নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ছবিঃ অন্তর্জাল।
প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাম্পত্য জীবন ও স্ত্রীদের সাথে তাঁর আচরণের কিছু অনবদ্য বর্ণনা
আজকের সমাজে অধিকাংশ ঘরে সম্পদের প্রাচুর্য থাকার পরেও শান্তির বড় অভাব। সম্পদ রয়েছে রাশি রাশি কিন্তু শান্তি এবং প্রশান্তি নেই। সুখ এবং সৌহার্দ্য নেই। হৃদ্যতা এবং ভালোবাসা নেই। দয়ামায়া এবং প্রাণময়তা নেই। কোমলতা এবং সহৃদয়তা নেই। আন্তরিকতা এবং অন্তরঙ্গতা নেই। স্বামী স্ত্রীর মাঝে পারস্পরিক মুহাব্বতের অতলস্পর্শী ছোঁয়া আর পরশ নেই। বিলাস ব্যসন আর পার্থিব উপকরণের প্রাচুর্যের নিচে যেন ঢাকা পড়ে গেছে হৃদয়ের প্রকৃত সুখ। ভোগের মোহে, বিলাসের নেশায় অধিকাংশ মানুষ ব্যতিব্যস্ত। স্বামী জানেন না, কি আচরণ তার কাছে তার স্ত্রীর প্রাপ্য। স্ত্রীও অনবহিত স্বামীর প্রতি কেমন হওয়া উচিত তার নিজের আচার আচরণ। স্বামী স্ত্রীগণ জানেনই না, ইসলামী শরিয়াহ কতই না চমৎকার দায় এবং দায়িত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে দিয়েছে একে অপরকে। কতই না উত্তম মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে নারীকে, পুরুষকে। অথচ অধিকার বঞ্চিত এই আমরা ইসলামী শরিয়া নির্দেশিত আমাদের পারস্পরিক দায়িত্ব এবং কর্তব্য না জানার কারণে স্বামী স্ত্রী প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধিকার পেতে মরিয়া। কিন্তু অন্যের অধিকার আদায়ের অনুভূতিশুন্য ব্যক্তি কি করে নিজের অধিকার পেতে পারেন?
এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ছিলেন প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি শ্রেষ্ঠতম স্বামীও ছিলেন। তাঁর চেয়ে সুন্দরতম আচরণের অধিকারী পৃথিবীতে আর কেউ আসেননি, আসবেনও না। তো, কেমন ছিল তাঁর পবিত্র দাম্পত্য জীবন? কেমন ছিল তাঁর স্ত্রী তথা উম্মাহাতুল মুমিনীনগণের সাথে তাঁর আচরণ? বিষয়টি খোলাসা করে দেখতে হলে আমাদের সীরাত এবং হাদিসের কিতাবগুলোতে দৃষ্টি দিতে হবে। প্রিয় নবীজীর চারিত্রিক সনদ দান করেছেন স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা। তিনি ইরশাদ করেন-
وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ
'আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত।' -সূরা আল ক্কালাম, আয়াত-০৪
আর সমগ্র মানব গোষ্ঠীর পুরুষদের চারিত্রিক সার্টিফিকেট গ্রহণের পদ্ধতি জানিয়ে দিয়েছেন প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি ইরশাদ করেন-
خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لأَهْلِى.
‘তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সেই, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। আর আমি নিজ স্ত্রীর নিকট তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি।’ -ত্বাহাবী , হাকেম , দাঃ, আদাবুয যিফাফ ২৬৯পৃঃ
মুসনাদে আহমদ এর এক হাদিসে একই বিষয়ে এসেছে-
أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَخِيَارُهُمْ خِيَارُهُمْ لِنِسَائِهِمْ.
‘সবার চেয়ে পূর্ণ ঈমানদার ব্যক্তি সে, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর এবং ওদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ব্যক্তি সেই, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।’
চারিত্রিক সনদপত্র গ্রহণের কি আশ্চর্য্য এবং অদ্ভূত পদ্ধতি! অদ্ভূতই বটে! কারণ, আজকের দিনে চারিত্রিক সনদ গ্রহণের প্রচলিত পদ্ধতিতে দেখা যায়, এমন একজন ব্যক্তির নিকট থেকে তা গ্রহণ করা হয়ে থাকে যিনি কি না সনদপ্রার্থীকে চেনেনও না। মানবিক দায় থেকে সদয় হয়ে 'তার স্বভাব চরিত্র ভালো' ইত্যাকার কথা লেখা কাগজে স্বাক্ষর করে চারিত্রিক সার্টিফিকেটে তিনি ঠিকই দিয়ে দেন। কিন্তু পরবর্তীতে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এই সনদ দিয়ে চাকরি গ্রহণ করা সেই ব্যক্তিটিই হয়ে ওঠেন সর্বভূক। রাষ্ট্রীয় তহবিল তসরুফ থেকে শুরু করে দেশ শুদ্ধ গিলে খাওয়ার চেষ্টায় জীবন বাজী রাখেন। অক্টোপাসের মত খুবলে খেতে থাকেন জনগণের সম্পদ সম্বল।
আসলে একজন পুরুষের চরিত্র কেমন, এটা তার স্ত্রীর চেয়ে বেশি ভালো আর কে জানতে পারে? স্বামী স্ত্রীর মাঝে কোনো কিছুর আড়াল আবডাল থাকে না। লুকোচুরির কিছু থাকে না। আল কুরআন 'একজনকে অন্যজনের পোষাক' অভিহিত করেছে।
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
অর্থাৎ, ‘‘তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক।’ -সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৭
নারীর পরিপূর্ণ অধিকার ও মর্যাদা একমাত্র ইসলামই দিয়েছেঃ
নারীর অধিকার সম্মন্ধে পূর্বে পশ্চিমে মতবাদের শেষ নেই। পাশ্চাত্যের আধুনিকতার ধ্বজাধারীগণ ইসলাম ধর্মকে সেকেলে বলে উপহাস করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়ে এ যুগে তা অচল বলার ধৃষ্টতা দেখান। অথচ তাদের নারীগণ আজও তাদের নিকট পণ্যের মর্যাদা অতিক্রম করতে পারেনি। আকর্ষনীয় নানান প্রলুব্ধকর ও শ্রুতিমধুর শব্দের গ্রন্থনায় নারীবাদের পক্ষে, নারী অধিকারের শ্লোগান তুলে মুখে ফেনা তুললেও তারা নারীদের ভোগের বস্তু বৈ অন্য কিছু মনে করেন না। এটা তাদের সমাজ বাস্তবতা দ্বারা স্বতঃসিদ্ধ এবং সুপ্রমানিত। ইসলাম ধর্ম প্রদত্ত প্রকৃত নারী অধিকার এবং মর্যাদার মানদন্ডকে তারাও আজ অস্বীকার করতে পারছেন না। ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে তারা যা বলছেন তা শুধুই বিদ্বেষ বশতঃ। প্রকৃতপক্ষে তারা যে নারীদের প্রতি সীমাহীন বঞ্চনা, গঞ্জনা আর যন্ত্রণাময় অসহ্য এক জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন তা তারা খুব ভালোভাবেই জ্ঞাত। ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের প্রাক্কালে তৎকালীন বিশ্বে নারীর অবস্থা ছিল সবচে' শোচনীয়। নারী হয়ে জন্মগ্রহণ করাকেই তখন পাপ মনে করা হত। নারীকে দেখা হত ঘৃণার দৃষ্টিতে। কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া হত। নারীর সেই ঘোর দুর্দিনে নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান, অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলাম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কথা বলেছে। নারীর অধিকারকে সমুন্নত করতে বিধি বিধান আরোপ করেছে। গর্ভধারীণী যে মা ছিলেন অবজ্ঞায় উপেক্ষিত, অবহেলা-তাচ্ছিল্যে বঞ্চিত, নিপীড়িত এবং নিষ্পেষিত; সেই 'মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত' -ঘোষনা করে গোটা নারী জাতির মাথায় সন্মানের মুকুট পড়িয়ে দিয়েছেন প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় পবিত্র কুরআনের ভাষ্য সুস্পষ্ট। আল্লাহ তাআ'লা বলেন-
﴿وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ﴾
‘নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের। কিন্তু নারীদের উপর পুরুষদের কিছু মর্যাদা আছে।' -সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২৮
এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-
وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا فَإِنَّمَا هُنَّ عَوَانٍ عِنْدَكُمْ.
