![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত তিনটা, ভাইব্রেশনে রাখা ফোনটি আমার সারা বিছানা মৃদু কাঁপিয়ে যাচ্ছে। কাঁপনটা অনেকটা কুমারী মেয়ের প্রথম প্রথম পুরুষের স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠার মতো মনে হচ্ছিলো! ফোনটা ধরেই বললাম, “সোনা, আবার কী হলো?”। রিয়ার সাথে রাত দুটো পর্যন্ত রসালো মধুর আলাপ শেষ করে একটু আগেই ঘুমিয়েছি! তাই কাঁপনটা একটু অন্যরকমই লাগছিলো ! রিয়ার নাম্বার ফোনে সেইভ করা থাকে না, থাকে হৃদয়ে। ঘুম ঘুম চোখে ফোনে কোন নাম না দেখে ধরেই নিলাম ফোনটি রিয়ারই। কিন্তু সোনা আমার কোন উত্তর না দিয়ে বললো, “আসসালামু আলাইকুম, স্যার; কেমন আছেন?”
“ওয়া আলাইকুম আসসালাম! আলহামদুলিল্লাহ্ , ভালো আছি ।” খুব দ্রুত চিন্তা করে নিলাম বলতে বলতে, না ফোনটা কেন জানি কেটে দিতে পারলাম না। একটু সরি বলে নিলাম। বললো, “সরি কেন বলবেন? আমাকে তো আপনি সোনা আপুই বলতেন!”
বললাম, সরি, আপনার কণ্ঠস্বর ঠিক চিনতে পারছি না। কোন ভড়ং নয়, “আমি তৃণা, আপনার বন্ধু আজাদের সেই দুষ্ট বোন!” মাই গড, কোথা থেকে? ফোন নাম্বার পেলা কোথায়। মুহূর্তেই বিশ বছর পিছিয়ে গেলাম। বিদ্যুৎ চমকের মতোই পনের বছরের এক কিশোরি মেয়ের ভোঁ করে দৌড় দেয়ার কথা মনে হলো। পয়ত্রিশ বছরের এক রমণীর কণ্ঠস্বর কীভাবে চিনবো!
তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, বড় ভাই নিয়মিত টাকা পাঠাতো। টিউশনি করতাম মানুষকে জানার জন্য, বিভিন্ন পরিবার সম্পর্কে ধারনা পাবার জন্য। হঠাৎ করে আমার বন্ধু আজাদ জরুরি খবর দিলো, দোস্ত একটা উপকার করতে হবে। আমার ছোটবোনের টিউটর হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে গেছে। এদিকে সামনে ওর পরীক্ষা। তুই একটু সময় করতে পারবি কিনা? দোস্তকে এতটুকু হেল্প করতে পারবো না, তা কী করে হয়!
