নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিভার্ড_পেরেরা

নিভার্ড_পেরেরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতীতি

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২১

প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে । বৃষ্টিতে কাচের জানালাটা ঝাপসা হয়ে গেছে । বাইরের শহরটা তাই কেমন যেন আধো ঘুমের স্বপ্নের মত দেখাচ্ছে । এমনিতে জানালা দিয়ে অনেকদূর পর্যন্ত শহরটা দেখা যায় । গত ছয়দিনে শৌভিকের প্রিয় কাজ হয়ে দাড়িয়েছে জানালা দিয়ে শহর দেখা । হাসপাতালের বেডে বসে এর চাইতে ভাল কিছু করার পাওয়া যায়নি । নীলা অবশ্য বলে , “সারাদিন কিভাবে একটা মানুষ একই দৃশ্য দেখে, হুম ? গল্প বই এনে দিয়েছি পড়তে পারো না !! “

কিন্তু সারাদিন কি গল্প বই পড়া যায় নাকি । আর নীলাকে এটাও বোঝানো সম্ভব নয় যে বাইরে সারাদিন একই দৃশ্য থাকে না । শহরটা পাল্টায়, তার বাতাস, তার শব্দ তার বিল্ডিংগুলো সেই বিল্ডিঙের মানুষগুলো পাল্টায়। প্রতিদিন একই মেঘ শহরের আকাশে উড়ে যায় না । কাকগুলো একই জানালায় বসে না । অনেক গভীর গভীর কথা । নীলা বুঝবে না বললে, বলবে ,” কি হল পাগল হয়ে গেলে নাকি ?” অ্যাকসিডেন্টের আগে হয়ত শৌভিকও নিজেকে পাগলই মনে করত এসব ভাবার জন্যে। কিন্তু সাদা শুভ্র মেঝের হাসপাতালের কেবিনে বসে শৌভিকের অদ্ভুত সব ভাবনা আসতে থাকে মাথায় ।

গত বুধবার মিরপুর ২ নাম্বারে যখন পাশের বাসটা আচমকা শৌভিকদের বাসটাকে ধাক্কা দিয়ে উলটে দেয় তখন শৌভিকের মনে হয়েছিল যেভাবে সে জীবন কাটাতে চেয়েছিল, ওই পথটা থেকে সে সরে গেছে । এবার বেচে গেলে হয়ত সে বদলে যাবে । স্থানীয় হাসপাতাল থেকে ওর বাবা-মা ওকে অভিজাত ধরণের দামি এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। তখন নতুন ভাবে ওর মনে হয় আর বদলে যাওয়া সম্ভব নয়, কারণ সে এর আগেও অনেকবার বদলেছে নিজেকে, অনেকবার, গিরগিটির মত । মানুষ তো আর গিরগিটি না, তার বদলানোর একটা সীমা আছে ।

হাসপাতালের বেডের পায়ের কাছে টেবিলটাতে একটা ফুলদানি আছে । নীলা গভীর মনোযোগে সেখানে নানা রঙের কিছু ফুল সাজিয়ে রাখছে । শৌভিক নাম জানে না ফুলগুলোর । সে দেখছে নীলাকে। সাদা রঙের একটা জামা পরেছে আজ। সামনে অবাধ্য চুলগুলো বাম চোখের উপর এসে পড়েছে । “কি ? তাকায় আছো ক্যান ? “ চুলগুলো সরাতে সরাতে জিজ্ঞেস করল নীলা ।

“ কিছু না । বাবা মা কই ? বাইরে ?”

“হু আমি আসছি পরে লবিতে যেয়ে বসছেন ।“

“বাবা মা তাহলে আমাদের ব্যপারটা ভালো ভাবে নিসে তাই না ?”

নীলা একটু হাসি দিয়ে বলল, “ তাই তো মনে হয় । আর হাত পা ভাঙ্গা ছেলেকে এখন কিছু বলবে নাকি । পরে জানতে পারবা কি মনে করসে উনারা ।“

ছোটোখাটো একটা হাসি বিনিময় হল দুজনের মাঝে । “কি ভাব আজকাল এত তুমি, হুম ? “ প্রসঙ্গ বদলে জিজ্ঞেস করল নীলা ।
“অনেক কিছু । কত কিছু ভাবি ।“

“ কি ভাব বল আমাকে ।“

“ভাবি যে আমি এখন যেমন সেরকম ছিলাম না । আমি নিজেকে অনেক ভাল একজন মানুষ ভাবতাম। আমি আসলে তেমন না । “
“কি সব বলতেস এগুলা, আজব !!!”