‘সাবধান! তোমরা নারী অর্থাৎ, স্ত্রীদের জন্য মঙ্গলকামী হও। যেহেতু তারা তো তোমাদের হাতে বন্দিনী।’ -তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আদাবুয যিফাফ ২৭০পৃঃ
একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-
اتَّقُوا اللَّهَ فِى النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانَةِ اللَّهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ.
‘তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। যেহেতু তাদেরকে তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকারে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে বরণ করেছ এবং আল্লাহর বাণীর মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান হালাল করে নিয়েছ।’ -সহিহ মুসলিম
স্বামী স্ত্রী উভয়ে পরস্পরের একান্ত কাছাকাছি থাকার কারণে, একে অপরের গোপন এবং প্রকাশ্য সকল বিষয়াবলী জ্ঞাত থাকার কারণে একজন স্ত্রীর পক্ষে তার স্বামীর চরিত্র সম্মন্ধে সর্বাধিক অবহিত থাকার সুযোগ সহজেই ঘটে। অন্য কারও এই সুযোগ পাওয়ার কথা নয়। এ কারণে প্রিয়তম হাবিব সারওয়ারে দোজাহান, মানবতার মুক্তির দিশারীর মুখ থেকে 'স্ত্রীর কাছ থেকে স্বামীর চরিত্রের ব্যাপারে' জেনে নিতে বলা যথার্থ হয়েছে।
স্ত্রীর সাথে সদ্ভাবে বাস করা কুরআনের নির্দেশঃ
স্ত্রীর সাথে সদ্ভাবে বসবাস করা ওয়াজিব। স্ত্রীর কোনো কাজ বা আচরণ অপছন্দ হলেও সদাচার ও সদ্ব্যবহার বন্ধ করার সুযোগ নেই। এবং এমনটা কোনো অবস্থায়ই কাম্য নয়। মহান আল্লাহ তাআ'লা বলেন-
﴿وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئاً وَيَجْعَلَ اللهُ فِيهِ خَيْراً كَثِيراً﴾
‘আর তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। তোমরা যদি তাদেরকে ঘৃণা কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা যা ঘৃণা করছ, আল্লাহ তার মধ্যেই প্রভূত কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।' -সূরা আন-নিসা (৪) : ১৯
এক হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ.
‘তোমরা নারীদের জন্য হিতাকাঙক্ষী হও। কারণ, নারী জাতি বাঁকা পাজরের হার হতে সৃষ্ট। আর তার উপরের অংশ বেশী বাকা (সুতরাং তাদের প্রকৃতিই বাকা ও টেরা।) অতএব তুমি সোজা করতে গেলে হয়তো তা ভেঙ্গেই ফেলবে। আর নিজের অবস্থায় উপেক্ষা করলে বাঁকা থেকেই যাবে। অতএব তাদের জন্য মঙ্গলকামী হও।’ -বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৩৮
আরেক হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لاَ يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِىَ مِنْهَا آخَرَ.
‘কোন মু’মিন পুরুষ যেন কোন মু’মিন স্ত্রীকে ঘৃণা না করে। কারণ সে তার একটা গুণ অপছন্দ করলেও অপর আর একটা গুণে মুগ্ধ হবে।' -মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৪০
কেমন ছিল তাঁর অনুপম আদর্শ?
প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেমন ছিলেন তাঁর স্ত্রী তথা উম্মাহাতুল মুমিনীনগণের নিকট? তিনি ছিলেন উত্তম আদর্শের মূর্ত প্রতিক। তিনি ঘরে বাইরে সর্বত্র, সকল কাজে সর্বোত্তম অনুকরণীয় আদর্শ রেখে গেছেন।
রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
«الدنيا كلها متاع، وخير متاع الدنيا الزوجة الصالحة».
'দুনিয়ার পূর্ণটাই সম্পদ [স্বরূপ] তবে দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ হল: সতী স্ত্রী'। -সহীহ আল-জামে আস-সাগীর, আহমদ, হাদিস: ৬৫৬৭ নাসায়ী, হাদিস: ৩২৩২
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেন:
قال رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يومًا: «يا عائش! هذا جبريل يقرئك السلام».
একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বলেন: 'হে আয়েশ! [সংক্ষিপ্তাকারে] জিব্রাঈল [আলাইহিস সালাম] এই মাত্র তোমাকে সালাম দিয়ে গেলেন'। -বুখারী, হাদিস: ৩৭৬৮; মুসলিম, হাদিস: ৮৯৭৫
স্ত্রীদের সাথে আচরণে কতই না চমকপ্রদ ছিলেন প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি যে অসাধারণ প্রেমময় একজন স্বামী ছিলেন তারই প্রতিচ্ছবি রয়েছে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার নামকে আদরাচ্ছলে সংক্ষিপ্ত করে 'হে আয়েশ!' বলে সম্বোধন করার ভেতরে।
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিপূর্ণ চরিত্র, সর্বোত্তম আদর্শ ও সুমহান মর্যাদার অধিকারী। দাম্পত্য জীবনের সর্বোত্তম নমুনা এবং নরম প্রকৃতির স্ত্রীর প্রকৃত আবেগ, অনুভূতি ও চাহিদা সম্পর্কে সম্যক অভিহিত ছিলেন তিনি। তিনি স্ত্রীদেরকে এমন সম্মানজনক অবস্থান প্রদান করেন যা প্রত্যেক নারীরই পছন্দ এবং যে আদর্শ গ্রহণ করলে স্বামীর নিকট সত্যিকারার্থে একজন নারী অর্ধাঙ্গিনীতে পরিণত হতে পারে।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:
«كنت أشرب وأنا حائض، فأناوله النبي - صلى الله عليه وسلم -، فيضع فاه على موضع في فيشرب، وأتعرق العرق فيتناوله ويضع فاه على موضع في».
