নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মো: নিয়াজুল হাসান

মো: নিয়াজুল হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্ষুধার্ত মনে,অশান্ত শরীর!

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪৩

(আমাদের সময়ের বড্ড অভাব। তাও কিছুটা সময় অপচয় করে চাইলে পড়ে দেখতে পারেন। ভালো লাগলেও লাগতে পারে!)

গল্প শুরু করা যাক_
কাঠফাটা রোদ বলে বাংলায় একটা শব্দ প্রচলিত আছে। সম্ভবত যেই রোদে গাছের কাঠ পড়াৎ পড়াৎ করে ফাটে ঐটাই কাঠফাটা রোদ। এই সময়ে এর থেকে ভালো কোনো ব্যাখ্যা মাথায় আসছে না। আপাতত যেই রোদ মাথায় নিয়ে হাঁটছি সেটাকে কাঠফাটা বলা যায় কিনা বুঝতে পারছি না। ঢাকার রাস্তায় এটা একটা সমস্যা। আশেপাশে গাছের দেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে। এজন্যে কিঞ্চিত সমস্যা হচ্ছে,গাছের কোনো ফাটা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না বলে কাঠফাটা বলা যায় কি না ভাবছি। তবে মাথার উত্তপ্ত অবস্থা তীব্র ভাবে সায় দিচ্ছে এই রোদকে 'চান্দি ফাটা' রোদ বলা যেতেই পারে! আমার চান্দি এখন আগ্নেয়গিরিরর মতো উত্তপ্ত। আগ্নেয়গিরিরর উত্তাপে চোখের দৃষ্টিও কেমন ধোয়াঁশে হয়ে গেছে। সামনে অদ্ভুত অদ্ভুত সব জিনিস দেখছি।

একটা বর্ণনা দেয়া যেতে পারে।
সময় আনুমানিক দুপুর ২ টার কাছাকাছি। আনুমানিক বলছি কারণ হাতে সুন্দর একটি হাতঘড়ি থাকতেও আমার কেনো জানি ঘড়িতে সময় দেখতে ইচ্ছে করছে না। মানুষের মন বড়ই বিচিত্র জিনিস! আমি বাংলামোটর পার হয়ে শাহবাগের দিকে হাঁটছি। মাথার ভিতর ভনভন করে শব্দ হচ্ছে। আশ্চর্য ঘটনা হচ্ছে আমার আশেপাশে সবাইকে দেখছি ফুটপাত ব্যবহার করছে! ভাবছেন এতে অবাক হবার কি?

অবাক হবার মতো ঘটনাই তো। বাংলাদেশের মানুশ রাজপথ কে মোটামুটি বাপের রাস্তা বলেই গন্য করে। তারা নিজের মৌজমাস্তি মতো পারলে রাস্তার মাঝখান দিয়েই হাঁটে। পুরো রাঝপথে সে তার বিস্তার জাহির করতে চায়। পিছন থেকে হাজারো গাড়ির হর্ণেও তার যেনো কোনো বিকার নেই! সেখানে এমন ফুটপাত ধরে লাইন করে হাঁটা যথার্থই আচার্য ঘটনা। আমি যথাসম্ভব চেস্টা করছি 'চান্দিফাটা' অবাক হতে! কতটুক পারছি জানা নেই কিন্তু আমার চান্দি ফেটেই চলেছে।

আপাতত শাহবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। জেব্রাক্রসিংয়ের সামনে অনেক সুসজ্জিত একটা মানুষের জটলা দেখা যাচ্ছে। নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও একদল যুবক ও যুবতীরর কাছ থেকে তাদের জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করার আদবকায়দা শিখতে হচ্ছে।তাদের দেখে মনে মনে বলছি,'বাংলাদেশের মানুষের কি আদবকায়দার অভাব আছে নাকি!'

আমার ধারনা তরুণ দলটি কোনো স্কাউট দল হবে। আমিও জটলা পাকানো মানুষের সাথে নিজেকে সমবেত করলাম।

'সবে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ' একথা হয়তো আমার পাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোকের জানি নাই।ভদ্রলোকই বলছি, কারণ ছোটবেলায় শেখানো হয়েছে বইয়ের ভাষায় সবাইকে ভদ্রলোক বলা হচ্ছে একটা আদবকায়দা। আমার আদবকায়দা আবার অনেক বেশি তো! দেখে শুনে তাকে মনে হচ্ছে ব্যবসায়ী হবে। মোটামুটি যত্নে গড়া তার ভুঁড়িটা শার্টের এপাশ ওপাশ থেকে উঁকিবুকি দিচ্ছে। ভদ্রলোকের অস্থিরতা দেখে কেনো জানি আমার ভালো লাগছে। সে কখন যে রাস্তা পার হবে সেই চিন্তাগেই অস্থির। আহারে,আমাদের কত্ত তাড়া!

