নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। স্বপ্নের ঘোরেও আমি স্বপ্ন দেখি একটি বকশিত অসাম্প্রদায়িক মানব সভ্যতার।

প্রহর্তা অন্তর

প্রহর্তা অন্তর › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুলিশের ঔপনিবেশিক ধারণা পাল্টিয়ে “সেবামূলক” প্রবৃত্তি চাই

১৯ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৮

আমি সব সময় বিশ্বাস করি Between roles of State and rights of Civil Society, police are the beholders of both. একজন পুলিশের কি কি গুণাবলী থাকা উচিত সে সব গুণাবলি POLICE (Polite Obedient Loyal Intelligent Courageous Efficient) শব্দের আদ্যক্ষরের সংজ্ঞা থেকে বুঝা যায়। বর্তমানে ও নিকট অতীতে পুলিশের যে ছবিটি আমাদের সামনে আছে তা নিতান্ত সুখকর নয়। কেউ কেউ ঔপনিবেশিক ধ্যান ধারণার কথা বলে বিষয়টি বিমুখ করে দেয়। সেই ঔপনিবেশিক ধারাবাহিকতা থেকে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী বেরিয়ে এসে বিশ্বের বুকে আজ একটি আধুনিক ও সুশৃঙ্খল ফোর্স হিসেবে সুনামের সাথে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু সেই তালে অগ্রসর হয়নি পুলিশ বাহিনী বরং দিনের পর দিন ব্যর্থ হচ্ছে। ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তানি শাসন এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সামরিক শাসন সব মিলিয়ে মোটামুটি গত আড়াইশ বছর ধরে এই পুলিশ বাহিনী রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে সাধারণ মানুষকে দমিয়ে ও দাবিয়ে রাখতে। সেই প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি এখনও ক্রিয়াশীল বলেই দৃশ্যত কোন পরিবর্তন আসছে না।

যে সংক্রিয় আধুনিক অস্ত্রটি একজন পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে সেই অস্ত্র চালানোর জন্য যত প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার তার চেয়ে অস্ত্রটি প্রয়োগ না করার ক্ষেত্রে বেশি প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন। মানবাধিকার-শিষ্টাচারের মতো প্রশিক্ষণ অতীব জরুরী। পুলিশ জনগণের প্রভু নয়, সেবক। এই বিষয়টি তাদের মগজে ও মননে ঢুকিয়ে দিতে হবে। প্রতিনিয়ত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সেই অপরাধ আর্থিক লেনদেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই, হত্যা-খুন গুম, ধর্ষণের মত ক্যাপিটাল ক্রাইমেও সম্পৃক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তকমা পেয়েছে ২ দিন আগে। পুলিশ প্রশাসনও সেই উন্নয়নশীল দেশের সমীকরণে নিয়ে আসতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ পুলিশ। সাধারণ নাগরিকদের সহায়তা, আশ্রয়, বিশ্বাস ও প্রতিরক্ষার প্রথম লাইন হচ্ছে পুলিশ। সেই আস্থা স্থাপন করতে হবে পুলিশকে। নাগরিকেরা যেন আপদে বিপদে সহায়ক হিসেবে তাদের ভাবতে পারেন পুলিশকে সেই ছবির চিত্রাঙ্কন করতে হবে। মাঠপর্যায়ের কোনো পুলিশ সদস্য জনসাধারণের সাথে অসদাচরণ ও দুর্ব্যবহার যেন না করে প্রশিক্ষণে তাই শিষ্টাচার, মানবাধিকার ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ এসব বিষয়ে জোর দিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, পুলিশ সদস্যদের ক্ষমতার অপব্যবহার চরম একটি জগণ্যতম ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। ক্রমান্বয়ে পুলিশ প্রদত্ত সকল সেবাকে একে একে ডিজিটাল ও অনলাইনে নিয়ে আসতে হবে। জনবান্ধব পুলিশ বাহিনীর বিকল্প নেই। ক্ষমতা প্রয়োগের পাশাপাশি ও আইনগত সীমাবদ্ধতার বিষয়টি মাঠপর্যায়ের পুলিশ কে বোঝাতে হবে। পুলিশ আইনের পোশাকে সজ্জিত একটি নিয়মনিষ্ঠ বাহিনী, কেউ তাদেরকে পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে যেন সফল না হয়। পুলিশ জনগণ থেকে নিতে নয়, জনগণকে দিতে কাজ করতে হবে। পুলিশি অধিকারের পাশাপাশি জনগণের অধিকারের বিষয়েও "পুলিশ প্রশিক্ষণার্থীদের" জ্ঞানদান দিতে হবে ।

