নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ছবি: অন্তর্জাল।
অযুতে পাঠ করা যেতে পারে অর্থপূর্ণ এই দোআগুলোও
আমরা সাধারণত: بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم বাংলা উচ্চারণ- ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ অর্থাৎ, পরম করুনাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি - পাঠ করে অযু শুরু করি এবং অযুর মাঝে মাঝে আরও কিছু দোআ পাঠ করে থাকি। মূলত: অযুতে এসব দোআর পাশাপাশি প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ধোয়ার সময়ে পাঠ করার মত আরও এমন কিছু দোআ রয়েছে যা আবশ্যিক না হলেও শিখে রাখা উত্তম এবং চমৎকার অর্থবহ হৃদয়াগ্রাহী এসব দোআর প্রাকটিস করা সম্ভব হলে বা সুযোগ থাকলে সে চেষ্টাও করা উচিত।
অযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ পাঠ করা:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে অযু শুরু করা উচিত। কারণ, বিসমিল্লাহ ব্যতিত অযু করতে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। বর্ণিত হয়েছে-
حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ الْجَهْضَمِيُّ، وَبِشْرُ بْنُ مُعَاذٍ الْعَقَدِيُّ، قَالاَ حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ حَرْمَلَةَ، عَنْ أَبِي ثِفَالٍ الْمُرِّيِّ، عَنْ رَبَاحِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ بْنِ حُوَيْطِبٍ، عَنْ جَدَّتِهِ، عَنْ أَبِيهَا، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لاَ وُضُوءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهِ
রাবাহ ইবনু আবদির রহমান ইবনি আবী সুফিয়ান ইবনি হুআইত্বিব হতে তার দাদীর সূত্রে, তিনি তার পিতার (সাঈদ ইবনু যায়িদ) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (সাঈদ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি ওযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলেনি তার ওযু হয়নি। -হাসান, ইবনু মাজাহ, হাদিস নং ৩৯৯
ওযু শুরু করার দোআ:
অযু শুরু করার সময় প্রচলিত এই দোআটি পড়া যায়,
بسم الله العلى العظيم والحمدلله على ملت الا سلام
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম ওয়াল হামদুলিল্লাহি আলা মিল্লাতিল ইসলাম।
অর্থ: আল্লাহ তায়ালার নামে শুরু করছি, এবং সকল প্রশাংসা আল্লাহ তায়ালার, যিনি ইসলামের দৌলত প্রদান করেছেন।
কবজি ধোয়ার দোআ:
এরপর হাতের কবজি ধোয়ার সময় এই দোআটি পড়া যায়,
اللهم انى اسئلك اليه من والبركة واعوذبك من الشؤم والهلاكة
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আছআলুকা ইলাইহি মান্নি ওয়াল বারাকাতি ওয়া আউ'যুবিকা মিনাশ শু-মি ওয়াল হালাকাতি।
অর্থ: আয় আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কল্যাণ ও প্রাচুর্যের প্রার্থনা করছি, এবং ধ্বংস ও অমঙ্গল থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি।
কুলি করার দোআ:
কুলি করার সময় এই দোআ পড়া যায়,
اللهم اعنى على تلا وة القران وذكرك وشكر وحسن عبادتك
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আয়িন্নী আলা তিলাওয়াতিল কুরআনি ওয়া জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা।
অর্থ: আয় আল্লাহ, আমাকে কুরআন তিলাওয়াত, আপনার জিকির ও শোকর এবং সুন্দর মতো আপনার ইবাদত করার তাওফিক দিন।
নাকে পানি দেওয়ার দোআ:
নাকে পানি দেয়ার সময় পাঠ করার দোআ,
اللهم ارحنى رائحة الجنة والا ترحنى رائحةالنار
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আরিহনী- রায়িহাতাল জান্নাতি ওয়া রায়িহাতান্না-র।
অর্থ: আয় আল্লাহ, জান্নাতের সুগন্ধি দ্বারা আমার নাসারন্ধ্র পুলকিত করুন এবং জাহান্নামের দুর্গন্ধ আমাকে শোকাবেন না।
