নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। স্বপ্নের ঘোরেও আমি স্বপ্ন দেখি একটি বকশিত অসাম্প্রদায়িক মানব সভ্যতার।

প্রহর্তা অন্তর

প্রহর্তা অন্তর › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোল থেকে কবর পর্যন্ত ঘুষ

১৫ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:০৩

নুর মোহাম্মদ (নুর):- ২০১০ সালে সিঙ্গাপুর বেড়াতে গিয়েছিলাম। উন্নয়ন ও আধুনিকতার জাদুস্পর্শ একটি দেশ। এক সময়ের ১২০ টি পরিবার নিয়ে জেলে পাড়া খ্যাত ছিল আজকের সিঙ্গাপুর। বেশি দিন আগের কথা নয়, প্রতিবেশী মালেশিয়া থেকে স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ সৃষ্টির বছর পাঁচেক আগে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই দেশকে নিয়ে গেছে পৃথিবীর শীর্ষ দেশের কাতারে। এসবের পিছনের মানুষটির নাম সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা লি কুয়ান ইউ। টানা ৩২ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

স্বাধীনতার সময় মাথাপিছু আয় ছিল ৫১১ মার্কিন ডলার এখন ৮৫,০৫০ ডলার। সিঙ্গাপুরে কোথাও এক ছটাক ধান, গম, খাদ্য ফসল বা ফল উৎপাদন হয় না। প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। মাত্র ৭১৬ বর্গ কিলোমিটারের নগররাষ্ট্র। আমাদের সবচেয়ে ছোট জেলা মেহেরপুরের (৭১৬.০৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে) আয়তন সমান পর্যটক নির্ভর একটি দেশ তবে বেশিরভাগ মানুষের তৈরি পর্যটন স্পট অথচ আমাদের রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি মিলে আছে এই রকম ৪৩টি সিঙ্গাপুর (১৩২৯৫ বর্গ কিলোমিটার) (১৩২৯৫ বর্গ কিলোমিটার) যার সব কিছু প্রকৃতি প্রদত্ত। সিঙ্গাপুরে দুর্নীতি, অশিক্ষা আর ঘিঞ্জি ছিল চারপাশ। কিন্তু সেদিন পাল্টে গেছে। মাত্র ৫০ বছরের পথ পরিক্রমায় সিঙ্গাপুর এখন এশিয়ার সবচেয়ে বাসযোগ্য ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ। সরকারি সেবা-উপভোগ শিল্প অনেক উন্নত। নাগরিক সুবিধা শতভাগ অনলাইন ও ডিজিটাল। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি শূন্যের কোটায়।

উল্টো শুধু আমাদের দেশে – কোটায় কোটায় বিভক্ত দেশ। জেল এবং কবরস্থানেও কোটা আছে। যেমন মুক্তিযোদ্ধা বা বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, মৃত্যুর পরও কোটা। শিক্ষা কি কোন উপভোগ্য জিনিস যে কোটার আওতায় আসবে? শিক্ষা যদি অর্জনের বিষয় হয় তাহলে কোটা ভিত্তিক থাকে কেন? আর দুর্নীতি নেই কোথায়! কোল থেকে কবর পর্যন্ত ঘুষ আর বখশিশের ইন্দ্রজালে ঘেরা বাংলাদেশ। স্কুল-কলেজে ভর্তি ঘুষ লাগবে, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-স্থপতি হবেন বড় অংকের ঘুষ দিতে হবে, চাকরি করেন ঘুষ খেয়ে, নামাজ পরেন ঘুষের টাকা পকেটে রেখে। হজ্বে যান অবৈধ গুচ্ছ টাকা খরচ করে।

