নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত বাণীর আলোকে মহান আল্লাহ তাআ\'লার পরিচয়ঃ

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫৮

মহান আল্লাহ তাআ'লার নামের সুদৃশ্য ক্যালিগ্রাফি: অন্তর্জাল হইতে সংগৃহীত

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত বাণীর আলোকে মহান আল্লাহ তাআ'লার পরিচয়ঃ

মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের সৃষ্টিকর্তা, লালনকারী, জীবনদাতা এবং সকল কিছুর মালিক। তিনি চিরঞ্জীব, চির অমর, চির অমুখাপেক্ষী। কারও সাথে তাঁর কোনো অংশীদারি নেই। তিনি কারও থেকে জন্ম নেননি। কাউকে জন্ম দেননি। সকল কিছুর উপরে অনিঃশেষ, অপরিমেয়, অতুলনীয় এবং অভাবনীয় ক্ষমতার অধিকারী। তাঁর বড়ত্ব পরিমাপ করা মানবীয় জ্ঞানের উর্ধ্বে। তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা অফুরন্ত ও অবিনশ্বর। তিনি মালিকুল মুলক, সকল রাজার শ্রেষ্ঠ রাজা, রাজাধিরাজ। তিনি আহকামুল হাকিমীন, সকল বিচারপতির বিচারপতি। তিনি আকবার, কাবির, সকলের বড়, সবকিছুর বড়, তাঁর উপরে কেউ নেই। তিনি আউয়ালুল আউয়ালিন, তাঁর পূর্বে কেউ ছিল না। তিনি আখিরাল আখিরীন, তাঁর পরেও কেউ থাকবে না। তিনি কোন কিছু ইচ্ছে করলেই হয়ে যায়। তাঁর ইচ্ছাই চূড়ান্ত। তাঁর কাছে কেউ কৈফিয়ত চাওয়ার অধিকার কারও নেই। এই জগত জাহান তাঁর ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। তিনি নিজেকে প্রকাশ করতে চেয়েছেন বলে বিশ্বজাহানের সকল কিছুর সৃজন। তিনি ইচ্ছে করেছেন বলে মানব দানব কুল কায়েনাতের সৃষ্টি। তিনি ইচ্ছে করেছেন বলে ভূমন্ডল নভোমন্ডলের এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য সত্ত্বালাভ করেছে। আবার তিনি ইচ্ছে করলেই সুন্দর এই পৃথিবী এবং তামাম সৃষ্টিকুল ধ্বংসের মাধ্যমে কায়েম হয়ে যাবে বিভীষিকাময় কেয়ামত। তাঁর ক্ষমতা, তাঁর পরিচয়, তাঁর গুণাবলী, তাঁর বৈশিষ্ট্য, তাঁর বড়ত্ব, তাঁর মহত্ব, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব, তাঁর ব্যাপ্তি ও ক্ষমতার অতি সামান্যই আমরা অনুধাবন করতে পারি, উপলব্ধিতে ধারণ করতে পারি, মানব কল্পনায় ঠাঁই দিতে সক্ষম হই। পবিত্র কুরআনুল হাকিমের অনেক আয়াতে বিভিন্ন সূরায় তাঁর পরিচয় বিবৃত হয়েছে। চলুন, প্রিয় পাঠক, এমন কিছু আয়াত এবং সেগুলোর অনুবাদ পাঠ করি আজ। আশা করি, নিশ্চয়ই ভালো লাগবে-

আল্লাহ এক ও একক, সকল কিছু সম্মন্ধে তিনি সুপরিজ্ঞাতঃ

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ

বলুন, ‘তিনিই আল্লাহ্‌, এক-অদ্বিতীয়। -সূরা আল ইখলাস, আয়াত ০১

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ۖ هُوَ الرَّحْمَـٰنُ الرَّحِيمُ

তিনিই আল্লাহ্‌, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্‌ নাই, তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা; তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু। -সূরা আল হাশর, আয়াত ২২

ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ ۖ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوهُ ۚ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ

তিনিই তো আল্লাহ্‌, তোমাদের প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্‌ নাই। তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা; সুতরাং তোমরা তাঁহার ‘ইবাদত কর; তিনি সব কিছুর তত্ত্বাবধায়ক। -সূরা আল আনআম, আয়াত ১০২

মহামহিমান্বিত রাজাধিরাজ একমাত্র তিনিইঃ

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ

তিনিই আল্লাহ্‌, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্‌ নাই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমান্বিত। উহারা যাহাকে শরীক স্থির করে আল্লাহ্‌ তাহা হইতে পবিত্র, মহান। -সূরা আল হাশর, আয়াত ২৩

সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও উদ্ভাবক তিনিইঃ

هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ ۖ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ ۚ يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

তিনিই আল্লাহ্‌, সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, রুপদাতা, তাঁহারই সকল উত্তম নাম। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে, সমস্তই তাঁহার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। -সূরা আল হাশর, আয়াত ২৪

তিনি চির অমুখাপেক্ষীঃ

اللَّهُ الصَّمَدُ

‘আল্লাহ্‌ কাহারও মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁহার মুখাপেক্ষী। -সূরা আল ইখলাস, আয়াত ০২

لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ

‘তিনি কাহাকেও জন্ম দেন নাই এবং তাঁহাকেও জন্ম দেওয়া হয় নাই। -সূরা আল ইখলাস, আয়াত ০৩

وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

‘এবং তাঁহার সমতুল্য কেহই নাই।’ -সূরা আল ইখলাস, আয়াত ০৪

দৃষ্টি তাঁহাকে অবধারণ করিতে অক্ষমঃ

لَّا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الْأَبْصَارَ ۖ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ

দৃষ্টি তাঁহাকে অবধারণ করিতে পারে না; কিন্তু অবধারণ করেন সকল দৃষ্টি এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত। -সূরা আল আনআম, আয়াত ১০৩

রাত দিনের তিনিই স্রষ্টাঃ

اللَّهُ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًا ۚ إِنَّ اللَّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ

আল্লাহ্‌ই তোমাদের বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন রাত্রিকে এবং আলোকোজ্জ্বল করিয়াছেন দিবসকে। আল্লাহ্‌ তো মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। -সূরা আল মুমিন, আয়াত ৬১

সকল কিছুর স্রষ্টা তিনিইঃ

ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ فَأَنَّىٰ تُؤْفَكُونَ

তিনিই আল্লাহ্‌, তোমাদের প্রতিপালক, সব কিছুর স্রষ্টা; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্‌ নাই; সুতরাং তোমাদেরকে কোথায় ফিরাইয়া নেওয়া হইতেছে? -সূরা আল মুমিন, আয়াত ৬২

كَذَٰلِكَ يُؤْفَكُ الَّذِينَ كَانُوا بِآيَاتِ اللَّهِ يَجْحَدُونَ

এইভাবেই বিপথগামী করা হ্য় তাহাদেরকে যাহারা আল্লাহ্‌র নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে। -সূরা আল মুমিন, আয়াত ৬৩

পৃথিবীকে বাসোপযোগী করিয়াছেন তিনিইঃ

اللَّهُ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ قَرَارًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَصَوَّرَكُمْ فَأَحْسَنَ صُوَرَكُمْ وَرَزَقَكُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ ۚ ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ ۖ فَتَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

আল্লাহ্‌ই তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করিয়াছেন বাসোপযোগী এবং আকাশকে করিয়াছেন ছাদ এবং তিনি তোমাদের আকৃতি গঠন করিয়াছেন এবং তোমাদের আকৃতি করিয়াছেন সুন্দর এবং তোমাদেরকে দান করিয়াছেন উৎকৃষ্ট রিযিক; তিনিই আল্লাহ্‌, তোমাদের প্রতিপালক। জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্‌ কত মহান! -সূরা আল মুমিন, আয়াত ৬৪

তিনি চিরঞ্জীবঃ

هُوَ الْحَيُّ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ فَادْعُوهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ ۗ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্‌ নাই। সুতরাং তোমরা তাঁহাকেই ডাক, তাঁহার আনুগত্যে একনিষ্ঠ হইয়া। সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্রই। -সূরা আল মুমিন, আয়াত ৬৫

