নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নেছার উদ্দীন আহমদ

সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবন পরিবর্তিত হয় । এই পরিবর্তিত জীবনের একটি স্থির খণ্ড-চিত্র অন্যের সামনে উপস্থাপন করা প্রতারনার সামিল । তাই এভাবে আমি নিজেকে ও অন্যকে ঠকাতে চাইনা। তদুপরি আমি নিজেকেই তো সম্পূর্ণ জানিনা।কেননা আমার জীবনের কিছু স্মৃতি স্পষ্ট ,কিছু অস্পষ্ট আর কিছু উহ্য । এই উহ্য স্মৃতিটুকু আমি কখনোই ফিরে পাবোনা। তাই স্পষ্ট আর অস্পষ্ট স্মৃতির মধ্যে সমন্বয় করে ভালো অংশটুকু অন্যের সামনে উপস্থাপন করা কি প্রতারনা নয়? এরপরও আমার জন্য আশার বাণী হল আল্লাহর নিকট আমার সমস্ত জীবনই সংরক্ষিত । এটা ইহকালিন জীবনে কাজে না লাগলেও পরকালিন জীবনে বৃথা যাবেনা। তাই অস্পষ্ট ও হারানো স্মৃতি নিয়ে আমার কোন আফসোস নেই। আমি অতীত থেকে শিক্ষা নিতে রাজি কিন্তু অতীত নিয়ে বাঁচতে রাজি নই। এসব কিছুর পরও প্রতারনাহীন নিরেট সত্য কথা হল; আমি একজন মুসলিম।আল্লাহকে আমি কতটুকু ভালবাসি জানিনা, তবে তিনি যে আমাকে সীমাহীন দয়া, ভালোবাসা আর অনগ্রহ দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন এতে কোন সন্দেহ নেই। রাসুল (সঃ) আমার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি। অন্যান্য নবী, সাহাবী ও হক্কানি আলেমগন আমার অনুসরনীয় ব্যক্তি। বাবা-মা আমার অনুপ্রেরণাদাতা। আর সকল মানুষ (হোক সে বিখ্যাত, অখ্যাত কিংবা কুখ্যাত ) আমার দিক নির্দেশক। আমি কী ভালোবাসি কী পছন্দ করি সেটার হিসেব দেয়া বেশ কষ্ট সাধ্য। কিন্তু কী ভালোবাসি না , পছন্দ করি না সেটার হিসেব দেয়া বেশ সহজ। তবে সেটাও পরিবর্তনশীল। আমার জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে যদি জানতে চান তাহলে বলব- আমি কিছুই হতে চাইনা। কারন আমার জীবনের দৈর্ঘ্য যদি কয়েক হাজার বছরও বাড়িয়ে দেয়া হয় তারপরও জ্ঞান-সমুদ্রের শুধু নুড়িই আহরণ করতে পারব; অবগাহন তো দুরের কথা। তবে আমি কয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে চাই। যেমনঃ ধর্ম, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, রাজনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি । আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হল- আমি আমার নামেই পরিচিত হতে চাই। কারো আশ্রিত এমনকি তুলনীয় হতে চাই না। ‘আমি শুধু আমিই’ হতে চাই। যেহেতু পৃথিবীতে একবারের জন্য এসেছি, সেহেতু আমার অস্তিত্বের চিহ্ন স্বরূপ ধরার বুকে দাগ কেটে যেতে চাই।

নেছার উদ্দীন আহমদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুমায়ুন আজাদঃ ক্যাঙ্গারু নয় বাদুড় নারীবাদী

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৮

বাংলা সাহিত্যে হুমায়ুন আজাদই প্রথম যিনি নারীর অধিকার নিয়ে, নারীর স্বাধীনতা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ দুটি গম্ভীর বই লিখেছেন। একটি হল- ‘নারী’ অপরটি-‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’। ‘নারী’ নিষিদ্ধ হবার পর ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’ লিখেছেন। তবে বই দুটোর মধ্যে অধিকাংশ লেখাই সাদৃশ্যপূর্ণ। ‘নারীর’ পান্ডুলিপি সামান্য পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত হয়ে ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’ রূপ ধারণ করেছে।