'আমি ঋতু স্রাবের অবস্থায় কিছু পান করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিতাম, আর তিনি আমার মুখ রাখার স্থানে মুখ রেখে পান করতেন এবং আমি হাড়ের মাংস খেয়ে শেষ করলে তিনি তা গ্রহণ করে আমার মুখ লাগানোর স্থানেই মুখ লাগাতেন'। -মুসলিম, হাদিস: ৩০০
বস্তুতঃ বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনক্রমেই তেমন ছিলেন না, যেমনটা মুনাফিকরা প্রচার করে থাকে এবং পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের এক শ্রেণির মানুষ যে সমস্ত মিথ্যা ও অলীক অপবাদ তাঁর প্রতি অন্যায়ভাবে আরোপ করে থাকে। বরং তিনি দাম্পত্য জীবনে সর্বোত্তম ও সহজ-সরল পন্থা অবলম্বন করে সর্বোত্তম আদর্শ গড়তে সক্ষম হয়েছিলেন।
আয়েশ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:
«إن النبي - صلى الله عليه وسلم - قبل امرأة من نسائه ثم خرج إلى الصلاة ولم يتوضأ».
'নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কোন এক স্ত্রীকে চুমু দিয়ে অজু না করেই নামাযের জন্য মসজিদের দিকে বের হয়ে যেতেন'। -আবু দাউদ, হাদিস: ১৭৯; আহমদ, হাদিস: ২৫৭৩২
আমর বিন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
أنه قال لرسول الله - صلى الله عليه وسلم -: أي الناس أحب إليك؟ قال: «عائشة».
'তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করেন, আপনার নিকট কোন ব্যক্তি সব চেয়ে প্রিয়? তিনি উত্তরে বলেন: আয়েশা'। -বুখারী, হাদিস: ৩৬৬২; মুসলিম, হাদিস: ২৩৮৪
যে ব্যক্তি দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে চায় সে যেন মুমিন জননী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণিত নিচের এ হাদিসটি ভাল করে ভেবে দেখে: তাতে রয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:
«كنت أغتسل أنا ورسول الله - صلى الله عليه وسلم - من إناء واحد».
'আমি ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক পাত্র হতে পানি নিয়ে গোসল করতাম'। -বুখারী, হাদিস: ২৬৩
স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতাঃ
প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৈধ পন্থায় তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে আনন্দ ও আন্তরিকতার পরশ জোগাতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:
خرجت مع رسول الله - صلى الله عليه وسلم - في بعض أسفاره، وأنا جارية لم أحمل اللحم ولم أبدن، فقال للناس: «تقدموا» فتقدموا ثم قال: «تعالي حتى أسابقك» فسابقته فسبقته، فسكت عني حتى حملت اللحم، وبدنت وسمنت وخرجت معه في بعض أسفاره فقال للناس «تقدموا» ثم قال: «تعالي أسابقك» فسبقني، فجعل يضحك ويقول: «هذه بتلك».
'আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কোন ভ্রমণে বের হলাম, সে সময় আমি অল্প বয়সী ও শারীরিক গঠনের দিক দিয়েও পাতলা ছিলাম, তখনো মোটা তাজা হইনি। তিনি সাহাবীদেরকে বললেন: তোমরা সামনের দিকে অগ্রসর হও। তারা যখন সামনের দিকে অগ্রসর হল, তখন তিনি আমাকে বললেন: এসো আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করি, অত:পর আমি তাঁর সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলাম ও আমি তার উপর বিজয় লাভ করলাম। তিনি সে দিন আমাকে কিছুই বললেন না। যখন আমি শারীরিক দিক দিয়ে মোটা হলাম ও ভারী হলাম, ও তাঁর সাথে কোন এক সফরে বের হলাম। তিনি সাহাবীদেরকে বললেন: তোমরা সামনের দিকে অগ্রসর হও। তারা যখন সামনে অগ্রসর হল: তখন তিনি আমাকে বললেন: এসো আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করি, এবারের প্রতিযোগিতায় তিনি আমার আগে চলে গিয়ে হাসতে হাসতে বললেন: আজকের জয় সেই দিনের প্রতিশোধ'। -আহমাদ, হাদিস: ২৬২৭৭
সুন্দর চিত্ত বিনোদন ও স্ত্রীর ব্যাপারে অসীম গুরুত্বারোপের অন্যতম নিদর্শন এ ঘটনা। সাহাবিদেরকে আগে পাঠিয়ে স্বীয় স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে তার হৃদয়কে আনন্দিত করা ছিল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্য। তারপর পূর্বের বিনোদনের ইতিহাস টেনে আজকের বিজয়ের তুলনা করে বলেন: আজকের বিজয় পূর্বের প্রতিশোধ।
স্ত্রীদের প্রতি তিনি সবসময় এবং সবচে' বেশি অধিকার সচেতন ছিলেনঃ
কোন এক বিজয়ের দিন, তিনি বিজয়ী বেশে এক মহা সেনা অভিযানের নেতৃত্ব প্রদান করত: প্রত্যাবর্তন করছেন। এমতাবস্থায়ও তিনি ছিলেন স্বীয় স্ত্রী মুমিন জননীদের সাথে মুহাব্বত ও নমনীয়তার মূর্ত প্রতীক। অভিযানের নেতৃত্ব, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তি, যুদ্ধের মহাবিজয় এসবের কোনো কিছুই তাঁকে ভুলিয়ে দেয়নি যে, তাঁর সাথে রয়েছেন দুর্বল স্ত্রী জাতি, যাদের তাঁর সুকোমল পরশ ও আন্তরিক খোশালাপের অধিকার ও প্রয়োজন রয়েছে এবং যা তাদের দীর্ঘ রাস্তার কষ্ট ও সফরের ক্লান্তি দূর করবে।
ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বারের যুদ্ধ শেষে ফিরছিলেন তখন সাফিয়া বিনতে হুয়াই রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বিবাহ করেন, এবার যে উটের পিঠে সাফিয়া আরোহণ করবেন তার চার দিকে ঘুরে পর্দার জন্য কাপড় লাগানোর পর তিনি উটের পার্শে বসে তাঁর হাটুকে খাড়া করে দিলেন। অত:পর সাফিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা স্বীয় পা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাঁটুতে রেখে উঠে আরোহণ করেন।
অন্তর আকৃষ্টকারী সে দৃশ্যটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিনয়েরই বহি:প্রকাশ।
অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন বিজয়ী কমান্ডার, ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে দূত বা রাসূল, তিনি উম্মতকে শিক্ষা দিচ্ছেন যে, স্ত্রীকে সাহায্য করা, তার সাথে বিনয়ী হওয়া, তাদের কাজে সহায়তা এবং তাদেরকে সুখ ও মজা প্রদানে তাঁর সম্মান ও মর্যাদার কোন কমতি হবে না।
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতদেরকে যে সব অসীয়ত করেন তন্মধ্যে একটি হল:
«ألا واستوصوا بالنساء خيرًا».