তন্দ্রা অথবা নিদ্রা তাহাকে স্পর্শ করে নাঃ

اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁহাকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে সমস্ত তাঁহারই। কে সে, যে তাঁহার অনুমতি ব্যতীত তাঁহার নিকট সুপারিশ করিবে? তাহাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যাহা কিছু আছে তাহা তিনি অবগত। যাহা তিনি ইচ্ছা করেন তদ্ব্যতীত তাঁহার জ্ঞানের কিছুই তাহারা আয়ত্ত করিতে পারে না। তাঁহার ‘কুরসী’ আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যাপ্ত; ইহাদের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁহাকে ক্লান্ত করে না; আর তিনি মহান, শ্রেষ্ঠ। -সূরা আল বাকারাহ, আয়াত ২৫৫

ক্ষমতা দেয়ার এবং কেড়ে নেয়ার মালিক একমাত্র তিনিঃ

قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاءُ وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَاءُ ۖ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

বল, ‘হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ্! তুমি যাহাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান কর এবং যাহার নিকট হইতে ইচ্ছা ক্ষমতা কাড়িয়া লও; যাহাকে ইচ্ছা তুমি ইজ্জত দান কর, আর যাহাকে ইচ্ছা তুমি হীন কর। কল্যাণ তোমার হাতেই। নিশ্চয়ই তুমি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। -সূরা আল ইমরান, আয়াত ২৬

মৃত হইতে জীবন এবং জীবন্তকে মৃত্যুদানকারী তিনিইঃ

تُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ ۖ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ ۖ وَتَرْزُقُ مَن تَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ

‘তুমি রাত্রিকে দিবসে পরিণত এবং দিবসকে রাত্রিতে পরিণত কর: তুমিই মৃত হইতে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটাও, আবার জীবন্ত হইতে মৃতের আবির্ভাব ঘটাও। তুমি যাহাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান কর।’ -সূরা আল ইমরান, আয়াত ২৭

আস্‌মান, যমীন এবং অন্ধকার ও আলোর স্রষ্টা তিনিইঃ

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّورَ ۖ ثُمَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُونَ

সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌রই যিনি আস্‌মান ও যমীন সৃষ্টি করিয়াছেন, আর সৃষ্টি করিয়াছেন অন্ধকার ও আলো। এতদ্‌সত্ত্বেও কাফিরগণ তাহাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করায়। -সূরা আল আনআম, আয়াত ০১

خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۚ تَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ

তিনি যথাযথভাবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন; উহারা যাহা শরীক করে তিনি তাহার ঊর্ধ্বে। -সূরা আন নাহল, আয়াত ০৩

তিনিই মৃত্তিকা হইতে সৃষ্টি করেছেন আমাদেরকেঃ

هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن طِينٍ ثُمَّ قَضَىٰ أَجَلًا ۖ وَأَجَلٌ مُّسَمًّى عِندَهُ ۖ ثُمَّ أَنتُمْ تَمْتَرُونَ

তিনিই তোমাদেরকে মৃত্তিকা হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন, অতঃপর এক কাল নির্দিষ্ট করিয়াছেন এবং আর একটি নির্ধারিত কাল আছে যাহা তিনিই জ্ঞাত, এতদ্সত্ত্বেও তোমরা সন্দেহ কর। -সূরা আল আনআম, আয়াত ০২

গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু সম্মন্ধে তিনি সম্যক অবগতঃ

وَهُوَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ وَفِي الْأَرْضِ ۖ يَعْلَمُ سِرَّكُمْ وَجَهْرَكُمْ وَيَعْلَمُ مَا تَكْسِبُونَ

আসমান ও যমীনে তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু তিনি জানেন এবং তোমরা যাহা অর্জন কর তাহাও তিনি অবগত আছেন। -সূরা আল আনআম, আয়াত ০৩

তাঁহার অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে নাঃ

وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ ۚ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۚ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ

অদৃশ্যের কুঞ্জি তাঁহারই নিকট রহিয়াছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেহ তাহা জানে না। জলে ও স্থলে যাহা কিছু আছে তাহা তিনিই অবগত, তাঁহার অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে না। মৃত্তিকার অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না অথবা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক কোন বস্তু নাই যাহা সু্স্পষ্ট কিতাবে নাই। -সূরা আল আনআম, আয়াত ৫৯

সকল কিছুর প্রত্যাবর্তন ও পরিসমাপ্তি তাঁহার দিকেইঃ

وَهُوَ الَّذِي يَتَوَفَّاكُم بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُم بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيهِ لِيُقْضَىٰ أَجَلٌ مُّسَمًّى ۖ ثُمَّ إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

তিনিই রাত্রিকালে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যাহা কর তাহা তিনি জানেন। অতঃপর তাঁহার দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অনন্তর তোমরা যাহা কর সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে তিনি অবহিত করিবেন। -সূরা আল আনআম, আয়াত ৬০

وَأَنَّ إِلَىٰ رَبِّكَ الْمُنتَهَىٰ

আর এই যে, সমস্ত কিছুর সমাপ্তি তো আমার প্রতিপালকের নিকট, -সূরা আন নাজম, আয়াত ৪২

রক্ষক ফেরেশতা নিযুক্ত করে বান্দাদের হেফাজত করেন তিনিইঃ

وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ ۖ وَيُرْسِلُ عَلَيْكُمْ حَفَظَةً حَتَّىٰ إِذَا جَاءَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ تَوَفَّتْهُ رُسُلُنَا وَهُمْ لَا يُفَرِّطُونَ

তিনিই স্বীয় বান্দাদের উপর পরাক্রমশালী এবং তিনিই তোমাদের রক্ষক প্রেরণ করেন। অবশেষে যখন তোমাদের কাহারও মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন আমার প্রেরিতরা তাহার মৃত্যু ঘটায় এবং তাহারা কোন ত্রুটি করে না। -সূরা আল আনআম, আয়াত ৬১

মৃত শস্য-বীজ ও আঁটি হইতে জীবন্ত গাছ ও লতাগুল্ম অংকুরিত করেন তিনিইঃ

إِنَّ اللَّهَ فَالِقُ الْحَبِّ وَالنَّوَىٰ ۖ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَمُخْرِجُ الْمَيِّتِ مِنَ الْحَيِّ ۚ ذَٰلِكُمُ اللَّهُ ۖ فَأَنَّىٰ تُؤْفَكُونَ

আল্লাহ্ই শস্য-বীজ ও আঁটি অংকুরিত করেন, তিনিই প্রাণহীন হইতে জীবন্তকে বাহির করেন এবং জীবন্ত হইতে প্রাণহীনকে বাহির করেন। তিনিই তো আল্লাহ্; সুতরাং তোমরা কোথায় ফিরিয়া যাইবে? -সূরা আল আনআম, আয়াত ৯৫

ঊষার উন্মেষ ঘটিয়ে পৃথিবীকে আলোয় ভরিয়ে দেন তিনিইঃ

فَالِقُ الْإِصْبَاحِ وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ

তিনিই ঊষার উন্মেষ ঘটান, তিনিই বিশ্রামের জন্য রাত্রি এবং গণনার জন্য সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করিয়াছেন; এ সবই পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিরূপণ। -সূরা আল আনআম, আয়াত ৯৬

জলে স্থলে পথপ্রাপ্তির জন্য নক্ষত্ররাজি সৃষ্টি করিয়াছেন তিনিইঃ

وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ النُّجُومَ لِتَهْتَدُوا بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۗ قَدْ فَصَّلْنَا الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্র সৃষ্টি করিয়াছেন যেন তদ্দ্বারা স্থলের ও সমুদ্রের অন্ধকারে তোমরা পথ পাও। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আমি তো নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করিয়াছি। -সূরা আল আনআম, আয়াত ৯৭

গোটা মানবজাতিকে একই ব্যক্তি হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন তিনিঃ

وَهُوَ الَّذِي أَنشَأَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ فَمُسْتَقَرٌّ وَمُسْتَوْدَعٌ ۗ قَدْ فَصَّلْنَا الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَفْقَهُونَ

তিনিই তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং তোমাদের জন্য দীর্ঘ ও স্বল্পকালীন বাসস্থান রহিয়াছে। অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য আমি তো নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করিয়াছি। -সূরা আল আনআম, আয়াত ৯৮

