নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা হারাম\', কথাটা কতটুকু সঠিক?

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৫৬

ছবিঃ অন্তর্জাল।

'মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা হারাম', কথাটা কতটুকু সঠিক?

'মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা হারাম' এ জাতীয় কথাবার্তা আমাদের দেশে অনেক মসজিদের ভেতরেই সচরাচর চোখে পড়ে। আসলেই কি মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা হারাম? আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময়কালে, সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমগণের জামানা থেকে শুরু করে পূর্ববর্তী উত্তম জামানাসমূহে মসজিদগুলোর অবস্থা কেমন ছিল? তাদের সময়ে মসজিদে কি কি কাজ হতো? মসজিদকে তারা কি কি কাজে ব্যবহৃত করতেন? শুধু নামাজের জন্যই কি তারা মসজিদে আসতেন? বস্তুতঃ 'মসজিদের মধ্যে দুনিয়াবী কথা বলা'র হুকুমের বিষয়টি মসজিদের আদব ও হকের সাথে সম্পর্কিত। বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করার স্বার্থে উপরোক্ত উত্তম জামানাগুলোর অবস্থাদির অতি সামান্য হলেও ইতিহাসের পাতা থেকে আমাদের জেনে নেয়া আবশ্যক।

কারণ, সর্বপ্রথম ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে যে, আমরা ‘আদর্শ’ কার কাছ থেকে গ্রহণ করবো। আদর্শ যদি কার্ল মার্কস, লেনিন, এরিস্টটল বা মুসোলিনি হয়ে থাকেন তাহলে কথা থাকতে পারে না। তারা যেহেতু মসজিদের সাথে সম্পর্কিত কেউ নন। মসজিদের আদব কিংবা হক বিষয়ে এদের কোনো বক্তব্যও থাকার কথা নয়। এসব নেতাদের অনুসারী হিসেবে কেউ যদি এদের মতবাদ মসজিদের চৌহদ্দিতে প্রয়োগ করতে সচেষ্ট হন, সে ক্ষেত্রে তাদের ইচ্ছে মাফিক ফতোয়া দেয়াও বিচিত্র কিছু নয়। পক্ষান্তরে আমাদের আদর্শ যদি হয়ে থাকেন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাহলে মনে রাখা উচিত, মসজিদের বিষয়ে না জেনে ফতোয়া প্রদানের ক্ষেত্রে আমার এবং আমাদের জিহ্বার লাগাম টেনে ধরার সময় এখনই।

পবিত্র কুরআনে মসজিদ আবাদের বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ইরশাদ করেন-

إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللّهِ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلاَةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلاَّ اللّهَ فَعَسَى أُوْلَـئِكَ أَن يَكُونُواْ مِنَ الْمُهْتَدِينَ

‘নিশ্চয় আল্লাহর (ঘর) মসজিদসমূহকে আবাদ করে সেই ব্যক্তি, যে বিশ্বাস করে আল্লাহ্ ও পরকালে এবং নামাজ কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে।' -সূরা তওবা, আয়াত-১৮

আদর্শ গ্রহণ করতে হবে রাসূলের আচরিত আমল থেকেঃ

প্রথমেই যে কথা বলেছিলাম, মসজিদের আবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে, মসজিদের হক এবং হুকুকের বিষয়ে জানতে হলে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জামানায়। সাহাবায়ে কেরামের সময়কালে। তাকাতে হবে সালফে সালেহীনগণের আচরিত আমলের দিকে। ইসলামের অভ্যুদয়ের সময়কালে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সোনালি সে যুগে সমাজ পরিবর্তনে মসজিদের ভুমিকাই ছিল প্রধান। মসজিদ ছিল একই সাথে দাওয়াতী কাজের প্রাণকেন্দ্র এবং রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্র। এখান থেকেই পরিচালনা করা হতো দাওয়াতী কার্যক্রম। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতো এখান থেকে। বিভিন্ন দেশ ও জনপদ থেকে আগত প্রতিনিধি এবং মেহমানদের রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বাগত জানাতেন এই মসজিদেই। সাহাবায়ে কেরামের সাথে তিনি মিলিত হতেন মসজিদে এবং তাদের শিক্ষাদানের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো এই মসজিদকে কেন্দ্র করে। এক কথায়, একটি দেশ ও সমাজ পরিচালনা এবং এর কল্যানমূলক পরিবর্তনে যত ধরনের কার্যপ্রণালী ও সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার এর সকল কিছুই তিনি সম্পন্ন করতেন মসজিদকে কেন্দ্র করে। আর এ কারণে, মানুষের প্রয়োজনে, মানুষের কল্যান বিবেচনায় মসজিদের দরজা তখন খোলা থাকতো সবসময়। বন্ধ করা হতো না। যা বন্ধই করা হয় না তার আবার খুলে দেয়ার কি আছে?

কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি দেখলে মনে পড়ে যায়, সেই 'মাঝে--- মধ্যে--- আসে..' গল্পটিঃ

পক্ষান্তরে আমরা যদি বর্তমান পরিস্থিতি লক্ষ্য করি তাহলে কি দেখতে পাই? আমাদের মসজিদগুলো নামাজের ওয়াক্তে খুলে দেয়া হয়। নামাজ শেষ হতে না হতে আবার এতে ঝুলিয়ে দেয়া হয় তালা। প্রসঙ্গক্রমে একটি ঘটনা মনে পড়লো। আমার এক বন্ধু। একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তিনি। এক দিনের ঘটনা। তার মোবাইলে ফোন করেছেন তার কাছের এক লোক। কুশলাদি বিনিময়ের একপর্যায়ে সেই ব্যক্তি মাস্টার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন, 'স্যার, আমরা তো লোডশেডিংয়ে খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। সারা দিনে যে কতবার কারেন্ট যায় তার ইয়ত্তা নেই। আপনাদের ওখানে বিদ্যুৎ কেমন যায়?'

শান্ত শিষ্ট ভঙ্গিতে প্রধান শিক্ষক সাহেব উত্তর দিলেন, 'তাই না কি? আপনাদের এরকম অবস্থা! কিন্তু আমাদের এখানে তো কারেন্ট কখনো যায় না।'

ও পাশের ভদ্রলোকের কন্ঠ রুদ্ধ হবার যোগার। আতঙ্কিত কন্ঠে তিনি বললেন, 'বলেন কি! সত্যিই?'

'আরে, না থাকলে যাবে আবার কি? বিদ্যুৎ তো আমাদের এখানে বলা চলে থাকেই না। মাঝে--- মধ্যে--- আসে, এই যা!' -প্রধান শিক্ষক মহোদয়ের স্বগতোক্তি।

তো মসজিদগুলো নামাজের ওয়াক্তে কিছু সময়ের জন্য খুলে দেয়ার বিষয়টি চিন্তা করলে আমার সেই শিক্ষক বন্ধুর হাস্যোজ্জ্বল মুখে টেনে টেনে বলা 'মাঝে--- মধ্যে--- আসে' কথাটা মনে পড়ে যায়।

মসজিদের বাহ্যিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি নয়, চাই প্রতিটি মুসল্লির আত্মিক ও ঈমানী উন্নয়নঃ

দুঃখে অন্তর ফেটে যায়, নিতান্ত কষ্টের সাথে বলতে হয়- মসজিদ সময়ে সময়ে খোলা হবে কেন? প্রতিটি মসজিদের দরজা সাধারণের জন্য উম্মুক্ত থাকার কথা ছিল সবসময়। মানুষ বিপদে আপদে মসজিদে গিয়ে যেন আল্লাহ তাআ'লার কুদরতি পায়ে সিজদায় পড়ে তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে পারেন। তাঁর কাছে আশ্রয় চাইতে পারেন। তাঁর কাছে হৃদয়ের হাহাকার ব্যক্ত করতে পারেন। অবশ্য, এটি সহজসাধ্য কাজ নয়। এর জন্য থাকা চাই যথাযথ উদ্যোগ। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সার্বিক ব্যবস্থাপনা। আমরা এমন একটি সোনালী দিনের প্রতীক্ষায়- যেদিন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ সক্রিয় হবে প্রতিটি মসজিদের যথোপযুক্ত ব্যবস্থাপনা এবং রক্ষনাবেক্ষনে। যেদিন প্রতিটি মসজিদের দ্বার খুলে দেয়া হবে সাধারণের জন্য। মানবতার জন্য। মানুষের জন্য।

দুঃখের সাথে বলতে হয়, মসজিদের সাথে যারা যুক্ত, আজ তারা সমাজের অবহেলিত শ্রেণি। অভাবী এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে বঞ্চিতজন। অনাহারে উপবাস করলেও তারা হাত পাততে ইতস্তত বোধ করেন অন্যের কাছে। আজও অনেক মসজিদে চোখে পড়ে, সমাজের বিত্তশালী ঘুষখোর, সুদখোর আর নৈতিকতাকে কবর দেয়া নিচু মনা কিছু লোকের হাতে মসজিদের সকল দায়দায়িত্ব। এদের মন যুগিয়ে চলতে না পারলে ইমাম, মুআজ্জিন আর খাদেমদের ভাগ্য হয়ে ওঠে অনিশ্চিত। অনেক মসজিদের মিম্বর থেকে সত্যের আওয়াজ উচ্চারণে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে। আজকের সমাজের দিকে তাকালে স্পষ্টতঃই চোখে পড়ে, ঝকঝকে তকতকে হয়েছে অনেক মসজিদের অভ্যন্তর ভাগ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের কল্যানে শীতলতায় আরামদায়ক হয়ে ওঠে অনেক মসজিদের ভেতরের পরিবেশ-প্রতিবেশ। বাহারি কারুকাজে বিচিত্রতা এসেছে এর বাহ্যিক অঙ্গশোভা আর সাজসজ্জায়। কিন্তু মসজিদের অবয়বের এই পরিবর্তন তো উদ্দেশ্য ছিল না, মুসল্লিদের ঈমানী এবং আত্মিক উন্নয়নই ছিল প্রকৃত প্রত্যাশা। একই সাথে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল মসজিদের সাথে লেগে থাকা ইমাম, মুয়াজ্জিন আর খাদেমদের মত ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষজনের কিসমতেরও। কিন্তু তা আজও হয়নি। এর জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দেখতে আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে, কে জানে!

'মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা হারাম'- কথাটি হয়তো অজ্ঞানতার কারণেই বলা হয়ে থাকেঃ

'মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা হারাম'- এই ধরণের কথা যারা বলেন, এই কথা মসজিদের দেয়ালে দেয়ালে সাটিয়ে দেন যারা, শ্লোগানে শ্লোগানে অহরহ এসব কথা প্রচার করেন যারা- ধারণা করি, না জেনে অজ্ঞানতার ফলেই তারা এমনটি করে থাকেন। আর তাদের এটাও হয়তো জানা নেই যে, তারা 'মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা হারাম' শ্লোগানের শোরগোল তুলে নিজেদের অজ্ঞাতসারে অবলীলায় ইসলাম বিরোধীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছেন। মূলতঃ এই ধারণার জন্ম হয় ইউরোপ থেকে। ১৫-১৬ শতকের কথা। ইউরোপে ক্যাথলিক চার্চ ও শাসক শ্রেণির মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একাধিক ধর্ম যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। চূড়ান্ত পরিণতিতে ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করে ফেলা হয়। এ মতবাদটি ধীরে ধীরে সেক্যুলারিজম নামে দুনিয়াতে জনপ্রিয়তা লাভ করে। আর এই মতবাদের প্রবক্তারাই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে শুধু রাষ্ট্র, সংবিধান, পার্লামেন্ট নয় মসজিদ থেকেও ধর্মকে বিদায় করার এজেন্ডা হাতে নেয়। যাতে মসজিদকে ‘আনুষ্ঠানিক’ ইবাদতের জন্য নির্ধারিত করে জীবনের অন্য সকল কাজকে মসজিদের শিক্ষা অর্থাৎ ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব হয়। অবস্থা দৃষ্টে বলা চলে. বিগত কয়েকশো বছরে তারা সফলতার স্বর্ণ শিখরে আরোহন করতে সক্ষম হয়েছেন।

অপ্রীতিকর হলেও সত্য, মুসলিমদের মধ্যে এই ধারণা ছড়িয়ে দিতে এক শ্রেণির আত্মঘাতী আলেমের ভূমিকা রয়েছে। আলেম সমাজের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ না জেনে- না বুঝেই, ইসলামের সোনালী যুগের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং সুন্নাতকে পাশ কাটিয়ে, কৌশল অবলম্বনকারীদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন। তারা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছেন। এর ফলে গির্জার মত, প্যাগোডার মত করে মসজিদের ক্ষেত্রেও তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পবিত্রতা রক্ষার ভুল চিন্তা সেসব আলেমদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা পূর্বাপর না ভেবে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার নামে মসজিদের দায়িত্ব, পরিধি এবং হক ও হুকূককে সংকীর্ণ করে মানুষের অধিকারকে খন্ডিত করে চলেছেন। হায় আফসোস! অপর জাতির অন্ধানুকরণপ্রিয় এ জাতির কি হলো!

হায়! কতই না সুন্দর হতো...

হায়! কতই না সুন্দর হতো, আজ যদি সামাজিক সকল সমস্যার সমাধান রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সোনালী সেই জামানার মত মসজিদ কেন্দ্রিক হতো? বিয়ে শাদিসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো মসজিদে হতে পারে। এগুলো অবশ্য হতেও দেখা যায় সচরাচর। আচ্ছা, বিয়ে শাদি মসজিদে হলে সেটাকে কি হারাম বলা হবে না? কারণ, বিয়ে শাদিকে তো আপাতঃ দৃষ্টিতে দুনিয়াবি কাজ বলেই মনে হয়। বিচার সালিশ, সামাজিক অবিচার-অনাচার, দুর্নীতি ইত্যাদি নিয়ে বিস্তর আলোচনা ও সমাধান মসজিদ কেন্দ্রিক হতে পারে? না কি দুর্ণীতির বিরুদ্ধে ইমাম সাহেব কথা বললে তার মুন্ডুপাত করা হবে! তার চাকরি থাকবে? সভাপতি মহোদয় শত শত কিংবা হাজার কোটি টাকা মেরে মসজিদ দিয়েছেন। সরকারি বেসরকারি আর জনগণের অঢেল জায়গা জমি দখল করে শিল্পপতি হয়েছেন। তার মসজিদের ইমাম সাহেব তার কাছে স্রেফ কর্মচারী তুল্য। কর্মচারী হয়ে মালিকের প্রতি খোঁচা দেয়া বরদাশত করবেন- এমন অবৈধ সম্পদের পাহাড় এদেশে কয়জন আছেন? জানতে ইচ্ছে করছে, বৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, এমন কতজন আছেন এদেশে?