নিতান্ত ভদ্রতার সুরে তাকে বললাম,'Good day to you sir!'
ভুঁড়িওয়ালা ভদ্রলোক আমার দিকে অগ্নিদৃস্টি দিলেন। আপাতত আমি ভেবেই পাচ্ছি না আমি কি এমন বললাম? এই চান্দিফাটা রোদে এমনেতেই ফেটে আছি এমন অগ্নি দৃস্টি দেবার কোনো দরকারই দেখছি না। আচ্ছা,ভদ্রলোকের হয়তো ইংরেজ বিদ্বেষ আছে,তাই হয়তো তিনি একটু রাগ করলেন। এবার আগের থেকেও মধুর ভাষায় 'আমরি বাংলা ভাষা'য় বললাম, 'শুভদিন স্যার!'
ভদ্রলোক এবার যে দৃস্টি দিলেন তাতে গলিত লোহাও জমে গরম হয়ে যেতো!
ভদ্রলোকের দৃস্টির বিনিময়ে আমি তাকে একটি মিস্টি হাসি উপহার দিলাম। যথাসম্ভব চেস্টা করলাম হাসিতে একটা রিনরিনে ভাব আনার জন্য। গল্পে পড়েছি এমন হাসিতে নাকি প্রেমিকার বিষাক্ত মনও গলে কুসুম কুসুম হয়ে যায়। কিন্তু দূর ছাই! এই ভদ্রলোকের তো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।

দেশীয় জ্যাম তো, ছাড়তে একটু টাইম লাগে। মাত্র ট্রাফিক পুলিশ হাত দিয়ে সিগন্যাল দিলো।বিপরীত পাশের রাস্তা এবার বন্ধ। যদিও মাথা তুলে দেখি ট্রাফিক লাইটে লালবাতিটা জ্বলে রয়েছে! যাই হোক,আমরা যন্ত্রের থেকে ট্রাফিক পুলিশেই বেশি বিশ্বাস রাখি। জাতি হিসেবে বড্ড কিউট আমরা!

স্কাউট দলটিও জনতার ভিড়টি ছেড়ে দিয়েছে,ভুঁড়িওয়ালা ভদ্রলোকটি এবার পারলে দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হয়। আমার উপর প্রচন্ড রাগে অথবা তাড়াহুড়োর কারণেই ভদ্রলোকটি শেষমাথায় গিয়ে পায়ে পায়ে বেঁধে জবরদস্ত একটা আছাড় খেলো।ধপাস!
এখন সে উঠার চেস্টা করছে আর উৎসুক জনতা প্রবল আগ্রহ নিয়ে এই মধুর দৃশ্যটি দেখছে। কেউ এগিয়ে যাচ্ছেনা দেখে আমি এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়ালাম। পাছে একজনকে দেখলাম এই মজার দৃশ্য থেকে তাকে বঞ্চিত করতে যাচ্ছি দেখে তিনি বিরক্তিতে পক পক করে শব্দ করছেন।
দেশে যদি ফৌজদারি কোনো আইন থাকতো যে, 'আইন ০০০০০০০ঃ কাউকে আনন্দ থেকে বিতারিত করার অপরাধ;শাস্তিঃ জাতীয় টেলিভিশন বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচারে দশটি বেত্রাঘাত।' তাহলে নির্ঘাত তিনি এখনই ভ্রামান্য আদালতে মামলা ঠুকে দিতেন। আর বিটিভিও আনন্দমুখর একটি বিষয় পেতো সম্প্রচার করার। রিপোর্টার বলতো,'এইমাত্র পাওয়া,আইন ০০০০০০০ এ মাত্রই শাস্তি পাওয়া এক যুবকের ১০ টি বেত্রাঘাত প্রাপ্তির সরাসরি সম্প্রচার দেখতে হলে সাথেই থাকুন!' শুনেছি বিটিভির নাকি ইদানীং জনপ্রিতকর অনুষ্ঠান এর অভাবে ভুগছে। এটা যে হিট শো হতো ১০০% নিশ্চিত!

