![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সহজ ভাষায় নেতা না নেতৃত্ব বলতে এমন এক চরিত্রকে বুঝি যেটা অনুকরণীয়, অনুসরনীয়। নেতৃত্বে আসার আকাঙ্ক্ষা প্রতিটি মানুষের একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। মনের গভীরে আমরা সবাই কম-বেশি নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা লালন করি। শুধু ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা লালন যথেষ্ট নয়, এজন্য নিজেকে গড়ে তুলতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজন প্রচুর জ্ঞান অর্জন, সমসাময়িক বিষয়ে আত্মজ্ঞান, বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা, সচেতন চিন্তাধারা, নিয়মিত অনুশীলন এবং সাধনা। এ সবকিছু একদিনের প্রাপ্তির বিষয় নয়, আয়ত্ত করার জন্য নিয়মিত অনুশীলনের কথা আগেই বলেছি। Anthony Gell তাঁর বইতে লিখেছেন “The pursuit of leadership excellence is a lifelong activity” মানে নেতৃত্বের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সাধনা একটি জীবনব্যাপী কর্মকাণ্ড। সমস্ত গুণাবলী বিদ্যমান থাকলেও একদিনে রাতারাতি নেতৃত্বের সহজাত দক্ষতা কেউ অর্জন করতে পারে না। Leadership is about vision and responsibility, not power
নেতৃত্বের জন্য সবার আগে ‘আত্ম-সচেতন’ হতে হবে। মানে নিজেকে জানতে হবে, বুঝতে হবে। নিজের ব্যক্তিসত্তার বিশেষত্ব বুঝতে হবে। সনাক্ত করতে হবে নিজের বিশেষ শক্তির জায়গা। আদর্শ নেতৃত্বের কোন একক বা সর্বজনীন পথ নেই। বরং এ পথের আছে নানা রকমফের। অতএব, অন্যকে অনুকরণ করতে গিয়ে স্বকীয়তা হারিয়ে ফেললে- তার সঙ্গে হারিয়ে যেতে পারে আপনার সহজাত নেতৃত্বের শক্তি এবং গুণাগুণ। জীবন একটি পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় প্রতিটি পরীক্ষার্থীর প্রশ্নপত্র আলাদা। তাই একেকজনের উত্তরও হবে একেক রকম। অতএব, অন্যের খাতা দেখে নকল করলে আখেরে ক্ষতি আপনারই’। তাই আত্ম-সচেতন হয়ে খুঁজতে হবে নিজেকে বিকশিত করার উপায়। নেতৃত্ব একটি চর্চার বিষয়, লোক দেখানো বিষয় কদাচিৎ নহে। Win and success are two different words. জয় আর সাফল্য দু’টি আলাদা ক্রিয়াপদ, প্রেক্ষাপট। দু’টিকে এক করে দেখার সুযোগ নেই।
পশ্চিমা দেশগুলোতে কিছু আকর্ষণীয় নামসর্বস্ব অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যারা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এমনকি ডক্টরেট ডিগ্রীও দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাজারে এসব ভুয়া সনদ দিয়ে চাকুরী বা মূল্যবিচার তো দূরে থাক, কেউ চানাচুরও বাঁধে না। এসব অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনার জন্য নিজেদের কোন আসল অনুমোদিত ছাড়পত্র নেই কিন্তু আপনাকে আমাকে অকৃত্রিম সার্টিফিকেট দেয়ার লোভনীয় অফার দেয়। এসব সার্টিফিকেট বাজারি সার্টিফিকেট হিসেবে পরিচিত কেননা শিক্ষা অর্জন করতে হয়, পণ্য নয় যে কিনতে হবে। A leader is one who knows the way, goes the way, and shows the way.
বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ করছি এসব অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে প্রবাসে কিছু রাজনৈতিক দোকানের আবির্ভাব ঘটছে। দেশের রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া ব্যক্তিদের যোগসাজশে বিনা পুঁজির বিপণী বিতানগুলোতে প্রবাসের সহজ সরল কিন্তু রাজনৈতিক-প্রলুব্ধ মানুষের কাছে এসব ছাড়পত্র বিহীন দোকানের ফ্র্যাঞ্চাইজি (Franchise) বিক্রি করে দিব্যি চলছে। প্রবাসে বা দেশে যারা এসব রাজনৈতিক প্রসাধনী বাজারজাত করছে তাদের নিজেরা রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত নয় এবং মূলধারার রাজনৈতিক সংগঠন থেকে সনদ-প্রাপ্ত নয়। নিছক নিজের রাজনৈতিক পরিচয় বাঁচাতে এসব সাময়িক দোকান খুলে ফুটপাতে ব্যবসা। মূল ধারার সংগঠন ছাড়া সময়ের সাথে সাথে ঠিকই তারা দোকান গুটিয়ে নেয়, অস্তিত্বও থাকে না। এসব চমকানো দোকানের ভিড়ে মূল সংগঠনগুলো বারবার হোঁচট খায়, পিছিয়ে যায়। প্রবাসে নিরীহ কিছু রাজনৈতিক পরিচয় ক্ষুধার্ত মানুষ নামসর্বস্ব অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের মত সেই পরিচয় কিনে কিছুটা নন্দিত হয়। নেতা মানে দিক প্রদর্শক কিংবা পথপ্রদর্শক। যেসব নেতারা নিজেই পথহারা পথিক তারা কিভাবে অন্যদের পথ দেখাবে বুঝতে পারছি না। নেতা হয়ে অন্যের উপর ছড়ি ঘোরালেই আপনার দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে না; বরং অন্যের জন্য নিজেকে কতটা ঝুঁকির মুখে ফেলতে আপনি রাজী আছেন, সেটি দেখতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে মহাত্মা গান্ধীর কথা ধরা যাক। মহাত্মা গান্ধীর কোন আনুষ্ঠানিক, দাপ্তরিক ক্ষমতা ছিল না। তিনি কোন রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান ছিলেন না। তার অধীনে কোন বিরাট সেনাবাহিনীও ছিল না। কাউকে হুকুম দেওয়ার আইনানুগ অধিকার তার ছিল না। তবু প্রলয় ঘটানোর মতো ‘ক্ষমতা’র অধিকারী তিনি ছিলেন। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল তাকে ‘ন্যাংটা ফকির’ বলে আখ্যায়িত করলেও গান্ধী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজসিংহাসন যে সাম্রাজ্যে এক কালে সূর্য অস্ত যেত না, সেই রাজসিংহাসনকে কাঁপিয়ে দিতে পেরেছিলেন। নেতা হয়ে কেউ জন্মায় না। নেতৃত্ব উত্তরাধিকারের বিষয় নয়। নেতৃত্ব জোর করে অর্জন করা যায় না। গান্ধী ‘মহাত্মা’ হয়ে জন্মগ্রহণ করেননি। শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু হয়ে জন্ম গ্রহণ করেননি। যেমনটি জর্জ ওয়াশিংটন, চার্চিল, লিঙ্কন, জিন্নাহ, সোহরাওয়ার্দী বা মাওলানা ভাসানী।
নেতা ‘ভিশন’ বা প্রত্যাশা দ্বারা পরিচালিত হন। প্রত্যাশার ভিত্তিতেই তিনি মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধ সৃষ্টি করেন। ‘শেয়ারড ভিশন’ বা সম্মিলিত প্রত্যাশা সৃষ্টির মাধ্যমে তা অর্জিত হয়। সৃজনশীলতা, ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস ইত্যাদি যার অন্যতম উপাদান। আত্ম শক্তিতে বলিয়ান ব্যক্তি অদম্য ও অপ্রতিরোধ্য। তাই আত্মশক্তিতে বলিয়ান ব্যক্তিরাই নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম। অর্থাৎ নেতা মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণাবলি বা অন্তর্নিহিত ক্ষমতা বিকাশের পথ উন্মুক্ত করেন। নেতা হয়ে যেমন কেউ জন্মায় না, তেমনিভাবে নেতা আকাশ থেকেও পড়েন না। কোন ধরনের সালসা খেয়ে নেতা হওয়া যায় না। নেতা নিজে হয়ে ওঠেন। নিজেকে রূপান্তরের মাধ্যমে। নিজের রূপান্তর ঘটাতে পারলে একজন নেতা অন্যের রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম হন। নেতা সত্যিকারার্থে পরিবর্তনের রূপকার।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:০২
রসায়ন বলেছেন: বাংলাদেশে কোন ভারসাম্য নেই । যার যেদিকে যাওয়ার কথা সে সেদিকে নেই । ভালো লোক পলিটিক্সে নেই , ডাক্তার হয় বিসিএস এডমিন , ইঞ্জিনিয়ার পড়ে আইবিএ তে !