নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুসা আলাইহিস সালামের সাথে জনৈক কসাইয়ের জান্নাতি হওয়ার প্রচলিত কাহিনীর বাস্তবতা কতটুকু?

১৩ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:৪৪

ছবিঃ অন্তর্জাল।

মুসা আলাইহিস সালামের সাথে জনৈক কসাইয়ের জান্নাতি হওয়ার প্রচলিত কাহিনীর বাস্তবতা কতটুকু?

মুসা আলাইহিস সালামের সাথে জনৈক কসাইয়ের জান্নাতি হওয়ার প্রচলিত একটি কাহিনী চালু রয়েছে আমাদের সমাজে। প্রশ্ন হচ্ছে, এটির বাস্তবতা কতটুকু? অথবা, এ কাহিনীর সত্যতা বা নির্ভরযোগ্যতা কতটুকু?

বস্তুতঃ বিভিন্ন ওয়ায়েজ এবং বক্তাদের মুখে প্রচলিত এই কাহিনীটি শোনা যায় এবং বলা চলে, এটি বহুল প্রচলিত একটি ঘটনা। মাতৃসেবা বা মায়ের খেদমতের হৃদয়াস্পর্শী সেই ঘটনাটি হচ্ছে এমন যে,

একদা মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলার কাছে মুনাজাত করে বললেন, হে আল্লাহ! জান্নাতে আমার সঙ্গী কে হবে? দুনিয়াতেই তার সাথে আমার সাক্ষাৎ করিয়ে দিন।

তখন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আগমন করলেন এবং বললেন, হে মুসা! ওমুক এলাকার ওমুক কসাই ব্যক্তিই হবে তোমার জান্নাতের সঙ্গী।

একথা শুনে মুসা আলাইহিস সালাম কিছুটা বিস্মিত হলেন এই ভেবে যে, তাঁর মত নবীর জান্নাতের সঙ্গী হবেন সাধারণ একজন কসাই! তাঁর জানার আগ্রহ হল যে, কসাই লোকটি কি এমন আমল করে যার বদৌলতে জান্নাতে সে নবীর পাশাপাশি অবস্থানে থাকার মর্যাদা লাভ করবে!

মুসা আলাইহিস সালাম ঠিকানা মোতাবেক উক্ত কসাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য তার দোকানে গেলেন। যুবক বয়সী একজনকে গোস্ত বিক্রিতে মগ্নাবস্থায় দেখতে পেলেন। মুসা আলাইহিস সালাম গভীর মনযোগ দিয়ে লোকটির কাজকর্ম লক্ষ্য করতে লাগলেন। কিন্তু এমন কোন বিশেষ আমল তার চোখে পড়লো না, যার বদৌলতে লোকটি নবীর সাথে জান্নাতে প্রবেশের মর্যাদা লাভ করতে পারে।

যখন সন্ধ্যা নেমে এল। তখন কসাই ব্যক্তি গোস্তের একটি থলে নিয়ে বাড়ীর দিকে রওনা হল। মুসা আলাইহিস সালামও উক্ত কসাইয়ের পিছু নিলেন। নিজের পরিচয় গোপন করে তার বাড়ীর মেহমান হবার আবেদন করলেন। কসাই লোকটিও রাজী হয়ে গেল।

কসাই বাড়ীতে পৌঁছে নিজ হাতে খাবার তৈরী করল। তারপর ঝুলন্ত একটি ঝুড়ি নামাল যাতে একটি বৃদ্ধা ছিল। বৃদ্ধাকে ভাল করে গোসল করাল। তারপর তাকে নিজ হাতে খানা খাওয়াল। খানা শেষ হলে বৃদ্ধাকে আবার আগের স্থানে রেখে দিল। মুসা আলাইহিস সালাম লক্ষ্য করলেন উক্ত বৃদ্ধা বিড় বিড় করে কি যেন বলছে। বয়সের ভারে ন্যূজ উক্ত বৃদ্ধার মুখের জড়তার কারণে তার অস্পষ্ট সেসব কথা পরিস্কারভাবে বুঝা যাচ্ছিল না।

এরপর কসাই ব্যক্তি মুসা আলাইহিস সালামকে মেহমানদারী করালেন। তার সামনে খানা পেশ করলেন। খানা শুরু করার আগেই মুসা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ বৃদ্ধা কে?

কসাই লোকটি জবাব দিল, আমার মা। আমি তার খিদমাত করি।

মুসা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, একটু আগে তোমার মা নিজের ভাষায় বিড় বিড় করে কী বলছিল?

