নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

নামাজে \'আ\'মলে কাসির\' ও \'আ\'মলে ক্বালীল\' কখন এবং কিভাবে সংঘটিত হয়? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

১৭ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:৩৮

ছবিঃ বাইতুল্লাহিল হারাম, মক্কাতুল মুকাররমাহ, অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত

নামাজে 'আ'মলে কাসির' ও 'আ'মলে ক্বালীল' কখন এবং কিভাবে সংঘটিত হয়? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

নামাজ ভঙ্গের যেসব কারণ রয়েছে তন্মধ্যে একটি হলো- আমলে কাসির। আমলে কাসির বলা হয়, নামাজি ব্যক্তির এমন কোনো কাজে লিপ্ত হয়ে যাওয়া যে অবস্থায় তাকে অন্য কেউ দেখলে মনে করবে যে, সে নামাজে নেই। বস্তুতঃ নামাজে থাকাবস্থায় মুসাল্লির শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের এমনসব নড়াচড়া যা নামাজের খুশু' এবং খুজু' তথা একাগ্রতা ও তাক্কওয়া পরিপন্থী, এগুলোকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- 'আ'মলে ক্বালীল' এবং 'আ'মলে কাছির'।

'আ'মলে ক্বালীল' কাকে বলে?

আ'মাল মানে কাজ, ক্বালীল অর্থ সামান্য, অর্থাৎ, নামাজরত অবস্থায় নামাজের খুশু' খুজু' পরিপন্থী পরিমাণে সামান্য কোনো কাজকে শরয়ী পরিভাষায় 'আ'মলে ক্বালীল' বলে। এটি সংঘটিত হলে নামাজ ভঙ্গ হয় না।

'আ'মলে কাছির' কাকে বলে?

অন্য দিকে, কাছির মানে বেশি বা অধিক। অর্থাৎ, নামাজরত অবস্থায় নামাজের খুশু' খুজু' পরিপন্থী পরিমাণে অধিক বা বেশি কোনো কাজকে শরয়ী পরিভাষায় 'আ'মলে কাছির' বলা হয়ে থাকে।

'আ'মলে কাছির' এর হুকুমঃ

নামাজরত অবস্থায় মুসাল্লির কোনো প্রকার হারকাত অর্থাৎ, নড়াচড়া 'আ'মলে কাছির' বা অধিক পরিমাণে প্রমাণিত হলে, উক্ত মুসাল্লির নামাজ সর্বসম্মতিক্রমে ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে।

আ'মলে কাছির নির্ণয়ঃ

আ'মলে কাছির নির্ণয়ে ফুকাহায়ে কেরামের মধ্যে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। বস্তুতঃ এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, আমরা যাতে আমাদের নামাজ আ'মালে কাছির মুক্ত রেখে সম্পাদন করতে পারি। সেই দিক বিবেচনায় জানার সুবিধার্থে আ'মালে কাছির সংঘটিত হওয়ার উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ এখানে আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ-

(১) গ্রহণযোগ্য মতানুযানী 'আ'মলে কাছির' বলা হয়, এরূপ নড়াচড়াকে যে নড়াচড়ায় মগ্ন মুসাল্লি বা নামাজরত ব্যক্তিকে দেখে বাহির থেকে অবলোকনকারীর নিশ্চিত ধারণা জন্মে যে, সে এখন আর নামাজে নেই। এ ধরনের কাজ দ্বারা উক্ত ব্যক্তির নামাজ সন্দেহাতীতভাবে ফাসিদ বা বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু যদি উক্ত মুসাল্লির নড়াচড়া কিংবা নামাজ বহির্ভূত কোনও কাজের কারণে নামাজের বাইরে থেকে দেখার পরে তাকে নামাজরত বলেই ধারণা হয়, তাহলে এমতাবস্থায় সে কাজকে 'আ'মলে কাছির' বলা যাবে না বরং একে 'আ'মলে ক্বালিল'-ই বলা হবে এবং এর ফলে তার নামাজও বাতিল হবে না।

