নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ; যিকরুল্লাহ তথা আল্লাহকে স্মরণ করার ফযীলত, গুরুত্ব ও তার প্রতি উৎসাহদান
পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ কী? সবচেয়ে দামী জিনিষ কী? অন্তরে শীতলতা আনয়নকারী সবচেয়ে মধুরতম স্পর্শ কিসে পাওয়া যায়? জ্বি, তা পাওয়া যায় একমাত্র আল্লাহর যিকিরে। আল কুরআনে 'আল্লাহর স্মরণ'কে 'সর্বশ্রেষ্ঠ' বলা হয়েছে। আর অন্তরের প্রশান্তির মাধ্যমও যে এই যিকির তাও স্পষ্টভাবে আমাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আসলে এটাই স্বাভাবিক যে, আল্লাহ তাআলা যেমন সর্বোচ্চ এবং সুমহান, তাঁর নামের স্মরণও তেমনিভাবে সবকিছুর উপরে মর্যাদাবান এবং সুউচ্চ। তাই আমরা প্রকৃতপক্ষেই যদি শান্তি-প্রশান্তি খুঁজতে চাই আমাদের ফিরে আসতে হবে আসল মালিকের কাছে। সত্যিকারের সুখ একমাত্র তাঁর স্মরণেই।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার পবিত্র নামের বরকত ও লযযত এবং স্বাদ ও আনন্দ তুলনাবিহীন। অন্য কোনো কিছুতে তা নেই। যিকরুল্লাহ তথা আল্লাহর যিকির দ্বারা বান্দা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার সান্নিধ্যলাভে ধন্য হয়। আল্লাহর যিকির এমন এক শক্তি, যা দুর্বলকে সবল করে এবং সকল বিপদে দৃঢ়পদ রাখে। কারণ, আল্লাহর যিকির যিনি করেন তার বিশ্বাস এই যে, সব কিছু আল্লাহর হুকুমেই হয় এবং আল্লাহর কোনো ফয়সালা বান্দার জন্য অকল্যানকর নয়। আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেয়ার মাঝেই বান্দার কামিয়াবি ও কল্যাণ। কুরআন মজীদে আল্লাহর যিকির বেশি বেশি করতে বলা হয়েছে। অন্য কোনো ইবাদত সম্পর্কে এমন কথা বলা হয়নি। কারণ, আল্লাহর যিকির বা স্মরণ এমন এক বিষয়, যা মানুষকে সব ধরনের গুনাহ থেকে রক্ষা করে এবং শরীয়তের হুকুম মোতাবেক চলতে সাহায্য করে। উপরন্তু তা এত সহজ যে, এর জন্য আলাদা করে বেশি সময় ব্যয় করার কিংবা অন্যান্য কাজ স্থগিত রাখারও প্রয়োজন হয় না। সকল কাজের মাঝেই যিকির রয়েছে। সুন্নত অনুযায়ী প্রতিটি আমল মাসনূন দুআসহ করলে তাতে যিকিরের সাওয়াব পাওয়ার আশা করা যায়। একইসাথে কাজে মগ্ন থেকেও সাধ্যানুসারে যিকির চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।
বস্তুতঃ আল্লাহর যিকির হচ্ছে যাবতীয় ইবাদতের রূহ। আবু ওসমান নাহদী রাহ. বলেন, কুরআন মজীদের ওয়াদা অনুযায়ী যখন কোনো বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করে তখন আল্লাহ তাকে স্মরণ করেন।
﴿فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ﴾ [البقرة: ١٥٢]
তোমরা আমাকে স্মরণ কর; আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। -সূরা আল বাক্কারা, আয়াত-১৫২
সুতরাং আমরা যখন আল্লাহর যিকিরে মশগুল হই তখন একথা স্মরণ করা কর্তব্য যে, স্বয়ং আল্লাহ তাআলাও আমাদেরকে স্মরণ করছেন। এতে যিকিরের স্বাদ ও লযযত বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
যিকিরের ফযীলত সম্পর্কিত কিছু আয়াতঃ
এক. কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاذْكُرُواْ اللّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلَحُونَ
আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর। -সূরা আনফাল : ৪৫
দুই. অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,
الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি
পায়। -সূরা রা’দ : ২৮
তিন. আরো বলা হয়েছে,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। -সূরা আনফাল : ২
চার. আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَالصَّابِرِينَ عَلَى مَا أَصَابَهُمْ وَالْمُقِيمِي الصَّلَاةِ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
যাদের অন্তর আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে ভীত হয় এবং যারা তাদের বিপদাপদে ধৈর্য্যধারণ করে এবং যারা নামায কায়েম করে ও আমি যা দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। -সূরা হজ্ব : ৩৫
পাঁচ. অন্য আয়াতে বলেন,
﴿وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ﴾ [العنكبوت: ٤٥]
অবশ্যই আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। -সূরা আল আনকাবূত, আয়াত-৪৫
ছয়. তিনি অন্য আয়াতে বলেন,
إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, , যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার। -সূরা আহযাব : ৩৫
সাত. তিনি অন্য আয়াতে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا
মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। -সূরা আহযাব : ৪১
আট. আরো বলেছেন,
وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعاً وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالآصَالِ وَلاَ تَكُن مِّنَ الْغَافِلِينَ
আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং এমন স্বরে যা চিৎকার করে বলা অপেক্ষা কম; সকালে ও সন্ধ্যায়। আর বে-খবর থেকো না। -সূরা আরাফ : ২০৫
নয়. মুমিনদের সর্ম্পকে বলেছেন,
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىَ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে)
পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। -সূরা আলে ইমরান : ১৯৯
দশ. মুনাফিকদের বিষয়ে বলেছেন,
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُواْ إِلَى الصَّلاَةِ قَامُواْ كُسَالَى يُرَآؤُونَ النَّاسَ وَلاَ يَذْكُرُونَ اللّهَ إِلاَّ قَلِيلاً
অবশ্যই মুনাফেকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুতঃ তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায়, একান্ত শিথিল ভাবে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। -সূরা নিসা : ১৪২
এগার. আরো বলেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।-সূরা আহযাব : ২১
এ জাতীয় আরো অনেক আয়াতে যিকিরের কথা বলা হয়েছে। উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।
যিকিরের ফজিলত প্রকাশক কিছু হাদীসঃ
এক. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকির করতেন।-সহীহ মুসলিম ১/২৮২; সুনানে আবু দাউদ, পৃষ্ঠা ৪
দুই. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি বান্দার সাথে ঐরূপ ব্যবহার করি যেরূপ সে আমার প্রতি ধারণা রাখে। সে যখন আমাকে স্মরণ করে আমি তার সাথে থাকি। সে যদি আমাকে অন্তরে স্মরণ করে আমিও তাকে অন্তরে স্মরণ করি। সে যদি কোনো মজলিসে আমার কথা আলোচনা করে তবে আমি তার চেয়ে উওম মজলিসে তার আলোচনা করি।-সহীহ বুখারী ২/৭৪০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৬৭৫
তিন. হযরত আবু মুসা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে তার প্রতিপালককে স্মরণ করে আর যে করে না তাদের দৃষ্টান্ত হল জীবিত ও মৃতের মতো। (অর্থাৎ যে আল্লাহকে স্মরণ করে সে জীবিত। আর যে স্মরণ করে না সে মৃত)।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৪০৭; মুসলিম, হাদীস : ৭৭৯