'ওহে আমার উম্মত! তোমরা নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে'। -বুখারি, হাদিস: ৫১৮৬; মুসলিম, হাদিস: ১৪৬৮
উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর সাথে সম্পর্কিত একটি চমৎকার ঘটনাঃ
হ্যাঁ, চলুন, উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর শিক্ষনীয় একটি ঘটনা বলে সমাপ্তি টানি। আসলে এই পৃথিবীতে কোনো কিছুই পরিপূর্ণ নয়। হতে পারে না। পূর্ণতা তো জান্নাতে থাকবে। পার্থিব প্রত্যেক বিষয়ের মাঝে আল্লাহ তাআ'লা অপূর্ণতার একটি সীমাবদ্ধতা রেখে দিয়েছেন। পূর্ণিমার সুদর্শন চাঁদেও আছে কলঙ্ক। সুদর্শন সৌরভময় গোলাপেও রয়েছে কাটা। গুণবতী নারীর মধ্যেও কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক কেন হবে? কিন্তু এতদসত্বেও তাদের প্রতি সহানুভূতি, সহৃদয়তা আর প্রেম ভালোবাসার ডালি খুলে দিলে তখন এই পৃথিবীতেই নেমে আসে জান্নাতের অমীয় সুখের ঝর্ণাধারা। আমাদের পূর্বসূরীগণের জীবনের দিকে তাকালে এর অসংখ্য নজির চোখে পড়ে।
জানা যায়, একদা এক ব্যক্তি তার ঠোঁটকাটা স্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে হযরত উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর নিকট উপস্থিত হন। বাড়ির দরজায় এসে তাঁকে ডাক দিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। ইত্যাবসরে শুনতে পেলেন, হযরত উমারের স্ত্রীও তাঁর সাথে কথা-কাটাকাটি করছেন। এবং তিনি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলেন যে, স্ত্রীর উত্তপ্ত বাক্যবাণের মুখে হযরত উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু নীরবতাই অবলম্বন করে যাচ্ছিলেন।
এ অবস্থা দর্শনে লোকটি আর কোন কথা না বলে প্রস্থান করার চিন্তা করলেন এবং মনে মনে বলতে লাগলেন, ‘আমীরুল মু’মিনীনের যদি এই অবস্থা হয় অথচ তিনি খলীফা, কত কড়া মানুষ, তাহলে আমার আর কি হতে পারে?’
নিরুপায় হয়ে লোকটি চলে যেতে উদ্যত। ঠিক তখনই হযরত উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু দরজায় এসে হাজির। লোকটিকে যেতে দেখে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার প্রয়োজন না বলেই তুমি চলে যাচ্ছ কেন?’
লোকটি জানালেন, ‘যার জন্য এসেছিলাম তার জবাব আমি পেয়ে গেছি হুজুর! আমার স্ত্রী আমার সাথে বাগাড়ম্বর করে। বড় গলায় কথা বলে। সেই অভিযোগ নিয়ে আপনার কাছে এসেছিলাম। কিন্তু এসে তো দেখছি, আপনারও আমার মত একই অবস্থা?’
উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বললেন, ‘আমি সহ্য করে নিই ভাই! কারণ, আমার উপর তার অনেক অধিকার; সে আমার খানা পাক করে, রুটি তৈরী করে, কাপড় ধুয়ে দেয়, আমার সন্তানকে দুধ পান করিয়ে লালন-পালন করে, আমার যৌন চাহিদা পূরন করে,আমার হৃদয়ে শান্তি আনে, ইত্যাদি। তাই একটু সহ্য করে নিই।’
লোকটি বললেন, ‘আমীরুল মু’মিনীন! আমার স্ত্রীও তো অনুরূপ।’
উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বললেন, ‘তবে সহ্য করে নাও গো ভাই! সে তো সামান্য ক্ষণই রাগান্বিতা থাকে।’
অতএব, সুন্দর সৌরভময় গোলাপ তুলে তার সুঘ্রাণ নিতে হলে দু'একটি কাঁটার সামান্য আঘাত হাতে এসে ফুটবে বৈ কি? কাঁটার জন্য কেউ কি প্রস্ফুটিত গোলাপকে ঘৃণা করে? নারী হয়তো গোলাপের মত সুন্দর ও কোমল বলেই বাক্যবাণের কাঁটা দ্বারা মাঝে মাঝে নিজেকে রক্ষা করতে চান। -হুক্কুক্কুল মারআতিল মুসলিমাহ, কওসর আল-মীনাবী, পৃষ্ঠা- ৫২
প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসামান্য জীবন চরিত আলোচনা থেকে আমরা যদি সামান্য উপকৃত হতে পারি সেটাই আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা সীরাতে খাতামুল আমবিয়ার আলোকিত পথে আমাদের জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন।
২০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৫
নতুন নকিব বলেছেন:
নারীর উপরে পুরুষের মর্যাদা, নারী পুরুষের অধীন এবং বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে আল্লাহ তাআ'লার অঙ্গীকারে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে, আল্লাহ তাআ'লার বাণীর মাধ্যমে নারীর লজ্জাস্থান হালাল করার যে কথাগুলো বলেছেন সবই তো সত্য। এই বিষয়গুলোতে সমস্যা কোথায়?