“ আরেহ শোন বলি । সুখি হওয়া অনেক সহজ বুঝসো । শুধু নিজেকে বুঝাতে হবে আমি সুখি । তখন দেখবা একটা না একটা খুশি হওয়ার উপায় খুজে পাবা । কিন্তু সমস্যাটা হয় কোথায় জানো ? যখন তুমি বুঝতে পারবা যে তুমি নিজেকে যেমন মনে করতা তুমি তেমন না । এর চে’ নিকৃষ্ট একটা মানুষ তুমি । তোমার মাঝে অনেক অন্ধকার আছে । তুমি মানুষকে কষ্ট দাও, স্বার্থপর হও তখন আর সুখি হতে পারবা না । নিজেকে নিয়ে একটা তেতো ভাব থেকে যাবে নিজের মাঝে । খারাপ মানুষ মনে হবে নিজেকে । “

“ আজগুবি কথাবার্তা সব । কেউ খারাপ না জগতে বুঝসো । সবাই শুধু নিজেরটা বুঝে নিজের ভাল করতে চায় । তখনই অন্যেরা মনে করে আরে কি খারাপ । নিজের ভাল বোঝটা খারাপ নাকি বল ? “

“নিজের ভাল করতে যেয়ে অন্যের ক্ষতি করাটা খারাপ।"
“শৌভিক দেখ তুমি অ্যাকসিডেন্টের পরে একটু ভয় পাইস তাই এগুলা বলতেস । থামাও এগুলা, তোমার এখন এসব ফালতু টেনশন করার কোন মানে হয় না।"

“আচ্ছা করব না । কিন্তু একটা বন্ধুর কথা বলি তোমাকে শুনবে ?”
নীলা হালকা বিরক্ত হওয়া সত্ত্বেও বলল, “হু বল।”

“ও অনেক সুন্দর গান গাইত। ওর সাথে আমার পরিচয় ক্লাস এইটে। ইন্ট্রোভার্ট টাইপের ছিল। কথা বলত না বেশি মানুষের সাথে। অনেক সময় ওকে মানুষ জন অহংকারী মনে করত। কিন্তু আমরা জানতাম আসল ব্যাপারটা। যাই হোক কলেজে উঠতে উঠতে ওর মাঝে আমূল পরিবর্তন আসল। সে এখন সবার সাথে কথা বলে, স্টেজে গান গায়। কিন্তু সমস্যা হল ওই যে মানুষগুলা যারা ওকে অহংকারী মনে করত তারা বলা শুরু করল, কি রে ভাই আগে না কথাই বলত না এখন তো দেখি থামে না। আসলেও ছেলে অহংকারী।“

“হু শৌভিক বুঝলাম এখন বল মোরাল অফ দা স্টোরি কি ?”

“সেটা হল, আমরা সবাই একটা মানুষ থেকে যা যা আশা করি তা এক্সাটলি না পেলে তাকে খারাপ ভাবি। খুব কমই বোঝার চেষ্টা করি আসল ঘটনা কি। ভিতরে কি হল, মানুষটা কেন বদলে গেল। আমি ওই বন্ধুটার কাছে খুবি কৃতজ্ঞ, ও আমাকে দারুন কিছু গানের খোজ দিয়েছিল,ওর কারণে গান সম্পর্কে ধারণাই পালটে গেছে।“

নীলা শৌভিকের পাশে এসে বসল,” শৌভিক বল তো তুমি কাকে বুঝতে পারনি, কার জন্যে আসলে তোমার এতটা অপরাধবোধ জন্ম নিচ্ছে।“

“অনেক মানুষ নীলা, অনেক। ওদের সবার কাছে আমার ক্ষমা চাইতে হবে ওদের ভুল বোঝার জন্যে। হয়তো পরেরবার বাসের ধাক্কায় আমি নাও বাচতে পারি। এতগুল মানুষের বিতৃষ্ণা নিয়ে মরে যাওয়টা আত্মায় সইবে না।“

“You have forsaken all the love you've taken
Sleepin' on a razor there's nowhere left to fall
You have admired, what every man desires
Everyone is king when there's no one left to pawn”
“Beat the Devil’s Tattoo” by Black Rebel Motorcycle Club

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.