যাই হোক, ভুপাতিত ভাইটি (মানুষে মানুষে ভাই ভাই!) আমার বাড়িয়ে দেয়া হাতটা ঝাটা দিয়ে সরিয়ে দিলেন। মুখে বললেন,'যান তো মিয়া,বিরক্ত কইরেন না।'
আমিতো অনেক অবাক।এ কী,আমি তো উপকার করতে গিয়ে বিরক্ত সৃস্টি করতে চাইনি!
পাশের এক স্কাউট ভাইকে বললাম,'ভাইটি, উনাকে একটু উঠতে সহায়তা করুন। ইনি আমার উপকার নিতে চাচ্ছে না।'
স্কাউট ভাইটি এসে তাকে রাস্তার ওপারে দিয়ে আসলেন। তিনি লাফ দিয়ে এক রিক্সায় উঠে পগার পার হয়ে গেলেন। যাবার সময় বিরবির করে কিছু বলছিলেনও মনে হলো। ধরে নেয়া যাক, বাংলা শব্দভাণ্ডার থেকে নিম্নমানের কিছু শব্দ তিনি উপহার হিসেবে আমাকে দিয়ে গেলেন। কিন্তু ভুল করে তিনি স্কাউট ভাইটিকে ধন্যবাদ দিতে ভুলে গেছেন।
আমি উনার পক্ষ হয়ে স্কাউট ভাইটিকে বললাম,'ওহে স্কাউট ভাই আমার, ঐ লোকের পক্ষ থেকে আপনাকে লাল সালাম!'
স্কাউট ভাইটি জবাবে একটা মিইয়ে যাওয়া হাসি দিয়ে তার জনহিতকর আদবকায়দা শেখানোর কাজে নিয়োজিত হয়ে দিলেন। আমার ধন্যবাদ মনে হয় পছন্দ হয়নি। তিনিও মনে হয় আমার ব্যবহারে কিছুটা বিরক্ত।

আমার কি দোষ! সব দোষ এই চান্দি ফাটা রোদের!

রাস্তা পার হয়ে টি,এস,সি'র দিকে হাঁটছি। পিছন থেকে মিস্টি গলায় কে জানি ডাক দিলো,'এই যে ভাইয়া শুনছেন?’
-'আমিতো শুনছিই কিন্তু আমি তো আপনার ভাই নই; জসীম তার মুভিতে মেয়েদের জন্য অপরিচিত ছেলেদেরকে ভাই ডাক নিষিদ্ধ করে গেছেন। এতে বুকে তীব্র ব্যথা হয়,অনেক কস্ট লাগে।'
মেয়েটি আমার কথার জবাবে খানিকটা বিচলিত হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে এমন এক হাসি দিলো,যে হাসিতে আমার গরম চান্দি বরফশীতল হয়ে গেলো। মানুষের হাসি এতো সুন্দর হওয়া ঠিক না!
মেয়েটি বললো,'আচ্ছা অপরিচিত 'না ভাই',আপনি কি আমার সাথে এক কাপ চা খাবেন!'
পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার আমার অবাক হওয়ার পালা। আমি ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড অবাক হলেও বাইরে প্রকাশ করলাম যে অপরিচিত একটা মেয়ের আমাকে চা খাওয়ার নিমন্ত্রণ দেয়া যেনো খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।
হাসিমুখে বললাম,'চলুন,টি,এস,সি যাওয়া যাক।'
-'চলুন'।

আমি হাঁটছি আর চিন্তা করছি। ঠান্ডা মাথার চিন্তা। কি ঘটছে আমার সাথে? মেয়েটি কি আমাকে ফলো করছিলো। ভুঁড়িওয়ালা ভাইটির সাথে আমার বাক্যালাপে সে হয়তো মজা পেয়েছে! এছাড়াতো আর কোনো কারণ দেখছি না। আমার চেহারা এমন কিছু না যে চেহারা দেখে তার অন্তর জমে ক্ষীর হয়ে যাবে। মেয়েরা অল্পতেই মজা পেতে পারে আবার এই অল্পতেই তুলকালামও করতে পারে।
মেয়েরা বড্ডই বিস্ময়কর!

আসলে পৃথিবীর প্রথম আশ্চর্য হওয়া উচিৎ ছিলো মেয়েদের মন! কেউ হয়তো এই বিষয়ে চিন্তা করে দেখেনি। যদি কখনো বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তিতে পরিণত হই তাহলে 'বিশ্ব আশ্চর্য কমিটি'র সাথে এই ব্যাপারে একটা রূদ্ধদ্বার বৈঠক করা লাগবে।

আমি অপরিচিত মেয়েটির চায়ের নিমন্তন্ন গ্রহন করার জন্যে তার সাথে সাথে টি,এস,সি যাচ্ছি।

আমি তার নাম দিয়েছি 'নিবেদিতা'-যে নিবেদন করে...

_

পরিশিষ্টঃ
১.মাথার উপরে দাউ দাউ করে রোদ পড়ছে।
২.আমি প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত। মনটাকেও কেমন অশান্ত লাগছে।
৩.আচ্ছা,এটা কি বাস্তব, নাকি কল্পনা?
-আমার জানা নেই।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৩

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: মানুষের হাসি তাহলে কেমন হওয়া উচিৎ?

২| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫২

মেহেদী হাসান হাসিব বলেছেন: হিহিহি! কল্পনা!!!!

৩| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরিল ভাষায় সুন্দর লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.