নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামে কবিতা ও সাহিত্যচর্চা কি আসলেই নিষিদ্ধ?

০৫ ই জুন, ২০২১ সকাল ১০:১৯

ছবিঃ অন্তর্জাল।

ইসলামে কবিতা ও সাহিত্যচর্চা কি আসলেই নিষিদ্ধ?

কেউ কেউ অভিযোগের অঙ্গুলি উত্তোলন করতে চান যে, ইসলাম কাব্য সাহিত্য ইত্যাদিকে নিরুৎসাহিত করে মানুষের স্বভাবজাত প্রতিভাকে ধ্বংস করার পক্ষে মত দেয়, যা অগ্রহনযোগ্য। তাদের অভিযোগের পক্ষে তাদেরকে একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিতে দেখা যায় যে হাদিসে প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কবিতা দিয়ে মাথা ভর্তি করার চেয়ে পুঁজ দিয়ে উদর পূর্ণ করা উত্তম। -দেখুন, সহিহ বুখারি, ৮:৭৩:১৭৫

তাদের এই অভিযোগ ও দাবির সত্যাসত্য অনুধাবনের লক্ষ্যে এই বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করা একান্ত প্রয়োজন।

প্রথম কথা, ইসলামী শরিয়তে ইবাদতের ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছেঃ কোনো কিছু করা যাবে না যদি না তা কুরআন বা হাদিসে বলা থাকে। আর দুনিয়াবী কাজের ব্যাপারে মূলনীতি হচ্ছেঃ সব কিছুই করা যাবে যদি না কুরআন বা হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধ থাকে। কবিতা লেখা বা সাহিত্য চর্চা দুনিয়াবী কাজের মধ্যে গণ্য। তাই মূলনীতি অনুসারে সকল প্রকার কবিতা ও সাহিত্য জায়েজ যদি না তাতে হারাম উপাদান থাকে। -দেখুন, "Poetry in Islam" - Islamweb https://www.islamweb.net/en/fatwa/86790/

কবিতার ব্যাপারে হাদিসে বেশ কিছু নির্দেশনা দেখা যায় যার দ্বারা আমরা বুঝতে পারি কবিতা জায়েজ, না কি নাজায়েজ। চট করে অপ্রাসঙ্গিকভাবে একটি হাদিস দেখিয়ে কবিতার ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান বলে দেয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমরা এই প্রবন্ধে কবিতা এবং সাহিত্যচর্চার ব্যাপারে কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবায়ে কেরাম এবং আলেম উলামাদের বিস্তারিত অভিমত উল্লেখ করবো যার দ্বারা বোঝা যাবে অভিযোগকারীদের দাবি সঠিক, না কি ভুল।

এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ‏:‏ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم‏:‏ الشِّعْرُ بِمَنْزِلَةِ الْكَلاَمِ، حَسَنُهُ كَحَسَنِ الْكَلامِ، وَقَبِيحُهُ كَقَبِيحِ الْكَلامِ‏.

আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ কবিতাও কথারই মতো (কথার সমষ্টি)। রুচিসম্মত কবিতা উত্তম কথাতুল্য এবং কুরুচিপূর্ণ কবিতা কুরুচিপূর্ণ কথাতুল্য। -দেখুন, দারাকুতনী, আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং : ৮৭৩ (সহীহ)

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّهَا كَانَتْ تَقُولُ‏:‏ الشِّعْرُ مِنْهُ حَسَنٌ وَمِنْهُ قَبِيحٌ، خُذْ بِالْحَسَنِ وَدَعِ الْقَبِيحَ، وَلَقَدْ رَوَيْتُ مِنْ شِعْرِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ أَشْعَارًا، مِنْهَا الْقَصِيدَةُ فِيهَا أَرْبَعُونَ بَيْتًا، وَدُونَ ذَلِكَ‏.

আয়িশা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলতেন, কবিতার মধ্যে কতক ভালো এবং কতক নিকৃষ্ট। তুমি তার ভালোটা গ্রহণ করো এবং নিকৃষ্টটা পরিহার করো। আমার কাছে কা’ব ইবনে মালেক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর এমন কবিতাও বর্ণনা করা হয়েছে, যার মধ্যকার একটি কাসীদায় চল্লিশ বা তার কিছু কম সংখ্যক চরণ ছিলো। -দেখুন, আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং : ৮৭৪ (সহীহ)

আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ خَالِدٍ هُوَ ابْنُ كَيْسَانَ قَالَ‏:‏ كُنْتُ عِنْدَ ابْنِ عُمَرَ، فَوَقَفَ عَلَيْهِ إِيَاسُ بْنُ خَيْثَمَةَ قَالَ‏:‏ أَلاَ أُنْشِدُكَ مِنْ شِعْرِي يَا ابْنَ الْفَارُوقِ‏؟‏ قَالَ‏:‏ بَلَى، وَلَكِنْ لاَ تُنْشِدْنِي إِلاَّ حَسَنًا‏.‏ فَأَنْشَدَهُ... ‏

