নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'কসম খোদার, চিরটাকাল সঙ্গে রবো\'

নাজমুস সাকিব রহমান

আমারে তুমি অশেষ করেছো, এমনি লীলা তব— ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ, জীবন নব নব

নাজমুস সাকিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা চাষাবাদ করি মস্তিস্কে, দেহে, জমিনে [সাক্ষাৎকার]

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১২



[ দু'হাজার সালের পরে বিভিন্ন মিক্সড অ্যালবামে আতাহার টিটোর গান শুনতাম। প্রিন্স মাহমুদের সুরে 'গোলাপ নেবে কি' বা শউকতের অ্যালবামে 'যায় দিন যায়', প্রিন্স ভাই এরপরে হীরা চুনি পান্না নামের একটা মিক্সড অ্যালবাম করেছিলেন। ওই অ্যালবামের গানও মানুষ অনেক শুনেছিল, ওই সময়। টিটো ভাইয়ের আরেকটা গান উল্লেখযোগ্য 'আলী আলী', এটা অদ্ভুত একটা রকিশ গান। এটা শুনে জেমস্‌ ভাই ওনার গায়কীর প্রশংসা করেছিলেন। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু বিএনপি সরকারের সময় বিটিভিতে একটা গান গাইছিলেন, লিরিকটা দু'এক লাইন মনে আছে। 'ওই মিয়া কি পাইছেন, লাঠি দিয়া গ্লাস ভাঙেন', হরতাল বিরোধী গান হিসেবে এটা জনপ্রিয় ছিল। এরপরেই মিউজিক সিন থেকে ওনি আড়াল হয়ে গেলেন। বোধ করি রাজনৈতিক কারণেই, মানে ২০০৭ এর পর থেকে।

অনেকদিন পরে তাঁর দেখা পেলাম, কথা হল, আবার মিউজিক করবেন। এতদিন জন্মস্থান খুলনায় গানবাজনা করেছেন, আবার ঢাকায় ফিরে আসবেন। নতুন ব্যান্ড করবেন, তো নতুন ব্যান্ড নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা দেখেই সাক্ষাৎকারের ব্যাপারটা মাথায় এসেছিল। আলাপের শুরুটা ছিল ব্যান্ডমিউজিকের নতুনত্ব নিয়ে, ওনার কথা থেকেই লেখাটা শুরু করা হল।]

আতাহার টিটো: আসলে প্রতিমুহূর্তের প্রতিটি চিন্তাশক্তির ভাবধারাকে প্রকাশ করার জন্যই এই ব্যান্ড। এর ভেতর মানবতা-প্রেমময়-জীবন-দুঃখ-কষ্ট-জ্বালা-প্রতিবাদ— সব থাকবে। আমার উপলব্ধিতে মানবতাই আসল। মানুষের জন্য গান হোক, কারণ আমরা প্রগতিশীল। আমরা গান গানে প্রেমময়তা জাগাবো কারণ প্রেম থাকলেই মানবতা আসে।

এখন তো ফিরে আসার স্রোত, প্রতিদিনই শুনি কেউ না কেউ ফিরে আসতেছেন। হাসান,খালিদ বা ভাইকিংস।
ব্যাপারটা কি? মানে আপনিও তো ওদের মতো, ফিরে আসার দলে।


আতাহার টিটো: খুবই ভালো দিক। ফিরে আসতেই হবে। আমি অভিমান করে সরে গিয়েছিলাম। অভিমান আসলে কোন মানুষকে কোনদিন কোন ফল দিতে পেরেছে কিনা আমার জানা নেই। অভিমান বরঞ্চ নিজেকে কেন্দ্রীভূত করে ফেলে। অভিমান জমতে জমতে এখন বিদ্রোহে রুপ নিয়েছে।

এই কৃষির দেশে আপনার ব্যান্ডের নাম দিয়েছেন ‘চাষা’। নব্বই দশকে দ্যাখা গেছে ‘ফিলিংস’ গ্রামীণ সমাজটাকে খুব চমৎকার করে তুলে ধরেছিল। মান্নান মিয়ার তিতাস মলম, হারাগাছের নুরজাহান এরকম কিছু গান দিয়ে। আপনিও কি ওই দিকে যাচ্ছেন ?

