![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শহরের ছিমছাম এলাকার একটা কফিশপ । ভেতরে ছোট ছোট কাঠের টেবিল , সাথে কালো স্টিলের চেয়ার। দেয়ালগুলো দেখে মনে হয় কাঠের আসলে তা নয় । গ্রাফিতির মত করে নানা বিখ্যাত ব্যক্তির উক্তি দিয়ে সাজানো দেয়ালটা । মৃদু শব্দে গান বেজে চলছে । রাস্তার দিকের দেয়ালটা সম্পূর্ণ কাচের । বাইরের ঝিরঝিরে বৃষ্টি কাচের দেয়ালের গা বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে । এমন এক বিকেলে কাচের দেয়ালের ধারে একটা টেবিলে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে মুখোমুখি বসে আছে । ছেলেটা ম্যারুন রঙের শার্ট আর খয়েরি রঙের প্যান্ট পড়েছে আর মেয়েটা হলুদ লেগিংস এর সাথে কালো টপস । দুজনের সামনে রাখা হ্যাজেলনাট ল্যাটের মগ থেকে কফির সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছে । প্রথমে ছেলেটি নীরবতা ভাঙল,
“বলুন কি প্রশ্ন আছে আপনার । কিছুই লুকোবো আপনার কাছ থেকে ।“
মেয়েটি মৃদু হাসল, “ লুকোনোর মত কোন প্রশ্ন আপনাকে আমি করবও না !”
“বাহ ব্যপারটা তাহলে আর সহজ হয়ে গেল । নাহ, মনে হচ্ছে আর কঠিন হয়ে গেল । বলুন কি জানতে চান ।“
“হুম।“ কিছুক্ষন ভাবল মেয়েটা , কফির কাপে একটা চুমুক দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল, “ এমন কিছু একটা বলুন যা আপনাকে একই সাথে সৌন্দর্য্য আর অবাক হবার অনুভূতি দেয় ।“
ছেলেটা একটু অবাক হল, “ আপনি কি সিরিয়াস ? আপনি কি এই প্রশ্নের উত্তরের উপর ভিত্তি করে জীবনের এত গুরূত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে চান ?”
“আহহা বড্ড বেশি বকেন তো আপনি । উত্তর দিন ।“
একটু বিভ্রান্ত লাগল ছেলেটাকে । “ দাড়ান একটু ভেবে বলি । ” কফির কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক না দিয়েই রেখে দিল আবার। “কখনও ফার্মগেট পার্কের পাশের রাস্তায় রাত ৮টার দিকে গিয়েছেন ? “
“ নাহ রাত্রে যাওয়া হয়নি কখনও।“
“ যাবেন এক সময় । গেলে দেখবেন প্রচন্ড জ্যামে সব গাড়ি স্তুব্ধ হয়ে আছে । এক চুলও নড়তে পারছে না । কিন্তু অদ্ভুত বিষয় কি জানেন ? শ’খানেক গাড়ি দাড়িয়ে আছে যার ভেতর হাজারখানেক মানুষ । কিন্তু কোন শব্দ নেই । গাড়ির ইঞ্জিনগুলো বন্ধ । বেশিরভাগ মানুষ দীর্ঘ জ্যামের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ছে । হঠাত হঠাত ফেরিওয়ালার ডাক ছাড়া বাকি সব স্তব্ধ । আমি মাঝে মাঝে ওখান দিয়ে রাস্তা পার হবার সময় অবাক হয়ে যাই । আমি দাড়িয়ে থাকি একটা কোলাহল শোনার জন্যে । আপনি বিশ্বাস করবেন না কি অদ্ভুত সেই নীরবতা । কত .........জানিনা কি বলে এই অনুভূতিটাকে ।“
মেয়েটা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল কথা । ছেলেটা থামতেই বলে উঠল, গলায় অবাক হবার অভিব্যক্তি, “ দারুন তো এতগুলো যন্ত্র এতগুলো মানুষ তাও এই নীরবতা । সহ্য হয় আপনার ?”
