নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

লজ্জা: ঈমানের পূর্ণতায় অপরিহার্য এক অনুষঙ্গ

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:৪৯

অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত।

লজ্জা: ঈমানের পূর্ণতায় অপরিহার্য এক অনুষঙ্গ

জ্বি, ঈমানের পূর্ণতায় অপরিহার্য এক অনুষঙ্গ লজ্জা। লজ্জা ঈমানের অন্যতম গুণ বা বৈশিষ্ট্য। লজ্জা নারী পুরুষ নির্বিশেষে আদর্শ মানুষের ভূষন। লজ্জা শরম না থাকলে মানুষ ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে পাপ-পঙ্কিলতা, দুর্নীতি-দুঃশাসন, অন্যায়-অবিচার থেকে শুরু করে নিন্দনীয় এবং দূষনীয় সকল কাজে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বস্তুতঃ লজ্জাশীলতা মানুষকে অন্যায় অপরাধমূলক কর্ম থেকে ফিরিয়ে রাখার অন্যতম উপকরণ। লজ্জা আদম সন্তানকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের পথে চলতে সাহায্য করে এবং তাঁদের অসমর্থিত পথ ও পন্থা এবং অবাধ্যতা থেকে পরিপূর্ণরূপে বিরত থাকতে সাহায্য করে। অন্য দিকে লজ্জা ঈমানের অন্যতম একটি। লজ্জার পূর্ণতার মাধ্যমে ঈমানের পূর্ণতা হাসিল হয়। লজ্জা মানুষকে প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে তোলে। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার লজ্জা নেই, সে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। অতএব, বিবিধ কারণে ইসলামের অপরিহার্য অনুষঙ্গ লজ্জার গুরুত্ব এবং লজ্জাশীলতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অনুসারীদের সবিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। আলোচ্য নিবন্ধে লজ্জার শব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ, ইসলামে এর গুরুত্ব, উপকারিতার পাশাপাশি লজ্জাহীনতার কুফল তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাওফিক দান করুন। তিনিই সর্বোত্তম তাওফিকদাতা।

শাব্দিক অর্থে লজ্জাঃ

লজ্জা বাংলা শব্দ। ইংরেজি প্রতিশব্দ Shame, আর ইংরেজিতে এটির সমার্থবোধক নামবাচক শব্দ হিসেবে যেসব শব্দ ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে রয়েছে hesitation, humiliation, mortification, chagrin, ignominy, loss of face, shamefacedness, embarrassment, indignity, abashment, discomfort, discomfiture, discomposure, guilt, remorse, contrition
compunction, pity, misfortune, crying shame, cause for regret, source of regret, sad thing, unfortunate, thing, bad luck, ill luck, bummer, crime, sin প্রভৃতি।

ক্রিয়াবোধক শব্দ হিসেবে humiliate, mortify, make someone feel ashamed, chagrin, embarrass, abash, chasten, humble, put someone in their place, take down a peg or two, cut down to size, show up ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ডিকশনারিতে এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- a painful feeling of humiliation or distress caused by the consciousness of wrong or foolish behavior. অথবা, a regrettable or unfortunate situation or action.

লজ্জা -এর আরবি প্রতিশব্দ حیاء । এটি حیی মাসদার বা শব্দমূল হতে উদ্ভূত। অর্থ: লজ্জা, শরম ইত্যাদি। ডিকশনারিতে এটির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে-

التعريف: الحياء لغة مصدر حيی وهو: تغير وانكسار يعتري الانسان من خوف ما يعاب به ويذم

অর্থাৎ, যে কাজ করলে মানুষ নিন্দনীয়, অপমানিত হওয়ার আশঙ্কা করে সেই কাজ থেকে বিরত থাকা।

পারিভাষিক অর্থে লজ্জাঃ

শরীয়তের পরিভাষায় লজ্জার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে-

وفی الشرع: خلق يبعث علی اجتناب القبيح من الافعال والاقوال ويمنع من التقصير في حق ذي الحق ،

অর্থাৎ, হায়া তথা লজ্জা এমন এক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা মানুষকে সকল খারাপ কথা ও কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে এবং হকদারকে তার হক পৌঁছে না দেয়ার অপরাধ থেকে বিরত রাখে। -আল মাউসূয়াতুল ফিকহিয়্যা, খন্ড ১৮, পৃষ্ঠা ২৫৯