চার. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার পথে জুমদান পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে চলছিলেন, তখন তিনি বললেন, তোমরা চলতে থাক এই যে জুমদান পাহাড়। মুফাররিদরা অগ্রগামী হয়েছে। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মুফাররিদরা কারা? তিনি বললেন, ঐসব নারী ও পুরুষ, যারা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৬৭৬
পাঁচ. হযরত আবূ দারদা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিসের কথা বলব না, যা তোমাদের সমস্ত আমলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ; তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সবচেয়ে পবিত্র; তোমাদের মর্যাদাকে আরো বুলন্দকারী; আল্লাহর রাস্তায় সোনা-রুপা খরচ করা থেকে এবং জিহাদের ময়দানে শত্রুর প্রাণ নেওয়া ও শত্রুর হাতে প্রাণ দেওয়া থেকেও উওম? সাহাবারা বললেন, অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, তা হল আল্লাহর যিকির।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩৩৭৭; ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩৭৯০
ছয়. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। … ঐ ব্যক্তি, যে একান্তে আল্লাহকে স্মরণ করেছে এবং তার চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয়েছে।-বুখারী, হাদীস : ৬৪৭৯
সাত. হযরত মুআয রা. থেকে বর্ণিত। এক সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কাছে ইসলামের বিধান অনেক মনে হয়। তাই আমাকে এমন একটি বিষয় বলে দিন যার উপর আমি সর্বদা আমল করতে পারি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার জিহবাকে আল্লাহর যিকিরে তরতাজা রাখ।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩৩৭৫; ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩৭৯৩
আট. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আমার বান্দা! তুমি যখন নির্জনে আমাকে স্মরণ কর তখন আমিও তোমাকে নির্জনে স্মরণ করি। আর যখন তুমি আমাকে কোনো মজলিসে স্মরণ কর তখন আমি তার চেয়ে উওম মজলিসে তোমার আলোচনা করি।-শুআবুল ঈমান, হা. ৫৫১
নয়. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, এক হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, বান্দা যতক্ষণ আমাকে স্মরণ করতে থাকে এবং আমার যিকিরের কারণে তার ঠোঁট নড়তে থাকে, ততক্ষণ আমি তার সাথে থাকি। (অর্থাৎ আল্লাহর রহমত তার সাথে থাকে)।-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১০৯৬৮; ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩৭৯২
দশ. হযরত আবু হুরায়রা রা. ও হযরত আবু সায়ীদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কিছু মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করে তখন ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখেন,আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয়,এবং তাদের উপর ছাকিনা নাযিল হয়, আর আল্লাহ তাআলা তার নিকটতম ফেরেশতাদের সামনে তাদের কথা উল্লেখ করেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৭০০; শুআবুল ঈমান, হাদীস : ৫৩০
এগার. হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর যিকিরের চেয়ে আযাব থেকে অধিক নাজাত দানকারী আর কোনো আমল নেই।-মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস : ১৬৭৪৫
বার. হযরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কিছু মানুষ আল্লাহর যিকিরের জন্য একত্রিত হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিই একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তখন আসমান হতে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, তোমাদেরকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে এবং তোমাদের গোনাহসমূহ নেকীতে পরিণত হয়েছে।- মুসনাদে আহমদ ৩/১৪২, হাদীস : ১২৪৫৩; শুআবুল ঈমান, হাদীস : ৫৩৪
তের. হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা যখন জান্নাতের বাগানসমূহের নিকট দিয়ে যাও তখন সেখানে খুব বিচরণ কর। সাহাবারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জান্নাতের বাগান কী? তিনি বললেন, যিকিরের হালকাসমূহ।-তিরমিযী, হাদীস : ৩৫১০; শুআবুল ঈমান, হাদীস : ৫২৯
চৌদ্দ. হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশ করার পর জান্নাতবাসীরা দুনিয়ার কোনো জিনিসের জন্য আফসোস করবে না, শুধু ঐসময়ের জন্য আফসোস করবে, যা দুনিয়াতে আল্লাহর যিকির ছাড়া অতিবাহিত করেছে।-শুআবুল ঈমান, হাদীস : ৫১২; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস : ১৬৭৪৬
পনের. হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর যিকির এত বেশী করতে থাক যে, লোকেরা পাগল বলে।-মুসনাদে আহমদ ৩/৬৮, ৭১, হাদীস : ১১৬৫৩; ইবনে হিববান, হাদীস : ৮১৪
ষোল. হযরত আবু হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, দুনিয়া ও দুনিয়ার সকল বস্ত্ত অভিশপ্ত তবে আল্লাহর যিকির ও তার সাথে সং©র্শস্নষ্ট বিষয় এবং আলেম ও তালেবে ইলম ছাড়া।-তিরমিযী, হাদীস : ২৩২২; ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪১১২
যিকিরের কিছু ফায়দাঃ
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. শুধু যিকিরের ফযিলত সম্পর্কে স্বতন্ত্র একটি কিতাবই লিখেছেন। তাঁর কিতাবের নাম ‘আলওয়াবিলুছ ছাইয়িব’। সে কিতাবে তিনি যিকিরের ফায়দা ও ফযিলত সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। ঐ কিতাবে তিনি যিকিরের একশরও বেশি ফায়দা উল্লেখ করেছেন। কিছু ফায়দা এখানে তুলে ধরা হল।
১. যিকির শয়তানকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং তার শক্তি নষ্ট করে দেয়।
২. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়।
৩. দুশ্চিন্তা দূর করে।
৪. প্রশান্তি দান করে।
৫. অন্তর ও শরীরে শক্তি যোগায়।
৬. চেহারা ও অন্তরকে নূরানী করে।
৭. রিযিকে বরকত আনে।
৮. যিকিরকারীর মাঝে মাধুর্য ও গাম্ভীর্য সৃষ্টি করে।
৯. আল্লাহর মহববত পয়দা করে। আর মহববতই হচ্ছে ইসলামের রূহ দীনের কেন্দ্র এবং মুক্তি ও সৌভাগ্যের উপায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর মহববত পেতে চায় সে যেন বেশী বেশী যিকির করে।
১০. যিকির মোরাকাবার পক্ষে সহায়ক, যা যিকিরকারীকে এহসানের মাকামে পৌঁছে দেয়। আর এই মাকামে পৌঁছলে বান্দার এমন ইবাদত নছীব হয় যেন সে আল্লাহকে দেখছে।
১১. যিকির মানুষকে আল্লাহমুখী করে। ঘরে বাইরে তার হালত এমন হয় যে, সকল বিষয়ে আল্লাহ তাআলাকে্ই সাহায্যকারী মনে করে এবং যাবতীয় বিপদ আপদে তাঁরই আশ্রয় গ্রহণ করে।
১২. আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়। যিকির যত বেশী হবে নৈকট্যও তত বৃদ্ধি পাবে। আর যিকির থেকে যতই গাফলতি করা হবে ততই আল্লাহ থেকে দূরে সরে যাবে।
১৩. আল্লাহর মারেফাতের দরজা খুলে যায়।
১৪. অন্তরে আল্লাহর ভয় ও বড়ত্ব সৃষ্টি হয় এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাকে দেখছেন, এই অনুভূতি সৃষ্টি হয়।
১৫. স্বয়ং আল্লাহ যিকিরকারীকে স্মরণ করেন।
১৬. দিলকে জিন্দা করে।
১৭. যিকির হল দিল ও রূহের গিযা। খাদ্যের অভাবে শরীর যেমন দুর্বল হয়ে পড়ে, তেমনি যিকিরের অভাবে দিলও মৃতপ্রায় হয়ে যায়।
১৮. দিলের মরিচা দূর করে। দিলের মরিচা হল খাহেশাত ও গাফলত। যিকির তওবা, ইস্তেগফারের মাধ্যমে তা দূর হয়।