অপরদিকে, Police are always in the line of fire. পুলিশিং একটি ২৪X৭ চাকরি। এতে যুদ্ধকাল, ক্রান্তিকাল বা শান্তিকাল বলে কিছু নেই। বাকি অন্য সব সার্ভিসের মতই এখানে অসাধু ও দুষ্ট লোক আছে। আমরা একজন পুলিশ সার্জেন্ট একশ টাকা ঘুষ খেলে যতটা শোরগোল করি তেমনি স্যুট-টাই পরা সুশোভিত হোয়াইট কলার অপরাধীরা কলমের খোঁচায় কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করলে তেমন চেঁচামেচি করিনা। সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেল বাংলাদেশ পুলিশের বেতন ও ভাতাদি আদেশের মাধ্যমে বেতন বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের কাজের প্রতিদান হিসেবে বেতন ভাতা সুযোগ সুবিধা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। জনগণ এখনো বিশ্বাস করেন শুধু বেতন, বিনা মূল্যে পোশাক সামগ্রী, ঝুঁকি ভাতা, চিকিৎসা সুবিধা এবং নিজের ও পরিবারের নির্ধারিত সদস্যের প্রাপ্যতা রেশন সামগ্রী স্বল্প মূল্যে ক্রয়ের জন্য কেউ পুলিশে ভর্তি হয় না বরং জনগণের সেবা করতে ভর্তি হয়। পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন দেয়ার উদাহরন চারপাশে আছে ভুরি ভুরি। অন্যদিকে পুলিশে ভর্তির প্রক্রিয়া মেধা ভিত্তিক করতে হবে। পুলিশের চাকরি পেতে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্য হয় একথা এখন দিবালোকের মত সত্য। কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে হয়ত সে বোকর স্বর্গে বাস করে।

জাতিসংঘের মান অনুযায়ী নাগরিক এবং পুলিশের আদর্শ অনুপাত হল ৪০০:১ কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে এই অনুপাত ১১৩৩:১ ৷ বাংলাদেশ পুলিশের মোট জনবলের শতকরা ৭ ভাগ এখন নারী। দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে। আধুনিক প্রযুক্তি চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। সাথে বাড়ছে অপরাধ ও অপরাধী। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধ, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জঙ্গিবাদ। প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে অপরাধের ধরন, গতি-প্রকৃতি। বাংলাদেশ দন্ডবিধি, ফৌজদারী কার্যবিধি, এবং দেওয়ানী দন্ডবিধির সকল ধারা উপধারা নিষ্পাদন করে থাকেন পুলিশ বাহিনী। আইনের সুষম প্রয়োগের জন্য পুলিশের বিভিন্ন শাখা আছে যেমন স্পেশাল ব্রাঞ্জ, সিআইডি, রেলওয়ে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল পুলিশ, পিবিআই, এসপিবিএন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব, নৌপুলিশ, পর্যটন পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, ইমিগ্রেশন পুলিশ ইত্যাদি। এসবের যে কেউ একজন অন্যায় অনাচার করলে সাধারণ জনগণ পুলিশকে দোষী মনে করেন।

সাম্প্রতিক অতীতে কিছু ঘটনা পুলিশের ইমেজ সংকট ফেলেছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের আঘাতে তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান দু'চোখ নষ্ট, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের মিছিলে টিয়ারশেল ও জলকামান ছোড়া, পহেলা বৈশাখে যৌন নিপীড়ন বিরোধী বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের লাঠিপেটা ও টিয়ারশেলে তিনশ' শিক্ষার্থী আহত, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পৃক্ততায় নারায়ণগঞ্জে নৃশংস সাত খুনের ঘটনা। অতি সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে ফিল্মী স্টাইলে আটক, বরিশালে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা সহ বিভিন্ন সময়ে পুলিশ নিজেই মাদকদ্রব্য দিয়ে আটকিয়ে বিভিন্ন নির্যাতন ও ঘুষ গ্রহণের দৃশ্য। এই বিচ্ছিন্ন ঘটনা গুলো সরকারের গগনচুম্বী সাফল্য ঢালাওভাবে অদৃশ্য করে দিচ্ছে। সেদিকে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে। সাময়িক উচ্ছ্বাস যেন বৃহৎ বিজয়কে মলিন না করে। উপসংহারে, জনগণ যেন পুলিশ বিমুখী হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। এতে দেশ ও জাতির বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। বহিঃবিশ্বে আমাদের মন্দ পরিচিতি যেন ছড়িয়ে না পরে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:১৫

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: পুলিশ এখন জনগনের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। মানুষ ওদের থেকে দুরে থাকতে চায়।

আমার মতে, দেশে সেনাবাহিনীর চেয়ে বেশী সংখ্যায় পুলিশ দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.