আতাহার টিটো: মানুষ হিসেবে আমরা চাষাবাদ করি— প্রথমত মস্তিস্কে, দ্বিতীয়ত দেহে, তারপর জমিনে। আমরা মনস্তাত্ত্বিক জায়গা থেকে কাজ করবো। এটা উর্বর করার চেষ্টা করবো আর সুরের তো কোন ভাষা নেই। ইন্সটুমেন্ট এর ব্যাপারটা আলাদা। এখানে আমাদের বক্তব্যটা হবে প্রধান। যেমন ‘চাষা’ চায় আমি-তুমি’র পাশাপাশি ‘আমরা’ ব্যবহার করতে।

এখন যে'রকম গান হয় মানে যন্ত্রনির্ভর সঙ্গীতচর্চার বিরুদ্ধে কিন্তু মানহীনতার অভিযোগ আছে।

আতাহার টিটো: আমরা যে কয়েকজন মানুষ একতাবদ্ধ হয়েছি তাঁদের পক্ষ থেকে বলতে চাই, ঐ গানগুলো কিন্তু শ্রোতারা নিচ্ছে। ভালো হোক কিংবা খারাপ। এটা তাঁদের শ্রোতারাই বলতে পারবেন, আমি বলার কেউ নই। আর তাঁরা কেমন কাজ করছে —আমি এটা বলার ক্ষমতা রাখিনা, তাঁদের শ্রোতারা রাখে।

আপনার সঙ্গীতজগতে আসার শুরুটা কীভাবে ?

আতাহার টিটো: বাবা রাজনীতি করতেন, বছরে চারপাঁচ দিন বাড়িতে দেখা যেতো তাঁকে। এসেই দেখতাম ভুপেন হাজারিকা , ফকির আলমগির শুনছেন। বক্তব্যধর্মী ও বিপ্লবী গান শুনছেন। একসময় আমারও মনে হল এঁদের গান শুনবো। তখন গুনগুন করে গাইতাম। গুরু আযম খানের গান বাবা খুব পছন্দ করতেন, ওনার গান গাইতাম। এরপর কুমার বিশ্বজিৎ, প্রয়াত শেখ ইশতিয়াক, মাকসুদ ভাইয়ের গান গাইতাম।

১৯৮৯ সালে বন্ধু শাবা চিন্তা করলো— আমরা নিজেরা আর নয় এবার মানুষকে গান শুনাব। আমার গীটার শেখা তাঁর কাছে, সে আমার গুরু। এসএসসিতে ফার্স্ট ডিভিশন পাওয়ার পর আমার বন্ধু শাবার অনুপ্রেরনায় আমার মা নিজের আংটি বিক্রি করে আমাকে একটা গীটার কিনে দেন। শাবা সাইকেল নিয়ে শেখাতে আসতো। সে আমাকে নিয়ে গেলো প্রয়াত ফাদার জনের কাছে। একসময় শাবা আমাকে বলল— ‘গান গাও’। গাইলাম। তখন শাবা বলল, ‘তোমার লিড বাজাবার দরকার নেই, তুমি গাও’।

প্রথম স্টেজে ওঠার কথা মনে আছে ?


আতাহার টিটো: ১৯৯১ প্রথম স্টেজে উঠি। কনসার্টটা ছিল— খালিসপুর মহসিন কলেজে। সেটা এতোটা জনপ্রিয়তা পায় যে, মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাস-চিৎকার আর ভিড়ে স্টেজ ভেঙে পড়েছিল। প্রথম কনসার্টটা হিট হওয়ার পর’ই বর্তমানে যেটা কুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়, তারা আমাদের সে রাতেই কন্ট্রাক্ট করে নেয় একটি শো-এর জন্য, এভাবেই শুরু।

আইয়ুব বাচ্চুকে নাকি আপনি গুরু মানেন?


আতাহার টিটো: হ্যাঁ, আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি বাংলাদেশে সঙ্গীতের একটি বিপ্লব ঘটিয়েছেন। গুরু আযম খানের পরে হার্ড রকের যে বিপ্লব, তারুণ্যের যে উদ্দিপনাটা সেটা করেছেন আইয়ুব বাচ্চু। যখন আমি শুনি ‘মাধবী’ বা ‘রিটায়ার্ড ফাদার’ অথবা ‘হকার’ ‘ঘুম ভাঙা শহর’ কিংবা ‘পেনশন’ তখন আর বসে থাকা যায় না। তখন শরীরে বিদ্রোহ জন্মায়। গানের জন্য গান না, মানুষের জন্য গান যাকে বলে।

আপনি ‘বেনসন অ্যান্ড হেজেস স্টার সার্চ ২০০০’ এ সেরা এককশিল্পী এবং গায়ক ছিলেন। বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যান্ড তারকা'ই ওই প্রতিযোগিতার সাথে জড়িত ছিলেন, ওই সময়ের ইতিহাস বলেন।

আতাহার টিটো: আমি ওখানে সঙ্গীতের মহামানবদের দেখতে গিয়েছিলাম, পাস করার জন্য যাইনি। আমাদের প্রাইমারী যে
সিলেকশনটা হয়েছিল, সেটা ছিল মিউজিকম্যান স্টুডিওতে। ওখানে বাচ্চু ভাই, জেমস ভাই, পার্থ দা [সোলস], মাকসুদ ভাই [ফিডব্যাক পরে ঢাকা], ফোয়াদ নাসের বাবু ভাই [ফিডব্যাক], লাবু ভাই [ফিডব্যাক], বগি ভাই [রেনেসাঁ] ও কুমার বিশ্বজিৎদা ছিলেন।

সেদিন আমি খুলনা থেকে রওনা দেই সকালবেলা। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পৌঁছাতে দেরি হয়। যখন পোছাই তখন সিলেকশন পর্ব শেষ। সবাই নাস্তা করছেন। তখন আমি বললাম, আমাকে না নেন ভালো কথা কিন্তু আপনাদের দেখার সুযোগ করে দেন।



তারপর ?

