নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রখ্যাত সাধক মালেক বিন দীনার রহমাতুল্লাহ আলাইহির জীবনে পরিবর্তনের বিস্ময়কর ঘটনাঃ

০২ রা আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:০৬

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

প্রখ্যাত সাধক মালেক বিন দীনার রহমাতুল্লাহ আলাইহির জীবনে পরিবর্তনের বিস্ময়কর ঘটনাঃ

রূহের ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টাও থাকা চাই ইনশাআল্লাহ্!

বহুকাল আগের কথা। মালেক বিন দীনার নামে ইরাকে বিখ্যাত এক আলেম ছিলেন। একবার তিনি বিশাল এক মাহফিলে বক্তব্য দিতে দাঁড়াতেই এক শ্রোতা বললেন, আপনার বক্তব্য শুরু করার আগে একটি প্রশ্নের জবাব দিন। মালেক বিন দীনার প্রশ্ন করার অনুমতি দিলেন।

বয়স্ক শ্রোতা বললেন, প্রায় দশ বছর আগে আপনাকে মাতাল অবস্হায় পড়ে থাকতে দেখেছি। আপনি সে অবস্হা থেকে কিভাবে ফিরে এলেন এবং ওয়াজ করার জন্য এই পর্যায়ে উপনীত হলেন?

মালেক বিন দীনার কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে রইলেন। তারপর বললেন, ঠিক বলেছেন আমিই সেই ব্যক্তি। শুনুন তাহলে আমার কাহিনী-
এক কদরের রাতে মদের দোকান বন্ধ ছিলো। দোকানীকে অনুরোধ করে এক বোতল মদ কিনলাম বাসায় খাবো এই শর্তে। বাসায় ঢুকলাম। কিন্তু ঢুকেই দেখি আমার স্ত্রী নামায পড়ছে।

আমি আমার ঘরে চলে গেলাম। টেবিলে বোতলটা রাখলাম। আমার তিন বছরের শিশু মেয়েটা দৌঁড়ে এলো। টেবিলের সাথে ধাক্কা খেলো সে। আর মদের বোতলটি পড়ে ভেঙে গেলো। অবুঝ মেয়েটি খিলখিল করে হাসতে লাগলো।

ভাঙা বোতল ফেলে দিয়ে আমি ঘুমিয়ে গেলাম। সে রাতে আর মদ খাওয়া হলো না। পরের বছর আবার লাইলাতুল ক্বদর এলো। আমি আবার মদ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। বোতলটা টেবিলে রাখলাম। হঠাৎ বোতলের দিকে তাকাতেই বুক ভেঙে কান্না চলে এলো। সারা ঘরময় ছুটে বেড়ানো আমার আদরের শিশু কন্যাটি তিন মাস হলো মারা গেছে।

বোতলটা বাইরে ফেলে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। স্বপ্নে দেখছি এক বিরাট সাপ আমায় তাড়া করছে। এতো বড় মোটা সাপ আমি জীবনে দেখিনি। আমি ভয়ে দৌঁড়াচ্ছি। এমন সময় এক দুর্বল বৃদ্ধকে দেখলাম। বৃদ্ধ বলল, আমি খুব দুর্বল এবং ক্ষুধার্ত। এ সাপের সাথে আমি পারবো না। তুমি এই পাহাড়ের ডানে উঠে যাও। পাহাড়ে উঠেই দেখি দাউদাউ আগুন জ্বলছে। আর পেছনেই এগিয়ে আসছে ভয়ঙ্কর সেই সাপ।

বৃদ্ধের কথা মতো ডানে ছুটলাম। দেখলাম, সুন্দর এক বাগান। বাচ্চারা খেলছে। গেটে দারোয়ান।

দারোয়ান বললো, বাচ্চারা, দেখো তো এ লোকটি কে? একে সাপটা খেয়ে ফেলবে, নয়তো আগুনে ফেলে দেবে।

দারোয়ানের কথায় বাচ্চারা ছুটে এলো। তার মাঝে আমার মেয়েটাও আছে। মেয়েটা আমায় ডান হাতে জড়িয়ে রেখে তার বাম হাতে সাপটাকে থাপ্পর দিলো। অমনি সাপ চলে গেলো।

আমি অবাক হয়ে বললাম, মা তুমি কত ছোট আর এত বড় সাপ তোমায় ভয় পায়?