মানুষের জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত সব বিষয় মসজিদে বসে আলোচনা ও সমাধান করা সম্ভবঃ

সহজে এবং এককথায় বলতে গেলে, মানুষের জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত সব বিষয় মসজিদে বসে আলোচনা ও সমাধান করা সম্ভব। একজন মুসলিমের পুরো জীবনের প্রতিটি কাজই ইবাদত হিসেবে গণ্য হতে পারে। প্রত্যেকটি কাজ যদি সুন্নাহ অনুসরণ করে শরিয়া মোতাবেক করা হয়, তাতেই সাওয়াব নির্ধারিত থাকে। হাদিসে মসজিদকে পৃথিবীর সর্বোত্তম স্থান ষোঘনা করা হয়েছে। সর্বোত্তম স্থানে আপনি কিছুটা সময় নামাজের আগে পরে বসলে তো আপনার সওয়াবের পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। এটা শয়তান যেমন সহ্য করতে পারে না, এক শ্রেণির মানুষেরও তা নেহায়েত অপছন্দের। তারা মসজিদের কর্তৃত্বকে খর্ব করতে ভালোবাসেন। মসজিদ মানেই তাদের কাছে নামাজের ঘর। আযান হলে কিছু মানুষ মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে এলেই মসজিদের প্রতি দায়িত্ব শেষ। মসজিদের আর কোনো দায়িত্ব নেই। মসজিদের প্রতিও আর কোনো দায়িত্ব নেই। এটাই তাদের ভাবনা। তাই এই শ্রেণির বেনামাজি, দুর্নীতিগ্রস্ত, সুদখোর, ঘুষখোরদের কপালে চিন্তার রেখায় ভাঁজ পড়ে যায়। তাদের চিন্তায় আসে- সব বিষয় যদি মসজিদে বসে আলোচনা ও সমাধান করা হয় তবে তো মুশকিল। এটা তাদের নিজেদের জন্য রীতিমত অবমাননাকর। কারণ, তারা নিজেরা তো কালেভদ্রে ভুলেও মসজিদমুখী হন না। বছরান্তে ঈদের জামাতে হাজিরা দেয়ার বাইরে শুক্রবারের জুমুআর মসজিদেও তাদের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়ে না। মসজিদের সাথে এই যাদের সম্পর্ক, তারা মসজিদকে সামাজিক সকল কাজের কেন্দ্র বানানোর পথ ও পন্থাকে যে কোনো কিছুর বিনিময়ে রুখে দিবেন- এটাই তো স্বাভাবিক। তাই তারা নিজেদের অশুভ মতলব হাসিলের জন্য ইউরোপীয় পাদ্রীদের দেখাদেখি নতুন শ্লোগান তুললেন, 'মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা হারাম'। তাদের এই কুমতলব আর কুমতি না বুঝে এক শ্রেণির জ্ঞানপাপী, অন্ধ অনুসারী আর কুরআন হাদিসের মূল জ্ঞান বিচ্যুত কিছু মানুষ ইসলাম বিরোধী এই ধারণার সাথে মিশে গেলেন। চালু হয়ে গেল ইসলামের আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যহীন, ইতিহাস ঐতিহ্যের বিপরীতে সূত্রহীন নতুন এক ফতোয়া- 'মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা হারাম'। সেই শুরু, আজ অনেক মসজিদের ভেতরেই এই অমূলক কথা স্থান করে নিয়েছে। সাধারণ মানুষ মসজিদে মাসআলা মাসায়েল জিজ্ঞেস করতেও শঙ্কিত হন, না জানি দুনিয়াবি কথা বলে হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে গেলেন, এই ভয়ে। আরে ভাই, মসজিদ তো বাইতুল্লাহ, আল্লাহ তাআ'লার ঘর। এখানে মানুষের মুখে তালা দেয়ার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? আল্লাহ তাআ'লার ঘরে আল্লাহ তাআ'লার বান্দাদের স্বাচ্ছন্দ্যে তাঁর রহমত তালাশ করার সুযোগ দিন। তাদেরকে তাদের মালিকের কাছে আসতে দিন। এ ঘর থেকে লোকদের বের করে দিতে কৌশল অবলম্বনের কুটিল পথ পরিহার করুন। ফরজ নামাজ শেষ হতে না হতেই মসজিদের কপাট বন্ধ করার প্রতিযোগিতা দয়া করে বন্ধ করুন। মুসল্লিদের প্রতি একটু সদয় হোন। নিজের প্রতি সামান্য ইহসান করুন। জীবন মৃত্যুর মালিক মহান আল্লাহ তাআ'লার প্রতি কিছু মুহাব্বত দিলে ধারণ করুন। আল্লাহ তাআ'লার ঘরের জিম্মাদারির দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তাকে ভয় করুন।

