নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।
অনেকেই বলেন, ইবাদতে আগের মত আগ্রহ আসে না, স্বাদ পাই না : ঈমান হ্রাসের কারণ ও ঈমানি দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে কিছু আমল...
অনেকেই বলে থাকেন, ইবাদত বন্দেগীতে আগের মত আগ্রহ আসে না। ইবাদতে স্বাদ না পাওয়া মূলতঃ ঈমানের দুর্বলতারই বহিপ্রকাশ। ঈমান আমল মজবুত করার উপায় সম্মন্ধেও তারা জানতে চান। নামাজ পড়তে ইচ্ছা করে না, ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। একটা সময় বেশ আগ্রহ নিয়ে ফরজ নামাজের পাশাপাশি দৈনন্দিন নফল নামাজগুলোও আদায় করতেন। অন্যান্য অজিফা আমলও নিয়মিত আদায় করা হতো যথারীতি। কিন্তু অলসতা, জড়তা এবং গাফলতের কি এক ছায়া যেন হঠাৎ বিস্তার করতে থাকে তাদের জীবনজুড়ে। তাই ইচ্ছে থাকলেও নিয়মিত ইবাদতগুলো আর করা সম্ভব হয় না। মূলতঃ এগুলো ঈমানি দুর্বলতারই লক্ষন। ঈমান দুর্বল হয়ে যাওয়ারই পরিচায়ক। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঈমানি দুর্বলতার কিছু কারণ এবং তা কাটিয়ে উঠতে যেসব আমলে অভ্যস্ত হওয়া প্রয়োজন তা নিয়েই এই নিবন্ধ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের ঈমান এবং আমলকে মজবুত করে দিন।
ঈমানের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটেঃ
কুরআন-হাদীছের বিভিন্ন দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, ঈমান বাড়ে ও কমে।
কুরআন থেকে দলীল :
(১) মহান আল্লাহ বলেন,
الَّذِينَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُواْ لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَاناً وَقَالُواْ حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ-
‘যাদেরকে লোকেরা বলেছিল, নিশ্চয়ই তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সমবেত হয়েছে, অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় কর। এতে তাদের বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি হয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কত উত্তম কর্ম বিধায়ক’। -সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৭৩
মহান আল্লাহ আরো বলেন,
‘নিশ্চয় মুমিনরা এরূপ যে, যখন (তাদের সামনে) আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তখন তাদের অন্তর সমূহ ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে, আর যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াত সমূহ পাঠ করা হয় তখন সেই আয়াত সমূহ তাদের ঈমানকে বৃদ্ধি করে দেয়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর করে’। -সূরা আল আনফাল, আয়াত-২
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
وَإِذَا مَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ فَمِنْهُم مَّن يَقُولُ أَيُّكُمْ زَادَتْهُ هَـذِهِ إِيمَاناً فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُواْ فَزَادَتْهُمْ إِيمَاناً وَهُمْ يَسْتَبْشِرُونَ-
‘আর যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তাদের মধ্যে কিছু লোক বলে, তোমাদের মধ্যে এই সূরা কার ঈমান বৃদ্ধি করল? অনন্তর যেসব লোক ঈমান এনেছে, এই সূরা তাদের ঈমানকে বর্ধিত করেছে এবং তারাই আনন্দ লাভ করেছে’। -সূরা আত তাওবা, আয়াত-১২৪
হাফেয ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, এ আয়াতটিই সর্বাধিক বড় দলীল যে, ঈমান বাড়ে এবং কমে। আর এটিই হচ্ছে অধিকাংশ উত্তরসূরী ও পূর্বসূরী বিদ্বান এবং ওলামায়ে কেরাম ও আইম্মায়ে কেরামর মত।
ঈমানের হ্রাস-বৃদ্ধির প্রমাণে হাদীসের বাণীঃ
ঈমান বাড়ে ও কমে এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বহু প্রমাণ রয়েছে। ইতিপূর্বে আমরা কুরআনের দলীলগুলি উপস্থাপন করেছি। এখানে হাদীছ থেকে কয়েকটি দলীল পেশ করা হ’ল।-
(1) عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم لاَ يَزْنِى الزَّانِى حِيْنَ يَزْنِى وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِيْنَ يَشْرَبُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَسْرِقُ حِيْنَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيْهَا أَبْصَارَهُمْ حِيْنَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ.
১. আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘কোন ব্যভিচারী মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না এবং কোন মদ্যপায়ী মুমিন অবস্থায় মদ পান করে না। কোন চোর মুমিন অবস্থায় চুরি করে না। কোন লুটেরা লুটতরাজ করে না মুমিন অবস্থায়, যখন সে লুটতরাজ করে তখন তার প্রতি লোকজন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে’।
হাদীছটি থেকে প্রমাণিত হয় যে, ঈমান কমে ও বাড়ে। কোন মুমিন ব্যক্তি যখন পাপে পতিত হয় তখন তার ঈমান কমে যায়। আবার যখন সে তওবা করে পাপ থেকে ফিরে আসে, তখন তার ঈমান বাড়ে। আব্দুল্লাহ বিন ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন, আমার পিতা থেকে শুনেছি তাঁকে ইরজা (মুরজিয়া, যারা ঈমানকে আমলের অন্তর্ভুক্ত মনে করে না) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, আমরা ঈমান সম্পর্কে বলব, কথা ও আমলের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা, সেটা কমে ও বাড়ে। যখন (কোন মুমিন ব্যক্তি) যেনা করে ও মদ পান করে তখন তার ঈমান কমে যায়।
মোদ্দাকথা, কোন মুমিন ব্যক্তি বড় পাপ করলে তার ঈমান কমে যায়। তবে সে কাফের হয়ে যায় না। যেমন খারেজীরা এরূপ পাপে পতিত হওয়ার কারণে (মুসলমান ব্যক্তিদের) কাফের ধারণা করে থাকে।
উল্লেখ্য যে, কোন মুমিন ব্যক্তি কবীরা গোনাহ করলে (বড় শিরক ব্যতীত) এবং তওবা ছাড়া মারা গেলে সেটা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি ইচ্ছা করলে তার পাপ পরিমাণ শাস্তি দিয়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।[16]
(2) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه الإِيْمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُوْنَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّوْنَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيْقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الْإِيْمَانِ.
২. আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ঈমানের সত্তর অথবা ষাটের অধিক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হ’ল তাওহীদের ঘোষণা এ মর্মে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বূদ নেই। আর সর্বনিম্ন হ’ল রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত দূর করা। আর লজ্জাও ঈমানের একটি শাখা’।
অতএব বুঝা যাচ্ছে ঈমানের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন শাখা রয়েছে। এ হাদীছ প্রমাণ করে যে, ঈমান বাড়ে এবং কমে।
হাদীছটি থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ঈমানের একটি অঙ্গ অপর অঙ্গ থেকে ভিন্ন হয়। আরো জানা যায় যে, মানুষ ঈমানের দিক দিয়ে অন্যের থেকে অনেক উপরে হ’তে পারে। অতএব যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, ঈমানের হ্রাস-বৃদ্ধি হয় না সে তার জ্ঞান ও শরী‘আতের দলীলের বিরোধিতা করে।
(3) عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَفِى قَلْبِهِ وَزْنُ شَعِيْرَةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ، مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَفِى قَلْبِهِ وَزْنُ بُرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَفِى قَلْبِهِ وَزْنُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ.
৩. আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং তার অন্তরে একটি যব পরিমাণ পুণ্য বিদ্যমান থাকবে, তাকে জাহান্নাম হ’তে বের করা হবে। যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং তার অন্তরে একটি গম পরিমাণও পুণ্য বিদ্যমান থাকবে, তাকে জাহান্নাম হ’তে বের করা হবে। যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকী থাকবে, তাকেও জাহান্নাম হ’তে বের করা হবে’।
(4) عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِى أَضْحًى أَوْ فِطْرٍ إِلَى الْمُصَلَّى، فَمَرَّ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ تَصَدَّقْنَ، فَإِنِّى أُرِيتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ. فَقُلْنَ وَبِمَ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ، وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيْرَ، مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِيْنٍ أَذْهَبَ لِلُبِّ الرَّجُلِ الْحَازِمِ مِنْ إِحْدَاكُنَّ. قُلْنَ وَمَا نُقْصَانُ دِيْنِنَا وَعَقْلِنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ أَلَيْسَ شَهَادَةُ الْمَرْأَةِ مِثْلَ نِصْفِ شَهَادَةِ الرَّجُلِ. قُلْنَ بَلَى.