আতাহার টিটো: তখন পার্থ দা বললেন, ওকে ঢুকতে দাও। ছেলেটা অনেক দূর থেকে এসেছে, ওকে পরীক্ষা দিতে দাও। যখন গান গাওয়া শুরু করলাম, পার্থদা আমাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন— গানটা কার ? আমি বললাম, আমারই লেখা আমারই সুর । তারপর বললেন— অন্তরা গাও, গাইলাম। জিজ্ঞেস করলেন— কর্ড সিলেকশন কার করা ? বললাম আমারই করা। তখন পার্থ দা বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে তুমি প্রস্তুতি নাও, এভাবেই শুরু।

পার্থ দা আমাদের গাইড করলেন কীভাবে গান আরও ভালো করা যায়। ঐ স্টার সার্চে বেসিক্যালি আমাকে গড়ে তোলার জন্য পার্থদা দারুণ ভুমিকা রেখেছেন। যখন আমার গিটারিস্ট অসুস্থ হয়ে পড়ল আমি ভাবছি গান করবো কিনা তখন পার্থ দা বলেছিলেন, একা উঠবা গান গাইতে। কেউ থাকুক আর না থাকুক। গাইলাম শুভ্র সুনীল গানটা। এরপরে আরেকটা। গিটারিস্ট অসুস্থ থাকার কারণে সবার শেষে উঠেছিলাম। আমি মাঝামাঝি ধরণের প্রার্থী ছিলাম। তারপর কুমার বিশ্বজিৎ দা উঠলেন সেরা গায়কের পুরষ্কার দেয়ার জন্য, সেটা পেলাম আমি। সেরা এককশিল্পীর পুরুস্কার পেয়েছিলাম গুরু আযম খানের হাত থেকে। এ এক অদ্ভুত প্রাপ্তি!

‘শুভ্র সুনীল এই সন্ধ্যাবেলা’ এই গানটা তো আপনার প্রথম হিট গান।

আতাহার টিটো: এটা আমার নিজের লেখা, নিজের সুর। সেরা গায়কের পুরষ্কার পাওয়ার পরে পার্থ দা আমাকে নিয়ে যান রেকর্ডিং স্টুডিওতে। পার্থ দা নিজেই কম্পোজিশন করে আমাকে গাওয়ান। পরে সাউন্ডটেকের একটি অ্যালবাম ‘স্টারপ্লাস’-এ এই গানটি রিলিজ হয়। ওটা আমার জীবনের প্রথম রেকর্ডিং ছিলো।

তারপরে বেশ কয়েকটি সলো ও প্রচুর মিক্সড অ্যালবামে কাজ করেছি। এই মুহূর্তে একজনের নাম নিতে চাই, বাপ্পা মজুমদার। আমার ভাই। যিনি নিজেকে নানাভাবে আমার প্রতি কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। আমি ওর কাছে অনেক বেশি ঋণী।

[ মূলত এটুকুই ছিল আমাদের মিউজিক নিয়ে আলোচনা, এরপর তা শহীদ কাদরী আর আবুল হাসানের কবিতার দিকে মোড় নেয়। অবশ্য তা প্রকাশ না করলেও চলবে। কথার এক ফাঁকে বললাম, আপনি চট্রগ্রামের এমএআজিজ স্টেডিয়ামে একটা কনসার্ট করেছিলেন ০২' -০৩ এর দিকে, ওই কনসার্টে যেই ব্ল্যাক জিন্সটা পড়েছিলেন, মনে আছে? ওনি বললেন, ওই জিন্স ওনি চট্রগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে কিনেছিলেন, মার্কেটের নাম সিঙ্গাপুর মার্কেট, একসাথে দুটো জিন্স কিনেছিলেন। আমি বললাম, আমি ওই জিন্স খুজতেসি। এরপর ওনি হাসতে লাগলেন।]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:০২

বিজন রয় বলেছেন: দারুন পোস্ট।
+++++

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৬

নাজমুস সাকিব রহমান বলেছেন: লেখাটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ বিজন ভাই। শুভেচ্ছা নেবেন।

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৩৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



বাংগালী শিল্পীরা পুরানো জেনারেশনের শিল্পীদের সুখে দু:খে কাছে

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৩

নাজমুস সাকিব রহমান বলেছেন: নতুনদের প্রতি আমাদের ভালো লাগা থাকে না, পুরনো হতে হতে ভালো লাগে।
সবকিছুতেই এ'রকম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.