১৯. গুনাহ মাফ হয়। কারণ যিকির হল সর্বোত্তম নেক আমলসমূহের অন্যতম। আর নেক আমলের মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়ে থাকে।
২০. আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে এবং সম্পর্কহীনতা দূর করে। গাফিল আল্লাহ থেকে দূরে থাকে, শুধু যিকিরের মাধ্যমেই এই দূরত্ব দূর হয়।
২১. বান্দা তার প্রতিপালকের যে সমস্ত তাসবীহ আদায় করে যে কারণে কঠিন মুহূর্তে আল্লাহ তাকে স্মরণ করবেন।
২২. যে ব্যক্তি সুখ ও সচ্ছলতায় আল্লাহকে স্মরণ করে, দু:খ ও মুছিবতে আল্লাহ তাকে স্মরণ করেন।
২৩. যিকির আল্লাহর আযাব থেকে নাযাত দান করে।
২৪. যিকিরের কারণে ছাকিনা ও রহমত নাযিল হয়। ফেরেশতারা চতুর্দিক থেকে যিকিরকারীকে ঘিরে রাখে।
২৫. যিকিরের বরকতে গীবত, চোগলখুরী, মিথ্যাকথা, বেহুদা কথা ইত্যাদি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, যিকিরে অভ্যস্ত ব্যক্তি এই সব কাজ কর্মে লিপ্ত হয় না। পক্ষান্তরে যিকিরের বিষয়ে উদাসীন লোকেরা এই সব কর্মে লিপ্ত থাকে।
২৬. যিকিরের মজলিস ফেরেশতাদের মজলিস। আর গাফলতি ও বেহুদা কথাবার্তার মজলিস হল শয়তানের মজলিস।
২৭. যিকিরের কারণে যেমন যিকিরকারী উপকৃত হয় তেমনি আশেপাশের লোকেরাও উপকৃত হয়। আর বেহুদা কথাবার্তায় লিপ্ত ব্যক্তি নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তার আশেপাশের লোকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২৮. যিকিরকারী কেয়ামতের দিন আফসোস করবে না। হাদীসে আছে, যে মজলিসে আল্লাহর যিকির হয় না। কেয়ামতের দিন তা আফসোস ও ক্ষতির কারণ হবে।
২৯. নির্জনে আল্লাহর স্মরণে যার চোখ থেকে অশ্রু ঝরে সে কেয়ামতের দিন আরশের শীতল ছায়ায় স্থান পাবে। যখন মানুষ প্রচন্ড গরমে ছটফট করতে থাকবে।
৩০. দোয়াকারী দোয়ার মাধ্যমে যা কিছু পায় যিকিরকারী যিকিরের কারণে তার চেয়ে অনেক বেশি পায়।
৩১. যিকির যদিও সহজ ইবাদত কিন্তু তা সমস্ত ইবাদত থেকে উওম। সহজ এই জন্য যে, শুধু যবান নড়াচড়া করা সমস্ত অঙ্গ-পতঙ্গ নড়াচড়া করা থেকে সহজ।
৩২. আল্লাহর যিকির জান্নাতের চারাগাছ।
৩৩. যিকিরের মাধ্যমে যত পুরুস্কার ও ছওয়াব পাওয়া যায়। অন্য কোন আমলের দ্বারা তা পাওয়া যায় না।
৩৪. যে সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করে আল্লাহ তাকে রহমতের সাথে স্মরণ করেন। আর যে আল্লাহকে ভুলে যায় আল্লাহও তাকে ভুলে যান। আল্লাহ যাকে ভুলে যান দুনিয়া ও আখেরাতে তার চেয়ে দুর্ভাগা আর কে হতে পারে? সুতরাং যিকির হল সৌভাগ্য লাভ করার ও দুর্ভাগ্য থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়।
৩৫. যিকির মানুষকে সর্বাবস্থায় আল্লাহর রেযামন্দির পথে ধাবমান রাখে। বিছানায়, বিশ্রামে, সুস্থতায়, অসুস্থতায়, দুনিয়ার কাজকর্মে সর্বাবস্থায় যিকিরের মাধ্যমে উন্নতির পথে চলমান থাকা সম্ভব। যিকির ছাড়া আর কোন আমল নেই, যা সর্বাবস্থায় জারি রাখা যায়। ফলে যিকিরকারী বিছানায়, বিশ্রামরত অবস্থায় ও ঐ ব্যক্তির চেয়ে অগ্রগামী হয়ে যায়, যে গাফেল অবস্থায় রাত্রী জাগরণ করে।
৩৬. যিকির দুনিয়ার জীবনে নূর ও আলো, কবরের জগতে নূর ও আলো এবং আখেরাতে ও পুলসিরাতে নূর ও আলো। অন্য কিছুই বান্দাকে এত নূর ও নূরানিয়াত দান করে না।
৩৭. আল্লাহর স্মরণ ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়।এটি আল্লাহওয়ালাদের তরীকা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উপায়।অতএব যিকিরের দরজা যার জন্য উন্মুক্ত হয়েছে তার জন্য আল্লাহর নৈকট্যের দরজা উন্মুক্ত হয়েছে। অতএব সে যেন যাহেরী ও বাতেনী পবিত্রতা অর্জন করে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য অর্জন করে। যে আল্লাহকে পেল সে সব পেল আর যে আল্লাহকে পেল না সে কিছুই পেল না।
৩৮. অন্তরের একটি চাহিদা আছে, যা যিকির ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে পূরণ হয় না। যিকির যখন অন্তরে বদ্ধমূল হয় এবং অন্তরই হয় প্রকৃত যিকিরকারী। আর যবান হয় তার অনুসারী,তখন তা শুধু অন্তরের চাহিদাকেই পূরণ করে না বরং যিকিরকারীকে সম্পদ ছাড়াই ধনী করে দেয়। আত্মীয়-স্বজন ও জনবল ছাড়াই শক্তিশালী বানিয়ে দেয় এবং ক্ষমতা ছাড়াই প্রভাবশালী বানিয়ে দেয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি যিকির থেকে গাফেল সে ধন সম্পদ, আত্মীয়-স্বজন ও রাজত্ব থাকা সত্ত্বেও লাঞ্ছিত, অপমানিত ও শক্তিহীন হয়ে যায়।
৩৯. যিকির বিক্ষিপ্তকে একত্র করে এবং একত্রকে বিক্ষিপ্ত করে। দূরবর্তীকে নিকটবর্তী করে এবং নিকটবর্তীকে দূরবর্তী করে।বিক্ষিপ্তকে একত্র করার অর্থ হল, মানুষের ইচ্ছা, সংকল্প ও একগ্রতা ফিরিয়ে দেয় এবং তা শক্তিশালী করে। আর একত্রকে বিক্ষিপ্ত করার অর্থ মানুষের অন্তরের দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী দূর করে দেয়। যিকিরের মাধ্যমে পেরেশানি দূর হয় এবং অন্তরে প্রশান্তি আসে। তেমনি কৃতকর্মের ফলে যে পাপরাশি একত্র হয়েছে যিকির তা দূর করে এবং আমলনামাকে পাপমুক্ত করে। তেমনি শয়তানের যে বাহিনী মানুষকে ঘেরাও করে যিকির তাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মানুষ যত আল্লাহর পথে আগুয়ান হয় এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্কে গড়তে সচেষ্ট হয়, ততই শয়তান তার বাহিনীকে মানুষের প্রতি ধাবিত করে। যিকির ছাড়া এই বাহিনীকে পরাস্ত করার আর কোনো উপায় নেই।
৪০. যিকির মানুষের অন্তরকে নিদ্রা থেকে জাগ্রত করে। অন্তর যখন ঘুমন্ত থাকে তখন সে লাভ ও পুঁজি দুটো থেকেই বঞ্চিত থাকে। এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর যখন সে জাগ্রত হয় এবং কী হারিয়েছে তা বুঝতে পারে তখন ক্ষতিপূরণের জন্য কোমর বাঁধে। গাফলত ও উদাসীনতার গভীর নিদ্রা থেকে যিকিরই মানুষকে জাগ্রত করতে পারে।
৪১. যিকির একটি বৃক্ষ তাতে মারেফাতের ফল ধরে। আল্লাহর মারিফাত ও মহববতই হচ্ছে আল্লাহ প্রেমীদের পরম লক্ষ। সুতরাং যিকির এই লক্ষ্য পূরণের প্রধান অবলম্বন। যিকির বৃক্ষ যত বড় হবে তাতে তত বেশি ফল ধরবে।
৪২. যিকির প্রথমে মানুষকে জাগ্রত করে তারপর তাকে তাওহীদ পযন্ত পৌঁছে দেয়।যা সকল মাকাম ও মারিফাতের মূল।
৪৩. যে আল্লাহর যিকির করে আল্লাহ তার সঙ্গে থাকেন। অর্থাৎ তাকে ভালবাসেন এবং তার সাহায্য করেন।
৪৪. যিকির গোলাম আযাদ করা, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা ও মুজাহিদকে সওয়ারী দ্বারা সহযোগিতা করার সমতুল্য।
৪৫. যিকির হচ্ছে শোকর গোযারির প্রধান উপায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকির করে না প্রকৃতপক্ষে সে তার শোকর আদায় করেনা।
৪৬. আল্লাহর নিকট ঐ মুত্তাকি বান্দা বেশি সম্মানিত যার যবান আল্লাহর যিকিরে তরতাজা থাকে। যে আল্লাহর ভয়ে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলেছে এবং সর্বদা আল্লাহর যিকির করেছে । তাকওয়া ও পরহেযগারের কারণে আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। এবং জাহান্নাম থেকে নাযাত দিবেন । এটা হল তার কর্মের প্রতিদান। আর যিকিরের কারণে সে লাভ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য। এটা হল তার বিশেষ মর্যাদা।
৪৭. মানুষের অন্তরের কাঠিন্য যিকির ছাড়া অন্য কিছুর দ্বারা দূর হয় না। তাই বান্দার কর্তব্য দিলের কাঠিন্যকে আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে দূর করা।