'দুনিয়াবি কথা' বলে মুমিনের জীবনকে বিভক্ত করার সুযোগ নেইঃ

'দুনিয়াবি কথা' বলে আপনি কোন কথাকে বুঝাতে চান, যে কথা মসজিদে বলাই যাবে না? মুমিন ব্যক্তির মুখ থেকে তো এমন কথাই বের হবার কথা, যে কথা তিনি মসজিদ, বাজার কিংবা আপন ঘর সবখানেই বলতে পারেন। কারণ, মুমিন ব্যক্তি অশ্লীল ভাষাভাষী হতে পারেন না। তার পক্ষে কটুভাষী হওয়ারও সুযোগ নেই। কাউকে গালি দেয়া তার শান বিরোধী। গীবত তো মুমিনের কাজই নয়। তাহলে মুমিনের এমন কি কথা থাকতে পারে যা তিনি মসজিদে বলতে পারবেন না? আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطّعّانِ، وَلَا اللّعّانِ، وَلَا الْفَاحِشِ، وَلَا الْبَذِيءِ.

মুমিন কটুভাষী হতে পারে না, লা‘নতকারী হতে পারে না এবং অশ্লীল ও অশালীন কথা বলতে পারে না। -আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৩১২; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৭৭

এসব কর্ম ঈমানের ও মুুমিনের শানের পরিপন্থী। মুমিনের কর্তব্য, এগুলো থেকে নিজেকে পবিত্র রাখা। -মাআরিফুল হাদীস, খ. ১, হিস্যা. ১, পৃ. ১০২)

আবু বারযা আলআসলামী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الْإِيمَانُ قَلْبَهُ! لَا تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ وَلَا تَتّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ؛ فَإِنّهُ مَنْ يَتّبِعْ عَوْرَاتِهِمْ يَتّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ، وَمَنْ يَتّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِي بَيْتِهِ.

হে ঐ সকল লোক, যারা মুখে ঈমান এনেছে, অথচ ঈমান এখনো তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলমানদের গীবত করো না, তাদের অপ্রকাশিত দোষ-ত্রুটির অনুসন্ধান করো না, কেননা যে ব্যক্তি তাদের দোষ অনুসন্ধান করবে, আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করবেন। আর আল্লাহ যার দোষ অনুসন্ধান করবেন তাকে তো তিনি তার ঘরে লাঞ্ছিত করবেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৯৭৭৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৮৮০

এই হাদীস থেকে জানা গেল যে, কোনো মুসলমানের গীবত করা, তার দোষ-দুর্বলতা প্রকাশে উৎসুক হওয়া প্রকৃতপক্ষে এমন এক মুনাফিকী কর্ম, যা শুধু ঐ লোকদের থেকেই প্রকাশিত হতে পারে যারা মুখে তো মুসলমান কিন্তু ঈমান এখনো তাদের অন্তরে স্থান করে নিতে পারেনি। -মাআরিফুল হাদীস, খ. ১, হিস্যা. ২, পৃ. ১৬৩

প্রতিটি কাজই সাওয়াবের মাধ্যম, চাই ইখলাসপূর্ণ নিয়্যাতঃ

আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, সুন্নাহ অনুযায়ী নিয়্যাতকে শুধরে নিয়ে করা হলে, মুমিনের প্রতিটি কাজই ইবাদত তথা সাওয়াব লাভের মাধ্যমে পরিণত হয়। সে তার জীবনের প্রতিটি কাজ আল্লাহ তাআ'লার সন্তুষ্টির নিয়তে করে। যদি নিয়্যাতের এই বিশুদ্ধতাটুকু, ইখলাসটুকু করে অর্জন করে নেয়া যায়, তাতে সকল জায়েয কাজে সাওয়াব লাভ করা সম্ভব। কারণ স্পষ্ট, মুমিনের কোন অবস্থাতেই ক্ষতি নেই। সে যদি আনন্দের সময় আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করে, তাও ইবাদত বলে গন্য হয় এবং এতে সে সাওয়াব লাভ করে। পক্ষান্তরে সে যদি বিপদাপদ এবং দুশ্চিন্তার সময় ধৈর্য্য ধারণ করে তাতেও সে পুরষ্কার লাভ করে। সে যদি বিপদে-আপদে, দুশ্চিন্তা-পেরেশানিতে إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ পাঠ করে এবং আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত ও ইচ্ছার নিকট নিজেকে সমর্পণ করে দেয়, তার ব্যাপারে কুরআনে হাকিমে ইরশাদ হয়েছে,

إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ.