(২) যে সমস্ত কাজে সাধারণত দু'হাত ব্যবহার করতে হয়, এমন কোনো কাজ নামাজের মধ্যে করা হলে সেটাকে আ'মলে কাছির বলে ধরে নিতে হবে। যেমন- লুঙ্গি পরিধান করা কিংবা পাগড়ী বেঁধে নেয়া। তবে এসব কাজ নামাজের মধ্যে যদি একহাত দ্বারাও করা হয়ে থাকে তবুও তা আ'মলে কাছির বলেই ধর্তব্য হবে। পক্ষান্তরে যে সমস্ত কাজ সাধারণত এক হাত দ্বারা করা হয়ে থাকে, সেসব কাজ যদি নামাজরত অবস্থায় দুই হাত দ্বারাও করা হয়, তবে তাকেও আ'মলে কাছির বলা যাবে না বরং তাকে আ'মলে ক্বালিল-ই বলা হবে, যতক্ষণ না তা তিন হরকত পরিমাণ দীর্ঘ সময়ের জন্য হয়ে থাকে। যেমন- লুঙ্গি খোলা কিংবা টুপি পরিধান করা ইত্যাদি।

(৩) একই রুকনের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে তিন বার হারকাত (শরীরের কোনও স্থান চুলকানো, কাপড় বা অঙ্গ নিয়ে খেলায় মত্ত হওয়া অথবা নড়াচড়া) করা 'আ'মলে কাছির' বলে গণ্য হবে এবং তা নামাজ ফাসিদ হওয়ার কারণ। তবে এই হারকাত বা নড়াচড়ার ঘটনা একই রুকনের মধ্যে তিন বার না ঘটলে তা আ'মলে ক্বালীল হিসেবে ধর্তব্য হবে।

(৪) নামাজরত অবস্থায় এমন কোন কাজ সংঘটিত হওয়া যা সাধারণতঃ নামাজের বাইরে স্বতন্ত্র কোনো স্থানে করা হয়ে থাকে। যেমন- নামাজের মধ্যে বাচ্চা কর্তৃক মায়ের দুধ পান করা, অথবা, উত্তেজনার সাথে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে চুমু দেয়া বা স্পর্শ করা ইত্যাদি। এরূপ ঘটলে তা আ'মালে কাছীরের মাঝে শামীল হওয়ায় উক্ত মহিলার নামায ভেঙ্গে যাবে এব উক্ত নামাজ পুনরায় আদায় করে নিতে হবে। প্রমান-

المرأة أرضعت ولدها فى الصلاة تفسد صلاتها، ولو جاء الصبى وارتضع من ثديها، وهى كارهة، فنزل لبنها فسدت صلاتها (خانية على هامش الهندية-1/132، تاتارخانية-2/21)

المرأة إذا أرضعت ولدها تفسد صلاتها، لأنها صارت مرضعة (البحر الرائق-2/21)

ومن الفروع المؤسسة: لو أررضعت ابنها، أو رضعها فنزل لبنها فسدت (فتح القدير، كتاب الصلاة، باب ما يفسد الصلاة وما يكره فيها-1/413)

(৫) নামাজী ব্যক্তির রায়ের উপরে নির্ভরশীলতা। অর্থাৎ, সে যে কাজকে আ'মালে কাছির মনে করবে সেটা আ'মলে কাছির, অন্যথায় তা আ'মলে ক্বালীল।

এখানে উল্লেখিত দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ প্রকার মূলতঃ প্রথম প্রকারেরই ব্যাখ্যা। এটা এভাবে যে, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ প্রকারগুলির মধ্যে উল্লেখিত কাজের কর্তাকে নামাজের বাহির থেকে অবলোকনকারীর নিশ্চিত ধারণা জন্মাবে যে, সে এখন আর নামাজরত অবস্থায় নেই। আর এখানে বর্ণিত পঞ্চম প্রকার 'আ'মলে কাছির বলে ধর্তব্য হবে না। কেননা, সব মানুষের অনুভূতি বা বিবেচনা সমান নয়। কেউ একটা কাজকে 'আ'মলে কাছির' মনে করলে অন্যজন এটাকে 'আ'মলে ক্বালিল' হিসেবে ধরে নিতে পারেন। যার ফলে এক্ষেত্রে মতানৈক্য সৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থেকে যায়। যেমন, এক ইমামের পিছনে একই কাজে জড়িত মুসাল্লিদের মধ্য থেকে ঐ সমস্ত ব্যক্তিবর্গের নামাজ ফাসিদ বা বাতিল হবে, যাদের ধারণা হবে যে, এটা 'আ'মলে কাছির'। আর ঐ সমস্ত মুসাল্লিদের নামায ফাসিদ বা বাতিল হবে না যাদের ধারণা হবে যে, এটা 'আ'মলে ক্বালিল'।

