে আধামিয়াতে আবু হানিফ মসজিদ নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয় আবু হানিফার নামে।

১৫০৮ সালে সাফাভি সম্রাজ্যের শাহ ইসমাইল আবু হানিফা ও আব্দুল কাদের জিলানীর মাজার এবং অন্যান্য সুন্নি নিদর্শন ধ্বংস করে দেন।[৯] ১৫৩৩ সালে উসমানীয়রা পুনরায় ইরাক দখল করে ও মাজারসহ অন্যান্য সুন্নি নিদর্শন পুনর্নির্মাণ করে।

আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে নিয়ে আমার অন্য পোস্ট-

জ্ঞানের প্রজ্জ্বলিত মশালকে নিভিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা রুখে দিন

ইমাম আযম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির মহান জীবন নির্ভর আলোচনায় অসংখ্য কিতাব রচিত হয়েছে বিশ্বব্যাপী নানা ভাষায়। আলহামদুলিল্লাহ, বাংলা ভাষায়ও রয়েছে তাঁকে নিবেদিত অনেক প্রকাশনা। তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্যসহ হাদিস শাস্ত্রে তিনি কতখানি গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন তার প্রমান পাবেন নিচের সুলিখিত বইটিতে। বিদগ্ধ ব্লগার এবং পাঠক বন্ধুদের প্রতি আন্তরিক আহবান, আসুন, তাঁর জীবনালেখ্য অধ্যয়ন করে মহান এই জ্ঞানতাপসকে জানার চেষ্টা করি, বিশ্ববাসীর কল্যানের জন্য জ্ঞানের পথে-আলোর পথে তাঁর নিরন্তর এবং আমৃত্যু সাধনা উপলব্ধি করে অপপ্রচারে লিপ্ত ভ্রান্ত শ্রেনির মুখোশ উম্মোচনে সজাগ ভূমিকা রাখি-

হাদিস চর্চায় ইমাম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির অবদান

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: আবূ হানীফা সম্পর্কে জানলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৯

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ।

২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪০

সনেট কবি বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১০

নতুন নকিব বলেছেন:



জাজাকুমুল্লাহু তাআ'লা খাইর।

আপনার জন্যও কল্যানের দুআ।

৩| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৪

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: ইমাম সাহেব আমার পছন্দের ব্যক্তি

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১২

নতুন নকিব বলেছেন:



আলহামদুলিল্লাহ। কৃতজ্ঞতা। আপনার পছন্দ অতি উন্নত।

৪| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪১

সৈয়দ ইসলাম বলেছেন:
খুবই বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা।
ধন্যবাদ, মাহান ব্যক্তির জীবনী তুলে ধরার জন্য।
যেন এই আয়োজন ধারাবাহিক হয়; সেটাই কামনা।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১২

নতুন নকিব বলেছেন:



শুকরিয়া। আগমনে কৃতজ্ঞতা অশেষ।

ইনশা-আল্লাহ, চেষ্টা থাকবে।

৫| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫৮

মাহিরাহি বলেছেন: আমরা যে হানাফী মাযহাব বলে থাকি, তিনি কি সেই ইমাম হানাফী রাহতুল্লাহি আলাইহি?

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১৩

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, ইনিই সেই মহান ব্যক্তিত্ব।

কৃতজ্ঞতা জানবেন।

৬| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১৮

প্যালাগোলাছ বলেছেন: ইমাম আবু হানিফা রহ সম্পর্কে সুন্দর একটি লেখা পড়লাম । ধন্যবাদ আপনাকে।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১৪

নতুন নকিব বলেছেন:



জাজাকুমুল্লাহু তাআ'লা খাইর।

৭| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অসাধারন জীবনী
যেন অধুরা মনে হল :P
উইুক থেকে যুক্ত করলাম কিছু অংশ

কাজীর পদ প্রত্যাখান ও মৃত্যু
৭৬৩ আব্বাসীয় বংশের আল-মনসুর আবু হানিফাকে রাজ্যের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দেন কিন্তু স্বাধীনভাবে থাকার জন্য তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। তার পরীবর্তে তার ছাত্র আবু ইউসুফকে প্রধান বিচারপতির দ্বায়িত দেওয়া হয়। প্রস্তাব প্রত্যাখানের ব্যাপারে আবু ইউসুফ আল মনসুরকে ব্যাখা দেন তিনি নিজেকে এই পদের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না। আল-মনসুরের এই পদ প্রস্তাব দেওয়ার পেছেনে তার নিজস্ব কারণ ছিল, আবু হানিফা প্রস্তাব প্রত্যাখান করার পর মনসুর তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করেন। এই অভিযোগের ব্যাখ্যায় আবু হানিফা বলেন, “আমি যদি মিথ্যাবাদী হই তাহলে প্রস্তাব প্রত্যাখান করার ব্যাপারে আমার মতামত সঠিক, কারণ কিভাবে আপনি প্রধান বিচারপতির পদে একজন মিথ্যাবাদিকে বসাবেন।” এই ব্যাখার উত্তরে আল-মনসুর আবু হানিফাকে গ্রেফতার করেন ও তাকে নির্যাতন করে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। এমনকি বিচারকরা সিদ্ধান্ত নিতেন কে তার সাথে দেখা করতে পারবে।