‘নারীর শত্রুমিত্রঃ রুশো, রাস্কিন, রবীন্দ্রনাথ এবং স্টুয়ার্ট মিল’ নামে ‘নারীর’ একটা অধ্যায় রয়েছে। এই অধ্যায়টা ‘দ্বিতীয় লিঙ্গে’- ‘নারীর পক্ষ বিপক্ষঃ চার মহাপুরুষ’ নামে। উভয় বইয়ের প্রসঙ্গ ও লেখা প্রায় একই ধরণের। রবীন্দ্রনাথকে তিনি নারীর শত্রু হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। রবীন্দ্রনাথ নারী সম্পর্কে বহু কবিতা গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ নাটক লিখেছেন- কিন্তু তার মতে এগুলো- কথা বলার জন্যই কথা বলা।
(দ্রঃ নারীর পক্ষ বিপক্ষঃ চার মহাপুরুষ)

তার মতে- রবীন্দ্রনাথ ততদিনই নারীবাদী ছিলেন, যতদিন তরুণীদের সাথে মেলামেশার প্রয়োজন ছিল। (দ্রঃ নারীর পক্ষ বিপক্ষঃ চার মহাপুরুষ)। তার ভাষ্য মতে শুরু থেকেই রবীন্দ্রনাথ নারী মুক্তিবিরোধি ছিলেন না। এর প্রমাণ মিলে – ‘ইউরোপ প্রবাসীর পত্রে’। সেখানে রবীন্দ্রনাথ বলেন-‘একজন বুদ্ধি ও হৃদয় বিশিষ্ট মানুষকে জন্তুর মত, এমনকি তার চেয়ে অধম, একটা জড়পদার্থের মত সম্পূর্ণরূপে নিজের প্রয়োজনের জিনিষ করে তোলা... এ সকল যদি পাপ না হয় তবে নরহত্যা করাও পাপ নয়’।
(ইউরোপ প্রবাসীর পত্র)

নারীবাদী রমাই নারীমুক্তি বিষয়ক বক্তৃতা প্রদানের পর আটাশ বছর বয়সী রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন-‘মেয়েরা সকল বিষয়েই যদি পুরুষের সমকক্ষ তাহলে পুরুষের প্রতি বিধাতার নিতান্ত অন্যায় অবিচার বলতে হয়’। (দ্রঃ রমাইয়ের বক্তৃতা উপলক্ষ্যে)

হুমায়ুন আজাদ ‘নারীর শত্রু মিত্র’ অধ্যায়ে রবীন্দ্রনাথের নারীমুক্তি বিরোধী কতকগুলো উদ্ধৃতি দিয়েছেন- নিম্নে দেয়া হল-
‘আজকাল পুরুষাশ্রয়ের বিরুদ্ধে যে একটা কোলাহল উঠেছে সেটা আমার অসঙ্গত এবং অমঙ্গলজনক মনে হয়। পূর্বকালে মেয়েরা পুরুষের অধীনতা গ্রহণকে একটা ধর্ম মনে করত; তাতে এই হত যে চরিত্রের উপর অধীনতার কুফল ফলতে পারত না। অর্থাৎ হীন্তা জন্মাত না, এমনকি অধীনতাতেই চরিত্রের মহত্ত্ব সম্পাদন করত। প্রভুভক্তকে যদি ধর্ম মনে করে তাহলে ভৃত্যের মনে মনুষ্যত্তের হানি হয় না’।

