নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বাগতম আপনাকে এক প্রব্রজ্যার প্রবচন রাজ্যে !
দোহাই
গতকাল ব্লগে প্রকাশিত একটি চিত্র নিয়ে অনেক বাকবিতণ্ডা হয়েছে । পক্ষে বিপক্ষে অনেকেই অনেক কথা বলেছে । আমার নিজেরও কিছু কথা আছে তাই নিয়ে আমি লিখছি । আমার এই লিখাকে আপনার কাছে নির্বোধের প্রগলভ বলে মনে হতে পারে । অথবা মনে হতে পারে প্রব্রজ্যার প্রবচন । তবে আমি বলব সে নাহয় আপনি নিজের মত করে ভেবে নেবেন , তবে অনুরোধ রইল আমার এই লিখাকে বিবেচনায় রাখতে দয়া করে নিজেকে নিরত করুন ।
ধর্ষণ , আইনত আর সামাজিক দিক থেকে একটি নিকৃষ্ট অপরাধ । ধর্ষণের প্রতি যেকোন বিবেকবান মানুষের প্রতিক্রিয়া ঘৃণা বাদে আর কিছু হবে বলে আমি মনে করি না । না এখানে আমি ধর্ষিতার প্রতি ঘৃণার কথা বলছি না আমি বলছি ধর্ষণ ও ধর্ষকের প্রতি ঘৃণার কথা । যদিও ধর্ষণের প্রতি একেক মানুষের একেক রকম প্রতিক্রিয়া আজ আমরা দেখছি । কখনও কখনও তাদের প্রতিক্রিয়া এতটাই জঘন্য হয় যে বিস্ময় আর ঘেন্নায় নিথর হয়ে যাওয়া বাদে আর কিছুই করার থাকে না । ফেসবুক নামক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই ধর্ষণের প্রতি অনুকুল প্রতিক্রিয়ার নগ্ন প্রকাশ । তার মধ্যে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাও যে আছে তা আর বলার অপেক্ষা থাকে না । নতুন প্রজন্মের মধ্যেও আজকাল দেখা যাচ্ছে ধর্ষণকে প্রচার করবার এক সর্বনাশা অনুশীলন । তাই ভবিষ্যত নিয়ে একটা বিরাট আতংকের অবকাশ থেকেই যাচ্ছে !!
ধর্ষণের মধ্যে একটি অন্যতম প্রকার হলো যুদ্ধকালীন ধর্ষণ । ধর্ষণের অনেক কারণ আছে , একজন ধর্ষক কিজন্যে এমন অপরাধে সামিল হয় তার এহেন অপরাধের পেছনে কোন অনুষঙ্গ কাজ করে তা নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে অনেক । আর তাই মতবাদও কম পাওয়া যায় না । তবে যুদ্ধকালীন ধর্ষণের পেছনে কারণটা বোধহয় একটাই আর তা হলো জনগণের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে দিয়ে তাদের মনোবল আর তাদের প্রতিবাদ করবার ইচ্ছেকে বিলীন করে দেয়া । পরিবারের নারীদের ওপর এমন নিরয় প্রলয় যখন বয়ে যায় তখন কোন পুরুষের ভেতর কেমন নিরাশা আর ভয়াবহ ধ্বস নামে তা বুঝতে কষ্ট হবে না কারও । প্রায় যেকোন যুদ্ধে একটি পক্ষ অথবা দুই পক্ষই এই গর্হিত অপরাধে নিজেদের কলুষিত করে । অমানবিকতার এক নারকীয় দৃষ্টান্ত রেখে দেয় ।