খালিদ ইবনে কায়সান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, আমি ইবন উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন ইয়াস ইবনে খায়ছামা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, হে ফারুক তনয়! আমার কিছু কবিতা কি আপনাকে আবৃত্তি করে শুনাবো? তিনি বলেন, হাঁ, তবে কেবল উত্তম কবিতাই শুনাবে। তিনি তাঁকে তা আবৃত্তি করে শুনাতে থাকেন। -দেখুন, আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং : ৮৬৪ (দুর্বল)

অর্থাৎ কবিতার হুকুম সাধারণ কথার মতোই। উত্তম কথার মতো উত্তম কবিতাও ইসলামে উত্তম বলে গণ্য হয়। আর ক্ষতিকর জিনিসে পূর্ণ কবিতা ইসলামে খারাপ বলে গণ্য হয়। -দেখুন, “Islam's position on poetry” -https://islamweb.net/en/fatwa/91021/

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) স্বয়ং কিছু কবিতা ও কবির প্রশংসা করেছেনঃ

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) স্বয়ং কিছু কবিতা ও কবির প্রশংসা করেছেন। যা দ্বারা ইসলামবিরোধীদের অভিযোগের অসারতা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়।

ان من الشعر لحكمة

অর্থঃ নিশ্চয়ই কোনো কোনো কবিতায় প্রজ্ঞা রয়েছে। -দেখুন, সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৬১৪৫

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَجُلاً، أَوْ أَعْرَابِيًّا، أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَتَكَلَّمَ بِكَلاَمٍ بَيِّنٍ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم‏:‏ إِنَّ مِنَ الْبَيَانِ سِحْرًا، وَإِنَّ مِنَ الشِّعْرِ حِكْمَةً‏.

ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বা এক বেদুইন নবী (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় কথাবার্তা বললো। নবী (ﷺ) বলেনঃ কথায়ও যাদুকরী প্রভাব থাকে এবং কবিতাও প্রজ্ঞাপূর্ণ হতে পারে। -দেখুন, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবন মাজাহ, মুসনাদ আহমাদ, ইবন হিব্বান, তহাবী, আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং : ৮৮০ (সহীহ)

عَنْ عَمْرِو بْنِ الشَّرِيدِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ رَدِفْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا فَقَالَ ‏"‏ هَلْ مَعَكَ مِنْ شِعْرِ أُمَيَّةَ بْنِ أَبِي الصَّلْتِ شَيْئًا ‏"‏ ‏.‏ قُلْتُ نَعَمْ قَالَ ‏"‏ هِيهِ ‏"‏ ‏.‏ فَأَنْشَدْتُهُ بَيْتًا فَقَالَ ‏"‏ هِيهِ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ أَنْشَدْتُهُ بَيْتًا فَقَالَ ‏"‏ هِيهِ ‏"‏ ‏.‏ حَتَّى أَنْشَدْتُهُ مِائَةَ بَيْتٍ

আমর ইবনু শারীদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর সনদে তাঁর পিতা [শারীদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর (বাহনে) সফরসঙ্গী হলাম। তিনি বললেন, তোমার স্মৃতিতে (কবি) উমাইয়াহ ইবনু আবুস সালত এর কবিতার কোন কিছু আছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, পড়ো। আমি তখন তাঁকে একটি লাইন আবৃত্তি করে শুনলাম। তিনি বললেন, বলতে থাকো, তখন আমি তাঁকে আরও একটি শ্লোক পাঠ করে শুনালাম। তিনি আবার বললেন, বলতে থাকো। শেষ অবধি আমি তাঁকে ১০০ টি ছন্দ আবৃত্তি করে শুনালাম। -দেখুন, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৫৭৭৮

উল্লেখ্য যে, উমাইয়াহ ইবনু আবুস সালত ছিলেন জাহেলী যুগের একজন কবি। কিন্তু কবিতায় উত্তম উপাদান থাকায় এবং অনিষ্টকর উপাদান না থাকায় স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর কবিতা বেশ সময় নিয়ে শুনেছেন। যেখানে স্বয়ং নবী (ﷺ) থেকে এভাবে কবিতা শোনার বিবরণ পাওয়া যায়, মানুষ এরপর কিভাবে বলতে পারে যে ইসলামে কবিতা হারাম অথবা ইসলাম মানুষের প্রতিভাকে হত্যা করে?