(৬) এ ছাড়া, যদি সিজদার সময় উভয় পা কিছু সময়ের জন্যও জমিনে রাখা না হয়, তাহলে সেটিও আ'মালে কাছির বলে গণ্য হবে এবং এ কারণে সিজদা আদায় হবে না এবং এর ফলে সেই নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। কিন্তু বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, যদি সিজদার সময় কিছু সময়ের জন্য হলেও পা জমিনে রাখা হয়, তারপর উঠিয়েও ফেলা হয়, তাহলে নামাজ মাকরূহ হলেও আদায় হয়ে যাবে। প্রমান-

وقال بعضهم إن حرك رجليه قليلا لا تفسد صلاته، وكذا فى المحيط هو الأوجه الخ (الفتاوى الهندية-1/103، جديد-1/161)

وفى شرح الملتقى: يفترض وضع أصابع القدم ولو واحدة نحو القبلة وإلا لم تجز (الدر المختار مع رد المحتار-2/204)

أنه لو لم يضع شيئا من القدمين لم يصح السجود (رد المحتار-2/135)

ولو وضع احدهما جاز مع الكراهة إن كان بغير عذر (الفتاوى الهندية-1/70)

বিশেষ প্রয়োজনে নামাজে এক হাত ব্যবহার করার অনুমতিঃ

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, আমলে কাসির হচ্ছে, নামাজি ব্যক্তির এমন কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া, যে অবস্থায় তাকে অন্য কেউ দেখে ধরে নিতে বাধ্য হবে যে, সে নামাজে নেই। আর সাধারণতঃ নামাজি ব্যক্তির প্রতি অন্য ব্যক্তির এরূপ ধারণা তখনই সৃষ্টি হতে পারে যখন সে দু'হাত ব্যবহার করে কোনো কাজ করে। বলা বাহুল্য, এক হাত নামাজে ব্যস্ত রেখে বিশেষ প্রয়োজনীয় কাজ অন্য হাত দিয়ে করে নিলে এমন ধারণা সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ মোটেই থাকে না।

এ কারণেই ফিকাহবিদগণ নামাজের মধ্যে প্রয়োজনে এক হাত ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, নামাজরত অবস্থায় টুপি উঠানো, জামার হাতা নামানো, সিজদার স্থানের কঙ্কর সরানো, শরীর চুলকানো, শীতের কাপড় সরানো বা কাপড় টেনে নেয়া এবং এ জাতীয় অন্যান্য কাজ করার জন্য (বিশেষ প্রয়োজনে) এক হাত ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই দু'হাত ব্যবহার করা যাবে না।

নামাজে মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলে করণীয়ঃ

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা বলা যায় যে, নামাজের মধ্যে পকেটে থাকা মোবাইলে রিং বেজে উঠলে দু'হাত ব্যবহার না করে এক হাতের সাহায্যে মোবাইল পকেটে রেখেই যে কোনো বাটন চেপে রিং বন্ধ করে দেয়ার অবকাশ রয়েছে। আর পকেট থেকে মোবাইল বের করার প্রয়োজন হলেও এক হাত দ্বারাই করতে হবে।

মোবাইল বের করে পকেটের কাছে রেখে, না দেখে দ্রুত বন্ধ করে আবার পকেটে রেখে দিতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, এক হাত দ্বারা মোবাইল বন্ধ করতে গিয়ে মোবাইল পকেট থেকে বের করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তা দেখে দেখে বন্ধ করা যাবে না। কারণ, দেখে দেখে বন্ধ করা অবস্থায় কেউ নামাজি ব্যক্তিকে দেখলে সে নামাজে আছে বলে মনে করবে না। ফলে তা আ'মালে কাসিরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়ায় নামাজ ভেঙ্গে যাবে। -দলীলসূত্র: খুলাসাতুল ফাতওয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১২৯, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১০৫, শরহে নববী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২০৫, রদ্দুল মুহতার, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৬৪, ২৬৫, ৬২৪, আল বাহরুর রায়েক, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা : ১১-১২, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৫৬৪, শরহুল মুনিয়াহ, পৃষ্ঠা: ৪৪৩