কসাই জবাব দিল, আমি যখনই মায়ের খিদমাত করি তখনই তিনি বলেন, 'আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন, এবং তোমাকে জান্নাতে মুসা নবীর সঙ্গী বানান'।

মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, হে যুবক! আমি তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছি, আল্লাহ তাআলা তোমার মায়ের দুআ কবুল করেছেন। আমি আল্লাহ তাআ'লার কাছে জান্নাতে আমার সঙ্গী কে হবে- তা জানতে চেয়েছিলাম। তখন আল্লাহ তাআলা তোমার কথা বলেছেন। আমি তোমার পরিচয়ের জন্য তোমার পিছু নিয়েছিলাম কিন্তু আমি তোমার মাঝে মায়ের খিদমাত ছাড়া কোন বিশেষ আমল খুঁজে পাইনি। এর মানে হল, মায়ের খিদমাতের পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ তাআলা তোমাকে জান্নাতে আমি মুসার সঙ্গী হবার নিয়ামত দান করেছেন।

মোটামুটিভাবে যতটুকু জানা যায়, ঘটনাটি এমনই। এটিই বিভিন্ন ব্যক্তির বয়ান ও বর্ণনা দ্বারা বিভিন্ন শব্দে হয়তো জানা যায়।

এবার চলুন, ঘটনাটির সত্যাসত্য বিষয়ে একটু আলোকপাত করিঃ

সন্তানের জন্য মায়ের দুআ কবুলযোগ্য বলে বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং, সন্তানের জন্য বাবা মায়ের দুআ কবুল হয় এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। যেমন- এক হাদিসে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لاَ شَكَّ فِيهِنَّ: دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ الوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ.

হযরত আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তিন প্রকারের দুআ সন্দেহাতীতভাবে কবুল হয়- মজলুমের দুআ, মুসাফিরের দুআ এবং সন্তানের জন্য জন্মদাতার দুআ। -সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৯০৫, সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-১৫৩৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৬৯৯

কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বক্তাদের ওয়াজে এবং বয়ানে, সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া মুসা আলাইহিস সালাম ও কসাই সম্পর্কিত উপরোক্ত রসালো ঘটনাটি বাস্তবতাবিহীন। হাদিস, ইতিহাস কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবে এটি পাওয়া যায় না। এই ঘটনার আদৌ কোন ভিত্তিই নেই। তাই ধরে নেয়া যায় যে, কিছু ওয়ায়েজদের রচিত বানোয়াট গল্প ছাড়া এটি আর কিছুই নয়। তাই এ বানোয়াট গল্প বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকা জরুরী।

সন্তানের নিকট মা বাবার সম্মান এবং মর্যাদায় কুরআনের নির্দেশনাঃ

সন্তানের নিকট মা বাবার সম্মান, মর্যাদা এবং স্থান সবার উপরে। সন্তানের নিকটে খেদমতের দিক থেকে তারাই সবচেয়ে বেশি হকদার। তাদের খেদমত বিষয়ে কুরআনুল হাকিম এবং সহিহ হাদিসে প্রভূত নির্দেশনা, উৎসাহ এবং প্রেরণা দেয়া হয়েছে। উপদেশ গ্রহণের জন্য সেসব নির্দেশনাই যথেষ্ঠ। কারণ, মহান আল্লাহ মানুষকে পিতা- মাতার মাধ্যমেই এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। এই পৃথিবীতে পিতা-মাতাই হচ্ছে সন্তানের সবচেয়ে বড় আপনজন। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর পিতা মাতা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে সন্তানকে বড় করে তোলেন। মহান আল্লাহ পিতা-মাতার খেদমত করার সর্বাধিক তাগিদ দিয়ে তার ইবাদতের পরেই মানুষকে পিতা মাতার খেদমত করার নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহর ইবাদত করা যেমনি ফরজ, পিতা-মাতার খেদমত করা মানুষের ওপর তেমনি ফরজ। ইরশাদ হচ্ছে-

وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

‘এবং আপনার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাঁদের কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন তা হলে তাঁদের সঙ্গে “উহ’’ শব্দটিও বলোনা। তাদের ধমক ও দিয়ো না। তাদের সঙ্গে শিষ্টতাপূর্ণ কথা বলো। তাদের সামনে ভালোবাসার সঙ্গে বিনম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলো, হে পালনকর্তা! তাঁদের উভয়ের প্রতি দয়া করুন, যেমনটি তাঁরা আমাদের শৈশব কালে করেছেন’। -সুরা বনি ইসরাঈল, ২৩- ২৪