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ أَشْعَرُ كَلِمَةٍ تَكَلَّمَتْ بِهَا الْعَرَبُ كَلِمَةُ لَبِيدٍ أَلاَ كُلُّ شَىْءٍ مَا خَلاَ اللَّهَ بَاطِلٌ

আবূ হুরাইরাহ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর সনদে নবী (ﷺ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আরবদের কবিতামালার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাব্যময় বাণী হচ্ছে লাবীদের এ উক্তি। যেমন أَلاَ كُلُّ شَىْءٍ مَا خَلاَ اللَّهَ بَاطِلٌ "জেনে রেখো, আল্লাহ ছাড়া যা কিছু রয়েছে সব বাতিল।" -দেখুন, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৫৭৮১

নবী করিম (ﷺ) কদাচিত কবিতা আবৃত্তি করতেনঃ

নবী করিম (ﷺ) নিজে কবি ছিলেন না। কিন্তু তিনিও মাঝে মাঝে কবিতা আবৃত্তি করতেন। সে কবিতাগুলো ছিল হয়তো সাধারণ কবিতা, অথবা আল্লাহর স্মরণপূর্ণ কবিতা। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ شُرَيْحٍ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ‏:‏ قُلْتُ لِعَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا‏:‏ أَكَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَتَمَثَّلُ بِشَيْءٍ مِنَ الشِّعْرِ‏؟‏ فَقَالَتْ‏:‏ كَانَ يَتَمَثَّلُ بِشَيْءٍ مِنْ شِعْرِ عَبْدِ اللهِ بْنِ رَوَاحَةَ‏:‏ وَيَأْتِيكَ بِالأَخْبَارِ مَنْ لَمْ تُزَوِّدِ

মিকদাম ইবনে শুরায়হ (র.) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা কে বললাম, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কি উপমা দেয়ার জন্য কবিতা পাঠ করতেন? তিনি বলেন, তিনি আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহার এ কবিতা আবৃত্তি করে উপমা দিতেনঃ “যাকে তুমি দাওনি তোশা, খবর আনবে সে নিশ্চয়”। -দেখুন, তিরমিযী, নাসাঈ, মুসনাদ আহমাদ, তহাবী, আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং : ৮৭৫ (সহীহ)

সহীহ বুখারীতে বারা’ বিন আযিব রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত আছে,

‘আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে খন্দকের মাটি বহনরত অবস্থায় প্রত্যক্ষ করেছি। এ মাটি বহন করার কারণে তাঁর দেহ মুবারক ধূলি ধূসরিত হয়ে উঠেছিল। এ অবস্থায় তাঁকে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহার কবিতার নিম্নোক্ত চরণগুলো আবৃত্তি করতে শুনেছিলাম :

اللهم لولا أنت ما اهتدينا ** ولا تصـدقنـا ولا صلينــا

فأنزلن سكينـة علينـا ** وثبت الأقـدام إن لاقينــا

إن الألى رغبوا علينـا ** وإن أرادوا فتـنـة أبينـــا

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! যদি তোমার অনুগ্রহ না হতো তাহলে আমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হতাম না, আমরা দান খায়রাত করতাম না এবং সলাত আদায় করতাম না। অতএব আমাদের প্রতি শান্তি বর্ষণ করো এবং কাফিরদের সঙ্গে যদি আমাদের মোকাবেলা হয় তাহলে আমাদেরকে ধৈর্য্যদান করিও। তারা আমাদের বিরুদ্ধে লোকদের প্ররোচিত করেছে। যদি তারা ফেৎনা সৃষ্টি করতে চায় তাহলে আমরা কখনই মাথা নত করব না।

বারা’ বিন আযিব বলেছেন, ‘শেষের শব্দগুলো রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- অধিক টান দিয়ে উচ্চারণ করছিলেন, অন্য একটি বর্ণনায় কবিতাটির শেষাংশ ছিল নিম্নরূপ :

إن الألى قـد بغـوا علينـا ** وإن أرادوا فـتنـة أبينـا

‘তারা আমাদের উপর অত্যাচার করেছে এবং তারা যদি আমাদেরকে ফেৎনায় নিক্ষেপ করতে চায়, আমরা কখনই মাথা নত করে তা মেনে নেবো না।’ -দেখুন, সহীহ বুখারী ২য় খন্ড ৫৮৯ পৃঃ; আর রাহিকুল মাখতুম–শফিউর রহমান মুবারকপুরী (তাওহীদ পাবলিকেশন্স), পৃষ্ঠা ৩৪৬-৩৪৭

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবীদের অনেকেই কবিতা চর্চা করতেনঃ

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবীদের অনেকেই কবিতা চর্চা করতেন। ইমাম শা'বী (রাহ.) বলেন,

كان ابو بكر شاعرا وكان عمر شاعرا وكان على شاعرا رضى الله عنهم

আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কবি ছিলেন। উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুও কবি ছিলেন। আর 'আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুও কবি ছিলেন।" -দেখুন, ইবনু আবী শাইবাহ, আল-আদাব, হাদিস নং : ৩৬৬ ও আল-মুসান্নাফ, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ১৭৩