‘ধৈর্যশীলদেরকে বে-হিসাব প্রতিদান দেয়া হবে।' -সূরা যুমার, আয়াত- ১০

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার জন্য যে কোনো জিনিসেই ধৈর্য্য ধারণ করা হবে আল্লাহ তাআলা তাকে অপরিমিত দান করবেন। সুবহানাল্লাহ। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

عَجَبًا لِأَمْرِ الْمُؤْمِنِ، إِنّ أَمْرَهُ كُلّهُ لَهُ خَيْرٌ، وَلَيْسَ ذَاكَ لِأَحَدٍ إِلَّا لِلْمُؤْمِنِ، إِنْ أَصَابَتْهُ سَرّاءُ شَكَرَ، فَكَانَ خَيْرًا لَهُ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرّاءُ صَبَرَ، فَكَانَ خَيْرًا لَهُ.

মুমিনের বিষয় বড়ই আশ্চর্যজনক। তার সবকিছুই তার জন্য কল্যাণকর; মুমিন ছাড়া আর কারও এই বৈশিষ্ট্য নেই। সে যখন আনন্দদায়ক কিছু লাভ করে তখন শোকর করে, আর শোকর তার জন্য কল্যাণের বিষয়। যখন কষ্টদায়ক কোনো কিছুর সম্মুখীন হয়, তখন সে ছবর করে, আর ছবরও তার জন্য কল্যাণের বিষয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৯৯

দুনিয়াতে সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনা তো সবার জীবনেই আসে। কিন্তু এই সুখ ও আনন্দ, এই দুঃখ ও বেদনার মাধ্যমেও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা- এটা কেবল ঐ সকল ঈমানদারদেরই ভাগ্য, যারা আল্লাহ তাআলার সাথে এমন ঈমানী সম্পর্ক স্থাপন করে নিয়েছে যে, নিজেদের সব সুখ ও আনন্দ, সব প্রাপ্তি ও অর্জনকে তারা আল্লাহর দান মনে করে এবং আল্লাহর শোকর আদায় করে। আর তারা যদি দুঃখ-বেদনা, বিপদ ও দুর্দশায় আপতিত হয় তখন তারা বন্দেগী ও দাসত্বের পূর্ণ শান ও মহিমা নিয়ে আল্লাহর কাছে ছবর করে। এ বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহরই ইচ্ছায় এই দুঃখ-বেদনা, এই বিপদ ও দুর্দশা আমার উপর এসেছে। আল্লাহই পারেন তা দূর করে দিতে।

যেহেতু সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার অনুষঙ্গ মানুষের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না, তাই আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর সব সময় ছবর ও শোকরের অনুভূতিতে পরিপূর্ণ থাকে। (মাআরিফুল হাদীস, খ. ১, হিস্যা. ২, পৃৃ. ১৯১)

মুমিনের প্রতিটি কাজই সাওয়াব লাভের মাধ্যমঃ

এই যে আমরা জীবন ধারণের জন্য বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করি। চাকরি, ব্যবসা বা নানাবিধ সেবার বিনিময় গ্রহণ করার শর্তে শ্রম দিই, মেধা বিনিয়োগ করি বস্তুতঃ এগুলোও পূণ্যের কাজ। কারণ, পরিশ্রমের বাহ্যিক উদ্দেশ্য হল অর্থোপার্জন করা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যদি নিয়ত করা হয়, আল্লাহ তাআলা আমার নফস ও আমার পরিবারের যে হকগুলো আমার উপর আবশ্যক করেছেন, তা সুচারুরূপে আদায় করার জন্য উপার্জন করারও প্রয়োজন আছে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অন্যান্য ফরযের পর বড় ফরয হল হালাল উপার্জন করা। সুতরাং, এ নিয়তের কারণে কাজকর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও পূণ্য এবং সাওয়াব হবে। মোটকথা, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই সেগুলোর নিয়তকে শুধরে নিলে তা আল্লাহ তাআ'লার জন্য হয়ে যায় এবং তাতে সাওয়াব লাভ করে মুমিন ব্যক্তি।

দুনিয়াতে যত ধরণের বিপদ মানব জীবনে আসতে পারে, এর মধ্যে প্রিয়জন হারানোর বিপদটিই সম্ভবতঃ সবচেয়ে কঠিন। প্রিয়জন হতে পারে সন্তান, হতে পারেন মা-বাবা কিংবা ভাই-বোন অথবা অন্য কেউ। এ কঠিন বিপদে যারা সওয়াবের আশায় সবর করবেন তাদের পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে স্বয়ং রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত হয়েছে-

مَا لِعَبْدِي الْمُؤْمِنِ عِنْدِي جَزَاءٌ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهُ إِلاَّ الْجَنَّةُ.

