![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পর্ব ২
গন্তব্য
আমি সেইন্ট যোসেফ এ পড়তাম। বাসে যেতাম আসাদগেট। সকালবেলা ৮ নাম্বার বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতাম তেজগাও কলেজের সামনের রাস্তায়। একটু অধির হয়েই অপেক্ষা করতাম। স্কুলে তাড়াতাড়ি পৌছাতে পারলে ক্লাস শুরুর আগে খেলার সময় পাওয়া যাবে একটু। একটা করে বাস যেত আর আমি দেখতাম সেটা আট নাম্বার বাস কিনা। তখন আরেকটা বাস চোখে পড়ত মাঝে মাঝে। একটু সকাল সকাল বের হলে দেখা যেত বাসটাকে। লাল রঙের বি আর টি সি বাস। ভেতরে হালকা নীল জামা পরা কিছু মেয়ে আর নীল শার্ট পরা কিছু ছেলেকে দেখতাম। তখন মনে হতো ইশ আমার স্কুলে তো এমন বাস দেয় না। নিশ্চয় অনেক দামি ‘স্কুল’ ওদের। আমার স্কুল থেকে যদি এমন একটা বাস দিত ! বাসটার গায়ে বড় করে ইংরেজি হরফে লেখা ছিল ‘এম আই এস টি’।
২০১৫ তে এম আই এস টি এর ভর্তি পরীক্ষা দেই। এক্সাম হলে ইনভজিলেটর আমার অদ্ভুত নাম দেখে জিজ্ঞেস করেছিল এটা কি শখের নাম নাকি। বলেছিলাম না স্যার ফ্যামিলি টাইটেল আর মাঝের নাম টা আমার ফুপু দিয়েছে। স্যার এগুলো কোন দেশের নাম জিজ্ঞেস করল। বললাম স্যার পর্তুগিজ নাম এটা।
“তুমি তো বাংলাদেশি তোমার নাম এমন কেন হল?’
“স্যার সেটা অনেক লম্বা ইতিহাস”
“আচ্ছা এখন এক্সাম দাও । চান্স পেলে পরে তোমার ইতিহাস শুনব।“
মনে মনে বললাম স্যার আমি যাচ্ছি খুলনা আর আসব না ইতিহাস শোনাতে! কিন্তু সৃষ্টিকর্তা অনেক রসিক ব্যাক্তি তা আমি জানতাম না।.
২০১৬ একদিন সকালে আমি গাঢ় নীল রঙের একটা শার্ট পরে সেই যে লাল বাসটা, সেটাতে উঠলাম। বাসটা যখন তেজগাও কলেজের সামনে দিয়ে যাচ্ছে দেখলাম সাদা জামা পড়া সেন্ট যোসেফের একটা ছেলে বাবার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বাসের হলুদ হ্যান্ডেল ধরে ঝুলতে ঝুলতে দেখলাম ছেলেটা তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমি আমাকেই যেন অপর পাশ থেকে দেখলাম। ছেলেটা কি ভাবছে তার স্কুলের এমন একটা বাস নেই কেন ?আমার ভর্তি পররীক্ষার সেই ইনভিজিলেটরের কথা মনে করলাম। একদিন খুজে পেয়ে উনাকে আমার ইতিহাস শোনাতে হবে।
আমি এখন আর অধির হয়ে বাসের জন্যে অপেক্ষা করি না। ঘুম ঘুম চোখে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে থাকি বাসস্ট্যান্ডে। বাসে উঠে জানালায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি, ঘুম ভাঙ্গে এম আই এস টি র প্লাজায় এসে। স্কুল আর কলেজ জীবন একরঙা । একটা রঙের নানা রকম মাত্রা, হালকা কিংবা গাঢ়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক রং। তার রং পাল্টায়। একটা রং বুঝে উঠার আগে সেটা পালটে যায়। আজ তুমি যাকে চিনতে কাল মনে হবে অনেক অচেনা অনেক দূরে। গিরগিটির মত রং পাল্টায় বিশ্ববিদ্যালয়। আমি সেই ইনভিজিলেটরকে আর কখন আমার ইতিহাস শোনাতে পারি নাই। কিন্তু মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে আমার নিজের ইতিহাস পালটে গেছে। নিজেকে আমি নতুন করে আবিস্কার করেছি। মাঝে মাঝে বোধ হয় এম আই এস টি আমার কপালে লেখা ছিল !
“তবুও কিছুই যেনো ভালো যে লাগে না কেন,
উদাসী পথের মাঝে মন পড়ে থাকে যেন,
কোথায় রয়েছে ভাবি লুকিয়ে বিষাদ তবুও?”
----- ভালো লাগে , “মহিনের ঘোড়াগুলি”
চলবে.....
©somewhere in net ltd.