নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
সাহরি-ইফতারের দোআ এবং মাসয়ালা ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুন্নাত
ছবি: সংগৃহীত
সাহরি-ইফতারের দোআ এবং মাসয়ালা
রহমত, নাজাত ও মাগফিরাত আর শান্তি-শৃঙ্খলা এবং সৌহার্দ্যের বার্তা নিয়ে আবারও আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে মহিমান্বিত মাহে রমজান। এ মাস মুসলমানদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: (তরজমা) হে মুমিন সকল! তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। -সূরা বাকারা-১৮৩
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, (অন্য বর্ণনায়) ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ পড়ে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। -বুখারি শরিফ: হাদিস নং ১৯০১
রমজান আসে আমাদের অন্তর জগৎ প্রস্তুত করতে। যেন সেখানে খোদাভীতি জায়গা করে নিতে পারে। বান্দার মনে যদি একবার খোদার প্রেম বসে যায়, তবেই সে সফল জীবনের চাবিকাঠি হাতে পাবে। রমজানের শুরুর দিনে রোজা সংক্রান্ত জরুরি কিছু বিষয় জেনে নেয়া যাক।
রোজার নিয়তঃ
রমজানের রোজার জন্য সুবহে সাদিকের পূর্বে মনে মনে এই নিয়ত করবে যে, ‘আমি আজ রোজা রাখবো’ অথবা দিনে আনুমানিক ১১টার পূর্বে মনে মনে নিয়ত করবে যে, আমি আজ রোযা রাখলাম। মুখে নিয়ত করা জরুরি নয়, বরং মুস্তাহাব। (রদ্দুল মুহতার: ২/৩৭৭)
রোজার নিয়তের ক্ষেত্রে আরবি ভালভাবে বলতে পারলে ও বুঝলে আরবিতে নিয়ত করা যাবে। অন্যথায় বাংলায় নিয়ত করাই ভালো।
সাহরি ও ইফতারঃ
রোজাদারের জন্য সাহরি খাওয়া ও ইফতার করা সুন্নাত। বিশেষ কিছু না পেলে সামান্য খাদ্য বা কেবল পানি পান করলেও সাহরির সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।
ইফতার খুরমা কিংবা খেজুর দ্বারা করা সুন্নাত। তা না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। ইফতার আয়োজনে অপচয় বা লোক দেখানো বিষয়গুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।
ইফতারের দোয়াঃ
ইফতারের কিছুক্ষণ পূর্বে এ দোয়াটি বেশী বেশী পড়তে হবে
يَا وَا سِعَ الْمَغْفِرَةِ اِغْفِرْلِىْ
উচ্চারণ: ইয়া ওয়াসিয়াল মাগফিরাতি, ইগফিরলী।
অর্থঃ হে মহান ক্ষমা দানকারী! আমাকে ক্ষমা করুন। (শু‘আবুল ঈমান: ৩/৪০৭)
بِسْمِ اللهِ وَعَلى بَرَكَةِ اللهِ
বিসমিল্লাহি ওয়া ‘আলা বারাকাতিল্লাহ বলে ইফতার শুরু করবে এবং ইফতারের পর নিম্নের দুটি দোয়া পড়বেঃ
اَللّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلي رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়ালা রিযকিকা আফতারতু।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোজা রেখেছি, এবং তোমারই দেয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করলাম। (আবূ দাঊদ: ১/৩২২)
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْـتَلَّتِ العُرُوْقُ وَثَبَتَ الاَ جْرُ اِنْ شَاءَ الله تَعَا لى উচ্চারণ: যাহাবাযযমা ওয়াবতাল্লাতিল উরুকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহু তায়ালা।
অর্থঃ পিপাসা দূরিভূত হয়েছে, ধমনীসমূহ সতেজ হয়েছে, এবং ইনশাআল্লাহ রোজার সওয়াব নিশ্চিত হয়েছে। (আবূ দাঊদ: ১/৩২১)
কারো দাওয়াতে ইফতারি করলে মেজবানের উদ্দেশে এই দোয়া পড়বেঃ
اَفْطَرَعندكم الصائمون واكل طعامكم الابرار وصلت عليكم الملئكة
উচ্চারণ: আফতারা ইনদাকুমুস সায়িমুন ওয়া আকালা তাআমুকুমুল আবরার ওয়া সাল্লাত আলাইকুমুল মালাইকা।
অর্থঃ আল্লাহ করুন যেন রোজাদাররা তোমাদের বাড়ীতে রোজার ইফতার করে এবং নেক লোকেরা যেন তোমাদের খানা খায় এবং ফেরেশতারা যেন তোমাদের উপর রহমতের দু‘আ করে। -আসসুনানুল কুবরা, নাসাঈ ৬:৮১
গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুন্নাতঃ
