নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
প্রিয় নবীজীর প্রিয় প্রসঙ্গ; তাঁর ক্ষমাশীলতার কিছু অনুপম এবং অতুলনীয় দৃষ্টান্তঃ
বাংলায় মানুষ আর আরবিতে বলা হয় ইনসান। আরবি এই ইনসান শব্দটির মূল ধাতু 'নাসইয়ুন'। নূন, সীন, ইয়া -এই তিন অক্ষরে গঠিত শব্দটির অর্থ- ভুলে যাওয়া, বিস্মৃত হওয়া বা ভ্রমে পতিত হওয়া। এটা আশ্চর্য্য বিষয় যে, মানুষ শব্দটির ভেতরেই লুকিয়ে রয়েছে ভুল কথাটি। এ থেকেই অনুমান করা সহজ যে, মানুষ মাত্রেরই ভুল হতে পারে। ছোট বড় সকলেরই ভুল হতে পারে। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় ভুল হয়ে যায়। তবে কারো ভুল বা অপরাধ হয়ে গেলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া অনেক বড় একটি গুণ। মহত গুণ। এটা মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নিজের অন্যতম একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার এ গুণটি যেসব মানুষ ধারণ করেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন। তাদের ভালোবাসেন। বলা বাহুল্য, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন এ গুণের সর্বাধিক অধিকারী। তাঁর গোটা জীবনই ভরপুর অসংখ্য ক্ষমার ঘটনায়।
বস্তুতঃ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন ছিল স্নিগ্ধ, আলোকিত এবং সুন্দর। চন্দ্রকিরণ থেকেও জ্যোতির্ময় আভায় উদ্ভাসিত ছিলেন তিনি। সূর্য থেকেও উজ্জ্বল-প্রজ্জ্বল-দ্বীপ্তিময়। ফুল থেকেও সুরভিত-সুশোভিত-বিমোহিত। সুন্দর মানবীয় সকল গুণের তিনি ছিলেন আধার। উত্তম আদর্শ বলতে যা বোঝায়, সেসবে আলোকিত, সুসজ্জিত এবং পরিপূর্ণ ছিল তাঁর অনন্য জীবন! এজন্য পবিত্র কুরআনে মানবজীবনের 'উসওয়াতুন হাসানাহ' বা 'সর্বোত্তম আদর্শ' বলে অভিহিত করা হয়েছে তাকে। ইরশাদ হয়েছে-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
'যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।' -সূরাহ আল আহযাব, আয়াত-২১
Ye have indeed in the Messenger of Allah a beautiful pattern (of conduct) for any one whose hope is in Allah and the Final Day, and who engages much in the Praise of Allah
প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অতুলনীয় ধৈর্য্য-স্থৈর্য্যের প্রতিভূ ছিলেন তা নিম্নোক্ত আয়াত থেকে অনুমান করা যায়। ইরশাদ হয়েছে-
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللّهِ لِنتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لاَنفَضُّواْ مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللّهِ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ
'আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন, আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন।' -সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত-১৫৯
It is part of the Mercy of Allah that thou dost deal gently with them Wert thou severe or harsh-hearted, they would have broken away from about thee: so pass over (Their faults), and ask for ((Allah)'s) forgiveness for them; and consult them in affairs (of moment). Then, when thou hast Taken a decision put thy trust in Allah. For Allah loves those who put their trust (in Him).
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মু হাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টিকুলের জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন। কুরআনে হাকিমে ইরশাদ হয়েছে,
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
'আমি তো আপনাকে সৃষ্টিকুলের প্রতি শুধু রহমত রূপেই প্রেরণ করেছি।' সূরাহ আল আমবিয়া, আয়াত-১
আসুন এবার, প্রিয় নবীজীর জীবন থেকে নেয়া ক্ষমাশীলতার অসাধারণ কিছু ঘটনা শুনি-
ঘটনা এক. লাবীদ ইবনে আ‘সামকে ক্ষমা করে দেয়া
তৎকালীন সময়ে মদিনার ইহুদি সম্প্রদায়ের কিছু লোক প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুব কষ্ট দিত। এরা ছিল সাংঘাতিক দুষ্ট প্রকৃতির। এরা সবসময় সত্য প্রচারে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। ভালো কাজে বাধা দিয়েছে। ভালো মানুষদের রক্ত ঝরিয়েছে। এদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকতো না একদমই। স্বভাবসুলভভাবে আমাদের প্রিয় নবীজীর ক্ষতি করার চেষ্টা চালায় এরা। সামনাসামনি এসে কিছু করার সাহস তাদের ছিল না। তো সে কারণেই তারা ফন্দি করলো যাদু দিয়ে নবীজীর ক্ষতি করবে। এ কাজে নিয়োগ করা হলো এক লোককে। সে জাদু করে বসল নবীজীকে। নবীজী তখন অনেক কষ্ট পেলেন। জাদু বলে কথা। বুঝতে পারছিলেন না কী হয়েছে। কেন এত কষ্ট হচ্ছে। কেন এমন এলোমেলো লাগছে। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী ছিলেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা। তাই আল্লাহ তাআ'লা স্বপ্নের মাধ্যমে নবীজীকে সব জানিয়ে দিলেন।
কোনো এক দিনের ঘটনা। প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমুচ্ছিলেন। স্বপ্নে দেখলেন, দু'জন লোক এলেন তাঁর কাছে। একজন বসলেন মাথার কাছে। আরেকজন পায়ের কাছে। এরপর তারা বলতে শুরু করলেন-
প্রথম ব্যক্তি: এই ব্যক্তির কী হয়েছে?
দ্বিতীয় ব্যক্তি: তাঁকে জাদু করা হয়েছে।
প্রথম ব্যক্তি: কে জাদু করেছে?
দ্বিতীয় ব্যক্তি: বনী রুযাইকের লাবীদ ইবনে আ‘সাম নামে এক লোক।
প্রথম ব্যক্তি: কোথায় জাদু করেছে?
দ্বিতীয় ব্যক্তি: মাথা থেকে পড়ে যাওয়া চুল ও চিরুনির মাঝে।
প্রথম ব্যক্তি: এখন সেটা কোথায় আছে?
