নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশুর নামকরণ; ইসলামের যে বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৪৯

ছবিঃ অন্তর্জাল।

শিশুর নামকরণ; ইসলামের যে বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত

নাম নিয়ে কিছু মজার স্মৃতিঃ

সকালবেলা ফজরের নামাজ শেষে আমরা যখন কুরআন তিলাওয়াত করি কিংবা কিছু সময় জিকির আজকার করি, ঠিক সেই সময়টায় বাসার সামনে থেকে আওয়াজ আসে- 'পিজা, ঐ পিজা', 'পিজা, ঐ পিজা'।

প্রথম কয়েক দিন এই ধরণের চিৎকার চেচামেচি শুনে ভেবেছি, পিজা বিক্রি করার জন্য কোনো হকার হয়তো এমন করছে। আবার খুব সকালে পিজা বিক্রির বিষয়টি চিন্তা করেও খটকা লেগেছে। পরে এক দিন স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করে যখন জানতে পারি যে, পিজা আমাদের বাসার দোতলার নতুন ভাড়াটের মেয়ে এবং তাকে ডাকতে এসে তার সহপাঠীরাই এমন করছে রোজ সকালে, তখন হাল্কা পাতলা হলেও কিছুটা আশ্চর্য্য না হয়ে পারিনি। আগে জানতাম, পিজা খাওয়া যায়। পরে বুঝলাম, পিজা নামও তাহলে হয়!

আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তি তার মেয়ের নাম রেখেছিলেন 'তুকাজ্জিবান'। কুরআন শরিফে এই 'তুকাজ্জিবান' শব্দটি রয়েছে বলে তিনি এই নাম রেখেছেন তার মেয়ের। মজার ব্যাপার হচ্ছে, 'তুকাজ্জিবান' মানে যে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা, এটা তিনি জানতেন না। কি আর করা! নামটি পরে পাল্টানো হয়েছিল।

আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারো নামে অসংগতি দেখলে বা কোনো নাম তাঁর নিকট অপছন্দনীয় মনে হলে সাথে সাথে তিনি তা পরিবর্তন করে উত্তম নাম রেখে দিতেন। হযরত আবদুর রহমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, “আমি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি প্রশ্ন করলেন? তোমার নাম কি? আমি বললাম, আমার নাম আবদুল উজ্জা। তিনি বললেন, ‘না তোমার নাম আবদুর রহমান।''

অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ''তিনি (বর্ণনাকারী সাহাবি) বলেছেন, আমার নাম আজিজ, মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আজিজ তো আল্লাহ! (উজ্জা একটি মুর্তির নাম। আবদুল উজ্জা মানে হলো, উজ্জার দাস এবং কাউকে আজিজ বলে ডাকাও নিষেধ।'

আলহামদুলিল্লাহ, আমার ক্ষুদ্র জীবনে অনেকের অর্থহীন নাম পাল্টে অর্থপূর্ণ ভালো নাম সিলেক্ট করে দেয়ার সুযোগ হয়েছে। আল্লাহ পাক তাওফিক দিয়েছেন। তাঁর কাছে অসংখ্য শুকরিয়া।

প্রাককথনঃ

গর্ভধারণের দশ দশটি মাসের অসহনীয় কষ্ট, প্রসবের প্রাণান্তকর যাতনার সাগর পেরিয়ে একজন মা যখন তার নাড়ী ছেঁড়া ধন বুকের মানিককে প্রথম দেখেন, সকল কষ্ট, ব্যথা, বেদনা আর যন্ত্রণা ভুলে যান তিনি। তাঁর কোলজুড়ে নতুন চাঁদের হাসি। তার মন ও মননজুড়ে শুধুই সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের প্রতিচ্ছবি। কিভাবে সন্তানকে নিরাপদে রাখা যায়, কিভাবে হৃদয়ের তন্ত্রী ছেঁড়া সোনামানিককে সুস্থ, সুন্দর এবং সকল প্রকারের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে বড় করে তোলা যায়- এই স্বপ্নে বিভোর থাকেন প্রত্যেক মা-বাবা। বস্তুতঃ শিশুর কল্যান কামনা, তার সার্বিক মঙ্গল প্রার্থনা প্রত্যেক মাতা-পিতার সাধারণ বৈশিষ্ট্য। এই ক্ষেত্রে শিশুর অর্থপূর্ণ সুন্দর নামকরণ করা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানদের মাঝেও ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে শিশুর নাম নির্বাচন করার আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। এজন্য তাঁরা নবজাতকের নাম নির্বাচনে পরিচিত আলেম-ওলামাদের শরণাপন্ন হন। তবে সত্যি কথা বলতে কী, এ বিষয়ে আমাদের জানার পরিধিকে অপ্রতুল না বলে উপায় নেই। তাই ইসলামী নাম রাখার আগ্রহ থাকার পরেও অজ্ঞতাবশত আমরা এমনসব নাম নির্বাচন করে বসি, যেগুলো আদৌ ইসলামী নামের আওতাভুক্ত নয়।

আরবী ভাষার অথবা কুরআনের শব্দ হলেই সেটিকে ইসলামী নাম করা ঠিক নয়ঃ

মনে রাখা প্রয়োজন, নাম হিসেবে নির্বাচিত শব্দটি আরবী ভাষার অথবা কুরআনের শব্দ হলেই সেটি ইসলামী হবে - বিষয়টি এমন নয়। কুরআনে তো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম অবিশ্বাসী খোদাদ্রোহীগণের নামেরও উল্লেখ রয়েছে। ইবলিস, ফেরাউন, হামান, কারুন, আবু লাহাব ইত্যাদি নাম তো কুরআনে উল্লেখ আছে; তাই বলে কী এসব নামে নাম রাখা সমীচীন হবে!? তাই এ বিষয়ে সঠিক নীতিমালা আমাদের জানা প্রয়োজন। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنَّ أَحَبَّ أَسْمَائِكُمْ إِلَى اللَّهِ عَبْدُ اللَّهِ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ

“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে- আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও আব্দুর রহমান (রহমানের বান্দা)।”

এ নামদ্বয় আল্লাহর প্রিয় হওয়ার কারণ হল- এ নামদ্বয়ে আল্লাহর উপাসনার স্বীকৃতি রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর দুটি নাম এ নামদ্বয়ের সাথে সমন্ধিত আছে। একই কারণে আল্লাহর অন্যান্য নামের সাথে আরবী ‘আব্দ’ (বান্দা) শব্দটিকে সমন্ধযুক্ত করে নাম রাখাও উত্তম।

আব্দ’ عبد (বান্দা) শব্দযোগে কয়েকটি নামঃ

• আব্দুল আযীয (عبد العزيز- পরাক্রমশালীর বান্দা),
• আব্দুল মালিক (عبد المالك), সর্বকর্তৃত্বময়, সর্বাধিকারী, বাদশাহর বান্দা),
• আব্দুল কারীম (عبد الكريم- সম্মানিতের বান্দা),
• আব্দুর রহীম (عبد الرحيم- করুণাময়ের বান্দা),
• আব্দুল আহাদ (عبد الأحد- এক সত্তার বান্দা),
• আব্দুস সামাদ (عبد الصمد- পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্বের অধিকারীর বান্দা),
• আব্দুল ওয়াহেদ (عبد الواحد- একক সত্তার বান্দা),
• আব্দুল কাইয়্যুম (عبد القيوم- অবিনশ্বরের বান্দা),
• আব্দুস সামী (عبد السميع- সর্বশ্রোতার বান্দা),
• আব্দুল হাইয়্য (عبد الحي- চিরঞ্জীবের বান্দা),
• আব্দুল খালেক (عبد الخالق- সৃষ্টিকর্তার বান্দা),
• আব্দুল বারী (عبد الباري- উন্মেষকারীর বান্দা। বারী শব্দটি গভীর অর্থবোধক। এটি দ্বারা এমন মহান স্বত্বাকে বুঝানো হয়, যিনি সৃষ্টির পরিকল্পনাকারী, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের র্নিদেশ প্রদানকারী এবং সেই অনুপাতে রূপদানকারী),
• আব্দুল মাজীদ (عبد المجيد- মহিমান্বিত সত্তার বান্দা) ইত্যাদি।

‘আব্দ’ শব্দটি যুক্ত করা যাবে শুধু আসমাউল হুসনার সাথেঃ

পক্ষান্তরে এই ‘আব্দ’ শব্দটিকে আসমাউল হুসনা তথা, আল্লাহ তাআ'লার ৯৯ টি নাম ছাড়া অন্য কোন শব্দের সাথে সম্মন্ধিত করে নাম রাখা যাবে না। এটি নিষিদ্ধ। গোনাহের কাজ। যেমনঃ

• আব্দুল ওজ্জা (ওজ্জার উপাসক),
• আব্দুশ শামস (সূর্যের উপাসক),
• আব্দুল কামার (চন্দ্রের উপাসক),
• আব্দুল কালাম (কথার উপাসক),
• আব্দুন নবী (নবীর উপাসক),
• আব্দুল আলী (আলী এর উপাসক),
• আব্দুল হোসাইন (হোসাইন এর উপাসক) ইত্যাদি।

আব্দুর রহীমকে শুধু রহীম বলে ডাকা যাবে নাঃ

তবে আমাদের দেশে প্রেক্ষাপটে দেখা যায় নামের মধ্যে ‘আব্দ’ শব্দটা থাকলেও ডাকার সময় ‘আব্দ’ শব্দটা ছাড়া ব্যক্তিকে ডাকা হয়। যেমন আব্দুর রহমানকে ডাকা হয় রহমান বলে। আব্দুর রহীমকে ডাকা হয় রহীম বলে। এটি অনুচিত এবং এ কাজ থেকে বিরত থাকা একান্তভাবেই উচিত। যদি দ্বৈত শব্দে গঠিত নাম ডাকা ভাষাভাষীদের কাছে কষ্টকর ঠেকে সেক্ষেত্রে অন্য নাম নির্বাচন করাটাই শ্রেয়।

নবীদের নামে নাম রাখা উত্তমঃ

যে কোন নবীর নামে নাম রাখা ভাল। যেহেতু তাঁরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার প্রিয়তম প্রেরিত মহাপুরুষ। তাঁর পছন্দনীয় এবং নির্বাচিত বান্দা। নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের সন্তানের নাম রেখেছিলেন ইব্রাহিম। কুরআনে কারীমে ২৫ জন নবীর নামের উল্লেখ রয়েছে। এর থেকে পছন্দমত যে কোন নাম নবজাতকের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। এটি বরকতপূর্ণ। যেমন, উদাহরণ স্বরূপ কয়েকজন নবী রাসূলের নামঃ

কয়েকজন নবী রাসূলের নামঃ

• মুহাম্মদ (محمد) সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,
• আহমাদ (أحمد) সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,
• ইব্রাহীম (إبراهيم) আলাইহিস সালাম,
• মুসা (موسى) আলাইহিস সালাম,
• ঈসা (عيسى) আলাইহিস সালাম,
• নূহ (نوح) আলাইহিস সালাম,
• হুদ (هود) আলাইহিস সালাম,
• লূত (لوط) আলাইহিস সালাম,
• শিছ (شيث) আলাইহিস সালাম,
• হারুন (هارون) আলাইহিস সালাম,
• শুআইব (شعيب) আলাইহিস সালাম,
• আদম (آدم) আলাইহিস সালাম।