৪৮. যিকির হল দিলের যাবতীয় রোগের চিকিৎসা। যে দিল আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন তা রোগাক্রান্ত। তার উপশমের উপায় হল আল্লাহর যিকির।
৪৯. যিকির হল আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার প্রধান উপায়। আর যিকির হতে গাফেল থাকাই আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও নারাজির প্রধান কারণ। সুতরাং বান্দা যখন আল্লাহর যিকির করতে থাকে তখন সে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি উদাসীন থাকে সে ধীরে ধীরে আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায় এবং আল্লাহ তাকে অপছন্দ করতে থাকেন।
৫০. যিকিরের মতো আল্লাহর নেয়ামত আকর্ষণকারী এবং আল্লাহর আযাব দূরকারী আর কোনো জিনিস নেই।
৫১. যিকিরকারীর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় এবং ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করে। আর এটাই হল পূর্ণ সফলতা ও কামিয়াবি।
৫২. যে ব্যক্তি দুনিয়াতে থেকেই জান্নাতের বাগানে বিচরণ করতে চায় সে যেন যিকিরের মজলিসে শামিল হয়। কারণ এই মজলিস হল জান্নাতের বাগান।
৫৩. যিকিরের মজলিস হল ফেরেশতাদের মজলিস। কারণ একমাত্র যিকিরের মজলিসেই ফেরেশতারা শামিল হয়ে থাকেন।
৫৪. আল্লাহ তাআলা যিকিরকারীদের নিয়ে ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করেন।
৫৫. যে ব্যক্তি যিকিরে অভ্যস্ত সে হাসতে হাসতে জান্নাতে যাবে।
৫৬. যাবতীয় আমলের মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহর যিকির ও স্মরণ।
৫৭. সমস্ত আমলের মধ্যে সেই আমল সর্বোত্তম, যাতে বেশি বেশি যিকির করা হয়। সুতরাং সর্বোত্তম রোযাদার ঐ ব্যক্তি, যে রোযার হালতে বেশি বেশি যিকির করে। সর্বোওম হাজী ঐ ব্যক্তি, যে হজ্ব আদায়কালে বেশি বেশি যিকির করে। তেমনি সর্বোত্তম মুজাহিদ ঐ ব্যক্তি, যে জিহাদের হালতে বেশি বেশি আল্লাহকে স্বরণ করে। অন্যান্য আমলের অবস্থাও হবে একই রকম।
৫৮. আল্লাহর যিকির সকল নফল ইবাদতের স্থলাভিষিক্ত, তা দৈহিক হোক বা আর্থিক।
৫৯. যিকিরের মাধ্যমে অন্যান্য ইবাদত সহজ হয়ে যায়। কারণ যে বেশি বেশি যিকির করে সে আল্লাহর ইবাদতে লয্যত অনুভব করে ফলে তার ক্লান্তি ও অবসাদ থাকে না। পক্ষান্তরে যে আল্লাহর যিকির থেকে গাফিল থাকে সে কোনো ইবাদতে লয্যত পায় না। ফলে ইবাদত তার জন্য কষ্ট ও ক্লান্তির বিষয়ে পরিণত হয়।
৬০. যিকিরের দ্বারা কঠিন কাজ সহজ হয় এবং বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সুতরাং আল্লাহর যিকির এমন এক নেয়ামত, যা সকল মুশকিলকে আসান করে দেয়।
৬১. যিকিরের কারণে ভয়ভীতি দূর হয় এবং প্রশান্তি লাভ হয়। এমনকি ভয়ভীতির অবস্থাগুলোও যাকিরের জন্য প্রশান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়ে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে যে যিকির থেকে গাফিল থাকে সে সর্বদা ভীতিগ্রস্ত থাকে। এমনকি শান্তি ও নিরাপত্তার উপায় ও উপকরণও তার জন্য ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৬২. যিকিরের দ্বারা মানুষ এক বিশেষ শক্তি লাভ করে, যার দ্বারা অতি কঠিন কাজও তার জন্য সহজ হয়ে যায়।
৬২. আখিরাতের জন্য যারা কাজ করে তারা সবাই যেন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত । আর তাদের মধ্যে যিকিরকারীই হল অগ্রগামী। তবে ময়দান যেহেতু ধুলার ঝড়ে আচ্ছন্ন তাই এখনই তা দৃষ্টিগোচর হচেছ না। যেদিন এই ধুলার পর্দা সরে যাবে সেদিন সবাই পরিষ্কার দেখতে পাবে যে, যাকিরীনের জামাত সবার আগে লক্ষ্যে পৌঁছেছে।
৬৩. যিকিরকারী আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সত্যবাদিতার সনদ লাভ করে, কারণ যে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং আল্লাহর গুণাবলি বর্ণনা করে সে তার কথায় সত্য এবং আল্লাহ তাকে সত্যবাদী বলেন। আর আল্লাহ যাকে সত্যবাদী বলেন তার হাশর মিথ্যাবাদীদের সাথে হতেই পারে না।
৬৪. যিকিরের দ্বারা জান্নাতে ঘর তৈরি হয়। বান্দা যখন যিকির করে ফেরেশতারা জান্নাতে তার জন্য ঘর তৈরি করেন আর যখন যিকির বন্ধ করে তখন ফেরেশতারাও তাদের কাজ বন্ধ রাখেন।
৬৫. যিকির হল জাহান্নাম ও আল্লাহর বান্দার মাঝে দেয়াল স্বরূপ। বদআমলের কারণে মানুষ যখন জাহান্নামের পথে চলতে থাকে তখন যিকির তার সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই যিকির যত বেশি হবে প্রাচীর তত মজবুত ও নিশ্ছিদ্র হবে।
৬৬. ফেরেশতারা যেমন তাওবাকারীর জন্য ইস্তিগফার করেন তেমনি যিকিরকারীর জন্যও আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করেন।
৬৭. যে ভূখন্ডে আল্লাহর যিকির করা হয় তা অন্যান্য ভূখন্ডের সাথে গর্ব করে থাকে।
৬৮. বেশি বেশি যিকির করা মোনাফেকী হতে নিরাপদ থাকার উপায়। কারণ মুনাফেকরা আল্লাহ তাআলাকে খুব অল্প স্মরণ করে।
৬৯. যিকিরের মাঝে এক বিশেষ স্বাদ রয়েছে, যা অন্য কোনো আমলে পাওয়া যায় না। এই স্বাদ ও লযযত ছাড়া অন্য কিছুই যদি যিকিরের দ্বারা পাওয়া না যেত তবুও তা তার জন্য যথেষ্ট হত। এই কারণে যিকিরের মজলিসকে জান্নাতের বাগান বলা হয়।
৭০. যিকির চেহারায় সজিবতা দান করে। আর আখেরাতে নূর ও আলো দান করবে। এ কারণে দুনিয়াতে আল্লাহর যিকিরকারীর চেহারা থাকে সবচেয়ে সজীব আর আখিরাতে তা হবে সবচেয়ে নূরানী ও আলেকিত।
৭১. যে ব্যক্তি ঘরে-বাইরে সব জায়গায় বেশি বেশি যিকির করে কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্যদানকারী হবে অনেক বেশি। কারণ এসকল ভূখন্ড, বৃক্ষলতা, ঘরবাড়ি, সব তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে।
৭২. যবান যতক্ষণ যিকিরে মশগুল থাকবে ততক্ষণ মিথ্যা, গীবত, বেহুদা কথাবার্তা থেকে নিরাপদ থাকবে। কারণ যবান তো চুপ থাকে না, হয় আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকবে, নতুবা বেহুদা কথাবার্তায় লিপ্ত থাকবে। দিলের অবস্থাও অনুরূপ। দিল যদি আল্লাহর মহববতে মশগুল না হয় তাহলে মাখলুকের মহববতে মশগুল হবে।
৭৩. শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। সব সময় তাকে আতঙ্কিত করে রাখে এবং চতুর্দিক থেকে তাকে ঘেরাও করে রাখে। এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল আল্লাহর যিকির। যে যত যিকির করবে সে তত বেশি শয়তানের হামলা থেকে নিরাপদ থাকবে।
এই জাতীয় অনেক ফায়দা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. তার কিতাবে বিভিন্ন পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন।
যিকিরের কিছু মূল্যবান ও ফজিলতময় শব্দ ও বাক্যঃ
(سُبْحَانَ الله) সুবহানাল্লাহ।
(اَلْحَمْدُ للهِ) আলহামদুলিল্লাহ।
(لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ) লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
(اَللهُ اَكْبَر) আল্লাহু আকবার।
(سُبْحَانَ اللهِ وَ بِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْم) সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম।
যিকির এবং দুআ বিষয়ক আরও কিছু হাদিসঃ