দ্বিতীয় ব্যক্তি: যারওয়ান কূপে।
প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পরে স্বপ্নে দেখা সেই স্থানে গেলেন। কূপটি দেখেই চিনতে পারলেন- এটাই স্বপ্নে আমাকে দেখানো হয়েছিল। কুপের নিচ থেকে বের করে আনা হল সেই চুল-চিরুনি। আর চুল-চিরুনির গিঁটগুলো খুলতেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন।
মূল আরবিসহ হাদিসখানা তুলে ধরছি-
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى، أَخْبَرَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ سَحَرَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ مِنْ بَنِي زُرَيْقٍ يُقَالُ لَهُ لَبِيدُ بْنُ الأَعْصَمِ، حَتَّى كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهُ يَفْعَلُ الشَّىْءَ وَمَا فَعَلَهُ، حَتَّى إِذَا كَانَ ذَاتَ يَوْمٍ أَوْ ذَاتَ لَيْلَةٍ وَهْوَ عِنْدِي لَكِنَّهُ دَعَا وَدَعَا ثُمَّ قَالَ " يَا عَائِشَةُ، أَشَعَرْتِ أَنَّ اللَّهَ أَفْتَانِي فِيمَا اسْتَفْتَيْتُهُ فِيهِ، أَتَانِي رَجُلاَنِ فَقَعَدَ أَحَدُهُمَا عِنْدَ رَأْسِي، وَالآخَرُ عِنْدَ رِجْلَىَّ، فَقَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ مَا وَجَعُ الرَّجُلِ فَقَالَ مَطْبُوبٌ. قَالَ مَنْ طَبَّهُ قَالَ لَبِيدُ بْنُ الأَعْصَمِ. قَالَ فِي أَىِّ شَىْءٍ قَالَ فِي مُشْطٍ وَمُشَاطَةٍ، وَجُفِّ طَلْعِ نَخْلَةٍ ذَكَرٍ. قَالَ وَأَيْنَ هُوَ قَالَ فِي بِئْرِ ذَرْوَانَ ". فَأَتَاهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي نَاسٍ مِنْ أَصْحَابِهِ فَجَاءَ فَقَالَ " يَا عَائِشَةُ كَأَنَّ مَاءَهَا نُقَاعَةُ الْحِنَّاءِ، أَوْ كَأَنَّ رُءُوسَ نَخْلِهَا رُءُوسُ الشَّيَاطِينِ ". قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَلاَ أَسْتَخْرِجُهُ قَالَ " قَدْ عَافَانِي اللَّهُ، فَكَرِهْتُ أَنْ أُثَوِّرَ عَلَى النَّاسِ فِيهِ شَرًّا ". فَأَمَرَ بِهَا فَدُفِنَتْ. تَابَعَهُ أَبُو أُسَامَةَ وَأَبُو ضَمْرَةَ وَابْنُ أَبِي الزِّنَادِ عَنْ هِشَامٍ. وَقَالَ اللَّيْثُ وَابْنُ عُيَيْنَةَ عَنْ هِشَامٍ فِي مُشْطٍ وَمُشَاقَةٍ. يُقَالُ الْمُشَاطَةُ مَا يَخْرُجُ مِنَ الشَّعَرِ إِذَا مُشِطَ، وَالْمُشَاقَةُ مِنْ مُشَاقَةِ الْكَتَّانِ. -
A man called Labid bin al-A'sam from the tribe of Bani Zaraiq worked magic on Allah's Messenger (ﷺ) till Allah's Messenger (ﷺ) started imagining that he had done a thing that he had not really done. One day or one night he was with us, he invoked Allah and invoked for a long period, and then said, "O `Aisha! Do you know that Allah has instructed me concerning the matter I have asked him about? Two men came to me and one of them sat near my head and the other near my feet. One of them said to his companion, "What is the disease of this man?" The other replied, "He is under the effect of magic.' The first one asked, 'Who has worked the magic on him?' The other replied, "Labid bin Al-A'sam.' The first one asked, 'What material did he use?' The other replied, 'A comb and the hairs stuck to it and the skin of pollen of a male date palm.' The first one asked, 'Where is that?' The other replied, '(That is) in the well of Dharwan;' " So Allah's Messenger (ﷺ) along with some of his companions went there and came back saying, "O `Aisha, the color of its water is like the infusion of Henna leaves. The tops of the date-palm trees near it are like the heads of the devils." I asked. "O Allah's Messenger (ﷺ)? Why did you not show it (to the people)?" He said, "Since Allah cured me, I disliked to let evil spread among the people." Then he ordered that the well be filled up with earth. -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৬৩
বর্ণিত যাদুর ঘটনায় প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস যাবত কষ্ট করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি যখন সুস্থ হলেন তখন দুষ্ট ইহুদি লাবীদ ইবনে আ‘সামকে চেনার পরেও তাকে কিছু বললেন না। বরং ক্ষমা করে দিলেন। কতই না উদার আর মহান ছিলেন প্রিয় নবীজী! যারা তাঁকে কষ্ট দিত, তাদের তিনি ক্ষমা করতেন। শত্রু মিত্র নির্বিশেষে সকলের প্রতি তাঁর ক্ষমার হাত ছিল সুপ্রসারিত। কেউ তাঁর কাছে এসে কষ্ট পাবে- এমনটা ভাবা যায় না।
ঘটনা দুই. তায়েফের নির্মম নির্যাতন সহ্য করেও তাদের জন্য বদ দোআ পর্যন্ত করলেন নাঃ
নবীজীর অনন্য ক্ষমাশীলতার আরেকটি ঘটনা। ঘটনাটি অনেক কষ্টের, অনেক বেদনার, অনেক শোক এবং দুঃখের। স্মরণ করলেই চোখে পানি এসে যায়। ভেবে অবাক হতে হয় যে, নবীজী আমাদের জন্য কত কষ্ট করেছেন! কত যন্ত্রণা সহ্য করেছেন! কত অত্যাচার-নির্যাতন নিরবে চোখের অশ্রু ফেলে হজম করেছেন!