নেককার ব্যক্তিদের নামে নাম রাখা উত্তমঃ

নেককার ব্যক্তিদের নামে নাম রাখাও উত্তম। এর মাধ্যমে নবজাতকের মাঝে সংশ্লিষ্ট নামের অধিকারী ব্যক্তির স্বভাব চরিত্রের প্রভাব পড়ার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। আরবীতে এটাকে তাফাউল বলা হয়। নেককার ব্যক্তিদের শীর্ষস্থানে রয়েছেন রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবায়ে কেরাম। তারপর তাবেয়ীন। তারপর তাবে তাবেয়ীন। এরপর আলেম সমাজ। বিশিষ্ট সাহাবী যুবাইর ইবনে আওয়াম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তার ৯ জন ছেলের নাম রেখেছিলেন বদরের যুদ্ধে শহীদ হওয়া ৯ জন সাহাবীর নামে। তারা হলেন-

• আব্দুল্লাহ (عبد الله) রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু,
• মুনযির (منذر) রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু,
• উরওয়া (عروة) রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু,
• হামযা (حمزة) রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু,
• জাফর (جعفر) রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু,
• মুসআব (مصعب) রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু,
• উবাইদা (عبيدة) রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু,
• খালেদ (خالد) রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু,
• উমর (عمر) রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু। সূত্রঃ তাসমিয়াতুল মাওলুদ, বকর আবু যায়দ ১/১৭

ব্যক্তির নাম তাঁর স্বভাব চরিত্রের উপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেঃ

ব্যক্তির নাম তাঁর স্বভাব চরিত্রের উপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শাইখ বাকর আবু যায়েদ বলেন, “কাকতালীয়ভাবে দেখা যায়, ব্যক্তির নামের সাথে তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মিল থাকে। এটাই আল্লাহর তাআলার হেকমতের দাবী। যে ব্যক্তির নামের অর্থে চপলতা রয়েছে তার চরিত্রেও চপলতা পাওয়া যায়। যার নামের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে তার চরিত্রের মধ্যে গাম্ভীর্যতা পাওয়া যায়। খারাপ নামের লোকের চরিত্রও খারাপ হয়ে থাকে, আর ভাল নামের লোকের চরিত্রও ভাল হয়ে থাকে।” সূত্রঃ তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/১০, তুহফাতুল মাওদুদ-ইবনুল কাইয়্যেম ১/১২১

নাম রাখার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা নিন্দনীয়ঃ

আমাদের দেশে শিশুর জন্মের পর নাম রাখা নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। দাদা এক নাম রাখলে নানা অন্য একটা নাম পছন্দ করেন। বাবা-মা শিশুকে এক নামে ডাকেন। খালা কিংবা ফুফুরা আবার ভিন্ন নামে। এভাবে একটা বিড়ম্বনা প্রায়শঃই দেখা যায়। এ ব্যাপারে শাইখ বাকর আবু যায়দ বলেন, “নাম রাখা নিয়ে পিতা-মাতার মাঝে বিরোধ দেখা দিলে শিশুর পিতাই নাম রাখার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। ‘তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।’ -সূরা আহযাব ৩৩:৫”

অতএব শিশুর পিতার অনুমোদন সাপেক্ষে আত্মীয় স্বজন বা অপর কোন ব্যক্তি শিশুর নাম রাখতে পারেন। তবে যে নামটি শিশুর জন্য পছন্দ করা হয় সে নামে শিশুকে ডাকা উচিত। আর বিরোধ দেখা দিলে পিতার মতামতই এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।

ইসলামে যেসব নাম রাখা হারামঃ

আল্লাহর নাম নয় এমন কোন নামের সাথে গোলাম বা আব্দ (বান্দা) শব্দটিকে সম্বন্ধ করে নাম রাখা হারাম। যেমন,

• আব্দুল মোত্তালিব (মোত্তালিবের দাস),
• আব্দুল কালাম (কথার দাস),
• আব্দুল কাবা (কাবাগৃহের দাস),
• আব্দুন নবী (নবীর দাস),
• গোলাম রসূল (রসূলের দাস),
• গোলাম নবী (নবীর দাস),
• আব্দুস শামছ (সূর্যের দাস),
• আব্দুল কামার (চন্দ্রের দাস),
• আব্দুল আলী (আলীর দাস),
• আব্দুল হুসাইন (হোসাইনের দাস),
• আব্দুল আমীর (গর্ভনরের দাস),
• গোলাম মুহাম্মদ (মুহাম্মদের দাস),
• গোলাম কাদের (কাদেরের দাস) ইত্যাদি।

অনুরূপভাবে যেসব নামকে কেউ কেউ আল্লাহর নাম মনে করে ভুল করেন অথচ সেগুলো আল্লাহর নাম নয় সেসব নামের সাথে আব্দ বা দাস শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও হারাম। যেমন- আব্দুল মাবুদ (মাবুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেব কুরআন ও হাদীছে আসেনি, বরং আল্লাহর বিশেষণ হিসেবে এসেছে) আব্দুল মাওজুদ (মাওজুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেব কুরআন ও হাদীছে আসেনি)

• অনুরূপভাবে শাহেনশাহ (জগতের বাদশাহ) নাম রাখা হারাম। [মুসলিম] মালিকুল মুলক (রাজাধিরাজ) নাম রাখা হারাম। সাইয়্যেদুন নাস (মানবজাতির নেতা) নাম রাখা হারাম। [তুহফাতুল মাওলুদ ১/১১৫]

• সরাসরি আল্লাহর নামে নাম রাখা হারাম। যেমন- আর-রাহমান, আর-রহীম, আল-আহাদ, আস-সামাদ, আল-খালেক, আর-রাজেক, আল- আওয়াল, আল-আখের ইত্যাদি।