সন্ধ্যা সাতটা । সুন্দর পরিপাটি এক রুম। বইগুলো খুব গুছানো। আমার সামনে বসে আছে পনের বছরের এক কিশোরী। খুবই পরিপাটি। একটা সুঘ্রাণ ভেসে আসছে । অবাক হলাম, স্যারের সামনে পড়তে কেউ কি এমন করে সুসজ্জিত হয়ে আসে! সে সময়ে অবশ্য মেয়েদের বিষয়ে আমার ধ্যান ধারনা ছিলো সীমিত, প্রচলিত। নারীর সাজ সজ্জা বয়সের সাথে সাথে ঋতু পরিবর্তনের মতই বদলায়, সে আমি বুঝেছি অনেক পরে।
কিছুক্ষণ পরেই রুমের লাইট বন্ধ হয় গেল, মানে কারেন্ট চলে গেলে। মুহূর্তেই আমার বা পাশ দিয়ে যেন একটা হালকা ঝড়ো বাতাসও বয়ে গেল। মনে হলে কে যেন দৌড় দিয়েছে। হঠাৎ দেখি তৃণা আসছে চার্জার লাইট নিয়ে। তখন বুঝতে পারলাম, তৃণাই দৌড় দিয়ে চলে গিয়েছিলো আর আমার কাছে তা দমকা হাওয়ার মতো মনে হয়েছে।
এক মাস পার হলো। পড়ানোর সময়টা এমন যে কারেন্ট একবার না একবার যায়ই যায়! আর প্রতিবারই একটা দমকা বাতাস আমার পাশ দিয়ে বয়ে যায়। প্রথম দিকে মজা লাগলেও পরে আর ভালো লাগছিলো না। প্রথম দিকে বিশ্বাস না করতেই পারে, আস্তে আস্তে তো বিশ্বাস করার কথা। বিশ্বাসটা আসছে না কেনো? আর এতই যদি অবিশ্বাস তো ড্রইং রুমে বসে পড়লেই তো পারে। এদিকে বন্ধুর বোন – কিছু বলতেও পারি নি, সইতেও পারি না।
দু মাস পরে আমার ধৈর্যচ্যুতি হলো। কারেন্ট গেলে তার এ ভোঁ করে দৌড় দেয়ার ব্যাপারটা কেমন যেন অপমানজনক মনে হলো। বাদ দেয়ার একটা চিন্তা করতে লাগলাম। বন্ধুকে বললাম, টাকা বাড়াইয়া দে আমার। খালাম্মারে বল একটু বাড়িয়ে দিতে। তোদের তো মা শা আল্লাহ অনেক আছে। দুমাসের মধ্যেই টাকার পরিমাণ বেশ বাড়াতে বলাতে খালাম্মা ভালোভাবে নিলেন না। আমারো উদ্দেশ্য হাসিল হলো।
এবার বিদায় পর্ব। বললাম, হ্যা অনেক মানুষই খারাপ থাকে। অনেকেই সুযোগ নেয়। কিন্তু সবাইতো অবিশ্বাসী নয়। ভালো থেকো। তারপর আর কথা হয় নি। কী কারণে যেনো আজাদদের পরিবারে কিছু ঝামেলা হলো, ওরা সব গুছিয়ে দেশই ছেড়ে চলে গেলো। আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে পারি জমালো পরিবারের সাথে দেশের বাইরে। বিখ্যাত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করছে। আজাদের সাথে ওর বাবার মৃত্যুর পরে একবার এবং আর একবার খালাম্মার মৃত্যু সংবাদ পেয়েছিলাম।
এত বছর পরে তৃণার কণ্ঠ শুনে এত গভীর রাতেও কিসের যেন দু:সংবাদের বার্তা মনে হলো। এত রাতে খুব বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ফোন করার কথা নয়।
স্যার, আমাকে নিয়ে তো দেখলাম বেশ কয়েকটা কবিতা লিখেছেন, আড়িপাতা গ্রুপে দারুণ একটা গল্পও লিখেছেন। শুধু একবারও মনে হয়নি, গল্পের নায়িকা কেমন আছে, কোথায় আছে!