চেহারা ধোয়ার দোআ:
চেহারা ধোয়ার সময় পঠনীয় দোআ,
اللهم بيّض وجهى يوم تبيّضُ وجوه وسودّ وجوه
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বায়্যিদ অযহী ইয়াওমা তাবইয়াদ্দু উযূহুন ওয়া তাছওয়াদ্দু উযূহ।
অর্থ: আয় আল্লাহ যে দিন কতক চেহারা উজ্জ্বল হবে আর কতক চেহারা মলিন হবে সেই দিন আপনি আমার চেহারা উজ্জ্বল রাখুন।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
يوم تبيض وجوه وسودّوجوهٌ
‘সেদিন হাশরের ময়দানে কতক চেহারা উজ্জ্বল হবে আর কতক চেহারা হবে মলিন।’ -সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১০৬
আমালে সালেহ করেছে এমন সকল মুমিনের চেহারা আল্লাহ তায়ালার দয়া ও অনুগ্রহে ঝলমলে আলোকোজ্জ্বল হবে, অন্যদিকে কাফের মুশরিকদের এবং পাপাচারীদের চেহারা হবে মলিন ও কালিমাযুক্ত। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وجوه يومئذناضبرةه الى ربها نا ظرةه وجوه يومئذباسرة تظن ان يفعل بها فاقرة-
কেয়ামতের দিন কিছু চেহারা হবে উজ্জ্বল, তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে, আর সে দিন কিছু চেহারা থাকবে উদাস, তারা ধারণা করবে, তাদের সঙ্গে কঠিন আচরণ করা হবে। -সূরা: কিয়ামাহ, আয়াত: ২২/২৫
আর এক জায়গায় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وجوه يو مئذ مسفرة ضاحكة مستبشرة- وجوه يو مئذ عليها غبرة- ترهقها قترة- اولئك هم الكفرة الفجرة
‘এবং বহু মুখমণ্ডল সেদিন হবে উজ্জ্বল, সহাস্য ও প্রফুল্ল; এবং বহু মুখমণ্ডল সেদিন ধুলোমলিন হবে, তাদেরকে কালিমাচ্ছন্ন করে রাখবে, তারাই হবে কাফের পাপিষ্টের দল। -সূরা: আবাসা, আয়াত: ৩৮-৪২
কেয়ামতের দিন অঙ্গসমুহ উজ্জ্বল হবে:
উপরোক্ত আয়াতসমূহের সপক্ষে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হাশরের ময়দানে মানুষের চেহারার উজ্জ্বলতা কিংবা মলিনতা দেখেই বোঝা যাবে তার ঠিকানা কোথায় হবে এবং তার পরিণতি কি হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, যেসব মানুষ দুনিয়ায় নিয়মিত অযু করেছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের চেহারা, কপাল এবং হাত-পাসহ সংশ্লিষ্ট অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঝলমলে উজ্জ্বল করে তুলবেন, দূর থেকে এসব অঙ্গ প্রতঙ্গের উজ্জ্বলতা দেখে লোকজন বুঝতে পারবে, লোকটি নামাজের উদ্দেশ্যে নিয়মিত অজু করত। -বুখারি, মুসলিম, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ
অন্য এক হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের লোকজনের চেহারা উজ্জ্বল সাদা থাকবে। তাদের হাত পা সাদা হবে এবং চমকাতে থাকবে। কেয়ামত অবশ্যই সঙ্গটিত হবে, সেদিন চেহারার উজ্জ্বলতা হবে আল্লাহ তায়ালার দরবারে মর্যাদাশীল হওয়ার আলামত, আর চেহারায় মলিনতা আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আলামত, এই কারণেই বুজুর্গানে দ্বীন অযুর মধ্যে চেহারা ধোয়ার সময় এই দোআ করতে বলেছেন- আয় আল্লাহ, যেদিন কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে আর কিছু চেহারা মলিন হবে সেদিন আপনি আমার চেহারা উজ্জ্বল করে দিয়েন।
ডান হাত ধোয়ার দোআ:
কনুইসহ ডান হাত ধোয়ার সময় এই দোআ পড়বে,
اللهم اعطنى كتابى بيمينى وحاسبنى حسابايسيرا
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা- তু'তিনী- কিতাবী- বিইয়ামিনী- ওয়া হাসিবনী- হিসাবান ইয়াসিরা।
অর্থ: আয় আল্লাহ আমার আমলনামা আমার ডান হাতে দিন এবং আমার হিসাব সহজ করে দিন, এই দোআটি কুরআন শরিফের সেই আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেখানে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
فأماّمن اوتى كتابه بيمينه- فسوف يحاسب حسابايسيرا- وينقلب الى اهله مسرورا
যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তার থেকে সহজ হিসাব নেয়া হবে, তারপর সে তার পরিজনের মাঝে সানন্দে ফিরে যাবে। -সূরা: ইনশিকাক, আয়াত: ৭-৯
অর্থাৎ, তার থেকে মামুলি হিসাব নিয়ে বলা হবে, যাও সোজা জান্নাতে চলে যাও, অন্যদিকে যার থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব নেয়া হবে, তাকে বলা হবে, তোমার সকল কর্মকাণ্ড অনুপুঙ্খ হিসাব দাও, এই প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে,
من نو قش الحساب عذب
যার থেকে অনুপুঙ্খ হিসাব নেয়া হবে, সে আজাবে নিপতিত হবে। -বুখারি মুসলিম, আবু দাউদ, আহমদ
যে ব্যক্তির পুরোপুরি হিসাব নিকাশ নেয়া হবে, তাকে এক এক করে প্রত্যেক কাজের হিসাব দিতে হবে। এমন ব্যক্তির সর্বশেষ পরিনাম হলো জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া। আল্লাহ তায়ালা আমদের সকলকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। ঈমানের দৌলত এমন মূল্যবান যে, যখন আল্লাহ তায়ালা এই দৌলত কাউকে দান করেন, তখন তিনি তার সঙ্গে সদয় আচরণ করেন। যদি তার সামগ্রিক জীবন আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের মধ্যে দিয়ে পরিচালিত হয়, যদি তার থেকে একটু আধটু সগিরা গোনাহ হয়েও যায় তবু আল্লাহ তায়ালা তার হিসাব কিতাবের ক্ষেত্রে পুঙ্খানুপুঙ্খ জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না। তার সঙ্গে বরং সহজ মামুলি আচরন করা হবে, তাকে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার দরবারে হাজির করা হবে। এরপর তার আমলনামা অত্যন্ত হালকা ও সহজভাবে নিরীক্ষন করা হবে। তারপর আল্লাহ তায়ালা তার দয়া ও অনুগ্রহের বহি:প্রকাশ ঘটাবেন। তাকে জান্নাতে পাঠিয়ে দেবেন।
আর যেই ব্যক্তির সামগ্রিক জীবন গুনাহ খাতার মধ্যে অতিবাহিত হয় এবং আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে বেখবর, একদম ভুলে বসে আছে আল্লাহ তায়ালাকে, রোজ হাশরে আল্লাহ পাকের দরবারে হাজির হওয়ার অনুভূতিই যার মাঝে নেই এমন ব্যক্তির কাছ থেকে অক্ষরে অক্ষরে হিসাব নেয়া হবে। আর যার থেকে এভাবে অনুপুঙ্খ হিসাব নেয়া হবে, অবশ্যই তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। তাই বুজুর্গানে দ্বিন বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা সমীপে এই প্রার্থনা কর, আয় আল্লাহ ডান হাতে আমার আমলনামা দিন এবং আমার থেকে সহজ হিসেব নিন। আরবি দোআ মুখস্থ না থাকলে, মাতৃভাষায় দোআ করলেও চলবে।
বাম হাত ধোয়ার দোআ:
বাম হাত ধোয়ার সময় এই দোআ পড়বে,
اللهم لا تعطنى كتابى بشما لى ولا من وراء ظهرى
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা- তু'তিনী- কিতাবী- বিইয়ামিনী- ওয়া লা- মিন ওরায়ি জহরী-।
অর্থ: আয় আল্লাহ আমার আমলনামা আমার বাম হাতে অথবা পেছন দিক দিয়ে দিবেন না। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ঈমানদার ও নেক বান্দাদের আমলনামা তাদের ডান হাতে দেয়া হবে, আর কাফের, বদকার ও পাপিষ্টদের আমলনামা পেছন দিক থেকে বাম হাতে দেয়া হবে। এই কারণেই এই দোআ করা উচিৎ যে, আয় আল্লাহ, আমার আমলনামা আমার পেছন দিক দিয়ে বাম হাতে দিয়েন না, আমি যেন কাফের, বদকার ও পাপিষ্টদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যাই।
মাথা মাসেহ করার দোয়া:
মাথা মাসেহ করার সময় এই দোআ পড়া যায়,
اللهم اظللنى تحت ظل عرشك يوم لاظل الا ظل عرشك
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মায আজিল্লানি তাহতা জিল্লা আরশিকা ইয়াওমা লা জিল্লা ইল্লা জিল্লা আরশুকা।