আকাশ হতে বারি বর্ষন করে মরা মাটিতে সর্বপ্রকার উদ্ভিদের চারা উদ্‌গম করেন তিনিইঃ

وَهُوَ الَّذِي أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ نَبَاتَ كُلِّ شَيْءٍ فَأَخْرَجْنَا مِنْهُ خَضِرًا نُّخْرِجُ مِنْهُ حَبًّا مُّتَرَاكِبًا وَمِنَ النَّخْلِ مِن طَلْعِهَا قِنْوَانٌ دَانِيَةٌ وَجَنَّاتٍ مِّنْ أَعْنَابٍ وَالزَّيْتُونَ وَالرُّمَّانَ مُشْتَبِهًا وَغَيْرَ مُتَشَابِهٍ ۗ انظُرُوا إِلَىٰ ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَيَنْعِهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكُمْ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

তিনিই আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করেন, অতঃপর উহা দ্বারা আমি সর্বপ্রকার উদ্ভিদের চারা উদ্‌গম করি; অনন্তর উহা হইতে সবুজ পাতা উদ্‌গত করি, পরে উহা হইতে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করি, এবং খেজুরবৃক্ষের মাথি হইতে ঝুলন্ত কাঁদি বাহির করি আর আংগুরের উদ্যান সৃষ্টি করি এবং যায়তূন ও দাড়িম্বও। ইহারা একে অন্যের সদৃশ এবং বিসদৃশও। লক্ষ্য কর উহার ফলের প্রতি, যখন উহা ফলবান হয় এবং উহার পরিপক্বতা প্রাপ্তির প্রতি। মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য উহাতে অবশ্যই নিদর্শন রহিয়াছে। -সূরা আল আনআম, আয়াত ৯৯

আল্লাহ তাআ'লা সকল প্রকার শিরক ও অংশী হইতে পবিত্রঃ

وَجَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ الْجِنَّ وَخَلَقَهُمْ ۖ وَخَرَقُوا لَهُ بَنِينَ وَبَنَاتٍ بِغَيْرِ عِلْمٍ ۚ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يَصِفُونَ

তাহারা জিনকে আল্লাহর শরীক করে, অথচ তিনিই ইহাদেরকে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং উহারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর প্রতি পুত্র-কন্যা আরোপ করে; তিনি পবিত্র-মহিমান্বিত! এবং উহারা যাহা বলে তিনি তাহার ঊর্ধ্বে। -সূরা আল আনআম, আয়াত ১০০

بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ أَنَّىٰ يَكُونُ لَهُ وَلَدٌ وَلَمْ تَكُن لَّهُ صَاحِبَةٌ ۖ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

তিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, তাঁহার সন্তান হইবে কিরূপে? তাঁহার তো কোন স্ত্রী নাই। তিনিই তো সমস্ত কিছু সৃষ্টি করিয়াছেন এবং প্রত্যেক বস্তু সম্বন্ধে তিনিই সবিশেষ অবহিত। -সূরা আল আনআম, আয়াত ১০১

সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজিসহ সমগ্র সৃষ্টিকুল তাঁহারই আজ্ঞাধীনঃ

إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ ۗ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্ যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনিই দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন যাহাতে উহাদের একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে; আর সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি- যাহা তাঁহারই আজ্ঞাধীন, তাহা তিনিই সৃষ্টি করিয়াছেন। জানিয়া রাখ, সৃজন ও আদেশ তাঁহারই। মহিমময় বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ্। -সূরা আল আ'রাফ, আয়াত ৫৪

সুসংবাদবাহীরূপে বায়ুর প্রেরণকারী তিনিইঃ

وَهُوَ الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا أَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَأَنزَلْنَا بِهِ الْمَاءَ فَأَخْرَجْنَا بِهِ مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ ۚ كَذَٰلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتَىٰ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

তিনিই স্বীয় অনুগ্রহের প্রাক্কালে বায়ুকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন। যখন উহা ঘন মেঘ বহন করে তখন আমি উহা নির্জীব ভূখন্ডের দিকে চালনা করি, পরে উহা হইতে বৃষ্টি বর্ষণ করি; তৎপর উহার দ্বারা সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করি। এইভাবে আমি মৃতকে জীবিত করি যাহাতে তোমরা শিক্ষা লাভ কর। -সূরা আল আ'রাফ, আয়াত ৫৭

ভূমি হইতে আহরিত যাবতীয় ফল ও ফসল ইহার প্রতিপালকের আদেশেই উৎপন্ন হয়ঃ

وَالْبَلَدُ الطَّيِّبُ يَخْرُجُ نَبَاتُهُ بِإِذْنِ رَبِّهِ ۖ وَالَّذِي خَبُثَ لَا يَخْرُجُ إِلَّا نَكِدًا ۚ كَذَٰلِكَ نُصَرِّفُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَشْكُرُونَ

এবং উৎকৃষ্ট ভূমি-ইহার ফসল ইহার প্রতিপালকের আদেশে উৎপন্ন হয় এবং যাহা নিকৃষ্ট তাহাতে কঠোর পরিশ্রম না করিলে কিছুই জন্মায় না। এইভাবে আমি কৃতজ্ঞ সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন বিভিন্নভাবে বিবৃত করি। -সূরা আল আ'রাফ, আয়াত ৫৮

কেয়ামত অবশ্যম্ভাবী, সন্দেহাতীতভাবে উহা সংঘটিত হইবেইঃ

أَتَىٰ أَمْرُ اللَّهِ فَلَا تَسْتَعْجِلُوهُ ۚ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ

আল্লাহর আদেশ আসিবেই; সুতরাং উহা ত্বরান্বিত করিতে চাহিও না। তিনি মহিমান্বিত এবং উহারা যাহাকে শরীক করে তিনি তাহার ঊর্ধ্বে। -সূরা আন নাহল, আয়াত ০১

তিনি ওহী প্রেরণ করেন সতর্কতা প্রদানের জন্যঃ

يُنَزِّلُ الْمَلَائِكَةَ بِالرُّوحِ مِنْ أَمْرِهِ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ أَنْ أَنذِرُوا أَنَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنَا فَاتَّقُونِ

তিনি তাঁহার বান্দাদের মধ্যে যাহার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় নির্দেশে ওহীসহ ফিরিশতা প্রেরণ করেন এই বলিয়া যে, তোমরা সতর্ক কর, নিশ্চয়ই আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই; সুতরাং আমাকে ভয় কর। -সূরা আন নাহল, আয়াত ০২

শুক্রবিন্দু হইতে মানুষ সৃষ্টি করিয়াছেন তিনিঃ

خَلَقَ الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُّبِينٌ

তিনি শুক্র হইতে মানুষ সৃষ্টি করিয়াছেন; অথচ দেখ, সে প্রকাশ্য বিতন্ডাকারী! -সূরা আন নাহল, আয়াত ০৪

আমাদের বহুবিদ উপকারে তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করিয়াছেনঃ

وَالْأَنْعَامَ خَلَقَهَا ۗ لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ وَمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ

তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করিয়াছেন; তোমাদের জন্য উহাতে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার রহিয়াছে। এবং উহা হইতে তোমরা আহার করিয়া থাক। -সূরা আন নাহল, আয়াত ০৫

সূর্য ও চন্দ্রসহ মহাশুণ্যের যাবতীয় কিছুকে নিয়মাধীন করিয়াছেন তিনিইঃ

يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ ۚ وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِن قِطْمِيرٍ

তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করান এবং দিবসকে প্রবিষ্ট করান রাত্রিতে, তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে করিয়াছেন নিয়মাধীন; প্রত্যেকে পরিভ্রমণ করে এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত। তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের প্রতিপালক। আধিপত্য তাঁহারই। এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাহাদেরকে ডাক তাহারা তো খর্জুর আঁটির আবরণেরও অধিকারী নয়। -সূরা আল ফাতির, আয়াত ১৩

নভোমন্ডলে ও ভূতলে একমাত্র ইলাহ তিনিইঃ

وَهُوَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ إِلَـٰهٌ وَفِي الْأَرْضِ إِلَـٰهٌ ۚ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْعَلِيمُ

তিনিই ইলাহ্‌ নভোমন্ডলে, তিনিই ইলাহ্‌ ভূতলে এবং তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। -সূরা যুখরুফ, আয়াত ৮৪

সার্বভৌম ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিপতি তিনিইঃ

وَتَبَارَكَ الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَعِندَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

কত মহান তিনি, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং উহাদের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুর সার্বভৌম অধিপতি! কিয়ামতের জ্ঞান কেবল তাঁহারই আছে এবং তাঁহারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হইবে। -সূরা যুখরুফ, আয়াত ৮৫

আমরা হাসি কিংবা কাঁদি, আমাদের সকল অবস্থাই তাঁর নিয়ন্ত্রাণাধীনঃ

وَأَنَّهُ هُوَ أَضْحَكَ وَأَبْكَىٰ

আর এই যে, তিনিই হাসান, তিনিইঁ কাঁদান, -সূরা আন নাজম, আয়াত ৪৩

তিনিই মারেন, তিনিই বাঁচানঃ

وَأَنَّهُ هُوَ أَمَاتَ وَأَحْيَا

আর এই যে, তিনিই মারেন, তিনিই বাঁচান, -সূরা আন নাজম, আয়াত ৪৪

তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারীঃ

وَأَنَّهُ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْأُنثَىٰ

আর এই যে, তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারী। -সূরা আন নাজম, আয়াত ৪৫

مِن نُّطْفَةٍ إِذَا تُمْنَىٰ

শুক্রবিন্দু হইতে, যখন উহা স্খলিত হয়, -সূরা আন নাজম, আয়াত ৪৬

পুনরুত্থান ঘটাইবার দায়িত্ব তাঁহারইঃ

وَأَنَّ عَلَيْهِ النَّشْأَةَ الْأُخْرَىٰ

আর এই যে, পুনরুত্থান ঘটাইবার দায়িত্ব তাঁহারই, -সূরা আন নাজম, আয়াত ৪৭

তিনিই অভাবমুক্ত করেন ও সম্পদ দান করেনঃ

وَأَنَّهُ هُوَ أَغْنَىٰ وَأَقْنَىٰ

আর এই যে, তিনিই অভাবমুক্ত করেন ও সম্পদ দান করেন, -সূরা আন নাজম, আয়াত ৪৮

وَأَنَّهُ هُوَ رَبُّ الشِّعْرَىٰ

আর এই যে, তিনি শি‘রা নক্ষত্রের মালিক। -সূরা আন নাজম, আয়াত ৪৯

অপরাধী বহু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করিয়াছেন তিনিইঃ

وَأَنَّهُ أَهْلَكَ عَادًا الْأُولَىٰ

আর এই যে, তিনিই প্রাচীন ‘আদ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করিয়াছিলেন, -সূরা আন নাজম, আয়াত ৫০

وَثَمُودَ فَمَا أَبْقَىٰ

এবং সামূদ সম্প্রদায়কেও; কাহাকেও তিনি বাকি রাখেন নাই, -সূরা আন নাজম, আয়াত ৫১

وَقَوْمَ نُوحٍ مِّن قَبْلُ ۖ إِنَّهُمْ كَانُوا هُمْ أَظْلَمَ وَأَطْغَىٰ

আর ইহাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়কেও, উহারা ছিল অতিশয় জালিম ও অবাধ্য। -সূরা আন নাজম, আয়াত ৫২

وَالْمُؤْتَفِكَةَ أَهْوَىٰ

উল্টানো আবাসভূমিকে নিক্ষেপ করিয়াছিলেন, -সূরা আন নাজম, আয়াত ৫৩

فَغَشَّاهَا مَا غَشَّىٰ

উহাকে আচ্ছন্ন করিল কী সর্বগ্রাসী শাস্তি! -সূরা আন নাজম, আয়াত ৫৪

প্রতিপালকের কোন্‌ অনুগ্রহ সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করিবে?

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكَ تَتَمَارَىٰ

তবে তুমি তোমার প্রতিপালকের কোন্‌ অনুগ্রহ সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করিবে? -সূরা আন নাজম, আয়াত ৫৫

هَـٰذَا نَذِيرٌ مِّنَ النُّذُرِ الْأُولَىٰ

অতীতের সতর্ককারীদের ন্যায় এই নবীও এক সতর্ককারী। -সূরা আন নাজম, আয়াত ৫৬

أَزِفَتِ الْآزِفَةُ

কিয়ামত আসন্ন, -সূরা আন নাজম, আয়াত ৫৭

لَيْسَ لَهَا مِن دُونِ اللَّهِ كَاشِفَةٌ

আল্লাহ্‌ ব্যতীত কেহই ইহা ব্যক্ত করিতে সক্ষম নয়। -সূরা আন নাজম, আয়াত ৫৮

أَفَمِنْ هَـٰذَا الْحَدِيثِ تَعْجَبُونَ

তোমরা কি এই কথায় বিস্ময় বোধ করিতেছ! -সূরা আন নাজম, আয়াত ৫৯

وَتَضْحَكُونَ وَلَا تَبْكُونَ

এবং হাসিঠাট্টা করিতেছ! ক্রন্দন করিতেছ না? -সূরা আন নাজম, আয়াত ৬০

وَأَنتُمْ سَامِدُونَ

তোমরা তো উদাসীন, -সূরা আন নাজম, আয়াত ৬১

فَاسْجُدُوا لِلَّهِ وَاعْبُدُوا ۩

অতএব আল্লাহ্‌কে সিজ্‌দা কর এবং তাঁহারই ‘ইবাদত কর। -সূরা আন নাজম, আয়াত ৬২

পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর তোমার সুমহান প্রতিপালকের নামেরঃ

سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى

তুমি তোমার সুমহান প্রতিপালকের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর, -সূরা আল আ'লা, আয়াত ০১

তিনি ধাপে ধাপে সৃষ্টি করেন এবং সুবিন্যাস্ত করেনঃ

الَّذِي خَلَقَ فَسَوَّىٰ

যিনি সৃষ্টি করেন ও সুঠাম করেন। -সূরা আল আ'লা, আয়াত ০২

وَالَّذِي قَدَّرَ فَهَدَىٰ

এবং যিনি পরিমিত বিকাশ সাধন করেন ও পথনির্দেশ করেন, -সূরা আল আ'লা, আয়াত ০৩

وَالَّذِي أَخْرَجَ الْمَرْعَىٰ

এবং যিনি তৃণাদি উৎপন্ন করেন, -সূরা আল আ'লা, আয়াত ০৪

فَجَعَلَهُ غُثَاءً أَحْوَىٰ

পরে ‍উহাকে ধূসর আবর্জনায় পরিণত করেন। -সূরা আল আ'লা, আয়াত ০৫

অফুরন্ত নেয়ামতের দাতা একমাত্র তিনিইঃ

وَ اٰتٰىکُمۡ مِّنۡ کُلِّ مَا سَاَلۡتُمُوۡهُ ؕ وَ اِنۡ تَعُدُّوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ لَا تُحۡصُوۡهَا ؕ اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَظَلُوۡمٌ کَفَّارٌ ﴿۳۴﴾

তিনি তোমাদেরকে সেই সকল কিছুই দিয়াছেন যাহা তোমরা চাহিয়াছো (তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় সব কিছুই পাইয়াছো) আর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করতে চাইলে কক্ষনো তাহার সংখ্যা নির্ধারণ করিতে পারিবে না। মানুষ অবশ্যই বড়ই যালিম, বড়ই অকৃতজ্ঞ। -সূরা ইবরাহিম, আয়াত ৩৪

জগতসমূহ আলোকোদ্ভাসিত হয় তাঁরই অনি:শেষ নূরেঃ

২৪:৩৫ اَللّٰهُ نُوۡرُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ مَثَلُ نُوۡرِهٖ کَمِشۡکٰوۃٍ فِیۡهَا مِصۡبَاحٌ ؕ اَلۡمِصۡبَاحُ فِیۡ زُجَاجَۃٍ ؕ اَلزُّجَاجَۃُ کَاَنَّهَا کَوۡکَبٌ دُرِّیٌّ یُّوۡقَدُ مِنۡ شَجَرَۃٍ مُّبٰرَکَۃٍ زَیۡتُوۡنَۃٍ لَّا شَرۡقِیَّۃٍ وَّ لَا غَرۡبِیَّۃٍ ۙ یَّکَادُ زَیۡتُهَا یُضِیۡٓءُ وَ لَوۡ لَمۡ تَمۡسَسۡهُ نَارٌ ؕ نُوۡرٌ عَلٰی نُوۡرٍ ؕ یَهۡدِی اللّٰهُ لِنُوۡرِهٖ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ یَضۡرِبُ اللّٰهُ الۡاَمۡثَالَ لِلنَّاسِ ؕ وَ اللّٰهُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿ۙ۳۵﴾

আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি, তাঁহার জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার, যাহার মধ্যে আছে একটি প্রদীপ; প্রদীপটি একটি কাঁচের আবরণের মধ্যে স্থাপিত, কাঁচের আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্র সদৃশ; ইহা প্রজ্জ্বলিত করা হয় পুতঃপবিত্র যাইতূন বৃক্ষের তেল দ্বারা যাহা প্রাচ্যের নয়, প্রতিচ্যেরও নয়, আগুন ওকে স্পর্শ না করিলেও যেন ওর তেল উজ্জ্বল আলো দিতেছে; জ্যোতির উপর জ্যোতি! আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ নির্দেশ করেন তাঁহার জ্যোতির দিকে; আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ। -সূরা আন নূর, আয়াত ৩৫

সৃষ্টিকর্তা এবং রিযিকদাতা তিনিইঃ

৩০:৪০ اَللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ ثُمَّ رَزَقَکُمۡ ثُمَّ یُمِیۡتُکُمۡ ثُمَّ یُحۡیِیۡکُمۡ ؕ هَلۡ مِنۡ شُرَکَآئِکُمۡ مَّنۡ یَّفۡعَلُ مِنۡ ذٰلِکُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ ﴿۴۰﴾

আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করিয়াছেন, অতঃপর তোমাদেরকে রিয্ক দিয়াছেন; তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাইবেন এবং পরে তোমাদেরকে জীবিত করিবেন। তোমাদের দেব-দেবীগুলোর এমন কেহ আছে কি, যে এই সবের কোন একটিও করিতে পারে? তাহারা যাহাদেরকে শরীক করে, আল্লাহ তাহা হইতে পবিত্র, মহান। -সূরা আর রূম, আয়াত ৪০

বাতাস প্রবাহিত করেন মহান আল্লাহ তাআ'লাঃ

৩০:৪৮ اَللّٰهُ الَّذِیۡ یُرۡسِلُ الرِّیٰحَ فَتُثِیۡرُ سَحَابًا فَیَبۡسُطُهٗ فِی السَّمَآءِ کَیۡفَ یَشَآءُ وَ یَجۡعَلُهٗ کِسَفًا فَتَرَی الۡوَدۡقَ یَخۡرُجُ مِنۡ خِلٰلِهٖ ۚ فَاِذَاۤ اَصَابَ بِهٖ مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖۤ اِذَا هُمۡ یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ ﴿ۚ۴۸﴾

আল্লাহ! তিনি বায়ু প্রেরণ করেন; ফলে এটা মেঘমালাকে সঞ্চারিত করে, অতঃপর তিনি ইহাকে যেমন ইচ্ছা আকাশে ছড়াইয়া দেন, পরে একে খন্ড বিখন্ড করেন এবং তুমি দেখিতে পাও ওটা হইতে নির্গত হয় বারিধারা; অতঃপর যখন তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাহাদেরকে ইচ্ছা তাহাদের নিকট ওটা পৌঁছাইয়া দেন তখন তাহারা হয়ে ওঠে হর্ষোৎফুল্ল। -সূরা আর রূম, আয়াত ৪৮

হাদিসের আলোকে আল্লাহর পরিচয়:

প্রখ্যাত সাহাবি হযরত আবূ যর গিফারি (রা.) রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করিয়াছিলেন যে, তিনি তাঁর রব্বকে দেখিয়াছেন কি না। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বলিয়াছেন, আমি কিভাবে তাঁহাকে দেখিতে পারি? আমি তো একটি নূর দেখিয়াছি মাত্র। -মুসলিম ও বুখারী

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার অবস্থান:

আল্লাহ তাআ'লা কোথায় আছেন বা কেথায় অবস্থান করিয়া থাকেন? এমন প্রশ্ন আমাদের মনে অনেক সময়ই আসিয়া থাকিতে পারে। এই প্রশ্ন অন্তরে জাগ্রত হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নহে। কারণ, মহান আল্লাহ তাআ'লা আমাদের সৃষ্টিকর্তা, মালিক এবং প্রভু। তিনি আমাদের একমাত্র প্রতিপালক। আমাদের সবচেয়ে আপনজন তিনি। আমরা তাঁহারই ইবাদত করি। তিনি কোথায় আছেন, কোথায় থাকেন তিনি, সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখা তাঁহার একজন বান্দা হিসেবেই আমাদের জানা জরুরি বৈকি। বরং, বান্দা যাহার বন্দেগি করে, তাঁহার সম্পর্কে যথাসম্ভব পূর্ণাঙ্গ জানাশোনা না থাকিলে তাঁহার বন্দেগিতে সংশয় থাকিয়া যাওয়াও বিচিত্র কিছু নহে।

এ বিষয়ে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ভাষ্যঃ

আল্লাহ কোথায় আছেন, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি নিজেই কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করিয়াছেন-

الرَّحْمَـٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَىٰ

পরম করুণাময় আরশের উপর সমাসীন আছেন। -সুরা ত্ব-হা-, আয়াত ০৫

৭:৫৪ اِنَّ رَبَّکُمُ اللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۟ یُغۡشِی الَّیۡلَ النَّهَارَ یَطۡلُبُهٗ حَثِیۡثًا ۙ وَّ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ وَ النُّجُوۡمَ مُسَخَّرٰتٍۭ بِاَمۡرِهٖ ؕ اَلَا لَهُ الۡخَلۡقُ وَ الۡاَمۡرُ ؕ تَبٰرَکَ اللّٰهُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۵۴﴾

নিশ্চয়ই তোমাদের রর হইতেছেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করিয়াছেন। অতঃপর তিনি স্বীয় আরশের উপর সমাসীন হন। তিনি দিনকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন যাহাতে ওরা একে অন্যকে অনুসরণ করিয়া চলে ত্বরিত গতিতে; সূর্য, চাঁদ ও নক্ষত্ররাজী সবই তাঁহার হুকুমের অনুগত। জানিয়া রাখ, সৃষ্টির একমাত্র কর্তা তিনিই, আর হুকুমের একমাত্র মালিকও তিনি, সারা জাহানের রব আল্লাহ হইলেন বারাকাতময়। -সুরা আল আ'রাফ, আয়াত ৫৪

১০:৩ اِنَّ رَبَّکُمُ اللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ یُدَبِّرُ الۡاَمۡرَ ؕ مَا مِنۡ شَفِیۡعٍ اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ اِذۡنِهٖ ؕ ذٰلِکُمُ اللّٰهُ رَبُّکُمۡ فَاعۡبُدُوۡهُ ؕ اَفَلَا تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۳﴾

নিশ্চয়ই আল্লাহই হইতেছেন তোমাদের রব, যিনি আসমানসমূহকে এবং যমীনকে সৃষ্টি করিয়াছেন ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হইলেন, তিনি প্রত্যেক কাজ পরিচালনা করিয়া থাকেন। তাঁহার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করার কেহ নাই; এমন আল্লাহ হইতেছেন তোমাদের রব। অতএব তোমরা তাঁহার ইবাদাত কর; তবুও কি তোমরা বুঝিতেছ না? -সুরা ইউনুস, আয়াত ০৩

১৩:২ اَللّٰهُ الَّذِیۡ رَفَعَ السَّمٰوٰتِ بِغَیۡرِ عَمَدٍ تَرَوۡنَهَا ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ وَ سَخَّرَ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ ؕ کُلٌّ یَّجۡرِیۡ لِاَجَلٍ مُّسَمًّی ؕ یُدَبِّرُ الۡاَمۡرَ یُفَصِّلُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّکُمۡ بِلِقَآءِ رَبِّکُمۡ تُوۡقِنُوۡنَ ﴿۲﴾

