![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পর্ব ৩
প্রান্তিক
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষবর্ষের ছেলে মেয়েগুলোর মাঝে একটা অনুভূতি কাজ করে। শেষ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি। এটা একদম শেষ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি নয়, অনেক পরিচিত মানুষের সাথে একটা কিছু শেষবার করার অনুভূতি। আমি এই অদ্ভুত ব্যাপারটা ঠিক বুঝাতে পারছি না। একটা উদাহরন দেই ।
আজ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ পিকনিক হয়ে গেল। সিনিয়র ব্যাচ হিসেবে সব কিছু আয়োজনের দায়িত্ব আমাদের উপরেই ছিল। সারাদিন অনেক ব্যস্ততা আর আনন্দের মাঝে কেটে গেলে। কিন্তু শেষ মূহুর্তগুলোতে মনে হতে থাকে, এটাই তো শেষ। আর তো এই ক্লাসমেটগুলো কে নিয়ে বাসে করে অর্থহীন চিৎকার করতে করতে পিকনিকে যাব না। র্যাফেল ড্র এর ইভেন্ট কত আসবে জীবনে। কিন্তু এই বন্ধুগুলো কে নিয়ে উত্তেজনায় অপেক্ষা করা হবে না কে গিফট পেয়ে গেল দেখে। গম্ভীর ফ্যাকাল্টিদের হঠাত করে বাচ্চাদের মত হাসাহাসি করে মিনি গেম এ প্রাইজ পাওয়ার চেষ্টাটাও মনে হয় শেষবার দেখলাম। বিকেল বেলা ফিরে যাবার সময় যেই মনে করতে গেলাম, নাহ পরের পিকনিকে কালচারালে আরেকটা কিছু যোগ করব, খেয়াল হল পরের পিকনিকে তো আর আসব না, এটাই তো শেষ, আর ভাবতে হবে না।
এভাবে একটা করে ইভেন্ট আসে। ইভেন্ট শেষে সব গুছিয়ে যখন ফেরত যাই মনে হয়, আর একটা জিনিস ফেলে গেলাম। এটা নিয়ে আর ভাবতে হবে না। ইভেন্টের শুরুতে মনে, ইশ অনেক ঝামেলা, করতে পারব না মনে হয়। কিন্তু সফল ইভেন্টের শেষে একটা তৃপ্তির সাথে ভেসে আসে সেই প্রান্তিকতার অনুভূতি।
এম আই এস টির অনেক শিক্ষার্থীই বলে, “আরে ধুর এই জায়গা ছেড়ে যেতে পারলে আমি বাচি। অমুকের মত ফেসবুকে আবেগি “শেষের শুরু” এ্যালবাম আমি খুলতে পারব না। কোথা থেকে আসে এম আই এস টির জন্যে এত ভালোবাসা।“ আসলে ব্যাপার অন্যরকম। ভালোবাসা আসে আশেপাশের মানুষগুলির জন্যে। সাড়ে তিন বছর যাদের সাথে সপ্তাহে ৫ দিন কাটাতাম হঠাত করেই তাদের সাথে মাসে একবার দেখা হওয়াটাও অনিশ্চিত হয়ে যাওয়াটা যেন কেমন অদ্ভুত। এদের মাঝে অনেকের সাথে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয়, অনেকটুকু গভীর সেই সম্পর্ক। তাদের সাথে আর আগের মত দেখা হবে না ভাবলে একটা অদ্ভুত ছায়া পরে মনে। এম আই এস টি র এত বেড়াজালের মাঝে এরাই তো আমাদের সমর্থন ছিল। এদের কারণেই তো জীবন সহজ হতো। তাই এই শেষের শুরুটা অনেক বাস্তব আর অনেক কস্টের। বাস্তবতা বেশিরভাগ সময় কস্টের।
আজ পিকনিকে শেষের দিকে ২য় বর্ষের একজন ছাত্র জিজ্ঞেস করল,” ভাইয়া আগামি বছর পিকনিক হবে ?” উত্তর দিতে গিয়ে বুঝতে পারলাম এই উত্তরের অধিকার আর আমাদের না। এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আর সি এস ই – ১৬ এর না।
“যুগে যুগে জড় জীব সবে
পড়ে রবে নিবিড় অবেলায়,
ধুলি ধূসর পদচিহ্ন আঁকা মরুর বালুকায়।“
-------“আভাস” আভাস(তুহিন)
চলবে.।।।
©somewhere in net ltd.