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «كَلِمَتَانِ خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ، ثَقِيلَتَانِ فِي المِيزَانِ، حَبِيبَتَانِ إِلَى الرَّحْمَانِ: سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، سُبْحَانَ اللهِ العظيمِ» . متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'দু’টি কালিমা (বাক্য) রয়েছে, যা দয়াময় আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়, জবানে (উচ্চারণে) খুবই সহজ, আমলের পাল্লায় অত্যন্ত ভারী। তা হচ্ছে, ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযীম।’ অর্থাৎ আমরা আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, মহান আল্লাহ অতীব পবিত্র।' -মুত্তাফাকুন আলাইহি, সহীহুল বুখারী ৬৪০৬, ৬৬৮২, ৭৫৬৩, মুসলিম ২৬৯৪, তিরমিযী ৩৪৬৭, ইবনু মাজাহ ৩৮০৬, আহমাদ ৭১২৭
وَعَنْه رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لأَنْ أَقُولَ: سُبْحَانَ اللهِ، وَالحَمْدُ للهِ، وَلاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أكْبَرُ، أَحَبُّ إلَيَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ» . رواه مسلم
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার এই বাক্যমালা (সুবহানাল্লাহি অলহামদুলিল্লাহি অলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অল্লাহু আকবার। (অর্থাৎ আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ ছাড়া (সত্যিকার) কোনো ইলাহ নেই এবং আল্লাহ সব চাইতে মহান) পাঠ করা সেই সমস্ত বস্তু অপেক্ষা অধিক প্রিয়, যার উপর সূর্যোদয় হয়।” -সহীহুল বুখারী ৬৪০৬, ৬৬৮২, ৭৫৬৩, মুসলিম ২৬৯৪, তিরমিযী ৩৪৬৭, ইবনু মাজাহ ৩৮০৬, আহমাদ ৭১২৭
وَعَنْه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ قَالَ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ ؛ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، فِي يَوْمٍ مِئَةَ مَرَّةٍ كَانَتْ لَهُ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ وكُتِبَتْ لَهُ مِئَةُ حَسَنَةٍ، وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِئَةُ سَيِّئَةٍ، وَكَانَتْ لَهُ حِرْزاً مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَهُ ذَلِكَ حَتَّى يُمْسِي، وَلَمْ يَأتِ أَحَدٌ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِهِ إِلاَّ رَجُلٌ عَمِلَ أَكْثَرَ مِنْهُ» . وَقَالَ: «مَنْ قَالَ سُبْحَانَ الله وَبِحَمْدِهِ، فِي يَوْمٍ مِئَةَ مَرَّةٍ، حُطَّتْ خَطَايَاهُ، وَإنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ البَحْرِ» . متفقٌ عَلَيْهِ
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।’
অর্থাৎ এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো সত্য উপাস্য নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। (বিশাল) রাজ্যের তিনিই সার্বভৌম অধিপতি। তাঁরই যাবতীয় স্তুতিমালা এবং সমস্ত বস্তুর উপর তিনি ক্ষমতাবান।
যে ব্যক্তি এই দো‘আটি দিনে একশবার পড়বে, তার দশটি গোলাম আজাদ করার সমান নেকী অর্জিত হবে, একশ’টি নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে, তার একশ’টি গুনাহ মোচন করা হবে, উক্ত দিনের সন্ধ্যা অবধি তা তার জন্য শয়তান থেকে বাঁচার রক্ষামন্ত্র হবে এবং তার চেয়ে সেদিন কেউ উত্তম কাজ করতে পারবে না। কিন্তু যদি কেউ তার চেয়ে বেশী আমল করে তবে।”
তিনি আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি দিনে একশবার ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহ’ পড়বে তার গুনাহসমূহ মোচন করা হবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনা বরাবর হয়।” -মুত্তাফাকুন আলাইহি, সহীহুল বুখারী ৩২৯৩, ৬৪০৫, তিরমিযী ৩৪৬৬, ৩৪৬৮, ৩৪৬৯, আবূ দাউদ ৫০৯১, ইবনু মাজাহ ৩৭৯৮, ৩৮১২, আহমাদ ৭৯৪৮, ৮৫০২, ৮৬১৬, ৮৬৫৬, ৯৮৯৭, ১০৩০৫, মুওয়াত্তা মালিক ৪৮৬, ৪৮৭
وَعَنْ أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم : «أَلاَ أُخْبِرُكَ بِأَحَبِّ الكَلاَمِ إِلَى اللهِ ؟ إِنَّ أَحَبَّ الكَلاَمِ إِلَى اللهِ: سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ» . رواه مسلم
আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “ আমি কি তোমাকে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কথা কি তা জানাব? আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কথা হল, ‘সুবহানাল্লা-হি অবিহামদিহ’ (অর্থাৎ আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি।)” -মুসলিম ২৭৩১, তিরমিযী ৩৫৯৩, আহমাদ ২০৮১৩, ২০৯১৯, ২১০১৯
وَعَنْ أَبي مَالِكٍ الأَشعَرِي رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم : «الطُّهُورُ شَطْرُ الإِيمانِ، وَالحَمْدُ للهِ تَمْلأُ المِيزَانَ، وَسُبْحَانَ اللهِ وَالحَمْدُ للهِ تَمْلآنِ - أَوْ تَمْلأُ - مَا بَيْنَ السَّمَاوَاتِ وَالأرْضِ». رواه مسلم
আবূ মালেক আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “পবিত্রতা অর্ধেক ঈমান। আর ‘আলহামদু লিল্লাহ’ (কিয়ামতে নেকীর) দাঁড়িপাল্লাকে ভরে দেবে এবং ‘সুবহানাল্লাহ’ ও ‘আলহামদু লিল্লাহ’ আসমান ও জমিনের মধ্যস্থিত শূন্যতা পূর্ণ করে দেয়।” -মুসলিম ২২৩, তিরমিযী ৩৫১৭, ইবনু মাজাহ ২৮০, আহমাদ ২৩৯৫, ২২৪০১, দারেমী ৬৫৩
وَعَنْ ثَوبَانَ رضي الله عنه قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم إِذَا انْصَرَفَ مِنْ صَلاَتِهِ اسْتَغْفَرَ ثَلاثَاً، وَقَالَ: «اَللهم أَنْتَ السَّلاَمُ، وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَاذَا الجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ». قِيلَ لِلأَوْزَاعِيِّ - وَهُوَ أَحَدُ رُوَاةِ الحَدِيثِ -: كَيْفَ الاِسْتِغْفَارُ ؟ قَالَ: يَقُولُ: أَسْتَغْفِرُ الله، أَسْتَغْفِرُ الله . رواه مسلم
সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায থেকে সালাম ফিরার পর ঘুরে বসতেন, তখন তিনবার ‘ইস্তিগফার’ (ক্ষমা প্রার্থনা) করতেন আর পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা আন্তাস সালামু অমিনকাস সালামু তাবারাকতা ইয়া যাল-জালালি অল-ইকরাম। অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময়, তোমার নিকট থেকেই শান্তি আসে। তুমি বরকতময় হে মহিমান্বিত ও মহানুভব।
এ হাদিসটির অন্যতম বর্ণনাকারী আওযায়ী (রহঃ)কে প্রশ্ন করা হল, ‘ইস্তিগফার’ কিভাবে হবে? উত্তরে তিনি বললেন, বলবে, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ।’ (অর্থাৎ আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।) -মুসলিম ৫৯১, তিরমিযী ৩০০, আবূ দাউদ ১৫১২, ইবনু মাজাহ ৯২৮, আহমাদ ২১৯০২, দারেমী ১৩৪৮
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ فُقَراءَ المُهَاجِرِينَ أَتَوْا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالُوا: ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثورِ بِالدَّرَجَاتِ العُلَى، وَالنَّعِيمِ المُقِيمِ، يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي، وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ، وَلَهُمْ فَضْلٌ مِنْ أَمْوَالٍ، يَحُجُّونَ، وَيَعْتَمِرُونَ، وَيُجَاهِدُونَ، وَيَتَصَدَّقُونَ . فَقَالَ: «أَلاَ أُعَلِّمُكُمْ شَيْئاً تُدْرِكُونَ بِهِ مَنْ سَبَقَكُمْ، وَتَسْبِقُونَ بِهِ مَنْ بَعْدَكُمْ، وَلاَ يَكُونُ أَحَدٌ أَفْضَلَ مِنْكُمْ إِلاَّ مَنْ صَنَعَ مِثْلَ مَا صَنَعْتُمْ؟» قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: تُسَبِّحُونَ، وَتَحْمَدُونَ، وَتُكَبِّرُونَ، خَلْفَ كُلِّ صَلاَةٍ ثَلاثاً وَثَلاثِينَ». قَالَ أَبُو صَالِحٍ الرَّاوِي عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، لَمَّا سُئِلَ عَنْ كَيْفِيَّةِ ذِكْرِهِنَّ قَالَ: يَقُول: سُبْحَان اللهِ، وَالحَمْدُ للهِ، واللهُ أكْبَرُ، حَتَّى يَكُونَ مِنهُنَّ كُلُّهُنَّ ثَلاثاً وَثَلاثِينَ. متفقٌ عَلَيْهِ
