![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
অ্যালার্মের শব্দে জেগে উঠল শৌভিক । সকাল ৮টা বাজে, ৯টা সময় টিউশন আছে । ফ্রেশ হয়ে জামা পালটে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে বুঝতে পারলো আজ আর নাস্তা করাটা ঠিক হবেনা । ব্যাপারটা এমন না যে শৌভিক তিনটা টিউশন করে খুব কম টাকা কামায় । ব্যাপার হচ্ছে সে গ্রামে মায়ের কাছেও টাকা পাঠায় । আর আপনি ঢাকায় মেসে থাকেন আর ফ্ল্যাটে থাকেন, দারুণ খরচের ব্যাপার । যাই হোক শৌভিক বের হল ঘর থেকে । এবার শীতটা ভালই পড়েছে । মাস প্রায় শেষ , বেতনটা পেয়ে একটা নতুন গরম জামা কেনা দরকার । মায়ের জন্যেও কিনতে হবে একটা গ্রামে আরও বেশি শীত হবে হয়ত । রাস্তায় হাটতে হাটতে এগুলোই ভাবছিল শৌভিক ।হঠাত একটা রিকশা থামল সামনে । রিকশায় বসা মেয়েটা বলল ,
" আই শৌভিক ! কোথায় যাচ্ছ ? "
মেয়েটাকে শৌভিক চেনে , ওরা একই ক্লাসে পড়ে । কিন্তু কি আশ্চর্য কিছুতেই নামটা মনে আসছে না ! শৌভিক এমনিতেও খুব কম মানুষের সাথে কথা বল , কিন্তু হঠাত এভাবে প্রায় চার বছর একসাথে ক্লাস করার পর ক্লাসমেটের নাম ভুলে যাওয়াটা খুবি বিব্রতকর ।
শৌভিক সাবধানে উত্তর দিল, "এইত কলাবাগান যাচ্ছি একটু ।"
"তাই ? ভালই আমিও যাচ্ছি ওদিকে । উঠে পড় একসাথে যাই ।"
"বলে কি মেয়ে !"শৌভিকের ক্লাসের ছেলেদের সাথেই প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতে ভাল লাগেনা ....আর এই মেয়ে কিনা তাকে বলছে তার সাথে রিকশায় উঠতে । "আরে কি এত ভাবছো । দেরী হচ্ছে তো ।" মেয়েটা আবার বলল । নিজেকে অবাক করে দিয়ে রিকশায় উঠে বসল শৌভিক । ইশ নামটা এখন মনে আসছে না । কি অবস্থা হবে মেয়েটা যদি বুঝে ফেলে ?
রিকশা চলতে শুরু করলেই মেয়েটা কথা বলতে শুরু করল । "ফাইনাল রেসাল্ট তো দিয়ে দিচ্ছে । চাকরি টাকরি খুজেছ কোন ?"
শৌভিক নার্ভাস ভাবে উত্তর দিল, " নাহ মানে কয়টা জায়গায় খোজ নিয়েছি কিন্তু কেউ ফাইনাল রেসাল্টের আগে ইন্টারভিউ নিতে রাজি নয় । "
"আরে কি বলছ ! কত কোম্পানী তো রেসাল্টের আগেই রিক্রুট করছে ।" বলেই ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে দিয়ে বলল," নাও এখানে একটা সিভি পাঠিয়ে দাও । তোমার রেসাল্ট তো বরাবর ভালো । ওরা ফাইনালসের জন্যে ঝুলিয়ে রাখবে না ।"
"তুমি কি করে জানলে আমার রেসাল্ট ভাল ?"
খুব যেন একটা হাসির কথা বলেছে সে, হেসে বলল মেয়েটা, " আমি ক্লাসের সি আর আমার সব জানতে হয় । ইন ফ্যাক্ট আমি আরও অনেক কিছু জানি । তুমি কোথায় থাক সেটাও । " মেয়েটা আরও কি জানি বকবক করতে লাগল । শৌভিক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । রিকশার সিটটা মনে হয় ছোট । একদম গায়ের সাথে লেগে বসে আছে মেয়েটা । কি অদ্ভুত ওর একটুও অস্বস্তি লাগছে না ।একটু হয়ত ভালই লাগছে । কে জানে শীতের সকালে একটু উষ্ণতা হয়ত ভালই লাগে । নীল রঙের সোয়েটার পড়েছে মেয়েটা । যাক শেষ পর্যন্ত নামটা মনে পড়ল মেয়েটার ।
সাধারণত একটা দিন খারাপ যাবে কিনা শৌভিক সেটা সকালেই বুঝতে পারে । কিন্তু আজকের দিনটা অন্যরকম । যদিও সকালে মনে হয়েছিল খুবি খারপ যাবে দিনটা কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভালই যাবে । স্টুডেন্টকে পড়াতে পড়াতে ভাবছিলো শৌভিক । তবে কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারলো ব্যাপারটা ঠিক না , দিনটা আসলেও খারাপ যাবে , শুধু আজকের না সামনের দিনগুলোও খারাপ যেতে পারে । স্টুডেন্টের মা বলে দিয়েছে আগামী মাস থেকে আর লাগবে না তাকে । মনটা খারাপ করে বের আসল শৌভিক রাস্তায় । সবসময়ই চুপচাপ স্বভাবের ছেলে শৌভিক । এজন্যে এদিক সেদিক যোগাযোগও খুব একটা নেই ওর । ওর ব্যাচমেটরা প্রায় সবাই ইন্টার্নশিপ কিংবা ফুল টাইম জব যোগার করে ফেলেছে । তিনটা টিউশন দিয়ে খুব খারাপ চলছিল না । মাকে টাকা পাঠিয়ে চলে যেত মোটামুটি । এখন কি হবে কে জানে ।
মা অনেক কষ্ট করে এতদূর নিয়ে এসেছেন শৌভিককে । মা পড়াশোনা করেননি বেশি । গ্রামে মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন , তাহলে বুঝতেই পারছেন কত কষ্ট করতে হয়েছে । এখন একটা চাকরি পেয়ে মাকে শান্তি দিতে পারলেই হয় । ফোনটা বেজে উঠল...