অর্থ: আয় আল্লাহ! আপনি আমাকে ওই দিন আপনার আরশের ছায়া দিন, যে দিন আপনার আরশের ব্যতিত কোনো ছায়া থাকবে না। একথা সর্বজন জ্ঞাত যে, হাশরের ময়দানে যখন গোটা হাশরবাসী একত্র হবে, তখন সেখানে ভীষন উত্তাপ থাকবে, সূর্য একদম কাছে চলে আসবে। হাদিস শরিফে এসেছে, মানুষ সে দিন নিজের নিজ ঘামের ভেতরে হাবুডুবু খেতে থাকবে, কারো হাঁটু পর্যন্ত ঘাম থাকবে, কারো থাকবে কোমর পর্যন্ত, আবার কারো থাকবে বুক পর্যন্ত। কেউ আবার ঠোঁট পর্যন্ত ঘামে হাবুডুবু খেতে থাকবে, এভাবে মানুষ নিজ নিজ ঘামে ডুবে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এই হাশর দিবসের উত্তপ্ততা থেকে হেফাজত করুন। এই কারণেই বুজুর্গানে দ্বীন এই দোআ শিক্ষা দিয়েছেন, আমরা যেন অযুতে প্রতিনিয়ত বলি যে, আয় আল্লাহ! যে দিন আপনার আরশের ছায়া ব্যতিত কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আপনি আপনার আরশের ছায়ায় আমাকে আশ্রয় দেবেন।
গর্দান মাসেহ করার দোআ:
গর্দান মাসেহ করার সময় এই দোআ পাঠ করা উচিত,
اللهم اعتق رقبتى من النار
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ'তিক রাকাবাতি মিনান্নার।
অর্থ: আয় আল্লাহ আমার গর্দান জাহান্নামের আগুন থেকে নিরাপদ করে দিন।
ডান পা ধোয়ার দোআ:
ডান পা ধোয়ার সময় এই দোআ পড়বে,
اللهم ثبت قدمى على الصراط يوم تضل فيه الا قدام
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাব্বিত কদামি আলাচ্ছিরাতি ইয়াওমা তাদিল্লু ফিহিল আকদাম।
অর্থ: আয় আল্লাহ! সেদিন আমাকে পুলসিরাতের ওপর দৃঢ়পদ রাখুন, যেদিন অনেকের পা পিছলে যাবে। পুলসিরাত হলো জাহান্নামের উপর স্থাপিত একটি সরু পাতলা পুল, এই পুল পেরিয়ে মানুষ জান্নাতে যাবে, যে ব্যক্তি জাহান্নামী হবে, তার পা সেই পুলের ওপর পদস্খলিত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
বাম পা ধোয়ার দোআ:
এরপর বাম পা ধোয়ার সময় এই দোআ পড়বে,
اللهم اجعل ذنبى مغفوراً وسعيى مشكورا وتجارتى لن تبورا
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মায আলনি যাম্বি মাগফুরান, ওয়া ছা'য়ী মাশকুরান ওয়া তিজারতী লান তাবূর।
অর্থ: আয় আল্লাহ, আমার গুনাহ মাফ করে দিন। আমি যা কিছু করেছি, আপনি আপনার অনুগ্রহে তার প্রতিদান দিন এবং আমি যে ব্যবসায় করেছি, অর্থাৎ যেই জীবন আমি অতিবাহিত করে এসেছি, আসলেই যা ছিল ব্যবসায়, এর ফলাফল আখেরাতে প্রকাশ পাবেই। সুতরাং আয় আল্লাহ, আমার জীবনের বেচাবিক্রিকে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না। বরং এই ব্যবসায় আমাকে লাভবান করে আখেরাতে এর দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন।
মোটকথা, ওযুর মধ্যে উল্লিখিত দোআসমূহের আমল নিয়মিতভাবে করার চেষ্টা করা উচিত। দোআগুলো অর্থবহ এবং অত্যন্ত উপকারী ও কার্যকর। এসব দোআ আরবিতে মুখস্থ করে নেয়া উত্তম। তবে ততক্ষন পর্যন্ত দোয়াগুলো মাতৃ ভাষায় করবে যতক্ষন আরবিতে মুখস্ত না হয়। মুখস্ত হয়ে গেলে আরবিতে করা ভালো। এসব দোআ করা হলে এর একটি প্রতিক্রিয়া ব্যাপক। নিজের অনুভূতিতে আখিরাত চলে আসে। নিজের মন ও মননে পরকালের ছবি ভেসে ওঠে। দীর্ঘ দীঘল পরপারের জীবনের প্রতিচ্ছবি অঙ্কিত হয়। আর এর ফলে আশা করা যায়, আল্লাহ তায়ালা আমাদের বাহ্যিক পবিত্রতার পাশাপাশি অন্তর্জগতও পরিষ্কার এবং পবিত্র করে দেবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এসব দোআর আমল করার তাওফিক দান করুন এবং এগুলোর বরকত আমাদেরকে দান করুন।
জেনে রাখা প্রয়োজন যে, অযুর প্রারম্ভে, অযু করাকালীন সময়ে এবং অযু সমাপনান্তে কয়েকটি দোআ পাঠের নির্দেশনা হাদিসে এসেছে এবং যা নিয়মিত আমল করলে অনেক ফজিলতের কথাও বলা হয়েছে। ফজিলতপূর্ণ সেই দোআগুলোও এখানে তুলে ধরা হলো-
অজু করার সময় এ দোয়াটি পড়তে থাকাঃ
অযু করার প্রারম্ভে বিসমিল্লাহ পাঠের কথা পূর্বেই বলা হয়েছে। অযু করাকালীন সময়ে মাঝে মাঝে এই দোআ পাঠ করা বিধেয়-