দু'হাত ব্যবহার ব্যতীত রিং বন্ধ করা সম্ভব না হলেঃ

যদি কখনো এমন অবস্থা হয় যে, দু'হাত ব্যবহার ব্যতিত মোবাইল ফোন বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না তখন কি করা উচিত? তখন কি নিজের নামাজ ভঙ্গ করে মোবাইল বন্ধ করা সঠিক? না কি, রিংটোনের কারণে মুসল্লিদের নামাজে বিঘ্ন ঘটতে থাকলেও নিজের নামাজ রক্ষার জন্য রিংটোন বন্ধ করা থেকে বিরত থাকাই উচিত?

নামাজে খুশু' খুজু' তথা একাগ্রতার গুরুত্ব অনেক বেশি। এ জন্যই ফিকাহবিদগণ নামাজরত অবস্থায় প্রস্রাব-পায়খানার বেগ হলে এবং এর দ্বারা খুশু' খুজু' বিঘ্নিত হলে নামাজি ব্যক্তিকে নামাজ ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। শুধু অনুমতিই দেননি বরং এ অবস্থায় নামাজ ছেড়ে দেওয়াকে তারা উত্তম বলে আখ্যায়িত করেছেন। কেউ কেউ আবার ওয়াজিব পর্যন্ত বলেছেন।

নামাজের মধ্যে রিংটোন বেজে উঠলে যার মোবাইল তার নামাজেই কেবল বিঘ্ন ঘটে না বরং আশেপাশের অন্যান্য মুসল্লিদের নামাজেও বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। সুতরাং, এক্ষেত্রে এক হাত দ্বারা রিংটোন বন্ধ করা সম্ভব না হলে নিজের নামাজ ছেড়ে দিয়ে অবশ্যই রিংটোন বন্ধ করে দিতে হবে। এরূপ করা শুধু জায়েযই নয়, কর্তব্যও বটে। আর রিংটোন যদি গান বা মিউজিকের হয় (আল্লাহ আমাদের এ থেকে হেফাজত করুন) তবে তো এর খারাবী আরো বেশি। কারণ, আমরা জানি যে, মসজিদ পবিত্র স্থান। আল্লাহ তাআ'লার ঘর। গান বাদ্য ইত্যাদির স্থান কস্মিনকালেও কোনক্রমেই নয়।

মোটকথা, নামাজের যে কোনো অবস্থায় আমলে কালিল বা অল্প কাজের দ্বারা রিংটোন বন্ধ করা সম্ভব না হলে নামাজ ছেড়ে দিয়ে রিংটোন বন্ধ কতে দিতে হবে এবং মাসবুকের ন্যায় আবার নতুন করে জামায়াতে শরিক হয়ে বাকি নামাজ সমাপ্ত করতে হবে। -তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃষ্ঠা : ১৯৮, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১০৭, আল বাহরুর রায়েক, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৮৭, রদ্দুল মুহতার, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৬৫৪-৬৫৫

রিংটোন বন্ধ করতে সিজদা থেকে উঠা যাবে কি?

জামাআতে নামাজ পড়ার সময় সিজদারত অবস্থায় রিংটোন বেজে উঠলে কেউ কেউ সিজদা থেকে উঠে বসার প্রায় কাছাকাছি গিয়ে পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে রিংটোন বন্ধ করে থাকেন। অথচ তখনো ইমাম মুসল্লি সকলেই সিজদাতেই থাকেন। এভাবে রিংটোন বন্ধ করার দ্বারা তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় ব্যয় না হলেও এটি নিঃসন্দেহে আ'মালে কাসির হবে এবং এর ফলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে। কারণ, যেখানে দুই হাতের ব্যবহারকেই নামাজ ভঙ্গের কারণ বলা হয়েছে সেখানে গোটা দেহকে নামাজের অবস্থা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা নিঃসন্দেহে নামাজ ভঙ্গের কারণ হবে। তাছাড়া এ অবস্থায় কেউ তাকে দেখলে সে নামাজে নেই বলেই মনে করবে, যা সন্দেহাতিতভাবেই আমলে কাসীরের অন্তর্ভুক্ত। আর একথা পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, আমলে কাসির নামাজ ভঙ্গের অন্যতম কারণ। -আল বাহরুর রায়েক, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা : ১১-১২, খুলাসাতুল ফাতওয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ১২৯, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ১০৫, শরহে নববী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ২০৫, রদ্দুল মুহতার, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ২৬৪, ২৬৫, ৬২৪

একই নামাজে কতবার রিংটোন বন্ধ করা যাবে?

