নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'কসম খোদার, চিরটাকাল সঙ্গে রবো\'

নাজমুস সাকিব রহমান

আমারে তুমি অশেষ করেছো, এমনি লীলা তব— ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ, জীবন নব নব

নাজমুস সাকিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

এইভাবে বেঁচে থাকা— \'আমাদের কবি\'

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৯

উপলদা মারা গেলে আমি একটা বই লিখবো। বইয়ের নাম হবে 'আমার আহমদ ছফা।' 'আমার উপল'দা' যদি বইয়ের নাম হয়, সে বই কেউ কিনবে না। এটা নিশ্চিত। উপল'দা নিজেও সেটা স্বীকার করেছেন। ওনাকে নিয়ে আড়াই'শ পাতার একটা বই লেখা কোন ব্যাপার না। অন্তত আমার কাছে। উৎসর্গপত্রও চিন্তা করে রেখেছি। সবল কবি ও সবল গদ্যকার উপল বড়ুয়া।
রবীন্দ্রনাথের একটা গান তুলে দেবো উৎসর্গপত্রে। 'নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছো নয়নে নয়নে।' এতে সুরিয়েলিস্টিক আবহ পুরোপুরি থাকবে।

গত বছর ওনার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'কানা রাজার সুড়ঙ্গ' বের হবার সময় বলেছিলেন, এটিই প্রথম ও শেষ কাব্যগ্রন্থ। এ জন্য একটি সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিলাম। ওনি আজ দেবো, কাল দেবো বলে আর দেন নি। এই না দেয়ার কারণে কি-না জানিনা, এই বইমেলায় বইটি আবার প্রকাশিত হচ্ছে। যা হোক, ওনার একটি কবিতার কিছুটা পড়া যাক—


'আমি বেতালের তালিকাভুক্ত শিল্পী। আজ রাতে প্রচারিত হবে উত্তাল সঙ্গীত। রাত সম্পাদিত হচ্ছে চুপচাপ। ছাপাখানা থেকে বেরিয়ে আসছে ছারপোকা আমন্ত্রণ পত্রের ভেতর ওঁত পেতে থাকে উপহাস। দামী উপহারের অনুরোধ। রবীন্দ্রনাথ এক বিরাট ফ্লাওয়ার ভাঁজ। বসে বসে বাড়ায় ঘরের শোভা। অধিকাংশ মানুষের আগ্রহ স্নানঘরের প্রতি। তুমি ঢোকার আগে ঐখানে প্রবেশ করে অসংখ্য চোখ।'

(যে সব বিষয়ে সমাধানে আসা গেছে। বইঃ কানা রাজার সুড়ঙ্গ। প্রকাশকঃ খড়িমাটি, স্টল নং ৪০, লিটল ম্যাগ চত্বর)


লেখাটি পড়ে যারা গালি দেবার চিন্তা করছেন, তাদের উপলকাহিনী ব্যাখ্যা করি। এসএসসি দিয়েছি, এক বইয়ের দোকানে বই কিনতে গেছি। বইয়ের দাম দেখে কেনার সাহস হয় না। তাও ওই বয়সে! অতো টাকা তো তখন ছিল না, থাকতো না, কেউ দিতো না। উপলদা সে-ই দোকানে বসতেন। একদিন ওখানে গেছি, সেদিন তাঁর হাতে একটি উপন্যাস, তিনি পড়ছেন, উপন্যাসের নাম পুতুল নাচের ইতিকথা। লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি একটি বই পছন্দ করেছি, সম্ভবত সমরেশের। ওনি বললেন, ওটা ভালো না। পড়ে সময় নষ্ট করবে। সেলফের দিকে তাকিয়ে বললেন, ওখানে মানিকের একটি বই আছে, নাম জননী। ওটা নামাও, পড়ো, ভালো লাগবে। অনেকদিন পর আমি গদ্য লেখা শুরু করলাম। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, আমার লেখা প্রথম ছোটগল্পের নাম 'জননী।'
রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ পড়ে ছোটগল্প ছাড়া আমার আর কিছু লেখার কথা মনে হয় নি। লিখলে ছোটগল্পই লিখবো। অন্য কিছু নয়।