মৃত্যু
৭৬৭ সালে আবু হানিফা কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার নয়। কেউ কেউ বলেন আবু হানিফা আল মনসুরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের চেষ্ঠা করেন এ জন্য তাকে জেলখানর ভেতর মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।[৮] এটা বলা হয়ে থাকে যে, আবু হানিফার জানাযায় অনেক লোক সমাগম হয়েছিল। ইতিহাসবিদ খাতিবের পক্ষে বলা হয় তার জন্য লোকজন মৃত্যুর ২০ দিন পর্যন্ত প্রার্থনা করেছিল। পরবর্তীতে, অনেক বছর পর বাগদাদের পাশে আধামিয়াতে আবু হানিফ মসজিদ নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয় আবু হানিফার নামে।

১৫০৮ সালে সাফাভি সম্রাজ্যের শাহ ইসমাইল আবু হানিফা ও আব্দুল কাদের জিলানীর মাজার এবং অন্যান্য সুন্নি নিদর্শন ধ্বংস করে দেন।[৯] ১৫৩৩ সালে উসমানীয়রা পুনরায় ইরাক দখল করে ও মাজারসহ অন্যান্য সুন্নি নিদর্শন পুনর্নির্মাণ করে।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১৭

নতুন নকিব বলেছেন:



কাজীর পদ প্রত্যাখান ও মৃত্যু
৭৬৩ আব্বাসীয় বংশের আল-মনসুর আবু হানিফাকে রাজ্যের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দেন কিন্তু স্বাধীনভাবে থাকার জন্য তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। তার পরীবর্তে তার ছাত্র আবু ইউসুফকে প্রধান বিচারপতির দ্বায়িত দেওয়া হয়। প্রস্তাব প্রত্যাখানের ব্যাপারে আবু ইউসুফ আল মনসুরকে ব্যাখা দেন তিনি নিজেকে এই পদের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না। আল-মনসুরের এই পদ প্রস্তাব দেওয়ার পেছেনে তার নিজস্ব কারণ ছিল, আবু হানিফা প্রস্তাব প্রত্যাখান করার পর মনসুর তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করেন। এই অভিযোগের ব্যাখ্যায় আবু হানিফা বলেন, “আমি যদি মিথ্যাবাদী হই তাহলে প্রস্তাব প্রত্যাখান করার ব্যাপারে আমার মতামত সঠিক, কারণ কিভাবে আপনি প্রধান বিচারপতির পদে একজন মিথ্যাবাদিকে বসাবেন।” এই ব্যাখার উত্তরে আল-মনসুর আবু হানিফাকে গ্রেফতার করেন ও তাকে নির্যাতন করে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। এমনকি বিচারকরা সিদ্ধান্ত নিতেন কে তার সাথে দেখা করতে পারবে।


মৃত্যু
৭৬৭ সালে আবু হানিফা কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার নয়। কেউ কেউ বলেন আবু হানিফা আল মনসুরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের চেষ্ঠা করেন এ জন্য তাকে জেলখানর ভেতর মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।[৮] এটা বলা হয়ে থাকে যে, আবু হানিফার জানাযায় অনেক লোক সমাগম হয়েছিল। ইতিহাসবিদ খাতিবের পক্ষে বলা হয় তার জন্য লোকজন মৃত্যুর ২০ দিন পর্যন্ত প্রার্থনা করেছিল। পরবর্তীতে, অনেক বছর পর বাগদাদের পাশে আধামিয়াতে আবু হানিফ মসজিদ নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয় আবু হানিফার নামে।

১৫০৮ সালে সাফাভি সম্রাজ্যের শাহ ইসমাইল আবু হানিফা ও আব্দুল কাদের জিলানীর মাজার এবং অন্যান্য সুন্নি নিদর্শন ধ্বংস করে দেন।[৯] ১৫৩৩ সালে উসমানীয়রা পুনরায় ইরাক দখল করে ও মাজারসহ অন্যান্য সুন্নি নিদর্শন পুনর্নির্মাণ করে।

--- আপনার তুলে দেয়া অংশটুকু পোস্টে যুক্ত করে দিলাম। কৃত্জ্ঞতা অন্তহীন।

অনেক ভাল থাকবেন।

৮| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০৮

নীল আকাশ বলেছেন: মাহিরাহি বলেছেন: আমরা যে হানাফী মাযহাব বলে থাকি, তিনি কি সেই ইমাম হানাফী রাহতুল্লাহি আলাইহি?
জী, আপনি ঠিক বলেছেন।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১৮

নতুন নকিব বলেছেন:



জজাকুমুল্লাহ। আমার হয়ে উত্তরটি দিয়ে যাওয়ায় শুভেচ্ছা। অনেক ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.