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে কুরতুবীতে লেখেন - আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতের মধ্যে পিতা-মাতার প্রতি আদব, সম্মান এবং তাঁদের প্রতি সদ্ব্যবহার করাকে নিজের ইবাদতের সঙ্গে একত্রিত করে ফরজ করেছেন।

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَىٰ وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ وَإِن جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের জন্য জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভধারণ করেছে। দুধ ছাড়াতে দুই বছর হয় নির্দেশ দিয়েছি সেই। আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে। পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই। তবে তুমি তাদের কথা মানবে! এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সহাবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয় তার পথ অনুসরণ করবে। অতএব তোমাদের প্রত্যাবর্তণ আমারই দিকে। -সূরা লোকমান: ১৪-১৫

পিতা মাতার হক বিষয়ে প্রিয় নবীজীর বিশেষ গুরুত্বারোপঃ

মুসনদে আহমদ, তিরমিজী ও ইবনে মাজাহ’র বিশুদ্ধ সনদসহ হযরত আবুদ্দারদা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পিতা জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যে নিহিত ।

রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে সেবা যত্নকারী সন্তান পিতা মাতার দিকে সুনজরে ও ভালবাসার দৃষ্টিপাত করে, তার প্রত্যেক দৃষ্টিপাতের বিনিময়ে সে একটি মকবুল হজ্বের সাওয়াব পায়। সাহাবীরা আরজ করলেন, সে যদি দিনে একশতবার এভাবে দৃষ্টিপাত করে? উত্তরে তিনি বলেন, একশতবার দৃষ্টিপাত করলে প্রত্যেক দৃষ্টির বিনিময়ে এভাবে সাওয়াব পেতে থাকবে। তার ভান্ডারে কোন কিছুরই অভাব নেই।

এক ব্যক্তি রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, হে রাসুল! আমি আমার মাকে সুদূর ইয়েমেন থেকে নিজের পিঠে বহন করে এনে হজ্ব করিয়েছি, তাকে আমার পিঠে করে কাবা ঘর তাওয়াফ করিয়েছি। সাফা মারওয়া পাহাড়ে সায়ী করেছি। তাকে বহন করে আরাফাতে গিয়েছি। আবার সে অবস্থায় তাকে নিয়ে মুজদালিফায় গিয়েছি এবং মিনাতে গিয়ে কংকর নিক্ষেপ করেছি। আমার মা খুব বৃদ্ধা এবং একেবারে চলৎশক্তিহীন, এ জন্যে তাকে আমার পিঠে করে এ সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছি। তাঁর হক কি আমি আদায় করতে পেরেছি?

রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর করলেন, না! তার হক আদায় হয়নি।

সে ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, কেন?

রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- কারণ, তোমার মা তোমার শৈশবকালে সমস্তরকম দু:খ কষ্ট তোমার জন্য সহ্য করেছেন এই আশা নিয়ে যে, তুমি ভাল ভাবে বেঁচে থাক এবং তোমার যেন কোন রকম অসুবিধা না হয়, আর তুমি তোমার মায়ের জন্য যা করেছ তা এই আশায় যে, তিনি তো মারা যাবেন, সুতরাং, তার জন্য কিছু করি।

হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! কোন ব্যক্তি আমার কাছে সদ্ব্যবহারের সর্বাধিক হকদার? তিনি বললেন, তোমার মা, লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি বললেন তোমার মা, লোকটি আবার বলল তারপর কে? তিনি বললেন ‘তোমার মা, লোকটি পুনরায় বললেন, তারপর? রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার পিতা। -বুখারী-৫৯৭১

অত্র হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, মা তার সন্তানের জন্য যে ৩ টি কষ্ট অধিক পরিমানে অতিরিক্ত করেন, পিতার দ্বারা তা সম্ভব নয়। কেননা, ৩ দফা কষ্ট মাকে একাকিই বেশি করতে হয়। যেমন- প্রায় ১০ মাস ১০দিন গর্ভধারণের কষ্ট, সন্তান প্রসবের সময়ের সীমাহীন কষ্ট, জন্মের পর ০২ বছর যাবৎ দুধপান করানোর কষ্ট। এছাড়া প্রস্রাব-পায়খানার কষ্টতো রয়েছে। প্রচন্ড শীতে যখন সন্তান তার মায়ের কোলে প্রস্রাব- পায়খানা করে দেয় তখন বারবার মাকে শীতের দিনেও প্রচন্ড ঠান্ডা পানিতে গোসলসহ আরও কত কষ্ট যে করতে হয়।