প্রথমতঃ নারীর উপরে পুরুষের মর্যাদার বিষয়টি আমাদের ভালোভাবে বুঝতে হবে। মর্যাদাটা কিসের, সেটা বুঝতে হবে। মানুষ হিসেবে নারী পুরুষ সকলেই আল্লাহ তাআ'লার সৃষ্টির বিচারে সমান। এখানে কারও মর্যাদা কম নয়। কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে নারীর কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় নারীকে নির্দিষ্ট কিছু কাজের দায়িত্ব থেকে মুক্ত রেখেছে ইসলাম। প্রাপ্ত বয়স্ক একজন নারী প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতি মাসে কিছু দিন অসুস্থ থাকেন। এমনটা পুরুষের ক্ষেত্রে নেই। আল্লাহ তাআ'লা নারীকে নবী রাসূল হিসেবে পাঠাননি। কিন্তু এ কারণে নারীর মান সম্মান কমে যায়নি। বরং প্রত্যেক নবী রাসূলকেই কোনো না কোনো মা গর্ভে ধারণ করেছেন। প্রসব করেছেন। লালন পালন করে বড় করেছেন। দেখা যায়, মাতৃজাতি নবী রাসূল নন ঠিকই কিন্তু নবী রাসূলের জন্মদাত্রী সন্মানিত মাতা হিসেবে তাদের মর্যাদা বরং অনেক উর্ধ্বে। এই একই কারণে নারীকে ইমামতির দায়িত্ব দেয়া হয়নি। আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা বড় সাহাবি ছিলেন। হাজার হাজার হাদিস তার জানা ছিল। একজন নারীর পক্ষে ইমামতির দায়িত্ব পালন সম্ভব নয় বলেই নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইনতিকালের পরে তাকে ইমামতির এই দায়িত্ব দেয়া হয়নি।
মূলতঃ আল্লাহ তাআ'লা নারীকে সৃষ্টি করেছেন তার ভেতরে কমনীয়তা, মোহনীয়তা এবং আকর্ষন দিয়ে। নারীকে সৃষ্টিই করা হয়েছে জন্মগতভাবে দুর্বল করে। আপনি জানেন, মানব সৃষ্টির এই কাজটি কোনো মানুষ করেনি। করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআ'লা। একজন পুরুষ অবলীলাক্রমে আড়াই মন ওজনের একটা বস্তা মাথায় চাপিয়ে নিয়ে তা বহন করতে সক্ষম। একজন নারী তা পারেন না। কেন পারেন না? কারণ, নারী প্রকৃতগতভাবেই এই কাজটির জন্য উপযুক্ত নন। এমনিভাবে এমন আরও অনেক কাজ রয়েছে যা একজন পুরুষের জন্য করা খুবই সহজ হলেও একজন নারীর পক্ষে তা যেমন সম্ভব নয় তেমনি অশোভনীয়ও বটে। পক্ষান্তরে পুরুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে ঠিক তার বিপরীত স্বভাব দিয়ে। জগতের কঠোর কঠিন যত কাজ সেগুলো পুরুষের দায়িত্বে বর্তায়। মাঠে ঘাটের কঠিন সব কাজের দায়িত্ব তার, নারীর নয়।
দ্বিতীয়তঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের অধীন করে দেয়ার পেছনেও কারণ রয়েছে। যেমন- নারী একা একা অবাধে যেখানে ইচ্ছে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াতে পারেন না। অথচ একজন পুরুষ এটা স্বাভাবিকভাবেই পারেন। প্রশ্ন হচ্ছে, নারী কেন একা সফর করতে পারেন না? ইসলাম তাকে কেন এই অনুমতি দেয় না? এই অনুমতি না দেয়ার পেছনে অনেক কারণের একটি হচ্ছে, একজন নারী পথে ঘাটে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। কে তাকে সেবা দিবে? আপনি আমি আমরা কেউই চাব না যে, আমার স্ত্রী, বোন কিংবা মেয়েকে অন্য পুরুষ এসে সেবা করুন। কারও অনাকাঙ্খিত স্পর্শ এসে লাগুক- এমনটাও ভাবতে চাই না। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে ইসলামের অন্যতম ফরজ বিধান হজে গমনের ক্ষেত্রেও নারীকে একা যাওয়ার অনুমতি দেয়নি ইসলাম। অবশ্যই তার সাথে মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে।
নারীকে কোমল আকৃতি প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করার কারণে আল্লাহ তাআ'লাকে দোষারোপ করে লাভ নেই। তিনি এই জগত সংসারকে মানব জাতি দিয়ে সাজাতে চেয়েছেন। এর জন্য একটি নিয়ম প্রয়োজন ছিল। সেই নিয়মও তিনি বানিয়ে দিয়েছেন। তিনি নারী জাতির মাধ্যমে সন্তান জন্মদান পদ্ধতির সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা তৈরি করে দিয়েছেন। আর এর জন্য প্রয়োজন বলেই তিনি নারী চরিত্রকে কোমলতার ছোঁয়ায় ধন্য করেছেন। নারীকে কোমলতা দিয়ে সৃষ্টি করার পেছনে বহুবিধ কারণ রয়েছে। আল্লাহ পাক জানেন, একজন নারী মা হবেন। তার কোল জুড়ে সন্তান আসবে। পরম মমতা এবং ধৈর্য্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে সেই সন্তানকে বুকে আগলে রেখে লালন পালনের যাবতীয় দায় দায়িত্ব তাকে সামলাতে হবে। এগুলো মানুষের মহান স্রষ্টা আল্লাহ তাআ'লা সম্যক জ্ঞাত ছিলেন বলেই তিনি নারীকে এমন মেজাজ মর্জি দিয়ে, নরম শরম আকৃতি-প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যার ফলে নারী হয়ে উঠেছেন কোমলতা, মায়া-মমতা, প্রেম, প্রীতি ও ভালোবাসার প্রতীক। নারীর ভেতরে এতসব গুণাবলীর সন্নিবেশ ঘটার কারণে নারীর নিরাপত্তারও প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। নারীকে পুরুষের অধীন করে দিয়ে, শক্ত সামর্থ্যবান পুরুষের (হোক সে ভাই, বাবা কিংবা স্বামী অথবা এদের অবর্তমানে অন্য কোনো নিকটাত্মীয়) আয়ত্তাধীন করে দিয়ে নারীর সেই নিরাপত্তা বিধানের নির্দেশই দিয়েছে ইসলাম। নারীর মর্যাদা তাতে কমেনি বরং বেড়েছে। সবকিছু বুঝেশুনেও এসব বাস্তবতাকে যদি কেউ অস্বীকার করে, তার সাথে তর্কের মানে নেই।
আর তৃতীয়তঃ আল্লাহ তাআ'লার বাণীর মাধ্যমে নারীর লজ্জাস্থান হালাল করার কথায় লজ্জিত হবার কি আছে? বিয়ে পছন্দ না হলে তাদের জন্য অবশ্য ভিন্ন কথা। যখন যাকে যার ভালো লাগবে, তখন তাকে নিজের করে নিবে আবার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে ছুঁড়ে ফেলে দিবে। 'এলোমেলো করে দে মা, লুটেপুটে খাই' যাদের অবস্থা, সেই অবৈবাহিক সম্পর্ককে যারা আনন্দের মাধ্যম মনে করেন, যা পাশ্চাত্যের অধিকাংশ সমাজে অধিকহারে দেখা যায়, যে সমাজ বাস্তবতায় জন্মদাতা পিতার নাম পরিচয় এবং ঠিকানাবিহীন শিশুদের সংখ্যা অগুনতি, পাড়ায় পাড়ায় যাদের সরকারি উদ্যোগে এসব শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র চালু করতে হয়, সেসব ক্ষে্ত্রে আপনার কোনো আপত্তি আছে?