মায়ের পেটে থাকতে ডাক্তার বাচ্চা উল্টে আছে বলে সিজারিয়ান অপারেশন করার জন্য ডুকিয়ে দেয়া ভয়ের মধ্যে যে জীবনযাত্রা শুরু হয়েছে মৃত্যুর পর এক ধরনের ধর্মজীবী পরকালের প্রশান্তির নামে টাকার বিনিময়ে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সেই ভয়কে জিয়ে রাখে। পথিমধ্যে ভিন্ন জনের ভিন্ন আকীদার ধর্মমতে ভর্তি হলে প্রথম শ্রেণীর বেহেশত পাওয়ার গ্যারান্টি সহ লোভনীয় বিজ্ঞাপন ও বিপণন। দুধ থেকে মদ, কোন কিছু ভেজাল ছাড়া ব্যবসা নাই। জীবনদায়ী ঔষধ, সেখানে আরও বেশি ভেজাল। সৃষ্টিকর্তার পর ডাক্তার কে বিশ্বাস করেন তাহলে আপনার আর রেহাই নেই। আগে মাথা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল দিলে মাথা ব্যথা চলে যেত। এখন রোগীর বেশভূষা উপর নির্ভর করে আলট্রাসনোগ্রাফি, ইকোগ্রাফি, CT স্ক্যান অথবা MRI স্ক্যান, পোলিসমনোগ্রাম, ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাম (EEG) পরীক্ষা আগে। ৫ হাজার টাকায় পরীক্ষা করে হয়তো ৫০ টাকার ওষুধ দেবে। ব্যবসা ল্যাব টেস্টে, ঔষধে নয়। হাজার ডাক্তারের মধ্যে ১ জন ডাক্তার খুঁজে পাওয়া দুর্লভ হবে যে নিজের বুকে হাত দিয়ে শপথ করে বলেতে পারবে ডাক্তারির সব ধর্মনীতি মেনে সে চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্রত আছে। আর যদি কেউ একজন এমন পেয়ে থাকেন তাহলে হয়ত দেখবেন সে কোন অজপাড়া গায়ে লুকিয়ে নিভৃতে আছে। Homeopathy (হোমিওপ্যাথি) আগেকার বাম রাজনীতিকের মত নিঃস্ব ছিল কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তারা এখন বড় পুঁজিবাদী। তারাও এখন ল্যাব টেস্ট এর প্রেসক্রিপশন করেন।

যদি কোন কারণে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভর্তি হতে হয় তাহলে জন্মসূত্রে বা ক্রয়কৃত ভিটেমাটি বিক্রি ছাড়া উপায় নেই। রোগীর শ্রেণীবিন্যাস দেখে এসি, নন এসি, ভিআইপি, ভিভিআইপি, আইসিইউ, ventilator (বায়ুরন্ধ্র) সহ অন্যান্য ব্যবস্থা রাখা হয়। এখানেই শেষ নেই, ক্ষেত্র বিশেষে মৃত রোগীকে দিন কয়েক চিকিৎসা দেয়া হয় বাড়তি বিল বানানোর প্রলোভনে। ক্যান্সার বা এইডস রোগের (antidote ) প্রতিষেধক হয়তো একদিন তৈরি হবে কিন্তু যেই ক্যান্সার বা এইডস আমাদের সমাজকে প্রতিনিয়ত জোঁকের মত চোষে খাচ্ছে সেই রোগের প্রতিষেধক তৈরি করবে কে? রাষ্ট্রব্যবস্থা যতদিন মানব উন্নয়নমুখী না হয়ে নির্বাচনমুখি থাকবে ততদিন জোঁকের মুখে লবন দিতে কেউ এগিয়ে আসবে না।

একটি গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্রের উপমা দিয়ে শেষ করব। সিঙ্গাপুরে একটি পূর্ণ-যুবতী মেয়ে রাত ২টা, অর্চার্ড বা ক্লেমেন্টি পার্কের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে। পাশে বসে থাকা একজন বখাটে, দুর্বৃত্ত কিংবা স্মার্ট ছেলে কারো সেই সাহস নাই যে ইভ টিজিং বা ভালো মন্দ কমেন্ট পাস করবে। অন্যদিকে, কোলাহলপূর্ণ বাংলা মোটরে ইস্কুল পড়ুয়া একজন ছাত্রী ঘরে ফিরছে। পাশে জনসভার একটি মিছিল থেকে কিছু ডজন খানেক বিপ্লবীরা এসে মেয়েটিকে লাঞ্ছিত ও যৌন হয়রানি করল, মেয়েটির ওড়না ধরে টানাটানি করে। পাশের ডগা ডগা চোখগুলো নীরব দর্শকের ভূমিকায় চোখে ধর্ষণ করল। আমাদের কিছু রাজনৈতিক নেতা দায়িত্বজ্ঞান ছাড়া দায় এড়াতে শুরু করল।