অনেক সময় দেখা যায়, নামাজরত অবস্থায় একবার রিংটোন বন্ধ করার পর ফোনের রিংটোন পুনরায় বারবার বাজতে থাকে। এমনকি দ্বিতীয়বার বন্ধ করার পর তৃতীয়বারও বাজতে থাকে। কোনো কোনো সময় এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায়। প্রশ্ন হলো, নামাজে থাকাবস্থায় এভাবে কতবার রিংটোন বন্ধ করা যাবে?

হ্যাঁ, অনেক মোবাইল ব্যবহারকারীকেই এই সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। এক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান হলো, তিনবার বিশুদ্ধভাবে 'সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম' বা 'সুবহানা রাব্বিয়াল আলা' বলা যায় এ পরিমাণ সময়ের ভিতর দুইবার পর্যন্ত উপরে বর্ণিত নিয়মে রিংটোন বন্ধ করা যাবে। দুইবারের বেশি বন্ধ করা যাবে না।

যদি কেউ দুইবারের বেশি বন্ধ করে তবে তার নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে একবার বা দুইবার বন্ধ করার পর তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্বে আবার রিংটোন বেজে উঠলে তখন বন্ধ করা যাবে এবং এতে নামাজও নষ্ট হবে না। মোটকথা, তিন তাসবীহ বলা যায় এতটুকু সময়ের মধ্যে তিনবার রিংটোন বন্ধের জন্য (দুই হাত তো নয়ই) এক হাতও ব্যবহার করা যাবে না। কেউ করলে তার নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। -খুলাসাতুল ফাতওয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ১২৯, রদ্দুল মুহতার, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ৬২৫, আহসানুল ফাতাওয়া, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা : ৪১৮-৪১৯

প্রামাণ্য দলিল হিসেবে দেখে নেয়া যেতে পারে যেসব গ্রন্থাবলীঃ

০১. ফাতাওয়ায়ে শামী-২/৩৮৫ (মাকতাবায়ে যাকারিয়া),
০২. ফাতাওয়ায়ে কাযি খান-১/৬৩,
০৩. আল-ফিকহুল হানাফি ফি ছাওবিহিল জাদীদ-১/২৪৮,
০৪. ফাতাওয়া আন-নাওয়াযিল (আবুল লাইছ সামারকন্দি)-৮৯,
০৫. আল-ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবা'আহ-১/৩০৫,
০৬. তাবয়ীনুল হাক্বাইক্ব-১/১৬৫,
০৭. খুলাসাতুল ফাতাওয়া-১/১৩০
০৮. ফাতাওয়া কাসিমিয়া-৭/৪৭৪,
০৯. ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ-২/১৫৩,
১০. কিতাবুন নাওয়াজেল-৪/১৪৫-১৪৬,
১১. আপকি মাসায়েল আওর উনকা হল-৩/৩৬৩,
১২. ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-১১/৮০
১৩. ফাতহুল কাদীর, কিতাবুচ্ছালাত, নামাজ মাকরূহ ও ভঙ্গকারী কাজসমূহের অধ্যায়, ১/৪১৩
১৪. আল বাহরুর রায়েক, ২/২১
১৫. তাতারখানিয়াহ, ২/২১ ভারতীয় সংস্করণ, ১/১৩২
১৬. রদ্দুল মুহতার, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ৬২৫
১৭. আহসানুল ফাতাওয়া, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা : ৪১৮-৪১৯
১৮. শরহে নববী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ২০৫
১৯. তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃষ্ঠা : ১৯৮
২০. শরহুল মুনিয়াহ, পৃষ্ঠা: ৪৪৩