তখন নবীজী ছিলেন মক্কায়। মানুষদের আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিতেন। ভালো হতে বলতেন। আলোর দিকে ডাকতেন। কেউ তার কথা শুনত, কেউ শুনত না। কেউ বুঝত, কেউ বুঝত না। কেউ আবার বুঝে-শুনেও না বোঝার ভান করতো। কেউ কেউ আবার নবীজীকে কষ্ট দিত। খারাপ খারাপ কথা বলত। তবুও আমাদের নবীজী তাদের কিছু বলতেন না। নীরবে সব সহ্য করতেন।
এই বিপদে নবীজীর চাচা আবু তালেব পাশে ছিলেন। তিনি মক্কার গুণী মানুষ। সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে। মান্য করে। তাই ভাতিজাকে কেউ কষ্ট দিতে এলে বাধা দিতেন। তিনি সামনে এসে দাঁড়ালে কেউ আর কিছু বলার সাহস পেত না। একদিন তার ছায়াও উঠে গেল। পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন তিনি। সাথে সাথে কাফেরদের অত্যাচারও বেড়ে গেল। এভাবে আর কয়দিন থাকা যায়। মক্কাবাসীরা সত্য কথা শুনতে চায় না। ন্যায়ের পথে চলতে চায় না। তাই ভাবলেন, অন্য কোথাও যাই। সেখানকার মানুষদের আল্লাহর পথে ডাকি। তাই তায়েফ গেলেন। মনে অনেক স্বপ্ন। তারা হয়ত শুনবে আল্লাহর কথা। সত্যের বাণী। অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে আসবে। সত্যের পথে চলবে। তিনি তায়েফের সাকীফ গোত্রে গেলেন। প্রথমে কথা বললেন আবদে ইয়ালীলসহ আরো কয়েকজন নেতৃস্থানীয় লোকের সাথে। কিন্তু তাদের কপাল ছিল মন্দ। আলোর ডাক পেয়েও ডুবে রইল অন্ধকারে। নবীজীর কথা শুনল না। নবীজীকে নিয়ে বিদ্রূপ করা শুরু করল। দুষ্টদের লেলিয়ে দিল নবীজীর পিছে। তারা খুব কষ্ট দিল নবীজীকে। পাথর মারল। ইঁট ছুড়ল, গালি দিল। নবীজীর রক্ত ঝরল। নবীজী অনেক কষ্ট পেলেন। ভিন্ন দেশে ভিন্ন পরিবেশে অপরিচিত মানুষের এমন আচরণ!
নবীজী ফিরে এলেন তায়েফ থেকে। রক্তাক্ত দেহে জখমের কষ্ট। মনে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। তিনি তো তাদের কল্যাণের জন্যই তাদের কাছে গিয়েছেন। তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডেকেছেন, ভালো পথে ডেকেছেন। কী অন্যায় ছিল তাঁর, যার কারণে তারা তাঁকে কষ্ট দিল, রক্ত ঝরালো?
নবীজী ঐ এলাকা থেকে দূরে এসে বিশ্রামের জন্য একটু বসলেন। হঠাৎ দেখলেন, নীল আকাশে একটি মেঘ কোমলভাবে নবীজীকে ছায়া দিচ্ছে। তপ্তরোদে শীতলতার স্পর্শ। প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। নবীজী চোখ তুলে তাকালেন উপরে। দেখেন মেঘ থেকে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম ডেকে বলছেন- জিবরীল বললেন-
إِنّ اللهَ عَزّ وَجَلّ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ، وَمَا رَدّوا عَلَيْكَ، وَقَدْ بَعَثَ إِلَيْكَ مَلَكَ الْجِبَالِ لِتَأْمُرَهُ بِمَا شِئْتَ فِيهِمْ، قَالَ: فَنَادَانِي مَلَكُ الْجِبَالِ وَسَلّمَ عَلَيّ، ثُمّ قَالَ: يَا مُحَمّدُ، إِنّ اللهَ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ، وَأَنَا مَلَكُ الْجِبَالِ وَقَدْ بَعَثَنِي رَبّكَ إِلَيْكَ لِتَأْمُرَنِي بِأَمْرِكَ، فَمَا شِئْتَ، إِنْ شِئْتَ أَنْ أُطْبِقَ عَلَيْهِمُ الْأَخْشَبَيْنِ
আপনার কওম আপনার উদ্দেশে যা বলেছে এবং আপনার সাথে যে আচরণ করেছে আল্লাহ তা দেখেছেন। আপনার আদেশ পালনে পাহাড়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরিশতাকে পাঠিয়েছেন। তখন পাহাড়ের ফিরিশতা আমাকে সম্বোধন করে সালাম দিল এবং বলল, আমি পাহাড়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরিশতা। হে মুহাম্মাদ! আপনার কওমের বক্তব্য আল্লাহ শুনেছেন। আমাকে পাঠিয়েছেন আপনার আদেশ পালন করতে। আপনি আমাকে কী আদেশ করবেন করুন। আপনি যদি আদেশ করেন তাহলে আমি দুই পাহাড়ের মাঝে এদেরকে পিষে ফেলব।
কিন্তু দয়ার সাগর নবীজী জবাব দিলেন-
بَلْ أَرْجُو أَنْ يُخْرِجَ اللهُ مِنْ أَصْلَابِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ وَحْدَهُ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا.
(আমি এটা চাই না,) বরং আমি আশা রাখি, আল্লাহ তাআলা এদের বংশধরদের মাঝে এমন মানুষ বের করবেন, যারা এক আল্লাহ্র ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭৯৫; সহীহ বুখারী, হাদীস ৩২৩১
কত সুন্দর উত্তর! কত মমতাভরা মন! কত উজ্জ্বল আশার প্রদীপ! উম্মতের জন্য কত দরদ নবীজীর। যারা তাঁকে কষ্ট দিল তাদের জন্য কত দরদমাখা উত্তর- এরা ধ্বংস হয়ে গেলে তো ভবিষ্যত বংশধরের কেউ আল্লাহর ইবাদত করতে পারবে না। তারা আমায় কষ্ট দিয়েছে; তবুও বেঁচে থাকুক। হয়ত তাদের বংশধর, পরবর্তী প্রজন্ম ঈমান আনবে।