বুখারী শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত জনৈক ব্যক্তি রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিহাদের অনুমতি নেয়ার জন্য উপস্থিত হয়। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পিতা-মাতা জীবিত আছে? সে বলল, জি হ্যা, রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি পিতা-মাতার সেবা-যত্নে আত্মনিয়োগ করে জিহাদ কর। অর্থাৎ, তাদের সেবা-যত্নের মধ্যেই জিহাদের সাওয়াব পাওয়া যাবে। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট লোকটি আরও বললেন, হুযুর, আমি পিতা-মাতাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি, একথা শুনে রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- যাও, তাদের গিয়ে হাসাও এবং তাদেরকে গিয়ে বল, আমি আপনাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জিহাদে যাব না। -কুরতবী

এছাড়া, পিতা মাতার খিদমাত করার দ্বারা জান্নাতপ্রাপ্তি এবং তাদের দুআ কবুল হয় মর্মে কুরআনের আয়াত এবং অনেক হাদিস রয়েছে। বস্তুতঃ কুরআনুল কারিমের সেসব নির্দেশনা এবং সহিহ হাদিসের বাইরে এসব বানোয়াট গল্প দ্বারা মা বাবার খিদমাত ও দুআ কবুলের ফযীলত বর্ণনা করা অনর্থক কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়।

পিতা মাতার খিদমাতের ফযীলত সম্পর্কিত বিষয়াদি বিস্তারিত জানতে ইমাম নববীকৃত ‘রিয়াজুস সালেহীন’, ইমাম মুনজিরীকৃত ‘আততারগীব ওয়াতত তারহীব’ এবং ইমাম বুখারীকৃত ‘আলআদাবুল মুফরাদ’ ইত্যাদি কিতাব দেখে নেয়া যেতে পারে।

শেষের প্রার্থনাঃ

আল্লাহ তাআ'লা আমাদের এসব বানোয়াট গালগল্প পরিহার করে সঠিক বিষয় অনুধাবন করে আমল করার তাওফিক দান করুন।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০২১ দুপুর ১২:১৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ছোটোবেলায় শুনেছিলাম এ কাহিনি। ব্যাপারটা ক্লিয়ার হলো। ধন্যবাদ নকিব ভাই।

২| ১৩ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: মন্তব্যের কারনে কমেন্ট ব্যান খেয়েছি। তাই এখন পজেটিভ মন্তব্য করবো। খুশি থাকুন।

ইসলাম ধর্ম হচ্ছে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত একটি ধর্ম।এটি কোন মানব রচিত ধর্ম নয়। এই বিধানে যা রয়েছে তা কল্যাণের জন্যই রয়েছে। আল্লাহ্‌ তার বান্দাদের সাথে বিন্দুমাত্রও জুলুম করেন না। কিন্তু আমাদের সমাজে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা আর কিছু ভুল ধারনা থাকার কারনে নারীরা ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তারা নিজেদেরকে অন্ধকারে পতিত করছে। নারীরা ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারনে কিছু নারীদেহ লোভী লোকেরা তাদের ব্যবহার করছে। পক্ষান্তরে ইসালামে নারীরা সম্মানিত।এখানে তাদেরকে ভোগের বস্তু হিসেবে দেখার কোন সুযোগ নেই।

৩| ১৩ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:২৮

নতুন বলেছেন: ধর্ম মিথ্যা বলা গুনাহের কাজ।

মিথ্যা কাহিনি দিয়ে ওয়াজ করে ধর্ম প্রচার সম্ভব?

৪| ১৬ ই মে, ২০২১ রাত ৯:২৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: মা বাবার হক্ব আদায় করা বড়ই কঠিন কাজ। সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকা উচিত তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের।

৫| ২১ শে মে, ২০২১ রাত ১১:০৭

আমি সাজিদ বলেছেন: কয়েকজন অথেনটিক ইসলামিক স্কলারের নাম বলুন, সময়ের সাথে যারা নিজেদের পরিশুদ্ধ করেছেন এবং যাদের আলোচনায় মনোযোগ দেওয়া যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.