হায়া এবং খজল (حیاء و خجل) এর পার্থক্যঃ

আরবি খাজলুন (خجل) শব্দের শাব্দিক অর্থও লজ্জা, শরম ইত্যাদি। তবে হায়া এবং খজল (حیاء و خجل) এর মধ্যে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান।
খাজলুন (خجل) হলো অতীতকালের সাথে সম্পৃক্ত অর্থাৎ অতীতের কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রমের কারণে ভবিষ্যতে লজ্জিত হওয়া। পক্ষান্তরে হায়া (حیاء) হলো লজ্জার কারণে অপরাধমূলক যে কোনো কথা ও কাজ থেকে সার্বক্ষণিক বিরত থাকা। অর্থাৎ লজ্জিত হওয়ার ভয়ে অপরাধমূলক কোনো কথা কিংবা কাজে না জড়ানো। -আল মাউসূয়াতুল ফিকহিয়্যা, খন্ড ১৮, পৃষ্ঠা ২৫৯

কুরআনুল কারিমে হায়া (حیاء) বা লজ্জা শব্দটির কিছু ব্যবহারঃ

হায়া (حیاء) বা লজ্জা শব্দটি কুরআনুল কারিমে বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রসঙ্গে ব্যবহার হয়েছে এই শব্দটি। উদাহরণতঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ইরশাদ করেন-

قال الله تعالى ان الله لا يستحي ان يضرب مثلا ما بعوضه فما فوقها ،

আল্লাহ তাআ'লা নিঃসন্দেহে মশা বা তদূর্ধ্ব বস্তু দ্বারা উপমা পেশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। -সূরা বাকারা, আয়াত ২৬

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা অন্যত্র ইরশাদ করেন-

قال الله تعالى ان ذلكم كان يؤذي النبي فيستحي منكم الله لا يستحيي من الحق ،

নিশ্চয়ই এটা নারীর জন্য কষ্টদায়ক তিনি তোমাদের কাছে সংকোচবোধ করেন কিন্তু আল্লাহ তাআলা সত্য কথা বলতে লজ্জা বা সংকোচবোধ করেন না। -সূরা আহযাব, আয়াত ৫৩

হায়া (حیاء) তথা লজ্জা সম্পর্কিত হাদীসঃ

কুরআনুল কারিমের মত হাদিসেও বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় হায়া (حیاء) তথা লজ্জা শব্দটির। এক হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ الْعَقَدِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً، وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ

আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঈমানের ষাটেরও অধিক শাখা রয়েছে। আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের অন্যতম একটি শাখা। -মুসলিম ১/১২ হাঃ ৩৫, আহমাদ ৯৩৭২, সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৯,হাদিসের মান: সহিহ

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ أَخْبَرَنَا مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الأَنْصَارِ وَهُوَ يَعِظُ أَخَاهُ فِي الْحَيَاءِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ دَعْهُ فَإِنَّ الْحَيَاءَ مِنَ الإِيمَانِ

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমা থেকে বর্ণিত। একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক আনসারীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি তাঁর ভাইকে তখন (অধিক) লজ্জা ত্যাগের নাসীহাত করছিলেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেনঃ ওকে ছেড়ে দাও। কারণ, লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। -মুসলিম ১/১২ হাঃ ৩৬, আহমাদ ৪৫৫৪, সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৪ হাদিসের মান: সহিহ

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ وَاصِلٍ الأَحْدَبِ، عَنِ الْمَعْرُورِ، قَالَ لَقِيتُ أَبَا ذَرٍّ بِالرَّبَذَةِ، وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ، وَعَلَى غُلاَمِهِ حُلَّةٌ، فَسَأَلْتُهُ عَنْ ذَلِكَ، فَقَالَ إِنِّي سَابَبْتُ رَجُلاً، فَعَيَّرْتُهُ بِأُمِّهِ، فَقَالَ لِيَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ يَا أَبَا ذَرٍّ أَعَيَّرْتَهُ بِأُمِّهِ إِنَّكَ امْرُؤٌ فِيكَ جَاهِلِيَّةٌ، إِخْوَانُكُمْ خَوَلُكُمْ، جَعَلَهُمُ اللَّهُ تَحْتَ أَيْدِيكُمْ، فَمَنْ كَانَ أَخُوهُ تَحْتَ يَدِهِ فَلْيُطْعِمْهُ مِمَّا يَأْكُلُ، وَلْيُلْبِسْهُ مِمَّا يَلْبَسُ، وَلاَ تُكَلِّفُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ، فَإِنْ كَلَّفْتُمُوهُمْ فَأَعِينُوهُمْ