‘মেয়েরা এতদিন যেরকম শিক্ষা পেয়েছিল তাই যথেষ্ট ছিল। স্ত্রীজাতির মধ্যে প্রথম শ্রেণির কবির আবির্ভাব এখনো হয়নি। মনে করে দেখ, বহুদিন থেকে যত বেশি মেয়ে সংগীতবিদ্যা শিখছে এত পুরুষ শেখেনি। ইউরোপে অনেক মেয়েই সকাল থেকে রাত্তির পর্যন্ত পিয়ানো ঠং ঠং এবং ডোরেমিফা চেঁচিয়ে মরছে, কিন্তু তাদের মধ্যে ক’টা Mozart কিংবা Beethoven জন্মাল’।

‘মেয়েদের সৃষ্টির আলো যেমন এই প্রেম তেমনি পুরুষের সৃষ্টির আলো কল্পনাবৃত্তি। পুরুষের চিত্ত আপন ধ্যানের দৃষ্টি দিয়ে দেখে, আপন ধ্যানের শক্তি দিয়ে গড়ে তোলে। we are the dreamers of dreams- এ কথা পুরুষের কথা। পুরুষের ধ্যানই মানুষের ইতিহাসে নানা কীর্তির মধ্যে নিরন্তর রূপ পরিগ্রহ করছে। ...... নারীর সৃষ্টি ঘরে, এই জন্যে সব কিছুকেই সে যত্ন করে জমিয়ে রাখতে পারে। তার ধৈর্য বেশি কেননা, তার ধারণার জায়গাটা বড় । পুরুষের সৃষ্টি পথে পথে, এই জন্যে সব কিছুর ভার লাঘব করে দিয়ে সমগ্রকে সে পেতে ও রাখতে চায়। এই সমগ্রের তৃষ্ণা, এই সমগ্রের দৃষ্টি, নির্মম পুরুষের কত শত কীর্তিকে বহুব্যয়, বহুত্যাগ, বহু পীড়নের উপর স্থাপিত করেছে।
পুরুষের কল্পনাবৃত্তির সাহস এত অত্যন্ত বেশি তার কারণ, স্থিতির ক্ষেত্রে স্থির হয়ে বসে বিচিত্রের সহস্র খুঁটিনাটিকে মমত্বের আঁকড়ি দিয়ে জরিয়ে ধরবার দীর্ঘ সময় তার কখনো ছিলনা। এই জন্যে সৃষ্টির প্রয়োজনে প্রলয় করতে তার দ্বিধা নেই।

‘আমরা যেমন বলে শ্রেষ্ঠ, মেয়েরা তেমনি রূপে শ্রেষ্ঠ। অন্তঃকরণের বিষয়ে আমরা যেমন বুদ্ধিতে শ্রেষ্ঠ, মেয়েরা তেমনি হৃদয়ে শ্রেষ্ঠ; তাই স্ত্রী পুরুষ দুই জাতি পরস্পর পরস্পরকে অবলম্বন করতে পারছে। স্ত্রীলোকের বুদ্ধি পুরুষের চেয়ে অপেক্ষাকৃত অল্প বলে, স্ত্রীশিক্ষা অত্যাবশ্যক এটা প্রমান করার সময় স্ত্রীলোকের বুদ্ধি ‘পুরুষের ঠিক সমান’ এ কথা গায়ের জোরে তোলবার কোন দরকার নেই’।

রবীন্দ্রনাথের মত রুশো, রাস্কিন, শরৎচন্দ্রও তার আক্রমনের শিকার। এরকম বহু মনিষীদের অসংখ্য উদাহরণ দিয়ে তিনি প্রমান করতে চেয়েছেন; তিনি একজন প্রকৃত নারীবাদী।

নারীর সংজ্ঞায় একধরণের পুরুষ বলে-‘নারী হচ্ছে জরায়ু, ডিম্বকোষ; নারী স্ত্রীলোক। (দ্রঃ ‘নারী ও তার বিধাতা’) হুমায়ুন আজাদ বলেন-‘নারী যে মানুষ, কোন কিছুর সম্পর্কে না এসেও তার একটি নিজস্ব সত্ত্বা আছে, এটা পুরুষতন্ত্র স্বীকার করেনি। পুরুষতন্ত্রের তীব্র সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন- ‘নারীর মূল্য তার মাংসের জন্যে, তার ভূমিকার জন্যে- স্ত্রী, মাতা, দাসী হিসেবে; এর বেশি নয়’। (দ্রঃ ‘নারী ও তার বিধাতা’)

