নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ছবিঃ অন্তর্জাল।
মির্জাগঞ্জের ওলিয়ে কামেল হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফা (র.)
বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে দক্ষিন বঙ্গের পটুয়াখালী জেলা। এই জেলার অন্যতম একটি জনপদ নদী বিধৌত উর্বরা, সুফলা এবং সুজলা মির্জাগঞ্জ। ঐতিহ্যবাহী মির্জাগঞ্জের সাথে জড়িয়ে রয়েছে এর সুদীর্ঘকালের ইতিহাস। চৈতা, ভয়াং এর পীর সাহেবগণসহ অনেক সিদ্ধ পুরুষের পদচারণা এবং লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহর জিকিরে মুখরিত হয়েছে এই জমিন। বহু সাধক, দরবেশ এবং আল্লাহওয়ালা বুজুর্গানে দ্বীনের সুদীর্ঘ দ্বীনি খেদমত, রাহনুমায়ি এবং দরাজদিল মেহনতে ধন্য এবং সিক্ত হয়েছে এখানকার মাটি। মির্জাগঞ্জের প্রখ্যাত সাধক, ওলিয়ে কামেল হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফা (র.) তাদেরই একজন।
হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফা (র.) সাহেব ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের একজন উঁচু মানের ব্যক্তিত্ব। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার বিষয়ে সঠিকভাবে তেমন কিছু জানা না গেলেও তিনি অধিক পরিমানে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করতেন বিধায় প্রতীয়মান হয় যে, তিনি অন্যবিদ পড়াশোনা জেনে থাকুন কিংবা না-ই থাকুন, আরবী লেখাপড়ায়, বিশেষ করে পবিত্র কুরআন পাঠ করতে জানতেন এবং পবিত্র কুরআনুল কারিমকে তিনি অত্যাধিক মুহাব্বত করতেন। কুরআনে হাকিমের তিলাওয়াতকে তিনি তাঁর জীবনের অন্যতম ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
জন্ম এবং পরিচয়ঃ
জীবনের সুদীর্ঘ সময় মির্জাগঞ্জে অতিবাহিত করলেও হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফা (র.) -এর জন্মস্থান মূলতঃ শরিয়তপুর জেলায়। শরিয়তপুরের ধামসী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তবে তাঁর জন্ম তারিখ সঠিকভাবে কোনোক্রমেই জানা সম্ভব হয়নি। তাঁর প্রকৃত নাম ইয়ার উদ্দিন খাঁ। পিতার নাম মরহুম সরাই খাঁ।
মির্জাগঞ্জে আগমনঃ
জানা যায়, হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফা (র.) -এর বয়স যখন ৩৮ বছর তখন তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র পুত্র কলেরা রোগে মারা যাওয়ার আঘাত সহ্য করতে না পেরে পরবর্তীকালে বেশিরভাগ সময়ই তিনি মসজিদে করতেন এবং জায়নামাজে বসে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতে নিমগ্ন থাকতেন। স্ত্রী এবং পুত্র বিয়োগের পরপরই তিনি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ আগমন করেন। এখানে এসে তিনি জামা টুপি ইত্যাদি সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন। এ কারণে একসময় তাঁর নামের শেষে 'খলিফা' শব্দটি যুক্ত হয়ে যায় এবং তিনি ইয়ার উদ্দিন খলিফা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি দর্জির কাজের পাশাপাশি বাহালী বা মুদি মনোহরি ইত্যাদির ব্যবসায়ও যুক্ত হন।