মেয়ে বললো, আমি জান্নাতি মেয়ে, জাহান্নামের সাপ আমাদের ভয় পায়।

মেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো। বাবা, ঐ সাপকে তুমি চিনতে পেরেছো?

আমি বললাম, না মা।

আমার মেয়ে বললো, বাবা, ওতো তোমার নফস। নফসকে এতো বেশী খাবার দিয়েছো যে, সে এমন বড় আর শক্তিশালী হয়েছে। সে তোমাকে জাহান্নাম পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে এসেছে।

বললাম, পথে এক দুর্বল বৃদ্ধ তোমার এখানে আসার পথ বলে দিয়েছে। সে কে?

মেয়ে বললো, তাকেও চেনোনি? সে তোমার রুহ। তাকে তো কোনদিন খেতে দাওনি। তাই না খেয়ে দুর্বল হয়ে কোনো মতে বেঁচে আছে।

স্বপ্নে আমি তখন দেখলাম, মেয়ে আমার কোলের উপর বসে আমার দাড়িতে হাত বুলিয়ে নিচের আয়াত তিলাওয়াত করছে,

أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ

আর আমাকে এর অর্থ শুনিয়ে জিজ্ঞেস করছে- আব্বু! 'যারা মুমিন তাদের জন্য কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তার কারণে হৃদয় বিগলিত হবার সময় এখনও আসেনি?’ -সূরা আল-হাদীদ, আয়াত ১৬

তার মুখে পবিত্র কুরআনের এই আয়াত শ্রবনে আমি কাঁদতে শুরু করলাম। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, সে কোথা থেকে কুরআন শিখলো। সে বললো, এখানকার শিশুরা পৃথিবীতে যা জানতো তাঁর চাইতে বেশি জানে।

আমার ঘুম ভেঙে গেলো। এক অচিন্তনীয় পরিবর্তন আমাকে তাড়া করে ফিরতে থাকলো। পৃথিবীর রঙ-রস-সুধা কোনোকিছুই আমার ভালো লাগতো না। মালিকের সন্ধান। একমাত্র মহান মালিককে পাবার জন্য, তাঁর সান্নিধ্যপ্রাপ্তিই হয়ে উঠলো আমার জীবনের সাধনা। নিজেকে সকল পাপকর্ম থেকে বিরত রেখে সদা সুপথে চলার এক অদম্য প্রেরণা আমাকে তাড়িত করে ফিরতে লাগলো। মালিকের সামনে মস্তক অবনত করার অভাবনীয় স্বাদ আমাকে সত্যের উপর স্থির অবিচল থাকতে উদ্বুদ্ধ করতে থাকলো।

মূলতঃ সেই স্বপ্নটাই ছিল আমার জীবনে আমূল পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট। আসলে এসবের সবকিছুর পেছনেই ছিল মহান মালিক স্রষ্টার অফুরন্ত দয়া এবং ক্ষমা। তিনি আমাকে ক্ষমা করে তাঁর কাছে টেনে নেয়ার জন্য একটি পথ বের করে দিয়েছেন। এই স্বপ্নটা আমি নাও দেখতে পারতাম। তিনিই দয়া করেছেন। এসবই তাঁর কুদরত এবং ক্ষমাপ্রদানের ইশারা মাত্র। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার অপার করুনায় আমি অপরাধের গহীন অন্ধকার জগত থেকে আলোর পথে ফিরে আসতে পেরেছি।