অনেক লেখকের বই আমার পড়া হয় নি। উপলদা'র সঙ্গে দেখা হলেই তিনি নানা লেখকের নানা লেখার নাম বলেন। নামগুলো মুখস্থ করে রাখি। চেখভ, আর্নেস্ট হোমিংওয়ে কতো নাম! অবশ্য প'রে এসব পড়া শুরু করেছি। যদিও এসব মুখস্থ নাম তখন আমার অনেক কাজে এসেছিল। সে ক্ষেত্রে তিনি আমার আহমদ ছফা তো বটেই! তো, সে-ই দোকানে এরপর বন্ধুদের সঙ্গে যেতাম। একসময় তিনি আমাদের বন্ধুর মতো হয়ে গেলেন। একেকটা বই দেখান আর সুরিয়েলিজম, ম্যাজিক রিয়েলিজম, এসব ব্যাখ্যা করেন। অনেক কিছু বুঝি না, কিছু বুঝি। ওতেই হয়ে যায়। বিশেষ করে মার্কেজ জ্ঞান!

বন্ধুরা একসময় ব্যান্ড করা শুরু করল। অনেকটা মহিনের ঘোড়াগুলির মতো। উপলদা সে-ই ব্যান্ডের জন্য গান লিখলেন, ফোক ঘরানার। সুরটিও ওনার। 'কদম্ব তলে আইসো কন্যা, কদম দিব গলে।'
তারা এখন যেখানেই যায়, গানটির অনুরোধ পায়।

সম্প্রতি তিনি সিনেমা বানাবার ইচ্ছে পোষণ করেছেন। আমার চেহারা দেখে জানিয়েছেন, 'তোকে নায়কের ছোটবেলার চরিত্র ছাড়া মানাবে না। নায়ক, ভিলেন কিছুই হতে পারবি না। তুই ক্যামেরার পেছনে থাকবি।' আমার অভিনয় করার কতো ইচ্ছে ছিল! জীবনে কখনো ভালো রেজাল্ট করি নি। তাই সপ্ন দেখতাম, বাস্তবে না হোক, অভিনয় করে হলেও রেজাল্ট পেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ি এসে মাকে বলবো, মা আমি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি। উপল'দার পাষাণ হৃদয় আমাকে অভিনেতা হতে দিচ্ছে না। এ কারণে যেদিন তাঁর সিনেমা বের হবে, সেদিন পরিচালক উপল বড়ুয়ার কুশ- পুত্তলিকা দাহ করার মত পবিত্র কাজ আমার করতে হবে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৫৮

বিজন রয় বলেছেন: ভাল, খুব ভাল লিখেছেন।
++

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৩

নাজমুস সাকিব রহমান বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নেবেন বিজন ভাই।

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫২

এম.এ.জি তালুকদার বলেছেন: স্মৃতিচিহ্নের স্মারকসম একটি- ‘ধন্যবাদ’ আপনাকে।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১৯

নাজমুস সাকিব রহমান বলেছেন: লেখাটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ তালুকদার সাহেব, শুভেচ্ছা নেবেন।

৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২২

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: জীবনে কখনো ভালো রেজাল্ট করি নি। তাই সপ্ন দেখতাম, বাস্তবে না হোক, অভিনয় করে হলেও রেজাল্ট পেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ি এসে মাকে বলবো, মা আমি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি।
=p~

শুরুতে আবোলতাবোল দেখে একটু পাগলপাগল লাগছিল, তবে শেষটায় মজা পাইসি।

শুভেচ্ছা।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১৮

নাজমুস সাকিব রহমান বলেছেন: আমার কাছে আনন্দটাই আসল। আপনি কিছুটা হলেও আনন্দ পেয়েছেন জেনে ভালো লাগল।
শুভেচ্ছা নেবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.