قَالَ فَذَلِكَ مِنْ نُقْصَانِ عَقْلِهَا، أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ
وَلَمْ تَصُمْ. قُلْنَ بَلَى. قَالَ فَذَلِكَ مِنْ نُقْصَانِ دِيْنِهَا-
৪. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার ঈদুল আযহা অথবা ঈদুল ফিতরের ছালাত আদায়ের জন্য আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, হে মহিলা সমাজ! তোমরা ছাদাক্বাহ করো। কারণ আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই সর্বাধিক। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, কি কারণে হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)? তিনি বললেন, তোমরা অধিক পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাক এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও একজন সদা সতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চেয়ে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখিনি। তাঁরা বললেন, আমাদের দ্বীন ও বুদ্ধির ত্রুটি কোথায় হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)? তিনি বললেন, একজন মহিলার সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়? তাঁরা উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, এটা হচ্ছে তাদের বুদ্ধির ত্রুটি। আর হায়েয অবস্থায় তারা কি ছালাত ও ছিয়াম হ’তে বিরত থাকে না? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এ হচ্ছে তাদের দ্বীনের ত্রুটি’। আমল কম করলে ঈমান কমে যায়। হাদীছটি ঈমানের হ্রাস-বৃদ্ধি প্রমাণ করে।
৫. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيْمَانِ
‘তোমাদের মধ্যে কেউ কোন অন্যায় দেখলে সে যেন তা হাত দিয়ে বাধা দেয়। এতে সমর্থ না হ’লে কথা দিয়ে, এটিতেও সক্ষম না হ’লে অন্তর দিয়ে সেটিকে ঘৃণা করবে। আর এটা হ’ল দুর্বল ঈমান’।[22] ইমাম নববী বলেন, অন্যায় কাজে বাধা দেওয়াটা ঈমানের একটি শাখা।
ঈমান হ্রাস পাওয়ার কিছু কারণঃ
আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে অজ্ঞ থাকাঃ
আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা ঈমান কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। কেননা আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যতই কমবে, ঈমানও তত কমতে থাকবে। পক্ষান্তরে ইলম যেমন ঈমান বৃদ্ধি করে, অজ্ঞতা তেমনি ঈমান হ্রাস করে। মানুষ যত বেশী কল্যাণকর বিদ্যা অর্জন করবে তার ঈমান তত বেশী বৃদ্ধি পাবে।
অজ্ঞতার কারণে বিশ্ব মানবতার আজকের এই অধঃপতন। মানব জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআ'লা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। এজন্য তাওহীদ বুঝতে হবে। কারণ, তাওহীদ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকার কারণে আজকে অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন ধরনের শিরকে লিপ্ত হচ্ছে। পাপাচারে নিমজ্জিত হচ্ছে। কবর পূজা, গাছ পূজা, মাজার পূজা থেকে শুরু করে চন্দ্র, সূর্য, আগুণ, পানি, সাগর, নদ-নদী, গাছপালা ইত্যাদিকে বড় মনে করে এসবের ইবাদত করছে। এগুলোর সামনে মস্তক অবনত করছে। কবরে রুকূ-সিজদা, যবেহ, কুরবানী, মানত, দো‘আ, সাহায্য প্রার্থনা, বরকত চাওয়া প্রভৃতি শিরকী আমল করছে, যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। তাছাড়া বিদ‘আতী কর্মের তো শেষ নেই। ওরস, মীলাদুন্নবী, শবে মে‘রাজ, শবে বরাত পালন, মৃত ব্যক্তির নামে চল্লিশা, কুরআন খতম, এগুলো সবই মানুষ করছে অজ্ঞতার কারণে। আর এর সবই মূলতঃ মানুষের অজ্ঞতার কারণে ঈমান হ্রাসের ভয়ঙ্কর নেতিবাচক ফলাফল। উল্লেখ্য যে, হাতে, গলায়, কোমরে তাবীয ঝুলানো, বাত ভাল হবার উদ্দেশ্যে হাতে লোহার বালা পরা, লাল সুতা পরা, অন্যের নামে কসম খাওয়া, মানুষ দেখানো আমল করা ইত্যাদি সকল কাজ অজ্ঞতার কারণেই করছে। যা মানুষের ঈমান নষ্ট করে দেয়। এর ফলে পরকালে শাস্তি ভোগ করতে হবে। তাই অজ্ঞতা দূর করতে হবে এবং মানুষের মধ্যে ইলমের প্রসার ঘটাতে হবে। কেননা অজ্ঞতাই হচ্ছে পাপে পতিত হওয়ার সর্ববৃহৎ কারণ। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন,
وَجَاوَزْنَا بِبَنِيْ إِسْرَائِيْلَ الْبَحْرَ فَأَتَوْا عَلَى قَوْمٍ يَعْكُفُوْنَ عَلَى أَصْنَامٍ لَّهُمْ قَالُوْا يَا مُوْسَى اجْعَل لَّنَا إِلَـهاً كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ
‘আমরা সাগর পার করে দিয়েছি বনী ইসরাঈলকে। তখন তারা এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে পৌঁছল, যারা নিজ হাতে নির্মিত মূর্তিপূজায় নিয়োজিত ছিল। তারা বলতে লাগল, হে মূসা! আমাদের উপাসনার জন্যও তাদের মূর্তির মতই একটি মূর্তি নির্মাণ করে দিন। তিনি বললেন, তোমরা বড়ই অজ্ঞ সম্প্রদায়’। -সূরা আল আ‘রাফ, আয়াত-১৩৮
অন্যত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন,
وَلُوْطاً إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ وَأَنتُمْ تُبْصِرُوْنَ- أَئِنَّكُمْ لَتَأْتُوْنَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّن دُوْنِ النِّسَاء بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ-
‘স্মরণ করুন, লূতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ, অথচ এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ। তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক অজ্ঞ সম্প্রদায়’। -সূরা আন নামল, আয়াত-৫৪, ৫৫
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা প্রিয় নবীজীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
قُلْ أَفَغَيْرَ اللهِ تَأْمُرُوْنِّي أَعْبُدُ أَيُّهَا الْجَاهِلُوْنَ
‘বলুন, হে মূর্খরা! তোমরা কি আমাকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করতে আদেশ করছ?’ -সূরা যুমার, আয়াত-৬৪
এভাবে যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং পাপ কাজ করবে সে মূর্খ। তার এ অজ্ঞতা ও মূর্খতাবশতঃ সংঘটিত কর্মকান্ডের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার দরবারে বিনীতভাবে তওবা করতে হবে। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন,
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللهِ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السُّوَءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوْبُوْنَ مِنْ قَرِيْبٍ فَأُوْلَـئِكَ يَتُوْبُ اللهُ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللهُ عَلِيْماً حَكِيْماً
‘অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে। এরাই হ’ল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ’। -সূরা আন নিসা, আয়াত-১৭
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আরো বলেন,
وَإِذَا جَاءَكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِآيَاتِنَا فَقُلْ سَلاَمٌ عَلَيْكُمْ كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلَى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ أَنَّهُ مَن عَمِلَ مِنْكُمْ سُوْءاً بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِنْ بَعْدِهِ وَأَصْلَحَ فَأَنَّهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
‘আর যখন তারা তোমাদের কাছে আসবে যারা আমাদের নিদর্শন সমূহে বিশ্বাস করে, তখন তুমি বলে দিও, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের পালনকর্তা রহমত করা নিজ দায়িত্বে লিখে নিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্যে যে কেউ অজ্ঞতাবশতঃ কোন মন্দ কাজ করে, এরপরে তওবা করে নেয় এবং সৎ হয়ে যায়, তবে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, করুণাময়’। -সূরা আল আন‘আম, আয়াত-৫৪
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আরো বলেন,
ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِيْنَ عَمِلُوْا السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابُوْا مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُوْا إِنَّ رَبَّكَ مِنْ بَعْدِهَا لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
‘অনন্তর যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, আপনার পালনকর্তা এসবের পরে তাদের জন্যে অবশ্যই ক্ষমাশীল, দয়ালু’। -সূরা আন নাহল, আয়াত-১১৯
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবীগণ এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, যত প্রকার পাপ করা হয় তা (শরী‘আতের সঠিক জ্ঞান থেকে) অজ্ঞ থাকার কারণেই সংঘটিত হয়। সেটি ইচ্ছাকৃত হোক অথবা অনিচ্ছাকৃত হোক।[1]
মুজাহিদ বলেন, مَنْ عَصَى اللهَ فَهُوَ جَاهِلٌ حَتَّى يَنْزِعَ عَنْ مَعْصِيَتِهِ আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণকারী প্রত্যেক ব্যক্তি মূর্খ। যতক্ষণ না সে তার পাপাচার থেকে দূরে থাকে।[2]
আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হওয়া ও আল্লাহ তাআ'লাকে ভুলে যাওয়াঃ
মানুষ যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার ইবাদত-বন্দেগী থেকে বিমুখ হয় এবং তাঁকে ভুলে যায়, তখন মানুষের ঈমান কমে যায়। আল্লাহর ইবাদত থেকে গাফলতি করা মুনাফিক ও কাফেরদের চরিত্র। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন,
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْراً مِّنَ الْجِنِّ وَالإِنْسِ لَهُمْ قُلُوْبٌ لاَّ يَفْقَهُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لاَّ يُبْصِرُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لاَّ يَسْمَعُوْنَ بِهَا أُوْلَـئِكَ كَالأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُوْلَـئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ
‘আর আমরা সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না। তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না। আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হ’ল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ’। -সূরা আল আ‘রাফ, আয়াত-১৭৯
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আরো বলেন,
إَنَّ الَّذِيْنَ لاَ يَرْجُوْنَ لِقَاءنَا وَرَضُوْا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوْا بِهَا وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنْ آيَاتِنَا غَافِلُوْنَ، أُوْلَـئِكَ مَأْوَاهُمُ النُّارُ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ-