বস্তুতঃ সেদিন থেকেই আমার রূহকে যথাসাধ্য খাদ্য দিয়ে যাচ্ছি, আর নফসের খাদ্য বলতে পারেন, আল্লাহ তাআ'লা প্রদ্ত্ত তাওফিকের উপর ভরসা করে মোটামুটি কন্ট্রোলে নিয়ে আসতে পেরেছি।

কিন্তু আজও চোখ বন্ধ করলেই নফসের অতীতের সেই ভয়াল রূপ দেখতে পাই। আর দেখি দুর্বল, নিস্তেজ এবং মৃতপ্রায় সেই রূহকে। আহা কতো দুর্বল হাঁটতে পারে না।

ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন মালিক বিন দীনার।

তাই আসুন, নিজের নফসকে হেফাজত করি। রূহের ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টায় প্রখ্যাত সাধক মালিক বিন দীনারের জীবনের পরিবর্তন থেকে শিক্ষা নিই। পাপ পঙ্কিলতার ময়লা থেকে পরিচ্ছন্ন করি আত্মাকে। কিছুটা হলেও সচেতন হই ইনশাআল্লাহ্! -তথ্যসূত্র, উইকিপিডিয়া এবং অন্যান্য অনলাইন পত্র-পত্রিকা

মালিক বিন দীনারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ

মালিক বিন দীনার রহমাতুল্লাহ আলাইহি সাহাবায়ে কেরামের সংস্পর্শধন্য অন্যতম একজন তাবেয়ি ছিলেন। তাঁর জন্ম ইরাকের কূফায়। জন্মসাল সঠিকভাবে জানা যায় না। তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য ভারতীয় উপমহাদেশে আগমন করেন বলে শ্রুতি রয়েছে। এবং প্রাপ্ত তথ্যমতে, তিনি ইসলাম প্রচারে এসে সম্ভবত ভারতের কেরল অঞ্চেলের কাসারগোদের থালঙ্গায় ইনতিকাল করেন। তিনি ছিলেন পণ্ডিত এবং ভ্রমণকারী। রাজা চেরামান পেরুমালের বিদায়ের পরে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে ভারতে আগত প্রথম পরিচিত মুসলমানদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। যদিও ঐতিহাসিকগণ তাঁর মৃত্যুর সঠিক স্থানটি নিয়ে একমত নন, তবুও এটি ব্যাপকভাবে মেনে নেওয়া যায় যে, তিনি কাসারগোদে মারা গিয়েছিলেন এবং তাঁর স্মৃতি হিসেবে কাসারগোদের থালঙ্গার মালিক দিনার মসজিদটিকে চিহ্ণিত করা হয়। তাকে এখানেই সমাধিস্থ করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। ১৩০/১৩১ হিজরি মতান্তরে ৭৪৮/৪৯ খ্রিস্টাব্দে বসরায় মহামারীর ঠিক অনতিপূর্বেই তিনি ইনতিকাল করেছিলেন। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, তাঁর ইনতিকালের সন ৭৪৪/৪৫ বা ৭৪৭/৪৮ খ্রিস্টাব্দ। -তথ্যসূত্র, উইকিপিডিয়া এবং অন্যান্য অনলাইন পত্র-পত্রিকা

মালিক বিন দীনারের ঘরে চোরের আগমন এবং তার জীবনের পরিবর্তনঃ

কোনো এক দিনের ঘটনা। মালিক বিন দীনার রহ. এর ঘরে প্রবেশ করেছে ভয়ংকর এক চোর। তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে কুখ্যাত এবং দুর্ধর্ষ চোর।

দীর্ঘসময় খোঁজাখুজি করেও মালেক বিন দীনার রহ. এর ঘরে একটি কানাকড়িও পেলো না চোর বাবাজি। খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে চুরি করে নেয়ার মত মূল্যবান কোনোকিছুই না পেয়ে মহাবিরক্ত চোর। শেষমেষ ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বে অন্ধকারে ভালো করে ঠাহর করে দেখলো, ঘরের এক কোনে মালিক বিন দিনার জায়নামাজে। তিনি নামাজ পড়ছেন।