اَللَّخُمَّ اغْفِرْلِىْ ذَنْبِى وَ وَسِّعْلِىْ فِىْ دَارِىْ وَبَارِكْ لِىْ فِىْ رِزْقِىْ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি জাম্বি ওয়া ওয়াসসি’লি ফি দারি, ওয়া বারিকলি ফি রিজকি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার গুনাগ ক্ষমা করে দিন। আমার ঘর-বাড়িতে প্রশস্ততা দান করুন। আমার রিজিকে বরকত-প্রাচুর্য দিন। -সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৯৯০৮; কানজুল উম্মাল, হাদিস : ৫০৮০; মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৭২৭৩; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ২৯৩৯১
অযুর শেষে কালিমা শাহাদাত পাঠের উপকারিতা:
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থ: ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল।’ -মুসলিম, হাদিস : ২৩৪; তিরমিজি, হাদিস : ৫৫
উপকারিতা: অযুর শেষে কালিমা শাহাদাত পাঠ করার ফযিলত হিসেবে হাদিসে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি এই কালিমা শাহাদাত পাঠ করবে, জান্নাতের ৮ টি দরজাই তার জন্য খুলে দেয়া হবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতের প্রবেশ করতে পারবে। এ সম্পর্কিত একটি হাদিস এখানে উল্লেখ করছি-
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ كَانَتْ عَلَيْنَا رِعَايَةُ الإِبِلِ فَجَاءَتْ نَوْبَتِي فَرَوَّحْتُهَا بِعَشِيٍّ فَأَدْرَكْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَائِمًا يُحَدِّثُ النَّاسَ فَأَدْرَكْتُ مِنْ قَوْلِهِ " مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلاَّ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ " . قَالَ فَقُلْتُ مَا أَجْوَدَ هَذِهِ . فَإِذَا قَائِلٌ بَيْنَ يَدَىَّ يَقُولُ الَّتِي قَبْلَهَا أَجْوَدُ . فَنَظَرْتُ فَإِذَا عُمَرُ قَالَ إِنِّي قَدْ رَأَيْتُكَ جِئْتَ آنِفًا قَالَ " مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ - أَوْ فَيُسْبِغُ - الْوُضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ
উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের উট চরানোর দায়িত্ব নিজেদের উপরে ছিল। আমার পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তাঁর এ কথা শুনতে পেলাম, “যে মুসলিম সুন্দর রুপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি তার প্রতি নিবদ্ধ রেখে দুই রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।”
উক্বা বলেন, কথাটি শুনে আমি বলে উঠলাম ওহ, কথাটি কত উত্তম! তখন আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন, আগের কথাটি আরো উত্তম। আমি সে দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি উমর (রাঃ)। তিনি আমাকে বললেন তোমাকে দেখেছি, এইমাত্র এসেছা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগে বলেছেন, তোমাদের যে ব্যাক্তি কামিল বা পূর্ণরূপে উযূ করে এই দু’আ পাঠ করবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নাই, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসুল” তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতের প্রবেশ করতে পারবে। -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৪৬, ইফাবা প্রকাশনী, তাহারাত বা পবিত্রতা অধ্যায়
অতপর এ দোয়াটি পড়া-
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَوَّابِينَ ، واجْعَلْني مِنَ المُتَطَهِّرِينَ ، سُبْحانَكَ اللَّهُمَّ وبِحَمْدِكَ ، أشْهَدُ أنْ لا إلهَ إِلاَّ أنْتَ ، أسْتَغْفِرُكَ وأتُوبُ إِلَيْكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ-আলনি মিনাত-তাওয়া-বিনা, ওয়াজ-আলনি মিনাল-মুতা-ত্বাহহিরিন। সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, আশহাদু আন-লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আসতাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলাইকা।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। মহা পবিত্র আপনি হে আল্লাহ্! আপনার প্রশংসার সাথে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি আপনার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার দিকেই ফিরে যাচ্ছি (অর্থাৎ তাওবা করছি)।’ -মুসলিম, হাদিস : ২৩৪; তিরমিজি, হাদিস : ৫৫