‘অবশ্যই যেসব লোক আমাদের সাক্ষাৎ লাভের আশা রাখে না এবং পার্থিব জীবন নিয়েই উৎফুল্ল রয়েছে, তাতেই প্রশান্তি অনুভব করেছে এবং যারা আমার নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে গাফিল। এমন লোকদের ঠিকানা হ’ল আগুন সেসবের বদলা হিসাবে যা তারা অর্জন করছিল’। -সূরা ইউনুস, আয়াত-৭ ও ৮
তিনি অন্যত্র বলেন,
فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُوْنَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً وَإِنَّ كَثِيْراً مِّنَ النَّاسِ عَنْ آيَاتِنَا لَغَافِلُوْنَ
‘অতএব আজকের দিনে সংরক্ষণ করছি আমরা তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হ’তে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমাদের মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না’। -সূরা ইউনুস, আয়াত-৯২
মানুষ আজ দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং তার আসল ঠিকানা পরকালকে ভুলে গেছে। মহান আল্লাহ বলেন,
يَعْلَمُوْنَ ظَاهِراً مِّنَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ عَنِ الْآخِرَةِ هُمْ غَافِلُوْنَ
‘তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিক জানে এবং তারা পরকালের খবর রাখে না’। সূরা রূম, আয়াত-৭
মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে সম্বোধন করে বলেন,
وَاذْكُر رَّبَّكَ فِيْ نَفْسِكَ تَضَرُّعاً وَخِيْفَةً وَدُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالآصَالِ وَلاَ تَكُن مِّنَ الْغَافِلِيْنَ
‘আর স্মরণ করতে থাকুন স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং অনুচ্চ স্বরে, সকালে ও সন্ধ্যায়। আর গাফেলদের অন্তর্ভূক্ত হবেন না’। -সূরা আল আ‘রাফ, আয়াত-২০৫
মহান আল্লাহ যিকিরের মাধ্যমেই মানুষ বেঁচে থাকে, এর বিপরীত করলে অন্তর মরে যায়। মুমিনের উচিৎ ভাল কাজের দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়া। পরকালের জন্য, আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য আমল করা। আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ না হওয়া। যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়, তারা নিজের উপর যুলুম করে। এর পরিণতি খুব ভয়াবহ। মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ
‘যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব’। সূরা আস সাজদাহ, আয়াত-২২
যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তারা হিদায়াতের পথ থেকে দূরে সরে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ فَأَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ إِنَّا جَعَلْنَا عَلَى قُلُوْبِهِمْ أَكِنَّةً أَنْ يَفْقَهُوْهُ وَفِيْ آذَانِهِمْ وَقْراً وَإِنْ تَدْعُهُمْ إِلَى الْهُدَى فَلَنْ يَهْتَدُوْا إِذاً أَبَداً
‘তার চাইতে অধিক যালেম কে, যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার পূর্ববর্তী কৃতকর্ম সমূহ ভুলে যায়? আমরা তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে দিয়েছি, যেন তারা না বোঝে এবং তাদের কানে রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেন, তবে কখনই তারা সৎপথে আসবে না’। -সূরা কাহফ, আয়াত-৫৭
যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ তারা উভয় জগতে দুর্বিষহ জীবন যাপন করবে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَإِنَّ لَهُ مَعِيْشَةً ضَنكاً وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى
‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমরা তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব’। -সূরা ত্ব-হা, আয়াত-১২৪
যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ তার সাথী হবে শয়তান। মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَاناً فَهُوَ لَهُ قَرِيْنٌ
‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমরা তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী’। -সূরা যুখরুফ, আয়াত-৩৬
যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণে বিমুখ তার কঠিন শাস্তি হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
كَذَلِكَ نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنْبَاءِ مَا قَدْ سَبَقَ وَقَدْ آتَيْنَاكَ مِنْ لَّدُنَّا ذِكْراً، مَنْ أَعْرَضَ عَنْهُ فَإِنَّهُ يَحْمِلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وِزْراً-
‘এমনিভাবে আমরা পূর্বে যা ঘটেছে, তার সংবাদ তোমার কাছে বর্ণনা করি। আমরা আমাদের কাছ থেকে আপনাকে দান করেছি পড়ার গ্রন্থ। যে এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে কিয়ামতের দিন বোঝা বহন করবে’। -সূরা ত্ব-হা, আয়াত-৯৯ ও ১০০
وَمَن يُعْرِضْ عَن ذِكْرِ رَبِّهِ يَسْلُكْهُ عَذَابًا صَعَدًا
যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের স্মরণ হ’তে বিমুখ হয় তিনি তাকে কঠিন আযাবে প্রবেশ করাবেন। -সূরা জিন, আয়াত-১৭
সুতরাং সর্বদা আল্লাহকে ভয় করতে হবে, তাঁর যিকির-আযকার ও ইবাদতের মাধ্যমে জীবন যাপন করতে হবে। কোন ক্রমেই তাকে ভুলে যাওয়া যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ نَسُوا اللَّهَ فَأَنسَاهُمْ أَنفُسَهُمْ أُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
‘তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহকে স্মরণ করা ভুলে গেছে, ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করেছেন। তারাই তো পাপাচারী’। সূরা হাশর, আয়াত-১৯
পাপ কাজে লিপ্ত হওয়াঃ
পাপ ও অন্যায়-অশ্লীল কাজের মাধ্যমে মানুষের ঈমান কমে। এমনকি সে ঈমান শূন্য হয়ে যায়। তাই সকল পাপ থেকে দূরে থাকতে হবে। আর কেউ পাপ করে বসলে তার থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ হ’ল সাথে তওবা-ইস্তেগফার করা। মহান আল্লাহ বলেন,
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ أَسْرَفُوْا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعاً إِنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
‘হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (যুমার ৪৩/৫৩)।
তিনি আরো বলেন,
وَهُوَ الَّذِيْ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُوْ عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُوْنَ
‘তিনি তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন, পাপসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমাদের কৃত বিষয় সম্পর্কে অবগত রয়েছেন’ (শূরা ৪২/২৫)।
তাই মানুষকে সকল শিরক-বিদ‘আত ও পাপাচার থেকে দূরে থাকতে হবে। তাহ’লে ইহলোকে কল্যাণ ও পরলোকে মুক্তি মিলবে। মানুষ যত সৎ আমল করবে ততই তার ঈমান বাড়বে। আর যত বেশী পাপ কাজ করবে তার ঈমান কমতে কমতে শূন্য হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِذَا مَا أُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ فَمِنْهُمْ مَنْ يَقُوْلُ أَيُّكُمْ زَادَتْهُ هَذِهِ إِيْمَانًا فَأَمَّا الَّذِيْنَ آمَنُوْا فَزَادَتْهُمْ إِيْمَانًا وَهُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ، وَأَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَتْهُمْ رِجْسًا إِلَى رِجْسِهِمْ وَمَاتُوْا وَهُمْ كَافِرُوْنَ
‘আর যখন কোন সূরা নাযিল হয়, তখন তাদের মধ্যেকার কিছু (মুশরিক) লোক বলে, এই সূরা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বৃদ্ধি করল? বস্ত্ততঃ যারা ঈমান এনেছে, এ সূরা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দ লাভ করেছে। পক্ষান্তরে যাদের অন্তরে রোগ আছে, এটি তাদের নাপাকির সাথে আরও নাপাকি বৃদ্ধি করেছে এবং তারা কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে’ (তওবা ৯/১২৪-১২৫)।
কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, পাপের মধ্যে ও ছোট-বড় রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلاً كَرِيْمًا
‘যদি তোমরা কবীরা গোনাহ সমূহ থেকে বিরত থাক, তাহ’লে আমরা তোমাদের (ছোট খাট) ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক গন্তব্যে প্রবেশ করাব’ (নিসা ৪/৩১)।
তিনি আরো বলেন,
اَلَّذِيْنَ يَجْتَنِبُوْنَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلاَّ اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ
‘যারা বড় বড় গোনাহ ও অশ্লীলকার্য থেকে বেঁচে থাকে ছোটখাট অপরাধ করলেও নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তার ক্ষমা সুদূর বিস্তৃত’ (নাজম ৫৩/৩২)।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ
‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত এবং এক জুম‘আ থেকে অপর জুম‘আ, এক রামাযান থেকে অপর রামাযান এর মাঝে যত গোনাহ করা হয়, সবগুলির কাফফারাহ হয়। যদি কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে’।
আবু বকর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ. قُلْنَا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ. وَكَانَ مُتَّكِئًا فَجَلَسَ فَقَالَ أَلاَ وَقَوْلُ الزُّوْرِ وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ، أَلاَ وَقَوْلُ الزُّوْرِ وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ. فَمَا زَالَ يَقُوْلُهَا حَتَّى قُلْتُ لاَ يَسْكُتُ.
‘আমি কি তোমাদের সব থেকে বড় গুনাহ সম্পর্কে খবর দিব না? আমরা বললাম, অবশ্যই তা, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। এ কথা বলার সময় তিনি হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর (সোজা হয়ে) বসলেন এবং বললেন, মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া (দু’বার)। তিনি ক্রমাগত একথা বলেই চললেন। এমনকি আমি বললাম, তিনি মনে হয় চুপ করবেন না।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে,
أَىُّ الذَّنْبِ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ؟ قَالَ أَنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ نِدًّا وَهْوَ خَلَقَكَ. قُلْتُ إِنَّ ذَلِكَ لَعَظِيمٌ، قُلْتُ ثُمَّ أَىُّ قَالَ وَأَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ تَخَافُ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ. قُلْتُ ثُمَّ أَىُّ قَالَ أَنْ تُزَانِىَ حَلِيلَةَ جَارِكَ.