আল্লাহই উর্ধ্বদেশে আকাশমন্ডলী স্থাপন করিয়াছেন স্তম্ভ ব্যতীত, তোমরা এটা দেখিতেছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হইলেন এবং সূর্য ও চাঁদকে নিয়মাধীন করিলেন; প্রত্যেকে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করে, তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন যাহাতে তোমরা তোমাদের রবের সাথে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করিতে পার। -সুরা আর রা'দ, আয়াত ০২

২৫:৫৯ ۣالَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَهُمَا فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۚۛ اَلرَّحۡمٰنُ فَسۡـَٔلۡ بِهٖ خَبِیۡرًا ﴿۵۹﴾

তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং ওগুলির মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন; তিনিই রাহমান। তাঁহার সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাহাকে জিজ্ঞেস করিয়া দেখ। -সুরা আল ফুরকান, আয়াত ৫৯

৩২:৪ اَللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَهُمَا فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ؕ مَا لَکُمۡ مِّنۡ دُوۡنِهٖ مِنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا شَفِیۡعٍ ؕ اَفَلَا تَتَذَکَّرُوۡنَ ﴿۴﴾

আল্লাহ, তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের অন্তবর্তী সব কিছু সৃষ্টি করিয়াছেন ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক নাই এবং সাহায্যকারীও নাই, তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করিবে না? -সুরা আস সাজদাহ, আয়াত ০৪

৫৭:৪ هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ؕ یَعۡلَمُ مَا یَلِجُ فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا یَخۡرُجُ مِنۡهَا وَ مَا یَنۡزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَ مَا یَعۡرُجُ فِیۡهَا ؕ وَ هُوَ مَعَکُمۡ اَیۡنَ مَا کُنۡتُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ ﴿۴﴾

তিনিই ছয় দিনে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হইয়াছেন। তিনি জানেন যাহা কিছু ভূমিতে প্রবেশ করে এবং যাহা কিছু তাহা হইতে বাহির হয় এবং আকাশ হইতে যাহা কিছু নামে ও আকাশে যাহা কিছু উত্থিত হয়। তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন, তোমরা যাহা কিছু কর আল্লাহ তাহা দেখেন। -সুরা আল হাদীদ, আয়াত ০৪

৬৭:১৬ ءَاَمِنۡتُمۡ مَّنۡ فِی السَّمَآءِ اَنۡ یَّخۡسِفَ بِکُمُ الۡاَرۡضَ فَاِذَا هِیَ تَمُوۡرُ ﴿ۙ۱۶﴾

তোমরা কি নিশ্চিত আছ যে, আকাশে যিনি রহিয়াছেন তিনি তোমাদেরকেসহ ভূমিকে ধ্বসাইয়া দিবেন না, আর ওটা আকস্মিকভাবে থর থর করে কাঁপতে থাকিবে? -সুরা আল মুলক, আয়াত ১৬

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করিয়াছেন,

وَهُوَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ

আর তিনিই আল্লাহ যিনি আসমানে রহিয়াছেন। -সুরা আনআম, আয়াত ৩

উপরোক্ত আয়াতগুলো হইতে জানা যায়, আল্লাহ তাআ'লা আসমানে আছেন। তাঁহার আরশ আসমানে। কোরআনে এ-ও বলা হইয়াছে যে, আল্লাহ তায়লার ‘কুরসি’, যেখানে তিনি সমাসীন আছেন, তাহা আসমান ও জমিনব্যাপী বিস্তৃত। আল্লাহ তায়ালা যে আসমানে আছেন, ইহার সমর্থনে আরো একটি আয়াত পাওয়া যায়, সুরা আন নাহলে, আল্লাহ তায়লা ইরশাদ করেন,

يَخَافُونَ رَبَّهُم مِّن فَوْقِهِمْ ۩

তাহারা তাহাদের উপরের প্রতিপালককে ভয় করে। -সূরা নাহল, আয়াত ৫০

হাদিসের ভাষ্যঃ

হাদিসের দিকে তাকালেও আল্লাহ তায়ালা যে আসমানে আছেন, তাহার প্রমাণ পাওয়া যায় রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনেক বাণী ও সাহাবীদের উক্তি থেকে। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ সপ্তম আকাশের উপরে উঠাইয়া নিয়াছিলেন মেরাজের উদ্দেশ্যে। সেখানেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হইয়াছিল। -বুখারী ও মুসলিম

এক হাদিসে তিনি ইরশাদ করেন, যাহারা জমিনে আছে তাহাদের প্রতি দয়া করো, তবে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করিবেন। -তিরমিযি

রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার এক ক্রীতদাসীকে জিজ্ঞেস করিলেন, বলতো আল্লাহ কোথায়? সে বলিলো, আসমানে। তারপর তিনি বলিলেন, বলতো আমি কে? সে বলিল, আপনি আল্লাহর রাসূল। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন, একে মুক্ত করিয়া দাও, কারণ সে মুমিনা। -মুসলিম

সাহাবিদের বক্তব্য: রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবিরাও এ ব্যাপারে একই মত পোষণ করিতেন । হযরত আবু বকর (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আসমানের উপরে জীবিত আছেন, কখনোই মৃত হবেন না। -সুনানে দারেমি

ইমামদের অভিমত: আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারককে (রহ.) আল্লাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হইলে তিনি বলিলেন, আল্লাহ আসমানে আরশের উপর আছেন, সৃষ্টি হইতে আলাদা হয়ে। অর্থাৎ, তাঁহার এই উপরে থাকা সৃষ্টির থাকার মতো নহে। চার মাযহাবের ইমামগণও এ ব্যাপারে একমত যে, তিনি আরশের উপরে আছেন, তিনি তাঁহার কোনো সৃষ্টির সাথে তুলনীয় নন।

ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, তাফসিরকারকগণ এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন যে, জাহমিয়ারা আল্লাহ সম্বন্ধে বলে যে, আল্লাহ সর্বত্র আছেন, আল্লাহ তাআলা তাহাদের এ জাতীয় কথা থেকে পবিত্র ও অনেক ঊর্ধ্বে। আর আয়াতের ব্যাখ্যা হইলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাথে আছেন দেখার দ্বারা, শ্রবণের দ্বারা । এই আয়াতের পূর্বের ও শেষের অংশ এ কথারই প্রমাণ বহন করে । -তাফসিরে জালালাইন, ইবনে কাসির

ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর উক্তি: ইমাম আবু হানীফাহ (রহ.) বলেন,

«من قال: لا أعرف ربي في السماء أو في الأرض فقد كفر، وكذا من قال: إنه على العرش ولا أدري العرش أفي السماء أو في الأرض، والله تعالى يُدعى من أعلى لا من أسفل» [الفقه الأكبر 1135]

যে ব্যক্তি বলিবে, আমি জানি না, আমার রব আসমানে না জমিনে – সে কাফির। অনুরূপ (সেও কাফির) যে বলিবে, তিনি আরশে আছেন, তবে আমি জানি না, ‘আরশ আসমানে না জমিনে। -আল ফিকহুল আকবার: ১/১৩৫

ইমাম মালিক (রহ.)-এর উক্তি: তাহার ছাত্র ইয়াহইয়া ইবন ইয়াহইয়া বলেন, একদা আমরা ইমাম মালিক ইবন আনাস (রহ.) এর কাছে বসা ছিলাম, এমন সময় তাহার কাছে এক লোক আসিয়া বলিল,

«يا أبا عبد الله، [الرحمن على العرش استوى]، كيف استوى؟ قال: فأطرق مالك رأسه، حتى علاه الرحضاء، ثم قال: الاستواء غير مجهول، والكيف غير معقول، والإيمان به واجب، والسؤال عنه بدعة، وما أراك إلا مبتدعاً، فأمر به أن يخرج. وفي رواية: الاستواء معلوم والكيف غير معلوم، والإيمان به واجب، والسؤال عنه بدعة. [الاعتقاد للبيهقي [1/67]، حاشية السندي على ابن ماجه [1/167]، حاشية السندي على النسائي [6/38]، مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح [2/17، و13/89]