তিনি উত্তম চরিত্রের শ্রেষ্ঠতম নমুনাঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর রাসূলকে উত্তম চরিত্রের সর্বোচ্চ চূড়ায় অধিষ্ঠিত করেছেন। সকল দিক থেকে তাকে করেছেন শ্রেষ্ঠ। তার নান্দনিক চরিত্রমাধুরি দেখে কত মানুষই না ইসলামে দীক্ষিত হয়েছে তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। সুন্দর চরিত্রের এমন কোন দিক নেই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিত্বে পূর্ণতা পায়নি। পৃথিবীতে তিনিই একমাত্র ও অদ্বিতীয় ব্যক্তি যাকে ঘিরে সুশোভিত হয়েছে সকল প্রকার নান্দনিক গুণাবলি। দান, বদান্যতা, ভদ্রতা, ক্ষমা, মহানুভবতা, ধৈর্য, সহনশীলতা, নম্রতা, সবর, বন্ধুত্বসুলভ আচরণ, বিনয়, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া-করুণা, অনুগ্রহ, সাহসিকতা, বীরত্বসহ সকল দিক থেকে তিনি ছিলেন পরিপূর্ণতার অনন্য দৃষ্টান্ত।
সীরাত পাঠকারী ব্যক্তিমাত্রই লক্ষ্য করবেন যে, সকল অবস্থায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের ধারক, বাহক। দলে দলে মানুষের ইসলাম গ্রহণের পশ্চাৎগত কারণ হল, প্রথমত আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ফজল ও করম, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চরিত্র মাধুর্যের আকর্ষণ। কত মানুষ যে তার চরিত্র দেখে ইসলাম গ্রহণ করেছেন তার হিসাব মেলানো দুষ্কর বৈকি।
ঘটনা তিন. সুমামা বিন উসালের ইসলাম গ্রহণ পরবর্তী সংক্ষিপ্ত বক্তব্যঃ
দেখুন, সুমামা বিন উসাল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ক্ষমার চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ইসলাম গ্রহণ করে তিনি যে বক্তব্য দিলেন তা ছিল বেশ চমকপ্রদ। তিনি ইসলাম কবুল করার পরপরই বলেন-
‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ! ভূ-পৃষ্ঠে আপনার চেহারার চেয়ে অপছন্দনীয় চেহারা আমার কাছে অন্য আরেকটি ছিল না। আর এখন আপনার চেহারা আমার কাছে সমধিক প্রিয়। আপনার ধর্মের চেয়ে অপছন্দনীয় ধর্ম আমার নজরে ছিল না। আর এখন আপনার ধর্মই আমার কাছে সকল ধর্মের চেয়ে প্রিয়তম। ভূ-পৃষ্ঠে আপনার দেশ ছিল আমার কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত। আর এখন সকল দেশের চেয়ে আপনার দেশ আমার কাছে অধিক প্রিয়।’ -সহীহ বুখারী হাদিস নং-৪৩৭২, সহীহ মুসলিম হাদিস নং-১৭৬৪
ঘটনা চার. যে বেদুইন প্রসাব করেছিল মসজিদে নববীর ভেতরেঃ
শুনুন সেই বেদুইনের বক্তব্য, যে কি না মসজিদে নববীতে প্রস্রাব করছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ক্ষমায় মুগ্ধ হয়ে সে বলল, ‘হে আল্লাহ! আমাকে ও মুহাম্মাদকে অনুগ্রহ করুন, আমাদের ব্যতীত অন্য কারোর প্রতি আপনি অনুগ্রহ করবেন না।’ তার এ বক্তব্য শুনেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোন ধমক দিলেন না, কটু কথা বললেন না। একজন স্নেহময়ী কল্যাণকামী শিক্ষক হিসেবে তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি ব্যাপক-বিস্তৃত বিষয়কে সংকীর্ণ করে দিলে।’ -সহীহ বুখারী হাদিস নং-৬০১০
অর্থাৎ আল্লাহ পাকের রহমত হল ব্যাপক-বিস্তৃত। যা সকল মানুষ তো বটেই, সকল সৃষ্টি জীবের উপর বর্ষিত হয়। আর তুমি প্রার্থনায় তা শুধু আমার ও তোমার মধ্যে সীমিত করে দিলে।
ঘটনা পাঁচ. মুআবিয়া ইবনুল হাকামের উদ্ধৃতিঃ
মুআবিয়া ইবনুল হাকামের বিষয়টি দেখুন। তাকে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বে-নজীর ভালবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। মুআবিয়া নিজেই বলেন, ‘আমার পিতা-মাতা তাঁর জন্য উৎসর্গ হোক, আমি শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে তাঁর মত শিক্ষক কখনো দেখিনি। আল্লাহর কসম! (আমি অন্যায় করা সত্ত্বেও) তিনি আমাকে ধমক দিলেন না, প্রহার করলেন না, গালি দিলেন না।’ -সহীহ মুসলিম হাদিস নং-৫৩৭
ঘটনা ছয়. তিনি এমনভাবেই দান করেন যে, দানপ্রাপ্ত ব্যক্তি জীবনে কখনো দারিদ্রতাকে ভয় করবে নাঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বকরির বিশাল এক পাল দান করে দিলেন। সে তার সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো। কারণ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে দান করেন যে, দানপ্রাপ্ত ব্যক্তি জীবনে কখনো দারিদ্রতাকে ভয় করবে না।’ -সহীহ মুসলিম হাদিস নং-২৩১২
ঘটনা সাত. সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার ঘটনাঃ
সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার প্রতি তাকিয়ে দেখুন, সে ছিল কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের শীর্ষ স্থানীয় নেতা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এক’শ বকরী দান করলেন। এরপর আবার এক’শ বকরী দিলেন। এরপরে আবারো এক’শ। তখন সাফওয়ান বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ আমাকে যা দিলেন কেউ আমাকে এত পরিমাণ কখনো দান করেনি। তিনি ছিলেন আমার কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত। তিনি আমাকে দান করতেই থাকলেন। ফলে তিনি আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হলেন।’ সাফওয়ানের ইসলাম গ্রহণের কারণ ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই বদান্যতা। -সহীহ মুসলিম হাদিস নং-২৩১৩
ঘটনা আট. সেই মুশরিক ব্যক্তি যিনি তরবারি উত্তোলন করেছিলেন....