২০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৯
নতুন নকিব বলেছেন:
এই যে দেখলেন তো, একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত আপনাকে না দিয়েই কমেন্টের উত্তরটা দিয়ে ফেললাম। সে জন্য দুঃখিত! প্রিয় ভাই, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ প্রথম গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি রেখে যাওয়ায়। আপনার বুদ্ধিদীপ্ত এবং খোঁচা দেয়া মন্তব্য সবসময় উপভোগ্য। আল্লাহ পাক আপনাকে কল্যানের ভেতরে রাখুন।
কৃতজ্ঞতাসহ।
২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি খুব মন দিয়ে পড়লাম।
২০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৫
নতুন নকিব বলেছেন:
তা মন দিয়ে পড়ে কি পেলেন? কোনো কিছুই তো জানালেন না! আপনি তো মুফাসসিরের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেছিলেন! সূরা ভিত্তিক কি একটা সিরিজ লিখছিলেন সম্ভবতঃ। বিশাল কর্মযজ্ঞ বটে! সবচে' আজব ব্যাপার হচ্ছে, এক হরফ আরবি পড়তে না শিখেও এখন তাফসীর করা সম্ভব!!!
৩| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৮
নতুন বলেছেন: প্রথমতঃ নারীর উপরে পুরুষের মর্যাদার বিষয়টি আমাদের ভালোভাবে বুঝতে হবে। মর্যাদাটা কিসের, সেটা বুঝতে হবে। মানুষ হিসেবে নারী পুরুষ সকলেই আল্লাহ তাআ'লার সৃষ্টির বিচারে সমান। এখানে কারও মর্যাদা কম নয়। কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে নারীর কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় নারীকে নির্দিষ্ট কিছু কাজের দায়িত্ব থেকে মুক্ত রেখেছে ইসলাম। প্রাপ্ত বয়স্ক একজন নারী প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতি মাসে কিছু দিন অসুস্থ থাকেন। এমনটা পুরুষের ক্ষেত্রে নেই।
একজন নারী পুরুষের অধীন থাকতে হয় সারা জীবন। ছোট বেলায় বাবার অনুমুতি বিয়ের পরে স্বামীর অনুমুতি ছাড়া বাড়ীর বাইরে যেতে পারেনা।
পুরুষ ইচ্ছা করলেই ১, ২ , ৩ বা ৪ নারীকে বিয়ে করতে পারে।
পুরুষ ইচ্ছা করলেই ১ তালাক, ২ তালাক, ৩ তালাক দিয়ে তাকে নিয়ম মতন স্ত্রী থেকে ত্যাগ করতে পারে।
নারী ইচ্ছা করলেই সহজে তালাক দিতে পারেনা।
পুরুষ ইচ্ছা করলেই নারীকে মৃদু প্রহার করতে পারে। কিন্তু স্ত্রী স্বামীর গায়ে হাত তুলতে পারেনা।
পুরুষ ইচ্ছা করলেই স্ত্রীকে বিছানায় শারিরিক সম্পকের জন্য ডাকতে পরে, যখন খুশি তখন।
যদি নারী মানা করে তবে তাকে ফেরেস্তারা অভিষাপ দেয় এবং সৃস্টিকতাও তাদের উপরে ব্যাজার হয়।
আগের যুগে পিরিওড ম্যানেজ হয়তো কঠিন জিনিস ছিলো। কিন্তু এখন সেটা তেমন কঠিন জিনিস না। দুনিয়াতে কয়েক কোটি নারী পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে তারা প্রতি মাসে ছুটি নিয়ে ঘরে বসে থাকেনা।
তাই পিরিওডের বাহানায় তাদের ছোট করে রাখা কি ঠিক? নারী প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছে তাদের ইমামতি দিতে সমস্যা কি?
আপনি উপরে যেই বিষয়গুলি বলেছেন সেটা পুরুষত্রান্তিক ভাবনার কারনে বলছেন।
নারীকে পর্দা করতে বলার কারনটা পুরুষের অন্যায় থামাতে না পারা থেকে শুরু। যদি পুরুষ নারীকে উক্তক্য না করে তবে নারীর সাভাবিক পোষাক পড়তে বাধা কোথায়?
বাইরের সভ্য দেশে যেখানে পুরুষ অন্যায় করলে বিচার হয় সেখানে নারীরা তাদের ইচ্ছা মতন পোষাক পরে তাদের বোরকা পড়তে হয় না।
দ্বিতীয়তঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের অধীন করে দেয়ার পেছনেও কারণ রয়েছে। যেমন- নারী একা একা অবাধে যেখানে ইচ্ছে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াতে পারেন না। অথচ একজন পুরুষ এটা স্বাভাবিকভাবেই পারেন। প্রশ্ন হচ্ছে, নারী কেন একা সফর করতে পারেন না? ইসলাম তাকে কেন এই অনুমতি দেয় না? এই অনুমতি না দেয়ার পেছনে অনেক কারণের একটি হচ্ছে, একজন নারী পথে ঘাটে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। কে তাকে সেবা দিবে?
বিশ্বে প্রতিদিন কত নারী একা ভ্রমন করে তার কথা চিন্তা করেছেন? যদি সরকার পুরুষের অন্যায়ের বিচার ঠিক মতন করে তবে একা নারীকে কোনদিন ভয়ে পথ চলতে হবেনা। এটা সমাজের ব্যর্থতা সেটাকে নারীর দূর্বলতা কেন বানাচ্ছেন?
২০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৫
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার মতামতকে অবশ্যই শ্রদ্ধা করি। তবে এসব ভাবনা পশ্চিমের আধুনিকতার অন্ধকারে বাস করা লোকদের সাথে অনেকটা মিলে যায়। যাক, আপনার পুনরাগমনে কৃতজ্ঞতা।
ইসলাম নারীর সম্মান কমায়নি। বৃদ্ধি করেছে। শুধু বৃদ্ধিই করেনি। নারীকে তার মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে একমাত্র ইসলাম। লাইন লাইন ধরে উত্তর দেয়ার মত সময় নেই বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার?’
তিনি বললেন ‘তোমার মা’;
সে বলল, ‘তারপর কে?’
তিনি বললেন, ‘তোমার মা’;
সে আবারও বলল, ‘তারপর কে?’
তিনি বললেন, ‘তোমার মা’।
সে পুনরায় বলল, ‘এরপর কে?’
তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা’। -বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ
প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, ‘জান্নাত মায়ের পদতলে’। -মুসলিম
প্রিয় ভাই, মায়ের জাতিকে সম্মান এবং মর্যাদার শ্রেষ্ঠাসনে অভিসিক্ত করতে এরকম কোনো কথা অন্য কোথাও আছে, শোনাতে পারবেন?