وَزَادَ مُسلِمٌ فِي رِوَايَتِهِ: فَرَجَعَ فُقَرَاءُ المُهَاجِرِينَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالُوا: سَمِعَ إِخْوَانُنَا أَهْلُ الأَمْوَالِ بِمَا فَعَلْنَا فَفَعَلُوا مِثْلَهُ ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم : ذَلِكَ فَضْلُ الله يُؤتِيهِ مَنْ يَشَاءُ
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, একদা গরীব মুহাজির (সাহাবিগণ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! ধনীরাই তো উঁচু উঁচু মর্যাদা ও চিরস্থায়ী সম্পদের অধিকারী হয়ে গেল। তারা নামায পড়ছে, যেমন আমরা নামায পড়ছি, তারা রোযা রাখছে, যেমন আমরা রাখছি। কিন্তু তাদের উদ্বৃত্ত মাল আছে, ফলে তারা হজ্জ করছে, উমরাহ করছে, জিহাদ করছে ও সদকা করছে, (আর আমরা করতে পারছি না)।’ এ কথা শুনে তিনি বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে এমন জিনিস শিখিয়ে দেব না, যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের মর্যাদা লাভ করবে, তোমাদের পরবর্তীদের থেকে অগ্রবর্তী থাকবে এবং তোমাদের মত কাজ যে করবে, সে ছাড়া অন্য কেউ তোমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠতর হতে পারবে না?” তাঁরা বললেন, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল! (আমাদেরকে তা শিখিয়ে দিন।)’ তিনি বললেন, “প্রত্যেক (ফরয) নামাযের পরে ৩৩ বার তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীর পাঠ করবে।”
আবূ হুরাইরা থেকে বর্ণনাকারী আবূ সালেহ বলেন, ‘কিভাবে পাঠ করতে হবে, তা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলবে। যেন প্রত্যেকটি বাক্য ৩৩ বার করে হয়। (বুখারী-মুসলিম)[1]
মুসলিমের বর্ণনায় এ কথা বাড়তি আছে যে, অতঃপর গরীব মুহাজিরগণ পুনরায় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ‘আমরা যে আমল করছি, সে আমল আমাদের ধনী ভাইয়েরা শোনার পর তারাও আমল শুরু করে দিয়েছে? (এখন তো তারা আবার আমাদের চেয়ে অগ্রবর্তী হয়ে যাবে।)’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এ হল আল্লাহর অনুগ্রহ; তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।” [1] সহীহুল বুখারী ৮৪৩, মুসলিম ৫৯৫, আবূ দাউদ ১৫০৪, আহমাদ ৭২০২, দারেমী ১৩৫৩
وَعَنْه، عَن رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ سَبَّحَ اللهَ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلاَةٍ ثَلاَثاً وَثَلاَثِينَ، وحَمِدَ اللهَ ثَلاثاً وَثَلاَثِينَ، وَكَبَّرَ الله ثَلاَثاً وَثَلاَثِينَ، وَقَالَ تَمَامَ المِئَةِ: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، غُفِرَتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ البَحْرِ». رواه مسلم
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক (ফরয) নামায বাদ ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ ও ৩৩ বার আল্লাহু আকবার এবং একশত পূর্ণ করতে ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুলি শায়ইন ক্বাদীর’ পড়বে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়। -মুসলিম ৫৯৭, আবূ দাউদ ১৫০৪, আহমাদ ৮৬১৬, ৯৮৯৭, মুওয়াত্তা মালিক ৮৪৪
وَعَنْ مُعَاذٍ رضي الله عنه:أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، أَخَذَ بِيَدِهِ، وَقَالَ: «يَا مُعَاذُ، وَاللهِ إنِّي لأُحِبُّكَ» فَقَالَ: «أُوصِيكَ يَا مُعَاذُ لاَ تَدَعَنَّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلاَة تَقُولُ: اَللهم أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ» . رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত ধরে বললেন, “হে মুআয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি।” অতঃপর তিনি বললেন, “হে মুআয! আমি তোমাকে অসিয়ত করছি যে, তুমি প্রত্যেক নামাযের শেষাংশে এ দো‘আটি পড়া অবশ্যই ত্যাগ করবে না, ‘আল্লা-হুম্মা আইন্নী আলা যিকরিকা ওয়াশুকরিকা অহুসনি ইবা-দাতিক।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার যিকির (স্মরণ), শুকর (কৃতজ্ঞতা) এবং সুন্দর ইবাদত করতে সাহায্য দান কর।” -আবূ দাউদ ১৫২২, ৫৪৮২, ৫৪৮৩, আহমাদ ২১৬২১
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বেশি বেশি যিকির করার তাওফিক দান করুন এবং তাঁর যিকিরের আলো-আভায় আলোকিত আভাদ্বীপ্ত এবং উজ্জ্বল প্রভাময় করুন আমাদের অন্তকরণসমূহকে। দুনিয়া ও আখিরাতে তিনি আমাদেরকে যিকিরের বরকত লাভ করার তাওফিক দিন।
২২ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৪২
নতুন নকিব বলেছেন:
আমিন।
২| ২০ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:০৫
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আল্লাহ আমাদেরকে বেশী বেশী যিকির ও নেক আমল করার তওফিক দিন।
২২ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৪৩
নতুন নকিব বলেছেন:
আমিন।
৩| ২০ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৪৯
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: জিকির হল সবচেয়ে সহজ অথচ ভারী একটা ইবাদত। রাসুল (সাঃ) বলেছেন: “আলহামদুলিল্লাহ’ ওজন দণ্ডের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দেবে” [সহিহ মুসলিম ২য় খণ্ড, হাদিস ৪৪১]। তাই কেউ যদি শুধু সুবাহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু একবার জিকির করে তার বরকত অনেক। ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টের জন্য।
২২ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৪৪
নতুন নকিব বলেছেন:
হাদিসের উদ্ধৃতিসহ মন্তব্যে আসায় কৃতজ্ঞতা।
অনেক অনেক ভালো থাকার দুআ।
৪| ২০ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:২৩
অজ্ঞ বালক বলেছেন: বিশাআআআল পোস্ট। পড়তে পড়তে শেষ। সঠিক রেফারেন্স দিয়া, টু দ্য পয়েন্ট পোস্ট লিখছেন। ভালো পোস্ট। ধর্মীয় পোস্ট এরকম মানসম্পন্ন কমই দেখা যায়। পোস্টে পিলাচ।
২২ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৪৫
নতুন নকিব বলেছেন:
অনিঃশেষ আন্তরিকতাপূর্ণ মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা অশেষ।
কল্যানের দুআ সবসময়।
৫| ২০ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৬
মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: রাজিব নুর বলেছেন: আল্লাহ আমাকে বেশি বেশি টাকা পয়সা দান করুক। আমিন।
এই ভদ্রলোকতো বলেন দু’য়া বিজ্ঞান সমর্থন করেনা। দু’য়ায় কারো ভাগ্য বদলায় না, শরিয়াত ওনাকে ভাত দেয় না।
এখানে যে মন্তব্য করলেন তাতো স্ববিরোধীতা নাকি তওবা করেছেন ?