মালেক বিন দিনার নামাজ সমাপনান্তে সালাম ফিরালেন। তিনি চোরকে দেখলেন এবং চিনে ফেললেন। চুরি করে নেয়ার মত ঘরে কিছু না পেয়ে চোর বেচারার দুরবস্থাও তিনি উপলব্ধি করলেন। চোর ঠায় দাঁড়িয়ে। চিন্তিত। কিছুই পেল না বলে। মোক্ষম সুযোগ পেয়ে মালিক বিন দীনার চোরকে বললেন-

আমার ঘরে দুনিয়ার ভোগ বিলাসের উপকরণ খুঁজতে এসেছো। কিন্তু কিছুই পেলে না। পাবেও না কিছু। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার কিছুই যে আমি জমা করিনি।

আচ্ছা, তোমার কাছে কি আখেরাতের উপকরণ ও পাথেয় আছে কোনো কিছু? চোর বিস্ময়ে হতবাক হয়ে মালিক বিন দিনারের দিকে তাকিয়ে- লোকটা বলে কী! চোরের কাছে কি না সে আখেরাতের পাথেয় খোঁজে!

মালিক বিন দীনার তার দরদী হৃদয়ের ওয়াজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। একসময় কুখ্যাত চোরের দু‘চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। এ অবস্থায়ই ফজরের সময় হয়ে গেলো। দু‘জনই একসঙ্গে মসজিদে নামাজ আদায় করতে চললেন।

মুসল্লিরা দেখে তো হতবাক- ভয়ংকর এবং দুর্ধর্ষ চোর এতো বড় আলেমের সাথে! তাও আবার মসজিদে নামাজ পড়তে এসেছে! কীভাবে সম্ভব!

মালিক বিন দীনার রহ, নামাজ শেষে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, সে আমার ঘরে চুরি করতে এসেছে। কিন্তু আমি তার দিল চুরি করে নিয়েছি। আল্লাহ তাআ'লার অশেষ দয়ায় তার ভেতরে পরিবর্তন এসে গেছে।

এজন্যই বলা হয়-

الكلمة الطيبة مفتاح القلوب ماسمي القلب قلباً إلا لكثرة تقلب

উত্তম কথা দীলের তালার চাবি। আর কলবকে কলব বলা হয় এ কারণে যে, তা অনেক বেশি পরিবর্তনশীল।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের অন্তরকে দ্বীনের প্রতি ঘুরিয়ে দিন। মৃত্যু পর্যন্তু দ্বীনের উপরে অটল, অবিচল এবং স্থির থাকার তাওফিক দান করুন। মহান আল্লাহ তাআ'লা আমাদের সবাইকে দ্বীন সঠিকভাবে বুঝার সুযোগ দিন। মালিক বিন দীনারের মত আজও আমাদের ভেতরে যাদের জীবনে পরিবর্তন প্রয়োজন, ফিরে আসা কাঙ্খিত- তাদেরকে ফিরে আসার তাওফিক দিন অচিরেই। সত্যের পথে, আলোর পথে, কুরআন-সুন্নাহর আলোকিত পথে ….।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:২৬

বিজন রয় বলেছেন: ঈদ মোবারক!

ভাল আছেন নিশ্চয়ই প্রিয় নতুন নকিব।

০২ রা আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৪৯

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি প্রিয় বিজন দা, ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা কেমন আছেন? অতটা সময় দিতে পারি না বলে আপনাদের কিছুটা মিস করি, তবে শুভকামনা সবসময়ই। অনেক অনেক ভালো থাকবেন।

প্লাসসহ প্রথম মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা।

আপনার জন্যও একরাশ ঈদের শুভেচ্ছা।

২| ০২ রা আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: স্যরি ঘটনাটা আমার কাছে বিস্মকর লাগে নি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.