যেসব নাম রাখা মাকরুহঃ

ক) যেসব নামের মধ্যে আত্মস্তুতি আছে সেসব নাম রাখা মাকরুহ। যেমন, মুবারক (বরকতময়) যেন সে ব্যক্তি নিজে দাবী করছেন যে তিনি বরকতময়, হতে পারে প্রকৃত অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো। অনুরূপভাবে বাররা (পূন্যবতী)।·
খ) শয়তানের নামে নাম রাখা। যেমন- ইবলিস, ওয়ালহান, আজদা, খিনজিব, হাব্বাব ইত্যাদি।
গ) ফেরাউনদের নামে নাম রাখা। যেমন- ফেরাউন, হামান, কারুন, ওয়ালিদ।[তুহফাতুল মাওদুদ ১/১১৮]
ঘ) বিশুদ্ধ মতে ফেরেশতাদের নামে নাম রাখা মাকরুহ। যেমন- জিব্রাইল, মিকাইল, ইস্রাফিল।
ঙ) যে সকল নামের অর্থ মন্দ। মানুষ যে অর্থকে ঘৃণা করে এমন অর্থবোধক কোন নাম রাখা। যেমন, কালব (কুকুর) মুররা (তিক্ত) হারব (যুদ্ধ)।
চ) একদল আলেম কুরআন শরীফের নামে নাম রাখাকে অপছন্দ করেছেন। যেমন- ত্বহা, ইয়াসীন, হামীম ইত্যাদি।[ তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/২৭]
ছ) ইসলাম বা উদ্দীন শব্দের সাথে সম্বন্ধিত করে নাম রাখা মাকরূহ। ইসলাম ও দ্বীন শব্দদ্বয়ের সুমহান মর্যাদার কারণে।[ তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/২৫, তুহফাতুল মাওদুদ ১/১৩৬]·
জ) দ্বৈতশব্দে নাম রাখাকে শায়খ বকর আবু যায়দ মাকরুহ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন- মোহাম্মদ আহমাদ, মোহাম্মদ সাঈদ।
ঝ) অনুরূপভাবে আল্লাহর সাথে আব্দ (দাস) শব্দ বাদে অন্য কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করা। যেমন- রহমত উল্লাহ (আল্লাহর রহমত)।
ঞ) শায়খ বকর আবু যায়দের মতে, রাসূল শব্দের সাথে কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও মাকরূহ। যেমন- গোলাম রাসূল (গোলাম শব্দটিকে যদি আরবী শব্দ হিসেবে ধরা হয় এর অর্থ হবে রাসূলের চাকর বা বাছা তখন এটি মাকরূহ। আর যেসব ভাষায় গোলাম শব্দটি দাস অর্থে ব্যবহৃত হয় সেসব ভাষার শব্দ হিসেবে নাম রাখা হয় তখন এ ধরনের নাম রাখা হারাম যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।)

ছেলেদের আরও কিছু সুন্দর নামঃ

• উসামা (أسامة- সিংহ),
• আফীফ (عفيف- পুতপবিত্র),
• হামদান (প্রশংসাকারী),
• লাবীব (لبيب- বুদ্ধিমান),
• রাযীন (رزين- গাম্ভীর্যশীল),
• রাইয়্যান (ريَّان- জান্নাতের দরজা বিশেষ),
• মামদুহ (ممدوح- প্রশংসিত),
• নাবহান (نبهان- খ্যাতিমান),
• নাবীল (نبيل- শ্রেষ্ঠ),
• নাদীম (نديم- অন্তরঙ্গ বন্ধু),
• আব্দুল ইলাহ (عبد الإله- উপাস্যের বান্দা),
• ইমাদ (عماد- সুদৃঢ়স্তম্ভ),
• মাকহুল (مكحول- সুরমাচোখ),
• মাইমূন (ميمون- সৌভাগ্যবান),
• তামীম (تميم),
• হুসাম (حُسَام- ধারালো তরবারি),
• বদর (بدر- পূর্ণিমার চাঁদ),
• হাম্মাদ (حماد- অধিক প্রশংসাকারী),
• হামদান (حمدان- প্রশংসাকারী),
• সাফওয়ান (صفوان- স্বচ্ছ শিলা),
• গানেম (غانم- গাজী, বিজয়ী),
• খাত্তাব (خطاب- সুবক্তা),
• সাবেত (ثابت- অবিচল),
• জারীর (جرير), খালাফ (خلف),
• জুনাদা (جنادة), ইয়াদ (إياد),
• ইয়াস (إياس),
• যুবাইর (زبير),
• শাকের (شاكر- কৃতজ্ঞ),
• আব্দুল মাওলা (عبد المولى- মাওলার বান্দা),
• আব্দুল মুজিব (عبد المجيب- উত্তরদাতার বান্দা),
• আব্দুল মুমিন (عبد المؤمن- নিরাপত্তাদাতার বান্দা),
• কুদামা (قدامة),
• সুহাইব (صهيب) ইত্যাদি।

নবজাতকের নাম রাখার সময়কালঃ

নবজাতকের নাম রাখার সময়কালের ব্যাপারে রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি বর্ণনা রয়েছে। শিশুর জন্মের পরপরই তার নাম রাখা, তৃতীয় দিন নাম রাখা এবং সপ্তম দিন অর্থাৎ সাত দিন বয়সে তার নাম রাখা। এই বর্ণনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম এ বিষয়ে আমাদেরকে অবকাশ দিয়েছে। যে কোনোটির উপর আমল করা যেতে পারে। এমনকি কুরআনে আল্লাহ তাআলা কোনো কোনো নবীর নাম তাঁদের জন্মের পূর্বে রেখেছেন মর্মে উল্লেখ রয়েছে।