রমজানের রোজা পালনের সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুইটি অংশ রয়েছে। রোজা পালন করতে যার প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। তার প্রথমটি হলো শেষ রাতের সাহরি। আর দ্বিতীয়টি হলো সন্ধ্যায় ইফতার। রোজা পালনে ইফতার ও সাহরির রয়েছে সুন্নাত পদ্ধতি।
সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে রোজার সূচনা হয় আর ইফতার করার মাধ্যমে রোজা সম্পন্ন করা হয়। সুতরাং ইফতার ও সাহরি সুন্নাত পদ্ধতিতে করাই আবশ্যক।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত কিছু কিছু রুসুম-রেওয়াজ ও ভুল ধারণার কারণে সাহরি ও ইফতারের সুন্নাতগুলো যথাযথভাবে মেনে চলা হয় না। অথচ সুন্নাতের অনুসরণে সাহরি-ইফতার যেমন অনেক উপকারি তেমনি রোজাগুলোও হবে অনেক সুন্দর।
সাহরি খাওয়াঃ
সাহরি খাওয়া সুন্নাত। হাদিসে পাকে সাহরি খাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘আমাদের ও অন্যান্য কিতাবের অধিকারী জাতির (ইয়াহুদি ও খ্রিস্টান) রোজার পার্থক্য সাহরি খাওয়া।’ -মুসলিম
অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা সাহরি না খেয়ে রোজা পালন করে থাকে। এ জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন অল্প হলেও সাহরি খাওয়া সুন্নাত। সাহরি খাওয়ায় রয়েছে কল্যাণ।
সাহরি খাওয়ার সময়ঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের শেষ মুহূর্তে সাহরি খাওয়ার কথা বলেছেন। রাতের মধ্য ভাগে কিংবা আজানের আগ মুহূর্তে সাহরি খাওয়া উভয়টিই সুন্নাতের পরিপন্থী।
হাদিসে এসেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাহরি বিলম্বে (রাতের শেষভাগে) গ্রহণ করো।’ -তিবরানি
সাহরি খাওয়ার উত্তম সময়ঃ
আজানের কিছুক্ষণ আগেই সাহরি খাওয়া উত্তম এবং সুন্নাত। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে- হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহরি ও (ফজর) নামাজের মধ্যে পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত পরিমাণ সময় অবশিষ্ট থাকত।’ -বুখারি
আধুনিক যুগের ফকিহদের মতে, কুরআনুল কারিমের পঞ্চাশ আয়াত তারতিল সঙ্গে তথা যথানিয়মে ধীরস্থিরভাবে তেলাওয়াত করতে বিশ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়। তাই আজানের ২০ মিনিট আগে সাহরি খাওয়া শেষ করা সুন্নাত।
সাহরিতে খাবারের পরিমাণঃ
ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার থাকার পরও অনেকে সামান্য খাবার ও পানি দিয়ে নামমাত্র সাহরি করে থাকেন। এমনটি ঠিক নয়। কেননা সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে রোজা শুরু করা সুন্নাত। সাহরিতে রয়েছে কল্যাণ। তাই খুব বেশি এবং একেবারে কম না খেয়ে পরিমিত পরিমাণ তথা সুন্নাত পদ্ধতিতে সাহরি খাওয়া উত্তম।
সাহরিতে অধিক খাবার খেলে বান্দা রোজার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। কেননা অতিরিক্ত খাবার শরীরে আলস্য তৈরি করে। ফলে মানুষ যেমন ইবাদতমুখী হতে পারে না আবর জৈবিক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে অনাহারী ও ক্ষুধায় ক্লেষ্ট মানুষের কষ্ট অনুভব করা যায় না।
পক্ষান্তরে নাম মাত্র খাবার বা পানি গ্রহণ সাহরি করলে শারীরিক শক্তি একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যায়। ফলে ইবাদত-বন্দেগি করাই দুষ্কর হয়ে পড়ে। সাহরির খাবারের পরিমাণ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন-
‘মানুষ স্বাভাবিক ক্ষুধায় যতটুকু খাবার গ্রহণ করে, সাহরিতে সেই পরিমাণ খাওয়া মুস্তাহাব। অর্থাৎ খুব বেশি বা কম নয়; বরং মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা।’ -মাজমাউল উলুমি ওয়াল হিকাম
আজান চলাকালীন সাহরি খাওয়াঃ