২২ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৪৮
নতুন নকিব বলেছেন:
এগুলো তার মনের কথা নয়। আসলে তিনি ভালো মানুষ। আমরা এমনটাই ধারণা করি।
৬| ২০ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৯
মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: যারা জিকির করে আর যারা জিকির করে না তাদের মধ্যে পার্থক্য হলো জীবিত এবং মৃতর ন্যয়। যারা জিকির করে তারা জিন্দা আর যারা করেনা তারা মুর্দ্দা।
২২ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৫৫
নতুন নকিব বলেছেন:
জ্বি, হাদিসের বক্তব্য উল্লেখ করায় শুকরিয়া।
৭| ২০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: মোঃ খুরশীদ আলম সাহেব আমাকে বুঝতে পারবেন না।
২২ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৫৬
নতুন নকিব বলেছেন:
জ্বি সেটাই, আমরা তো আপনাকে জানি। তিনি হয়তো আপনার সাথে পরিচিত হয়ে উঠতে পারেননি এখনও।
৮| ২১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৩১
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
খুবই মুল্যবান একটি বিষয়ে পোষ্ট দিয়েছেন । মুল্যবান কথা বলেছেন ‘জিকির মানে আল্লাহ তায়ালার স্মরণ’। আল্লাহর জিকির সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম ইবাদত; কেননা, আল্লাহতায়ালার স্মরণই হচ্ছে যাবতীয় ইবাদতের প্রধান ও অন্যতম লক্ষ্য।
কুরআনের অনেক আয়াতে এবং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক হাদিসেই জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলতের উল্লেখ রয়েছে । জিকির করার জন্য মানুষের প্রতি রয়েছে তাগিদ।জিকির এমন এক ইবাদত, যে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয়ভাজন হওয়া যায় এবং আমলকারী বান্দারা দুনিয়ার যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।
জিকিরের ফজিলতে শান্ত থাকে জিকিরকারীর অন্তর। জিকিরের কিছু মুল্যবান ও ফজিলতময় শব্দ ও বাক্য হলো
(سُبْحَانَ الله) সুবহানাল্লাহ
(اَلْحَمْدُ للهِ) আল-হামদুলিল্লাহ
(لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
(اَللهُ اَكْبَر) আল্লাহু আকবার
(سُبْحَانَ اللهِ وَ بِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْم) সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম।
আমরা মুসলমানগন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের নিমিত্ত অজু থেকে শুরু করে আযান দেয়া(যদি কেও দেন , মসজিদের মুয়াজ্জিনতো অবশ্যই দেন)তার পরে জায়নামাজের দোয়া, (ফরজ নামাজের জন্য আকামতসহ) নামাজের নিয়ত, , সানাপাঠ, বিসমিল্লাহ হির রাহমানির রাহিম উচ্চারণের পরে সুরা ফাতিহা ও পবিত্র কোরানের আয়াত পাঠের পর রুকুতে যাওয়ার সময় , রুকু কালীন সময়ে , রুকু থেকে সুজা হয়ে দাঁড়ানোর সময় , তার পরে সিজদায় যাওয়ার সময় , সিজদাকালীন সময়ে, দুই সিজদার মাজের সময়ে বসে দোয়া (যদি দোয়া পাঠ করা হয়), পুণরায় সিজদা ও সিজদার শেষে পরের রাকাতের জন্য উঠে দাঁড়ানোর সময় , তার পরের রাকাতগুলির জন্য একই নিয়মে সুবহানাল্লাহ,আল-হামদুলিল্লাহ,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার প্রভৃতি ফজিলতময় শব্দ সম্ভার অসংখবার স্বশব্দে কিংবা নিরবে পাঠ করে থাকি যা জিকিরের তথা আল্লার স্মরনের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত । অবশ্য পুরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ অদায়টিই আল্লার স্মরন, সেসাথে বাধ্যতামুলক নামাজ( ইবাদত)আদায় হিসাবে গন্য।
অন্যদিকে আল্লার স্মরনকেই যদি আরবী ভাষায় জিকির বলা হয় তাহলে (১) শয়নে, স্বপনে জাগরনে যদি বিশ্বব্রমান্ডের সৃস্টি কর্তা এক ও অদ্বিতীয় সত্তার( যিনি একাধারে আল্লাহ ও অনেক গুনাবলীসমৃদ্ধ নামে অভিহিত)অস্তিত্বকে বিশ্বাস ও স্মরন করা হয় এবং এবং সেই অদ্বিতীয় সত্তার অস্বিত্বকে মনে মনে প্রবল বিশ্বাসের সহিত স্বিকারের জন্য শুধু সর্বান্তকরনে অন্তরে অনুভুতি জাগ্রত হলেই চলে সেসাথে মহান সত্বার গুনাবলি অনুভবের জন্যও কোন বিশেষ শব্দ বা ভাষার প্রয়োজন হয়না । বলা হয়েছে মানুষের মনের প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল ভাব/অনুভব সম্পর্কে আল্লাহ সম্পুর্ণ ওয়াকেবহাল, কিছুই তাঁর অজানা নয়, বিষয়টি সুস্পষ্ট করে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- ‘(হে রাসুল!) আপনি বলে দিন, যদি তোমরা তোমাদের মনের কথা গোপন করে রাখ অথবা প্রকাশ করে দাও, আল্লাহ সে সবই জানতে পারেন। আর আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সেসবও তিনি জানেন। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ২৯ এবং একজন মানুষ সে অনুযায়ীই তাঁকে স্মরনের জন্য পুরস্কার/প্রতিফল পাবে। তাই আল্লার কাছে মনের ভাব বা স্মরনকে পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য কেন বিশেষ কিছু নির্ধারিত শব্দ বা বাক্য (আরবীতে) বিশেষ বিশেষ সময়ে নিদ্ধারিত কিছু সংখায় ( অবশ্য সব জিকিরের বেলায় নয় )সবাক কিংবা নির্বাক উচ্চারনের মাধ্যমে জিকির কর্মে ব্যবহার করার আবশ্যকিয়তা আছে কিনা সে সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন । এইসকল প্রশ্নের প্রেক্ষিতে তাঁকে কখন কিভাবে স্মরন করা যায় সে বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক স্থানে আলাদাভাবে বিভিন্ন বিষয় সুস্পষ্ট করেছেন।
বেশ কিছু কাল ধরে লক্ষ্য করা যায় যে জিকির বলতে সাধারণ মানুষ ভাবে জিকির মনে হয় একটি বিশেষ ধরনের ইবাদত এবং একটি বিশেষ নির্ধারিত পন্থায় জিকির করতে হবে । আর এই বিষয়টিকেই পুঁজি করে আমাদের এই সমাজের কিছু পীর ফকির তাদের মুরিদকে বিশেষ পদ্ধতিতে জিকির করার তালিম দেন । অনেককেই দেখেছি একা নীজে নীজে আল্লাহু, অল্লাহু, শব্দ করে বার বার মাথা জুকিয়ে জিকির করেন। এমনো দেখা গেছে যে কতক পীরভক্ত মুরিদ/অনুসারী দলবদ্ধভাবে মাইক লাগিয়ে বিশেষ ধরনের শব্দ উচ্চারণ করে মাথা জুকিয়ে (বার বার উপর নীচ করে) যিকির করেন । জিকিরকারীদের অনেককেই জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছি এরকমভাবে জিকির করে তারা নাকি তাদের বুকের ভিতরে থাকা কলবকে জাগ্রত করেন যেন তা সবসময় আল্লার তরে জিকিররত (স্মরনরত) অবস্থায় থাকতে পারে। এখন কথা হলো বিজ্ঞানীগন প্রমান করেছেন যে মানুষের সব জানা ব্যক্ত ও অব্যক্ত কথামালাই স্মরনে থাকে তার মগজের ভিতরে মেমোরি সেলে ( মেমোরি কার্ডে)বুকের কলবের ভিতরে নয়, যেমনটি মানুষ চোখে প্রথমে যা দেখে তা প্রেরণ করে তার ব্রেইনে বা মগজে সেখান হতে তার চোখে সংকেত আসে সে কি দেখেছে, তার পরেই সে কেবল বুজতে ও জানতে পারে সে চেখে কি দেখেছে।
তাই বলা চলে আল্লার স্মরনকে নীজের মধ্যে গেথে রাখতে হলে সচল রাখতে হবে তার ব্রেইন তথা মগজের মেমোরি সেলকে , এখন এই মেমোরি সচল রাখার উত্তম পন্থা হলো আল্লাহ নির্ধারিত সহজ সরল পন্থায় নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় । নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলেই আল্লাহকে স্মরন করার জন্য মানসিক ও দৈহিক সকল অংগগুলিই সচল থাকবে আর এগুলি সচল থাকলে সে সর্বদাই আল্লার প্রতি অনুগত ও আল্লাহ প্রদত্ত বিধিবিধানের প্রতি অবিচল থেকে তার নীজের আত্বিক উন্নতি, জীবনাচার সেসাথে পরিবারের, সমাজের ও দেশের প্রতি তার কর্তব্য পালন করতে পারবে।
তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পরে কেহ যদি তাঁর ব্যক্তিগত আমল নামায় তাঁর পুণ্যের মাত্রাকে আরো সমৃদ্ধ করতে চান তবে তারা কোরান ,হাদিছ ও বিভিন্ন ইসলামী স্কলার নির্দেশিত পন্থায় যত পারুন জিকির করুন, এটা তাঁর নীজের জন্য মঙ্গলকর তাতে কোন সন্দেহ নেই, বরং নিয়মসিদ্ধ (বেদাতি পন্থার জিকির ব্যতিত) পন্থায় জিকিরের জন্য অবশ্যই তাঁরা সৃস্টি কর্তার নিকট অধিক মাত্রায় প্রসংসার যোগ্য হবেন ।
এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলতে চাই যে আমরা সকলেই জানি দুনিয়ার জীবনের সমাপ্তি হলো মৃত্যু। এর মাধ্যমে আমরা দুনিয়ার জীবনের নির্ধারিত আয়ু শেষ করে বারজাখ জীবনে প্রবেশ করি, যা সবার জন্যই অবধারিত। জীবনমাত্রই মরণশীল। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেছেন, ‘কুল্লু নাফসিন জায়িকাতুল মাউত’। অর্থাৎ প্রত্যেক সত্তাই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)।
ইসলামি বিধানমতে, মৃত ব্যক্তির দেহ দাফন বা সমাধিস্থ করা হয়। আমরা জনি যে মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত তথা হাশর নশর ও বিচার ফয়সালার পূর্ব পর্যন্ত সময়কে বারজাখ বা অন্তর্বর্তী সময় বলা হয়। বারজাখ জীবনকে সাধারণভাবে কবর জীবন বলা হয়ে থাকে। কারণ, স্বাভাবিক অবস্থায় মৃতদেহ বা লাশ কবর দেওয়া হয়ে থাকে। যাদের বিশেষ কোনো কারণে কবর বা দাফন করা হবে না, তাদেরও বারজাখ জীবন একই রকম হবে। যদিও কবর বারজাখের সমার্থক নয়, তবু বারজাখ জীবন বোঝাতে কবর শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এটাও আবার আমরা সকলে জানি যে বারজাখ জীবন বা কবরে প্রত্যেক মানুষকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। এই প্রশ্ন করার জন্য যে ফেরেশতারা আসবেন, তাঁদের উপাধি বা পরিচয় ‘মুনকার-নাকির’।আরবিতে প্রশ্ন তিনটি হবে এভাবে, ‘মান রাব্বুকা? ওয়া মা দ্বীনুকা? ওয়া মান নাবিয়্যুকা?’ অর্থাৎ তোমার রব কে? তোমার দ্বীন-ধর্ম কী? তোমার নবী কে?
