নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিভার্ড_পেরেরা

নিভার্ড_পেরেরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অক্রম

২১ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:০৮

“আমি সেই সময়গুলোর কথা ভাবি, যখন ভালো না লাগার অনুভূতি হতো না। যখন অস্বস্তির কথা ভাবতে হতো না। সবই ভাল লাগত। বছরের ছয়টা ঋতুকে আপন মনে হতো, বন্ধু মনে হত। পৃথিবীর কথা ভাবলে মাথাটা ধরে যেত না একটা সময়। আমি ভাবি কবে শুরু হল এই ভাল না লাগার ব্যাপারটা।
সেই ছোটবেলায় যখন মায়ের হাত ধরে কিন্ডারগার্টেনে যেতাম তখনও সব ভাল ছিল। প্রথম দশ বছর বয়েসে মনে হল গ্রীষ্মকালটা বড্ড বাজে। গরমে ঘেমে গা চিটচিটে হয়ে যায়, খুবি অস্বস্তিকর ব্যাপার। ধীরে ধীরে দিন গেল। তখনও বর্ষা ভাল লাগত। বর্ষার বর্ষণ দেখতাম আমি জানালায় মুখ রেখে, ঝড় দেখতাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে। রাস্তায় বৃষ্টির মাঝে হঠাত ছাতাটা বন্ধ করে দিতাম। কি জানি কেন ভাল লাগত। কিন্তু ষোল বছর বয়েসে মনে হল বর্ষায় রাস্তার কাদা দারুণ বিরক্তিকর। পায়ে লাগলেই গা গুলিয়ে আসে। ভেজা রাস্তায় হেটে এসে পা ব্যাথা করতে থাকতো। বৃষ্টিতে ভিজে জামা গায়ের সাথে লেগে গেলে আরেক অস্বস্তিকর ব্যাপার।
তবুও শীতকাল ভাল লাগত। গায়ে ঘাম নেই, রাস্তায় কাদা নেই আর গরম জামা পরে থাকলে শীতও নেই। সকাল বেলা কুয়াশার মাঝে গায়ে একটা হুডি জড়িয়ে কলেজের জন্যে বেরিয়ে পরতাম। হুডির টুপিটা উঠিয়ে দিয়ে কানে হেডফোন গুজে দিতাম। ব্ল্যাকের “আজো”,”প্রার্থনাদ”বাজতে থাকত কানে। বছর শেষে শীতের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যেতাম। শীতের হালকা রোদে বসে চিতই পিঠা দিয়ে চা খেতাম।সেটা ছিল জীবন। একুশ বছর বয়স হল। একদিন মনে হল, শীতে হাত পা বড্ড ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ঢেকে রাখলে গরম লাগছে। আবার ফ্যান ছেড়ে দিলে ঠান্ডা লাগছে। শীতে ধূলা বড্ড বেড়ে গেছে। এই ঠান্ডায় স্নান করাও একটা ঝক্কি। লক্ষ্য করলাম শীতকালটাও আর ভাল লাগছে না।
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত কোনোটাই আর ভাল লাগে না। শরত, হেমন্ত আর বসন্তও আজ বাদ নেই। আমার মনে হল আমার কি ভাল লাগে কিছু ? একটা সময় এসেছে যখন চ্যাটে কেউ নক দিলে ভয় লাগে কি যেন খারাপ খবর আসবে, কি একটা যেন ভাবতে হবে। ফেসবুকে নোটিফিকেশন আসলে মনে হতো হয়ত ক্লাস গ্রুপে একটা পরীক্ষা না হয় এসাইন্মেন্টের নোটিশ এসেছে। সবই বিরক্ত লাগতে থাকল। ইমেইলটাও বাদ গেল না। সেখানেও খবর আসা শুরু করল। কেউ কি আমাকে একটা দিন শুধু নিজের মাঝে থাকতে দিবে না? প্রতিদিন কিছু ভাবতে হবে, চিন্তা করতে হবে?
একদিন বাসে বসে মনে হল এসব। ভাবতে লাগলাম। আমার একটা ঋতুও ভাল লাগে না। তাহলে আমি সারা বছর কোন ঋতুর অপেক্ষায় থাকব ? কোন সময়টাতে আমি বাচব, আমার কুঁচকানো কপালটা কোন ঋতুতে হাসিমুখে পরিণত হবে? আমার জন্যে কি আছে কোন একটা সময়?ভাবতে ভাবতে হঠাত মাথাটা কেমন অবশ হয়ে গেল। আর কিছু যেন ভাবতে পারছি না। ঐ যে মাঝে মাঝে এক পায়ের উপর বসে থাকলে পা টা কেমন অবশ হয়ে যায় না, মাথাটা তেমন এক জায়গায় থেমে গেল। ছুটে চলন্ত বাসটা থেকে নেমে যাবার দুরন্ত ইচ্ছাটা চাপা দিলাম অনেক কষ্টে। আশেপাশের সব চলছে আর আমার মাথাটা যেন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছে। সে এক দারুন অদ্ভুত অস্বস্তিকর অনুভূতি।
পরের স্টপে বাস থেকে নেমে গেলাম। আমার কি আর কিছুই ভাল লাগে না? আমার কি নিজেকে ভাল লাগে না? কি ভাল লাগতে পারে? আকাশ? সেখানে তো কিছু নেই সেটা নিশ্চয় ভাল লাগবে? হুম লাগবে ভাল, আকাশের রংগুলো ভাল লাগে। আগারগাও-এর সিগনালে দাঁড়িয়ে আমি আকাশ দেখতে লাগলাম।“

“কেমন হয়েছে?”, জিজ্ঞেস করল শৌভিক।
নীলা কপাল কুচকে উত্তর দিল,”কি লেখ এগুলা? এসব উলটাপালটা জিনিস আমাকে আর পড়তে দিবানা। তোমার কি ভাল্লাগে আমার জানা আছে।“

“খোদা যেন দেখে তোমায়, রাখে তোমারে
হয় যেন সব ইচ্ছে পূরণ তোমার অন্তরের
সবার জন্য থাকো তুমি, তোমার জন্য সব
আকাশে কান পেতে শুনো তুমি তারার কলরব,

আশা না হারাইয়ো বন্ধু,সামনে তোমার দিন
তুমি যেন থাকো বন্ধু চিরকাল নবীন।।।“
—আহমেদ হাসান সানি

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.