রোজা ফরজ ইবাদত। অনেক সময় দেখা যায়, সাহরি খাওয়া অবস্থায় আজান শুরু হয়ে যায়। এমনটি কোনোভাবে কাম্য নয়। ফরজ রোজা পালনের জন্য সাহরির সময়ের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। সুতরাং কারো সাহরির সময় যদি আজান হয়ে যায়; তবে সঙ্গে সঙ্গে খাবার পরিহার করতে হবে।
সাহরি খাওয়ার পর না শোয়াঃ
সাহরি খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়া সুন্নাতের পরিপন্থী কাজ। শারীরিকভাবেও তা ক্ষতিকর। সাহরি খেয়ে জামাআতে নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে উপস্থিত হওয়া উত্তম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসে ফজরের নামাজ আদায় করে মসজিদে ইবাদত করতেন, সাহাবিদের দ্বীনের শিক্ষা দিতেন। সূর্যোদয়ের পর ইশরাকের নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরতেন।
ইফতারের সুন্নাত পদ্ধতিঃ
যথাসময়ে ইফতার করাও সুন্নাত। ইফতারের ক্ষেত্রেও রয়েছে কিছু করণীয় এবং দিকনির্দেশনা। যা পালন করা সুন্নাত ও উত্তম। তাহলো-
দ্রুত ইফতার করাঃ
ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা সুন্নাত। এ সময় সাংসারিক কাজ বা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত থাকা সুন্নাত পরিপন্থী কাজ। হাদিসে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (দেরি না করে) দ্রুত ইফতারকারী কল্যাণ লাভ করতে থাকে।’ -বুখারি ও মুসলিম
আজানের সঙ্গে সঙ্গে ইফতারঃ
মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা। ইফতার করার জন্য আজান শেষ হওয়ার অপেক্ষা করা ঠিক নয়। আর আজান শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষার কথাও কোথাও বলা হয়নি। বরং আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য রমজানের রোজায় কল্যাণকর বিষয়গুলো সহজ করতে চান। আল্লাহ বলেন-
‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান। কঠোরতা চান না।’ -সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫
আজানের উত্তর দেয়াঃ
ইফতারের সময় রোজাদারের জন্য আজানের উত্তর দেয়া আবশ্যক নয়। বরং হাদিসের নির্দেশনা হলো- রোজাদার ও রোজা নয় এমন সব ব্যক্তির প্রতি নির্দেশনা হলো-
‘তোমরা যখন আজান শুনবে, মুয়াজ্জিন যেমন বলে তেমন বলবে।’ -সহিহ মুসলিম
ইফতারে বেশি সময় ব্যয় না করাঃ
ইফতারের জন্য বেশি সময় ব্যয় করা, নামাজ আদায়ে দেরি করা কিংবা জামাআতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা মারাত্মক নিন্দনীয় কাজ। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে আতিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামান্য ইফতার গ্রহণ করে দ্রুত নামাজ আদায় করে নিতেন।’
ইফতারের সময় দোয়া করাঃ
দোয়া কবুলের মুহূর্তগুলোর মধ্যে ইফতারের সময়ও একটি। অনেকেই গল্প-গুজবের মধ্য দিয়ে ইফতার করে থাকেন। তাই এ সময় গল্প না করে দোয়া করার মাধ্যমে সুন্নাতের আমল করা। আবার ঘরের নারীরা এ সময় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাদের উচিত, এ সময় দোয়া করা। হাদিসে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। পিতামাতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া ও মুসাফিরের দোয়া।’ -মুসনাদে আহমদ
ইফতার অপচয় না করাঃ
অপচয় সুন্নাত পরিপন্থী কাজ। চাই তা ইফতার হোক কিংবা অন্য খাবার। আর সংযমের মাসে ইফতারের বাড়াবাড়ি ও জৌলুস করাও ঠিক নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
‘তোমরা খাও ও পান করো। অপচয় কোরো না।’ -সুরা আরাফ : আয়াত : ৩১
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত সাহরি ও ইফতারে সুন্নাত বিষয়গুলো মেনে চলা। হাদিসের ওপর আমল করা। সাহরি ইফতারের কুসংস্কার ও মন্দ বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাহরি ও ইফতারের সুন্নাতের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: এমন কোনো দোয়া আছে যেটা পড়লে ক্ষুধা লাগবে না? এই দোয়া আমাদের দেশের জন্য খুব দরকার।