হুমায়ুন আজাদ; তিনি নিজেও কি নারীকে মানুষ বলে স্বীকার করেন? নারী তার নিকট মানুষ নাকি জরায়ুহীন(!) মাংসের স্তূপ ও যোনীদ্বার বিশিষ্ট একজন পতিতা! ‘নারী’ বইটি যে সালে প্রথম প্রকাশিত হয় সেই ১৯৯২ সালেই তার আরেকটি বই প্রকাশিত হয় ‘মাতাল হাওয়া’ নামে। এর প্রথম প্রবন্ধের নাম- ‘পতিতারাই প্রসিদ্ধ এখন’। সেখানে তিনি বলেন- ‘পাড়ার যে মেয়েটিকে মাংসের স্তুপ ছাড়া আর কিছু ভাবতে গেলে কল্পনাপ্রতিভার দরকার পড়ে, একদিন দেখি একটি পত্রিকা তার সচিত্র সাক্ষাৎকার ছেপেছে’। (দ্রঃ ‘পতিতারাই প্রসিদ্ধ এখন’)

যে নারীর জন্য দু দুটো বই লেখা সেই নারীই তার চোখে মাংসের স্তূপ হয়ে ধরা দেয়? একই প্রবন্ধে ব্যঙ্গ করে আরো বলেন-‘প্রসিদ্ধ হতে হলে বাঁকশোভিত হতে হয়। বাঁকগুলোকে (নারীর শরীরের ভাঁজ) ছড়িয়ে দিতে হয়, ক্যামেরার সামনে উপচে দিতে হয়; প্রসিদ্ধ হতে হলে ন্যাংটো হতে হয়’।
(দ্রঃ ‘পতিতারাই প্রসিদ্ধ এখন’)

অথচ একই বইয়ের দ্বিতীয় প্রবন্ধে সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বলেছেন। তিনি বলেন-‘যে অভিনেত্রীটি নিজের নগ্ন ছবি তুলতে দেয়; প্রকাশ্যে স্বীকার করে ও গৌরব বোধ করে সে প্রগতির জন্যে অনেক উপকারী’।
(দ্রঃ নারী ও মৌলবাদ......)

তার প্রথম প্রবন্ধে যারা পতিতা; দ্বিতীয় প্রবন্ধে তারাই প্রগতিশীল! প্রসিদ্ধ হওয়ার জন্য যারা ক্যামেরার সামনে নগ্ন হয়; প্রথম প্রবন্ধে তাদের তিনি উপহাস করেছেন, ব্যাঙ্গ করেছেন, আর দ্বিতীয় প্রবন্ধে তাদেরই স্তুতি গেয়েছেন!

‘নারীর মূল্য তার মাংসের জন্যে, তার ভূমিকার জন্যে- স্ত্রী, মাতা, দাসী হিসেবে; এর বেশি নয়’। (দ্রঃ ‘নারী ও তার বিধাতা’) পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এ অপরাধটা ধরার পর তিনিই নারীদের মাংসের স্তূপ বলে গালি দিয়েছেন; আবার অন্যত্র তিনিই মাংসের স্তূপ প্রকাশ করে গর্ব করতে বলেছেন! এটা নারীবাদীর পরিচায়ক নাকি নারীবিদ্বেষীর পরিচায়ক? নারী স্বাধীনতা যদি নগ্ন শরীর কিংবা অশ্লীলতার মধ্যে থাকে তাহলে প্রথম প্রবন্ধে তাদের ব্যঙ্গ করেছেন কেন? আর শালীনতা যদি নারীমুক্তি হয় তাহলে দ্বিতীয় প্রবন্ধে নারীদের প্রকাশ্যে নগ্ন হতে বলেছেন কেন?
‘আমাদের নারী নিজেদের শরীর উপভোগ করেনা, কারণ পুরুষ তাদের সম্ভোগ করে’। (দ্রঃ নারী ও মৌলবাদী...) সম্ভোগের যে সংজ্ঞা তিনি ‘নারী’ বইয়ের ‘লৈঙ্গিক রাজনীতি’ অধ্যায়ে দিয়েছেন, সেটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। জীববিজ্ঞানের মতে- যৌনজনন প্রক্রিয়া যেসব প্রানী বা উদ্ভিদের মধ্যে ঘটে সেসব প্রানী বা উদ্ভিদের পুংজননাঙ্গ সচল থাকে এবং স্ত্রীজননাঙ্গ নিশ্চল থাকে। আর এটাকে পুরুষের সঙ্গম বলা প্রকৃতিবিরুদ্ধ।

