নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ছবিঃ অন্তর্জাল।
হাদিসের আলোকে দলিলসহ আওয়াবীন, ইশরাক ও চাশত এর নামাজের ফজিলত
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে শুকরিয়া যে, তিনি আমাদেরকে পার্থিব জীবনে তাওহীদ তথা তাঁর একত্ববাদে বিশ্বাসী করে সৌভাগ্যশালী করেছেন। মহান মালিক মুনিবের এমন অসীম-অবারিত দানশীলতার কথা ভাবলেই মনটা ফুরফুরে হয়ে ওঠে। তাঁর অসীম-অপরিসীম দয়ার দিকে তাকালে চোখ দু'টো শান্তি-প্রশান্তিতে শীতল হয়ে ওঠে। পার্থিব এই ক্ষুদ্র জীবনে অকল্পনীয় মূল্যবান তাঁর অসংখ্য দান-অনুদান দর্শনে ভাবনারা পাখা মেলতে চায়, আশা-প্রত্যাশারা ডানা ছড়িয়ে দিতে চায়- পারলৌকিক জীবনেও তিনি তাঁর দয়ার পথকে আমাদের জন্য রুদ্ধ করে দিবেন না- প্রত্যয়ী মন বুকের খাচায় ধিকিধিকি জোনাক হয়ে জ্বলে। না চাইতেই তিনি আমাদেরকে ঈমানের মহিয়ান সম্পদ দান করেছেন। তাঁকে ভালোবেসে তাঁর প্রতি মুহাব্বতের মাত্রা-পরিমাত্রাকে বৃদ্ধি করার পথ ও পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন। তাঁর শুকরিয়া আদায় করে শেষ করার নয়।
তাকে ভালোবাসতে হলে কি করতে হবে আমাদের? কোন কাজে তাকে খুশি করা যায়?
তিনি খুশি হন- মিছেমিছি সকল উপাস্যদের ছেড়ে সত্যিকারের স্রষ্টা হিসেবে একমাত্র তাকেই মেনে নিলে।
তিনি আনন্দিত হন- সকল দুআর থেকে মুখ ফিরিয়ে একমাত্র তাঁর দরজার ভিখারি হয়ে গেলে।
তিনি মুগ্ধ হন- গোটা সৃষ্টিজগতের প্রতি মায়াশীল, আন্তরিক আর দরদী হলে।
তিনি মাখলূকের হৃদয়ের আর্তনাদ শোনেন। ব্যথাতুরের বুকের পাটাতনে উথলে ওঠা দুঃখ তিনি দেখেন। যন্ত্রণাক্লিষ্ট ঢেউয়ে ভেঙ্গে চৌচির ছোট্ট বুকের কান্না তিনি অবলোকন করেন।
তিনি শুধু তাকেই ডাকতে বলেন। তাকে সিজদা করলে তিনি সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হন। খুশি হয়ে যান। বান্দার গোনাহ রাশি ক্ষমা করতে থাকেন। হাদিসের ভাষ্য, সিজদার সময় বান্দা তার রবের অধিক নিকটবর্তী হয়।
আরেক হাদিসের ভাষ্য, আসসাজিদু ইয়াসজুদু আলা ক্কদামাইয়্যার রহমান। অর্থাৎ, সিজদাকারী দয়াময় রহমানের কুদরতি দুই কদম মোবারক ব্যতিত আর কোথাও সিজদা করে না।
অন্য হাদিসে এসেছে, সাজদাতুন ওয়াহিদাতুন, খইরুমমিনাদ্দুনিয়া ওয়ামা ফি-হা। অর্থাৎ, একটি সিজদা দুনিয়া এবং দুনিয়ার যাবতীয় কিছুর চেয়েও উত্তম।
কিন্তু কিছু মানুষ, আজ আর সিজদা করতে চায় না। অথবা, চাইলেও যত কম করে পারা যায় সেই পথ খোঁজেন। নফল নামাজের মাধ্যমে মহান রবের সান্নিধ্যলাভের পথে হেটে কষ্ট করতে চায় না। নফল বলি কেন, ফরজই বা ক'জন পড়েন! পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ কতজন আদায় করেন! নিয়মিত কতজন পাওয়া যাবে! এক ওয়াক্তও ছুটে যায় না যাদের! কিছু লোক তো এমনও আছেন যারা কোনো নামাজই পড়েন না! না ফরজ, না নফল, না ওয়াজিব। কোনো নামাজই তাদের কাছে কাজের মনে হয় না। আর কিছু লোক আছেন যারা নামাজ পড়েন কিন্তু তারা সবকিছুতে শর্টকাটের রাস্তা খোঁজেন। ফরজ পড়েন, তো সুন্নাত পড়েন না। সুন্নাত পড়েন তো নফলের প্রয়োজন মনে করেন না! আলোর মহাসড়ক ছেড়ে তারা অন্ধকারের সরু গলি পথে ধাবমান।
তাদের প্রশ্ন, নফল ইবাদাতের কি প্রয়োজন?