মা‘রূর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি একবার রাবাযা নামক স্থানে আবূ যর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) আর তাঁর ভৃত্যের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ একবার আমি জনৈক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন আল্লাহর রসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, আবূ যার! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো অন্ধকার যুগের স্বভাব বিদ্যমান। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তা‘আলা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরিধান করে, তাকেও তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না, যা তাদের জন্য অধিক কষ্টদায়ক। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সহযোগিতা করবে। -মুসলিম ২৭/১০ হাঃ ১৬৬১, আহমাদ ২১৪৮৮, হাদিসের মান: সহিহ

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِنَّ مِنَ الشَّجَرِ شَجَرَةً لاَ يَسْقُطُ وَرَقُهَا، وَإِنَّهَا مَثَلُ الْمُسْلِمِ، فَحَدِّثُونِي مَا هِيَ ‏”‏‏.‏ فَوَقَعَ النَّاسُ فِي شَجَرِ الْبَوَادِي‏.‏ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ وَوَقَعَ فِي نَفْسِي أَنَّهَا النَّخْلَةُ، فَاسْتَحْيَيْتُ ثُمَّ قَالُوا حَدِّثْنَا مَا هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏”‏ هِيَ النَّخْلَةُ ‏”‏‏.‏

আব্দুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা বললেনঃ গাছগাছালির মধ্যে এমন একটি গাছ আছে যার পাতা ঝরে না। আর তা মুসলিমের উদাহরণ, তোমরা আমাকে অবগত কর ‘সেটি কি গাছ?’ তখন লোকেরা জঙ্গলের বিভিন্ন গাছ-গাছালির নাম ধারণা করতে লাগল। ‘আবদুল্লাহ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, ‘আমার ধারণা হল, সেটা হবে খেজুর গাছ।’ কিন্তু (আমি ছোট থাকার কারণে) তা বলতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। অতঃপর সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাদের বলে দিন সেটি কি গাছ?’ তিনি বললেনঃ ‘তা হচ্ছে খেজুর গাছ।’ -মুসলিম ৫০/১৫ হাঃ ২৮১১, আহমাদ ৬৪৭৭, হাদিসের মান: সহিহ

লজ্জাশীলতার ফায়দা বা উপকারিতাঃ

লজ্জাহীনতার পরিণাম যেমন অপমান অপদস্ততা দিয়ে শুরু হয়ে মানবিক আদর্শহীনতা, চরিত্রহীনতা ইত্যাদির মত মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়, তেমনিভাবে লজ্জাশীলতার উপকারিতাও বহুবিধ। লজ্জাশীলতার ফায়দা বা উপকারিতার কিছু দিক এখানে তুলে ধরা হলো-

এক. লজ্জা ঈমানের অন্যতম শাখাঃ

এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً، وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ

আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঈমানের ষাটেরও অধিক শাখা রয়েছে। আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের অন্যতম একটি শাখা। -মুসলিম ১/১২ হাঃ ৩৫, আহমাদ ৯৩৭২, সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৯

দুই. লজ্জা মানবের ভূষণঃ

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম এরশাদ করেছেন

عن انا انسٍ قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما كان الفحش في شيء قط الا شانه و لا کان الحياء في شيء قط الا زانه،

কোন কিছুতে অশ্লীলতা, তাকে শুধুমাত্র কলুষিত করে আর কোনো কিছুতে লজ্জা, তাকে শুধুমাত্র সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১১৮

তিন. লজ্জা মহান রব্বুল আলামীনের বিশেষ গুণঃ

এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

ان الله حيي ستير يحب الحياء والستر ،

নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত লজ্জাশীল ও গোপনকারী। তিনি লজ্জা ও অন্তরালকে পছন্দ করেন। -সুনানে আবী দাউদ, হাদীস ৭০

চার. লজ্জা ইসলামের স্বভাবঃ

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان لكل دين خلقا وخلق الاسلام الحياء ،

রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক ধর্মের একটি বিশেষ স্বভাব আছে। আর ইসলামের স্বভাব হল লজ্জা। -মুয়াত্তা মালেক, হাদীস ১৩৩১

প্রিয় নবীজী ছিলেন সর্বাধিক লজ্জাশীলঃ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। যার অনেক প্রমান হাদিস থেকে পাওয়া যায়। হযরত সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব লজ্জাশীল ছিলেন। যে জিনিসিই তাঁর কাছে চাওয়া হতো, তিনি তা দিয়ে দিতেন।

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুমারী অপেক্ষাও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। তিনি যখন কোনো কিছু অপছন্দ করতেন, তখন আমরা তাঁর পবিত্র চেহারা দেখেই বুঝে ফেলতাম।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে লজ্জা নিন্দনীয়ঃ

