![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গতকাল দুপুরে উত্তরায় বিপু ভাইয়ের বাসায় দাওয়াত ছিল। ব্যাপক খানাপিনার আয়োজন করেছিলেন কানন ভাবী। বিকেলে উনার বাসা থেকে ফিরছিলাম মুন্নী আপুর গাড়িতে করে। কারো গাড়িতে লিফট পেলে পারফেক্ট মিডিল ক্লাসের মত আমারো মনে হয় যাক সি এন জি ভাড়া বেঁচে গেলো!!! রাস্তা প্রায় ফাঁকা ছিল। আপু আর আপুর কন্যা শ্রেয়ার সাথে কথা বলতে বলতে আসছিলাম। মহাখালী ফ্লাই ওভারে ওঠার সময় কে যেন আমাকে “কিশোর” বলে ডাকল। আমি প্রথমে ভাবলাম আমার মনের ভুল, পরে আবার শুনলাম সেই ডাক...... কিশোর ......আসো ...... কিশোর ...... দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হল, মহাখালী ফ্লাই ওভার পেরিয়ে বি এ এফ শাহীন কলেজের সামনে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। ঘোরের মধ্যে কিছুক্ষন হাঁটতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে ডি ও এইচ এস পার্কের সামনে গিয়ে দেখি “মায়া” দাঁড়িয়ে আছে । সাদা শাড়ি পরে, হাতে সাদা চুড়ি, কপালে সাদা টিপ, খোঁপায় সাদা রঙের ফুল ।
কথোপকথন:
আমি বললাম কি ব্যাপার বিধবার বেশে এসেছো কেন???
মায়াঃ আমি সব সময় সাদা পোষাকেই থাকি । দেখোতো আমাকে কেমন লাগছে ?
কিশোরঃ একদম প্রিন্সেস ডায়ানার মত লাগছে । চলো ওই বেঞ্চটাতে বসি।
মায়াঃ নাহ! আমি ঘাসের উপর বসব। এই বলে মায়া আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল আর নিজের মত করে বলতে লাগল আট বছর পর তোমার সাথে দেখা হলো । কেমন আছো কিশোর? তোমার “প্রিয়ার” খবর কি?
কিশোরঃ এই বেশ ভালো আছি ...... আর প্রিয়া ......ওর সাথে আমার যোগাযোগ নেই অনেকদিন হলো ... মনে হয় ভালোই আছে।
মায়াঃ আমি কি তোমার মন খারাপ করে দিলাম ??? যাও তোমার মন ভালো করে দিচ্ছি। এই নাও আমার হাত ধরে বসে থাকো । এবার বলতো কি করছ এখন? ...... ভিসা পেয়েও তো ইউ কে গেলে না ... কি এখন কি আফসোস হয়?? হওয়ার ই কথা। দেশকে কি বদলাতে পেরেছ? তোমার একার পক্ষে কি দেশকে বদলানো সম্ভব? ওমা তোমার দেখি চুল পেকে গেছে – এই বলে খিলখিল করে হাসতে লাগল।
কিশোরঃ আমার কোন কিছুর জন্যই কোন আফসোস নেই । শুধু তোমাকে মাঝে মাঝে খুব মিস করি।
মায়াঃ অনেক কষ্টে কান্না চেপে বলল আমিও তোমাকে খুব মিস করি, কিশোর । চোখ আর বাঁধ মানল না, অঝোর ধারায় বর্ষন শুরু করল। কান্না শেষে বলল, সন্ধা হয়ে আসছে । আমাকে যেতে হবে। আর শোন, তোমার বাবার সাথে আমার প্রায়ই দেখা হয়। উনি খুব ভাল আছেন। আমি খুব খুশি হয়েছি যে তুমি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছ। পাগলের মত সিগারেট খেতে তুমি। যাই হোক, আমি আবার চলে যাচ্ছি না ফেরার দেশে । অনেক ভাল থেকো তুমি।
কিশোরঃ আমরা সবাই কম বেশী পাগল। তুমি তো এক সময় আমার কাছ থেকে সিগারেট নিয়ে খেতে। এখন খাও না? রাগ করলে নাকি? রাগলে তোমায় খুব সুন্দর লাগে। আর কিছুক্ষন থাকো।
মায়াঃ কোন উত্তর না দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমাকে একটু এগিয়ে দাও । আর শোন আমি খুব শীঘ্রই আবার তোমাকে ডাকব। আমি ডাকলে শত কাজ থাকলেও এসো প্লীজ।
কিশোরঃ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, অবশ্যই আসব।
দুজন চুপচাপ হাঁটছে। একটা জায়গায় এসে মায়া বলল তুমি আর সামনে যেতে পারবে না। মায়া কিশোরের মুখোমুখি দাঁড়াল, কানের কাছে ঠোঁট এনে চারটি শব্দ বলল। আর কিশোর মায়ার কানের কাছে ফিসফিস করে পাঁচটি শব্দ উচ্চারন করল।
কিশোর হাঁটছে ...
জেমস এর গাওয়া একটা হিন্দী গানের কলি ভেসে আসছে অন্ধকার মাঠ থেকে ... “না জানে কয়ি ... কেইসি হে এ জিন্দেগানী ...... জিন্দেগানী...... হামারি আধুরি কাহানি .........”
কিছুক্ষন পর বৃষ্টি শুরু হলো। কিশোর তবুও হেঁটে চলছে .....
(চলবে)
কিশোর
২৭/০৩/২০১৩
©somewhere in net ltd.