‘এমন এক নায়িকা বা নারীর বিকাশ ঘটেছে এতে, যা আগে দেখা যায়নি বাংলায়, সে শুধু নারীবাদের পরমরূপ নয় বর্তমান বিশ্বের পরিস্থিতিতে আধুনিকতম রূপ’। (দ্রঃ ফালি ফালি করে কাটা চাঁদ)

বিবাহিত এক নারীর জীবন যখন সদ্য পরিচিত এক যুবক বদলে দিচ্ছিল তখন সেই নারীর উক্তি- ‘কোন দুঃখ লাগছিল না সুখ লাগছিল না ভালো লাগছিল না খারাপ লাগছিল না আমি শুধু আমার জীবন বদলে যাওয়ার ব্যাপারটি বোধ করেছিলাম’। (দ্রঃ ফালি ফালি করে.........।)

হুমায়ুন আজাদের মতে স্বামী হয়ত তাকে ‘সম্ভোগ’ করত কিন্তু যে পুরুষের দ্বারা জীবন বদলে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছিল, সেটাকে কি বলে? সম্ভোগ নাকি সঙ্গম? সুখহীন দুঃখহীন সম্ভোগ বা সঙ্গমের প্রক্রিয়া কী যেটা পৃথিবীর আধুনিকতম রূপ?

নারীর আধুনিকতা, নারীমুক্তি যদি অবাধ যৌনতার (হুমায়ুন আজাদের ভাষায় সঙ্গম) মাঝে থাকে তবে, মোটা মোটা দুটো বই লেখার কী প্রয়োজন ছিল? উলঙ্গ করে নারীদের রাস্তায় ছেড়ে দিলেই হত- সমস্ত অধিকার তাদের জরায়ুতে জমা হত।

‘পাক সার জমীন সাদ বাদ’ বইটি লিখেছেন বিশেষ একটা দলকে উদ্দেশ্য করে। সেই দলটির নারীভোগের যে বর্ণনা দিয়েছেন সেটা প্রায় সম্পুর্ণটা মিথ্যা ও বানোয়াট। বিশেষ দলটির এক নেতার কথা(?) হুমায়ুন আজাদ নিজের ভাষায় বর্ণনা করেন এভাবে- ‘এক একটি উর্বশীকে আমি মেপে মেপে দেখি , ঠোঁট দেখি , মোটা ঠোঁট আমার পছন্দ , জিভ দেখি , মোটা ধারালো চ্যাপ্টা খসখসে জিভ আমার পছন্দ , স্তন দেখি , মাঝামাঝি স্তন আমার পছন্দ , আমি পানি ভরা ব্লাডের মতো স্তন সহ্য করতে পারি না , উরু দেখি , সরু মাংসল উরু আমার পছন্দ ............।‘