স্যরি, আমরা গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক। রাস্তায় যে কাউকে ধরে ধর্ষণ করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আসলে ১৬ কোটি বাঙালীর এমন অস্বস্তিকর গণতন্ত্রের প্রয়োজন কি আছে? আগে অনেকে কবিতা লিখেছে “বাংলাদেশের পতাকা, আমার বোনের বুকের ওড়না”। ভাবছি এখন কিভাবে কবিতা লিখব......। গণতন্ত্র চাই না রে, আমার বোনের ওড়না ফিরিয়ে দেয়

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:১৯

খালেদা শাম্মী বলেছেন: আপনি অসাধারন লিখেছেন। আমাদের দেশের এত অরাজকতা মানতে কষ্ট হয়। যত দিন যাচ্ছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।

২| ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:২১

আবু আফিয়া বলেছেন: প্রথমে নিজেকে বদলাতে হবে, দেখবেন আশেপাশের অন্যরাও বদলে যাচ্ছে

১৫ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:৩৩

প্রহর্তা অন্তর বলেছেন: নিজেকে বদলিয়ে এতো বাবু হয়েছি যে, চারদিকের নিয়মবিরূদ্ধ এখন স্বাভাবিক লাগতে শুরু হয়েছে।

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:২৮

মোগল সম্রাট বলেছেন: উৎকৃষ্ট বাঞ্চোতেরা আজ ডাক্তার হওয়ায় তাদের কাছে আমরা খদ্দের হয়ে গেছি, গিনিপিগ হয়ে গেছি। ভ্রষ্ট আর কুৎসিত প্রানিতে ভরে গেছে এ দেশ আর তাদের মলের মধ্যে হাবুডাকু খাচ্ছে গোটা সাধারনেরা।

৪| ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:৫৪

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছি। দুর্নীতি হচ্ছে হোক! আমার কি?! ঘুষ নিচ্ছে নিক! আমার কি?! ধর্ষণ করছে করুক! আমার কি?! - আমাদের মানসিকতা এমনই হিয়ে গেছে।

৫| ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: আবু আফিয়া বলেছেন: প্রথমে নিজেকে বদলাতে হবে, দেখবেন আশেপাশের অন্যরাও বদলে যাচ্ছ
লেখক বলেছেন: নিজেকে বদলিয়ে এতো বাবু হয়েছি যে, চারদিকের নিয়মবিরূদ্ধ এখন স্বাভাবিক লাগতে শুরু হয়েছে।

- চাকুরী কালীন সময়ে পাবলিক লোকাল বাসে চড়তে হয়েছে যেখানে মোবাইল ফোনে উচ্চগ্রামে কথা সহ কলেজ বিশ্ববিদ্যারয় ও গার্মেন্টস কর্মী ছেলে মেয়েদের নোংড়া হাতা-হাতি ডলা-ডলি দেখে মনে মনে একটাই ইচ্ছা হতো নিজের যানবাহন থাকতে হবে নয়তো ভদ্দরনোক বাবু হয়ে বসে থাকতে হবে আর এইসব অসভ্য কার্যকলাপ দেখতে হবে, নিজে বদলালে আশে পাশের কেউ বদলায় এই পুরান পচা বাসি কথা আর শুনতে ইচ্ছা করে না । আমি পরিবর্তন হয়েছি কিন্তু্ - - - - - - -

৬| ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৪০

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন।যাদের হাতে দেশ পরিবর্তনের ক্ষমতা আছে তারা শুধু ক্ষমতার পেছনেই দৌড়ে জীবন পার করে দেয়।

৭| ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।
এই পোষ্ট টি স্টিকি করা যেতে পারে।

৮| ১৬ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৩৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। আজকের দিনের মনে হয় সবচেয়ে বড় আতংক, ঘরের কারো অসুখ হওয়া। রক্তচোষার খপ্পরে পড়ে সব কিছু শেষ হয়ে যায়, রোগী এবং তাদের অভিভাবকেরা নিঃস্ব হয়ে যায়!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.