‘কোন গুনাহ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করা। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এটাতো সত্যিই বড় গুনাহ। আমি বললাম, তারপর কোন গুনাহ? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি তোমার সন্তানকে এই ভয়ে হত্যা করবে যে, সে তোমার সাথে আহার করবে। আমি আরয করলাম, এরপর কোনটি? তিনি উত্তর দিলেন, প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে তোমার ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া’।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
اِجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ، وَالتَّوَلِّى يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ
‘সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকো। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলি কি কি? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করা, যাদু করা, আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরী‘আতসম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা। সূদ খাওয়া, ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ করা, রণাঙ্গন থেকে পলায়ন করা এবং অবলা-সরলা সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলাদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া’।
নাফসে আম্মারার কুপ্ররোচনাঃ
‘নফস’ তিন প্রকার। (ক) নফসে মুত্বমাইন্নাহ-প্রশান্ত হৃদয়। (খ) নফসে লাউয়ামাহ- তিরষ্কারকারী আত্মা অর্থাৎ বিবেক এবং (গ) নফসে আম্মারাহ অর্থাৎ অন্যায় কাজে প্ররোচনা দানকারী অন্তর। শেষোক্ত অন্তরটি সর্বদা শয়তানের তাবেদারী করে। এর সঙ্গে সর্বদা লড়াই করেই মুমিনকে হকের উপরে টিকে থাকতে হয়। এ খারাপ নফস মানুষকে সর্বদায় অন্যায় পথের দিকে ডাকে, ধ্বংসের পথে আহবান করে। আর এভাবে মানুষের ঈমান কমতে কমতে শূন্য হয়ে যায়। তাই এ খারাপ অন্তর থেকে মহান আল্লাহর নিকট সর্বদা পরিত্রাণ চাইতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ মিসরের শাসক আযীয-এর স্ত্রী সম্পর্কে বলেন,
وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِيْ إِنَّ النَّفْسَ لأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلاَّ مَا رَحِمَ رَبِّيَ إِنَّ رَبِّيْ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
‘আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না! নিশ্চয়ই মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ। কিন্তু সে নয় আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয়ই আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু’ (ইউসুফ ১২/৫৩)।
আল্লাহর নিকট সর্বদাই সঠিক পথের থাকার তাওফীক চাইতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لاَ تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَنْ يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَوْلاَ فَضْلُ اللهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَا مِنْكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَداً وَلَكِنَّ اللهَ يُزَكِّي مَنْ يَشَاءُ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হ’তে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন’ (নূর ২৪/২১)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন,
وَلَوْلاَ أَنْ ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدتَّ تَرْكَنُ إِلَيْهِمْ شَيْئاً قَلِيْلاً
‘আমরা তোমাকে দৃঢ়পদ না রাখলে তুমি তাদের প্রতি কিছুটা ঝুঁকেই পড়তেন’ (ইসরাঈল ১৭/৭৪)।
তাই মানুষ যদি তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশ করে চলে এবং আল্লাহ প্রদত্ত হুকুম-আহকামের প্রতি লক্ষ্য রাখে, তাহ’লে অন্যায় কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকা সম্ভব। সেই সাথে পরকালের জন্য আমরা কতটুকু আমল করছি সেটা অবশ্যই ভাবার বিষয়। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوْا اللهَ إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا تَعْمَلُوْنَ
‘মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন’ (হাশর ৫৯/১৮)।
আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে আত্মাকে জীবিত করতে হবে, ঈমান মুযবূত করতে হবে, ঈমান বাড়াতে হবে, প্রশান্ত আত্মা নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে, তাহ’লেই পরকালে শান্তির স্থান জান্নাত লাভ করা যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ، ارْجِعِيْ إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً، فَادْخُلِي فِيْ عِبَادِيْ، وَادْخُلِيْ جَنَّتِيْ-
‘হে প্রশান্ত আত্মা! ফিরে চলো তোমার প্রভুর পানে, সন্তুষ্ট চিত্তে ও সন্তোষভাজন অবস্থায়। অতঃপর প্রবেশ কর আমার বান্দাদের মধ্যে এবং প্রবেশ কর আমার জান্নাতে’ (ফজর ৮৯/২৭-৩০)।
শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণঃ
শয়তান মানব জাতিকে সর্বদা ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে থাকে। এমনকি ছালাতের মাঝেও মানুষকে কুমন্ত্রণা দেওয়ার চেষ্টা করে। ফলে মানুষের ঈমান কমে যায়। তাই মানব জাতির উচিত আল্লাহর নিকট সর্বদা শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকার জন্য পানাহ চাওয়া। কারণ শয়তান মানুষকে জাহান্নামের পথে নিয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوًّا إِنَّمَا يَدْعُوْ حِزْبَهُ لِيَكُوْنُوْا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيْرِ
‘শয়তান তোমাদের শত্রু। অতএব তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়’ (ফাতির ৩৫/৬)।
শয়তান মানুষের চির শত্রু। মহান আল্লাহ বলেন,
قَالَ يَا بُنَيَّ لاَ تَقْصُصْ رُؤْيَاكَ عَلَى إِخْوَتِكَ فَيَكِيْدُوْا لَكَ كَيْداً إِنَّ الشَّيْطَانَ لِلإِنْسَانِ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
‘তিনি বললেন, বৎস, তোমার ভাইদের সামনে এ স্বপ্ন বর্ণনা করো না। তাহ’লে তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’ (ইউসুফ ১২/৫)।
শয়তানের কুমন্ত্রণার কারণে মানুষ বিপথগামী হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِيْ لأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الأَرْضِ وَلأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ
‘সে বলল, হে আমার পালনকর্তা! আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করে দেব’ (হিজর ১৫/৩৯)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন,
تَاللهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِّن قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ
‘আল্লাহর কসম! আমরা আপনার পূর্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি, অতঃপর শয়তান তাদের কর্মসমূহকে শোভনীয় করে দেখিয়েছে। আজ সে-ই তাদের অভিভাবক এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (নাহল ১৬/৬৩)।
তিনি আরো বলেন,
‘আমরা তোমার পূর্বেকার সম্প্রদায় সমূহের নিকট রাসূল পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর (তাদের অবিশ্বাসের কারণে) আমরা তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যাধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম। যাতে কাকুতি-মিনতি সহকারে আল্লাহর প্রতি বিনীত হয়। যখন তাদের কাছে আমাদের শাস্তি এসে গেল, তখন কেন তারা বিনীত হ’ল না? বরং তাদের অন্তরসমূহ শক্ত হয়ে গেল এবং শয়তান তাদের কাজগুলিকে তাদের নিকটে সুশোভিত করে দেখাল’ (আন‘আম ৬/৪২-৪৩)।
শয়তানই মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে। মহান আল্লাহ বলেন,
اِسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِ أُوْلَئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ
‘শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত’ (মুজাদালাহ ৫৮/১৯)।
শয়তানই মানুষকে সরল-সঠিক পথ থেকে বিপথগামী করে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন,
قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيْمَ، ثُمَّ لآتِيَنَّهُم مِّنْ بَيْنِ أَيْدِيْهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَآئِلِهِمْ وَلاَ تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِيْنَ-
‘সে বলল, যে আদমের প্রতি অহংকারের কারণে আপনি আমার মধ্যে পথভ্রষ্টতার সঞ্চার করেছেন, সেই আদম সন্তানদের পথভ্রষ্ট করার জন্য আমি অবশ্যই আপনার সরল পথের উপর বসে থাকব। অতঃপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে আসব তাদের সামনে, পিছনে, ডাইনে, বামে সবদিক থেকে। আর তখন আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’ (আ‘রাফ ৭/১৬-১৭)।
এজন্য মহান আল্লাহ শয়তানের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন; বরং সর্বদা তার বিরোধিতা করতে বলেছেন। কারণ শয়তানই মানুষের চির দুশমন। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا بَنِي آدَمَ لاَ يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْءَاتِهِمَا إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيْلُهُ مِنْ حَيْثُ لاَ تَرَوْنَهُمْ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ أَوْلِيَاء لِلَّذِيْنَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ
‘হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে। যেমন সে তোমাদের আদি পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল। সে তাদের থেকে তাদের পোষাক খুলে নিয়েছিল যাতে সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাতে পারে। সে ও তার দল তোমাদেরকে এমন স্থান থেকে দেখে যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাও না। আমরা শয়তানকে অবিশ্বাসী লোকদের বন্ধু বানিয়ে দিয়েছি’ (আ‘রাফ ৭/২৭)।
যে ব্যক্তি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে সে শয়তানেরই সহচর হয়ে যাবে এবং সে ঈমান শূন্য হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَاناً فَهُوَ لَهُ قَرِيْنٌ، وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُوْنَ أَنَّهُم مُّهْتَدُوْنَ، حَتَّى إِذَا جَاءنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ-
‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমরা তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী। শয়তানরাই মানুষকে সৎপথে বাধা দান করে, আর মানুষ মনে করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে। অবশেষে যখন সে আমার কাছে আসবে, তখন সে শয়তানকে বলবে, হায়, আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব-পশ্চিমের দূরত্ব থাকত। কত নিকৃষ্ট সঙ্গী সে’ (যুখরুফ ৪৩/৩৬-৩৮)।
দুনিয়া ও তার মোহময়তায় অধিক পরিমানে জড়িয়ে যাওয়াঃ
মানুষের ঈমান হরাসের ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় পরোক্ষ কারণ। মানুষ যখন দুনিয়াকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং তার জীবনের সব কিছুই দুনিয়াকে ঘিরে আবর্ভিত হয় তখনই সে পরকাল বিমুখ হয় এবং আল্লাহ আনুগত্য করা থেকে দূরে সরে যায়। ইবাদত-বন্দেগী করে না এবং হারাম-হালাল কিছু বুঝে না, তখনই তার ঈমান কমে যায়। অতএব যে ব্যক্তি দুনিয়াকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং তাতেই সন্তুষ্ট থাকে তার নিকট আল্লাহর আনুগত্য করাটা এবং পরকালমুখী হওয়াটা খুব ভারী মনে হয়। এজন্য মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اعْلَمُوْا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِيْنَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيْجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُوْنُ حُطَاماً وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانٌ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ
‘তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধন ও জনের প্রাচুর্য ব্যতীত আর কিছু নয়। যেমন এক বৃষ্টির অবস্থা, যার সবুজ ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও, এরপর তা খড়কুটা হয়ে যায়। আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ কিছু নয়’ (হাদীদ ৫৭/২০)।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ فَأَصْبَحَ هَشِيْماً تَذْرُوْهُ الرِّيَاحُ وَكَانَ اللهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِراً، الْمَالُ وَالْبَنُوْنَ زِيْنَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِنْدَ رَبِّكَ ثَوَاباً وَخَيْرٌ أَمَلاً-
‘তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা কর। তা পানির ন্যায়, যা আমরা আকাশ থেকে নাযিল করি। অতঃপর এর সংমিশ্রণে শ্যামল-সবুজ ভূমিজ লতা-পাতা নির্গত হয়। অতঃপর তা এমন শুষ্ক চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এ সবকিছুর উপর শক্তিমান। ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম’ (কাহফ ১৮/৪৫-৪৬)।
মানুষের উচিত পরকালের জন্যই বেশী বেশী কাজ করা। কারণ এ দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, যার কোন মূল্য নেই। কিন্তু তারা পার্থিব জীবন নিয়েই ব্যস্ত, অথচ ইহকাল পরকালের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগ মাত্র (রা‘দ ১৩/২৬)।
শুধু দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলে পরকাল হারাতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আমাদের সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবন নিয়েই তৃপ্ত থাকে ও তার মধ্যেই নিশ্চিন্ত হয় এবং যারা আমাদের নিদর্শনাবলী সম্পর্কে উদাসীন। এসব লোকদের ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম তাদের কৃতকর্মের কারণে’ (ইউনুস ১০/৭-৮)।
মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا مَا لَكُمْ إِذَا قِيْلَ لَكُمُ انفِرُواْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الأَرْضِ أَرَضِيْتُم بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الآخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الآخِرَةِ إِلاَّ قَلِيْلٌ-
‘হে মুমিনগণ! তোমাদের কি হ’ল যে, যখন তোমাদের বলা হয় আল্লাহর পথে (জিহাদে) বেরিয়ে পড়, তখন তোমরা মাটি অাঁকড়ে ধর? তোমরা কি পরকালের বিনিময়ে দুনিয়াবী জীবনের উপর রাযী হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার ভোগবিলাস অতীব নগণ্য’ (তওবা ৯/৩৮)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
فَوَاللهِ مَا الْفَقْرَ أَخْشَى عَلَيْكُمْ، وَلَكِنْ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُبْسَطَ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا، كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، فَتَنَافَسُوْهَا كَمَا تَنَافَسُوْهَا وَتُلْهِيَكُمْ كَمَا أَلْهَتْهُمْ
‘আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের জন্য দারিদ্রে্যর ভয় করছি না বরং ভয় করছি যে, তোমাদের উপর দুনিয়া প্রশস্ত করে দেয়া হবে, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের উপর যেমন দুনিয়া প্রশস্ত করে দেয়া হয়েছিল। আর তোমরা তা পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করবে, যেমন তারা তা পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করেছিল। আর তা তোমাদেরকে আখিরাত বিমুখ করে ফেলবে, যেমন তাদেরকে আখিরাত বিমুখ করেছিল’।
বাস্তবে যদি আমরা দুনিয়ার দিকে লক্ষ্য করি তাহলে বুঝতে পারব যে, দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। বাস্তবিকপক্ষে এর মূল্য কতটুকু তাও অনুধাবন করতে পারবো। মানুষ দুনিয়াতে একা আসে। আবার তাকে একা চলে যেতে হয় পরকালের স্থায়ী জীবনে। আর পরকালের জীবনই আসল জীবন। তাই যারা পরকালে নাজাত পাবে তারাই সুখময় স্থান জান্নাত লাভ করবে। আর আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হবে। অতএব পরকালীন জীবনকে সবার উপর অগ্রাধিকার দিতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى
‘অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী’ (আ‘লা ৮৭/১৭)।
মানুষের টাকা-পয়সা, গাড়ী-বাড়ী, পরিবার, সন্তান-সন্ততি নিয়ে যতই আরাম-আয়েশে থাকুক না কেন, যদি আমল না থাকে, পরকালের জন্য পাথেয় সঞ্চয় না করতে পারে, তাহলে তার জীবনের কোন মূল্য নেই; বরং পরকালে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
অসৎ সঙ্গ অবলম্বনঃ
যখন কোন ব্যক্তির সঙ্গী অসৎ হয় তখন তাকেও অসৎ পথে চলার পথ দেখায়। আর সৎ ব্যক্তি সঙ্গী হ’লে তাকেও ভাল পথে চলার জন্য বলে থাকে। ফলে অসৎ সঙ্গী ঈমান কমার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। সুতরাং সৎ নেককার ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করা এবং ভাল মানুষকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা মুমিনের কর্তব্য। যেমন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الْمَرْءُ عَلَى دِيْنِ خَلِيْلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ
‘মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে। অতএব তোমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত কার সাথে বন্ধুত্ব করবে’।
যে কোন ব্যক্তি বন্ধু নির্বাচন করার পূর্বে অবশ্যই যেন সে লক্ষ্য করে তার দ্বীনের প্রতি, আমানতের প্রতি, আক্বীদার প্রতি। যদি দেখতে পায় যে, তার দ্বীন-ধর্ম, আমানতদারী, সঠিক আক্বীদায় বিশ্বাসী হয় তাহ’লে তাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে পারে। আমরা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর ছাহাবীগণের এবং সালাফে ছালেহীনের প্রতি লক্ষ্য করি। আর তাঁদের মত জীবন গড়ি। পক্ষান্তরে ফেরাঊন, নমরূদ, হামানের মত যারা তাদের থেকে সাবধান হই। অতএব যে সৎ ব্যক্তিকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে সে তার ফল পাবে। আর যে অসৎ ব্যক্তিকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে সে সেদিকেই যাবে যেদিকে তার বন্ধু যাবে।
ঈমানি দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে যে আমলগুলোয় অভ্যস্ত হওয়া প্রয়োজন...
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নাম ও গুণাবলী সম্মন্ধে জানাঃ
তাওহিদ তথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার একত্ববাদের প্রতি বিশ্বাসই হচ্ছে ঈমানের মূল। তাওহিদের এই বিশ্বাসকে যত গভীর, গাঢ় ও প্রগাঢ় করা সম্ভব হবে, ঈমানের শক্তিও তত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এ কারণে আল্লাহ তাআ'লার সমস্ত নাম ও গুণাবলীসহ আল্লাহ তাআ’লার পরিচয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআ’লা এবং তাঁর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যতই বৃদ্ধি পাবে, নিঃসন্দেহে তার ঈমানও তত বৃদ্ধি পাবে। এ জন্যই যে সমস্ত আলেম আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন তারা এ সম্পর্কে জ্ঞানহীন আলেমদের চেয়ে ঈমানের দিক থেকে অধিক শক্তিশালী।
সৎসঙ্গ অবলম্বনঃ
দৈনন্দিন জীবনে আপনি কোন লোকদের সাথে ওঠাবসা করেন? ভালো লোকের সংস্পর্শ আপনার জীবনকে ভালো দিকে নিয়ে যাবে। পক্ষান্তরে মন্দ লোকের সাহচর্য্য পতনের দিকে ধাবিত করিয়ে দিবে। তাই এমন লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন, যাঁদের সংস্পর্শে গেলে তাদের দেখাদখি ঈমান এবং আমল বৃদ্ধি পায়। যিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদ গুজার, তার সাথে কিছুটা সময় বসুন। তার পাশে বসলে তিনি তো ভুল করে হলেও তার তাহাজ্জুদের গল্প আপনাকে শুনিয়ে দিবেন। এতে আপনার মনেও তাহাজ্জুদের ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি হবে। আপনার অনিচ্ছায়ও এটা তৈরি হবে। এমন লোকদের সাথে মিশতে চেষ্টা করুন, যাঁরা অন্যকে উত্তম আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ
‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ -সূরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯
কুরআনে কারিমের তিলাওয়াতে অধিক পরিমানে ব্যাপৃত হোনঃ
অধিক পরিমানে কুরআনে কারিমের তিলাওয়াতে ব্যাপৃত হওয়া ঈমান বৃদ্ধির অন্যতম আমল। তাই বেশি পরিমাণে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করুন বা শ্রবণ করুন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে—
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয়
কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। -সূরা: আনফাল, আয়াত : ২
অধ্যয়ন করুন সিরাতে আমবিয়া ওয়াস সালেহীনঃ
আমবিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালামের সিরাত অধ্যয়ন করুন। বিশেষ করে প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবনালেখ্য এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়ুন। কেননা মহান আল্লাহ তাআ'লা মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের অন্তর প্রশান্ত করার জন্য পবিত্র কুরআনে অন্যান্য নবীদের ঘটনাবলী বর্ণনা করেছেন। আর তিনি সাহাবায়ে কেরামের ঈমানকে আমাদের ঈমানের জন্য আদর্শ বানিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُواْ أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاء أَلا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاء وَلَـكِن لاَّ يَعْلَمُونَ
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মত! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে না। -সূরা: বাকারা, আয়াত : ১৩
এ আয়াতের তাফসিরে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবারা যেভাবে ঈমান এনেছে, তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো।’ (তাফসিরে তাবারি, সংশ্লিষ্ট আয়াত)
অধিক পরিমানে আল্লাহর জিকির করুনঃ
অধিক পরিমানে আল্লাহর জিকির করুন। কেননা দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য জিকির খুবই উপকারী। আল্লাহর জিকির অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে। মুমিনের অন্তর জিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয়। ইরশাদ হয়েছে,
الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
‘যারা ঈমানদার এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রেখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ -সুরা : রাদ, আয়াত : ২৮
হাদিসে জিকিরকে অন্তরের মরিচা দূর করার পদ্ধতি বলা হয়েছে। তাই অধিক পরিমানে আল্লাহর জিকির ঈমান বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
চোখ খুলে তাকিয়ে দেখুন ইসলামের সৌন্দর্য্যগুলোঃ
ইসলামের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানুন। কেননা ইসলামের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য যুগে যুগে মানুষকে মুগ্ধ করেছে এবং ঈমানের প্রতি ধাবিত করেছে। পবিত্র কুরআনে এসেছে,
وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِّنَ الْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُوْلَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ
তোমরা জেনে রাখ তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রসূল রয়েছেন। তিনি যদি অনেক বিষয়ে তোমাদের আবদার মেনে নেন, তবে তোমরাই কষ্ট পাবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, পাপাচার ও নাফরমানীর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই সৎপথ অবলম্বনকারী। -সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৭
আল্লাহর নিদর্শনগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করুনঃ
প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শনগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। আকাশে মেঘ দেখলে আরবরা খুশি হতো। কিন্তু মহানবী (সা.)-এর চেহারা আজাবের ভয়ে মলিন হয়ে যেত। কেননা সামুদ জাতি আজাব বহনকারী মেঘ দেখে রহমতের বৃষ্টি ভেবে ফুর্তিতে মেতেছিল। -মুসলিম, হাদিস : ৮৯৯
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لِّأُوْلِي الألْبَابِ
নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯০)
সবকিছুর উপরে প্রাধান্য দিন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকেঃ
সব কিছুর চেয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে প্রাধান্য দিন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে সে ঈমানের মিষ্টতা পাবে; ১. যে কাউকে ভালোবাসলে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ভালোবাসবে; ২. আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল তার কাছে অন্য সব কিছুর চেয়ে বেশি প্রিয় হবে এবং ৩. আল্লাহ তাকে কুফর থেকে পরিত্রাণ করার পর পুনরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়ার চেয়ে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়া তার কাছে পছন্দনীয় হবে।’ -বুখারি, হাদিস : ৪৯৮৭
আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার সামান্যতার কথা ভাবুনঃ
আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার সামান্যতার কথা চিন্তা করুন। এর দ্বারা ঈমান বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاء أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاء فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالأَنْعَامُ حَتَّىَ إِذَا أَخَذَتِ الأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيْهَآ أَتَاهَا أَمْرُنَا لَيْلاً أَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيدًا كَأَن لَّمْ تَغْنَ بِالأَمْسِ كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الآيَاتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
পার্থিব জীবনের উদাহরণ তেমনি, যেমনি আমি আসমান থেকে পানি বর্ষন করলাম, পরে তা মিলিত সংমিশ্রিত হয়ে তা থেকে যমীনের শ্যামল উদ্ভিদ বেরিয়ে এল যা মানুষ ও জীব-জন্তুরা খেয়ে থাকে। এমনকি যমীন যখন সৌন্দর্য সুষমায় ভরে উঠলো আর যমীনের অধিকর্তারা ভাবতে লাগল, এগুলো আমাদের হাতে আসবে, হঠাৎ করে তার উপর আমার নির্দেশ এল রাত্রে কিংবা দিনে, তখন সেগুলোকে কেটে স্তুপাকার করে দিল যেন কাল ও এখানে কোন আবাদ ছিল না। এমনিভাবে আমি খোলাখুলি বর্ণনা করে থাকি নিদর্শণসমূহ সে সমস্ত লোকদের জন্য যারা লক্ষ্য করে। -সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৪
বন্ধুত্ব ও শত্রুতা উভয়টিই হবে আল্লাহর জন্যঃ
বন্ধুত্ব ও শত্রুতা উভয়টিই হতে হবে একমাত্র আল্লাহ তাআ'লার সন্তুষ্টি ও রাজি খুশির জন্য। হাদিসের নির্দেশনা এমনই। সুতরাং মুমিনদের সঙ্গে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব রাখুন। আর অবিশ্বাসীদের সঙ্গে সম্পর্কছেদ করুন। কেননা দ্বীনের শত্রুদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ
‘নিঃসন্দেহে তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল এবং ঈমানদাররা, যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত আদায় করে এবং তারা বিনম্র।’ -সূরা : মায়িদা, আয়াত : ৫৫
وَمَن يَتَوَلَّ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ فَإِنَّ حِزْبَ اللّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ
আর যারা আল্লাহ তাঁর রসূল এবং বিশ্বাসীদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই আল্লাহর দল এবং তারাই বিজয়ী। -সূরা : মায়িদা, আয়াত : ৫৬
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ الَّذِينَ اتَّخَذُواْ دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِّنَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاء وَاتَّقُواْ اللّهَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও। -সূরা : মায়িদা, আয়াত : ৫৭
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য প্রদান করে এবং আল্লাহর জন্য প্রদান থেকে বিরত থাকে, সে ঈমান পরিপূর্ণ করেছে।’ -আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৮১
বিনয় ও লজ্জাশীলতা গুরুত্বপূর্ণ উপাদানঃ
ঈমানি দুর্বলতার চিকিৎসায় বিনয় ও লজ্জাশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ এটি আল্লাহভীতির সূচক। লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। আবু মাসউদ বদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষ আগের নবীদের বাণী থেকে এ কথা জেনেছে যে যখন তোমার লজ্জা নেই তখন তুমি যা ইচ্ছা তা-ই করো।’ -সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৭৬৯
ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, এই হাদিসের ব্যাখ্যা দুইভাবে করা যায়—
এক. কাজ ও তার নির্ধারিত ফলাফলবিষয়ক। অর্থাৎ যার লজ্জা নেই সে যা ইচ্ছা করতে পারে।
দুই. তা সীমা ও অনুমোদনসংক্রান্ত আদেশ। অর্থাৎ যে কাজ তুমি করতে ইচ্ছা পোষণ করছ, সেদিকে খেয়াল করো, যদি তা লজ্জাজনক না হয় তবে তা করো। তবে মতটি সঠিক এবং বেশির ভাগের মত।
তবে জ্ঞানার্জনে লজ্জা নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্ঞানান্বেষণে লজ্জা না করায় আনসারি নারীদের প্রশংসা করে বলেন, ‘আনসারি নারীরা কতই না উত্তম! লজ্জা কখনো তাদের ধর্মের বিষয়ে জ্ঞানান্বেষণে বিরত রাখতে পারে না।’ -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৭২
অনুরূপ সত্য কথা বলা বা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে লজ্জা নেই। পবিত্র কুরআনে এসেছে,
وَاللَّهُ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ
‘...কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে লজ্জাবোধ করেন না...।’-সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৩
বেশি বেশি সৎ কাজ সম্পাদন করতে সচেষ্ট হোনঃ
অধিক পরিমানে সৎ কাজ সম্পাদন করতে সচেষ্ট হোন। সৎ আমল যতই বৃদ্ধি পাবে, ঈমান ততই বৃদ্ধি পাবে। এই সৎ আমল মুখের কথার মাধ্যমে হোক, কিংবা কাজের মাধ্যমে হোক যেমন যিক্র-আযকার, নামায, রোযা এবং হজ্জ। এসব কিছুই ঈমান বৃদ্ধির মাধ্যম। পবিত্র কুরআনে সৎ কাজের প্রতি অধিক তাগিদ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআ'লা ইরশাদ করেন-
ঈমান সুদৃঢ় রাখতে চমৎকার কিছু দুআঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ (রাঃ) এই দুআটি দ্বারা প্রার্থনা করতেন,
اللهُمَّ زِدْنَا إِيْمَاناً وَيَقِيْناً وَفِقْهاً.
আল্লাহুম্মা যিদনা ঈমানান ওয়া ইয়াকীনান ওয়া ফিক’হা।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ, আমাদের বিশ্বাস, আমাদের নিশ্চয়তা এবং আমাদের বিবেচনা শক্তি বাড়িয়ে দিন।
এখানে আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করছি যে, তিনি যেন আমাদের বিশ্বাস অর্থাৎ ঈমানকে বৃদ্ধি করে দেন, বিশ্বাসের ঐকান্তিকতা বা স্থিরতাকে বৃদ্ধি করেন এবং আল্লাহ তাআলাকে চেনার, জানার ও বোঝার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে দেন। চমৎকার অর্থবোধক এই ছোট্ট দুআটি আসুন, আজই শিখে নিই। কয়েকবার পড়লেই যে কারও মুখস্ত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আরেকটি সুন্দর দুআ যে দুআটি নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয় সহচর মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) কে ইয়েমেনে পাঠানোর প্রাক্কালে শিখিয়েছিলেন-
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমতা দান করুন আপনাকে স্মরণ করার, আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর, এবং আপনার ইবাদত করার।
এই সংক্ষিপ্ত দুআটিও পাঠ করা যায়-
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ
হে সকল হৃদয় নিয়ন্ত্রনকারী, আমার হৃদয়কে আপনার দ্বীনের উপর (স্থির ও অটলভাবে) স্থাপিত করুন।
পরিশেষেঃ
সর্বোপরি বেশি বেশি নেক আমল করা এবং যাবতীয় গুনাহ বা পাপের কাজ বর্জন করা। কেননা, যেকোনো নেক আমল ঈমানকে বৃদ্ধি করে। এ জন্য কুরআন মজিদে যত জায়গায় ঈমানের কথা এসেছে তত জায়গায় পাশাপাশি নেক আমল করার নির্দেশনাও বর্ণিত হয়েছে। পরিশেষে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নিকট কায়মনোবাক্যে দুআ করি, হে আল্লাহ! আপনি ঈমানকে আমাদের নিকট প্রিয় করে দিন এবং ঈমানকে আমাদের অন্তরে সুশোভিত করে দিন। কুফর, পাপাচার ও আপনার অবাধ্যতাকে আমাদের নিকট অপছন্দনীয় করে দিন এবং আমাদেরকে সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। আমাদের ঈমানকে মজবুত ও সুদৃঢ় করুন। গাফলতের অলস নিদ্রা থেকে জেগে ওঠার তাওফিক দান করুন। দ্বীনের প্রতিটি কাজকে আমাদের জন্য সহজ করে দিন। দ্বীন পরিপালন আমাদের কাছে প্রিয় থেকে প্রিয়তর করে দিন।
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৫৩
নতুন নকিব বলেছেন:
শুকরিয়া। আল্লাহ পাক আপনার দুআ কবুল করে নিন।
২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১০
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অ ভাইজান
ইট্টু আপেডেটড করুন যায় না?
না মােন এখনকার পাকনা পাকনা জেনারেশন তো। তাদের বুঝের উপযোগী করে আরকি?
এবার আসি হালকা আলোচনায়
বলেছেন ঈমান হ্রাসের কারণ!
আমি যদি প্রশ্ন করি ঈমান আদৌ আছে কি?
প্রচলিত লেবাসী উত্তর হ। অবশ্যই আছে নইলে কি আর মসজিদ ভরে!
ঠিক এখানেই সমস্যাটা। ঈমান বা বিশ্বাসের মৌলিক বোধটুকুনই অনুপস্থিত। সহজ কথায় বলি, যেমন আমরা যখন সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে যাই -জেনে যাই, বুঝে যাই, এবং তার নিয়ম কানুন, ড্রেসকোড, বিধি বিধান পালনের অংগীকার করেই যাই। সেখানে আমার পার্সোনাল অপশনের সুযোগ নাই।
আমি যখন মুসলমান হই তখন আমার বোধ বিশ্বাস, চেতনার শিক্ষাটা কি আমার আসে? আছে?
নাই। যদি থাকতো ৮৫ ভাগ মুসলমানের দেশ দুর্নীতিতে বারবার চ্যাম্পিয়ন হতো না।
তাহলে মৌখিক ঈমান, লেবাসী ঈমানের ভাবধরা মূল্যহীন প্রমাণ হলো।
আন্তিরক বিশ্বাস আর চর্চা যতক্ষন না আসবে ততক্ষন তা ঈমান নয়।
এত কথা বলার কারণ একটাই যে- যেখানে ঈমান নাইই তা আর হ্রাস ঘটবে কি প্রকারে?
তা মসজিদের ইমাম সােহব থেকে ধরে আম মুসল্লি সবার জন্যই প্রযোজ্য।
স্রেফ সূরা মাউনের চিরুনি দিয়ে ছাকনি দেন- কয়জন ঈমানদার আর নামাজী পান! বইলেন।
বাকী পয়েন্ট আলাপ করতে গেলে পোস্টের চেয়ে কেমন্ট বড় হই যাইবো
তাই ক্ষেমা দিলাম ভাইজান।
তোমার বিশ্বাসকে করো এত বুলন্দ
তোমার বিশ্বাসকে করো এত বুলন্দ
যেন খোদ খোদা জানতে চায়
বল বান্দা তোর ইচ্ছা কি?
