নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিদায়ের প্রাক্কালে রোজাদারের কাছে রমজানের বারতা

১১ ই মে, ২০২১ সকাল ৯:৫২

ছবিঃ অন্তর্জাল।

বিদায়ের প্রাক্কালে রোজাদারের কাছে রমজানের বারতা

পৃথিবীর যেখানে, যে প্রান্তে, যে জনপদেই মুসলিম রয়েছে, সকলের প্রতি আমাদের হৃদয় নিংড়ানো অভিনন্দন এই জন্য যে তারা এই করোনা মহামারি আক্রান্ত সময়ে এসেও মহান মুবারক মাস মাহে রমজানের পবিত্রতায় সিক্ত হয়েছেন, রোজা পালন করে নিজেদের তাপিত প্রাণ শীতল করেছেন, নিজেদের আত্মার তৃপ্তি পরিতৃপ্তি অর্জনের পথে ধাবিত হয়েছেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার সন্তুষ্টি এবং রেজামন্দি হাসিলের প্রচেষ্টায় কল্যানের কাজে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন। শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যাবে না সেই মহামহিয়ান রব্বে কারিমের যিনি আমাদের পুনরায় এই ২০২১ সালের রমজানপ্রাপ্তির অতুল সৌভাগ্য দানে ধন্য, কৃতার্থ এবং সৌভাগ্যমন্ডিত করেছেন। তিনি যদি রমজানের আগে আমাদের উঠিয়ে নিতেন অথবা যদি আমাদের অসুস্থ করে দিতেন, যদি অক্ষম করে দিতেন, যদি বিরূপ এবং প্রতিকুল অবস্থায় ফেলে রাখতেন, যদি ইবাদতের গুরুত্ব এবং মূল্য অনুধাবনের মত চিন্তা এবং ভাবনার ক্ষমতা তিরোহিত করে উদভ্রান্ত করে রাখতেন, যদি তাকে চেনার, বুঝার এবং ডাকার মাহাত্ম আত্মস্থ করার মত দিল, দেমাগ এবং মস্তিষ্ক না দিতেন, যদি তাঁর পথ 'সিরাতুল মুস্তাকিমে' চলার তাওফিক না দিতেন- তাহলে তো আমরা রমজানের স্বাদ, সুফল ও মর্যাদা বুঝতে পারতাম না, রমজান দ্বারা উপকৃত হতে পারতাম না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার অনুগ্রহ তিনি ঈমান ও ইসলামের সঙ্গে, সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায়, নিরাপদ ও নিশ্চয়তার মধ্যে রোজা অতিবাহিত করার সুযোগ দান করেছেন। রমজানের শুরুতে আমরা আনন্দ প্রকাশ করেছি এবং পরস্পরকে অভিনন্দন জানিয়েছি, মাহে রমজানের শুভেচ্ছা এবং শুভকামনায় অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছি। দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম সাধনা সমাপনান্তে এখন বেদনাভারাক্রান্ত এমন একটি বিদায়ের ক্ষন আমাদের সামনে উপস্থিত, যখন আমরা পরস্পর পরস্পরকে সান্ত্বনা দেব এবং ধৈর্য্যধারণে উৎসাহিত করব, কল্যানকর কাজ অব্যাহত রাখার প্রেরণা জাগিয়ে তুলতে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাব। কারণ, রহমত, বরকত, ক্ষমা এবং নাজাতের ফল্গুধারা বইয়ে দেয়া প্রিয় মাহে রমজান চলে যাচ্ছে আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে। প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা যেমন আমাদেরকে ব্যথিত করে, অন্তরকে কাঁদায়, চোখকে অশ্রুসিক্ত করে, বিচ্ছেদ আর বিরহের কষ্টগুলো আমাদের মনের আকাশে কালো মেঘের সৃষ্টি করে, পবিত্র মাহে রমজানও তো ঠিক তেমনই, হৃদয়ে আনন্দের হিল্লোল বইয়ে দেয়া, ইবাদতের মওসুম, ইবাদতের বসন্তকাল খ্যাত পরম প্রিয় মুবারক এক মাস আমাদের।

নিতান্ত আফসোস এবং দুঃখবোধ হয়, আমরা অধিকাংশ মানুষই মাহে রমজানের বিদায়ের প্রাক্কালে এসব অনুভূতি লালন করি না, আমাদের ভেতরে এই অনুভব ও অনুভূতিরই উপস্থিতি নেই যে, পবিত্র মাহে রমজান আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে, আমাদের ভাব ও ভাবনায় নেই যে কী অমূল্য সময় জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের। রমজান আবারও আসবে। যত দিন আল্লাহর ইচ্ছা—তিনি পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখেন রমজান আসবে, প্রতিবছরই আসবে, যথাযথ মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে আসবে, রোজাদাররা রোজা রাখবে, মুসল্লিরা মসজিদ আবাদ করবে; কিন্তু প্রশ্ন হলো আমরা থাকব কি না? আর যদিও থাকি, তবে কী অবস্থায় থাকব?