অথচ, আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের দিকে তাকালে আমরা কি দেখতে পাই? দীর্ঘ নামাজে দাঁড়ানোর ফলে তাঁর পা মোবারক ফুলে যেত। রাতভর তিনি দাঁড়িয়ে ইবাদাতে নিমগ্ন থাকতেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُومُ أَدْنَى مِن ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهُ وَثُلُثَهُ وَطَائِفَةٌ مِّنَ الَّذِينَ مَعَكَ
আপনার পালনকর্তা জানেন, আপনি ইবাদতের জন্যে দন্ডায়মান হন রাত্রির প্রায় দু’তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং আপনার সঙ্গীদের একটি দলও দন্ডায়মান হয়। -সূরা আল মুজ্জাম্মিল, আয়াত-২০
হাদিসে এসেছে, কিয়ামতের দিন বান্দার সর্বাগ্রে নামাজের হিসাব হবে। ফরজ নামাজের ঘাটতি দেখা দিলে নফল আছে কি না দেখতে বলা হবে। সম্পূর্ণ হাদিসখানা উল্লেখ করছি-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رضى الله عنه قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ بِصَلاَتِهِ فَإِنْ صَلَحَتْ فَقَدْ أَفْلَحَ وَأَنْجَحَ وَإِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ " . قَالَ هَمَّامٌ لاَ أَدْرِي هَذَا مِنْ كَلاَمِ قَتَادَةَ أَوْ مِنَ الرِّوَايَةِ " فَإِنِ انْتَقَصَ مِنْ فَرِيضَتِهِ شَىْءٌ قَالَ انْظُرُوا هَلْ لِعَبْدِي مِنْ تَطَوُّعٍ فَيُكَمَّلُ بِهِ مَا نَقَصَ مِنَ الْفَرِيضَةِ ثُمَّ يَكُونُ سَائِرُ عَمَلِهِ عَلَى نَحْوِ ذَلِكَ " . خَالَفَهُ أَبُو الْعَوَّامِ
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন বান্দার নিকট থেকে তার আমলসমূহের মধ্যে যে আমলের হিসাব সর্বাগ্রে নেওয়া হবে, তা হল নামায। নামায ঠিক হলে সে পরিত্রাণ ও সফলতা লাভ করবে। নচেৎ (নামায ঠিক না হলে) ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং (হিসাবের সময়) ফরয নামাযে কোন কমতি দেখা গেলে আল্লাহ তাবারাকা অতাআলা ফিরিশ্তাদের উদ্দেশ্যে বলবেন, ‘দেখ, আমার বান্দার কোন নফল (নামায) আছে কি না।’ অতএব তার নফল নামায দ্বারা ফরয নামাযের ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতঃপর আরো সকল আমলের হিসাব অনুরুপ গ্রহণ করা হবে।” -আবূ দাঊদ, সুনান ৭৭০, তিরমিযী, সুনান ৩৩৭, সহিহ, ইবনু মাজাহ হাঃ ১৪২৫, সহিহ তারগিব ১/১৮৫
এই হাদিসের আলোকে নফলের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।
আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-
মহানবী (সাঃ) বলেন, আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আমার ওলীর বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করব। বান্দা যা কিছু দিয়ে আমার নৈকট্য লাভ করে থাকে তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম হল সেই ইবাদত, যা আমি তার উপর ফরয করেছি। আর সে নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। পরিশেষে আমি তাকে ভালোবাসি। অতঃপর আমি তার শোনার কান হয়ে যাই, তার দেখার চোখ হয়ে যাই, তার ধরার হাত হয়ে যাই, তার চলার পা হয়ে যাই! সে আমার কাছে কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দিয়ে থাকি। আর আমি যে কাজ করি তাতে কোন দ্বিধা করি না -যতটা দ্বিধা করি এজন মুমিনের জীবন সম্পর্কে; কারণ, সে মরণকে অপছন্দ করে। আর আমি তার (বেঁচে থেকে) কষ্ট পাওয়াকে অপছন্দ করি।”