‘ওর ঠোঁট আর বুক দুটি আমার খুব ভালোভাবেই চেনা ,ওগুলো আমি খেয়েছি , সেদ্ধ ডিমের ভর্তা বানিয়েছি , ভর্তা আমি ভালোই বানাতে পারি , দাঁত দিয়ে কেটেছি , আমার দাঁতগুলো স্নায়ুহীন নয় , ওগুলোরও বোধ আছে । স্তনে দাঁতের লালদাগ আমার চুনির থেকেও ভালো লাগে......."
(পাক সার জমিন সাদ বাদ)

ধর্ষনের প্রতিবাদ করতে এসে প্রতিবাদ মঞ্চের বক্তার বক্তৃতা শুনে শ্রোতাদের শরীরের উর্ধাঙ্গে ধর্ষনের প্রতিবাদ আর নিম্নাঙ্গে ধর্ষণের প্রবল ইচ্ছা জাগ্রত হয় তবে সেই বক্তা ধর্ষকের থেকেও বেশি ভয়ঙ্কর। কেননা ধর্ষক একটি ধর্ষণ করেছে আর প্রতিবাদী(!) বক্তা দশটি ধর্ষণের রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে। পাক সার জমিন সাদ বাদ তেমনই একটা বই।


‘এমন পুরুষ পাওয়া যাবেনা, যে বাস্তবে না হলেও মনে মনে কোন নারীকে বলাৎকার করেনি’।(দ্রঃ লৈঙ্গিক রাজনীতি)
অশ্লীল কল্পনা শুধু পুরুষই করে নাকি নারীরাও করে। যদি নারীরা করে থাকে তাহলে কল্পনার মানসপটে কাকে নিয়ে আসে? আর স্বপ্নদোষ তো শুধু পুরুষের হয়না নারীরও হয়। নারী স্বপ্নে কার স্পর্শ অনুভব করে; নারীর নাকি পুরুষের?
নারীর প্রতি আবেগপ্রবন হয়ে অধিক ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে যেয়ে কেউ যদি তার স্ত্রীকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে তবে সেটা সুস্থ মস্তিস্কের পরিচয় প্রদান করেনা। তাহলে কল্পনায় বলাৎকারের দায় শুধু পুরুষের উপর বর্তাবে নাকি নারীর উপরও............।

একসময় ‘ক্যাঙ্গারু বুদ্ধিজীবী বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। যারা সকালে একমঞ্চে-বিকেলে আরেক মঞ্চে, ভোরে এককথা দুপুরে আরেক কথা বলে বেড়ায় তাদের এ অভিধা দেয়া হয়েছিল। হুমায়ুন আজাদ তাদের এ অভিধা থেকে মুক্তি দিয়েছেন তবে আরেকটি নতুন অভিধা লাগিয়ে দিয়েছেন, সেটা হল-‘বাদুর বুদ্ধিজীবী’। কারণ যাদের মুখের উপর মুখ ও মুখোশ থাকে তাদের সাথে ক্যাঙ্গারুর মত নিরীহ প্রানীর নয় বরং বাদুড়ের সাথেই বেশ মিলে। (তিনি তার ‘ক্যাঙ্গারু নয় বাদুড় বুদ্ধিজীবী’ প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন) হুমায়ুন আজাদ দুটো নারীবাদী পূর্ণাঙ্গ বই লিখে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত হানতে চেয়েছেন, ‘সম্ভোগের’ তীব্র সমালোচনা করেছেন, ‘সঙ্গমকে’ পুরুষের রাজনীতি বলে আখ্যা দিয়েছেন, আবার তিনিই নারীকে উলঙ্গ করে অশ্লীলতার মধ্যে নারীমুক্তির পথ দেখিয়ে দিয়ে পুরুষের যৌন কামনা বাসনা উতলে দিয়েছেন। অসংখ্য লেখায় নারীর শরীরের আকর্ষণীয় বর্ণনা দিয়ে অমীয় সুধা পান করেছেন এবং করিয়েছেন।

পরস্পর সাংঘর্ষিক মতবাদ প্রচারের জন্য তার মত করে তাকে কি- ‘ক্যাঙ্গারু নয় বাদুড় নারীবাদী’ বলা যায়না?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.