আপনি তো দুমাস পড়িয়েই সেই যে চলে গেলেন আর খবরও নেননি। বিদায় দিনের কথা কি আপনার মনে আছে? আমার কিন্তু বেশ মনে আছে! বেশ গুরুগম্ভীর কথা। বলেছিলেন বিশ্বাসের কথা।
স্যার, আমি আপনার সব খবরই পাই, আপনাকে ফলো করি। সব স্টাটাসই পাই। আপনি খুব নিষ্ঠুর মানুষ। বিশবছরে আমাদের খবর একদিনও জানতে চান নি।
জানতাম স্যার, আমি যখনই দৌড় দিতাম, তখনই আপনি বিরক্ত হতেন। আর একটা সময়ে বিরক্ত হয়ে ছেড়েই দিলেন। আমার খুব ইচ্ছে হতো আপনি একবারও যদি আমার এই দৌড় দেয়ার কারণটা জানতে চাইতেন। জানতে চান নি একবরাও।
আপনার আগে আমাকে পড়াতো রাহাত নামে আরেকজন। যেমন মেধাবী আর তেমন ছিলো দেখতে। তারপর যা হওয়ার ,আর পাঁচটা বাঙ্গালি মেয়েদের মতো আমিই তার প্রেমে পড়ি। কিন্তু রাহাত, সে ছিলো বড্ড শরীরি। সে আমার প্রেমে নয়, আমার শরীরের প্রেমে পরে। তারমত চতুর ছেলের ফাঁদে পড়ে আমি সবই হারাই। পড়াতে বসলেই সে বই ছেড়ে আমার শরীরকেই পড়তো।
ছেলেমেয়েরা তাদের ভালোবাসার মানুষদের সাথে ঘুরে বেড়ায়। আমারও খুব ইচ্ছা হতো ঘুরে বেড়াতো। একদিন সুযোগও পেয়ে যাই। আর এই ঘুরতে যাওয়াই আমার কাল হলো। সেটাই আমার শেষ দেখা, শেষ দেখা হওয়ার আগে আমার কুমারী জীবনও শেষ হয়ে যায়। কণ্ঠ যেন তার একটু ভারী ভারী মনে হলো।
প্রতিদিন আমি আশায় আশায় থাকতাম। কিছুদিন পরে ভাইয়া জানালো, রাহাতকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে নতুন টিচার খুঁজতে হবে। রাহাতকে আর পাওয়া যায়নি।
আমার সন্দেহ ঢুকে যায় ভাইয়ার প্রতি। সব সময় মনে হয়, রাহাতের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে ভাইয়ার কোন হাত আছে। আমি কেন দৌড় দিতাম জানেন? যদি আপনি আবার নিঁখোজ হয়ে যান! বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরি ছেড়ে ভাইয়া যখন আমেরিকায় পারি জমালো সন্দেহটা আমার আরও বেড়ে যায় ।
কিন্তু উত্তরটা আজও পাই নি। আমার ধারনা আপনি বিষয়টা জানেন।
আচ্ছা স্যার, আপনারা তো খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। কিন্তু সেই গাঢ় বন্ধুত্ব কোথায় গেল?
বয়স বাড়ছে স্যার আমার ।আমার দুই মেয়ে, পড়াশুনায় অনেক ভালো, নিজেরাই যেন স্বাবলম্বী । আজকাল চিন্তা করার অনেক সময় পাই। রাহাতের এই নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি আমাকে ইদানীং খুব ভাবায়।
বহু বছর পরে , অনেক কষ্ট করে আপনার খোঁজ পেয়েছি। শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য। আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে উত্তরটা আপনার কাছেই আছে।
স্যার, শুধু বলবেন , রাহাতের নিখোঁজের বিষয়টি আপনি জানেন কি জানেন না! আর কিছুই জানতে চাইবো না!
তৃণার ফোনে বিরামহীনভাবে কথা শুনতে শুনতে ভাবছি, পৃথিবী বড়ই রহস্যময়। মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলতে আসলেই কিছু আছে। গোয়েন্দাবিভাগের সব চাকুরিগুলো মেয়েদেরই দেয়া উচিত।
একজনের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, কখনো মিথ্যা কথা বলবো না। তৃণাকে বললাম, আমি উত্তর দিবো একটা শর্তে। দ্বিতীয় প্রশ্ন করা যাবে না।
“আমি জানি।”
চারপাশে শুনছি ফজরের আজানের ধ্বনি।
২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৭
নিঝুমবাবুই বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুক, আমরা সবাই চাই।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৫
ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: সন্ধান দেয়া বা নেয়া কোনটাই মঙ্গলজনক নয় যদি উপস্থাপিত ঘটনা সত্যি হয়।
তৃণা ভার থাকুক তার স্বামী সন্তান নিয়ে।