-বুখারী, হাদিস নং ৬৫০২
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ বান্দার কান, চোখ, হাত ও পা হওয়ার অর্থ হল, বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি মতেই এ সবকে ব্যবহার করে। যাতে ব্যবহার করলে তিনি অসন্তুষ্ট, তাতে সে ঐ সকল অঙ্গকে ব্যবহার করে না।
আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রয়োজনীয় পরিমান নফল নামাজে মনযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। কিছু নফল নামাজ হাদিসের আলোকে দলিলসহ উপস্থাপন করা হলো-
সালাতুল আওয়াবীনঃ
মাগরিবের ফরজ ও সুন্নাত পড়ার পর থেকে ইশার সময় হবার আগ পর্যন্ত যে নফল নামায পড়া হয়, সেটাকে আওয়াবীন নামায বলা হয়। তবে কিছু হাদীসে চাশতের নামাযকেও আওয়াবীন নামায বলে ব্যক্ত করা হয়েছে।
বাকি আমাদের কাছে প্রসিদ্ধ হল, চাশতের নামায আলাদা আর আওয়াবীন নামায স্বতন্ত্র।
চাশতের নামাযের সময় হল সূর্য উদিত হয়ে রোদ তীব্র হবার পর পড়া হয়। আর আওয়াবীন নামায মাগরিবের ফরজের পর পড়া হয়।
এ নামায হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে রাকাত সংখ্যা নির্ধারিত নয়। ছয় রাকাতের ফযীলত হাদীসে আসছে। আবার এর চেয়ে কমবেশিও করা যাবে।
عَنْ حُذَيْفَةَ: «أَنَّهُ صَلَّى مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَغْرِبَ، ثُمَّ صَلَّى حَتَّى صَلَّى الْعِشَاءُ»
হযরত হুযাইফা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মাগরিব নামায আদায় করলেন। ফরজ শেষে তিনি নফল পড়তে লাগলেন ইশা পর্যন্ত। -সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১১৯৪
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَلَّى سِتَّ رَكَعَاتٍ بَعْدَ الْمَغْرِبِ لَا يَتَكَلَّمُ بَيْنَهُنَّ بِشَيْءٍ إِلَّا بِذِكْرِ اللَّهِ عُدِلْنَ لَهُ بِعِبَادَةِ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً»
আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ছয় রাকাত নামায মাগরিবের পর পড়বে, যার মাঝে আল্লাহর জিকির ছাড়া কোন কথা বলে না, তাহলে সে বার বছর ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। -সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১১৯৫
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ سِتَّ رَكَعَاتٍ لَمْ يَتَكَلَّمْ فِيمَا بَيْنَهُنَّ بِسُوءٍ عُدِلْنَ لَهُ بِعِبَادَةِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً.
