![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও বাংলাদেশ এবং কাতার একই বছর ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে । বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে এক সাগর রক্তস্রোত আর লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে; অন্যদিকে কাতারে অটোমান শাসনের পর বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থকে মূলত এটি ব্রিটিশ আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল এবং ১৯৭১ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান পেয়ে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা লাভ করে। কাতার উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে আল-থানি গোষ্ঠীর দ্বারা রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালিত হয়ে এসেছিল। কাতার একটি বংশগত রাজতন্ত্র আর এই দেশের রাষ্ট্র প্রধানের নাম আমীর।
মূলত কাতারের প্রাকৃতিক সম্পদের আশীর্বাদে, একসাথে স্বাধীন হলেও বর্তমানে কাতার একটি উন্নত দেশ। ২০১২ সালে সর্বপ্রথম কাতার (মাথাপিছু আয় অনুযায়ী) বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশের খেতাব পায়। বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী কাতারের মাথাপিছু আয় ১৩২,৯৩৭ মার্কিন ডলার। পেট্রোলিয়াম ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস কাতারের অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত্তিস্বরূপ। মোট সরকারি রাজস্বের ৭০ শতাংশ, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬০%, এবং রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫% আসে এই খাত থেকে। ধারণা করা হয় কাতারে এখনো ১৫ বিলিয়ন ব্যারেলেরও বেশি পরীক্ষিত তেল মজুদ আছে যদিয়ে ক্রমাগত বর্তমান উৎপাদন হারে আগামী ২৩ বছরের চলবে। কাতারের প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রমাণিত মজুদ ৭০০০ km3 (1 km3 = ১০০০০০০০০০ m3; 1 TL=৩,০৬৮.৮৬৪ একর-ফুট), যা বিশ্বের মোট ৫ শতাংশ এবং তৃতীয় বৃহত্তম মজুদকারী একটি দেশ।
কাতার বাংলাদেশ থেকে ৩৯৬০ কিলোমিটার দূরত্বের দেশ হলেও ধর্মীয় ও জাতিগত বন্ধনে দুই দেশ ও জনগণের মধ্যে ভ্রাতৃপ্রতিম অটুট সম্পর্ক বিদ্যমান আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্বকাল থেকে এদেশে ডিঙ্গি নৌকা চড়ে বাংলাদেশীদের পদচারণ থাকলেও সরকারী ভাবে ১৯৭৬ সালে ১২২১ জন বাংলাদেশী কাতারে আসার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া পদচারণ ২০১৬ সালে প্রায় সহস্রগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০,৩৮২ জনে। ১৯৭৬ থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কাতারে সর্বমোট বৈধ পথে বাংলাদেশী এসেছে ৫৯৯,২২৬ জন (সুত্রঃ বিএমইটি)। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত ও বিস্তৃত হওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে; বিশেষ করে কাতারে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফিফা বিশ্ব কাপের ভেনু সহ সামগ্রিক প্রস্তুতির কর্মযজ্ঞকে মাথায় রেখে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহাপরিচালক পদে কাতারের প্রার্থী ডঃ হামাদ বিন আব্দুল আজিজ আল-কোয়ারিকে সমর্থন কারাতে সেই সম্ভাবনা দ্বার অনেকটা উন্মোচন হয়েছে। আগামী দিনগুলিতে আমাদের কূটনৈতিকদের পারদর্শিতাই তার প্রমাণ দিবে।
কাতারে বর্তমানে প্রায় তিন লক্ষাধিক বাংলাদেশী কর্মরত আছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সফল কূটনৈতিক তৎপরতা ও সম্পর্কের কারণে সেটি সম্ভব হয়েছে। আমাদের ঝানু কূটনীতিকদের ক্রমাগত সেসব প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে এই সংখ্যা দিগুণ হয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। মোটের উপর সংখ্যাগত দিক দিয়ে বাংলাদেশীদের মধ্যে অপরাধের প্রবণতা খুবই কম কিন্তু অন্যান্য দেশের নাগরিকদের আনুপাতিক তুলনায় বেশি। সম্প্রতি নেশা-ভেষজ সম্পর্কিত বিষয়গুলি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশেষ করে ইয়াবা আনা, বিক্রি এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে। সব মহলকে সর্বাত্মক সতর্ক নিতে হবে যেন আমাদের জাতিগত বদনাম না হয়।
কাতারে রেমিট্যান্স শ্রমিক রপ্তানির পাশাপাশি বাংলাদেশ রপ্তানি করছে বিভিন্ন গৃহজাত পণ্যও। কাতারে মুদি দোকান ও শপিং মলের তাকগুলি বাংলাদেশী পণ্যতে পরিপূর্ণ হয়েছে সে অনেক আগে। কায়িক শ্রমিকের ভিসায় আসা মানুষগুলো নিজের সততা, মেধা ও পরিশ্রমের বদৌলতে আস্তে আস্তে জায়গা করে নিচ্ছে মূলধারার ব্যবসাগুলি। মেধাবিত্তিক পেশাদারী কাজেও বাংলাদেশীরা এগিয়ে চলছে আগ বাড়িয়ে, যথাযথ প্রক্রিয়ার রণধ্বনিতে। শুরুর জায়গাগুলি এখন প্রতিযোগিতায় রূপান্তরিত হয়েছে। সেই দিন দূরে নয় যেদিন আমরা এই সবের সিংহভাগ নিয়ে পর্যালোচনা করবো, আপাতত সেইদিনের অপেক্ষায় থাকলাম।
©somewhere in net ltd.