তাঁদের মধ্যে বিশেষত আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর কাব্যচর্চায় সুখ্যাতি রয়েছে। তিনি ছিলেন একজন সুবক্তা ও ভালো কবি। তাঁর কবিতার একটি ‘দিওয়ান’ পাওয়া যায় যাতে অনেকগুলো কবিতায় মোট ১৪০০ শ্লোক আছে। -দেখুন, কিতাবুল উমদাহ – ইবন রশীক ১/২১

সাহাবী-তাবীঈদের যুগে কাব্য চর্চাকে শিক্ষার একটি উপাদান হিসাবে গণ্য করা হতোঃ

সাহাবী-তাবীঈদের যুগে কাব্য চর্চাকে শিক্ষার একটি উপাদান হিসাবে গণ্য করা হতো।

حَدَّثَنِي عُمَرُ بْنُ سَلاَّمٍ، أَنَّ عَبْدَ الْمَلِكِ بْنَ مَرْوَانَ دَفَعَ وَلَدَهُ إِلَى الشَّعْبِيِّ يُؤَدِّبُهُمْ، فَقَالَ‏:‏ عَلِّمْهُمُ الشِّعْرَ يَمْجُدُوا وَيُنْجِدُوا

উমার ইবন সালাম (র.) থেকে বর্ণিত। আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ান তার সন্তানদের আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়ার জন্য শাবী (র.) এর নিকট সোপর্দ করেন। তিনি বলেন, এদের কবিতা শিক্ষা দিন, তাতে তারা উচ্চাভিলাসী ও নির্ভীক হবে। -দেখুন, তারীখুল কাবীর, আবু হাতিম, ইবন হিব্বান, আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং : ৮৮১

ইমাম শাফিঈ(র.) কাব্যচর্চার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। -দেখুন, "Poetic Jewels from Imam Al-Shafi'i - The Imam of Imams" - AUSTRALIAN ISLAMIC LIBRARY Click This Link তাঁর একটি সুবিখ্যাত কবিতার সংকলন রয়েছে। -দেখুন, Click This Link

কাব্য চর্চার বিপুল উদাহরণ রয়েছে ইসলামের প্রাথমিক যুগগুলোতেঃ

ইসলামের প্রাথমিক যুগগুলোতে ইসলামী কবিতা ব্যতিতও নানা জায়েজ দুনিয়াবী বিষয়ে কাব্য চর্চার বিপুল পরিমাণে উদাহরণ পাওয়া যায়। সবগুলোর রেফারেন্স দিলে লেখার কলেবর বিশাল হয়ে যেতে পারে। আগ্রহীরা আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থের ৭ম থেকে ১০ খণ্ডে খুঁজলে এগুলো পেয়ে যাবেন।

উদ্দেশ্য হাসিলে তারা কুরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিতে চানঃ

কুরআনের একটি সুরার নামকরণ করা হয়েছে কবিদের নামে। ২৬ নং সুরা শু’আরা (কবিগণ)। এ সুরাতে কবিদের নিন্দা করে একটি আয়াত আছে। এ আয়াতটি দেখিয়ে অনেকে বলতে চায় যে ইসলামে সব ধরণের কবি ও কবিতা নিন্দিত। আয়াতটি হচ্ছে –

وَالشُّعَرَاءُ يَتَّبِعُهُمُ الْغَاوُونَ

অর্থঃ আর বিভ্রান্তরাই কবিদের অনুসরণ করে। -দেখুন, আল কুরআন, শু’আরা ২৬ : ২২৪

তাফসির ইবন কাসিরে আয়াতটি নাজিলের প্রেক্ষাপট উল্লেখ আছে। ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (ﷺ) এর যুগে একজন আনসারী ও একজন অন্য সম্প্রদায়ের লোক কবিতার মাধমে একে অন্যের নিন্দা করতে লাগছিলো। তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কিছু মূর্খ লোক এই কাজে তাদেরকে সমর্থন দিচ্ছিলো। এর ভিত্তিতে আয়াতটি নাজিল হয়। -দেখুন, তাফসির ইবন কাসির, ৮ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা শু’আরার ২২৪ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৩৪৪

অর্থাৎ কিছু কবির অনিষ্টকর কাজ ও এর অনুসরণ করা কিছু লোকের ব্যাপারে আলোচ্য আয়াত। এতে মোটেও সকল প্রকারের কবি ও কবিতার কথা বলা হয়নি। যে আয়াতে একে অন্যের নিন্দাকারী ও এ কাজ সমর্থন করা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের কথা বলা হলো, সেই আয়াত দেখিয়ে ইসলামবিরোধীরা বলতে চায় যে ইসলামে নাকি সব কবিতা হারাম! মূলত এটা তাদের সীমাহীন অজ্ঞতারই পরিচায়ক। আলোচ্য আয়াতের প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত আছে,

ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। “আর বিভ্রান্ত লোকেরাই কবিদের অনুসরণ করে। তুমি কি দেখো না যে, তারা প্রতিটি ময়দানে উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং এমন কথা বলে যা তারা করে না” (সুরা শু’আরাঃ ২২৪-২২৫) উপরোক্ত অংশ (মহামহিম আল্লাহ) মানসুখ (রহিত) করেছেন এবং নিম্নোক্ত অংশ ব্যতিক্রম করেছেন; মহান আল্লাহ বলেনঃ

“তবে তারা স্বতন্ত্র, যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, আল্লাহকে পর্যাপ্ত স্মরণ করে এবং নির্যাতিত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে। নির্যাতনকারীরা অচিরেই জানতে পারবে তাদের গন্তব্য কিরূপ” (সুরা শুআরাঃ ২২৭)। -দেখুন, আবু দাউদ, আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং : ৮৭৯ (সহীহ)

অন্ধ গোত্রবিদ্বেষ, অশ্লীল প্রেম এবং অনিষ্টকর কাব্যচর্চা্ ইসলামে নিষিদ্ধঃ

রাসুল(ﷺ) এর যুগে অন্ধ গোত্রবিদ্বেষ, অশ্লীল প্রেম এবং নানা রকমের অনিষ্টকর জিনিস নিয়ে কবিতা আরবদের মাঝে খুবই প্রচলিত ছিল ছিল। বিভিন্ন হাদিসে অনিষ্টকর কবি ও কবিতার ব্যাপারে নিন্দাসূচক কথা এসেছে। ইসলামে কেবল সে সকল কবিতা নিষিদ্ধ যেগুলোতে হারাম ও অনিষ্টকর উপাদান আছে।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ لأَنْ يَمْتَلِئَ جَوْفُ الرَّجُلِ قَيْحًا يَرِيهِ خَيْرٌ مِنْ أَنْ يَمْتَلِئَ شِعْرًا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو بَكْرٍ إِلاَّ أَنَّ حَفْصًا لَمْ يَقُلْ ‏"‏ يَرِيهِ ‏"‏ ‏.‏

আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ কোনো লোকের পেট পুঁজ দিয়ে ভর্তি হয়ে যাওয়া যা তার পেট পঁচিয়ে বিনষ্ট করে দেয়, তা (পেট) কবিতায় ভর্তি হওয়ার চাইতে উত্তম।

বর্ণনাকারী আবু বাকর (র.) বলেন, তবে (আমার উস্তায বর্ণনাকারী) হাফ্‌স (র.) এর বর্ণনাতে (يَرِيهِ ) তথা ‘পঁচিয়ে বিনষ্ট করে দেয়’ কথাটি বলেননি। -দেখুন, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৫৬৯৬

হাদিসের বানী-

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ‏:‏ إِنَّ أَعْظَمَ النَّاسِ جُرْمًا إِنْسَانٌ شَاعِرٌ يَهْجُو الْقَبِيلَةَ مِنْ أَسْرِهَا، وَرَجُلٌ انْتَفَى مِنْ أَبِيهِ

আয়িশা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেনঃ মানুষের মধ্যে মারাত্মক অপরাধী হলো সেই কবি যে সমগ্র গোত্রের নিন্দা করে এবং যে ব্যক্তি নিজ পিতাকে অস্বীকার করে। -দেখুন, ইবন মাজাহ হাদিস নং : ৩৭৬১, আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং : ৮৮২ (সহীহ)

কোনো গোত্র বা সম্প্রদায়ের নিন্দাবাদ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা একটি অনিষ্টকর কাজ। হাদিসে এই জাতীয় কবিতা লেখাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে। এমন নারী বা পুরুষের ব্যাপারে প্রেমের কবিতা লেখা জায়েজ নয় যে নারী বা পুরুষ ঐ কবির জন্য বৈধ নয়। কিন্তু নিজ স্বামী বা স্ত্রীকে নিয়ে ভালোবাসার কবিতা লেখা হালাল তো বটেই বরং সওয়াবের কাজ। -দেখুন, Islam and Poetry - IslaQA Hanafi https://islamqa.org/hanafi/albalagh/22351

এমনকি নামহীন বা অচেনা (anonymous) কোনো নারীর কিছু সৌন্দর্যের দিকও কবিতায় প্রকাশ করা জায়েজ বলে আলেমগণ অভিমত প্রকাশ করেছেন – যদি না এতে অশ্লীলতা বা আপত্তিকর ভাষা না থাকে। কেননা কা’ব ইবন জুহাইর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু, হাসসান বিন সাবিত রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু প্রমুখ কবি-সাহাবীগণ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর উপস্থিতিতে এমন কবিতা আবৃত্তি করেছেন। -দেখুন, "Partaking in love poetry contest" - Islamweb https://islamweb.net/en/fatwa/327949/