হে আবু আব্দুল্লাহ! (মহান আল্লাহ বলেন) রহমান (পরম দয়াময় আল্লাহ) আরশের উপর উঠিয়াছেন [সূরা ত্বাহা: ২০:৫] এই উপরে উঠা কীভাবে? এর রূপ ও ধরণ কেমন? প্রশ্নটি শোনামাত্র ইমাম মালিক (রহ.) মাথা নীচু করিলেন, এমনকি তিনি ঘর্মাক্ত হইলেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, ইসতিওয়া শব্দটির অর্থ (উপরে উঠা) সকলের জানা, কিন্তু এর ধরণ বা রূপ অজানা, ইহার উপর ঈমান আনা ওয়াজিব এবং ইহার ধরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা বিদআত। আর আমি তোমাকে বিদআতী ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। অতঃপর তিনি (রহ.) তাকে মজলিস হইতে বাহির করিয়া দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। -ইতিকাদ লিল বাইহাকী ১/৬৭, হাশিয়াতুস সিন্ধী আলা ইবনি মাজাহ ১/১৬৭, মিরকাতুল মাফাতীহ ২/১৭, ১৩/৮৯

ইমাম শাফিঈ (রহ.)-এর উক্তি: তিনি বলেন,

«وأن الله على عرشه في سمائه» تهذيب سنن أبي داود، وإيضاح مشكلاته [2/406].

আর নিশ্চয় আল্লাহ আসমানের উপরে স্বীয় আরশের উপর উঠিয়াছেন। -তাহযীবু সুনানে আবী দাউদ ২/৪০৬

ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বাল (রহ.)-এর উক্তি: মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম আল-কাইসী বলেন, আমি ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বলকে জিজ্ঞেস করিলাম,

«يُحكى عن ابن المبارك أنه قيل له: كيف يُعرف ربنا؟ قال: في السماء السابعة على عرشه، قال أحمد: هكذا هو عندنا» تهذيب سنن أبي داود وإيضاح مشكلاته [2/406].

এ মর্মে ইবনুল মুবারাক (রহ)-কে জিজ্ঞেস করা হইল, আমাদের রবের পরিচয় কীভাবে জানিবো? উত্তরে তিনি বলিলেন, সাত আসমানের উপর আরশে। (এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?) ইমাম আহমাদ (রহ.) বলিলেন, বিষয়টি আমাদের নিকট এ রকমই। -তাহযীবু সুনানে আবী দাউদ ২/৪০৬

উল্লিখিত দলীল-প্রমাণাদি দ্বারা মহান আল্লাহ তাআলার আসমানে বা আরশে অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। -ইসলামি আকিদা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর, মূল : শাইখ মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী, শাইখ মুহাম্মাদ আবদুন নূর মাদানী, অনুবাদ ও সম্পাদনা- ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া, প্রকাশ : ইসলাম হাউজ ডট কম

সুতরাং সুস্থ বিবেকও বলে যে, আল্লাহ যদি তিনি সর্বত্রই বিরাজমান থাকেন তার সত্তাগতভাবে। সুতরাং এটাই সত্য যে, তিনি আসমানে আরশের উপর আছেন। তবে তিনি তাঁহার দেখা, শোনা ও জ্ঞানের দ্বারা সকল বিষয় সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবহিত আছেন।

বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে আল্লাহর অস্তিত্ব:

আবিষ্কার-উদ্ভাবন আবিষ্কারক-উদ্ভাবক এর অস্তিত্বের সত্যতা বিষয়ে ধারণা দেয়, বিশ্বাস জন্মায়। কোনো ঘটনা তাহার সংঘটক বা সম্পাদকের অস্তিত্বের প্রতি নির্দেশ করে শতসিদ্ধভাবে। সরল প্রকৃতিনির্ভর যুক্তিবাদ বলা যাইতে পারে উল্লিখিত ধরনের প্রমাণ প্রক্রিয়াকে। আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ কী? প্রাচীন আরবের জনৈক বেদুইন এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজিয়াছেন এই ধরনের প্রকৃতিনির্ভর যুক্তিবাদের সারল্যে। তিনি বলিলেন, উটের বর্জ্য উটের অস্তিত্বের প্রমাণ, গাধার বর্জ্য গাধার অস্তিত্বের দলিল, পদচিহ্ন, হাটিয়া যাওয়ার প্রমাণ, অতঃপর, কক্ষপথসম্পন্ন আকাশ, পথঘাটবিশিষ্ট জমিন, তরঙ্গসর্বস্ব সাগর প্রজ্ঞাময় স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ না হওয়ার কোনো কারণ নাই। -দ্রঃ আস সায়াদাহ আল আবাদিয়াহ ফিশ শারিয়াহ আল ইসলামিয়াহ : ৪২

বোধ যাদের স্বচ্ছ, বুদ্ধি যাদের উন্মুক্ত, প্রকৃতিনির্ভর এ প্রমাণটি তাদের কাছে স্পষ্ট এবং অকাট্য। তবে দর্শনের পাঁক সৃষ্টিতে যারা অভ্যস্ত এ প্রমাণ তাদের পরীক্ষায় অপর্যাপ্ত। তাদের বক্তব্য, এ প্রমাণটি প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষ। তার মানে, তাহারা হয়তো বলিতে চাহিবেন যে, কিছু আলামত- ইঙ্গিতের নির্ভরতায় ধরিয়া লওয়া হইয়েছে, স্রষ্টার অস্তিত্বের একটা বাস্তবতা আছে।

এ প্রশ্নটি খুবই জোরালো মনে হইতো আগেকার যুগে। কেননা মহাবিশ্ব, মানুষের জ্ঞানের-উপলব্ধির বলয়ে, সরাসরি ও প্রত্যক্ষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সীমানায় আসার মতো একটি বিষয় বলে ধারণা করা হইতো। প্রাচীন ধারণা মতে প্রতিটি জিনিসের সর্বশেষ বিশ্লিষ্ট রূপের একক হলো পরমাণু -এটম। এমনকি নিউটনের কাছেও —আলো— ছোট ছোট পরমাণুর সমন্বয়ের নাম ছিল যা আলোকিত বস্তু হইতে বাহির হইয়া শূন্যে ছড়াইয়া যাইতো। এ-তত্ত্বটিকে corpuscles theory of light বলা হইয়া থাকে।

যতদিন মানুষের অধ্যয়ন ও গবেষণার পদচারণা Microcosmic level – এ সীমিত ছিল ততদিন এ-তত্ত্বও চলিয়াছে বীরদর্পে । কিন্তু, মানুষের জ্ঞান যখনই এই ভাসমান স্তর অতিক্রম করিয়া অতিক্ষুদ্র মহাজাগতিক স্তরে [Microcosmic level] প্রবেশ করার অধিকার পাইল অমনি উল্টাপাল্টা হইয়া গেল সবকিছুই। যে পরমাণুকে মনে করা হইতো অখন্ড, ভাঙ্গন-বিরোধী সেই পরমাণু ভাঙ্গিয়া চূড়িয়া খন্ডিত হইয়া চমক দেখাইল সবাইকে। তাহার জায়গা দখল করিল এমনসব তরঙ্গমালা [waves] যাহা না আসে প্রত্যক্ষের আওতায়, না অনুগত হয় কোন মাপযন্ত্রের। মানুষের জ্ঞানের এ-পরিবর্তন বিংশ শতাব্দীর প্রথম কোয়ার্টারেই সৃষ্টি হয়। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই যুক্তি অথবা প্রমাণ-প্রক্রিয়ার মূলনীতিতেও ঘটে পরিবর্তন।

মহাবিশ্বের কোনো কিছুরই সর্বশেষ প্রকৃতি সরাসরি জানা যায় না, এ-বিষয়টি এখন সুপ্রতিষ্ঠিত। কোনো জিনিসের প্রভাব বা ফলাফল [effects ] দেখিয়া ওই জিনিসটির অস্তিত্ব নিশ্চয়ই আছে বলিয়া বিশ্বাস করে নেওয়া, এতটুকুই শুধু মানুষের পক্ষে সম্ভব। আর এভাবেই প্রত্যক্ষ প্রমাণ বা সরাসরি-যুক্তি-প্রক্রিয়ার যে ধারণা ইতোপূর্বে বদ্ধমূল ছিল, চিড় ধরিল তাহার শক্ত দেয়ালে। বিজ্ঞানের স্বীকৃত বলয়েও মানিয়া লওয়া হইলো, পরোক্ষ প্রমাণও একটি আইনসিদ্ধ- বৈধ-বৈজ্ঞানিক প্রমাণ।