লজ্জা থাকার গুরুত্ব অপরিসীম এবং সবিশেষ গুরুত্ববহ, তবে এর বিপরীতে এমন কিছু স্থান ও অবস্থা রয়েছে যেসব ক্ষেত্রে লজ্জা পোষন করা নিন্দনীয় এবং ক্ষতিকরও বটে। এমন ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে-

এক. জ্ঞানার্জনে লজ্জাবোধ করা নিন্দনীয় এবং ক্ষতিকরঃ

জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে লজ্জাবোধ করার সুযোগ নেই। লজ্জা রেখে শেখার বিষয়ে কার্পণ্য করা কাম্য নয়। বরং এটি নিন্দনীয় এবং ক্ষতিকর।হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم نعم النساء نساء الانصار لم يمنعهم الحياء ان یتفقهن في الدين ،

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, আনসারী নারীগণ উত্তম, কারণ, লজ্জা তাদের দ্বীনের জ্ঞানার্জনে প্রতিবন্ধক হয় না। -সহিহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮

দুই. সত্য প্রকাশে লজ্জা করা উচিত নয়ঃ

সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রেও লজ্জা করা উচিত নয়। এমনটি করা হলে মিথ্যে ডালপালা বিস্তার করে সত্যের মৃত্যু ঘটাবে। একসময় সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হবে মিথ্যের পরিবিস্তারের ভেতর দিয়ে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

وَاللَّهُ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ

‘আল্লাহ তায়ালা সত্য বলতে লজ্জাবোধ করেন না।’ -সুরা আহযাব, আয়াত ৫৩

লজ্জার প্রকারঃ

১। প্রকৃতিগত
২। এবং আল্লাহ তাআ'লার মারেফাত হতে অর্জিত

অর্থাৎ প্রথমতঃ আল্লাহ তায়ালা কাউকে লজ্জা নামক মহান সম্পদ জন্মগতভাবে দান করেন। এ ব্যাপারে নবী কারিম সল্লালাহ সাল্লাম বলেন-

الحياء لا ياتي الا بخير ،

লজ্জাশীলতা শুধু পূণ্য ও মঙ্গলই আনয়ন করে। নিশ্চয়ই লজ্জা নিন্দনীয় কাজ-কর্ম থেকে বিরত রাখে এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে উৎসাহ প্রদান করে। -সহিহ মুসলিম, হাদীস ৪৬

আর দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ তাআ'লার মারেফাতের মাধ্যমে মানুষ ঈমানের এমন এক উচ্চতায় আসীন হয়ে থাকেন যা মানুষকে সকল গুনাহ, অপরাধ এবং পাপ-পঙ্কিলতা থেকে বিরত রাখে। আর এটাই হলো ইহসানের সর্বোচ্চ স্তর। এই গুণ মানুষকে মুজাহাদা করে অর্জন করতে হয়।

লজ্জা সম্পর্কে সালফে সালেহীনের কিছু বাণীঃ

আল্লামা আবু মুসা রহ. বলেন, ‘আমি যখন অন্ধকার ঘরে গোসল করি তখন আমার পিঠ সোজা করি না, যতক্ষণ না প্রভুর লজ্জায় আমি কাপড় গ্রহণ করি।’ -ফাতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী ১/৩৩৮

সুলায়মান রহ. বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যখন কোন বান্দার ধ্বংস চান, তখন তার লজ্জা ছিনিয়ে নেন। আর যখন তিনি তার লজ্জা ছিনিয়ে নেন তখন তাকে অত্যন্ত ঘৃণ্য ধ্বংসে নিপতিত করেন।’

শেষের প্রার্থনা...

সুতরাং, সত্য প্রকাশের বিষয় ছাড়া সব কাজেই লজ্জাশীলতা, লজ্জাবোধ মানব জীবনে জাগ্রত থাকা জরুরি। লজ্জা বা সম্ভ্রমই মানুষের জীবনে সুফল বয়ে আনে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে লজ্জাশীলতার গুণ অর্জন করার তাওফিক দান করুন। লজ্জাশীলতার অনিন্দ্য সুন্দর গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে আদর্শ জীবন গড়ার কিসমত নসিব করুন।