সুতরাং এ বছর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা যে রমজান দান করেছিলেন তাঁর একান্ত অনুগ্রহ ছিল। এ অনুগ্রহ লাভে আমরা যেমন আনন্দিত হয়েছিলাম, তেমনি তার বিদায়ে ব্যথিত হব। তবে তাকে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেব না। বর্তমানে কোথাও কোথাও ধুমধামের সঙ্গে রমজানকে বিদায় জানানো হয়। ‘জুমাতুল বিদা’ (রমজানের শেষ জুমা) কেন্দ্রিক আয়োজন তার একটি দৃষ্টান্ত। এসব আনুষ্ঠানিকতা রমজানের মৌলিক শিক্ষার পরিপন্থী। রমজানের শিক্ষা হলো যতটুকু সময় মেলে একান্তে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার ইবাদত করবে, মসজিদে অবস্থান করবে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার জিকিরে মগ্ন থাকবে, রমজানের যে সামান্য সময় অবশিষ্ট আছে, তাতে কোরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার দরবারে অশ্রু বিসর্জন করবে। ইবাদত, জিকির ও চোখের পানি যেহেতু আল্লাহর জন্য, তাই মানুষ-দেখানো আয়োজন নিষ্প্রয়োজন। শোকযাত্রা ও বড় আয়োজনে রমজানকে বিদায় জানানোর মধ্যে, এমনকি হাজারবার ‘বিদায়’ শব্দ উচ্চারণেও কোনো উপকার নেই। বুদ্ধিমানের কাজ হলো- অতীতের সময়ের সদ্ব্যবহার হলে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করা, সদ্ব্যবহার করতে না পারলে লজ্জিত-ব্যথিত হয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং যতটুকু সময় অবশিষ্ট আছে তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা। লজ্জা ও তাওবা বান্দার কাজের অপূর্ণতা দূর করে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নৈকট্য দান করে।

মানুষ যত বেশি মূল্যবান জিনিস হাতছাড়া করে, তত বেশি ব্যথিত হয় এবং তা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে। আর তা হারিয়ে না গেলে সংরক্ষণের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এখন ভেবে দেখতে হবে, রোজা ও রমজানের সঙ্গে আমরা কেমন আচরণ করেছি এবং কিভাবেই তা তাকে বিদায় জানাচ্ছি। অন্তর সাক্ষ্য দেবে- রমজানের কোনো অধিকার আমরা আদায় করতে পারিনি, আমরা নিজেরাও রমজানের জন্য যোগ্য ছিলাম না, তার পরও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা যখন নিজ অনুগ্রহে আমাদের তা দান করলেন আমরা তার যথাযথ মূল্যায়ন করিনি।