অযুর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উল্লেখিত দোয়াগুলো অনেক ফজিলতপূর্ণ যা অজুকারীকে পবিত্র ও নেককার বান্দায় পরিণত করে দেয়। যার জন্য জান্নাতের সব দরজা উন্মুক্ত থাকে।
সুতরাং, মুমিন মুসলমানের উচিত, একান্ত মনোযোগের সঙ্গে সুন্নাতের অনুসরণে সবসময় অযু অবস্থায় থাকতে সচেষ্ট হওয়া। অযুর পরিপূর্ণ ফজিলতলাভে যথাযথভাবে অযু করা। হাদিসে ঘোষিত অযুর ফজিলত ও উপকারিতাগুলো অর্জন করা।
ওযূ অবস্থায় ঘুমন্ত ব্যক্তির জন্য ফেরেশতারা দোআ করেন:
যেসব সৌভাগ্যবান মানুষের জন্য ফেরেশতামন্ডলী দো‘আ করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ওযূ অবস্থায় ঘুমন্ত ব্যক্তি। এ প্রসঙ্গে হাদীছে এসেছে: ইবনু ওমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের এই শরীরকে পবিত্র রাখ। আল্লাহ তোমাদেরকে পবিত্র করবেন। যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (ওযূ অবস্থায়) রাত অতিবাহিত করবে, অবশ্যই একজন ফেরেশতা তার সঙ্গে রাত অতিবাহিত করবেন। রাতে যখনই সে পার্শ্ব পরিবর্তন করে তখনই সে ফেরেশতা বলেন, হে আল্লাহ! আপনার এই বান্দাকে ক্ষমা করুন। কেননা সে পবিত্রাবস্থায় (ওযূ অবস্থায়) ঘুমিয়েছে’। -আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ১ম খন্ড (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, ১৪০১), পৃঃ ৪০৮-৪০৯; হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী হাদীছটিকে জাইয়িদ বলেছেন। দ্রঃ ফাতহুল বারী, ১১তম খন্ড (সঊদী আরব: রিয়াসাতু ইদারাতিল বুহুছিল ইলমিয়্যাহ), পৃঃ ১০৯
অন্য বর্ণনায় এসেছে ওযূ অবস্থায় ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হ’লেও ফেরেশতা তার জন্য দো‘আ করেন। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (ওযূ অবস্থায়) ঘুমায় তার সঙ্গে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন, সে ঘুম থেকে জাগ্রত হ’লে ফেরেশতা বলেন, হে আল্লাহ! তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা করে দাও, কেননা সে পবিত্রাবস্থায় ঘুমিয়েছে’। -আমীল আলাউদ্দীন ফারেসী, আল-ইহসান ফী তাক্বরীবি ছহীহ ইবনে হিববান, ৩য় খন্ড (বৈরুত: মুয়াস্সাতুর রিসালাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪০৮ হিঃ), পৃঃ ৩২৮-২২৯; হাদীছ ছহীহ। দ্রঃ ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ১ম খন্ড (রিয়াদ: মাকতাবাতুল মাআরিফ, ১৪০৯ হিঃ) পৃঃ ৩১৭
শেষের কথা:
আমাদের উচিত সবসময় অযু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সবসময় অযু অবস্থায় থাকার তাওফিক দান করুন। পবিত্রতা অবলম্বনকারী ও তাওবাহকারী হিসেবে কবুল করুন। দুনিয়াতে উত্তম রিজিক দান করুন, মৃত্যুর আগে জানা অজানা সকল গোনাহ ও অপরাধ ক্ষমা করুন এবং পরকালে রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআতলাভে ধন্য হয়ে তাঁর সঙ্গী হিসেবে চিরস্থায়ী জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন।
১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:২৯
নতুন নকিব বলেছেন:
শুকরান।
জাজাকুমুল্লাহু খাইরান।
২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:১০
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আহারে!!!
এতো বড় লেখা পড়লাম না শুধু ছোট্ট করে যদি জানান
এই দোয়াগুলি নবী কি পড়েছেন?