প্রশ্নের শেষাংশটি বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্নভাবে রয়েছে। যেমন ‘ওয়া মান হাজার রাজুল?’ প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হবে, ‘এই ব্যক্তি কে?’ যঁাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল।
মুমিন বান্দা উত্তর দেবেন, ‘আমার রব আল্লাহ, আমার ধর্ম ইসলাম, আমার নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।’ অথবা ‘ইনি হলেন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।’ আর যারা গুনাহগার, বদকার, খাতাকার ও ছিয়াহকার এবং অবিশ্বাসী তারা বলবে, ‘হা! লা আদরি’। ‘হায়! আমি কিছুই জানি না।’
নেককার তথা পুণ্যবান মুমিনদের সঠিক উত্তর শোনার পর বলা হবে, ‘তাকে জান্নাতি লেবাস-পোশাক পরিয়ে জান্নাতি বিছানা সাজিয়ে দাও এবং জান্নাতের সাথে সংযোগ দিয়ে দাও।’ তাদের উদ্দেশে আরও বলা হবে, ‘ সুখে–শান্তিতে আরামে ঘুমাও।’ আর পাপী–তাপী অবিশ্বাসী যারা উত্তর দিতে ব্যর্থ হবে, তাদের জাহান্নামের শাস্তি বা আজাব শুরু হয়ে যাবে।
দুনিয়ার জীবন আখিরাতের কর্মক্ষেত্র। তাই সব চিন্তাচেতনায় ও কর্মসাধনায় আখিরাত বা পরকাল এবং বারজাখ বা কবর জীবনকে স্মরণ করে চললে লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকবে। অন্যায় অপরাধ ও পাপ–তাপ থেকে বেঁচে থাকা সহজতর হবে।
আমরা আরো জানি যে কালেমা হল ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস সংবলিত কয়েকটি আরবি পংক্তির নাম। এর মাধ্যমেই ইসলামের প্রথম স্তম্ভ শাহাদাহ্ পূর্ণতা পায়। কালেমায়ে তাইয়্যেবা এর অর্থ হল পবিত্র বাক্য যা আরবিতে লা~ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মুহাম্মাদুর রসূলুল্ল-হ্। এবং যার বাংলা অনুবাদ হল আল্লাহ্ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নাই, মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁহার প্রেরিত রসূল।
আর এই কালেমা তাইয়্যেবা যদি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম যার অর্থ পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু বলে পাঠ করে শেষে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চারণ করি( সবাক কিংবা নির্বাক) তাহলে আল্লার স্মরণ ও আমাদের রাসুলের প্রতি দুরুদ পাঠ এক সাথেই হয়ে যায়।
তাই বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, লা ~ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মুহাম্মাদুর রসূলুল্ল-হ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাক্যটি যদি জিকির তথা আল্লার স্মরন হিসাবে সবসময় পাঠ করি তাহলে অন্যান্য জিকিরের সাথে এটাও হতে পারে উত্তম একটি জিকির । বিশেষ করে এই বাক্যটি যদি প্রত্যহ ঘুম থেকে জেগে উঠার সাথে সাথেই পাঠ ও অভ্যাসে পরিনত করতে পারা যায়, তাহলে মুনকার নাকির ফেরেস্তাদ্বয় এসে কবরে শায়িত অবস্থায় ঘুম হতে জাগ্রত করার সাথে সাথেই মুখ দিয়ে প্রথমেই উচ্চারিত হতে পারে ( তবে অবশ্যই আমলের বরকতে মহান আল্লার ইচ্ছা হলে ) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লা ~ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মুহাম্মাদুর রসূলুল্ল-হ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবাক্যটি পাঠের মধ্য দিয়ে মুনকার নাকিরের প্রশ্নের আগেই তাঁদের প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়ে যেতে পারে। তার পরেও নিয়ম মাফিক মুনকার নাকির প্রশ্ন করলেও তাঁরা তার কাছ হতে সঠিক উত্তর পেয়ে যেতে পারেন ( যদি অআল্লাহ তার প্রতি সহায় থাকেন ) । তাই এইভাবে আগে বিসমিল্লাহ পরে কলেমা তৈয়ব ও শেষে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে পাঠকরা বাক্যটি হতে পারে সর্ব সময়ে সর্বাবস্থায় পাঠ উপযোগী খুবই উপকারী/ফজিলতময় একটি সহজ সরল জিকির।
মুল্যবান পোষ্টটির জন্য রইল ধন্যবাদ । পোষ্টটি প্রিয়তে গেল।
শুভেচ্ছা রইল
২২ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:১৫
নতুন নকিব বলেছেন:
আলী ভাই,
অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা। এই পোস্টে আপনাকে পেয়ে সত্যি ভালো লাগছে। আপনার সুদীর্ঘ মন্তব্যটি স্বতন্ত্র্য একটি পোস্টের মর্যাদা রাখে। আপনার মন্তব্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথার ভেতর থেকে যিকিরের শব্দ সম্বলিত কয়েকটি লাইন আপনার অনুমতি না নিয়েই মূল পোস্টে যুক্ত করে দিয়েছি। আশা করি, আপনি কষ্ট নিবেন না।
আমরা মুসলমানগন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের নিমিত্ত অজু থেকে শুরু করে আযান দেয়া (যদি কেউ দেন, মসজিদের মুয়াজ্জিনতো অবশ্যই দেন) তারপরে জায়নামাজের দোয়া, (ফরজ নামাজের জন্য ইকামতসহ) নামাজের নিয়ত, সানাপাঠ, বিসমিল্লাহ হির রাহমানির রাহিম উচ্চারণের পরে সুরা ফাতিহা ও পবিত্র কোরানের আয়াত পাঠের পর রুকুতে যাওয়ার সময়, রুকুকালীন সময়ে, রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময়, তারপরে সিজদায় যাওয়ার সময়, সিজদাকালীন সময়ে, দুই সিজদার মাঝের সময়ে বসে দোয়া (যদি দোয়া পাঠ করা হয়), পুণরায় সিজদা ও সিজদার শেষে পরের রাকাতের জন্য উঠে দাঁড়ানোর সময়, তারপরের রাকাতগুলির জন্য একই নিয়মে সুবহানাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার প্রভৃতি ফজিলতময় শব্দসম্ভার অসংখ্যবার স্বশব্দে কিংবা নিরবে পাঠ করে থাকি যা জিকির তথা আল্লাহ তাআলার স্মরনের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত।
-দারুন বলেছেন।
পরিশেষে পোস্টটি প্রিয়তে নেয়ায় এবং ব্যাখ্যামূলক চমৎকার দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য আবারও শুকরিয়া। পরিবার-পরিজন সকলকে নিয়ে আল্লাহ পাক অনেক ভালো রাখুন আপনাদের- প্রার্থনা সবসময়।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহ আমাকে বেশি বেশি টাকা পয়সা দান করুক। আমিন।