তেমনই এক দৃষ্টান্ত হলো মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনী কর্তৃক আমাদের নারীদের ধর্ষণ । তাদের পাশবিকতা কতটা নির্মম ছিল তা নিয়ে কম বই রচনা করা হয়নি । তাদের পাশবিকতার সম্পর্কে অবগত নয় এমন মানুষ কম পাওয়া যাবে । পুরো বিশ্ব দেখেছে যুদ্ধ ও সাম্রাজ্যবাদের কলজে কাঁপানো চিত্র । মানুষ যে কতটা হিংস্র হতে পারে তারও প্রমাণ পাই আমরা এইসব বর্ণনা থেকে ।
সেই সময়ে লাঞ্চিত নির্যাতিত যত নারীদের মৃতদেহ পাওয়া গেছে তার চিত্র আজ আমরা বেশ সহজলভ্যভাবে দেখতে পাচ্ছি । হ্যাঁ আমাদের চোখের সামনে দৃশ্যমান হচ্ছে আমাদের নারীদের ওপর দিয়ে কেমন আদিম হিংস্রতার আঁচড় কেটেছিল হানাদাররা । ভেতরটা কাঁপিয়ে দেয় তাঁদের সেই নারকীয় ক্ষণের কথা চিন্তা । কিন্তু এই যে চিত্রগুলো এর যথেচ্ছাচার ব্যবহার বা প্রদর্শন কী আদৌ সবার ভেতরে একই চেতনা প্রবাহ বয়ে দেয় ? এর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে কোনটির পাল্লা ভারী ? সে নিয়ে আমার আলোচনা ।
নারীর প্রতি শারীরিক আবেদন কোন কালেই এতটুকুও ভিন্নতা ছিল না । তবে হ্যাঁ এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক আছে বৈকি ! কোনটি ইতিবাচক আর কোনটি নেতিবাচক তার সংজ্ঞায়ন বা সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ধর্ম , সভ্যতা , মানবিকতা আর বুদ্ধি দিয়ে । তবে মানুষ কী সব সময় এই নির্ধারিত সীমা মেনে চলেছে ? না মেনে চলেনি । আর এই মেনে না চলার পরিমাণ এতটাই বেশি ছিল যে সেই প্রাচীন থেকেই আমরা নারীর শারীরিক আবেদন কেন্দ্রিক অপরাধের কথা শুনে এসেছি । আর তার দৃষ্টান্ত আমরা এখনও দেখে চলেছি । তাই এমন কোন নারী নেই যে কিনা নিজেকে নিয়ে সম্পূর্ণ নিরাপদ বোধ করে আর না কোন পুরুষ তার প্রিয়জনের প্রতি বিপদের আশংকা নিয়ে শঙ্কিত না হয়ে থাকে । প্রতিনিয়ত আমাদের তাড়িয়ে বেরায় এই আপদ ।
আইনের শাসন আর সামাজিক প্রথা কী এই অপরাধ থেকে মানুষকে নিস্তার দিয়েছে ? না দেয়নি । মানুষ নিজ থেকে পরিবর্তন না হলে, তার মধ্যে জৈবিকতা ছাড়িয়ে যতদিন না সহমর্মিতা ও মনুষত্ত্ব বেড়ে উঠবে ততদিন মানুষ নিরাপদ নয় , নিরাপদ নয় নারী ! কিন্তু সেইসবের চর্চা হয় কি ?