সন্তানের নাম দিয়ে গঠিত কুনিয়ত বা উপনামে ডাকা যাবেঃ

কোনো ব্যক্তির প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য তাকে তার সন্তানের নাম দিয়ে গঠিত কুনিয়ত বা উপনামে ডাকা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বড় সন্তানের নামের পূর্বে আবু বা পিতা শব্দটি সম্বন্ধিত করে কুনিয়ত রাখা উত্তম। যেমন- কারো বড় ছেলের নাম যদি হয় উমর তার কুনিয়ত হবে আবু উমর (উমরের পিতা)। এক্ষেত্রে বড় সন্তানের নাম নির্বাচন করার উদাহরণ রাসূল (সা.) এর আমল থেকে পাওয়া যায়। এক সাহাবীর কুনিয়াত ছিল আবুল হাকাম। যেহেতু হাকাম আল্লাহর খাস নাম তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরিবর্তন করে দিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: তোমার ছেলে নেই? সাহাবী বললেন, শুরাইহ, মুসলিম ও আব্দুল্লাহ। তিনি বললেন: এদের মধ্যে বড় কে? সাহাবী বললেন: শুরাইহ। তখন রাসূল (সা.)বললেন- তোমার নাম হবে: আবু শুরাইহ।

ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ এমন নাম হলে তা পরিবর্তন করা উচিতঃ

যদি কারো নাম ইসলামসম্মত না হয়; বরঞ্চ ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ এমন নাম হয় তাহলে এমন নাম পরিবর্তন করা উচিত। যেমন- ইতিপূর্বে উল্লেখিত হাদিস হতে আমরা জানতে পেরেছি একজন সাহাবীর সাথে ‘হাকাম’ শব্দটি সংশ্লিষ্ট হয়েছিল, কিন্তু হাকাম আল্লাহর খাস নামসমূহের একটি; তাই রাসূল (সা.) তা পরিবর্তন করে দিয়ে তাঁর নাম রেখেছেন আবু শুরাইহ।
মহিলা সাহাবী যয়নব (রা.)এর নাম ছিল বার্‌রা (بَرَّةٌ -পূর্ণবতী)। তা শুনে রাসূল (সা.)তাঁকে বললেন তুমি কি আত্মস্তুতি করছ? তখন রাসূল (সা.)তাঁর নামও পরিবর্তন করে ‘যয়নব’ রাখলেন।

বাংলা শব্দে নাম রাখা নাজায়েজ নয় তবে...ঃ

সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশে বাংলা শব্দে নাম রাখার প্রবণতা দেখা যায়। ইসলামী নীতিমালা লঙ্ঘিত না হলে এবং এতদঅঞ্চলের মুসলিমদের ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে এমন নাম রাখাতে দোষের কিছু নেই।‘আল-মাউসুআ আলফিকহিয়া কুয়েতিয়া’ তথা কুয়েতস্থ ফিকহ বিষয়ক বিশ্বকোষ গ্রন্থে বলা হয়েছে- নাম রাখার মূলনীতি হচ্ছে- নবজাতকের যে কোনো নাম রাখা জায়েয; যদি না শরিয়তে এ বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকে। কিন্তু অনন্ত, চিরঞ্জীব, মৃত্যুঞ্জয় এ অর্থবোধক নাম কোনো ভাষাতেই রাখা কোনো অবস্থায় জায়েয নয়। কারণ নশ্বর সৃষ্টিকে অবিনশ্বর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর গুণাবলীতে ভূষিত করা জায়েয নেই।

মেয়েদের কিছু সুন্দর নামঃ

সাহাবায়ে কেরাম আমাদের আদর্শ। মহিলা সাহাবীগণের কিছু নাম এখানে পেশ করছি। আপনি আপনার শিশু মেয়েটির জন্য সুন্দর এসব নাম বিবেচনা করতে পারেন।