অনেক ভালো থাকবেন।
৪| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৯
মাহিরাহি বলেছেন: ।১৯৭১ সালের আগ পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের মহিলারা ভোট দিতে পারতেন না। কিছু মহিলাকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে, ভোট দেয়ার অধিকার পাওয়ার জন্য। আফগানিস্থানে নারীরা ভোটের অধিকার পায় ১৯১৯ সালে।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:০৩
নতুন নকিব বলেছেন:
সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বৈষম্য অনেক দেশে নারীকে অধিকার বঞ্চিত করে রেখেছে।
বহু দিন পরে আপনাকে পেলাম। নিশ্চয়ই ভালো ছিলেন। আগমনে কৃতজ্ঞতা।
শুভকামনাসহ।
৫| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৭
নতুন বলেছেন: আপনার মতামতকে অবশ্যই শ্রদ্ধা করি। তবে এসব ভাবনা পশ্চিমের আধুনিকতার অন্ধকারে বাস করা লোকদের সাথে অনেকটা মিলে যায়। যাক, আপনার পুনরাগমনে কৃতজ্ঞতা।
ইসলাম নারীর সম্মান কমায়নি। বৃদ্ধি করেছে। শুধু বৃদ্ধিই করেনি। নারীকে তার মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে একমাত্র ইসলাম।
পশ্চিমা আধুনিকতা কাছ থেকে দেখেছি তাদের সব কিছুই খারাপ না। খারাপ যা আছে তা সব সমাজেই খারাপ, এমনকি পশ্চিমা সমাজেও অনেক প্রচলিত কিছু খারাপ মনে করে এমন ভদ্রসমাজে অনুসরন করেনা।
ইসলামী সরিয়াতে সম্ভবত ২ নারীর সাক্ষি ১ পুরুষের সমান। স্বামী যদি স্ত্রীকে মারধোর করে তার কোন সাজা ইসলামে বলা নেই। স্ত্রী পাল্টা স্বামীকে মারের জবাবে মার দিতে পারবেনা। অনেক কিছুই আছে যেটা পুরুষতান্ত্রীর মগজ থেকেই ইসলামে ঢুকেছে। এখানে হয়তো নারী শিশু হত্যার থেকে ভালো কিছু আছে কিন্তু নারীকে ছোট রেখেই নিয়ম গুলি বানানো হয়েছে।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:১৩
নতুন নকিব বলেছেন:
ভাই, আসলে যুক্তি দিলে শেষ হবে না। পক্ষে বিপক্ষে হাজারও যুক্তি আনা সম্ভব। সেই অর্থহীন যুক্তি দিয়ে লাভ নেই, বরং নারীর সম্মান, মর্যাদা, ইজ্জত আবরুর সুরক্ষায়, নারীর নিরাপত্তা বিধানে ইসলাম সর্বোত্তম পদ্ধতি বাতলে দিয়েছে।
বিশ্বে এখন নারী-পুরুষ সমতা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। অনেকেই বলেন, ইসলাম নারীকে স্বাধীনতা দেয়নি। সমতা দেয়নি। একদল মানুষ নারীর পক্ষ নিয়ে ‘নারীবাদী’ হয়ে গেছেন। তাদের দেখাদেখি মুসলিম সমাজেও এ ধরনের চিন্তা ছড়িয়ে পড়ছে। যার ছায়া এসে পৌঁছেছে আমাদের বাংলাদেশেও। অনেকের মনেই প্রশ্ন ইসলামে নারীরা পর্দায় কেন? সম্পত্তিতে ভাইয়ের অর্ধেক কেন? দুই নারীর সাক্ষী এক পুরুষের সমান কেন ইত্যাদি। এ বিষয়ে সঠিক বুঝ লাভ করতে হলে, চোখ থেকে পশ্চিমা অপপ্রচারের রঙিন চশমা খুলতে হবে। বুঝতে হবে যে, পাশ্চাত্যের নারী-পুরুষ সমতার ধারণা ভুল।
অতএব, এ ধারণা থেকে চিন্তা করলে ইসলামের সমতার দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যাবে না। চিন্তাটি করতে হবে মানুষের স্রষ্টা ও বিধাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নীতি অনুযায়ী। ইসলামে নারী ও পুরুষের মর্যাদা অবশ্যই সমান। এমনকি নানা পর্যায়ে নারীর মর্যাদা পুরুষের চেয়ে বহুগুণ বেশি। তবে মানবজীবনে কেবল মর্যাদা দিয়ে জীবনের সবকিছু চলে না।
এখানে মর্যাদা, ক্ষমতা, অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ে মানুষে ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়। নারীর মর্যাদা ক্ষমতা ও অধিকার পুরুষের চেয়ে বেশি। কিন্তু দায়িত্ব কম। আবার নারীর একটি দায়িত্ব আছে যা শত পুরুষের দায়িত্বের চেয়ে বড় ও ভারী। এর নাম মাতৃত্ব। এটি কোনো পুরুষ পালন করতে পারবে না। মর্যাদাও এমনই।
হাদিসখানা পূর্বোক্ত প্রতিমন্তব্যে উল্লেখ করার পরেও আবার বলছি-
হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করল, হযরত আমি কার সেবা করব?
নবীজী উত্তরে বললেন, ‘তোমার মায়ের’।
লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করল, এরপর কার?
হযরত জবাব দিলেন, ‘তোমার মায়ের’।
লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাসা করল, হে রাসূল এরপর কার?
প্রিয় নবী আবারো জবাব দিলেন, ‘তোমার মায়ের’।
লোকটি ফের প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল এরপর কার?