শেষের প্রার্থনাঃ

মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সকলকে সহিহ পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের নামাজসহ যাবতীয় নেক আ'মাল কবুল করে নিন, আমীন।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৫

খুশিতে বলেছেন: আমার পরীচীত একযন আছেন মোবাইলে এপ বানান বলেন। ওনাকে একদিন বলেছিলাম এমন এপ কড়া জায় কি না যেন ফোন
মসযিদে নিলে জিপিএছ থেকে ওটোমেটিক ফোন ছাইলেন হয়ে যায়।
উনি আমার কথা উরায়ে দিলেন।
আমার পরালেখা কম। গ্যান থাকলে বানানোর চেস্টা করতাম।

১৮ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৪৫

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনার চিন্তাটা ভালো। তবে, এটা আপাততঃ সম্ভব নয় হয়তো।

ধন্যবাদ।

২| ১৭ ই মার্চ, ২০২২ রাত ৯:০৩

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আবু দাউদের হাদিস নং ৯২২, আল নাসাঈ হাদিস নং ৬০১ অনুসারে;
রসুল (সা) হজরত আয়েশার (রা) জন্য নামাজরত অবস্থায় দরজা খুলে দিয়েছিলেন। তবে দরজা কিবলার দিকেই ছিল এবং এই নামাজ ফরজ নামাজ ছিল না।

নামাজে যখন নড়াচড়া করা জরুরী-
আবু দাউদের হাদিস নং ৬৫০ অনুসারে রসুল (সা) যখন নামাজে ছিলেন তখন জিবরাইল (আঃ) তাঁকে জানালেন যে তার জুতায় নাপাক কিছু আছে। তখন রসুল (সা) জুতা খুলে ফেলেন এবং নামাজ চালিয়ে যান।
কেউ যদি নামাজি ব্যক্তিকে বলে যে সে কিবলামুখী নয় এবং সঠিক দিক দেখিয়ে দেয় সেই ক্ষেত্রে নামাজিকে নামাজরত অবস্থায় দিক পরিবর্তন করতে হবে। মুসলমানদের যখন কিবলা পরিবর্তন হয় তখন একদল সাহাবী নামাজরত ছিলেন এবং নামাজের মধ্যেই নির্দেশনা পেয়ে দিক পরিবর্তন করেন।
মাইক্রোফোন দূরে থাকায় মুসল্লিরা শুনতে পাড়ছে না। সেই ক্ষেত্রে ইমাম এগিয়ে মাইক্রোফোনের কাছে যেতে পারেন।

নামাজে যখন নড়াচড়া নিষিদ্ধঃ
যেমন বিনা কারণে বারবার নড়াচড়া করা।
নামাজে যখন নড়াচড়া করা পছন্দনীয় –
- নামাজরত অবস্থায় কাতার সোজা রাখার জন্য নড়াচড়া করা।
- সামনের সারিতে ফাকা স্থান পূরণ করার জন্য নড়াচড়া করা।
হাদিসে এসেছে যে ইবনে আব্বাসকে (রা) রসুল (সা) মাথার পিছনে ধরে রসুলের (সা) বাম পাশ থেকে ডান পাশে এনেছিলেন।
নামাজে যখন নড়াচড়া করার অনুমতি আছে-
বুখারি হাদিস নং ৫৯৯৬ এবং মুসলিম হাদিস নং ৫৪৩ এবং Fataawa ‘Ulama’ al-Balad al-Haraam, 162-164 অনুসারে রসুল (সা) তার নাতনী উমামা কে নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় কোলে রাখতেন এবং সিজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে নামিয়ে রাখতেন।
আবার যুদ্ধের সময় হাটতে হাটতে নামাজ পড়ার অনুমতি আছে যদি শত্রুর ভয় থাকে। সুরা বাকারার ২৩৮ এবং ২৩৯ আয়াতে আছে ;

'কিন্তু যদি তোমরা ভয় কর, তবে হেঁটে কিংবা আরোহণ করে (আদায় করে নাও)। এরপর যখন নিরাপদ হবে তখন আল্লাহকে স্মরণ কর, যেভাবে তিনি তোমাদেরকে শিখিয়েছেন, যা তোমরা জানতে না।'

রসুল (সা) নামাজরত অবস্থায় হাতের ইশারায় সালামের জবাব দিয়েছেন।

নামাজরত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া যায়। যদিও হানাফি মাজহাবে এটা মাকরুহ। (Narrated by Ahmad, 6/12; Abu Dawood, 1/569, no. 927; al-Tirmidhi, 2/204, no. 368; al-Bayhaqi, 2/262; also narrated by the five).