অর্থসহ মহিলা সাহাবায়ে কেরামের কিছু নামঃ

নাম অর্থ
আমিনা সৎ, বিশ্বাসী।
আলিয়াহ/আলিয়া উচ্চতর এবং উচ্চ পদে থাকা, পদমর্যাদা; মহিমা, গৌরব।
আফ্রা স্বর্ণকেশী; ফর্সা চর্মযুক্ত।
আইসা/আয়েশা/আয়শা জীবিত, প্রাণবন্ত; একটি ভাল জীবনযুক্ত কেউ; সমৃদ্ধ এবং উন্নত। এই নাম দিয়ে ৮জন সাহাবা ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন হযরত আয়েশা বিন্ত আবী বকর (মুমিনদের মাতা), নবীর সবচেয়ে ছোট স্ত্রী।
আমাহ বাঁদি; একজন মহিলা সহচর। তিনি খালিদ বিন সাঈদের কন্যা ছিলেন, নবীর একজন মহিলা সঙ্গী ছিলন।
আমিনাহ/আমিনা/আম্না সত্যবাদী, বিশ্বস্ত, নিরাপদ, বিশ্বাসযোগ্য, সৎ। আমিনাহ বিন্ত ওয়াহাব ছিলেন নবীর মা।
আমরাহ শিরস্ত্রাণ (টুপি, পাগড়ি)। ২০ জন সাহাবার নাম ছিল অম্রাহ।
আরওয়া চঞ্চল, সুন্দর, লালিত্যযুক্ত। আরওয়া নামের এক মহিলা নবীর এক চাচাতো বোন ছিলেন।
আসিয়াহ যিনি দুর্বল মানুষদের সাহায্য এবং নিরাময় করেন।
আসমা মূল্যবান, সুন্দর, উচ্চমানের; উন্নত বা মহান; অন্যদের চেয়ে মহৎ।
আসমা বিন্ত আবু বকর ছিলেন আবু বকরের কন্যা এবং আয়শার বোন। তার বাবার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ইসলামকে আলিঙ্গন করেন তিনি ১৫তম ব্যক্তি ছিলেন যিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
আথীলাহ একটি ভাল পরিবার বা একটি সম্মানিত বংশে জন্মগ্রহণ করেন যিনি। আথীলাহ নামে ৩জন সাহাবা ছিলেন।
আতিকা/আতিকাহ শাসন থেকে মুক্ত; উদার; উন্নতচরিত্র; সুন্দরী মহিলা; সুগন্ধি মিষ্টি গন্ধযুক্ত কেউ; বিশুদ্ধতা পূর্ণ একটি রঙ বা পদার্থ। সাহাবা আতিকা বিন্ত জায়দ অনেক কারণে বিখ্যাত ছিলেন। তিনি একজন কবি ছিলেন; তিনি শহীদ হিসাবে মারা যান এমন এক মুসলমান পুরুষদের বিবাহ করেছিলেন; অবশেষে, তিনি দ্বিতীয় খলিফের উমর ইবনে আল খাত্তাবের স্ত্রী হিসাবেও পরিচিত ছিলেন।
আতিয়া দান, অনুদান, উপহার।
আয়মান ধার্মিক, নৈতিক। সাহাবা উম্ম আয়মান ছিলেন নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাতৃতুল্য মহিয়সী এক নারী। তিনি নবীজীর মা আমিনার মৃত্যুর পর তার দেখাশোনা করেন। এই নামটি নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় এমন নাম, কিন্তু প্রাথমিকভাবে মেয়েদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
আকনা একটি স্ফীত পেটযুক্ত মহিলা
বাঘুম একটি নরম, মেয়েলী, উচ্চ-মাত্রার গলার স্বরযুক্ত মহিলা যে তার সন্তানের জন্য গান গায়।
বারাকাহ আশীর্বাদ, অনুমোদন, এবং প্রফুল্লতা। এই নাম দিয়ে ৩জন সাহাবা ছিলেন।
বারীরাহ ধার্মিক। এক বিখ্যাত সাহাবার নাম। তিনি একজন ক্রীতদাসী ছিলেন, যিনি অবশেষে নবীর স্ত্রী সাঈদীনার দ্বারা মুক্তি পান।
বারজাহ হাদীসের বর্ণনাকারী যে নবীর বক্তব্য বর্ণনা করেন।
বুহায়াহ সুন্দর এবং দীপ্তিশীল। দুইজন সাহাবার এই নাম ছিল।
বুশ্রাহ ভাল খবর বা ভাল লক্ষণ।
বাদিয়াহ/বাদিয়া মরুভূমি; শহরের বাইরের এলাকায় যেমন গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত; যে কিছু শুরু করে; দৃশ্যমান এবং বিশিষ্ট কেউ।
দুররাহ/দুররা/দোরা মুক্তা।
ফাজিলাহ/ফাধিলাহ নোবেল, দয়ালু এবং সম্মানজনক; চমৎকার এবং উচ্চতর।
ফখিতাহ গর্বের সঙ্গে পদচারণা করেন যিনি।
সাহাবা ফখিতাহ বিন্ত আবী তালিব নবীর চাচাতো বোন ছিলেন এবং মক্কা জয়ী হওয়ার পর ইসলামে যোগ দেন।
ফারওয়াহ পশম; সম্পদ, ধন, সমৃদ্ধি।
ফাশমা বড়, লম্বা, প্রশস্ত।
ফরিয়াহ/ফরিআহ/ ফেরিহা পর্বতে একটি ভ্রমণের রাস্তা (উত্থাপিত রাস্তা / জলের চ্যানেল)।
ফতিমাহ/ফাতিমা/ফতেমা স্তনের দুধ খাওয়া বন্ধ হয়েছে এমন একটি শিশু। নবীর কন্যাদের মধ্যে একজনের নাম।
ফিযা/ফিজা/ফিজাহ/ফিধা পাতন; মৃদুমন্দ বাতাস; রূপা।
ফুকাইহাহ/ফুকাইয়াহ আনন্দদায়ক এবং আমুদে।
ফুরাইআহ/ফুরায়াহ লম্বা, উচ্চ, উঁচু, মহান।
ঘুফাইলাহ অজ্ঞ এবং অজ্ঞান; অজ্ঞাতনামা অবহেলা বা কিছু উপেক্ষা করে যে।
ঘুফাইরাহ করুনা; এক ধরনের টিউলিপ (টিউলিপা হুমিলিস); নবী আয়েশার দাসের সবচেয়ে ছোট বোনের নাম।
ঘুমাইসা/রুমাইসা তারা সিরিয়াসের নাম।
হাবিবাহ প্রিয়, অত্যন্ত প্রিয়; নবীর একজন আত্মীয়।
হাফসাহ একটি তরুন সিংহী; এই নামটি নবীর অন্যতম স্ত্রীর ছিল। কুরআন মজীদের স্মরণে তিনি প্রথম ব্যক্তি ছিলেন।