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামায পড়ে, যার মাঝে কোন মন্দ কথা বলে না, তাহলে সে বার বছরের ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। -সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৪৩৫, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৭৪
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ: «صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ، مَا بَيْنَ أَنْ يَلْتَفِتَ أَهْلُ الْمَغْرِبِ، إِلَى أَنْ يَثُوبَ إِلَى الْعِشَاءِ»
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘সালাতুল আওয়াবীন’ হল মাগরিবের নামায পড়ে ফারিগ হবার পর থেকে নিয়ে ইশার নামাযের সময় হওয়া পর্যন্ত যে নামায পড়া হয় তাকে বলে। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫৯২২
ابْنَ الْمُنْكَدِرِ، وَأَبَا حَازِمٍ يَقُولَانِ: {تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ} [السجدة: 16]، ” هي مَا بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَصَلَاةِ الْعِشَاءِ، صَلَاةُ الْأَوَّابِينَ “
ইবনুল মুনকাদির এবং আবু হাযেম বলেন, সূরা সাজদার ১৬ নং আয়াত (তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে।) আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যে নামায মাগরিব ও ইশার মাঝখানে পড়া হয়। সেটা হল আওয়াবীনের নামায। -শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৮৪০, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪৮১৩
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: «إِنَّ الْمَلائِكَةَ لَتَحُفُّ بِالَّذِينَ يُصَلُّونَ بَيْنَ الْمَغْرِبِ إِلَى الْعِشَاءِ، وَهِيَ صَلاةُ الأَوَّابِينَ»
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় ফেরেশতাগণ ঐ লোকদের ঘিরে রাখে,যারা মাগরিব ও ইশার মাঝখানে নামায পড়ে। আর এটা সালাতুল আওয়াবীন। -শরহুস সুন্নাহ লিলবাগাবী, হাদীস নং-৮৯৭
ইশরাক ও চাশতের নামাযঃ
ইশরাক ও চাশতের নামায এক নয়। দু’টি স্বতন্ত্র নামায।
সালাতুল ইশরাকঃ
ফজরের নামায পড়ার পর সেই স্থানেই বসে, জিকির আজকার, দুআ দরূদ, ইস্তিগফার, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি করতে থাকা। দুনিয়াবী কোন কথা না বলা। এভাবে যখন সূর্য উদিত হয়ে যায়। এর দশ বারো মিনিট পর যে দুই/চার রাকাত নামায পড়া হয় সেই নামাযকে ইশরাকের নামায বলা হয়। তবে ফজর নামায পড়ে দুনিয়াবী কাজে মগ্ন হয়ে গেলে সূর্য উদিত হবার পর যদি ইশরাক পড়া হয় তবুও শুদ্ধ হবে। তবে সওয়াব কিছুটা কম হবে।
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلَّى الغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতে আদায় করে, তারপর সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহ তা’আলার যিকর করে, তারপর দুই রাকাআত নামায আদায় করে- তার জন্য একটি হাজ্জ ও একটি উমরার সাওয়াব রয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পূর্ণ, পূর্ণ, পূর্ণ (হাজ্জ ও উমরার সাওয়াব)। -সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৫৮৬
হযরত হাসান বিন আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ে, তারপর আল্লাহর জিকির করতে থাকে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত। তারপর দুই রাকাত বা চার রাকাত নামায আদায় করে, তাহলে জাহান্নামের আগুণ তার চামড়া স্পর্শ করবে না। -শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩৬৭১
চাশত এর নামাজঃ
সকাল নয়টা দশটা সময় দুই রাকাত থেকে ১২ রাকাত পর্যন্ত যে নফল নামায পড়া হয় সেটাকে চাশতের নামায বা সালাতুজ জুহা বলা হয়।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: لَقِيتُ أَبَا ذَرٍّ فَقُلْتُ: يَا عَمِّ، أَقْبِسْنِي خَيْرًا، فَقَالَ: سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا سَأَلْتَنِي، فَقَالَ: ” إِنْ صَلَّيْتَ الضُّحَى رَكْعَتَيْنِ لَمْ تُكْتَبْ مِنَ الْغَافِلِينَ، وَإِنْ صَلَّيْتَهَا أَرْبَعًا كُتَبْتَ مِنَ الْمُحْسِنِينَ، وَإِنْ صَلَّيْتَهَا سِتًّا كُتَبْتَ مِنَ الْقَانِتِينَ، وَإِنْ صَلَّيْتَهَا ثَمَانِيًا كُتَبْتَ مِنَ الْفَائِزِينَ، وَإِنْ صَلَّيْتَهَا عَشْرًا لَمْ يُكْتَبْ لَكَ ذَلِكَ الْيَوْمَ ذَنْبٌ، وَإِنْ صَلَّيْتَهَا ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بَنَى اللهُ لَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ “
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আবু যর রাঃ এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তখন আমি তাকে বলি যে, হে চাচা! আমাকে কল্যাণী উপদেশ দান করুন। তিনি বললেন, তুমি যেমন আমাকে জিজ্ঞাসা করেছো, তেমনি আমিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এমনটি জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন, যদি তুমি চাশতের নামায দুই রাকাত পড়, তাহলে তোমাকে গাফেলদের মাঝে গণ্য করা হবে না। আর যদি চার রাকাত পড়, তাহলে তোমাকে নেককারদের মাঝে গণ্য করা হবে। আর যদি তুমি ছয় রাকাত পড়, তাহলে তোমাকে আনুগত্যকারীদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে। আর যদি তুমি আট রাকাত পড়, তাহলে তোমাকে সফলকাম ব্যক্তিদের তালিকায় লেখা হবে। আর যদি দশ রাকাত পড়, তাহলে সেদিন তোমার আমলনামায় কোন গোনাহ লেখা হবে না। আর যদি বার রাকাত পড়, তাহলে তোমার জন্য জান্নাতে তোমার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। -সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪৯০৬, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৩৪১৮, ১৯, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৮৯০
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: أَوْصَانِي خَلِيلِي أَبُو الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَلَاثٍ: الْوِتْرُ قَبْلَ النَّوْمِ، وَصَلَاةُ الضُّحَى رَكْعَتَيْنِ، وَصَوْمُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন। ঘুমের আগে বিতর পড়া। চাশতের নামায দুই রাকাত পড়া এবং প্রতি মাসে তিনদিন রোযা রাখা। -মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুয়া, হাদীস নং-১১, সুনানে দারামী, হাদীস নং-১৪৯৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৫৩৬
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُول اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ صَلَّى الضُّحَى ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً، بَنَى اللَّهُ لَهُ قَصْرًا مِنْ ذَهَبٍ فِي الْجَنَّةِ»
হযরত আনাস বিন মালেক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি চাশতের নামায বার রাকাত পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে স্বর্ণের একটি অট্টালিকা তৈরী করে দিবেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮০, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৪৭৩
আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রয়োজনীয় পরিমান নফল নামাজে মনযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন।
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৩৬
নতুন নকিব বলেছেন:
শুনেছিলাম। শুকরিয়া, মনে করিয়ে দেয়ায়।
২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা।
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৩৯
নতুন নকিব বলেছেন:
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৩
মনিরা সুলতানা বলেছেন: প্রায়শই নাম গুলিয়ে ফেলি, তখন নফল হিসেবে নিয়ত করে নেই।
আপনার লেখায় অনেক কিছুই ক্লিয়ার; তবে মনে থাকলেই হয়।
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৪২
নতুন নকিব বলেছেন:
শুকরিয়া। আপনার চেষ্টা প্রচেষ্টাকে আল্লাহ তাআলা কবুল করুন।
৪| ২৬ শে মার্চ, ২০২৩ ভোর ৬:৩৪
Mohammad S Hossain বলেছেন: ভাই, ইশরাকের নামাজের ব্যাপারে ১টা মাসআলা জানতে চাই।
একই জায়গায় বসে নড়াচড়া, বসার পজিশন পরিবর্তন করলে বা উঠে কোরআন আনতে গেলে কি ইশরাকের যে "হজ ও ওমরাহর " ফজিলতের কথা বললেন তা কি বহাল থাকবে?