ব্যবসা করার জন্য তিনি যেতেন স্থানীয় বিভিন্ন হাটেঃ
আগেই উল্লেখ করেছি যে, মরহুম ইয়ার উদ্দিন খলিফা সাহেব রহ. বাহালী দোকানও করেছেন। তিনি তাঁর এই ব্যবসার উদ্দেশ্যে মির্জাগঞ্জ, সুবিদখালী, বিঘাই ও কাকড়াবুনিয়াসহ আশপাশের বিভিন্ন হাটে গমন করতেন। এই কাজে যাতায়াতের জন্য তাঁর একটি নৌকা ছিল। ভাঙ্গাচোরা সেই নৌকাটি তিনি ব্যবহার করতেন। ব্যবসার কাজে তাকে সাহায্য করতেন তার একমাত্র বিশ্বাসী খাদেম মির্জাগঞ্জ নিবাসী মরহুম গগন মল্লিক।
দোকানেও চলতো তাঁর তিলাওয়াতঃ
জানা যায়, তাঁর জিকির অথবা কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত তিনি বন্ধ রাখতেন না। যে দিন যে হাটে যেতেন সেখানে দোকান খুলে মালামাল সাজিয়ে রেখে অভ্যাস মত তিনি তাঁর কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত অব্যাহত রাখতেন। তিলাওয়াতের সময় কেউ সওদাপাতি নিতে এলে তিনি খরিদ্দারকে চাহিদা মত মাল মেপে নিয়ে চটের নিচে টাকা রেখে যেতে অনুরোধ করতেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল, কেউ তাকে ঠকাবে না। তবে অনেকে তার সরলতার সুযোগে দ্রব্য বেশি নিলে অথবা টাকা না দিলে অথবা কেউ তাকে কিছু বললে খলিফা সাহেব নিষেধ করতেন এবং বলতেন যে, এমনটা করো না, এতে লোকটা লজ্জা পাবে।
ঝড়ের দিনে নৌকা ঘাটে পৌঁছে যাওয়ার ঘটনাঃ
সাধারণতঃ গগন মল্লিক বৈঠা ধরে নৌকা বাইতেন এবং খলিফা সাহেব গলুইতে বসে নৌকার পানি সেচ করতেন। কোনো এক দিনের ঘটনা। বিঘাই হাটে গেছেন সওদাপাতি বিক্রি করার জন্য। যথারীতি বাজার শেষ। মির্জাগঞ্জ ফেরার পালা সেখান থেকে। ফেরার পথে উম্মত্ত পায়রা নদীতে শুরু হল ভীষণ ঝড় তুফান। নদীর বিরূপ অবস্থা দর্শনে গগন মল্লিক নৌকা বেঁধে রেখে ঝড় থামার পরে রওনা দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু খলিফা সাহেব রহ. তাকে অভয় দিলেন এবং তাকে উজু করে নামাজ আদায় করতে বললেন। খলিফা সাহেবের কথামত গগন মল্লিক নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন। কিন্তু নামাজ শেষ করে তিনি আশ্চর্য্য হয়ে লক্ষ্য করলেন যে, তার নামাজ পড়াকালীন সময়ের মধ্যেই নৌকা নিরাপদে মির্জাগঞ্জ ঘাটে এসে পৌঁছে গেছে। তিনি ভেবে পেলেন না যে, ঝড়ের মধ্যে নৌকাটি বেয়ে আনলো কে! খলিফা সাহেবের জীবনে এমন আরও অনেক অলৌকিক ঘটনা রয়েছে।
অবশেষে নিজের ভুল বুঝতে পারলেন দারোগা মেছের আহমাদঃ