হালাহ চাঁদের আশেপাশে আলো। তিনি নবীর একজন আত্মীয় ছিলেন।
হালিমাহ মৃদু, হালকা-স্বভাবের মহিলা; নবীর ধাত্রী মা বা নার্স।
হাম্মানাহ/হাম্না পবিত্র চড়াই পাখি; নবীর এক আত্মীয়ের এই নামটি ছিল।
হিন্দ উটের পালক / লোম। নবীর একজন শাশুড়ির এই নাম ছিল।
হাজিমাহ লোহার মত হৃদয়যুক্ত এবং শক্তিশালী-ইচ্ছাযুক্ত; দৃঢ়।
হুরাইরাহ বিড়ালের ছানা বা ছোট্ট বিড়াল শিশু।
হাসানাহ স্মার্ট, তরুণ, পছন্দসই, ভাল, সুন্দর মহিলা।
হাউলা টেরা চোখের মহিলা; কখনও কখনও একটি খুব বুদ্ধিমান নয় এমন মহিলা।
ইস্মাহ/ইস্মা পুণ্য, বিশুদ্ধতা, সুরক্ষা।
জামিলা/গামিলা/দজামিলা/ জেমিলা/জামিল্লাহ/জাম্যলা/ইয়ামিলা সুন্দর, লালিত্যযুক্ত।
জারবা তারাপূর্ণ একটি আকাশ; সুন্দর এবং হাস্যমুখ মেয়ে; কোন বৃষ্টি ছাড়া শুষ্ক আবহাওয়া।
জুমাইল নাইটিংগেল পাখি।
জুমাইমাহ প্রচুর, লাভ, প্রাচুর্য।
জুমানাহ রূপালী রঙের মুক্তা।
জুওয়াইরিয়াহ একটি তরুণ মহিলা। নবীর স্ত্রীদের একজন।
কাবশাহ দুই থেকে চার বছরের একটি ভেড়া
কবীরা মহান, অসীম, সিনিয়র, পরাক্রমশালী।
খান্সা কোন প্রজাতির কীটপতঙ্গ, সম্ভবত একটি মাছি।
খুলাইশা হরিণ; বিশুদ্ধ, আদিম, স্বাস্থ্যকর।
কুবাইশাহ নেতা বা প্রধান
করিমা দয়ালু, উদার; একজন বন্ধু.
লাইলা প্রমত্ততা; নেশা।
লুবাবা বিশুদ্ধ, পরিষ্কার।
লুবনা/লুবানা ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, আশা।
লুহায়য়াহ/লুহ্যায়/নুহায়্যাহ একটি খুব সুন্দর উপহার, দান বা প্রতিভা; যা যা কাউকে জ্ঞানী, বুদ্ধিমান করে তোলে। দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনে আল খাত্তাবের স্ত্রী ছিলেন।
মুলাইকাহ একটি চিঠি, কাগজ বা চর্মের কাগজের টুকরো।
মনীআহ অভিভাবক, রক্ষাকর্তা।
মরিয়া বিশুদ্ধতা, সতীত্ব।
নাইলা দয়ালু, হিতৈষী।
নসীবা ভাগ্য, অংশ; উপযুক্ত, যোগ্য, সঠিক; মহৎ, মেয়েলী।
নুসাইবাহ যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবার এবং একটি সম্মানিত বংশে জন্মগ্রহণ করেছে; একটি মহিলার সুন্দর চুল।
কোয়াইলাহ দুপুরের ঘুম বা মধ্যাহ্নভোজের পর বিশ্রাম; এটি ইয়েমেনী শাসকদের শিরোনাম এবং দুপুরে দুধ দেয় এমন স্ত্রী উট।
করিবাহ / করিবা কাছে, প্রিয়
রবাব সাদা রঙের মেঘ
রাব্দা একটি স্ত্রী উটপাখি
রম্লাহ বালির একটি দানা
রুকাইয়াহ মৃদু, নরম, হালকা-স্বভাবযুক্ত। নবীর একজন মেয়ে।
রুবাই একটি প্রাসাদ, দুর্গ বা প্লাজা।
রুফাইদাহ একটি দল বা জনগোষ্ঠী।
রুমাইথা মরুভূমি ছোট গাছের একটি ক্লাস্টার।
সাফিয়া বিশুদ্ধ, পরিষ্কার।
সাফিয়াহ বিন হুয়াই হযরত নবীর স্ত্রী ছিলেন।
সাহ্লা মসৃণ, নরম, অবিরত, প্রবাহিত।
সাকিনা শান্ত, সুস্থির, প্রশান্ত; ধর্মপ্রাণ।
সালামাহ/সালমা শান্ত, সুস্থ, নিরাপদ এবং সুরক্ষিত; ত্রুটিহীন বা ত্রুটি ছাড়া; সমগ্র।
সমা আকাশ; স্বর্গ; উন্নত।
সাম্মা বধির।
সামরা এক বাদামী বা জলপাই রঙের ত্বকযুক্ত বা এমন ত্বক যা খুব হালকা না খুব গাঢ না।
সারা/সারাহ মহিমা বা গৌরবপূর্ণ মহিলা; রাজকুমারী
সওদাহ/সওদা পাম গাছ পূর্ণ একটি জায়গা; গুঁড়ো।
সুম্মায়া অনেক উপরে; সন্ত। ইসলামের প্রথম নারী শহীদ।
তমাজুর/তমাধুর সাদা, উজ্জ্বল, ঝলমলে।
তাওআমাহ যে অন্য একজনের যমজ।
তায়য়িবি বিন্ত-ই-ওয়াহাব ভাল, বিশুদ্ধ, ভাল প্রকৃতির, মিষ্টি।
থুবাইতাহ/সুবাইতাহ একটি জায়গায় সেট, দৃঢ় বা প্রতিষ্ঠিত কিছু; স্থিতিশীল এবং অবিচল।
উমামাহ তরুণ মা; তিন শত উট। নবীর নাতনিদের একজনের নাম ছিল।
আম-ই-রালাহ আনত হওয়ার আইন; শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা; উপাসনা বা প্রার্থনা।
আমনিয়াহ ইচ্ছা, আশা, আকাঙ্ক্ষা।
ওয়াইমিরাহ একজন পরিদর্শক; একটি জায়গা যা ভালভাবে বসবাসকারী এবং সমৃদ্ধ; দীর্ঘস্থায়ী; একটি সাপ.
ইয়াসুরাইরাহ মহান সান্ত্বনাযুক্ত এবং কোন সংগ্রামহীন অবস্থা, সমৃদ্ধি।
জাইদাহ/যাইদাহ যিনি যাত্রার জন্য খাবার রান্না করেন; একজন যারা বিকাশ হয়েছে এবং জাঁকজমক।
জাইনাব/জায়নাব যা কিছু সাজানো এবং সুগন্ধি গাছ। নবীর কন্যাদের একজনের নাম।
জাজ্জা/জাযা একটি মহিলা উটপাখি; পাতলা, আকর্ষণীয় ভ্রুযুক্ত একটি মহিলা।
জুররাহ/ধুররাহ মিলেট, এক ধরনের শস্য উৎপাদনকারী উদ্ভিদ।

