নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গোল গাল গল্প
বাংলা ভাষায় “উত্তমপুরুষ” শব্দগুচ্ছ হলো আমি,আমরা,আমাদের, আমাদিগকে ইত্যাদি। ছোটবেলায় আমি এই উত্তমপুরুষ, মধ্যমপুরুষ ব্যাপার গুলি খুব একটা বুঝতাম না। মনে হতো, যে কথায় কথায় আমি, আমরা, আমাদের বলে সে উত্তম পুরুষ(ব্যাটা ছেলে), আর যে বেশি তুমি তুমি করে সে মধ্যম ক্যাটাগরির পুরুষ মানুষ। ছোটবেলায় তাই চেষ্টা করতাম বেশি বেশি “আমি আমি” টাইপ কথা বার্তা বলতে, আফটার অল কে না উত্তমকুমার টাইপ পুরুষ হতে চায় (ধন্যবাদ বাংলা ভাষার মহান পণ্ডিতগণকে)
আমার খুব বিচিত্র ধরনের একটি প্রব্লেম আছে। আমি কেন জানিনা খুব বেশি সময় আয়নার সামনে নিজের প্রতিবিম্ব সহ্য করতে পারি না। ব্যাপারটা এমন যে, খুব বেশিক্ষণ নিজের দিকে তাকিয়ে থাকলে কেমন জানি নিজেকে অপরিচিত মনে হয়। মনে হয়, যাকে দেখছি সে কে?
মূল প্রসঙ্গে আসি, আমরা আমাদেরকে "আমি" বলে সম্বোধন করি, এই আমি টা আসলে কে?
হাইপোথিসিস ১ : পবিত্র বাইবেল অনুসারে, মৃত্যুর পর মানুষ যখন স্বর্গে অথবা নরকে যাবে তখন তাদের নতুন শরীর দেয়া হবে সাথে মুছে ফেলা হবে পার্থিব যাবতীয় পুরনো স্মৃতি। একটি মানুষের যদি পুরনো কোন স্মৃতিই না থাকে তাহলে কি ঐ মানুষটির কোন অস্তিত থাকতে পারে? মুখবয়ব হয়ত একই থাকবে কিন্তু চেনা মানুষটি তো হারিয়ে যাবে। তাহলে কি বলা যেতে পারে, সেই “আমি” বলতে মূলতঃ আমার স্মৃতি? স্মৃতি হারিয়ে ফেলা মানে নিজেকেই চিরতরে হারিয়ে ফেলা?
হাইপোথিসিস ২ : যখন আমরা চোখের সাহায্যে কিছু দেখি মূলতঃ এই দেখার কাজটি কে করে,কেন করে, কার জন্য করে? সহজ ভাবে বোঝার স্বার্থে, ধরে নেই আমাদের দেহটি একটি যন্ত্রের মত। ধরুন, আমাদের দেহ একটি কম্পিউটারের মত। কম্পিউটার কীবোর্ড, মাউস, ওয়েব ক্যাম ইত্যাদি ব্যবহার করে ইনপুট বা ইন্সট্রাকশন নেয়ার জন্য, প্রসেসর ইউনিট প্রসেস করে মনিটরে আমাদের (যে বা যারা ইনপুট দিয়েছে তাদের) দেখায় বা আউটপুট দেয়। আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় গুলো ইনপুটের কাজ করে। ব্রেইনে প্রসেস করে তারপর কাউকে দেখায় বা আউটপুট জানায়। যাকে দেখায় সেইজন ই কি সেই “আমি”? “আমি” মানে কি তাহলে আমার আত্বা?
হাইপোথিসিস ৩ : ধরে নেই, এই “আমি” আমাদের সেই আত্বা যা প্রায় সকল ধর্ম অনুসারে সৃষ্টি হয়েছে সৃষ্টির প্রারম্ভে। ইসলাম ধর্ম মতে আত্বা বলতে বোঝায় অর্ডার অফ গড, হিন্দু ধর্ম মতে আত্বা হলো পরমাত্বার একটি অংশ আব্রাহামিক ধর্ম গুলোতেও আত্বা বলতে বোঝানো হয়েছে স্রষ্টার একটি ক্ষুদ্র অংশ।এখন কথা হচ্ছে, আত্বা যদি স্রষ্টার ক্ষুদ্র অংশ হয়ে থাকে তাহলে তা কখনো পাপ করতে পারে না, তার কোন সৃষ্টি বা ধবংশ নেই। মানুষের নিজ নিজ পাপের জন্য তাদের আত্বাকে দায়ী করা যায় না কারন আত্বা স্রষ্টার অংশ আর স্রষ্টা পাপ করতে পারে না। একটু পেছনে ফিরে যাই একটু আগে মানব দেহকে কম্পিউটারের সাথে তুলনা করে আমি "আমি" এর যে একটা কূল-কিনারা করতে চেয়েছিলাম এই বলে যে, দেহের বিভিন্ন অঙ্গ আত্বার জন্য কাজ করে এবং আত্বা সিন্ধান্ত নেয়।
এখন কিন্তু ঐ হাইপোথিসিস লজিকে মিলছে না। আমাদের পৃথিবীর দেহ/শরীর স্বর্গ বা নরক ভোগ করার জন্য উপযুক্ত নয় এবং মৃত্যুর পর নতুন দেহ প্রদান করা হবে এই কথা সব আব্রাহামিক রিলিজিয়নে(মুসলিম,খ্রিটান,ইহুদী) বলা হয়েছে। কাজেই পৃথিবীর দেহ পৃথিবীতেই পঁচে গলে ধবংশ হয়ে যাবে। সুতরাং মৃত্যুর পর এই দেহের কোন বিচার বা সাঁজা হবার কথা নয়। আত্বা যেহেতু পরমাত্বার অংশ, সুতরাং আত্বারও বিচার বা সাঁজা হবার কথা নয়। তাহলে বিচারকার্য, তিরষ্কার বা পুরষ্কার হবে টা কার?
আমার মনে হয়, যার হবে সেই আমিই প্রকৃত “আমি” দেহ বা আত্বা নয়। আমাদের ভিতরে থাকলেও যার সন্ধান এই জগতে আমরা কখনো পাবো না। মাঝে মাঝে কিঞ্চিত অস্তিত্ব অনুভব করা যাবে শুধু ।।
©somewhere in net ltd.