মূল্যবোধের প্রথম চর্চা শুরু হয় ধর্ম দিয়ে , কিন্তু ধর্মকে প্রতিনিয়ত পর্যদুস্ত করে মানুষ ধার্মিক হতে চায় । নিজের জৈবিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে মানুষ নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে চায় এখানে হতাশ না হয়ে পারা যায় না । ধর্মীয় কঠোর অনুশাসনকে ইনিয়ে বিনিয়ে জোড়া তালি দিয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহ করে মানুষ নিজের আখের গোছায় । ফলে অনাচার বাড়তেই থাকে । অত্যাচারিরা ধর্মকে সারথি করে অত্যাচার চালাতে থাকে । সভ্যতার নির্মমতা দেখা যায় ঢালাওভাবে ।
মানুষ যখন ধর্মকে বুড়ো আঙুল দেখায় তার পর আর যত নিয়ম কানুন দেখানো হোক না কেন সে যখন অধোঃপতনে যেতে যায় কিছুই তাকে আর ঠেকিয়ে রাখতে পারে না ।
আর মানুষ যখন অমানুষ হয়ে যায় তাকে কী আর মানবিকতার শিক্ষা দিয়ে কোন লাভ হয় ? সে নিজে মানুষ হতে না চাইলে কী করার থাকে ? আমরা আজ ফেইসবুকে চোখ বোলালে দেখতে পাই মানুষ নিজের কলুষতাকে কত আভিজাত্য নিয়ে প্রকাশ করছে । ধর্ষিতাকে নিয়ে বিদ্রুপ করা , তাকে নিয়ে নোংরা মন্তব্য করা , তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করা এসব এখন ভুড়ি ভুড়ি হচ্ছে । একজন ধর্ষিতা সমাজে লজ্জিত হচ্ছে আর অন্তর্নিহিত প্রশংসায় ভাস্বর হচ্ছে ধর্ষক । সেখানে কী মৃত ধর্ষিতার ধর্ষণগ্রস্ত চিত্র প্রকাশ করাতে কোন ভালো ফল বয়ে আনে ? বরং এইসব অমানুষদের ঘৃণ্য বিনোদনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠে এইসব চিত্র । তাঁদের ভেতরে নেই কোন বোধ তো তার কাছে কী মূল্য আছে অন্যের অসহায়ত্ব নিয়ে ?
তাই এইসব চিত্র ঘটা করে প্রদর্শন করটা ঠিক নয় বলে আমি মনে করি । যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসব প্রকাশ করা হয় তা যদি পূরণ না হয় তবে তো বারবার এইসব চিত্র প্রকাশ করার মধ্যে ফায়দা কোথায় ? এইসব চিত্র প্রকাশের কারণে কোন তো ইতিবাচক প্রভাব দেখছি না । বরঞ্চ নেতিবাচক প্রভাব বেশি দেখা যাচ্ছে । তাই এইসব চিত্র প্রকাশ করে আমাদের যখন উদ্দেশ্য পূরণ হয় না তখন এমন অনুশীলনে আমাদের অন্য উদ্দেশ্য প্রকাশ পায় নয় কি ? কেন আমরা সেই উদ্দেশ্যের পথিক হব ?
তাছাড়া আমরা কী এইসব চিত্র অকাতরে প্রকাশ করে আমাদের নারীদের অপমান করছি না ? শ্লীলতা বলে তো মানব সভ্যতায় একটি বিষয় আছে । কেন আমরা তা লঙ্ঘন করব ? আমরা কেন এইসব করে নিজেদের সভ্যতা ভব্যতাকে বিসর্জন দেব ? আমাকে কী বারবার প্রকাশ করতে হবে যে আমার বোনের ওপর দিয়ে কতটা ঝড় বয়ে গেছে ? এর পেছনে কারণটা কী ? কৌতুহল ? এই কৌতুহলের পেছনে উদ্দেশ্যটা কী ?
যদি সামান্য বর্ণনা থেকে সেই নারকীয়তা নতুন প্রজন্ম জানতে না পারে তবে বলতে হয় এই প্রজন্ম পঙ্গু বাদে আর কিছূই না । তাদের এইসব নারকীয়তা বুঝতে যদি শ্লীলতার লঙ্ঘন করতে হয় তবে বলতে হয় এসবেও এরা অনুভব করতে পারবে না কিছুই , শুধু অমানবিকতাতে আকৃষ্ট হবে ।
তাই আমি মনে করি এমন চিত্র প্রকাশে আমরা ভালো কিছু করছি না বরং আমরা হিতের বিপরীতে নিজেকে সামিল করছি । আমাদের শোধরানো উচিত । আরেকবার ভাবা উচিত আমাদের কী করণীয় । নারী যেখানে মানুষের সম্মান পায় না সেখানে এইসব চিত্র দিয়ে মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা জাগানোটা একেবারে নির্বোধের কাজ !