আমি যখন আমার মুমিন বান্দার কোনো আপনজনকে মৃত্যু দিই আর সে সবর করে, তখন আমার কাছে তার একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪২৪

নিচের বর্ণনাটি হাদিস নয়ঃ

‘মসজিদে কেউ প্রথমবার দুনিয়াবী কথা বললে ফিরিশতারা বলেন, হে আল্লাহর বন্ধু ‘আপনি’ চুপ করুন। আবার দুনিয়াবী কথা বললে ফিরিশতারা বলেন, হে আল্লাহর বান্দা ‘তুমি’ চুপ কর। তৃতীয়বার কথা বললে ফিরিশতারা বলেন, হে আল্লাহর দুশমন ‘তুই’ চুপ কর।’ -বর্ণনাটি কোনো কোনো লোককে হাদিস বলে উল্লেখ করতে দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে এটি হাদিস নয়। হাদিসের কিতাবসমূহে এটা পাওয়া যায় না।

এ ছাড়া ‘মসজিদে (দুনিয়াবী) কথাবার্তা নেকিকে এমনভাবে খতম করে, যেমন আগুন কাঠকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে।’ বক্তব্যটির বিষয়েও একই কথা প্রযোজ্য। এটিও হাদিসের নামে প্রচলিত জাল উক্তি।

মসজিদে হারানো বস্তু তালাশে এলান করা বা বেচা কেনা করা যাবে নাঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে বেচা-কেনা বা হারানো বস্তু খুঁজে পাওয়ার এলান করতে নিষেধ করেছেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১০৭৯

আরেক হাদীসে এ বিষয়ে কঠিন ধমকি এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কাউকে মসজিদে বেচা-কেনা করতে দেখলে বল, তোমার বেচা-কেনা লাভজনক না হোক। তেমনিভাবে কাউকে যদি মসজিদে হারানো বস্ত্তর এলান করতে দেখ তাহলে বল, আল্লাহ তোমার হারানো বস্ত্ত ফিরিয়ে না দিন (অর্থাৎ এ কাজটি খুবই নিন্দনীয়)। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৩৬; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৩০৫

তবে কোনো দ্বীনী কাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার পর প্রসঙ্গক্রমে দুনিয়াবী কোনো বৈধ কথাবার্তা বলা জায়েয। এর বৈধতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। -দ্রষ্টব্য, সহীহ বুখারী ১/৬৩,৬৪, ও ৬৫; রদ্দুল মুহতার (শামী) ১/৬৬২; আললু’লুউল মারসূ ৭৮

মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা হারাম- কথাটি সহিহ নয়ঃ

গভীর মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলে বুঝা সহজ যে, এ কথার অর্থ হচ্ছে, একজন খাঁটি মুমিন এমন কোন কাজ করতেই পারেন না, যা কি না ইবাদতের বাহিরে। সুতরাং, মুমিন ব্যক্তির মসজিদ এবং মসজিদের বাহিরের জীবনে কোন তফাৎ তালাশ করার সুযোগ নেই। মুমিন বান্দা মসজিদে এলে যেমন তার সওয়াব লাভ হয়, মসজিদের বাইরেও তার প্রতিটি কাজই কল্যানকর এবং তিনি এর বিনিময় লাভ করেন। অতএব উপরোক্ত আলোচনান্তে বোধগম্য হয় যে, একজন ঈমানদার নামাজি ব্যক্তি মসজিদে তার সকল প্রয়োজনীয় কথা বলতে ও আলোচনা করতে পারবেন। ইসলাম এতে কোনো ধরণের প্রতিবন্ধকতা প্রদান করেনি। সুতরাং, যারা মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলাকে হারাম বলে থাকেন, তাদের এসব কথা অমূলক। এসব কথার নূন্যতম কোনো ভিত্তি ইসলামে আদৌ নেই। আল্লাহ তাআ'লা আমাদের দ্বীনের সহিহ বুঝ দান করুন এবং সঠিকভাবে সুন্নাত তরিকায় দ্বীনের প্রতিটি আমল পরিপালনের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের কিসমত নসিব করুন।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩০

ফটিকলাল বলেছেন: অসাধারন পোস্ট

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৯

নতুন নকিব বলেছেন:



প্রথম মন্তব্যে আপনাকে পেয়ে আনন্দিত হলাম। আন্তরিক অভিনন্দন এবং কল্যানের দোআ।

২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৫১

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সুন্দর পোস্ট

তবে আমাদের দেশে মসজিদ চব্বিশ ঘন্টা খোলা রাখা যাবে না, যেতো যদি মানুষ ভালো হতো। খোলা রাখলেই দেখবেন এক শ্রেণির মানুষ মসজিদে ফ্যান ছেড়ে আরাম আয়েস করতে আর আড্ডা দেবে, বিড়ি সিগারেট খাবে, মদগাঞ্জাও খেতে পারে। তবে অনেক মসজিদ খোলাও দেখি, সেখানে একজন খাদেম থাকেন। আমাদের ব্যাঙক কলোনীর মসজিদ সব সময় খোলা দেখি। জানালা দিয়ে দেখি কেউ কেউ ইবাদত করছেন। মসজিদের কাছে দিয়ে গেলে খুব শান্তি লাগে মনে।