খলিফা সাহেবের বসবাসের ঝুপড়ি ঘরটি ছিল শ্রীমন্ত নদীর একেবারে পাড়ে। এর সামান্য দূরেই ছিল তৎকালীন সময়ে মির্জাগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি। কোনো একটি বিষয়ে ফাঁড়ির দারোগা মেছের আহমাদ খলিফা সাহেবকে ভুল বুঝে বসেন এবং তাঁকে 'ভন্ড ফকির' ইত্যাদি বলে গালাগালি করেন। ঐদিন রাতে দারোগা সাহেবের শরীরে ভীষণ যন্ত্রণা হয় এবং রাতে ঘুমাতে পারেননি। পরবর্তীতে দারোগা মেছের আহমাদ একদিন তাঁকে স্থানীয় শ্রীমন্ত নদীর অপর তীরে দেখার পরক্ষণেই আবার তাঁর বাসগৃহের সামনে নদীর ঘাটে উজু করতে দেখে তার ভুল ভেঙ্গে যায়। এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পরে তিনি তাঁর কাছে যান এবং নিজের অন্যায় আচরণের জন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করলে খলিফা সাহেব রহ. তাকে বুকে জড়িয়ে নেন এবং এ ঘটনা কাউকে না বলতে অনুরোধ করেন।
ইঞ্জিন চালিত নৌযান আজও গতি কমিয়ে অতিক্রম করে কবর এলাকা
ইঞ্জিন চালিত সকল নৌযান গতি কমিয়ে অতিক্রম করে থাকে খলিফা রহ. এর কবর এলাকাটি। এর পেছনে একটি কারণ জানা যায় খলিফা রহ. এর জীবনী পাঠে। ঘটনাটি ব্রিটিশ শাসনামলের। খলিফা রহ. তখন পৃথিবীতে বেঁচে নেই। তিনি ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর কবরটি নদীর একেবারে কিনারে। বলতে গেলে, পানি ছুঁই ছুঁই অবস্থায় ছিল। ঘটনাটি হচ্ছে- একদিন পটুয়াখালী থেকে আমতলীগামী একটি স্টিমারে বিপদগ্রস্ত দু'জন লোক আসছিলেন। তাদের কাছে কোনো কারণে ভাড়া পরিশোধ করার মত অর্থ ছিল না। তারা টিকেটের টাকা না দিতে পারায় স্টিমারের কর্মচারীগণ তাদেরকে অপমান করেন এবং খলিফা রহ. এর কবরের অনতি দূরে মির্জাগঞ্জ ঘাটে জোরপূর্বক নামিয়ে দেয়। অগত্যা উক্ত দুই ব্যক্তি খলিফা সাহেব রহ. এর দরবারে এসে তাঁর কবর যিয়ারত করে সেখানকার মসজিদে বসে কান্নাকাটি করতে থাকেন। কিছুক্ষন পরে স্টিমারটি সুবিদখালী ঘাটে ভিড়ে সেখান থেকে পুনরায় একই পথে ফিরে আসছিল। ফেরার পথে মাজারের কাছাকাছি পশ্চিম পাশের একটি স্থানে এসে ঘটনাক্রমে শ্রীমন্ত নদীতে ডুবে যায়।
পরবর্তীতে স্টিমারটি তোলার জন্য স্টিমারের মালিক পক্ষ যখন ডুবুরি প্রেরণ করেন, ডুবুরি পানির নিচে গিয়ে দেখতে পান যে, একজন লোক স্টিমারের ভিতরে কুরআন শরিফ তিলাওয়াত করছেন। ঘটনাটি জানার পর স্টিমার কোম্পানির লোক ভুল স্বীকার করে দরবারের মাদরাসা ও ইয়াতিমখানায় মানত করেন। পরবর্তীতে স্টিমারটি তারা সহজেই পানির নিচ থেকে তুলে আনতে সক্ষম হন। এরপর থেকে অদ্যাবধি লঞ্চ, স্টিমারসহ সমস্ত ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও জাহাজ মাজারের কাছাকাছি এসে সম্মান প্রদর্শনার্থে ইঞ্জিনের গতি কমিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয় এবং কবরের এলাকা অতিক্রম করার পরে পুনরায় স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকে।
পরপারের যাত্রায় খলিফা সাহেব রহ.