যদি কোনো বাদশাহ আপনার কাছে আসেন এবং আপনি তাঁর আপ্যায়ন করেন। আর যাওয়ার সময় তাঁকে বলেন- আপনার কি চমৎকার আপ্যায়নই না করলাম, এমন আপ্যায়ন আপনি কোথায় পাবেন? তাহলে বাদশাহ অপমান বোধ করবেন এবং ক্ষুব্ধ হয়ে শাস্তিও দিতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি আপনার অপূর্ণতার কথা স্বীকার করেন এবং অপারগতা প্রকাশ করেন, তবে তিনি খুশি হয়ে আপনাকে পুরস্কৃত করবেন। রমজান মুমিনের জন্য বাদশাহর চেয়েও সম্মানিত অতিথি। সে এসেছিল এবং এখন বিদায় নিচ্ছে। রোজার ব্যাপারে রাজাধিরাজ মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজে তার প্রতিদান দিই।’ সে মহিমান্বিত রোজা আমাদের ঘরে এসেছিল। এসে সে কী পেয়েছে? তার কি আদর-আপ্যায়ন হয়েছে? না আমরা ঠিকমতো রোজা রেখেছি, না আমরা নামাজ আদায় করেছি। কতটা অমনোযোগ নিয়ে তিলাওয়াত করেছি! আমরা গোপনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার বান্দাদের কোনো সাহায্য করেছি? অসহায় ও ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়েছি? প্রতিবেশীরা যেন নিরুদ্বেগে রোজা রাখতে পারে সে চিন্তা কখনো এসেছে মাথায়? মূলত আমরা এমন কিছুই করতে পারিনি, যা আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা যায়, যা দেখে মহান আল্লাহ খুশি হবেন। হাদিসে এসেছে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ভগ্নহৃদয় মানুষের কাছে থাকেন। মানুষ ফরিয়াদ করবে, হে প্রতিপালক! আমরা আপনাকে কোথায় খুঁজব? আমরা দরিদ্র, আমাদের মাটি দ্বারা তৈরি করা হয়েছে, আমরা অপবিত্র। অন্যদিকে আপনি মহান, আপনাকে কোথায় খুঁজে পাব? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলবেন, আমাকে অনুসন্ধান করতে হলে ভগ্নহৃদয় মানুষের কাছে করো, ব্যথিতপ্রাণ মানুষের কাছে যাও।

যেহেতু আমরা রোজার অধিকার আদায় করিনি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার দরবারে পেশ করার মতো ইবাদতও করতে পারিনি, তাই যে সামান্য সময়টুকু আছে, তা তাওবা ও ইস্তিগফারে অতিবাহিত করব। আমাদের করা সামান্য ত্রুটিপূর্ণ ইবাদতগুলো যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা নিজ অনুগ্রহে কবুল করে নেন সেই প্রার্থনা করব।

সামনে ঈদ। ঈদের আনন্দ তাদের জন্য, যারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা এবং তাঁর রাসুলের নির্দেশনা মতে রোজা অতিবাহিত করতে পেরেছে। কিন্তু রমজানের হক যে ব্যক্তি আদায় করেনি, তার জন্য আনন্দ কোথায়? সে নিজের অবহেলা, অমনোযোগ ও অপূর্ণতার জন্য মনস্তাপে পুড়বে। বহু মানুষ রোজা রাখে না কিন্তু ঈদের আনন্দ অতিশয় উৎসাহ এবং আয়েশের সাথে পালন করে। আর কিছু মানুষ ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে গিয়ে রমজানের সব সংযমকে পর্যন্ত বিসর্জন দিতে কার্পন্য করে না। তারা এ কথা বেমালূম ভুলে যায় যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেছেন, ‘তোমরা খাও, পান করো; কিন্তু অপচয় কোরো না।’

কিছু মানুষ এখনও এমন রয়েছে, যারা রোজা রাখে না কিন্তু ইফতার খেতে সামান্য পরিমান ভুল করেন না। তাদের বোধ করি, চিন্তাটা এমন যে, রোজা না রেখে করেছি একটা অন্যায় ইফতার গ্রহন না করে কি আরেক অন্যায় যোগ করবো না কি তার সাথে? ইফতারির কথা আর কি বলি? তারা শেষ রাতের আরামের ঘুম হারাম করে উঠে সাহরি খেতেও ভুল করেন না। তাদের কি যে অপার্থিব এক আনন্দ এই রোজার মাসটি ঘিরে! সত্যিই বিচিত্র, সত্যিই আজিব এবং আশ্চর্য্য বিষয় বটে! তবে, তাদের জন্য আমাদের প্রাণঢালা শুভকামনা, অনিঃশেষ ফরিয়াদ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার দরবারে, তারা যেন ইফতার-সাহরি গ্রহণের পাশাপাশি রোজা রাখার প্রতিও মনযোগী হতে পারেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাদেরকে সেই তাওফিক প্রদান করুন।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, বিদগ্ধ দায়ী সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) এর তামিরে হায়াত অবলম্বনে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০২১ সকাল ১০:০৩

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: অত্যন্ত চমৎকার আলোচনা করেছেন।

২| ১১ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: চীনা রাষ্ট্রদূতের প্রচ্ছন্ন হুমকি নিয়ে ব্লগে কোনো কথা-বার্তা নেই!

আপনি এই বিষয়ে কিছু লিখুন।

৩| ১১ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৩০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: জানি না আরেকটা রমজান পাবো কিনা। দোয়া রহিলো ,দোয়া করবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.