আরেকজন মুশরিক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার জন্য তরবারি উত্তোলন করেছিল। কিন্তু হত্যা করতে পারেনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ক্ষমা করে দিলেন। -সহীহ বুখারী হাদিস নং-২৯১০, সহীহ মুসলিম হাদিস নং-৮৪৩
পরবর্তীতে সে তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেল, ইসলাম গ্রহণ করার ঘোষণা দিল। তার দাওয়াতে তার গোত্রের বহু লোক ইসলামে প্রবেশ করল। সূত্র-ফাতহুল বারী
ঘটনা নয়. ইহুদী পণ্ডিত আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের প্রতি লক্ষ করুনঃ
বিশিষ্ট ইহুদী পণ্ডিত আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের প্রতি লক্ষ করুন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করলে তিনি তার সাথে দেখা করলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি তাকে দেখার জন্য লোকদের সাথে এলাম। যখন আমি তার চেহারার দিকে তাকালাম, আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল, এটা কোন মিথ্যাবাদীর চেহারা হতে পারে না। প্রথম যে কথাটি আমি তার মুখ থেকে শুনলাম তা হল, ‘হে মানবমণ্ডলী! সালামের প্রচলন করো, মানুষকে খাবার দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখো, আর রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে
থাকে তখন সালাত আদায় কর। তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে ।’ -জামে' তিরমীজি হাদিস নং-২৫৮৫, ইবনে মাজা হাদিস নং-৩২৫১
ঘটনা দশ. ইহুদী পণ্ডিত যায়েদ ইবনে সাইয়াঃ
যায়েদ ইবনে সাইয়া নামক এক ইহুদী পণ্ডিতের ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। সে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরীক্ষা করার জন্য এল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ধৈর্য্য পরীক্ষা করার অভিপ্রায়ে সে প্রিয় নবীজীর গলায় জড়ানো চাদর ধরে এমন জোরে টান দেয় যে, তাতে নবীজী অনেক কষট পান। সেই সাথে সে প্রিয় নবীজীকে ধমকের স্বরে অত্যন্ত মন্দ ভাষায় তার পাওনা পরিশোধ করে দিতে বলে। উপস্থিত সাহাবীদের গায়ের পশম শিউরে ওঠে এ ঘটনায়। উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর চক্ষু রক্তবর্ণ ধারণ করে। তিনি প্রতিবাদ করলেন। ইহুদী পন্ডিতকে তার এমন হীনতর কাজের জন্য ধমক দিলেন।
কিন্তু প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবস্থা ছিল ভিন্ন। এই অবস্থায়ও তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। আর উমর রা. কে নির্দেশ দিলেন তাকে তার পাওনা পরিশোধের সাথে সাথে বাড়তি কিছু উপহার দেয়ার জন্য।
ইহুদী যায়েদ বিন সাইয়া বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারার দিকে তাকিয়েই নবুওয়াতের আলামতসমূহ দেখতে পেলাম। হে উমার! তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি, ‘আমি প্রতিপালক হিসেবে আল্লাহর প্রতি, ধর্ম হিসাবে ইসলামের প্রতি ও নবী হিসাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি রাজী হয়ে গেলাম।’ সূত্র- আল-ইসাবা ফি তামীযিস সাহাবা
অন্য এক ইহুদীর কথা শুনুন, যে মৃত্যুকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলেছিল, যিনি তাওরাত অবতীর্ণ করেছেন তার কসম, আমরা আমাদের গ্রন্থে আপনার গুণাবলি পেয়েছি। দেখেছি আপনার বৈশিষ্ট্যসমূহ। তাই আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, আর আপনি আল্লাহর রাসূল।’ -মুসনাদ আহমাদ হাদিস নং-৪১১/৫
ঘটনা এগারো. ইথিওপিয়ার সে সময়ের খ্রিস্টান সম্রাট নাজ্জাশীর সত্যের প্রতি অনুরাগঃ
ইথিওপিয়ার সে সময়ের খ্রিস্টান সম্রাট নাজ্জাশীর কথা এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করতেই হয়। যখন সে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিনিধির কাছে তার দাওয়াত ও ঈসা আ. সম্পর্কে তার মন্তব্য শুনলেন, যে তিনি বলেছেন, ‘ঈসা আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল’, তখন নাজ্জাশী বলে উঠল, তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি, আর অভিবাদন জানাচ্ছি তাকেও যার পক্ষ থেকে তোমরা এসেছ। শুনে রাখ! আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ অবশ্যই আল্লাহর রাসূল, যার সম্পর্কে ঈসা আ. আমাদের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। আমার যদি বাদশাহীর দায়িত্ব না থাকতো তাহলে আমি তার কাছে যেয়ে তার জুতা চুম্বন করতাম।’
ঘটনা বারো. রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াসের বিশ্ব নবীর প্রতি অনন্য ভালোবাসাঃ
রোমান সাম্রাজ্যের খ্রিস্টান সম্রাট হেরাক্লিয়াসের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। আবু সুফিয়ান যখন তার দরবারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বললেন, ‘তিনি বিশ্বাস ভঙ্গ করেন না। তিনি এক আল্লাহর ইবাদত করতে নির্দেশ দেন। তাঁর সাথে শিরক করতে নিষেধ করেন। প্রতিমা পূজা করতে নিষেধ করেন। সালাত আদায় করতে বলেন। সততা অবলম্বন করতে বলেন। শালীনতার নির্দেশ দেন।’
তখন রোমান সম্রাট আবু সুফিয়ানকে বললেন, ‘আপনি যা বলেছেন তা যদি সত্যি হয়, তাহলে তিনি তো আমার রাজ্যের মালিক হয়ে যাবেন। আমি জানতাম, তাঁর আবির্ভাব হবে, কিন্তু তিনি যে আপনাদের জাতি থেকে হবেন, তা আমার ধারণা ছিল না। আমি যদি তার কাছে যেতে পারতাম, তবে কষ্ট করে হলেও তার সাথে সাক্ষাৎ করতাম। আমি যদি তার কাছে থাকতাম তাহলে তার দু'পা ধৌত করে দিতাম।’ -সহীহ বুখারী হাদিস নং-৭
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কতই না সুন্দর বলেছেন:
'নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী'। সূরাহ আল ক্কলাম, আয়াত-৪
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথার্থ বলেছেন, ‘সুন্দর চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের জন্য আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে।’ বাইহাক্কী হাদিস নং-১৯২/১০, মুসনাদ আহমাদ ৩৮১/২
আয়েশা রা. কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘তার চরিত্র হল আল-কুরআন। সহীহ মুসলিম হাদিস নং-৭৪৬
ধৈর্য্য নিয়ে পাঠ করার জন্য মোবারকবাদ। শুভকামনা সকলের জন্য। অাল্লাহ পাক জগতের সকল প্রানীর প্রতি তাঁর রহমত, বরকত এবং দয়াকে অবারিত করে দিন।
দেখেছেন! প্রিয় নবীজীর চিন্তা কত সুন্দর, কত মহান! মন কত উদার। আমরা সৌভাগ্যবান একারণে যে, আমরা এমনই মহান একজন নবীর উম্মত। আমাদেরও এমন উদার হতে হবে। সবাইকে ক্ষমা করা শিখতে হবে। মন হতে হবে স্বচ্ছ-শুভ্র। গোলাপের মত সুন্দর-সুরভিত। আমরা যদি নবীজীর সুন্দর সুন্দর গুণগুলো নিজেদের জীবনে গ্রহণ করি তাহলে আমাদের জীবনও হবে সুন্দর, মহান ও আলোকিত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের তাওফিক দান করুন।
প্রশংসা মহামহিয়ান প্রিয়তম মালিকের প্রতি। দরুদ ও সালাম শাফিউল উমাম, সাইয়্যিদুল কাওনাইন ওয়াসসাকালাইন প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। শুরু এবং শেষে।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।
১৮ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৩৮
নতুন নকিব বলেছেন:
পোস্টে লাইকসহ প্রথম মন্তব্যে অশেষ শুকরিয়া। আপনার উপস্থিতি সবসময় প্রেরণাদায়ক।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি উয়া সাল্লামকে যারা জানেন না- তাঁর পুত পবিত্র চরিত্রে মিথ্যে আরোপকারীদের সাথে যারা শুধু শুনে শুনে বিভ্রান্তির মধ্যে নিপতিত হন তাদের জন্য সত্য ইতিহাস তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব।
অনেক ভালো থাকবেন।
২| ১৮ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: মানূষ যদি নবিজি সাঃ থেকে শিক্ষা নিত তাহলে তাহলে এই সমাজ বদলে যেত।
আজকের দুনিয়ায় মানূষ কোরআণ হাদীস মেনে জীবন যাপন করে না।
২০ শে জুন, ২০২০ সকাল ৯:৫০
নতুন নকিব বলেছেন:
ধন্যবাদ। সুন্দর বলেছেন। তবে আপনার মন্তব্যের শেষাংশ আজকের দুনিয়ায় মানূষ কোরআণ হাদীস মেনে জীবন যাপন করে না কথাটা ঠিক সকলের জন্য প্রযোজ্য নয়। কুরআন হাদিস মেনে চলা লোক এখনও পৃথিবীতে কোটি কোটি রয়েছেন। কিছু লোক তো নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ও ইসলাম বিরোধী ছিল। তাদের কাছে আলো সহ্য হয় না। তারা সবযুগেই থাকে। তাদের উত্তরসূরী যারা এখন অবশিষ্ট আছে তারা আবু জাহেল, উতবা, শাইবার পথে চলছে।
এই পথে চলাদের লাইন যেদিন পুরোপুরি ১০০% হবে সেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে। এটা হাদিসের ভবিষ্যত বাণী।
৩| ১৮ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:২৮
নূর আলম হিরণ বলেছেন: চুল চিরুনি দিয়ে জাদু করে মানুষকে অসুস্থ্য করা যায়? এখনকার সময় কি এমন সম্ভব?