তথ্যসুত্র-

১। কুরআনুল কারীম।
২। তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন, মুফতী শফী রহ.।
৩। তাফসীরে ইবনে কাছীর, হাফেজ ইমাদুদ্দীন ইবনে কাছীর।
৪। আল জামে লি আহকামিল কোরআন, ইমাম কুরতুবী রহ.।
৫। তাফসীরে বয়ানুল কোরআন, হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ.।
৬। সহীহ বুখারী, আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে ঈসমাইল বুখারী রহ.।
৭। সহীহ মুসলিম, আল্লামা মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আল কুশাইরী রহ.।
৮। সুনানে আবু দাউদ, আবু দাউদ সুলাইমান ইবনে আল-আশআস আল-আজদি আল-সিজিস্তানি রহ.।
৯। জামে আত্ তিরমিযী, আবু ঈসা মুহাম্মদ ইবনে ঈসা আত তিরমিজি (র.)।
১০। মিশকাতুল মাসাবীহ।
১১। ফাতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী।
১২। মুসনাদে আহমাদ।
১৩। লিসানুল আরব, আল্লামা জামালুদ্দীন আবুল ফজল ইবনে মানযুর।
১৪। আল মু’জামুল ওয়াফী, ড. মুহাম্মাদ ফজলুর রহমান।
১৫। আল মু’জামুল ওয়াসীত, মাজমায়ু লুগাতিল আরাবিয়্যা কায়রো, মিশর।
১৬। আল মুনজিদ, আল্ লুগাতুল আরাবিয়্যা, আরবী-আরবী।
১৭। আল মাউসূয়াতুল ফিকহিয়্যা,কুয়েত।
১৮। উইকিপিডিয়া।
১৯। গুগল।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:১২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এখনতো এইসব কথা অচল ভাই, বলবে মৌলবাদি

০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:২৯

নতুন নকিব বলেছেন:



'অচল' ঠিক তাদের কাছে যারা সত্যের বিরোধিতায় লিপ্ত। আশ্চর্য্যের কিছু নেই, কিছু লোক তো এমন সর্বযুগে এবং সর্বকালেই ছিলেন। তাদের ভয়ে সত্য বলা বন্ধ করে দেয়া ঠিক হবে না। এদের উৎপাত যখন চরম পর্যায়ে ছিল, প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো তখনই ঝুঁকি নিয়ে সত্যের প্রচার প্রসারে অগ্রগামী ছিলেন। পৃথিবীকে উত্তম আদর্শের সন্ধান দিয়েছিলেন।

কথা হচ্ছে, ভালোর সাথে খারাপ থাকবেই। এটা জগতের নিয়ম। এর মধ্যেই আমাদের চলতে হবে।

অনেক শুভকামনা। ধন্যবাদ।

২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:৪৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সংবিধানে আস্হা রাখাই হচ্ছে ইমান।

৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৪২

পাঁচ-মিশালি বলেছেন: হজরত নতুন নকিব ,
আস্‌সালামু আলাইকুম

মুসলমানদের পাপ-পঙ্কিলতা, নিন্দনীয় এবং দূষনীয় কাজ গোপন রাখা অন্য সব মুসলিমের কর্তব্য।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বিশ্বাসী যদি অপর কোন বিশ্বাসীর ক্রটি-বিচ্যুতি দুনিয়াতে আড়াল করে রাখে আল্লাহ তাআলা তার ক্রটি-বিচ্যুতি কিয়ামত দিবসে আড়াল করে রাখবেন।কাফের ,বিধর্মীদের চারিত্রিক ত্রুটি -বিচ্যুতি নিয়ে হাটে হাঁড়ি ভাঙ্গার অনুমতি আছে কিন্তু একজন বিশ্বাসী হয়ে অন্য কোন বিশ্বাসীর ত্রুটি -বিচ্যুতি জন সমক্ষে আনা কদাপি যাবে না। হাদীসটি পড়ুন :
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বিশ্বাসী যদি অপর কোন বিশ্বাসীর ক্রটি-বিচ্যুতি দুনিয়াতে আড়াল করে রাখে আল্লাহ তাআলা তার ক্রটি-বিচ্যুতি কিয়ামত দিবসে আড়াল করে রাখবেন।(Source: Ṣaḥīḥ Muslim 2590 Grade: Sahih (authentic) according to Muslim)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) পুনঃনিরীক্ষণঃ সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
সমস্ত মুসলমান অন্য মুসলমানদের পাপ-পঙ্কিলতা, নিন্দনীয় এবং দূষনীয় কাজ গোপন রাখার তাওফিক প্রাপ্ত হউন।

৪| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: আমি খুবই লাজুক মানুষ।

৫| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:২৬

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: যাদের লজ্জা নাই এদের ঈমানের ভিত নড়বড়ে,
লজ্জা ইমানের অঙ্গ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.