“ জানিনা কেমন জানি নেশার মত লাগে । আপনার ভাল লাগল উত্তরটা ।“
“সেটা পরে বলি ।“ রহস্যময় হাসি ছড়িয়ে দিল মেয়েটা ।
“আচ্ছা তাহলে বলুন পরের প্রশ্ন।“
“ পরেরটা ঠিক প্রশ্ন না । আপনি আমাকে একটা প্রশ্ন করুন তো ।“
“বাহ , এটা আশা করিনি । তাহলে সুযোগ যখন পেলাম করেই ফেলি একটা প্রশ্ন, কঠিন হবে কিন্তু ।“
মেয়েটা মজা পেল মনে হয়, “ দেখি আপনার কঠিন প্রশ্ন ।“
“হু বলুন আপনার প্রিয় একটা লাইন বলুন যেকোনো বই থেকে এবং কেনো প্রিয় সেটাও বলবেন।“
এবার হাসিতে ভেঙ্গে পড়ল মেয়েটা ,” এই আপনার কঠিন প্রশ্ন ? এ তো বড্ড সোজা । “
“ তো দিন না উত্তরটা ।“
“ হুমায়ুন আহমেদের কোন একটা বই এ পড়েছিলাম । ‘ অপমান আগুনের মত, মানুষকে শুদ্ধ করে, পবিত্র করে ।‘ জানেন কেন ভাললাগে এটা এত ? কারণ এটা মনে করে যে কোন সময় কেউ অপমান করতে চাইল হাসিমুখে মেনে নিতে পারি । তখন সেই মানুষটার মুখে ব্যর্থ প্রচেষ্টা ভাব দারুন লাগে । “
“ বাহ , ভাল বলেছেন তো । ভেবে দেখেনি ব্যাপারটা আগে ।“
হঠাত আবার একটা নীরবতা । কফিশপের গান বেজেই চলছে , অঞ্জন দত্তের ‘সবাই’ ।
কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে ছেলেটা বলল ,” প্রশ্ন শেষ নাকি ?”
“ হুম শেষ । “ হঠাতই অন্যমনষ্ক লাগে মেয়েটাকে । কাচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে সে । বৃষ্টিস্নাত ঢাকার রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তার চোখ ।
“ বললেন না পাশ করলাম নাকি আপনার পরীক্ষায় ?”
“ কি পরব বলুন তো এপ্রিলের ৮ তারিখ । “
ছেলেটার মুখে এক ঝাক হাসি ছড়িয়ে গেল, কিছুক্ষন মুখে কথা যেনো আটকে গেল । ওর অবস্থা দেখে মেয়েটা মনে হল বেশ মজা পেল । “ কি বলবেন না নাকি ?”
“হুম । নীল কিছু পরতে পারেন । আকাশের রঙের । সাথে একটা ছোট টিপ পরলে মন্দ লাগবে না। “
মেয়েটা বলল, “ আচ্ছা ঠিকাছে । আর শোন তুমি পাঞ্জাবি পরে এস ভাললাগে তোমাকে দেখতে ।“
“ আর তুমি চশমাটা পরে এসো । তুমি দেখি সাজুগুজু করলে চশমা পরো না । তোমাকে অন্যরকম সুন্দর লাগে চশমা পরলে ।“
মেয়েটা অবাক হবার ভান করে বলল ,” কিইই , ভালই তো স্টক করতে পারও ফেইসবুকে । তোমার মা জানেন তুমি ফেইসবুকে মেয়েদের দেখে বেড়াও? হুম আর কি জানলে ফেইসবুক থেকে , চশমা না পরা ছাড়া ?”
দুজনে হাসিতে ভেঙ্গে পড়ল , আর আকাশ ভেঙ্গে পড়ল বৃষ্টিতে ।
“সবাই আগলে রাখে তাদের শরীরের ভেতরে
ভালোবাসার সত্যি কথাটাই
আমি অন্য কিছু করবো বলে তোমার কাছে এসে
আমি সবাই কেবল সবাই হয়ে যাই......।।“
----- “সবাই” অঞ্জন দত্ত
©somewhere in net ltd.