খলিফা সাহেব রহ. দীর্ঘ দিন মির্জাগঞ্জে অতিবাহিত করেন। একদিন রাতে তাঁর ভীষণ জ্বর হয়। খাদেম গগন মল্লিক রাতে তাঁর কাছে থাকতে চাইলেন, কিন্তু তিনি নিষেধ করলেন। পরের রাতে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ায় গগন মল্লিক বাড়ী গেলেন না। গগন মল্লিককে কাছে ডেকে বললেন, 'গগন তুমি এখানেই থেকো, আল্লাহ তাআ'লা তোমাকে খাওয়াবেন।'
এর একটু পরেই খলিফা সাহেব শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না- লিল্লাহি ওয়া ইন্না- ইলাইহি রাজিউন।
আলো ছড়াচ্ছে দরবারের মাদরাসাগুলোঃ
মির্জাগঞ্জের যে স্থানে খলিফা সাহেব রহ. ছিলেন সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি ফাজিল (স্নাতক) মাদরাসা, হিফজ মাদরাসা, জামে মসজিদ এবং ইয়াতিমখানা। শত শত শিক্ষার্থী যুগ যুগ ধরে এখান থেকে দ্বীনি ইলম শেখার সুযোগ পাচ্ছেন। এখানে প্রতি বছর ২৪ ও ২৫ ফাল্গুন বাৎসরিক মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাহফিলে প্রায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। এ ছাড়া প্রতি দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো ভক্ত ছুটে আসেন খলিফা রহ. এর কবর যিয়ারত করতে।
এখানে বিদআতী কাজকর্ম তেমন চোখে পড়ে নাঃ
দেশের অনেক দরবারের মত কুসংস্কার এবং বিদআতের ছড়াছড়ি দেখা যায় না এই দরবারে। আলহামদুলিল্লাহ, এখানের বাৎসরিক মাহফিলে দীর্ঘ বছর যাবত ছারছিনা দরবারের পীর সাহেবগণ পর্যায়ক্রমে এসে এসব কাজ থেকে মানুষদের সতর্ক করেছেন। দ্বীনের সঠিক পথ ও পন্থা বাতলেছেন। দক্ষিন বঙ্গের মানুষদের হেদায়েতের পথে তারা একেকজন দিশারীর ভূমিকায় ছিলেন। আল্লাহ তাআ'লা তাদের খেদমতকে কবুল করুন।
২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৮
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: বহু লোক এলাকায় খারাপ কাজের জন্য এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে দুরে কোথাও নিরিবিলি বসবাস করে এবং পরবর্তিতে প্রসিদ্ধ লোক হয়ে যায়।এমনি একজন হবে হয়তো।বর্তমানে এক অলী আরেক অলীকে বলে কাফের।
কয়েক দিন আগে একজন প্রসিদ্ধ আলেম কে সিলেটে পিটিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।মারতে পারলে পুড়য়ে ফেলতো।ওনি প্রায় সকল ফকির অলী মাজারী দেরকেই বেদাত বলেন।
৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:০৫
নতুন বলেছেন: পরবর্তীতে স্টিমারটি তোলার জন্য স্টিমারের মালিক পক্ষ যখন ডুবুরি প্রেরণ করেন, ডুবুরি পানির নিচে গিয়ে দেখতে পান যে, একজন লোক স্টিমারের ভিতরে কুরআন শরিফ তিলাওয়াত করছেন। ঘটনাটি জানার পর স্টিমার কোম্পানির লোক ভুল স্বীকার করে দরবারের মাদরাসা ও ইয়াতিমখানায় মানত করেন।
এতো সব অলৌকিক ঘটনা আমাদের দেশেই কেন বেশি ঘটে? আর সকল মুসলমানেরা বিশ্বাসও করে।
অবশ্যই এই ঘটনার কোন প্রমান পাবেন না। আর আমাদের দেশের নদীর পানির নিচে কত পরিস্কার সেটা তো আপনার জানাই আছে। সেখানে ডুবুরিরা কতকিছু দেখতে পারে বুঝতেই পারছেন। আর সেখানে পানির নিচে তারা দেখতে পেয়েছে একজন তিলাওয়াত করছে???
আজগুবি জিনিসে বিশ্বাসের একটা সীমা থাকা দরকার
৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: খুব কামিলদার ছিলেন। মাশাল্লাহ।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩৩
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মহান আল্লাহর একজন অন্যতম অলীর কথা বিস্তারিত তুেল ধরায় ধন্যবাদ।
মহাকালের বিচার দেখেও কজনায় বুঝতে পারে?
শুভেচ্ছা রইল