হারাম জিনিস বাদে অন্য সকল জিনিস নিয়ে কবিতা লেখা যায়ঃ

হারাম জিনিস বাদে অন্য সকল জিনিস নিয়ে কবিতা লেখা যায়, সে ধরণের কবিতা লেখাকে পেশা হিসেবেও নেয়া যায়। ইমাম ইবনু কুদামা মাকদিসি(র.) বলেছেন, “কবিতা লেখা জায়েজ। এ নিয়ে ভিন্ন কোনো অভিমত নেই। এটাই সাহাবী ও আলেমদের অভিমত।” -দেখুন, আল মুগনী ১০/১৭৬; কবিতার ব্যাপারে আলেমদের বিস্তারিত অভিমতের জন্য দেখুনঃ মাওসু’আহ আল ফিকহিয়্যাহ ২৬/১১৩-১১৭

ইবন হাজার(র.) এর মতে - যদি অতিমাত্রায় আবৃত্তি না করা হয়, মসজিদের ভেতর আবৃত্তি না করা হয়, যদি অন্যায়ভাবে কারো মানহানী না করা হয়, কারো মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা না করা হয়, মিথ্যাচার না থাকে এবং অশ্লীল প্রেমকাহিনী না থাকে – তাহলে কবিতা জায়েজ। ইবন আব্দুল বার(র.) কবিতা জায়েজ হবার ব্যাপারে আলেমদের ইজমা উল্লেখ করেছেন। -দেখুন, "Partaking in love poetry contest" - Islamweb https://islamweb.net/en/fatwa/327949/

কাজেই কবি নজরুলের আল্লাহ ও রাসুল (ﷺ) এর স্তুতিমূলক কবিতাগুলো (যাতে শির্ক বা বিদআত নেই) ইসলামে উত্তম কাজ বলে বিবেচিত হতে পারে। একইভাবে জায়েজের সীমার মধ্যে থেকে শিক্ষামূলক, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমূলক এবং জীবনের নানা দিক নিয়ে কবিতা লেখা কিংবা পাঠ করা যেতেই পারে। ইসলাম কখনোই তা নিষেধ করে না।

ইসলামে ঢালাওভাবে সকল কবিতা বা সাহিত্যকর্ম নিষিদ্ধ করা হয়নিঃ

উপরের আলোচনার আলোকে এটি পরিষ্কার হলো যে, ইসলামে মোটেও সব ধরণের কবিতা এবং সাহিত্যচর্চা নিষিদ্ধ নয়। ইসলামে ঢালাওভাবে সকল কবিতা বা সাহিত্যকর্ম নিষিদ্ধ – এটা যে একটা চরম অসত্য কথা এ কথা অনধাবনে কারও বাকি থাকারও কথা নয়। বরং যে সকল কবিতা বা সাহিত্যকর্মের দ্বারা অনিষ্ট হতে পারে, ইসলাম কেবল সেগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে। মানুষের প্রতিভাকে বিনষ্ট করা মোটেও ইসলামের উদ্যেশ্য নয়। বরং মানবজাতির কল্যাণের জন্যই ইসলাম। এটা একমাত্র তারাই উপলব্ধি করতে সক্ষম হন যারা নির্মোহভাবে ইসলাম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। বিদ্বেষের শকুনি চোখে নয়; উপলব্ধি, অনুধাবন আর ন্যায়নিষ্ঠতার কষ্টিপাথরে ইসলাম ধর্ম আনিত প্রতিটি সত্যকে যাচাই করতে হলে তাকাতে হবে মুক্ত এবং খোলা দৃষ্টিতে। আল্লাহ তাআ'লা আমাদের দৃষ্টিকে প্রসারিত করে দিন। অন্তরের সংকীর্ণতা দূর করে দিন। সত্যকে সত্য বলে গ্রহণ করার সাহস দিন।

তথ্যসূত্রঃ

স্ব স্ব স্থানে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: ইসলামে অনেক কিছুই নিষেধ। আবার অনেক কিছু করতে বলা হয়েছে।

আসল কথা হলো- বর্তমানে কেউ ইসলাম মানে না। মানছে না। রাষ্ট্র, সমাজ কেউ ইসলামের নিয়ম গুলো মানছে না। অথচ সবাই কম বেশি ইসলামের নিয়ম কানুন জানে।

০৫ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:১৭

নতুন নকিব বলেছেন:



মন্তব্যে আসায় ধন্যবাদ।

কিন্তু বর্তমানে কেউ ইসলাম মানে না। মানছে না। রাষ্ট্র, সমাজ কেউ ইসলামের নিয়ম গুলো মানছে না। অথচ সবাই কম বেশি ইসলামের নিয়ম কানুন জানে। -কথাগুলো আপনার মুখস্ত করা বুলির মত শোনা যায়। এসব কথা প্রায়ই আপনি বলে থাকেন। হয়তো দুঃখ করেই বলে থাকেন এসব কথা। কিন্তু আপনার বলা এই কথাগুলোর সত্যতা বা বাস্তবতা কতটুকু? ইসলাম কি সত্যি সত্যি এখন কেউই আর মানছেন না? তার অর্থ, ইসলাম মেনে চলা লোক কি এখন আর অবশিষ্ট নেই বললেই চলে? প্রাকটিসিং মুসলিম বলতে কাউকেই আর পাওয়া যাবে না?