জাজাকাল্লাহ খইরান

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৫৬

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, আপনি সঠিক বলেছেন। চব্বিশ ঘন্টা মসজিদ খোলা রাখা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নিশ্চয়ই কঠিন কাজ। এর জন্য মসজিদের রক্ষনাবেক্ষন এবং ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। মসজিদের আয় ব্যয়ের খাতগুলো নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। মসজিদের লোকবল বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ বিষয়গুলো বুঝাতে পোস্টেও বলেছি যে, এর জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সার্বিক ব্যবস্থাপনা। আমরা এমন একটি সোনালী দিনের প্রতীক্ষায়- যেদিন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ সক্রিয় হবে প্রতিটি মসজিদের যথোপযুক্ত ব্যবস্থাপনা এবং রক্ষনাবেক্ষনে। যেদিন প্রতিটি মসজিদের দ্বার খুলে দেয়া হবে সাধারণের জন্য। মানবতার জন্য। মানুষের জন্য।

এর ব্যতিক্রম হলে অর্থাৎ, বিদ্যমান অবস্থায় চব্বিশ ঘন্টা মসজিদ খোলা রাখা হলে বহুবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

লাইকসহ মন্তব্যে আসায় আপনার জন্য আন্তরিক দোআ এবং অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।

৩| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০২

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার কাছে আমার একটি প্রশ্নঃ
আল্লাহর ৯৯ টা নাম কে রেখেছে? কবে করেছে?
যদি সম্ভব হয় এ বিষয়টা নিয়ে একটা পোষ্ট দিবেন।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০৪

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৫৫

নতুন নকিব বলেছেন:



আল্লাহর ৯৯ টা নাম কে রেখেছে? কবে করেছে?

-সংক্ষিপ্তাকারে আপনার প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে- আল্লাহ তাআ'লা তাঁর নিজের এই সুন্দর নামগুলো নিজেই রেখেছেন। এগুলোকে একত্রে বলা হয়, 'আসমাউল হুসনা' বা 'সুন্দর নামসমূহ'। যেমন, পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-

আল্লাহ তাআ'লা বলেন

ولله الاسماء الحسنى فادعوه بها

আর আল্লাহ তাআ'লার রয়েছে সুন্দর নামসমূহ। সেগুলো দ্বারা তাকে ডাকো। -সূরা আল আরাফ :-আয়াত ১৮০

আর এই নামগুলো কবে বা কখন তিনি রেখেছেন, এ সংক্রান্ত কোনো বর্ণনা আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি।

এই বিষয়ে আমার পুরনো একটি পোস্ট ছিল। ইচ্ছে করলে দেখে আসতে পারেন- আসমাউল হুসনা, আল্লাহ তাআলার গুণবাচক সুন্দর নামসমূহের বাংলা অর্থ এবং পাঠের ফজিলত

৪| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৪৩

নীল আকাশ বলেছেন: এখন এক গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মুস্লিমদের মসজিদ থেকে যতটা সম্ভব আলাদা করে রাখার।
দারুন একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন।
ছোট বাচ্চাদের মসজিদের আসতে দেয়া যাবে না বলেও কিছু কিছু মসজিদে লেখা থাকে। এটাও সম্ভবত ভুল।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:২৩

নতুন নকিব বলেছেন:



অশেষ কৃতজ্ঞতা।

শিশুদের নিয়ে আমার এই পোস্টটি দেখেছেন সম্ভবতঃ ছোট শিশুদের মসজিদে গমন; মসজিদগুলো মুখরিত হোক কোমলমতি শিশুদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে

৫| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৫৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ফেনীতে একটা মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ার পর সব নামাজিকে সকালে নাস্তা করায় প্রতিদিন এতে নামাজি বেড়েছে।

৬| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৩১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: একটা দরকারি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন তাই আপনাকে ধন্যবাদ।

৭| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
না জেনে মানুষ যে কি ধরনের ফতোয়া দেয় !!!!

এটা কি সমাজে প্রচলিত হয়ে গেছে- মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা হারাম।

++++

৮| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


নবী (স: ) উনার এলাকার গোত্রদের মাঝে একতা এনে, একটা সমাজ ও শাসন ব্যবস্হা গড়ার জন্য ততকালীন আরব/বেদুইন প্রথা অনুযায়ী ব্যবস্হা নিয়েছিলেন; আজকের বিশ্বে সেগুলো মোটানুটি অচল ও সামজিক সংঘর্ষের মুল কারণ হয়েছে আরব দেশগুলোতে।

৯| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৮

জিকোব্লগ বলেছেন: নাস্তিক রাজীব নুর ইসলামকে ব্যাঙ্গ করার জন্য প্রশ্নটা করেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.