শেষের কথাঃ

পরিশেষে বিনীতভাবে আরজ করতে চাই, এটি জানার ও বুঝার বিষয়; তর্ক এবং বাহাসের নয়। নাম একটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিয়ামতের দিন ব্যক্তিকে ডাকা হবে তার নিজ নামের সাথে আপন পিতার নাম যুক্ত করে। হাদিস শরিফে এসেছে-

وَعَنْ أَبِى الدَّرْدَاءِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:تُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَسْمَائِكُمْ وَأَسْمَاءِ آبَائِكُمْ فَأَحْسِنُوا أَسْمَائَكُمْ رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُوْ دَاوٗدَ

আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের পিতার নাম ধরে ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা তোমাদের উত্তম নাম রাখবে। -আহমাদ ২১৬৯৩, আবূ দাঊদ ৪৯৪৮, আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ১২২৭, য‘ঈফুল জামি‘ ২০৩৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৮১৮, শু‘আবুল ঈমান ৮৬৩৩, সুনানুদ্ দারিমী ২৬৯৪, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৫/১৫২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৭৮৬

সুতরাং, নাম যদি অর্থপূর্ণ না হয়ে বল্টু, নান্টু, স্ক্রু টাইপের হয়, কিংবা অর্থহীন হয় পার্থিব জীবনে এর জন্য বিব্রত হওয়ার পাশাপাশি কিয়ামতের কঠিন দিনে তা লজ্জারও কারণ হবে।

এ কারণে সর্বাবস্থায় উত্তম হচ্ছে, আসমাউল হুসনার নামের সাথে আব্দ শব্দযোগে নামকরণ করা, নবী রাসূল আলাইহিমুস সালামগণের নামে নামকরণ, সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমগণের নামের সাথে মিল রেখে নামকরণ, অলি আউলিয়া, পীর মাশায়েখ, আলেম উলামাদের নামের সাথে সাদৃশ্য রেখে অর্থপূর্ণ নাম নির্বাচন করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে আমাদের নিজেদের এবং সন্তানের জন্য উত্তম নাম নির্বাচন করার তাওফিক দান করুন।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৫৯

শোভন শামস বলেছেন: তথ্য বহুল, সুন্দর

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩২

নতুন নকিব বলেছেন:



শুকরিয়া। প্রথম মন্তব্যে অভিনন্দন।

অনেক অনেক ভালো থাকুন।

২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:০২

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সুন্দর পোস্টের জন্য জাজাকাল্লাহ খাইরান

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩৪

নতুন নকিব বলেছেন:



ওয় লাকে নাদউ ইলাল্লাহ, জাজাকিল্লাহ খাইরান ফিদ্দারাইন।

৩| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর একটি পোস্ট দিয়েছেন।
নাম অনেক গুরুত্বপূর্ন। সুন্দর একটা নামে ডাকতেও ভালো লাগে। ইদানিং বাপ মায়েররা অতি সুন্দর নাম রাখতে গিয়ে অদ্ভুত সব নাম রাখেন।

০১ লা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:৩৫

নতুন নকিব বলেছেন:



বাস্তব কথা বলেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৪১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: নাম আরবিতে হওয়া জরুরী না। যে কোনও ভাষায় অর্থপূর্ণ, সুন্দর নাম রাখা যাবে। তবে অর্থ যেন ইসলামি আকিদার ( বিশ্বাস ) পরিপন্থি কিছু না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ( যেটা আপনি আপনার লেখায় বলেছেন)। নামের ব্যাপারে সুন্দর দিকনির্দেশনা আছে আপনার পোস্টে।

০১ লা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:৩৮

নতুন নকিব বলেছেন:



সেটাই। আকিদা, বিশ্বাস এবং মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে অর্থপূর্ণ সুন্দর নাম মাতৃভাষাতেও রাখতে নিষেধ নেই।

শুকরিয়া। আপনার কল্যান কামনা করছি।

৫| ০১ লা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:২৩

করুণাধারা বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। আমার মেয়ের নাম পেয়ে ভালো লাগলো। :) অনেক অজানা বিষয় জানা হলো পোস্ট পড়ে।

০১ লা অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৮

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনার এই নিকটাও কিন্তু অসাধারণ! অন্ততঃ আমার কাছে। চমৎকার এই শব্দটা ভাবতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে আপনার হৃদ্যতায় পরিপূর্ণ দরদিয়া একটি মুখাবয়ব।

আপনার মেয়ের নাম পেয়েছেন জেনে আমারও ভালো লাগলো। মা মনির জন্য অনেক অনেক দুআ এবং শুভকামনা। আর অজানা কিছু জানতে সক্ষম হয়েছেন, এজন্য আপনাকে অভিনন্দন। কারণ, এক্ষেত্রে আপনার প্রচেষ্টা ছিল বলেই আল্লাহ পাক জানার পথটাকে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন। তাওফিকদাতা কেবলমাত্র তিনিই। সকল শুকরিয়া তাঁরই দরবারে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.