রচনাকারী: নিবর্হণ নির্ঘোষ ।
১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২১
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: ঠিক তাই । গবেষণাধর্মী কাজে এর প্রকাশ আবশ্যক । সেইক্ষেত্রে উদ্দেশ্য একই থাকে । কিন্তু ঢালাওভাবে দেখালে এখানে কোন ফায়দা নেই ।
ধন্যবাদ জানবেন !!
২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৫
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: কী সুন্দর করে লিখেছেন। ধন্যবাদ
১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৭
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: ধন্যবাদ ছবি আপা !!
৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:০০
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- কিছু কিছু জিনিস তর্কের উপরে রাখা উচিত। কি কি জিনিস তর্কের উপরে রাথকে হবে সেটি নিয়ে তুমুল তর্ক হতে পারে।
১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:০৩
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: হা হা হা হা তর্ক করিনি তো , নিজের অভিমত জানালাম কেবল !
৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: সহমত।
১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:০১
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: ধন্যবাদ অগ্রজ ব্লগার !!
৫| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:২২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আর তাদের এ দেশীয় দোসররা কী পরিমাণ হিংস্রতা দেখিয়েছে, বর্তমান প্রজন্মের অনেকে বিশ্বাসই করে না। তাদের কাছে সেসব গালগল্প মনে হয়। এমনভাবে ধর্মের মোড়কে আবৃত করা হয়েছে, অনেকে আবার সেসব হিংস্রতাকে জায়েজও মনে করছে।
এসব ছবি দেখানো মূলত হিংস্রতাকে সামনে এনে বোঝানো আমাদের ওপরে কী পরিমাণ অত্যাচার করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, যারা সরাসরি অত্যাচারিত হয়নি, তাদের কাছে এসবের কোনো আবেদনই নেই। তাই তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে বলে এত বছর আগের বিচার না করে বর্তমানের অন্যায়ের বিচার হওয়া উচিত। বর্তমানের অন্যায়ের বিচার হওয়া উচিত বৈকি, তাই বলে পেছনের অন্যায়ের বিচার হবে না? মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হলে কি এমন মন্তব্য করতে পারত?
১৮ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৫০
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: কিন্তু তরুণ প্রজন্ম যেখানে নারীর শারীরিক আবেদন বাদে নারীকে গণ্য করে না এবং নারীর শরীরকে হাস্যরসাত্মক বিনোদনের উপায় বলে মনে করে সেখানে তো এসব চিত্র প্রকাশ করে উদ্দেশ্য হাসিল হবে না । বরঞ্চ বানরের গলায় মুক্তোরমালা দেবার মত হয়ে যাবে না ?
আমরা এসব চিত্র দেখেছি পরে বই পড়ে জেনেছি । আমরা কী উপলব্ধি করতে পারিনি ? তারা যদি এতটুকুতেই আঁচ করতে না পারে তবে তো এটা পরিষ্কার তাঁদের বোধটাই নেই , তাই এরা একদম পশু আর পশুকে কী মানবিকতা বোঝে ? তাই আমার আপত্তি এইসব চিত্র প্রকাশে । আর ধর্মকে তো কবেই বরাহ শাবকেরা তাঁদের অস্ত্র বানিয়ে নিয়েছে । তবে আমার বিশ্বাস ধর্ম ওদের হয়ে যায় নি । প্রকৃত ধর্ম চর্চার ভেতর দিয়ে এইসব বরাহদের শেষ করতে হবে !
আর হ্যাঁ অপরাধ যত পুরনো হোক এর শাস্তি মওকুফ সময়ের বিবর্তনে হয় না । পূর্বের অন্যায়ের বিচার ব্যতীত বাস্তব সময়ের বিচার হয় না । তবে পূর্ব ও বর্তমান দুই সময়ের অন্যায়ের বিচার এক সাথে না হলে প্রশ্ন থেকে যায় !
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৫৮
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই ছবিগুলি দেখানো উচিত না। কোন ধরণের গবেষণা জাতীয় কর্মে দেখানোর প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু সাধারণভাবে ১৯৭১ সালের বিরঙ্গনাদের নগ্ন ছবি দেখানো উচিত না বলে আমার মনে হয়।