২০ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:৩০
নতুন নকিব বলেছেন:
যাদুটোনায় বিশ্বাস করেন যারাঃ
আপনি যদি স্রষ্টায় বিশ্বাসী হয়ে থাকেন, বিশেষভাবে, আপনি যদি আব্রাহামিক রিলিজিয়নে বিশ্বাসী হয়ে থাকেন, অর্থাৎ মুসলিম, খৃস্টান অথবা ইহুদী ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে থাকেন (অথবা অন্য কোনো একেশ্বরবাদে) তাহলে আপনাকে যাদু-টোনায় বিশ্বাসী হতেই হবে। কারণ, আব্রাহামিক রিলিজিয়নের বিশ্বাস মতে শয়তান বলে একটা সত্বার অস্তিত্ব রয়েছে, আর এই যাদু-টোনার উৎস হল সেই শয়তান। আর যদি আপনি স্রষ্টায় অবিশ্বাসী হয়ে থাকেন, তাহলে এসব কথা আপনার কাছে অর্থহীন।
প্রশ্নটা রেখেছেন বলেই এ প্রসঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ সৃষ্টি হল। এজন্য আপনাকে আন্তরিক মোবারকবাদ এবং অভিনন্দন।
যাদু সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
যাদুটোনা বিষয়টিতে আমরা ইসলামী আক্বিদা বা বিশ্বাস সম্পর্কে জানবো। কুরআন, হাদিস এবং ইসলামী পন্ডিতদের দৃষ্টিতে এর মূল্যায়ন দেখবো ইনশাআল্লাহ।
কুরআনুল কারিমের অনেক স্থানে যাদুর কথা আলোচিত হয়েছে। আল কুরআনে অন্তত ৩-৪ প্রকারের যাদুর কথা বলা হয়েছে, সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ এরও অধিক স্থানে! এর মাঝে অধিকাংশ আয়াতে এরকম এসেছে, কোনো নবী কওমের কাছে দাওয়াত নিয়ে গেছেন, আর তাঁরা নবীর ওপর যাদুকর হওয়ার অপবাদ দিয়েছে, অথবা বলেছে তোমাকে কেউ যাদু করেছে তাই তুমি এসব বকছো! (নাউযুবিল্লাহ)
এথেকে বুঝা যায়, মানব সভ্যতার শুরু থেকেই যাদু একটি ঘৃণিত বিষয়; একটি অভিশপ্ত শাস্ত্র! আসুন, এই বিষয়ে কুরআনুল হাকিমে বর্ণিত কিছু আয়াত দেখে নিই-
كَذَلِكَ مَا أَتَى الَّذِينَ مِن قَبْلِهِم مِّن رَّسُولٍ إِلَّا قَالُوا سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ
'এমনিভাবেই তাদের পূর্ববর্তীদের কাছে যখনই কোন রসূল এসেছে, তারা বলেছেঃ যাদুকর, না হয় উম্মাদ!' -সুরা যারিয়াত, আয়াত-৫২
وَلَوْ فَتَحْنَا عَلَيْهِم بَابًا مِّنَ السَّمَاء فَظَلُّواْ فِيهِ يَعْرُجُونَ
'যদি আমি ওদের সামনে আকাশের কোন দরজাও খুলে দেই আর তাতে ওরা দিনভর আরোহণও করতে থাকে।' -সুরা হিজর, আয়াত-১৪
لَقَالُواْ إِنَّمَا سُكِّرَتْ أَبْصَارُنَا بَلْ نَحْنُ قَوْمٌ مَّسْحُورُونَ
'তবুও ওরা একথাই বলবে যে, আমাদের দৃষ্টির বিভ্রাট ঘটানো হয়েছে না বরং আমরা যাদুগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।' -সুরা হিজর, আয়াত-১৫
এই আয়াত দিয়ে কেউ কেউ ওয়ার্মহোলের দিকে ইংগিত দিতে চান। হতে পারে, আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। তবে যাই হোক না কেন, যাদু দ্বারা এমন অস্বাভাবিক কাজ করা যায়, যা বাহ্যদৃষ্টে অবিশ্বাস্য; এটা এই আয়াত থেকে স্পষ্টই বুঝা যায়। আয়াতটি গভীর মনযোগের সাথে আরেকবার দেখে নিতে পারেন।
এরপর মুসা আ. এর ঘটনা বিভিন্ন সুরায় এসেছে, যেমনঃ সুরা আরাফ, সুরা ইউনুস, সুরা ত্বাহা। সুরা আ’রাফের নিচের আয়াতগুলো দেখা যেতে পারে-
قَالُواْ يَا مُوسَى إِمَّا أَن تُلْقِيَ وَإِمَّا أَن نَّكُونَ نَحْنُ الْمُلْقِينَ
'তারা বলল, হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর অথবা আমরা নিক্ষেপ করছি।' -সুরা আরাফ, ১১৫
قَالَ أَلْقُوْاْ فَلَمَّا أَلْقَوْاْ سَحَرُواْ أَعْيُنَ النَّاسِ وَاسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَاءوا بِسِحْرٍ عَظِيمٍ
'তিনি (মুসা আ.) বললেন, তোমরাই নিক্ষেপ কর। যখন তারা নিক্ষেপ করল তখন লোকদের চোখগুলোকে বাধিয়ে দিল, ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলল এবং মহাযাদু প্রদর্শন করল।' -সুরা আরাফ, ১১৬
وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ
'তারপর আমি ওহীযোগে মূসাকে বললাম, এবার নিক্ষেপ কর তোমার লাঠিখানা। অতএব সঙ্গে সঙ্গে তা সে সমুদয়কে গিলতে লাগল, যা তারা বানিয়েছিল যাদু বলে।' -সুরা আরাফ, ১১৭
আমাদের রাসুল স. এর ওপরেও যাদু করা / বান মারা হয়েছিলো। তখন আল্লাহ দুআ শিখিয়ে দিলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার,
مِن شَرِّ مَا خَلَقَ
তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে,
وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ
অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়,
وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ
গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে
وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে। -সুরা ফালাক, ১-৫
রাসুল ﷺ এর ওপর যাদু করার কারণে তিনি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। যাদু দ্বারা মানুষের ক্ষতি করা যায় তা নিচে উল্লেখিত আয়াত থেকেও স্পষ্ট বুঝা যায়-
(102
وَاتَّبَعُواْ مَا تَتْلُواْ الشَّيَاطِينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَـكِنَّ الشَّيْاطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولاَ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ وَمَا هُم بِضَآرِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلاَّ بِإِذْنِ اللّهِ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنفَعُهُمْ وَلَقَدْ عَلِمُواْ لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنْ خَلاَقٍ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْاْ بِهِ أَنفُسَهُمْ لَوْ كَانُواْ يَعْلَمُونَ
'তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্নবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।' -সুরা বাকারা, ১০২
এই আয়াত নিয়ে মুফাসসিরিনে কিরাম অনেক দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। লম্বাচওড়া তাফসির দেখতে চাইলে আগ্রহীদের জন্য বয়ানুল কোরআন এবং তাফসিরে ইবনে কাসির রয়েছে, আর সংক্ষিপ্ত আলোচনার তাওযিহুল কোরআন অথবা মা’রিফুল কোরআন তো আছেই।
তবে যাদু সম্পর্কে অধিকাংশের ধারণা হচ্ছে এটা আলাদীনের চেরাগের মত! ঘষা দিলেই যা খুশি পাওয়া যায়। সিনেমা নাটক আর আলি লায়লার গাঁজাখুরি গল্প দেখে এই আজগুবি ধারনা জন্ম নিসে। এই ধারণা অনেক বড় ভুল, বরং যাদুর জন্য অনেক কিছু সেক্রিফাইস করতে হয়, আর চাইলেই সব পাওয়া যায়না। এর অনেক সীমাবদ্ধতা আছে।
এখানে সংক্ষেপে একটা আক্বিদা না বললেই নয়, ‘যাদুর শক্তি ইনভিজিবল, কিভাবে দড়ি দিয়ে সাপ বানিয়ে ফেললো তা আমাদের বোধগম্য নয়। তারমানে এটা না, যাদুর নিজস্ব ক্ষমতা আছে। বরং আর দশটা শক্তির মত যাদুও ঐশ্বরিক শক্তির ওপরেই নির্ভরশীল।’ খেয়াল করুন উপরোল্লেখিত আয়াতেই আল্লাহ বলেছেন! “আল্লাহ না চাইলে যাদু দিয়ে তারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না”
কোরআনে যাদু বিষয়ে এত বেশি আলোচনা আছে, আক্বিদা বয়ানের জন্য এরপর অন্য কোনো রেফারেন্সের প্রয়োজনই থাকেনা। তবুও আমরা কিছু হাদিস দেখবো।
১. হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাতটি ধ্বংসকারী জিনিস থেকে দূরে থাকো। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! সে জিনিসগুলো কি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর সাথে কোনো কিছু শরীক করা, যাদু বিদ্যা শেখা ও তার চর্চা করা, যে জীবনকে হত্যা করা আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন, তাকে অবৈধভাবে হত্যা করা, সূদী লেনদেন করা, ইয়াতীমের ধন আত্মসাৎ করা, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া, পবিত্র চরিত্রের অধিকারী মুমিন নারীর ওপর অপবাদ দেয়া। (বুখারী, মুসলিম)
২. আবু বাকর ইবন আবি শায়বা রহ. সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সা.-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি করে আজওয়া খেজুর (মদীনা শরীফে উৎপন্ন এক জাতীয় উৎকৃষ্ট মানের খেজুর) আহার করে, সেদিন তাকে কোন বিষ বা যাদু ক্ষতি করতে পারে না । (মুসলিম)
৩. এরপর রাসুল স.কে যাদু করার ব্যপারে বুখারীর দীর্ঘ হাদিসটি তো আছেই, হাদিসের সারকথা এরকম “আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, লাবীদ ইবনে আসাম নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে যাদু করে। একরাত্রে রাসুল স. বারবার দু‘আ করতে থাকেন। তারপর তিনি বলেনঃ হে ‘আয়েশা! তুমি কি বুঝতে পেরেছ, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম, তিনি আমাকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। আমার নিকট দু’জন লোক এসেছিলো। তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অপরজন দু‘পায়ের কাছে বসেন। একজন জিজ্ঞেস করলোঃ এ লোকটির কি ব্যথা? আরেকজন বললো, যাদু করা হয়েছে। প্রথমজন বলেনঃ কে যাদু করেছে? দ্বিতীয়জন বলেনঃ লাবীদ ইন আ‘সাম। প্রথমজন জিজ্ঞাসা করেনঃ কি দিয়ে? দ্বিতীয়জন উত্তর দেনঃ চিরুনী, মাথা আচড়ানোর সময় উঠা চুল এবং পুরুষ খেজুর গাছের খোসার মাধ্যমে….” (বুখারিতে বর্ণিত এই হাদিসটি বেশ দীর্ঘ)
৪. আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্যোতিষ বিদ্যার কিছু শিক্ষা করলো, সে যেন যাদু বিদ্যার একটা শাখা আয়ত্ত করলো, এখন তা যত বাড়ায় বাড়াক। (আহমাদ, আবূ দাউদ)
৫. ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল স. বলেছেন- যে কুলক্ষণ নির্ণয় করে, আর যার জন্য নির্ণয় করা হয়।যে যাদু করে,আর যার জন্য যাদু করা হয়। এবং যে গণকের নিকট এলো এবং তাঁর কথা বিশ্বাস করলো..। এরা আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (মুসনাদে বাযযার, সনদ হাসান)
এই হাদিস অনুযায়ী যাদুকর, গণক, ট্যারট কার্ড ওয়ালা সবাই কুফরি করছে। এবং তাদের কাছে যারা যাচ্ছে, হেল্প চাচ্ছে তারাও। আসুন আমরা সতর্ক হই।
এরকম অনেক হাদিস রয়েছে, যার সব এখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তবে ইসলাম যাদুর অস্তিত্ব স্বীকার করে কি না, বা ইসলাম ধর্মালম্বীগণের এ বিষয়ে কি ধরণের বিশ্বাস থাকা উচিত- আশা করছি এ ব্যাপারটি সকলের নিকট স্পষ্ট হয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রতিটি বিষয় আল্লাহ পাক আমাদের সঠিকভাবে জানার তাওফিক দান করুন। আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ এবং প্রসারিত করুন।
দীর্ঘ প্রত্যুত্তর দেয়ার জন্য বিরক্ত হবেন না আশা করছি। আপনার মন্তব্যটির কারণে এই দীর্ঘ উত্তর অনেকের উপকারে আসতে পারে।
ভালো থাকবেন সবসময়।
৪| ১৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৪৮
আহলান বলেছেন: ক্ষমা মহৎ গুন!