প্রশ্ন হচ্ছে, এমনটা যদি হয়েই থাকে, তাহলে পৃথিবীতে ইসলাম টিকে রয়েছে কিভাবে?

২| ০৫ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৪:২৯

নীল আকাশ বলেছেন: খুব ভালো পোস্ট, অনেক কিছু জানা গেল। ধন্যবাদ।

০৬ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:৪৭

নতুন নকিব বলেছেন:



মন্তব্যে আসায় কৃতজ্ঞতা। লেখাটি ভালো লাগায় আনন্দিত হলাম।

ধন্যবাদ ভাই।

৩| ০৫ ই জুন, ২০২১ রাত ৯:০৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: রসূল (সা) নিজেও কবিতা আবৃত্তি করেছেন অনেক সময় সাহাবীদের সাথে সাথে। সম্ভবত যখন মদিনার মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছিল অথবা যখন খন্দকের যুদ্ধের পরিখা খনন করা হয়। সঠিক মনে নেই।

০৬ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:৫১

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, এটা ছিল খন্দকের যুদ্ধের প্রাক্কালে খন্দক বা পরিখা খনন করার সময়কার ঘটনা। সহীহ বুখারীতে বারা’ বিন আযিব রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত আছে,

‘আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে খন্দকের মাটি বহনরত অবস্থায় প্রত্যক্ষ করেছি। এ মাটি বহন করার কারণে তাঁর দেহ মুবারক ধূলি ধূসরিত হয়ে উঠেছিল। এ অবস্থায় তাঁকে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহার কবিতার নিম্নোক্ত চরণগুলো আবৃত্তি করতে শুনেছিলাম :

اللهم لولا أنت ما اهتدينا ** ولا تصـدقنـا ولا صلينــا

فأنزلن سكينـة علينـا ** وثبت الأقـدام إن لاقينــا

إن الألى رغبوا علينـا ** وإن أرادوا فتـنـة أبينـــا

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! যদি তোমার অনুগ্রহ না হতো তাহলে আমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হতাম না, আমরা দান খায়রাত করতাম না এবং সলাত আদায় করতাম না। অতএব আমাদের প্রতি শান্তি বর্ষণ করো এবং কাফিরদের সঙ্গে যদি আমাদের মোকাবেলা হয় তাহলে আমাদেরকে ধৈর্য্যদান করিও। তারা আমাদের বিরুদ্ধে লোকদের প্ররোচিত করেছে। যদি তারা ফেৎনা সৃষ্টি করতে চায় তাহলে আমরা কখনই মাথা নত করব না।

বারা’ বিন আযিব বলেছেন, ‘শেষের শব্দগুলো রাসুলুল্লাহ (ﷺ)- অধিক টান দিয়ে উচ্চারণ করছিলেন, অন্য একটি বর্ণনায় কবিতাটির শেষাংশ ছিল নিম্নরূপ :

إن الألى قـد بغـوا علينـا ** وإن أرادوا فـتنـة أبينـا

‘তারা আমাদের উপর অত্যাচার করেছে এবং তারা যদি আমাদেরকে ফেৎনায় নিক্ষেপ করতে চায়, আমরা কখনই মাথা নত করে তা মেনে নেবো না।’ -দেখুন, সহীহ বুখারী ২য় খন্ড ৫৮৯ পৃঃ; আর রাহিকুল মাখতুম–শফিউর রহমান মুবারকপুরী (তাওহীদ পাবলিকেশন্স), পৃষ্ঠা ৩৪৬-৩৪৭

শুভকামনা জানবেন।

৪| ০৬ ই জুন, ২০২১ সকাল ১০:০৯

জটিল ভাই বলেছেন:
মাশাল্লাহ্।
আচ্ছা, গানের বিষয়ে সঠিক উপদেশ কি?

০৬ ই জুন, ২০২১ সকাল ১০:৩৬

নতুন নকিব বলেছেন:



জাজাকুমুল্লাহ।

গান বিষয়ে ইসলামী শরিয়তের সঠিক নির্দেশনা নিয়ে আমার সম্ভবতঃ এখানে কোনো লেখা নেই। তবে আপনি এই লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন-

ইসলামে গান বাজনা কি হারাম ? কেন !