তখন চতুর্থবারের মতো জবাব দিতে গিয়ে নবী করিম সা. বললেন, তোমার বাবার। -মুসলিম শরিফ
এ প্রশ্নোত্তরে নারীর মর্যাদা যে পুরুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি তা কি স্পষ্ট নয়? এরপর ধরা যাক, নারীর জীবন জীবিকার কথা।
পৃথিবীর সব নারী ও তাদের শিশুরা পুরুষদের কাঁধেই আমানত হয়ে আছে। এটি আল্লাহর প্রাকৃতিক বিধান। শরিয়তও প্রকৃতি অনুযায়ীই তৈরি। এরপরও নারীর মালিকানা ও নিজ অঙ্গনে কর্তৃত্ব ইসলামে স্বীকৃত। তবে, নারীর মাতৃত্ব, নারীত্ব, সতিত্ব, ঈমান ও সম্মান রক্ষার্থে তাদের সেফটির ওপর জোর দিয়েছে।
পুরুষের চালচলন, জীবিকার কঠোর বোঝা, কঠিন দৈহিক শ্রম, অনিরাপদ চলাচল ইত্যাদি থেকে নারীকে দূরে রেখেছে। এটি তার প্রতি অবহেলা নয় বরং তার বিকল্পহীন দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্যই করেছে। কেননা, মানব শিশুর জন্ম, ধারণ-লালন, সংসারের পরিচালনা, পুরুষের শান্তিময় আশ্রয় সবই নারীর কাজ। এ হিসাবে নারীকে সুখি, নিরাপদ, নির্ঝঞ্ঝাট, পবিত্র ও সুরক্ষিত রাখা ইসলামের অভিপ্রায়।
তবে, নারীর মাতৃত্বের প্রয়োজনেই প্রকৃতি তাকে যে বৈশিষ্ট্য, নিয়মিত অসুস্থতা, শারীরিক গঠন, স্বভাবগত মায়াময়তা ইত্যাদি দিয়েছে, সেসব অস্বীকার করে বা বিকৃত করে পুরুষের সঙ্গে নারীর নিঃশর্ত অংশগ্রহণ ইসলামসম্মত নয়। যে জন্য নারী পুরুষে অবাধ মেলামেশা শরিয়তে হারাম। প্রয়োজনে শরিয়তের শর্ত পালন সাপেক্ষে, পর্দা, দৃষ্টি সংযম ইত্যাদি পালন করে আর্থ সামাজিক লেনাদেনা বৈধও রেখেছে।
কেবল ইসলামি উম্মাহর ইমারত (খেলাফতের প্রধান) ও মুসলিম জামাতের ইমামত (পুরুষের জামাতের ইমামতি) ছাড়া নারী অন্য সবকিছুতেই ভূমিকা রাখতে পারে। এটি নারীর প্রতি অবজ্ঞা নয়, বরং মাতৃত্বের বৈশিষ্ট্যের প্রতি পরম শ্রদ্ধা। তবে, অধিক স্নেহ, নম্রতা ও কোমলতা এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভীরুতা, অমনোযোগিতা, পরিবেশ জ্ঞানের স্বল্পতা দরুণ বোধের সীমাবদ্ধতার জন্য (অল্প ব্যতিক্রম ছাড়া) সাধারণত নারীরা সবসময় সবক্ষেত্রে স্বাভাবিক মন-মানসিকতা ধরে রাখতে পারে না।
তাই, গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্রে তাদের সাক্ষ্য দু’জন মিলে একজনের সমান করা হয়েছে। তবে, এটিও আইনগত ক্ষেত্র ছাড়া জীবনের সব ক্ষেত্রে নয়। এটি উচ্চতর প্রজ্ঞাময় মহান সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধান্ত। প্রকৃতির ওপর মানুষের যেমন হাত নেই, অভিযোগ নেই, ঠিক তেমনই শরিয়তের ওপরও মানুষের হাত নেই, অভিযোগ নেই, থাকতে পারে না।
সুতরাং ইসলামের আলোয় যখন আপনি সব বিষয় দেখবেন, তখন মনে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না। কারণ, ইসলাম মহান সৃষ্টিকর্তার বিধান। বান্দাদের সম্পর্কে তার চেয়ে ভালো আর কে জানে? কিসে তাদের মঙ্গল, তা তিনি ছাড়া আর কে বুঝবে? মুসলিম নারীরা কত সম্মানে অবস্থান করছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখলে দুনিয়ার মানুষ আর যাই করুক, মুসলিম নারীদের জীবন নিয়ে ঈর্ষা করবেই।
অনেক ভালো থাকুন।
৬| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২৫
নতুন বলেছেন: ইসলামের পর্দা প্রথা এবং কাঠমোল্যাদের ব্যক্ষা বত`মানে একজন নারীকে সাভাবিক মানুষের মতন জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় পানিটাও সাভাবিক ভাবে খেতে দেয় না।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩৮
নতুন নকিব বলেছেন:
এটা ঠিক বলেছেন। ইসলাম মধ্যপন্থা অবলম্বনের পক্ষে। অতি বেশি কড়াকড়ি না করে সকল কাজেই স্বাভাবিক মধ্যপন্থার নীতি গ্রহণ করা উচিত।
তবে এর বাইরে যারা ১০০০ মার্ক এর পরিক্ষায় ৯৮০ নম্বর পেয়ে সর্বোচ্চ রেজাল্টের মত বিশেষ কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম তাদেরকে যেমন পরিক্ষা পূর্ব প্রস্তুতিতে অধিক পরিমানে খাটনাখাটনির কারণে বেকুব কিংবা বোকা বলা মুর্খতা, তেমনি ইসলাম ধর্মের বিধি বিধান যারা পূর্ণ সতর্কতার সাথে সঠিক নিয়মে পালন করতে সচেষ্ট তাদেরকে তিরষ্কার করা অন্যায়। আলেম উলামাগণই তো ইসলামের ধর্মীয় বিষয়াদি মানুষের সামনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন এটাই স্বাভাবিক। কুরআন হাদিসের সহি বাণী প্রচার করলে আমিও হয়তো আপনার গালি শোনার উপযুক্ত হব।
শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
৭| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২৬
নতুন বলেছেন: যদিও কোরানে বলা হয়েছে স্বালীন পোষাক পরিধান করতে যেটাতে কোন সমস্যা নাই কিন্তু অতীতে মোল্যাদের ব্যক্ষাতে আজকের পরিস্হিতি তে এসেছে।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৪৬
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার কথা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কিছু কিছু লোক ইসলাম ধর্মের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষদের বিভ্রান্ত করে চলেছে। এটা অতীতেও ছিল।
তবে, সত্যিকারের হকপন্থী আলেম উলামাদের থেকে নতুন কোনো ব্যাখ্যা আসলে আসেনি। রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সঙ্গী সাথী সাহাবায়ে কেরামের আচরিত আমলই তারা ব্যাখ্যা করে বুঝান। কুরআন এবং হাদিসের মাধ্যমে অবিকল সংরক্ষিত হয়ে সেসব আমল আজও আমাদের সামনে বিদ্যমান।
তবে সকল আমলের ক্ষেত্রেই কুরআন এবং হাদিসের বর্ণনার বাইরে গিয়ে কারও পক্ষ থেকে বাড়াবাড়ি কাম্য নয়।
ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সবসময়।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩৯
নতুন বলেছেন: ‘নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের। কিন্তু নারীদের উপর পুরুষদের কিছু মর্যাদা আছে।' -সূরা আল-বাক্বারা (২) : ২২৮
‘সাবধান! তোমরা নারী অর্থাৎ, স্ত্রীদের জন্য মঙ্গলকামী হও। যেহেতু তারা তো তোমাদের হাতে বন্দিনী।’ -তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আদাবুয যিফাফ ২৭০পৃঃ
‘তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। যেহেতু তাদেরকে তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকারে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে বরণ করেছ এবং আল্লাহর বাণীর মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান হালাল করে নিয়েছ।’ -সহিহ মুসলিম
হাদিস অনুযায়ী নারীর উপরে পুরুষের মর্যাদা !!
নারীরা পুরুষের অধীন কারন তারা বন্দি !!!
লজ্জাস্হান হালাল করেছে মানে একটা অধিকার পুরুষ অর্জন করেছে। !!!