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:১২
নতুন নকিব বলেছেন:
আধ্যাত্মিক জগতের ব্যক্তিবর্গের পরিভাষাগুলো আমার কাছে দারুন লাগে। যেমন, ধরেন- লেবাসী, হাকিকতী, তরিকতী, মারিফাত ইত্যাদি।
আপনার সুচিন্তিত অভিমতের সাথে দ্বিমত পোষন করার সুযোগ খুব বেশি একটা নেই। সত্যিকারের ঈমান ক'জনের আছে! সেই জজবাওয়ালা, সেই তাকতওয়ালা ঈমানদার কোথায় পাবেন! তবুও ঈমানী দুর্বলতার এই প্রান্তিকতার পর্যায়ে নিভু নিভু ঈমানওয়ালাদের ঈমানকে তাজা করার দায়িত্ব কিন্তু কাউকে না কাউকে নিতে হবে। আসলে ঈমান এমনই। ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মত। সুপ্ত বারুদের মত। দেশলাইয়ের কাঠি দিয়ে একটু জ্বালিয়ে দিলেই হলো। অনেক ঈমানওয়ালাদের ঈমানই আজ নিস্তেজ, ঘুমন্ত যেন। তাদেরকে সজাগ করতে হবে। জাগাতে হবে। ঘুম ভাঙ্গাতে হবে। ঈমানের সাগরে জোয়ার আনতে হবে। সেই জোয়ারে যাতে ধুয়ে মুছে পাক সাফ হয়ে ভেসে যায় যাবতীয় পাপাচার আর অন্যায়ের কলুষ-কালিমা।
এই লক্ষ্যেই কুরআন হাদিসের আলোকে ঈমান তাজা করার অতি সামান্য এই প্রেসক্রিপশন।
আপনার আগমনে মুগ্ধতা। শুভকামনা সবসময়।
৩| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪১
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: উপকারী পোস্ট হজরত! সিলসিলায়ে এমদাদিয়া আশরাফিয়া আখতারিয়ার হাজরাতগণ বায়আত করবার পূর্বের সংক্ষিপ্ত খুতবায় সূরা তাওবার ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আ'মানুত্তাকুল্লাহ ওয়া কুনু মা' আস স্বদেক্বীন আয়াতখানা পাঠ করেন।
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:১৯
নতুন নকিব বলেছেন:
জ্বি, শুকরিয়া। আপনি কি বায়আত গ্রহণ করেছেন? আমার কাছে উনাদের ইসলাহ পদ্ধতি ভালো মনে হয়। আল্লাহ পাক তাদেরসহ সহিহ দ্বীনের ঝান্ডাধারী প্রত্যেককে সফলতা দান করুন।
৪| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: উপকারী পোস্ট।
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:১৯
নতুন নকিব বলেছেন:
মা-শাআল্লাহ। শুকরিয়া।
৫| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৪০
করুণাধারা বলেছেন: ইদানিং আমার এক স্নেহভাজন বলছিল যে আগের মতো সে নামাজে মনোযোগী থাকতে পারে না। আমি তখন তাকে বলেছিলাম আল্লাহ আকবর বলার সময় শুধু মনপ্রাণ দিয়ে অর্থ মনে করতে..
আপনি বিষদভাবে লিখেছেন। খুব উপকারে আসবে। ধন্যবাদ।
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:২৪
নতুন নকিব বলেছেন:
অনেককেই এমন কথা বলতে শোনা যায়। অলসতা চেপে ধরে একেক সময়। আসলে কুরআনে হাদিসে বর্ণিত ঈমান তাজা করার এগুলো মহৌষধ।
পোস্ট আপনার সামান্য উপকারে এলেই অনেক ভালো লাগবে। কৃতজ্ঞতাসহ শুভকামনা।
৬| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৩
মোঃ ইকবাল ২৭ বলেছেন: জানার বিষয়, আমলের বিষয়, দরকারী পোস্ট।
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:২৪
নতুন নকিব বলেছেন:
শুকরিয়া। জাজাকুমুল্লাহ।
৭| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১০
মা.হাসান বলেছেন: দোয়া গুলো খুব কাজে আসবে। অনেক ধন্যবাদ।
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:২৫
নতুন নকিব বলেছেন:
জ্বি, ভাই আপনাকে পেয়ে ভালো লাগছে। শুকরিয়া।
৮| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৬
নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা । দোয়াগুলি জেনে নেওয়া ভালো হবে
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:২৬
নতুন নকিব বলেছেন:
শুকরিয়া। আপনার উপস্থিতি প্রেরণার।
৯| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৫
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
নিজের প্রতি যখন মানুষের আস্থা বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যায় তখন ঈমান আখলাক সবই দুর্বল হয়ে যায়। তাতে করে নামাজ রোজা সহ যে কোনো ধর্মীয় কাজে আর উৎসাহ পাবেন না। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ খুব সুন্দর লেখা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন।
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৫০
নতুন নকিব বলেছেন:
শুকরিয়া, প্রিয় ভাই। আশা করছি, অনেক ভালো আছেন।
শুভকামনা সবসময়।
১০| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৪২
নতুন বলেছেন: আগেকার দিনে মানুষ অন্ধবিশ্বাসী ছিলো। তখন মানুষ প্রশ্ন ছাড়াই বিশ্বাস করো।
এখন যখন আপনি বলবেন রাসুল সা: আঙ্গুলের ইসারায় চাদ দুই টুকরা হয়েছিলো। এটা রুপক অর্থেনা সত্যিকারের অর্থে বিশ্বাস করতে হলে পদার্থ বিজ্ঞান জানা মানুষের মনে প্রশ্ন জাগবেই।
আপনি যখন বলবেন মানুষের নিশ্বাসের ভরশা নাই। তখন সম্পূর্ন সুস্হ মানুষ আগের মতন অতটা বিশ্বাস করবেনা।
কারন তিনি জানেন তার হৃদপিন্ডের ফাংসন ভালো, কিডনি, ফুসফুস,লিভার, ব্রেনের পরিক্ষার রিপোট বলছে যে তার কোন সমস্যা নাই। তাই দূঘটনা বা একিউট কাডিয়াক এরেস্ট বা বর্জপাত ছাড়া তার মৃত্যুর সম্ভবনা কম।
সময় পাল্টাচ্ছে তাই মানুষ আগের মতন অন্ধ বিশ্বাসী না তাই অনেকেরই ইমান একটু দূর্বল যেটা ১৪০০ বছর আগে ছিলো।
আর আসলে ১৪০০ আগেও দূর্বল ইমানের মানুষ ছিলো নতুবা সাহাবা, খলিফা, ইমাম হাসান, হোসেন রা: কে হত্যা করলো কারা?
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৪৯
নতুন নকিব বলেছেন:
আগেকার দিনে মানুষ অন্ধবিশ্বাসী ছিলো। তখন মানুষ প্রশ্ন ছাড়াই বিশ্বাস করো।
-মিথ্যে কথা। এখন বিজ্ঞানের কল্যানে মানুষ অনেক কিছুর প্রমান বাস্তবে দেখে জেনে শুনে আল্লাহ তাআ'লার প্রতি বিশ্বাসকে আরও শক্ত এবং পোক্ত করে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। জ্ঞানীরা বিশ্বাসের আলোয় আলোকিত হচ্ছে। দিনকে দিন এ সংখ্যা গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনি ইচ্ছে করলে চশমার গ্লাসটা একটু পরিষ্কার করে, ভালো করে তাকিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন। ওয়েস্টার্ণ সমাজে ইসলাম ধর্মে দিক্ষিত হওয়ার হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে, না কি হ্রাস পাচ্ছে। অবিশ্বাসী থেকে যাচ্ছে শুধু অন্ধ, নিবোধ এবং কিছু মূর্খরাই।
এখন যখন আপনি বলবেন রাসুল সা: আঙ্গুলের ইসারায় চাদ দুই টুকরা হয়েছিলো। এটা রুপক অর্থেনা সত্যিকারের অর্থে বিশ্বাস করতে হলে পদার্থ বিজ্ঞান জানা মানুষের মনে প্রশ্ন জাগবেই।
-বিজ্ঞানের পাল্লায় সবকিছু মেপে মেপে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করার চেষ্টায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘাপলা থেকে যায়। কিছু বিষয়ের মিমাংসা মানুষের আবিষ্কৃত বিজ্ঞান আজও করতে পারেনি। সেগুলোর ব্যাপারে কার কাছে যাবেন? বিজ্ঞান যেখানে ঠেকে যায়, বিজ্ঞানীরা তো তখন আসমানি কিতাবের কাছে পথ হাতরে বেড়ান। আপনার গন্তব্য কোথায় যদি জানাতেন!
আচ্ছা, আসুন, প্রিয় বিদ্রোহী কবির অনবদ্য কবিতার দু'চার লাইন পাঠ করি-
উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ;
আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।
উহারা চাহুক সংকীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ,
আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক, প্রেম অভেদ।
উহারা চাহুক দাসের জীবন, আমরা শহীদি দরজা চাই;
নিত্য মৃত্যু-ভীত ওরা, মোরা মৃত্যু কোথায় খুঁজে বেড়াই!
ওরা মরিবেনা, যুদ্ব বাধিঁলে ওরা লুকাইবে কচুবনে,
দন্তনখরহীন ওরা তবু কোলাহল করে অঙ্গনে।
ধন্যবাদ।
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৫৩
নতুন নকিব বলেছেন:
আচ্ছা, না থাক। আপনার জন্য পুরো কবিতাটাই নিয়ে এলাম। সময় করে যদি পাঠ করেন একবার-
এক আল্লাহ জিন্দাবাদ
- কাজী নজরুল ইসলাম---সংকলিত (কাজী নজরুল ইসলাম)
উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ;
আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।
উহারা চাহুক সংকীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ,
আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক, প্রেম অভেদ।
উহারা চাহুক দাসের জীবন, আমরা শহীদি দরজা চাই;
নিত্য মৃত্যু-ভীত ওরা, মোরা মৃত্যু কোথায় খুঁজে বেড়াই!