শুভকামনা জানবেন।

৫| ০৬ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১২:১৬

এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: আপনার লেখার একটা ভালো দিক হচ্ছে আপনি সুন্দর করে তথ্য সন্নিবিষ্ট করে লেখেন, দ্বিমতপোষণকারীদের সুষ্ঠু বিতর্কের পরিবেশ দেন। কিছুদিন আগে বেয়াদব প্রকৃতির এক ধর্মবিদ্বেষী লেখক ইনিয়ে-বিনিয়ে লেখার চেষ্টা করেছিল, কবিতা লেখার কারণে নাকি নবীজি (স.) মানুষ হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, অথচ লেখকের নিকট যখন উল্টো, গুরুতর প্রমাণ পেশ করা হলো, সেগুলো পাশ কাটিয়ে সে বারবার প্রমাণ পেশকারীদের অন্ধবিশ্বাসী আখ্যা দিয়ে যাচ্ছিল, নবীজিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছিল আর নিজেকে দাবি করে যাচ্ছিল মুক্তমনা (আসলে মূত্রমনা)।

ভালো থাকুন।

০৬ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:২৮

নতুন নকিব বলেছেন:



শুকরিয়া।

পরমত সহিষ্ণুতা সুস্থতার লক্ষন। ইসলামে পরমত সহিষ্ণুতার গুরুত্ব অপরিসীম। এই গুণটি যাদের থাকে না তারা ইসলামের প্রকৃত আদর্শ ধারণ করতে ব্যর্থ হন। জানার প্রয়োজনে সুস্থ বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু অসুস্থ মানসিকতা নিয়ে কেউ যদি ইচ্ছেকৃত বিতর্ক উস্কে দিয়ে ফায়দা হাসিল করতে চায় তাদের ইগনোর করে যাওয়াই উত্তম।

কিছু দিন পূর্বে এমন একটি উদ্ভট এবং প্রোপাগান্ডামূলক লেখা এই তল্লাটে আমারও চোখে পড়েছিল, যেখানে ইসলাম এবং নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কবিতা এবং সাহিত্যচর্চার প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করার প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে বেশ কিছু মিথ্যে তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে। ইচ্ছে থাকা সত্বেও আমি নিজেকে তখন সংবরণ করেছি এবং সেই পোস্টে কমেন্ট করা থেকে বিরত থেকেছি শুধু অনর্থক বিতর্ক এড়ানোর জন্য। ধরে নিতে পারেন, এটা সেই লেখাটিরই একটি প্রত্যুত্তর।

যা-ই হোক, অন্ধকার আছে বলেই আলোর এত মূল্য। আর আলো আঁধারের প্রভেদ আছে বলেই তো পৃথিবী এখনও এত সুন্দর। মিথ্যা না থকালে সত্যের মূল্য বুঝার উপায় ছিল না। সুতরাং, তাদের মত করেই চলতে দিন তাদেরকে। বলতে দিন তাদেরকে। তারাও সত্যের অপরূপ সৌন্দর্য্যালোক এক দিন ভাগাভাগি করে নিবেন, সেই প্রত্যাশায় তাদের জন্য শুভকামনা রেখে যাওয়াই আমাদের কাজ।

মূল্যবান মন্তব্য রেখে যাওয়ায় কৃতজ্ঞতা আবারও। শুভকামনা জানবেন।

৬| ০৬ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:৫৫

মিরোরডডল বলেছেন:



অশ্লীল শব্দ ছাড়া কবিতা পারমিটেড । ওকে ফাইন ।

আবার শুধু সুরেতো কোন বাধা নেই, হতে পারে শুধুই গিটার অথবা বাঁশি, ইনস্ট্রুমেন্ট অনলি ।
তাহলে সেই সুরে যদি কবিতার শব্দগুচ্ছ বসাই, তখনতো সেটা গান হয়ে গেলো ।

যদিও নো অশালীন শব্দ ব্যবহার । তাহলে এটা পারমিটেড ।

প্লীজ কারেক্ট মি ইফ আই’ম রং ।



০৬ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৩৩

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনাকে এই পোস্টে পেয়ে মুগ্ধ হলাম। কষ্ট করে পোস্ট পাঠ করেছেন বলে কৃতজ্ঞতা। কবিতা বা সাহিত্য চর্চা এবং গান ও সঙ্গীত চর্চাকে যদিও আপাতঃদৃষ্টিতে কাছাকাছি সাংস্কৃতিক বিষয় বলে মনে হয়, তবুও এই দু'টি বিষয়ের ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি এবং হুকুম একেবারে হুবহু একইরকম নয়। হয়তো কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করে থাকবেন। দয়া করে আপনি যদি ইসলামে সঙ্গীত নীতি বিষয়ক নিচের এই ছোট্ট লেখাটি পাঠ করে নিতে পারেন খুবই আনন্দিতবোধ করবো। লেখাটিকে আমার কাছে তথ্যনির্ভর এবং যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে-

ইসলামে গান বাজনা কি হারাম ? কেন !

আবারও ধন্যবাদ। অনিঃশেষ শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.