"হ্যালো, মা ?"
"বাপ, ভালা আসোস খাইসোস সকালে ?"
"খাইসি মা , তোমারে না বললাম রোজ রোজ সকালে ফোন দিয়া জিজ্ঞেস করা লাগব না ।
"আচ্ছা বাপ আর জিগামু না চিন্তা লাগে তোর জইন্যে তাই জিগাই ।"
"ঠিকাসে মা কাজ আছে পরে কথা বলব ।" বলে ফোনটা রেখে দিল শৌভিক । মাকে এত ভালবাসে শৌভিক তবু মা খোজ খবর নিলে কেমন যেন বিরক্তি বোধ হয় ওর ।
২
দু দিন আগে ওই মেয়েটার দেওয়া কার্ডের ঠিকানায় একটা সিভি পাঠিয়েছিল শৌভিক । আজকেই ওকে ইন্টারভিউ এর জন্যে ডেকেছে । সেই ইন্টারভিউ দিয়েই ফিরছে বাসায় শৌভিক । একটু আশাহত শৌভিক । তেমন একটা প্রশ্ন করে নি ওকে । হালকা পাতলা কয়েকটা প্রশ্ন করে ছেড়ে দিল । ফোনটা বাজছে ,মা ফোন করেছেন আবার ।
"বাপ অনেকদিন হইসে বাড়ি আসোস না । আসবি না ?"
"মা আমি অনেক ব্যস্ত আছি এখন সময় হবে না ।"
"কিন্তু তোরে দেখতে মন চায় যে আয় না রে বাপ । পরীক্ষা তো শেষ , দুই একদিনের জইন্যে আয় !"
" শোনো মা চাকরি খুজতেসি সেটা পাইলে আসব । তোমার জন্যেই খুজতেসি চাকরি । এত ব্যস্ত হইও না । ঢাকায় না থাকলে টাকা আসবে কই থেকে ? রাখ এখন , বিরক্ত কইর না এখন ।"
পরেরদিন সকালে তিনটা ফোন পেল শৌভিক । প্রথম ফোনটাতে জানানো হল তার চাকরিটা হয়ে গেছে ।
দ্বিতীয় ফোনটা আজিজ চাচার । গতকাল রাতে শৌভিকের মা স্ট্রোক করেছেন । বেচে নেই আর ।
তৃতীয় ফোনটা ওই নীল জামা পরা মেয়েটার,
"আই শৌভিক তোমার ইন্টারভিউ কেমন গেল ?"
শৌভিক উত্তর দিল," জানো আমার মাঝে মাঝে মনে অনেক খারাপ কিছু একটা হবে । তারপর ভাবি না এটা হবে না, হওয়াটা খুবি অযৌক্তিক হবে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই অযৌক্তিক ঘটনাটাই ঘটে । আমার মা সারাটা জীবন কষ্ট করল আমার জন্যে । আমার বাপটা আর কয়দিন বাচলে হত না বল ? আর আমি ভাবলাম ভাল চাকরিটা পেলে মাকে একটু শান্তি দেওয়া যাবে । মা গতকাল বলতেসিল আমাকে দেখতে চায় অনেকদিন দেখে না । আমি খুব বিরক্ত হলাম, সবসময়ই হই । বললাম চাকরি পেলে বাড়ি যাব । ফোনটা রেখেই মনে হল মা মনে হয় আমার দেওয়া সুখটা আর দেখতে পারবেন না । আমার চাকরিটা হয়ে গেছে জানো ? খালি মা দেখতে পারবেন না । যা হবার তা যেন হতেই হবে ।"
"শৌভিক ? কি বলছ তুমি ? তোমার মা ভাল আছেন তো ? হ্যালো শৌভিক.......হ্যালো ।" কোন উত্তর এল না ওপাশ থেকে ।
"Everybody knows the war is over
Everybody knows the good guys lost
Everybody knows the fight was fixed
The poor stay poor, the rich get rich
That's how it goes"
-------Leonard Cohen
©somewhere in net ltd.