আর রমজানে আউয়াল ওয়াক্তে ফজর জামাত হওয়ায় প্রায় দেড় ঘন্টা পর ইশরাকের সময় হয়, ততক্ষণে প্রস্রাবের চাপ আসে, এখন উঠে চাপ সেরে ওজু করে আসলে তাতেও কি ইশরাকের পূর্ণ ফজিলত পাওয়া যাবে?
আর ইশরাকের নামাজ বাড়িতে এসে পড়া যাবে কি?(যতখানি জানলাম তাতে "হজ ওমরাহর" ফজীলত পাবো না কিন্তু ইশরাক আদায় তো হবে নাকি?)
বিস্তারিত জানতে চাচ্ছিলাম।
৩১ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:০৬
নতুন নকিব বলেছেন:
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
এক. হাদিসে উল্লিখিত একই জায়গায় বসে থাকার অর্থ কোন ধরণের নড়াচড়া ব্যতিরেকে একেবারে স্থিরভাবে বসে থাকা নয়। কারণ, একভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে ঘাড় কিংবা শরীরের অন্য কোন অঙ্গে অবশ অবশ বা ঝিঝি ধরার মত অবস্থা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এসব কারণে আরামদায়কভাবে বসার প্রয়োজনে নড়াচড়া অথবা বসার পজিশন পরিবর্তন করলে ইনশাআল্লাহ কোন অসুবিধা ছাড়াই বর্ণিত সাওয়াব অর্জিত হবে।
একইরকমভাবে, তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যে কুরআনুল কারিম আনার প্রয়োজন দেখা দিলে সে জন্য দন্ডায়মান হওয়া বা সামান্য দূরত্বে থাকা তাক বা আলমারি হতে কুরআনুল কারিম নিয়ে এলেও ইশরাকের যে "হজ ও ওমরাহর" ফজিলতের কথা হাদিসে বলা হয়েছে, তা ইনশাআল্লাহ পাওয়ার আশা করা যাবে। তবে বসা হতে এই উঠে যাওয়াটাকে যেন ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘায়িত করা না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
দুই. রমজানে আউয়াল ওয়াক্তে ফজর জামাত হয়ে যাওয়ায় প্রায় এক/ দেড় ঘন্টা পর ইশরাকের সময় হওয়ায়, দীর্ঘ সময় বসে থাকার কারণে কোন ব্যক্তির যদি প্রস্রাবের চাপ আসে এবং তিনি উঠে গিয়ে ওজু ইস্তিঞ্জা সেরে আসেন তাতেও ইশরাকের পূর্ণ ফজিলত ইনশাআল্লাহ তিনি লাভ করবেন। কারণ, শরয়ী ওজরের কারণেই নির্ধারিত স্থান থেকে তাকে উঠতে হয়েছে। প্রসাব পায়খানা ইত্যাদি চেপে রাখা কোন অবস্থাতেই উচিত নয়। এগুলো চেপে রেখে ইবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকার ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়তেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
তিন. জ্বি, ইশরাকের নামাজ বাড়িতে এসে পড়া যাবে। মসজিদে কোন কারণে আদায় করতে না পারলে, ঘরে-বাড়িতে ইশরাক আদায় করলেও তা আদায় হয়ে যাবে। বরং, অন্য হাদিসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, বাসা-বাড়িতে কিছু সুন্নত/ নফল নামাজ আদায়ের বিষয়টির প্রতিও নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গুরুত্বারোপ করেছেন। এইসব ক্ষেত্রে সেই হুকুমটি পালন করাই আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।
আল্লাহ তাআ'লা সর্বশ্রেষ্ঠ তাওফিকদাতা। তিনিই আমাদের উত্তম আমলে অভ্যস্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন।
৫| ০১ লা এপ্রিল, ২০২৩ ভোর ৬:৪১
Mohammad S Hossain বলেছেন: জাযাকাল্লাহু খইরন। অনেক উপকৃত হলাম।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:২৪
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: চাশতের নামাজ হাড্ডির ব্যথার উপশম করে।