ওরা মরিবেনা, যুদ্ব বাধিঁলে ওরা লুকাইবে কচুবনে,
দন্তনখরহীন ওরা তবু কোলাহল করে অঙ্গনে।
ওরা নির্জীব; জিব নাড়ে তবু শুধূ স্বার্থ ও লোভবশে,
ওরা জিন, প্রেত, যজ্ঞ, উহারা লালসার পাঁকে মুখ ঘষে।
মোরা বাংলার নব যৌবন,মৃত্যুর সাথে সন্তরী,
উহাদের ভাবি মাছি পিপীলিকা, মারি না ক তাই দয়া করি।
মানুষের অনাগত কল্যাণে উহারা চির অবিশ্বাসী,
অবিশ্বাসীরাই শয়তানী-চেলা ভ্রান্ত-দ্রষ্টা ভুল-ভাষী।
ওরা বলে, হবে নাস্তিক সব মানুষ, করিবে হানাহানি।
মোরা বলি, হবে আস্তিক, হবে আল্লাহ মানুষে জানাজানি।
উহারা চাহুক অশান্তি; মোরা চাহিব ক্ষমাও প্রেম তাহার,
ভূতেরা চাহুক গোর ও শ্মশান, আমরা চাহিব গুলবাহার!
আজি পশ্চিম পৃথিবীতে তাঁর ভীষণ শাস্তি হেরি মানব
ফিরিবে ভোগের পথ ভয়ে, চাহিবে শান্তি কাম্য সব।
হুতুম প্যাচারা কহিছে কোটরে, হইবেনা আর সূর্যোদয়,
কাকে আর তাকে ঠোকরাইবেনা, হোক তার নখ চষ্ণু ক্ষয়।
বিশ্বাসী কভু বলেনা এ কথা, তারা আলো চায়, চাহে জ্যোতি;
তারা চাহে না ক এই উৎপীড়ন এই অশান্তি দূর্গতি।
তারা বলে, যদি প্রার্থনা মোরা করি তাঁর কাছে এক সাথে,
নিত্য ঈদের আনন্দ তিনি দিবেন ধুলির দুনিয়াতে।
সাত আসমান হতে তারা সাত-রঙা রামধনু আনিতে চায়,
আল্লা নিত্য মহাদানী প্রভূ, যে যাহা চায়, সে তাহা পায়।
যারা অশান্তি দুর্গতি চাহে, তারা তাই পাবে, দেখো রে ভাই,
উহারা চলুক উহাদের পথে, আমাদের পথে আমরা যাই।
ওরা চাহে রাক্ষসের রাজ্য, মেরা আল্লার রাজ্য চাই,
দ্বন্দ্ব-বিহীন আনন্দ-লীলা এই পৃথিবীতে হবে সদাই।
মোদের অভাব রবে না কিছুই, নিত্যপূর্ণ প্রভূ মোদের,
শকুন শিবার মত কাড়াকাড়ি করে শবে লয়ে-- শখ ওদের!
আল্লা রক্ষা করুন মোদেরে, ও পথে যেন না যাই কভূ,
নিত্য পরম-সুন্দর এক আল্লাহ্ আমাদের প্রভূ।
পৃথিবীতে যত মন্দ আছে তা ভালো হোক, ভালো হোক ভালো,
এই বিদ্বেষ-আঁধার দুনিয়া তাঁর প্রেমে আলো হোক, আলো।
সব মালিন্য দূর হয়ে যাক সব মানুষের মন হতে,
তাঁহার আলোক প্রতিভাত হোক এই ঘরে ঘরে পথে পথে।
দাঙ্গা বাঁধায়ে লুট করে যারা, তার লোভী, তারা গুন্ডাদল
তারা দেখিবেনা আল্লাহর পথ চিরনির্ভয় সুনির্মল।
ওরা নিশিদিন মন্দ চায়, ওরা নিশিদিন দ্বন্দ চায়,
ভূতেরা শ্রীহীন ছন্দ চায়, গলিত শবের গন্ধ চায়!
তাড়াবে এদের দেশ হতে মেরে আল্লার অনাগত সেনা,
এরাই বৈশ্য, ফসল শৈস্য লুটে খায়, এরা চির চেনা।
ওরা মাকড়সা, ওদের ঘরের ঘেরোয়াতে কভু যেয়ো না কেউ,
পর ঘরে থাকে জাল পেতে, ওরা দেখেনি প্রাণের সাগর ঢেউ।
বিশ্বাস করো এক আল্লাতে প্রতি নিঃশ্বাসে দিনে রাতে,
হবে দুলদুল - আসওয়ার পাবে আল্লার তলোয়ার হাতে।
আলস্য আর জড়তায় যারা ঘুমাইতে চাহে রাত্রিদিন,
তাহারা চাহে না চাঁদ ও সূর্য্য, তারা জড় জীব গ্লানি-মলিন।
নিত্য সজীব যৌবন যার, এস এস সেই নৌ-জোয়ান
সর্ব-ক্লৈব্য করিয়াছে দূর তোমাদেরই চির আত্বদান!
ওরা কাদা ছুড়ে বাঁধা দেবে ভাবে - ওদের অস্ত্র নিন্দাবাদ,
মোরা ফুল ছড়ে মারিব ওদের, বলিব - "এক আল্লাহ জিন্দাবাদ"।
ধন্যবাদ আবারও।
১১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩৮
নতুন বলেছেন: আগেকার দিনে মানুষ অন্ধবিশ্বাসী ছিলো। তখন মানুষ প্রশ্ন ছাড়াই বিশ্বাস করো।
-মিথ্যে কথা। এখন বিজ্ঞানের কল্যানে মানুষ অনেক কিছুর প্রমান বাস্তবে দেখে জেনে শুনে আল্লাহ তাআ'লার প্রতি বিশ্বাসকে আরও শক্ত এবং পোক্ত করে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। জ্ঞানীরা বিশ্বাসের আলোয় আলোকিত হচ্ছে। দিনকে দিন এ সংখ্যা গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
-বিজ্ঞানের পাল্লায় সবকিছু মেপে মেপে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করার চেষ্টায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘাপলা থেকে যায়। কিছু বিষয়ের মিমাংসা মানুষের আবিষ্কৃত বিজ্ঞান আজও করতে পারেনি। সেগুলোর ব্যাপারে কার কাছে যাবেন? বিজ্ঞান যেখানে ঠেকে যায়, বিজ্ঞানীরা তো তখন আসমানি কিতাবের কাছে পথ হাতরে বেড়ান।
আপনার দুইটা জবাবই সাংঘষিক। বলছেন বিশ্বাস না বরং বিজ্ঞানের কারনেই মানুষের বিশ্বাস বৃদ্ধি পাচ্ছে আবার বললেন যে বিজ্ঞান দিয়ে মিমাংসা করা যাবেনা বিশ্বাস করতে হবে???
আর কখন বিজ্ঞানীরা আসমানী কিতাবে পথ হাতড়ে বেড়িয়েছে এই বিষয়টা নিয়ে একটা ব্লগ লিখবেন কি?
এই যুক্তি যারা দেয় তারা মনে করে ১৪০০ বছর আগেই তথ্যগুলি আসমানী কিতাবে বলা হয়েছে কিন্তু তারা ভুলে যায় ১৪০০ আগেই বিজ্ঞানের শুরু হয় নি্ তারও অনেক আগে পৃথিবিতে অনেক বিজ্ঞানী, দার্শনিক বিভিন্ন জিনিস নিয়ে ভেবেছিলো এবং সেই গুলি নিয়ে অনেক বই আছে।
আচ্ছা, আসুন, প্রিয় বিদ্রোহী কবির অনবদ্য কবিতার দু'চার লাইন পাঠ করি-
কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪ ছেলেদের নাম জানেন? তার কিন্তু ৫০০ উপরে হিন্দু ধমের বন্দনা আছে...
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৭
নতুন নকিব বলেছেন:
দেখি, দুআ করেন, আপনার কথামত একটা ব্লগ লিখতে চেষ্টা করবো।
আর কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ছেলেদের নাম রাখার ক্ষেত্রে সাম্যবাদের পরিচয়টি ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। মূলতঃ তিনি সাম্যবাদের একজন অগ্রদূত ছিলেন। তিনি মুসলিম হয়েও চার সন্তানের নাম বাংলা এবং আরবি/ফারসি উভয় ভাষাতেই নামকরণ করেন। যেমন: কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ (বুলবুল), কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ।[১২]
পোস্টের মূল বিষয় থেকে আমরা বোধ হয় একটু দূরে সরে যাচ্ছি।
যাক, ধন্যবাদ।
১২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৪২
নতুন বলেছেন: আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি খেয়ালী-বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি চির-বিদ্রোহী বীর -
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!
কবি কাজী নজরুল ইসলাম উনি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিত চেয়েছিলো তার পদ-চিহ্ন
উনি অন্য জিনিস ভাই। উনাকে ধর্মের পালায় মাপা যাবেনা।
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪০
নতুন নকিব বলেছেন:
উনাকে মাপতে চাইনি। উনার কবিতার বক্তব্য এবং ভাব অনুধাবন করার চেষ্টা করতে তো অসুবিধা নেই, কি বলেন!
না কি, এই কবিতা পড়ে উনাকেও অন্য কোনো অভিধায় অভিহিত করবেন?
১৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৫
নতুন বলেছেন: আমরা খুব বেশি দুরে যাইনাই।
উনার ছেলের নাম কৃষ্ণ মুহাম্মদ,
১৪০০ বছর আগে এমন নাম কোন মুসলমান রাখবে কেউ কল্পনা্ও করেতে পারেনই।
আমাদের জাতীয় কবির সন্তানের নাম কৃষ্ণ মুহাম্মদ ,
উনি ইসলাম, হিন্দু সম্পকে যেনেই এমন নাম রেখেছেন।
মানুষ ধর্ম সম্পকে যত কম জানে তত বেশি বিশ্বাসী থাকে। ধর্ম এবং পৃথিবি সম্পর্কে যত বেশি জানে ধমের উপরে বিশ্বাস তত কমতে থাকে।
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:০৭
নতুন নকিব বলেছেন:
মানুষ ধর্ম সম্পকে যত কম জানে তত বেশি বিশ্বাসী থাকে। ধর্ম এবং পৃথিবি সম্পর্কে যত বেশি জানে ধমের উপরে বিশ্বাস তত কমতে থাকে।
-হাসালেন ভাই। মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। অবশ্য আপনারটা না হয়ে আমারটাও হতে পারে।
যাক, ভালো থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৬
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আল্লাহ আমাদের সকলকে ঈমান মজবুত ও সবল করার তওফিক দিন।
তওফিক দিন বেশী বেশী নেক আমল করার।