তিনশ বছর পূর্বে মনে করা হইতো- প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ এ-দু’প্রকার প্রমাণের যে কোনো একটিকে বাছিয়া লওয়া ব্যতীত অন্য কোনো সুযোগ নেই আমাদের হাতে। প্রত্যক্ষ প্রমাণকেই, তাই কেবল বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ বলিয়া স্বীকৃতি দেয়া হইয়াছে বহু কাল যাবত। পরে জানা গেল, ব্যাপারটা আসলে সে রকম নহে। প্রত্যক্ষ প্রমাণ অথবা অপ্রমাণ এ-দুয়ের মাঝে একটিকে বাছিয়া লওয়া ছাড়া অন্য কোনো সুযোগই নেই, এ-ধারণা বিজ্ঞানের জগতে এখন আর প্রবাহিত নয়। আধুনিক বিজ্ঞানের যুক্তিপ্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতার বলয়ে, পরোক্ষ প্রমাণ যুক্তিসিদ্ধ- বৈধ, এ- কথায় বিশ্বাস করাই হইলো, বর্তমানে, বিজ্ঞানমনস্কতার আলামত।

আধুনিকযুগে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলিতে যাহা বুঝায়- যাহার ওপর তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের গোটা সৌধ দাঁড়িয়ে, তার পুরোটাই প্রতিষ্ঠিত পরোক্ষ প্রমাণের ভিতের ওপরে।

এই নতুন বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের আলোকে উল্লিখিত আরব-বেদুইনের প্রদত্ত যুক্তি পরীক্ষা করে দেখিলে বিজ্ঞানের দাঁড়িপাল্লায় শতভাগ যুক্তিসিদ্ধ প্রমাণ বলিয়া মনে হইবে। বিজ্ঞান প্রকৌশল ও যুক্তির ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন আসিয়াছে তাহা উল্লিখিত ধরনের সরল-সহজ প্রমাণকে বৈজ্ঞানিক প্রমাণে রূপান্তরিত করিয়া দিয়াছে। বর্তমানে এ-দুয়ের মাঝে আর পার্থক্য থাকেনি।

পুরাতন বৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণার বলয়ে অসরাসরি হওয়াটাই পরোক্ষ প্রমাণের ত্রুটি হিসেবে মনে করা হইতো। কিন্তু বর্তমানে খোদ বিজ্ঞানের কাছে বৈজ্ঞানিক ধারণা পেশ করার এটাই হইলো যৌক্তিক বুনিয়াদ। মূলনীতির দৃষ্টিতে আধুনিক বিজ্ঞানের সকল যুক্তি এ যাবৎ যাহাকে ধর্মীয় যুক্তি বলিয়া ডাকা হইয়েছে – তাহারই অনুরূপ। ধর্মীয় যুক্তির বুনিয়াদ মহাবৈশ্বয়িক প্রকৃতির সারল্যে অবস্থিত। অর্থাৎ, মানুষ তাহার অধিকারে থাকা যোগ্যতা-শক্তি-মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটাইয়া যতদূর পৌঁছুতে পারে অথবা বর্তমান মহা-বিশ্ব যুক্তির সীমানা যতটুকু টানিয়া নিতে অনুমতি দেয়, ধর্ম ইহার সবটাই অবলম্বন করে আছে প্রথম দিন থেকেই। তবে বিগত শতাব্দীগুলোতে বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ হিসেবে যাহাদের উত্থান ঘটিয়াছে এ বাস্তবতাটি না বুঝিয়া তাহারা এমন জমিনের ওপর দাঁড়াইতে চাহিয়াছেন যাহার অস্তিত্ব বলিতে কিছু নাই। ফলে ধর্ম তাহার বিশালতা ঠিকই বজায় রাখিলো, পক্ষান্তরে মানুষের দাবি ঘুমাইতে গেল ইতিহাসের আর্কাইভে। আধুনিক ইতিহাসের এ-ঘটনা মনুষ্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের তুলনায় ধর্মীয় বা ওহী নির্ভর জ্ঞান-বিজ্ঞানের অবিনাশী অবস্থাকে নির্দেশ করিতেছে। ধর্মীয় জ্ঞানের সত্যতাকে সর্বোচ্চ মানদণ্ডের আলোকে করিয়া তুলিতেছে প্রমাণিত, প্রতিষ্ঠিত। -গবেষণাপত্র- আল্লাহর অস্তিত্ব ও আধুনিক বিজ্ঞান, গবেষক- ড. শামসুল হক সিদ্দিক

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৫৩

নতুন বলেছেন: উপরে যেই সব জ্ঞানীরা উটের বর্জ দেখে যেমন উট আছে বলে প্রমান পেয়েছে তারা নিচের ছবিটা দেখে নাই এবং অনেকে দেখেও বুঝতে পারেনা।

পেল ব্লু ডট নামের ছবিটা দেখলে বোঝা যায় যে এই মহাবিশ্ব কত বড়, এখানে মুসলমানেরা চিন্তা করে যে শুধুই কিছু মানুষকে বেহেস্তে আর দোজখে নেবার জন্য এই মহাবিশ্ব সৃস্টি, রাসুল সা: কে দুনিয়াতে মানুষ হিসেবে আনার জন্য এই সব কিছু সৃস্টিকরা হয়েছে। এমন ভাবনার কথা শুনলে আর কিছুই বলার থাকেনা।

২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৩৩

সোবুজ বলেছেন: সৃষ্টিকর্তা আর জন্মদাতা কি একই বিষয়।

৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪৬

রানার ব্লগ বলেছেন: আল্লাহ নিরাকার !! এই ব্যাপারে স্পস্ট কোন দলিল কি আছে?

লা শারিকাল্লা !!! অর্থ আল্লাহের কোন শরিক নাই

লা ইলাহা ইল্লাল্লহ !!!! অর্থ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই

এছাড়াও কেউ কেউ বলে আল্লাহ !!! নামটাই নাকি অর্থহীন !! আল লাহ !!! দ্যা নো !!!!

কতটুকু যুক্তি সংগত !!!

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪৬

সোবুজ বলেছেন: যখন পৃথীবি সৃষ্টি হয় নাই তখন দিন রাত হয় নাই।ছয় দিন গননা করলেন কোন হিসাবে।অর্থাৎ প্রথম দিনটা শুরু করলেন কি ভাবে।প্রতিটা গ্রহের দিন সমান না।

৫| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৫১

সোবুজ বলেছেন: আল্লাহর কি হাত পা আছে।আদমকে কি মাটি দিয়ে সৃষ্টি করলে না কি তৈরি করলেন।

৬| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:২৯

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ঈমান আকিদার মূল বিষয়ই হলো না দেখা-নিরাকার সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস এবং কোন প্রশ্ন ছাড়া তার আদেশ নিষেধ প্রতিপালন।মহান আল্লাহপাক আমাদের সকলকে ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলিকে আকড়ে ধরার এবং সেগুলো যথাযথভাবে পালন করার তওফিক দান করুন ।

উপকারী এ লেখার জন্য মহান আল্লাহপাক আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।

৭| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: মুসলমান সমাজের বয়স নিতান্ত কম নয়।
কিন্তু এত দীর্ঘকালের মধ্যে, একজন রুশো, একজন পিকাসো, একজন নিউটন জন্মায় নি। এই সমাজ একজন রাজা রামমোহন, একজন বিদ্যাসাগর, একজন রাম তনুলাহিড়ী তৈরি করতে পারেনি। তার কারন, আমাদের সু-শিক্ষা নাই। জ্ঞানের মর্যাদা বুঝি না। সাহিত্যের আদর করি না। তাই আমাদের মধ্যে বিদ্বান নাই, বৈজ্ঞানি নাই, সাহিত্যিক-দার্শনিক ঐতিহাসিক নাই। আছে কতিপয় ধার্মিক। এত ধার্মিক লইয়া আমরা কি করিব?

৮| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:১০

আশাবাদী অধম বলেছেন: ধন্যবাদ নাকিব ভাই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছেন। ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.