It was reported that Umm Salamah (may Allaah be pleased with her) said: I heard the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) forbidding us to pray two rak’ahs after ‘Asr, then I saw him praying them when he prayed ‘Asr. She said, he entered and there were some women from Bani Haraam, from among the Ansaar, with me. He started to pray them [these two rak’ahs after ‘Asr], so I sent a young girl to him, and I told her, ‘Stand beside him and say to him, Umm Salamah is saying to you, O Messenger of Allaah, I heard you forbidding us to do these two rak’ahs and now I see you praying them. If he makes a gesture with his hand then leave him and go back.’ So the young girl did that and he made a gesture with his hand, so she left him and went back. When he finished praying, he said: ‘O daughter of Abu Umayyah, you asked about the two rak’ahs after ‘Asr. Some people from Banu ‘Abd al-Qays came to me and kept me from doing the two rak’ahs after Zuhr, and that is what these were.’” (Narrated by al-Bukhaari and Muslim).

১৮ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৪৫

নতুন নকিব বলেছেন:



শুকরিয়া। জাজাকুমুল্লাহ।

৩| ১৮ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: জনাব তিনটা কথা-
১। আপনার পোষ্ট টি গতকাল পড়েছি। ইচ্ছা করেই মন্তব্য করিনি। ধর্মীয় নিয়ম নীতি মেনে না চললেও আমি ধর্মীয় লেখায় চোখ বুলাই।
২। ধর্মীয় পোষ্ট আজকাল পাবলিক খায় না। যদি সানী লিওন কে নিয়ে লিখতেন পাঠকের অভাব হতো না। ঈই হলো মুসলিমদের অবস্থা!
৩। নবিজি অনেক ভবিষ্যৎ বানী করেছিলেনে। সেসব অনেক কিছু মিলে গেছে। সামনে আরো মিলে যাবে। তারপর কেয়ামত হবে। এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত যদি লিখতেন আমার ভালো লাগতো। (এটা আমার অনুরোধ)

১৮ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৪৩

নতুন নকিব বলেছেন:



১। আপনার পোষ্ট টি গতকাল পড়েছি। ইচ্ছা করেই মন্তব্য করিনি। ধর্মীয় নিয়ম নীতি মেনে না চললেও আমি ধর্মীয় লেখায় চোখ বুলাই।

-এই পোস্ট আপনি পড়েছেন জেনে খুশি হলাম, যদিও মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন। আর ধর্মীয় নিয়ম নীতি মেনে না চললেও আপনি যে ধর্মীয় লেখায় চোখ বুলান, এটাতে খারাপ কিছু দেখি না।

২। ধর্মীয় পোষ্ট আজকাল পাবলিক খায় না। যদি সানী লিওন কে নিয়ে লিখতেন পাঠকের অভাব হতো না। ঈই হলো মুসলিমদের অবস্থা!

-ধর্মীয় পোষ্ট আজকাল পাবলিক খায় না- এটি আপনার ভেতরে বদ্ধমূল হয়ে থাকা ভুল একটি ধারণা। যার যেটা কাজ নয় তাকে সেই বিষয়ে উপদেশ দেয়া অপাত্রে কিছু রাখার মত। আমার মত অভাগাকে সানী লিওনের মত বিখ্যাত ব্যক্তি নিয়ে লিখতে বলা সেরকমই একটি ব্যাপার। তাকে নিয়ে লেখার জন্য তো আপনাদের মত সেলিব্রেটিরাই রয়েছেন। তাই না? তো, এই কারণে আমি মোটেই টেনশন নিই না।

৩। নবিজি অনেক ভবিষ্যৎ বানী করেছিলেনে। সেসব অনেক কিছু মিলে গেছে। সামনে আরো মিলে যাবে। তারপর কেয়ামত হবে। এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত যদি লিখতেন আমার ভালো লাগতো। (এটা আমার অনুরোধ)

-চেষ্টা থাকবে ইনশাআল্লাহ।

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.