১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৪৭
নতুন নকিব বলেছেন:
মন্তব্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
আসলে অযতে এই দোআগুলো পাঠ করা মোটেই আবশ্যিক নয়। শুধু বিসমিল্লাহ বলে অযু করলেও অযু হয়ে যাবে। তবে যাদের সাওয়াব অর্জনের আকাঙ্খা অধিক, কেবলমাত্র তারাই এগুলো পড়তে পারেন। আর হাদিসে বর্ণিত চমৎকার অর্থবোধক এসব দোআ নিয়মিত নবিজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠ করেননি তবে কখনও কখনও বা মাঝে মাঝে যে পড়েছেন, সেটা বলা যায়। তিনি সাহাবায়ে কেরামের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে শেখানোর জন্য অনেক দোআ রেখে গেছেন। তবে এখানে উল্লেখিত সকল দোআ তিনি পড়েছেন এমন তথ্য আমার কাছে নেই এবং সবগুলো দোআর রেফারেন্সও এখানে উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। এখানে প্রদত্ত কোনো কোনো দোআ হাদিস হতে সংগৃহিত এবং সম্ভবত: কোনো কোনোটা বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম ও ইসলামী স্কলারদের পছন্দনীয় আমল হতে সংগ্রহকৃত।
সর্বোপরি প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করার সময়ে প্রাসঙ্গিক দোআ পাঠের এই বিষয়টি অতি সহজ কোনো কাজ নয় এবং এটি সাধারণের জন্য তো নয়ই, বরং যারা অধিক ইবাদতগুজার তাদেরও সকলের জন্য নয়। মোট কথা, যারা একান্তই বেশি কিছু প্রত্যাশা করেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআ'লা আপন দয়ায় সেই পরিমান সময়, সুযোগ এবং ঐকান্তিক আগ্রহ ও সক্ষমতা দান করে থাকেন- সুন্নাত এবং মুস্তাহাব জাতীয় এমন অনেক আমল শুধু সেই মুষ্টিমেয় সংখ্যক বিশেষ লোকদের জন্যই।
শুভকামনা জানবেন।
৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:১০
মাহফুজ ই এলাহী জামি বলেছেন: ❤️
১৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪৫
নতুন নকিব বলেছেন:
পোস্টে উপস্থিতি জানিয়ে যাওয়ায় ধন্যবাদ আপনাকে।
৪| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:২৮
জুল ভার্ন বলেছেন: অযু করার সময় শুধু বিছমিল্লাহ বলি।
১৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:১৪
নতুন নকিব বলেছেন:
কোনো সমস্যা নেই। বিসমিল্লাহ পাঠ করে শুরু করলে অযু হয়ে যাবে। তবে সম্ভব হলে অযুর ভেতরে মাঝে মাঝে اَللَّخُمَّ اغْفِرْلِىْ ذَنْبِى وَ وَسِّعْلِىْ فِىْ دَارِىْ وَبَارِكْ لِىْ فِىْ رِزْقِىْ দোআটি পাঠ করা এবং অযু শেষে আকাশের দিকে তাকিয়ে কালিমা শাহাদাত অর্থাৎ, أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ এবং اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَوَّابِينَ ، واجْعَلْني مِنَ المُتَطَهِّرِينَ ، سُبْحانَكَ اللَّهُمَّ وبِحَمْدِكَ ، أشْهَدُ أنْ لا إلهَ إِلاَّ أنْتَ ، أسْتَغْفِرُكَ وأتُوبُ إِلَيْكَ দোআটি পাঠ করা উত্তম। এই শেষোক্ত কালিমা শাহাদাত পাঠ করার ফযিলত হিসেবে হাদিসে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি এই কালিমা শাহাদাত পাঠ করবে, জান্নাতের ৮ টি দরজাই তার জন্য খুলে দেয়া হবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতের প্রবেশ করতে পারবে। এ সম্পর্কিত একটি হাদিস এখানে উল্লেখ করছি-
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ كَانَتْ عَلَيْنَا رِعَايَةُ الإِبِلِ فَجَاءَتْ نَوْبَتِي فَرَوَّحْتُهَا بِعَشِيٍّ فَأَدْرَكْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَائِمًا يُحَدِّثُ النَّاسَ فَأَدْرَكْتُ مِنْ قَوْلِهِ " مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلاَّ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ " . قَالَ فَقُلْتُ مَا أَجْوَدَ هَذِهِ . فَإِذَا قَائِلٌ بَيْنَ يَدَىَّ يَقُولُ الَّتِي قَبْلَهَا أَجْوَدُ . فَنَظَرْتُ فَإِذَا عُمَرُ قَالَ إِنِّي قَدْ رَأَيْتُكَ جِئْتَ آنِفًا قَالَ " مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ - أَوْ فَيُسْبِغُ - الْوُضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ
উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের উট চরানোর দায়িত্ব নিজেদের উপরে ছিল। আমার পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তাঁর এ কথা শুনতে পেলাম, “যে মুসলিম সুন্দর রুপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি তার প্রতি নিবদ্ধ রেখে দুই রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।”
উক্বা বলেন, কথাটি শুনে আমি বলে উঠলাম ওহ, কথাটি কত উত্তম! তখন আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন, আগের কথাটি আরো উত্তম। আমি সে দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি উমর (রাঃ)। তিনি আমাকে বললেন তোমাকে দেখেছি, এইমাত্র এসেছা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগে বলেছেন, তোমাদের যে ব্যাক্তি কামিল বা পূর্ণরূপে উযূ করে এই দু’আ পাঠ করবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নাই, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসুল” তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতের প্রবেশ করতে পারবে। -সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৪৬, ইফাবা প্রকাশনী, তাহারাত বা পবিত্রতা অধ্যায়
আসলে পোস্টে উল্লেখিত অর্থবহ চমৎকার দোআগুলো একটা সময়ে পড়ার চেষ্টা করতাম। ব্যস্ততায় পূর্ণ কর্মজীবনে যদিও এখন আর সেভাবে রেগুলার এসবের উপরে আমল করা হয়ে ওঠে না তবুও সময় সুযোগ পেলে মাঝে মধ্যে পাঠ করতে চেষ্টা করি। মূলত: এগুলো যাতে বিস্মৃত হয়ে না যাই সে কারণে স্মরণে গেঁথে রাখার উদ্দেশ্যে এবং অনুসন্ধিৎসু কারও যদি সামান্য প্রয়োজনে আসে সেই চিন্তা থেকেই এই পোস্টের অবতারণা।
দীর্ঘ প্রতিমন্তব্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
কৃতজ্ঞতা এবং শুভকামনা।
৫| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:০৬
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: যারা নবীর চেয়ে বেশী পরহেসগার তাদেরর থেকে সাববধান।
নবী যা করেন নি তার চেয়ে ভালো কাজ আমরা করছি এই ওয়াগুলি পড়ে অযুতে!
১৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৫৮
নতুন নকিব বলেছেন:
এইক্ষেত্রে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে বেশি পরহেযগার হওয়ার কথাটা দু:খজনক। তাঁর চেয়ে অধিক পরহেযগার কেউ হতে পারেন না। এটা সম্ভবও নয়। তিনি আল্লাহর রাসূল। প্রেরিত পয়গাম্বার। তাঁর মর্যাদা কারও সাথে তুলনীয় নয়। সমস্ত নবী রাসূলদের মধ্যেও তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন মহান আল্লাহ তাআ'লা।
পোস্টের কোথাও বলা হয়নি যে, এই দোআগুলো অযুতে আবশ্যিক কিংবা এগুলো পড়তেই হবে। আরেকটি কথা, এই দোআগুলো যে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও পাঠ করেননি, এ বিষয়টিও কিন্তু প্রমাণ সাপেক্ষ। বস্তুত: অর্থবহ এসব দোআ ইসলাম সম্মন্ধে যারা অধিক জ্ঞান রাখেন সেইসব বিজ্ঞ উলামায়ে আহলে হক এবং আয়িম্মায়ে কেরাম দ্বারাই সংকলিত এবং প্রণীত। তারপরেও পোস্টে বলা হয়েছে যে, অযুর কয়েকটি দোআ ছাড়া উল্লেখিত বাকি দোআগুলো একান্তই ঐচ্ছিক এবং মুস্তাহাব পর্যায়ের আমলের বিষয়। কারও ভালো লাগলে পড়তে পারেন। সর্বোপরি এসব নিয়ে কোনও ধরণের জোরজবরদস্তি করার অবকাশ আদৌ নেই। সুতরাং, অনিচ্ছা হলে যে কেউ এগুলো এড়িয়ে যেতে পারেন।
কিছু লোক তো এখন এমনও দেখা যায়, যারা বিভিন্ন ধরণের সুন্নাত ও নফল নামাজ আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত ও হিফজ করা, দোআ মুনাজাত করা, দরূদ ও সালাম পাঠ করা, জিকির আজকার এবং অযিফা পাঠসহ ইত্যাদি অনেক আমলকেই আচার বিচার বাদে ধারাবাহিকভাবে বিদআত বা নাজায়েজ বলতে পছন্দ করে থাকেন। আসলে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায় যে, তারা ইসলামের সঠিক বিষয় তুলে ধরতেই এগুলো করে থাকেন! না কি, মানুষদেরকে আমল বিমুখ করতেই তাদের এসব উদ্যোগ! যাই হোক, আল্লাহ তাআ'লার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি, তিনি আমাদের জানা অজানা ভুল ত্রুটি ক্ষমা করুন। সুপথপ্রাপ্তির সুযোগ দান করুন।
শুভকামনা জানবেন, প্রিয় ভাই।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:১৭
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
সুন্দরতম পোস্টে++++