২০ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:৩২
নতুন নকিব বলেছেন:
নিশ্চয়ই। শুকরিয়া। জাজাকুমুল্লাহ।
৫| ১৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:১৩
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: উফ শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়, কত সহনশীল ছিলেন আমাদের প্রিয় নবী। খুবই ভালো লাগলো ঘটনাগুলো পড়ে
জাজাকাল্লাহ খাইরান আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন
২০ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:৩২
নতুন নকিব বলেছেন:
অশেষ কৃতজ্ঞতা। আপনার জন্যও একইরকম অবারিত কল্যাণ প্রার্থনা।
৬| ১৮ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:০৪
নেওয়াজ আলি বলেছেন: মুসলিম হিসাবে যদি নবীর একটুও করা কাজ আমরা অনুসরণ করতাম তাহলে দুনিয়াটা স্বর্গ হতো
২০ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:৩৪
নতুন নকিব বলেছেন:
বরাবরই আপনি আশাবাদী মানুষ। আমিও তাই। আমার কাছে হতাশার স্থান নেই। আপনার এই ইতিবাচক দিকটি সবসময় ধন্যবাদার্হ।
ভালো থাকুন নিরন্তর।
৭| ১৮ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৩৩
সুপারডুপার বলেছেন:
যদি আরেকটা পাশ জানা না হয়, কিম জং -ও তার দেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে ক্ষমাশীল ভালো মানুষ ও আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে দেশ প্রেমিক ব্যক্তি। যদি এখনকার মত মিডিয়া ও তথ্যের আদান-প্রদান না থাকতো , উনারাও হাজার হাজার বছর ধরে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে থাকতেন।
২০ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:৩৬
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৮| ১৯ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৩১
সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: বান টোনা এখনো চলছে!
২০ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:৩৬
নতুন নকিব বলেছেন:
দয়া করে ২ নং মন্তব্যের উত্তরটি দেখুন। ধন্যবাদ।
৯| ১৯ শে জুন, ২০২০ রাত ২:৩৩
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: ধর্ম গুলোর মতো জাদু বিদ্যা ও কুসংস্কার।সকল ধর্মেই জাদুর বিষয়টা আছে।
২০ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:৫৬
নতুন নকিব বলেছেন:
ধর্ম গুলোর মতো জাদু বিদ্যা ও কুসংস্কার।সকল ধর্মেই জাদুর বিষয়টা আছে।
তার মানে, আপনার কাছে যাদু বিদ্যা কুসংস্কার এবং ধর্ম কুসংস্কার তার আগে থেকেই!
ধর্ম তাহলে আপনার কাছে কুসংস্কার! কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে- আপনার নামের সাথেও কিন্তু একটি ধর্মকে আপনি পরম মমতায় জড়িয়ে রেখেছেন, দেখাই যাচ্ছে! তাহলে কুসংস্কারের কিছুটা ছোঁয়া কি নামেও থেকে গেল না! না কি নামে কোনো সমস্যা নেই! অথবা, নামে কি বা আসে যায়!
দুঃখিত ভাই, প্রসঙ্গক্রমে কথাটা না বলে পারছি না বলে- কেউ যদি ধর্ম বলতেই কুসংস্কার মনে করেন তাহলে সেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মের নাম তার/ তাদের মত আধুনিকতার দাবিদার মানুষের নামের সাথে থাকাটা কিন্তু বেমানান বলেই মনে হয়!
এই প্রতিমন্তব্যে আপনাকে কোনো কষ্ট দিয়ে থাকলে সেজন্য আবারও ক্ষমাপ্রার্থী।
মন্তব্যে আসায় আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকুন সবসময়।
১০| ২৭ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:২৬
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: রসূল (সাঃ) ওনার ব্যক্তিগত কারণে কখনও প্রতিশোধ নেন নি।
২৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:১৬
নতুন নকিব বলেছেন:
জ্বি, সঠিক বলেছেন। এটা তিনি কখনোই করেননি। কারও সাথেই করেননি। ব্যক্তিগতভাবে তাকে কেউ কষ্ট দিলে তিনি প্রতিশোধ নিতেন না। এটা তাঁর মহান চরিত্রে উপমাহীন ক্ষমাশীলতার অন্যতম দিক।
জাজাকুমুল্লাহু তাআ'লা।
১১| ৩১ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:০৩
মোহাম্মদ রিদওয়ান আল হাসান বলেছেন: রাহমাতুল্লিল আ'লামীন(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)❤
০২ রা আগস্ট, ২০২০ সকাল ৮:৩৮
নতুন নকিব বলেছেন:
শুকরিয়া।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:০৩
জাফরুল মবীন বলেছেন: ব্যক্তিজীবন,পরিবার ও সমাজে প্রশান্তি আনতে ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষমা করে দেওয়া এক শক্তিশালী উপায়।আর সেটিই ছিলো নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি উয়া সাল্লাম) জীবনের সাধারণ প্র্যাকটিস।
ধন্যবাদ ভাই বিষয়টি উপস্থাপনের জন্য।
আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।